১১ বছরেও সিডরের ক্ষত শুকায়নি
আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালে এই দিনেই খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল লন্ডভন্ড করে দেয় ঘূর্ণিঝড় সিডর।
ঝড়ের দানবীয় রূপে মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালীসহ আশপাশের গ্রাম। এতে পানিতে ভেসে যায় উপকূলীয় জেলা আর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। শুধু শরণখোলাই নয়, এ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয় গোটা বাগেরহাটের অনেক গ্রাম। ঝড়ে শুধুমাত্র সাউথখালীতেই ৬১২ জন মারা যায়। এছাড়া আরও নিখোঁজ ছিল ৩৫ জন।
১১ বছরে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠলেও স্বজন হারা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষরা আজও কেঁদে ফেরে। সেদিনের ঝড়ে গৃহহীন হয়েছিল কয়েক হাজার পরিবার। সে রাতের ঝড়ে ভেসে যায় হাজার হাজার গবাদি পশু,পাখি। হারানো প্রিয়জনকে স্মরণ করে এ দিনটিতে শোক পালন করে শরণখোলাবাসী।
ঝড়ের কবলে পরা ইসমাইল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, `সেই রাইতে কই থেইকা এমন ঝড় আসছিল জানিনা। শুধু মনে আছে হঠাৎ পানিতে আমাগো পুরো ঘরডারে ভাসাইয়া লইয়া যায়। পরে মোরা অনেক কষ্টে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিছিলাম।‘
এছাড়াও ভয়াবহ সিডরের ক্ষত রয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা-কচিখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কেন্দ্রে। বনের ভেতরে হাঁটার জন্য কাঠের পাটাতন, টাইগার টিলা, অধিকাংশ গাছ ভেঙে তার গুঁড়িগুলোও যেন আজো সিডরের সাক্ষী হয়ে আছে। সিডরে শুধু বন না, অসংখ্য বন্যপ্রাণীও মারা গেছে।
অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিডরের পরেও এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার গড়ে ওঠেনি। যা আছে, সেগুলোর অবস্থা নাজুক। এছাড়া প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১১ বছরেও শরণখোলাবাসীর প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ৩ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে শোনা গেছে।
স্থানীয় সূত্রের তথ্য মতে, উপকূলীয় এলাকার বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে সিডর বিধ্বস্ত বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। যার কাজ এখনো চলছে ধীরগতিতে। চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ নির্মাণ কাজ করছে।
প্রকল্পের প্রকৌশলী শ্যামল কুমার দত্ত জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রকল্পে ৬৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ করছে সিএইচডব্লিউই নামে চাইনিজ একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিন বছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তারা এ পর্যন্ত মাত্র ৫০ ভাগ কাজ শেষ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে শরণখোলা উপজেলাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। হাজার হাজার বাড়িঘর ও গাছ পালা বিধ্বস্ত হয়। ধসে যায় মাইলের পর মাইল ওয়াপদা বেড়িবাঁধ। পরবর্তীতে উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে আধুনিক, টেকসই ও উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি ওঠে।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরণখোলা মোড়েলগঞ্জবাসীকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে একটি উঁচু ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দেন। সে লক্ষ্যেই ৬৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজের ধীর গতি ও নদী শাসনের ব্যবস্থা না থাকায় এখনো শঙ্কিত উপকূলীয় অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।