গান্ধীনগরে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি অমিত শাহ

ভারত, আন্তর্জাতিক

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-08 16:10:05

গুজরাটের গান্ধীনগর থেকে: ভারতের চলতি লোকসভা নির্বাচনে গুজরাটের গান্ধীনগরের আসনটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য বিভিন্ন অনুষঙ্গ যোগ হওয়ায় আপাত দৃষ্টিতে সহজ আসনটিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হতে পারে বলেই মনে হচ্ছে।

প্রবীণ নেতা এলকে আদভানিকে যেভাবে এ আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তা আহত করেছে সাধারণ মানুষকে। তাইতো আদভানির কথা শুনে গান্ধীনগরের অনেকের মতো কান্তি লালেরও হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তিনি বলেন, আদভানিজিকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। তারপরও গান্ধীনগর থেকে অমিত শাহই জিতবেন।

পাশে থাকা বিমল, রাধাকৃষ্ণ, অনিলের মুখেও একই কথা। ভোট কমবে। তবে অমিত শাহই জিতবেন। তাদের মতে, 'বোড়া নেতা সব ইলেকশন জিতেগা' (বড় নেতা সব নির্বাচন জিতবেন)।

এখানে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী সিজে চ্যাড্ডা ও অমিত শাহের মধ্যে কঠিন লড়াই হবে বলেও মনে করছেন অনেকে।

সিজে চ্যাড্ডা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এখানে ব্যক্তির কোনো লড়াই হচ্ছে না। আপনারা দেখেছেন যে আমাদের সমাবেশে কত মানুষ হচ্ছে। এখানে লড়াই হবে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে।

গান্ধীনগর আসনটি ১৯৯০ সাল থেকেই বিজেপির দখলে। বিজেপি নেতা এল কে আদভানি এখান থেকে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার প্রায় জোর করে তাকে বসিয়ে দিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এ আসনে লড়াই করছেন।

১৯৯০ সালের পর তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার টিএন সেসনের দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে লড়ে আদভানি এ আসনটিতে জয়ী হতে পেরেছিলেন। সেসন তৎকালীন কংগ্রেস নেতাদের নির্বাচন বিধি ভাঙ্গার জন্য বহিষ্কার করেছিলেন। কংগ্রেস নেতা জনপ্রিয় অভিনেতা রাজেশ খান্নাকেও ছেড়ে কথা বলেননি সেসন।

১৯৯০ সালে লালকৃষ্ণ আদভানি গান্ধীনগর আসনে লড়লেও ১৯৯৬ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ি এখানে লড়ে জয়ী হন। বাজপেয়ি অবশ্য গান্ধীনগর ছাড়াও অন্য আসনে লড়েও জয়ী হন।

আদভানির ওপর একটি মামলা থাকায় তিনি সেবার নির্বাচনে নামেননি। এরপর ২০১৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে জয়ী হন আদভানি। গুজরাটের ২৬টি আসনের মধ্যে চলতি নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৯.২১ লাখ ভোটার রয়েছেন গান্ধীনগরে। এতে সাতটি বিধানসভা এলাকা রয়েছে-গান্ধীনগর উত্তর, কালোল, সানন্দ, ঘাতোডিয়া, ভেজালপুর, নারানপুরা এবং সাবরমতী।

২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচটি শহুরে আসন- ঘাতোডিয়া, ভেজালপুর, নারানপুরা, সাবরমতী ও সানন্দ- বিজেপির কাছে গিয়েছিল।

তখন গান্ধীনগর উত্তর ও কালোলের দু’টি আধা-গ্রামীণ আসন কংগ্রেস জিতেছিল। গান্ধীনগর উত্তর আসনের বিধায়ক বর্তমান কংগ্রেস প্রার্থী সিজে চ্যাড্ডা এলাকার ঠাকুর সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, যাদের বেশ প্রভাব রয়েছে।

রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে তিনি একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এ ভোট যুদ্ধ কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে। অমিত শাহ ও তার মধ্যে নয়।


চ্যাড্ডা প্রশ্ন তোলেন, যদি অমিত শাহ বিজেপির জাতীয় সভাপতি হন, তবে কেন তিনি গুজরাটের তথাকথিত নিরাপদ আসনটি বেছে নিলেন? চ্যালেঞ্জিং আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারতেন। আমাদের জাতীয় নেতারা সম্প্রতি গান্ধীনগরে এসেছিলেন এবং গান্ধীনগরে একটি বিশাল সমাবেশ করেছেন। সেখানে লাখ লাখ লোক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ দেখেই বোঝা গেছে, গুজরাটে বিজেপির পক্ষে সবকিছু ঠিকমত চলছে না। আমরা কঠোর লড়াই করবো।

অন্যদিকে, অমিত শাহ সম্প্রতি বলেছেন, যে গান্ধীনগর আসন থেকে নির্বাচনী লড়াই আমি লড়ছি সেখানে বাজপেয়িজি ও আদভানিজি লড়েছেন এবং জিতেছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমিও এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এর আগে অমিত শাহ, সারাক্ষেজ আসন থেকে চারবার গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।

গান্ধীনগরের একটি সড়ক/ছবি: বার্তা২৪.কম

 

২০০৯ সালে দেশের অন্যান্য অংশে বিজেপির পক্ষে প্রচারণা চালাতে জাতীয় দলের নেতা আদভানি ব্যস্ত থাকায় অমিত শাহ তার পক্ষে প্রচারে গান্ধীনগর লোকসভা আসনের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন।

এ আসনে আপনি কি জয়ী হতে পারবেন এমন প্রশ্নে অমিত শাহ বলেন, বিজেপির জনসমুদ্রের সমাবেশের দিকে তাকান। তারাই বলে দিচ্ছে ফলাফল কি হবে।

এদিকে, গান্ধীনগরে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কংগ্রেসের সমর্থকদের একটি অংশ বিশ্বাস করে, দলটি একটি শক্তিশালী প্রার্থীকে টিকিট দিয়েছে। অমিত শাহের নাম ঘোষণার পর কংগ্রেস এখানে শক্তিশালী প্রার্থীর খোঁজার চেষ্টা করে।

কংগ্রেস কর্মী রশিদ খান বলেন, অমিত শাহের বিপক্ষে আমাদের স্থানীয় এমএলএ চ্যাড্ডা একজন শক্তিশালী প্রার্থী। যদিও ১৯৯০ সাল থেকে বিজেপি নেতারা এই আসনে জয়ী হয়ে আসছেন। তবু এখানে প্রাথমিক সমস্যাগুলো হলো বিশুদ্ধ খাবার পানি, সাশ্রয়ী শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং চাকরি। যা প্রভাবিত করবে এবারের নির্বাচনকে।

বিজেপি নেতা ভারত পান্ডে বলেন, এখানে বিজেপির হারার কোনো কারণ নেই। এটি বিজেপির দুর্গ। আমরা জনগণের জন্য উন্নয়নমূলক কাজ করেই যাচ্ছি। জনগণ জানে, পার্টি উন্নয়ন ও নিরাপত্তা দিতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর