লাউয়াছড়ায় বেদখল ঠেকানো যাচ্ছে না



তোফায়েল পাপ্পু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মৌলভীবাজার, বার্তা২৪.কম
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া উদ্যান/ ছবি: বার্তা২৪.কম

মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া উদ্যান/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বেদখল হয়ে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাউয়াছড়ার বনভূমি। দিন দিন বনের জমি দখল হয়ে পড়ায় আবার সংকটে পড়েছে বন্যপ্রাণী। প্রায়ই বন্যপ্রাণী বনের বাইরে বেরিয়ে আসার ঘটনা ঘটছে।

অনেক সময় মারাও যাচ্ছে এসব বণ্যপ্রাণী। সবর্শেষ বুধবার (২ জানুয়ারি) লাউয়াছড়ায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মারা যায় একটি মায়া হরিণ। এর আগেও লাউয়াছড়ায় বেশ কয়েকটি হরিণ ট্রেনে কাটা পড়ে। দিন দিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মৌলভীবাজার রেঞ্জের প্রায় দুই হাজার ৭৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্যে এই বনের প্রায় এক হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ, সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্র্যময় বন গবেষণা কেন্দ্রসহ এই উদ্যানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ। লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। নানা সমস্যা ও সংকটে ওখানকার প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যগুলো এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/06/1546792350513.gif

জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর বনের জমি বেদখল হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। বনের জমি দখল করে ব্যক্তিমালিকানায় লেবু, আনারসসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। ফলে বন্যপ্রাণির আবাসস্থল সংকট ও উদ্যানের পরিসর ক্রমাম্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ডরমিটরি টিলা সংলগ্ন পূর্ব এলাকায় প্রায় ১৫ একর ভূমি দখল করে গত চার বছর ধরে লেবু বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। ডরমিটরি এলাকার পশ্চিম পার্শ্বে হীড বাংলাদেশ অফিস সংলগ্ন জাতীয় উদ্যানের আরও একটি টিলার প্রায় ১৫ একর ভূমি দখলে নিয়ে লেবু বাগান গড়ে তোলা হয়েছে।

লেবু বাগান ঘেষা টিলা সমুহে গাছগাছালি ও লতাগুল্ম কেটে টিলা খসে নতুন করে বাণিজ্যিকভাবে আবাদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসব টিলায় দীর্ঘদিন ধরে টিনসেড ঘর করে লোকজন বসানো হয়েছে দখলকৃত টিলা দেখভালের জন্য।

স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল এসব টিলাভূমি দখলে নিলেও বনভিবাগ বিভাগ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ফলে উদ্যানে বসবাসরত বন্যাপ্রাণীর আবাসস্থল সংকোচিত হয়ে আসছে। জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, যারা এসব ভূমি দখল করছে তারা এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা বনভূমি দখল করে অবৈধভাবে লেবু বাগান গড়ে তোলেছে। এদের কেউ কেউ ইতোপূর্বে জাতীয় উদ্যান সহব্যবস্থাপনা কমিটির সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় সহকারী বন সংরক্ষক মো.আনিসুর রহমান বলেন, ‘গত ৫ ডিসেম্বর ডরমিটরি এলাকা সংলগ্ন দখলকৃত এলাকা উচ্ছেদ করে আমাদের আওতায় নিয়ে আসছি। তবে হীড বাংলাদেশ সংলগ্ন অফিসের পার্শ্ববর্তী টিলা দখলে নিয়ে টিনসেড ঘরে লোকজনের বসবাস বিষয়ে জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

   

টাকা লেনদেনের জেরে হত্যা, মূল আসামি গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাপড়ের ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত টাকা লেনদেনের জেরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয় নারায়ণগঞ্জের পিয়ার আলী স্বপন (৩৫) কে। এ  ঘটনায় জড়িত হত্যাকারী ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আসামি নুরুল আমীন’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

মঙ্গলবার (৭ মে) র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার এম. জে. সোহেল এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর দক্ষিণ কেরণীগঞ্জ এলাকা থেকে র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১৪ এর যৌথ আভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এম. জে. সোহেল বলেন, গত ১১ মার্চ সকালে নারায়নগঞ্জ সদর নৌ থানায় কর্মরত এসআই/ মো. সবুর মিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ নৌ টহল করা কালে সংবাদ পাওয়া যায় যে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার আলআমিন নগর সাকিনস্থ শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড়ে একটি অজ্ঞাতনামা ভিকটিমের (৩৫) মৃতদেহ ভাসছে।

পরে এসআই মো. সবুর মিয়া মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুলকালে অজ্ঞাতনামা ভিকটিমের চোখের ডান পাশে ও কোমরের উপরের তলপেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের মাধ্যমে কাটা রক্তাক্ত জখম এবং বুকে রক্ত জমাট আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় অজ্ঞাতনামা আসামিরা গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে শাতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় নারায়নগঞ্জ সদর নৌ থানায় কর্মরত এসআই মো. সবুর মিয়া বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পর প্রাথমিক তদন্তে ভিকটিমের নাম পিয়ার আলী স্বপন (৩৫) এবং ভিকটিম নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকায় বসবাস করতেন বলে জানা যায়।

ভিকটিম স্বপনের সাথে আসামি নুরুল আমিন (৪২) এবং আসামি নুরুল আমিনের ছোট ভাই রুহুল আমিন (৩৯) অংশাদারিত্বের ভিত্তিতে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভিকটিমের সাথে বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আসামি নুরুল আমিন ও রুহুল আমিন অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামিদের সহযোগীতায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে হত্যাকরে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর থানার আলআমিন নগর সাকিনস্থ এস এস ডক ইয়ার্ড সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।

এ ঘটনায় মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। ঘটনাটি জানতে পেরে র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১৪ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল পিয়ার আলী স্বপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ৬ মে আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টার দিকে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১৪ এর সহযোগিতায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন কদমতলী এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে স্বপনকে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আসামি নুরুল আমিন (৪২), কে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে মামলা রুজুর পর হতে নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য রাজধানী ঢাকা, আশুলিয়া ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

;

হাওরে ধান কাটার ধুম, রাস্তা যেন ধান শুকানোর মাড়াইখলা!



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) 
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলসহ সবখানেই এখন ধান শুকানোর ধুম। নাওয়া খাওয়া ভুলে এখন চলছে ধান ঘরে তোলার চেষ্টা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবছর ফলন হয়েছে ভালো। এরইমধ্যে ৮০-৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ। বাকিগুলো কয়েকদিনের মধ্যে কাটা শেষ হবে। এখন চলছে পুরোদমে ধান মাড়াই এর কাজ। রোদের আসায় রাস্তায় চলছে ধান মাড়াই।

হাওর এলাকার রাস্তা, স্কুল, বাড়ির বারান্দায়, মাঠে এখন ধান শুকানোর কাজ চলছে। বাতাসে ধানের মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে। পরিবারের সবাই এখন শ্রমিক হয়ে কাজ করছে।

হাওরাঞ্চলে বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের শেষদিকে উৎসব মুখর পরিবেশে এখন সেই ধান রাত জেগে সিদ্ধ করে সকাল থেকে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। রাত-দিন পরিশ্রমের পরেও কোন ক্লান্তি নেই তাদের। উৎপাদিত ফসলের বাম্পার ফলন ও দাম আশানুরূপ হওয়ায় খুশি কৃষকরা।

কৃষকরা সড়কে ধান শুকানোর জন্য বাড়ি থেকে সিদ্ধ ধান বস্তায় ভরে বাইসাইকেলে করে এনে রাস্তার উপর ঢালছেন। আর কৃষাণীরা সে ধান পা দিয়ে আলগা করে দিচ্ছেন। তিব্র গরমে তাপপ্রবাহ রোদে সোনালী ধানে পা দিচ্ছেন কৃষাণীরা। অনেকেই হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি থেকেও বিক্রি করছেন তাদের উৎপাদিত ফসল।

জেলার ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী হাওর ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ দখল করে ধান শুকানোর ধুম পড়েছে। প্রচণ্ড রোদেও নেই কৃষক কৃষাণীদের ক্লান্তি বরং ধান শুকাতে পেরে স্বস্তির হাসি দেখা দিয়েছে তাদের চোখে-মুখে। ধান ও খড় শুকানোর কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান শুকানোর কাজ করছেন তারা। দ্রুত ধান শুকাতে মাঠের ঘাসের ওপর বিছানো হয়েছে ছোট-বড় পলিথিন। আর সেই পলিথিনে শুকানো হচ্ছে ধান। কেউ ধান উল্টিয়ে দিচ্ছেন, কেউ ধানের আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। অনেকেই তাদের উৎপাদিত ফসল রোদে শুকিয়ে হাটে তোলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে প্রখর রোদ আর বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ধান ঘরে তোলা ও বাজারজাত করার কাজ। অবসর নেই কারও। অস্বস্তির রোদই যেন তাদের স্বস্তি এনে দিয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।

ইটনা উপজেলার বরিবাড়ি গ্রামে সড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন হালিমা আক্তার (৪৭) তিনি বলেন, 'নিজের উঠান আছে। সেটা ছোট আর রোদ কম পাওয়া যায়। এনে যে ধান ২-৩ দিনে শুকাইবে সেই ধান হামার উঠানে শুকাইতে ৮-৯ দিন নাইগবে। পরে যদি বৃষ্টি আসে তাহলে আরও বিপদ। কামের মানুষও পাওয়া যায় না। পাইলেও দাম বেশি দেওয়া নাগে। সেই জন্য রাস্তায় আসছি ধান শুকাইতে। সময়ও কম লাগে, টাকাও বাঁচে।'

অন্যদিকে হাটগুলোতে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি ও বেচাকেনা। কৃষকরা তাদের ধান ভটবটি, মিনি ট্রাক ও নৌকা দিয়ে হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন। আশানুরূপ দাম হাঁকলেই বিক্রি করছেন খুচরা ও পাইকারি ক্রেতাদের কাছে। হাটে ধানের দাম ঠিক হওয়ার আগেই কৃষকদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। বোরোর বাম্পার ফলনে ও ভালো দামে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

ইটনা উপজেলার শিমুলকান্দি গ্রামের কৃষক সোবান আলী জানান, 'পরিশ্রম আর পরিচর্যায় এ বছর বোরো মৌসুমে তাদের উৎপাদিত ফসলের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বর্তমানে ধানের দামও ভাল হওয়ায় তারা বেজায় খুশি। কেন না খরচ বাদ দিয়ে তাদের বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। এটা গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষকদের হিসাব বলে যোগ করেন তারা।'

তিনি আরোও জানান, 'কিছু জমিতে কাটা-মাড়াই কাজ শেষের দিকে। সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।'

এ বছর কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন হাওরসহ নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী এবং উজান এলাকার অন্যান্য উপজেলায়ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের দামও ভালো। মাড়াইস্থলে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে আটশ থেকে সাড়ে নয়শ টাকায়।

নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের কৃষাণী সালমা বেগম বলেন, 'এখন আমরা ধান সিদ্ধ করছি খাওয়ার চাল তৈরির জন্য। সকালে বস্তায় করে সিদ্ধ ধান সড়কে নিয়ে আসি শুকানোর জন্য। রাস্তায় পলিথিন বিছিয়ে শুকাতে দিছি। আকাশের অবস্থা ভালো আছে, সারাদিনে সব ধান শুকিয়ে যাবে বলে তিনি জানান।'

ইটনা সদর ইউনিয়নে ধান শুকাচ্ছিলেন খাইরুল ইসলাম তিনি জানান, ধান ও খড় শুকানোর জায়গার তীব্র সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, 'বাড়ির আশপাশে কোনো ফাঁকা জায়গা নেই। সে কারণে এখানে আসা। তা ছাড়া এ রাস্তায় ধান শুকানোর অনেক সুবিধাও আছে। আজকে এখানে ২০-২৩ টি পরিবারের ধান দেওয়া আছে। প্রতিটি পরিবার থেকে কমপক্ষে ২-৩ জন করে এখানে কাজ করছেন। সবাই সবাইকে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে ঝড় বা বৃষ্টি এলে ধান কখনো ভিজবে না। আমরা সবাই সবাইকে সহযোগিতা করি।'

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বলেন, ;ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে আমরা আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবে কৃষকরা। রাত জেগে কৃষকরা কাজ করছেন।'

;

ঢাকাসহ ১৫ জেলায় ৮০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস 



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঢাকাসহ দেশের ১৫টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে দুপুরের মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ মে) দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারিপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে সোমবার রাতে দেওয়া আবহাওয়ার সবশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

;

জনস্বাস্থ্যের ‘রাঘব বোয়াল’ মশিউর, টেন্ডার দিতে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ



অভিজিত রায় কৌশিক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জনস্বাস্থ্যের ‘রাঘব বোয়াল’ মশিউর, টেন্ডার দিতে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ

জনস্বাস্থ্যের ‘রাঘব বোয়াল’ মশিউর, টেন্ডার দিতে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নিয়েও প্রতারণার অভিযোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

 

# টেন্ডার নিতে জমা দিতে হয় ব্যাংকে ঘুষ পরিশোধের স্লিপ

# হাওর প্রকল্পে কাজ না করে টাকা উত্তোলন

# ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জামালপুরে বাড়ি নির্মাণ

# স্টাফ ও ঠিকাদারদের সাথে গালিগালাজ, প্রাণনাশের হুমকি

নেত্রকোনা জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান। যার দাপটে তটস্থ নেত্রকোনা জেলায় অবস্থিত সরকারি এই দফতরটি। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে তার বিরুদ্ধে রয়েছে এন্তার অভিযোগ।

কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ, টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়াসহ অফিস স্টাফ ও ঠিকাদারদের সাথে অশালীন আচরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জামালপুরে বাড়ি নির্মাণ করছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান। তার বিরুদ্ধে কেউ চক্রান্ত করছে বলে দাবি তার।

এক অভিযোগকারীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার মদন ও খালিয়াকুরী উপজেলার ৩০টি ওয়াশব্লক মেরামত কাজের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বুয়েট শাখার সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ঘুষ বাবদ ৩ লাখ টাকা নেন তিনি। টাকা নিয়েও কাজ না দিলে সেই টাকা ফেরত চাইলে তার উপর চড়াও হন তিনি। চিফ ইঞ্জিনিয়ার বরাবর অভিযোগ দিলে মশিউর দম্ভ করে বলেন, যা খুশি কর, ওইসব চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমার কিছুই করতে পারবে না।

এছাড়াও কলমাকান্দাতে হাওর প্রকল্পের ৫০টি নলকূপ বসানোর কাজ না করেই বিল উত্তোলন করাসহ ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জামালপুরে বাড়ি নির্মাণ করা ও বিভিন্ন কারণে স্টাফ এবং ঠিকাদারদের সাথে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এই অভিযোগ ভুয়া। যে অভিযোগ করেছে ওই নামের কাউকে আমি চিনিও না, জানিও না।

ব্যাংকের মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টে যে টাকা দেওয়া হয়েছে তার রশিদ অভিযোগপত্রে সংযুক্ত রয়েছে, আপনি যদি তাকে না চেনেন, তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টে অপরিচিত কেউ কেন এত টাকা দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই টাকাটা আমার স্টাফ জমা দিয়েছে। সেখানে একটা সাক্ষর আছে, সেটা আমার হিসাব সহকারীর। যদি সেই ঠিকাদার জমা দিতো, তাহলে তো তার সাক্ষর থাকতো। আমার হিসাব সহকারীর সাক্ষরতো আর থাকতো না।

আপনার হিসাব সহকারী বা আপনার অফিসের স্টাফ যদি টাকা জমা দেয়, তাহলে সেই টাকা জমার রশিদ কীভাবে অন্য কারো হাতে গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে মশিউর বলেন, এটাতো আমি জানি না। এটা আমারও প্রশ্ন। কারণ ওই স্লিপটা আমার কাছেও আছে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর ঠিকাদার হাজী আব্দুল ওহাবের লিখিত ‘নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান এর নগদ টাকা নিয়ে কাজ না দেওয়া প্রসঙ্গে অভিযোগ (প্রমাণক সংযুক্ত)’ অভিযোগে বলা হয়, ‘আপনার নিকট নিবেদন এই যে, আমি নেত্রকোনা জেলার একজন ৩য় সারির ঠিকাদার। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ছোট ও মাঝারি মানের কাজে অংশগ্রহণ করি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মশিউর রহমান এর কাছে কাজের কথা বললে তিনি মদন ও খালিয়াকুরী উপজেলার ৩০টি ওয়াশব্লক মেরামত কাজের প্রাক্কলন দেখিয়ে বলেন, এই কাজটি আপনাকে দিবো আপনি প্রস্তুতি নেন, ই-জিপি ( E-GP) সিস্টেমে কিভাবে কাজ দিবেন এইটা বললে তিনি বলেন ম্যানুয়াল টেন্ডার করে কোটেশন করবো।, আপনি কাজটি করতে চাইলে আমাকে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে, তিনি আমাকে সোনালী ব্যাংক, বুয়েট শাখার একটি হিসাব নম্বর ৪৪০৪০৩৪১৬৬১২৪, দেন। ওই ঠিকানায় টাকা প্রেরণপূর্বক মূল স্লিপ তাকে দিতে বলেন। কথা অনুযায়ী গত ৩ এপ্রিল তারিখে সোনালী ব্যাংক নেত্রকোনা শাখায় গিয়ে টাকা জমা প্রদান করি এবং মূল স্লিপ উনাকে জমা দিয়ে ওয়ার্কঅর্ডার দিতে বলি।’

অভিযোগে হাজী আব্দুল ওহাব আরও লেখেন, ‘উনি (মশিউর) ৮ তারিখে দেখা করতে বলেন। ৮ তারিখে উনার কাছে গেলে উনি বলেন, এখন একটু সমস্যা হইতেছে মাস দুয়েক দেরি করেন। আমার অনেক কষ্টের টাকা আমি ফেরত চাইলে আমার উপর তেড়ে আসেন এবং আমাকে বলেন যা খুশি কর ওইসব চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমার কিছুই করতে পারবে না। তৎক্ষণাৎ চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যারকে কল দিলে উনি ফোন কেটে দেন। আমি ঠিকাদার শফিক ভাইয়ের সাথে আলাপ করলে তিনি সচিব বরাবর অভিযোগ দিতে বলেন। শফিক ভাই আরও বলেন হাওর প্রকল্পের অনেক অনিয়ম করেন তিনি, কলমাকান্দা উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার উনার খাস লোক এবং একই এলাকার, কলমাকান্দাতে হাওর প্রকল্পের ৫০টি নলকূপ বসানোর কাজ না করেই বিল উত্তোলন করেছেন, আরও জানতে পারি ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি জামালপুরে বাড়ি নির্মাণ করতেছেন। তিনি ভীষণ ধরনের বদমেজাজি, অফিস স্টাফদের সাথে এবং ঠিকাদারদের সাথে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং মারার হুমকি দেন, শুনেছি।’

তিনি অভিযোগপত্রে আরও বলেন, ‘নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্যের প্রকৌশলী মশিউর বুয়েটের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। দপ্তরে অভিযোগ দিলে কোনো কাজ হয় না, তাই বাধ্য হয়েই আপনার বরাবর আবেদন করলাম। প্রমাণক হিসেবে উনার নিজ হিসাব নম্বরে তিন লাখ টাকা জমাদানের ব্যাংক স্লিপ এর ফটোকপি সংযুক্ত করিলাম। বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আকুল আবেদন জানাইতেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.আব্দুল আউয়াল বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি এসব অভিযোগের বিষয়ে জানি না। আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে বিষয়টি দেখব।

তিনি বলেন, তবে আমার মনে হয় না আসলে বিষয়টা এমন। অনেকতো দুষ্টবুদ্ধির লোক আছে না? ব্যাংকের স্লিপের বিষয়টা শুনেছিলাম। তবে তার মানে এই না যে, এই টাকাটা সে ওখান থেকে নিয়েছে। যারা ঘুষ নেয়, আমার যেটা মনে হয় তারা ব্যাংকের মাধ্যমে ঘুষ নেয় না। 

;