১৯ বছরে ৯/১১

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-11 09:56:13

শত-সহস্র বছরের পৃথিবীতে খুব কম ঘটনা আছে, যা ইতিহাস মনে রেখেছে। শত বছরে একটি বা দুইটি ঘটনা এমন ঘটে। মানুষ ও ইতিহাস ভুলতে পারে না ঘটনাটি।

১৯ বছর আগে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। আজকের দিনেই শুধু নয়, অনাগত কালেও মানুষ মনে রাখবে ঘটনাটি। ইতিহাসের যাত্রা পথে ঘটনাটি পাল্টে দিয়েছিল পৃথিবীর গতি।

১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সাল। সংক্ষেপে ৯/১১। আধুনিক বিশ্বের প্রতিভূ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থরথর করে কেঁপে উঠেছিল। বিমূঢ় ও বিস্মিত হয়েছিল সারা বিশ্ব। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এই রক্তাক্ত দিনটির কথা কেউ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। অচিন্তনীয় আতঙ্কে ডুবে গিয়েছিল পশ্চিমা বিশ্ব। সন্ত্রাসের নতুন রূপ ও বিস্তৃতিতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মানব সভ্যতা।

সেদিন এবং পরের আরও অনেক দিন পৃথিবীর সবগুলো টিভি চ্যানেল দেখাতেই থাকলো ৯/১১-এর ঘটনাবলী। প্লেনগুলো সোজা ধাক্কা মারল মার্কিনীদের গর্বের প্রতীকগুলোতে। নিমেষে প্লেনের হামলায় ভেঙে পড়ল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার তথা টুইন টাওয়ার। ১৯ জন আত্মঘাতী হামলাকারী এবং চারটি বিমান জড়িত ছিল হামলায়।

চারটি বিমানের দু'টির লক্ষ্য ছিল নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ার। অন্যটি আঘাত করে পেন্টাগনে, যেটির অবস্থান ওয়াশিংটনের ঠিক বাইরেই আর চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে।

মারা যান ২৯৯৬ জন, গুরুতর জখম ছয় হাজার জনেরও বেশি মানুষ। যাদের মধ্যে ৪০০ এর বেশি ছিলেন পুলিশ এবং অগ্নিনির্বাপণ কর্মী। আমেরিকায় এত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে।

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিস্মিত বিশ্ব আড়মোড়া ভেঙে ঝাঁপিয়ে পড়ে অদৃশ্য সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ঘোষণা করেন 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'। মার্কিন দেশে, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার অনেক দেশেই মুসলিমদের পাশাপাশি দাড়িগোঁফ থাকার কারণে মুসলিম সন্দেহে বহু শিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হন। যদিও ৯/১১ ঘটনার বহু প্রশ্নের সঠিক উত্তর ও রহস্য স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হয়নি আজও। শুধু তাই নয়, ৯/১১ পরবর্তীতে শত শত সন্ত্রাসী ঘটনার কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছে না।

৯/১১-এর পর গ্রাউন্ড জিরোতে এখন ঘটনাটির স্মৃতিস্বরূপ গড়ে উঠেছে ফ্রিডম টাওয়ার। দালানের উচ্চতার দিক থেকে টুইন টাওয়ারকে ছাড়িয়ে যাওয়া ফ্রিডম টাওয়ারেই নির্মিত হয়েছে সেপ্টেম্বর ১১ মেমোরিয়াল স্থাপনা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা স্থাপনা পেন্টাগনকেও ঢেলে সাজানো হয়েছে। সেদিন হোয়াইট হাউসের দিকে উড়ে যাওয়া আরেকটি বিমান মাঝ আকাশে ভূপাতিত হয়েছিল যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করা হয়েছে ৯/১২-এর পর পরই। বলা যায়, মানুষের বসবাস, চলাচল ইত্যাদি কঠিন নিরাপত্তা বলয়ে আবৃত। পশ্চিমা বিশ্ব নিজস্ব নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

৯/১১ অনেক কিছুর পাশাপাশি বিশ্ব ইতিহাসে ভয়াল দিন হয়ে চিহ্নিত হয়েছে। সেদিনের মতো সমন্বিত আর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা পরবর্তী সময়ে আর দেখা যায়নি। এমন কি, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পর বদলে যায় খোদ আমেরিকাও। এর জের ধরে বদলে গেছে বিশ্ব আর বৈশ্বিক রাজনীতি। বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন বিভাজন শুরু হয়েছে ৯/১১-এর মাধ্যমে। শুরু হয়েছে বিশ্বের দেশে দেশে সন্ত্রাসী খোঁজার পালা। যে তৎপরতার জেরে জ্বলছে অনেক দেশ, জনপদ। অনেক নিরীহ মানুষও মারা যাচ্ছে 'সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ'-এর পক্ষ-বিপক্ষের মাঝখানে পড়ে। শান্তি এখন নিজেই হয়ে গেছে আক্রান্ত।

শান্তিবাদী বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ চায় না। আবার অকাতরে নিরপরাধ, নিরস্ত্র, সাধারণ মানুষের মৃত্যুও মেনে নিতে পারে না। শান্তি ও মানবতার এই আকুতি ৯/১১-এর পর তীব্র ভাষায় উচ্চারিত হলেও আজও বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলা থেমে থেমে হুঙ্কার দিয়েই চলেছে। আবার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসীদের দমন করার হামলাতেও মারা পড়ছেই সাধারণ মানুষ, স্কুলের শিশু, ঘরের নারী, নিরপরাধী মানুষ। সন্ত্রাস ও পাল্টা-সন্ত্রাস রক্তাক্ত করেছে ৯/১১ পরবর্তী বিশ্বকে।

৯ /১১ ঘটনার ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ায় সন্ত্রাসবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার এক রক্তাক্ত রণাঙ্গনে পরিণত করেছে বিশ্ব মানচিত্রকে। ৯/১১-এর স্মৃতি আজও রক্ত আর মৃত্যুর চিহ্নে বার বার ছুঁয়ে যাচ্ছে তাবৎ পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষদের। কে জানে, সন্ত্রাসের এই দুষ্টচক্র থেকে মানবতা কবে মুক্তি পাবে?

আরও পড়ুন: স্মৃতি: রক্তাক্ত ৯/১১

এ সম্পর্কিত আরও খবর