বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে বিদেশিদের ধারণা পাল্টাচ্ছে

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 20:25:57

বাংলাদেশের পুরনো জাহাজভাঙা শিল্প সম্পর্কে বিদেশিদের নেতিবাচক ধারণা দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ পুরনো জাহাজ ক্রেতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোর মান উন্নত হচ্ছে। তুরস্কের মতো আধুনিক ব্যবস্থাপনায় জাহাজ কাটা হচ্ছে এখন বাংলাদেশে।

গত ৫ ও ৬ মার্চ হংকংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এক কনভেনশনে এ অভিমত তুলে ধরেন বিভিন্ন দেশের বক্তারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫০ জন পুরনো জাহাজ বিক্রেতা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ব্যাংক কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা এতে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির মালিকানাধীন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকুসহ তিনজন, একজন শিপইয়ার্ড মালিক ছাড়াও এতে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম শামসুল আরেফিন। ট্রেড উইন্ডস শিপ রিসাইক্লিং ফোরাম- এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এ কনভেনশন হংকংয়ের হায়াত রিজেন্সি হোটেলে।

কনভেনশনে জাপানের বিশেষজ্ঞ টাকেশি নারোসি, ২০০৯ সালের মে মাসে পাস হওয়া হংকং কনভেনশনের স্বপ্নদ্রষ্টা ইংল্যান্ডের অধিবাসী ড. নিকোস মিকেলিস, তুরস্কের বৃহত্তম ইয়ার্ডের প্রধান ডিমিট্রিজ অ্যাভাভুগলোসহ অন্যান্যরা বাংলাদেশের শিপইয়ার্ডে জাহাজভাঙার আধুনিকায়ন ও অগ্রগতির খবর জেনে প্রশংসা করে বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রামের বাড়বকুণ্ডে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত শিপইয়ার্ডগুলোর বর্তমান কর্মকাণ্ডের উপর নির্মিত চার মিনিটের একটি ভিডিওগ্রাফি দেখানো হয়। এরপর বক্তব্য দিতে গিয়ে জহিরুল ইসলাম রিংকু প্রশ্নে তুলেছেন, ‘বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলো এখন যেভাবে জাহাজ কাটে তা তুরস্কের মতোই আধুনিক। আমরা এখন আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই জাহাজ কাটতে সক্ষম।’

প্রতি বছর এ আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এর আগের বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিলো জার্মানিতে। তার আগের বছর সিঙ্গাপুরে। টাকা তিনটি কনভেনশনে যোগ দিয়ে জনাব জহিরুল ইসলাম রিংকু বিদেশিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জনাব রিংকু বলেন, ‘আগে আমাদের সম্পর্কে বিদেশিদের এক ধরনের নীতিবাচক ধারণা ছিল। যুক্তিতর্ক দিয়ে তাদের সে ধারণা ভাঙার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী।’

বিগত তিন বছরের মতো ২০১৮ সালেও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৩ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন পুরনো জাহাজ কিনেছিল বাংলাদেশ। এরপরের অবস্থান ভারতের,  ২১ লাখ ২২ হাজার টন মেট্রিক টন জাহাজ কেনে প্রতিবেশি দেশটি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তান, তাদের কেনা জাহাজ ১১ হাজার মেট্রিক টন। ৬ হাজার মেট্রিক টন কিনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে তুরস্ক। জাহাজভাঙা শিল্পের ভারতীয় কনসালট্যান্ট গুজরাটের অধিবাসী ধর্মেশ জানি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি খরচ পড়ে ভারতের জাহাজভাঙা শিল্পে। শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বেশি। ফলে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এ শিল্প বাংলাদেশে।’

বাংলাদেশ সরকার বছরে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব পায় পুরনো জাহাজভাঙা শিল্প থেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর