কল্যাণপুরের আস্তানা ছিল জঙ্গিদের ‘সেফ হাউজ’

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 09:06:50

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটানা অভিযানে জঙ্গিদের সাংগঠনিক সক্ষমতা এখন শূন্যের কোঠায়। দুই বছর আগে এইদিনে রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামের একটি বাসায়, জঙ্গিদের গোপন আস্তানার সন্দেহে র‍্যাব পুলিশ অভিযান চালায়। রাতভর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পর, ভোরে অপারেশন স্ট্রম-২৬ অভিযানে নিহত হয় নয়জন জঙ্গি সদস্য।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই)  এই জঙ্গি বিরোধী অভিযানের দুই বছর পূর্তি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, একাধিক জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার জন্য 'সেফ হাউজ' হিসেবে পরিচিত ছিল কল্যাণপুরের এই আস্তানাটি। এখান থেকে পরিকল্পনা করে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা করতে চেয়েছিল জঙ্গিরা। নিহত এই জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল গুলশানে হলি আর্টিজানের সন্ত্রাসী হামলার, আরও সম্পর্ক ছিল শোলাকিয়া মাঠে জঙ্গি হামলার। তাছাড়া পরবর্তীতে বিভিন্ন হামলায় নিহত শীর্ষ জঙ্গি নেতা, অনেকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এদের।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ছিল, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযান, টার্নিং পয়েন্টও বটে। হলি আর্টিজনে হামলার পর জঙ্গিদের মধ্যে ধারণা ছিল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সঙ্গে সহজে পেরে উঠবে না। গোটা দেশ তখন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। সারাদেশের মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের আরও একাধিক হামলার তথ্য পায় পুলিশ। সেই তথ্যের সূত্র ধরেই কল্যাণপুরে অভিযান পরিচালনা করে। কল্যাণপুরের অভিযানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারি। যার ফলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

এদিকে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দু বছর পর সোমবার (২৩ জুলাই) আট জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ।  কল্যাণপুরে ঘটনার চার্জশীটের কাজও চূড়ান্ত হয়েছে। খুব শীঘ্রই বিজ্ঞ আদালতে সেটাও দাখিল করা হবে বলে বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।

কল্যাণপুরে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের সার্বিক বিষয় নিয়ে এক আলাপচারিতায় মনিরুল ইসলাম বার্তা ২৪.কমকে বলেন,  হলি আর্টিজান হামলার পরে জঙ্গিরা আরও বড় বড় কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। সেই সব হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তারা এটা 'সেফ হাউজ' হিসেবে জাহাজ বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। হলি আর্টিজান হামলার আগে যেমনটা বসুন্ধরাতে বাসা নিয়েছিল মূল পরিকল্পনাকারীরা। এখান থেকে তারা আরও দীক্ষিত হয়ে, বিভিন্ন জায়গায় হামলা করতে চেয়েছিল।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ঐ দিন পুলিশের অভিযানে প্রথমেই একজন জঙ্গি পালিয়ে যায়, আর একজন পালিয়ে যেতে নিয়ে ধরা পড়ে। বাকিরা অভিযানে নিহত হয়।  রাকিবুল হাসান রিগ্যান নামের একজনকে জীবিত গ্রেফতার করা হয়েছিল এ ঘটনায়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, স্পর্ট থেকে আলামত সংগ্রহ করে এবং পরবর্তী বেশ কিছু আসামীকে গ্রেফতার করা সহ,  জবানবন্দি, সাক্ষ্যপ্রমাণ, সব মিলে মামলাটির তদন্ত এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। খুব তাড়াতাড়ি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।  

বর্তমান সময়ে জঙ্গি হামলার কোন আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সুনির্দিষ্ট কোন জঙ্গি হামলার আশঙ্কা আমরা দেখছি না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর