নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য অর্থ জোগাড় করলেন মৃত্যু পথযাত্রী

বিবিধ, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-29 21:38:31

দুই বছর আগে ২০১৭ সালে হৃদরোগজনিত সমস্যা ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে চালিস শোল’র মা মৃত্যুবরণ করেন। তার করা মাত্র ১ হাজার ডলারের জীবন বিমার টাকা দিয়েই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কার্য সম্পন্ন করেছিল তার পরিবার।

এরপর ৩৫ বছর বয়স হওয়ার পর শোল ভেবেছিলেন তার হাতে অনেক সময় আছে নতুন পলিসি (বিমা) গ্রহণ করার। কিন্তু জীবন তাকে ভুল প্রমাণ করে।

এক বছর পরে ২০১৮ সালে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ক্যানসার তার যকৃৎ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকরা জানান, সে সৌভাগ্যবান হবেন যদি আরও ছয় মাস বেঁচে থাকতে পারেন।

মায়ের সঙ্গে শোল, ছবি: সংগৃহীত

 

শোল বলেন, ‘এটা হতাশাজনক এবং সে সঙ্গে ভয়ের ছিল।’ শোলের পরিবারে তিনি একমাত্র সদস্য। তার কোনো ভাই বোন নেই। তার পিতা থাকলেও সে তার সঙ্গে থাকেন না।

৩৬ বয়সী শোল চাকরি করলেও তার ছিল না কোনো ধরনের জীবন বিমা। যে কারণে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন তার মৃত্যুর পর হয়তো বিশাল পরিমাণের লোণ টানতে হবে তার দাদা-দাদি ও অ্যান্টির।

শোল বলেন, ‘অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনেক ব্যয়বহুল। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের এই ধরনের বোঝা দিতে চাই না।’

চিকিৎসকরা শোল'র জন্য ৬ মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

 

মে মাসে শোল সিদ্ধান্ত নেন নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সব খরচ তিনি একাই বহন করবেন। মাত্র ৪ ডলারের বিনিময়ে ফেসবুকে রিষ্ট ব্যান্ড বিক্রি শুরু করেন।

শোলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অনলাইনে ফাণ্ড রাইসিংয়ের আইডিয়া শেয়ার করেন তার সঙ্গে। সেই মোতাবেক ১০ হাজার ডলার সাহায্য চেয়ে ‘গো ফান্ড মি’তে আইডি তৈরি করেন।

শোল বলেন, ‘ঘুম থেকে সকালে উঠে দেখি ১ হাজার ডলারের অধিক অর্থ জমা পড়েছে। একদিন যেতে না যেতেই ১০ হাজার ডলারের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলে। আমি বিশ্বাস করতে পারেনি ব্যাপারটি।’

তার সম্পর্কে জেনে অনেকেই তার ফেসবুক ও ‘গো ফান্ড মি’ আকাউন্টে উৎসাহমূলক মন্তব্য করেছেন যা তাকে কাঁদিয়েছে বলে জানান শোল।

শোল'র শুভাকাঙ্ক্ষীদের দেয়া কার্ড, ছবি: সংগৃহীত

 

একজন মহিলা লেখেন, ‘আমি নিশ্চিত তোমার এই অব্যাহত শক্তি দেখে তোমার মা তোমাকে নিয়ে গর্ববোধ করবে’

আরেকজন লেখেন, ‘ক্যানসার খুব কুৎসিত, কিন্তু তুমি খুব সুন্দর।’

তৃতীয় একজন লেখেন, ‘নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিজের চিন্তা করা উচিত না।’

শোল জানান, মানুষের এমন ভালোবাসা পেয়ে তিনি স্তম্ভিত। অনেকেই তার বাসায় কার্ড পাঠিয়েছেন। সঙ্গে ভাঁজ করে অনেকেই পাঁচ ডলারও পাঠিয়েছেন যেন সে সিনেমা দেখতে বা আইসক্রিম খেতে পারে।

রিষ্ট ব্যান্ড বিক্রি ও ফান্ড রাইসিং করে শোলের এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজার ডলার সংগ্রহ হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য শোলের ১৫ হাজার ৩০০ ডলার প্রয়োজন ছিল। বাকি অর্থ দিয়ে শোল তার পরিবার নিয়ে নিজের শেষ ইচ্ছাগুলো পূরণ ও কিছু সামাজিক কাজ করতে ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

শোলের ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের কবরের পাশেই তাকে শায়িত করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর