হাতিরঝিলে উল্টোপথে চলাচলে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
রাজধানীর পূর্ব ও পশ্চিমের যোগাযোগ মাধ্যম দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের চারপাশে নিত্যদিন বেড়ে চলছে উল্টোপথে চালকদের চলাচলের প্রবণতা। ফলে প্রায়সই ছোটখাটো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে হাতিরঝিলে। উল্টোপথে চলাচলের প্রভাবে হাতিরঝিলের সঠিক পথে চলাচলকারী চালকদের আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সে সঙ্গে উল্টোপথের চালকদের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হন সঠিক পথের চালকেরা।
সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিরঝিলের বাড্ডা সংযোগস্থল, তেজগাঁও মহাখালী সংযোগস্থল, মধুবাগ সংযোগস্থল, মহানগর প্রজেক্ট সংযোগস্থল থেকে প্রতিদিনই উল্টোপথে অসংখ্য গাড়ি চলাচল করে।
মোটরসাইকেল, সিএনজি, মাইক্রোবাস থেকে শুরু করে সবধরনের গাড়িই প্রায় সময় উল্টোপথে হাতিরঝিলে চলাচল করে। কখনও কখনও হঠাৎ দেখলে মনে হবে, যেন দুই লেনের রাস্তায় চলাচল করছে গাড়িগুলো। সাধারণ জনগণ এমনকি আইন- শৃংখলাবাহিনীর সদস্যরাও ছুটে চলে উল্টোপথে। তবে অবাক হবার বিষয় ছিল পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টদেরও উল্টোপথে চলার প্রবণতা।
হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যায়, যেখানে সারা ঢাকায় পুলিশ তৎপর মোটরসাইকেলের যাত্রীদের হেলমেট নিশ্চিত করতে সেখানে হাতিরঝিলে হেলমেটবিহীন বাইকারের সংখ্যা অগণিত।
হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট সংলগ্ন একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্থানীয় পোলাপান এমন যেন উল্টো আর সঠিক সব পথই তাদের কাছে সঠিক। শুধু তারা নয় উবার, পাঠাও বা অন্য যেসব বাইক সার্ভিস আছে তারাও চলে উল্টোপথে। তবে মাঝে মাঝে সার্জেন্টের কাছে ধরা পড়ে অনেককে মামলা খেতেও দেখেছি। কিন্তু পুলিশতো সবসময় থাকে না।'
তেজগাঁও সংযোগস্থলের খুচরা দোকানী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে বাইক, সিএনজি, মাইক্রোবাসের উল্টোপথে চলাচল শুরু হয়। যারা উল্টোপথে চলেন তারা খুব সতর্ক থাকলেও প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও এখন পর্যন্ত মারা যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা চোখে পড়েনি। তবে যেমনটা দেখি তাতে কবে না জানি কোন দুর্ঘটনায় কতজন মারা যায় আল্লাহ জানে।
হাতিরঝিলের নিরাপত্তার দ্বায়িত্বরত আনসার সদস্য সাইফুল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এখানে যারা উল্টোপথে চলে তারা সবাই সাধারণ পাবলিক তা নয়। আবার সবাই যে পুলিশ বা ক্ষমতাধর তাও নয়। কিন্তু সবাই এ পথে উল্টো চলার সাহস করে কারণ সন্ধ্যার দিকে এখানে বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য এখনই সময় সবার সতর্ক হওয়া। প্রয়োজনে পুলিশের নিয়মিত পাহারা রাখতে হবে।’
স্থানীয় ও হাতিরঝিলের নিয়মিত যারা ঘোরাফেরা করেন তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাতিরঝিলে ভোরবেলা আর সন্ধ্যার পর (অফিস ছুটির সময়টা) থেকে রাত পর্যন্ত উল্টোপথে চলাচলের প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। তবে দিনভরই কম বেশি উল্টোপথে চালকেরা গাড়ি চালায় হাতিরঝিলে।
সন্ধ্যার পরে হাঁটতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘কাকে কী বলার আছে? এখানে যখন উল্টোপথে পুলিশ নিজেই চলাচল করে, তখন লজ্জা লাগে। এভাবে চলতে পারে না। হাতিরঝিল ঢাকার গর্ব, এখানে এমন অনিয়ম মেনে নেওয়া যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চারা কিছুদিন নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন করার পর আমরা সবাই খুব সচেতন হয়ে গেলাম, ব্যাপক তোড়জোড়। এরপর কী হলো? সড়কে উল্টোপথে চলা, এলোমেলো পার্কিং, স্টপেজবিহীন যাত্রী ওঠানামা সবতো ঠিকই চলছে। পুলিশ শুধু হেলমেট খুঁজেন! আমাদের নিজের নিরাপত্তা যখন আমরা নিজেই বুঝিনা তখন যতকথাই বলি লাভ হবে না।’
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের সামনে যখন পরে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি তাদের। কিন্তু বিষয়টা মূলত ট্রাফিক বিভাগের। আমাদের দ্বায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা দেখা, এসব দেখার জন্য ট্রাফিক আছে। এখানে দু’একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট দিলে সবঠিক হয়ে যাবে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার জানা ছিল না। তবে উল্টোপথে চলাচলের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’