গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান কানাই লাল শর্মা



ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়া: ডা. কানাই লাল শর্মা। সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী এক অদম্য সাঁতারু। ১৯৭১ সালে মুক্তিফৌজের সাহায্যার্থে ঐতিহাসিক লাল দিঘিতে ৯০ ঘণ্টা ১৭ মিনিট সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন ডা. কানাই লাল শর্মা।

১৯৩০ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের শালদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা স্বর্গীয় অভিমুন্য শর্মা। কানাইলাল শর্মা পেশায় চিকিৎসক। থাকেন কুষ্টিয়া শহরতলীর মঙ্গলবাড়ীয়া এলাকায়। সংসার জীবনে তিনি ৩ মেয়ে এবং ২ ছেলের জনক।

কানাই লাল শর্মার বয়স যখন ৫-৬ বছর। তখন একদিন তার বাবা নৌকায় করে গড়াই নদী পার হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ঝড়ে মাঝ নদীতে এসে নৌকাটি ডুবে যায়। এতে অনেকেই মারা যায়। সৌভাগ্য বসত কানাই লাল শর্মার বাবা অভিমুন্য শর্মা প্রাণে বেঁচে যান।

নদীতে নৌকা ডুবেছে শুনে চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে। কানাই লালকে কোলে নিয়ে তার দিদিমা নদীর ঘাটে আসেন। চারিদিকে মৃত্যুর কান্না। অনেকক্ষণ পরে আসেন অভিমুন্য শর্মা। নদীর ঘাটে তখনও অপেক্ষা করছে অভিমুন্যর মা। অভিমুন্য তার মায়ের কাছ থেকে কানাই লাল শর্মাকে কোলে নেন। অভিমুন্য তার মাকে বলেন, মা কানাই যেন ভালো করে সাঁতার শেখে। সেই থেকে কানাই লাল সাঁতার শিখতে থাকে। আর সেখান থেকেই সাঁতার শেখার যাত্রা শুরু। এর কিছুদিন পর কানাই লাল শর্মার মা শান্তি বেলা শর্মা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

১৯৪৪ সালে পুরাতন কুষ্টিয়া এম ই স্কুলে কানাই ভর্তি হন। তার প্রথম শিক্ষক ঝুমুর পণ্ডিত। পড়ালেখার ব্যাপারে তার অভিভাবক ছিলেন একই এলাকার দিদার বক্স মণ্ডল। পড়ালেখার পাশাপাশি কানাই লাল সাঁতার শিখতে থাকেন।

হঠাৎ করে ভারতে বেড়াতে যান কানাই লাল। এ সময় পশ্চিম বঙ্গের হুগলি ব্রিজ থেকে নৈহাটি ফেরি ঘাট পর্যন্ত ৩ মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানতে পারেন। পরে সেখানে নাম লেখিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন কানাই লাল। ৭০ জন প্রতিযোগির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন কানাই লাল। অর্জন করেন সোনার মেডেল। শুরু হয় কানাই লাল শর্মার সাঁতারের কৃতিত্ব।

এরপর ১৯৪৮ সালে কবি আজিজুর রহমানের পুকুরে ২৫ জন প্রতিযোগির মধ্যে সাঁতার কেটে প্রথম স্থান অধিকার করেন সাঁতারু কানাই লাল শর্মা। কবি নিজ হাতে কানাই লালকে পুরস্কার তুলে দেন এবং আশীর্বাদ করেন। এরপর ১৯৫৯ সালে নওরোজ ক্লাবের আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত ২০ মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন তিনি। ১৯৬০ সালের ১৪ আগস্ট কেডিএসের আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গড়াই ব্রিজ পর্যন্ত সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি।

সাঁতার দেখার জন্য এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেবী প্রসাদ চক্রবর্তী (কানু বাবু) সহ সুধী মহল এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ওই সালেই কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আয়োজনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক কমিটির মধ্যে ছিলেন ডা. তোফাজ্জল হক, ডা. নিত্য বাবু, কলেজের অধ্যক্ষসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রতিযোগিতার ৪ দিন পর হয় অনুষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও তখন পুরস্কার দেয়া হয়নি। পরে দেয়া হবে বলে জানান কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এর কিছুদিন পরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত সাঁতার দেয়ার কারণে কুষ্টিয়া মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠ মাঠে পুরস্কার দেয়ার আয়োজন করা হয়। সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান আসেন। কানাই লাল সরকারি কলেজের ছাত্র হওয়ায় আজম খান সেখানে অনুদান দেন। তবে সরকারি কলেজ থেকে আজও তার পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এরপর তিনি ঢাকা ব্রজেন দাশের কাছে সাঁতার শিখতে যান। পরিবেশ না থাকায়, চলে যান ব্রজেন দাশের ওস্তাদের কাছে কলকাতায়।

কলকাতার শৈলেন্দ্র মেমোরিয়াল ক্লাবের কোচ প্রফুল্ল ঘোষ, বোজো গোপাল পাইন ও পণ্ডিত মশায়ের কাছে সাঁতার শিখতে থাকেন কানাই লাল শর্মা। সেখানে ৬ মাস সাঁতার শেখার পর ৩৬ ঘণ্টা ৪ মিনিট সাঁতারে ভারতীয় রেকর্ড ভঙ্গ করেন সাঁতারু কানাই লাল শর্মা। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতেও খবরটি ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এরপর সেখানে বিভিন্ন সময় সাঁতার দিয়ে ৮৪টি গেমসে প্রথম হন তিনি। এরপর চলে এলেন নিজ দেশে। দেশে এসে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে কুষ্টিয়া অংশের পদ্মা নদীতে এপার ওপার হয়ে সাঁতার দেন। তারপর ১৯৬২ সালে সরকারি কলেজের পক্ষ থেকে ৫২ মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতার দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

এরপর দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৪০ কি.মি. সাঁতার দিয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। কুষ্টিয়ায় ৫০ ঘণ্টা, দৌলতপুরে ৬০ ঘণ্টা ও খোকসায় ৬০ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ভারতে যান কানাই লাল। আমেরিকান সাঁতারু মি. জন ভিসিকমেন্টের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব রেকর্ড ৮৯ ঘণ্টা ৩২ মিনিটকে অতিক্রম করেন কানাই লাল। তিনি ঐতিহাসিক লাল দিঘিতে মুক্তি ফৌজের সাহায্যার্থে ১৯৭১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ৯০ ঘণ্টা ১৭ মিনিট সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এটাই হয় তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী সাঁতারু হিসেবে নাম লেখান ডা. কানাই লাল শর্মা। এ সময় ভারতের লে. জেনারেল অরোরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলামসহ বিভিন্ন ব্যক্তিরা।

১৯৮০ সালে কানাই লাল শর্মা ৩৫০ কি. মি. সাঁতার কাটেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চৌডালা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৩৫০ কি. মি. সাঁতার কাটেন। এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি বয়স্কদের সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন। যমুনা সেতুর পাশে ভুয়াপুল ঘাট থেকে আরিচা ঘাট পর্যন্ত ৯০ কি. মি. সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। এভাবে জীবনের বিভিন্ন সময় সাঁতার কেটেছেন অধ্যাপক ডা. কানাই লাল শর্মা। এখন জীবন সায়াহ্নে এসে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ পেতে চান কানাই লাল শর্মা।

বয়সের ভারে ন্যুব্জ কানাই লাল শর্মা তার অর্জনের স্বীকৃতি দাবি করেন। সেই সঙ্গে তিনি জীবনের শেষ বয়সে এসে হলেও বিশ্ব সেরা প্রবীণ সাঁতারুর দেশ হিসেবে বাঙালির মর্যাদা বৃদ্ধির স্বপ্ন দেখেন।

কানাই লাল শর্মা বার্তা২৪.কমকে জানান, তিনি কালেক্টরেটে চাকরি করতেন। স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করায় ১৯৭২ সালে চাকরিচ্যুত হন। এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন ৯ মাসের বেতনও দেয়া হয়নি তাকে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক তার বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টির জন্য গিনেস বুকে নাম লেখানোর চেষ্টা করলেও অজ্ঞাত কারণে তা আজও হয়নি। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি তার অধিকার-মর্যাদা ফিরে পেতে চান। তার ইচ্ছা বাংলাদেশকে বিশ্ব সেরা প্রবীণ সাঁতারুর দেশ ও ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্টকে স্মরণ করে ওই দিনকে বিশ্ব ক্রীড়া দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বাঙালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা। চান সরকারি ভাবে এর স্বীকৃতি। শেষ জীবনে এমনটি প্রত্যাশা করেন ডা. কানাই লাল শর্মা।

   

বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা



আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল(যশোর)
বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা

বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা

  • Font increase
  • Font Decrease

বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বেনাপোল বন্দরে শ্রমিকদের বড় ভূমিকা থাকলেও তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কথা রাখেনি কেউ। এমনকি নিরাপদে পণ্য খালাসের সুরক্ষা সামগ্রীও জুটে না তাদের। ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, দূষিত পরিবেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সারাবছর কাজ করতে হয় তাদের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন তারা।


জানা যায়, স্থলপথে ভারতের সাথে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যে হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। আমদানির পরিমাণ বছরে ৪০ হাজার কোটি, আর রফতানি ৮ হাজার কোটি টাকা। বন্দরে এসব পণ্য খালাসের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের কেন্দ্র বন্দরটি। আর এ রাজস্ব আহরণে বড় ভূমিকা রাখছে বন্দরশ্রমিকরা। সপ্তাহে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের কাজ করতে হয় তাদের। শ্রমিকদের সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে ভারী মালামাল থেকে শুরু করে এসিডের মত পণ্য উঠানো-নামানোর কাজ করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। পরিবেশ দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো আছেই। বন্দরে আগুন লাগলে নেভাতেও বড় ভূমিকা থাকে এই শ্রমিকদের। ভারী পণ্যের চাপায়, এসিডে পুড়ে জীবনও হারিয়েছে কয়েকজন। কাজের নিরাপত্তায় হেলমেট আর গ্লাভসের দাবি থাকলেও এ পর্যন্ত সরবরাহ করেনি সংশ্লিষ্টরা। পায়নি চিকিৎসা সেবায় প্রত্যাশিত হাসপাতাল। নেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা।


বন্দর পরিদর্শনে এসে অনেকেই শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত কথা রাখেনি কেউ, এমন ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিকদের।

কয়েকজন বন্দর শ্রমিক জানান, ভারী পণ্য খালাসে নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম মেলে না। খালি হাতে এসিড ও হেলমেট ছাড়া পাথর খালাস করতে হয়। ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

বেনাপোল হ্যান্ডলিংক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান ওহিদ বলেন, বেনাপোল বন্দরে আমদানি, রফতানি পণ্য উঠানো-নামানোর কাজে ৯২৫ ও ৮৯১ দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের অধীনে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক রয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বন্দরশ্রমিকদের ভূমিকা বেশি। তাদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণে সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও বিশ্রামে ব্যবস্থা করা গেছে। বন্দরে শ্রমিকসহ সর্বসাধারণের জন্য একটি হাসপাতাল ও স্কুল তৈরির জন্য জায়গা অধিগ্রহণে কাজ চলমান আছে।

;

‘শ্রমিকদেরকেও উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে’

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

 

নারী অধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার বলেছেন, উন্নয়নের ভাগীদার যদি শ্রমিকরা না হন তবে সেই উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়ন বলা যাবে না। শ্রমিকদেরকেও তাদের উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে।

‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ বিজয়ী খ্যাতিমান এই আলোচত্রী ও আলোকচিত্র সাংবাদিকতার শিক্ষক মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সব কিছুর দাম বাড়ছে, এটা সবাই স্বীকার করছে। কাপড়-সুতা-বিদ্যুত সবকিছু বেশি দামে কিনছেন, শুধুমাত্র শ্রমিকের শ্রমটা কম দামে কেনা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না।

মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তাসলিমা আখতার। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।

বার্তা২৪.কম: আমাদের রাষ্ট্র শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কতটা সচেষ্ট হতে পেরেছে?

তাসলিমা আক্তার: মে দিবসের ১৩৮ বছর হতে চললো। এই দিবসের সূচনাই হয়েছিল শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা শ্রমের স্বীকৃতির দাবিতে। আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, রাষ্ট্র কতটা শ্রমিকবান্ধব তা বোঝার চেষ্টা করি, শ্রমিকদের অবস্থার দিকে তাকালেই তা বোঝা যাবে। ১৩৮ বছরেও এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে ৮ ঘন্টা কাজের স্বীকৃতি আছে। কিন্তু বাস্তবে কি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক বা অন্য শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজ করে বাঁচার মতো মর্যাদাপূর্ণ মজুরি পান? ৮ ঘন্টার পরেও তাদের বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করতে হয় এবং শ্রমিকদের বলার কোন সুযোগই থাকে না যে তারা বলবে, ‘আমি কাজ করব না’। কেউ যদি বলে ওভারটাইম করবে না, তাহলে তার চাকুরি থাকবে না। এটা একটা ব্যাপার আবার ওভারটাইম না করলে সে বাঁচতেও পারে না। শ্রমিকরা আসলে ৮ ঘন্টা কাজ করে না, শ্রম আইন অনুযায়ী ১২ ঘন্টা কাজ করতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে শ্রমিকরা ১৪-১৫ ঘন্টাও কাজ করে। তাহলে এই রকম একটা অমানুবিক জীবন-যাপন আমাদের শ্রমিকরা করছে। যেখানে ৮ ঘন্টা কাজ করে মর্যাদাপূর্ণভাবে বাঁচা যায় না। এই রকম একটা পরিস্থিতিতেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, মালিকরা এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই ১৩৮ বছর আগে শিকাগোতে যে শ্রমিকদের দেখা গিয়েছিল-মনে হয় যেন সেই শ্রমিকরাই আমাদের দেশে অন্যভাবে আছেন। রাষ্ট্রের শ্রমিকদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তাকে মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার সেটা না দিয়ে শ্রমিকদের কেবল মেশিন হিসাবে দেখা হয়। মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিটা এই দাঁড়িয়েছে।

বার্তা২৪.কম: শ্রমজীবী মানুষের অধিকারকে সংহত না রেখে আমরা কি উন্নত দেশে পৌছাতে পারব?

তাসলিমা আক্তার: এখন উন্নয়নের সংজ্ঞা যাঁরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন তাদের কাছে এক রকম, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক আছেন তাদের কাছে একরকম। আমরা তো মনেকরি, শিল্পমালিক বা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাঁরা আছেন তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন দিয়ে তো আর উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করা সম্ভব না। একটা দেশের কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বড় সেতু বা মেট্রোরেল দেখিয়েই হবে না। সেতু বা মেট্রোরেল নিশ্চয়ই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে যদি আমাদের দেশের যাঁরা সেতু তৈরি করছেন, মেট্রোরেল তৈরি করছে যে শ্রমিকরা-তাদের জীবনটা আসলে কোন জায়গায় আছেন? তারা কি অবস্থার মাঝে আছেন? আমাদের দেশের যে শ্রমিকরা অর্থনীতিতে বা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে তারা কতটুকু দাম পাচ্ছেন? সেই জায়গাগুলো দেখলে আমার মনে হয় যে আমাদের যারা শিল্প মালিক বা সংসদ সদস্য যারা আছেন-তাদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক অবস্থার যতটা উন্নয়ন হয়েছে, অন্যদিকে দেশের আপামর শ্রমজীবী মানুষের জীবনের উন্নয়ন কিন্তু ঘটেনি। যদি ঘটতো তাহলে আজকে দেখা যেত, আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার বা ৩০ হাজার দাবি করেছিলাম, আমরা এটা থেকে দর কষাকষি করতে চেয়েছি। কিন্তু দেখা গেল সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে যা আমাদের প্রস্তাবের ধারেকাছেও নেই। এই বেতনে শ্রমিকদের পক্ষে বেঁচে থাকাই মুশকিলজনক। শ্রমিকরা যে বেতন পাচ্ছেন, তাদের তো ৮ ঘণ্টা কাজ করলে চলছে না। এখন তাদের কাজের চাপ-টার্গেটের চাপ এত বাড়ানো হয়েছে, তাতে আগে শ্রমিকদের যতটা ক্লান্ত-অবসন্ন দেখতাম কাজের চাপে; এখন তাকে আরও ভয়াবহ ক্লান্ত দেখি। এখন অনেক সময় শ্রমিকদের সূর্যের আলোটা দেখার সুযোগও হয় না। এ রকম একটা অবস্থার মধ্যে শ্রমিকরা আছেন। এই মজুরি বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের কোনো বিশেষ পরিবর্তন আসলে হয়নি। সে তো তার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো, ভালো বাসায় থাকা-তিন বেলা ভালো খাওয়া বা ঘুমানো কিছুই করতে পারছে না। তাকে ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে এবং এমন একটা অবস্থা...রাত পর্যন্ত কাজ করে এসে বাসায় কাজ করে; তারপর রাতে ঘুমাতে পারে না বিদ্যুত না থাকায়। মধ্যবিত্তরা তো এক রকম অবস্থার মধ্যে থাকেন। শ্রমিকরা তো ভয়াবহ দূর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করছে। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে পোশাক কারখানার মালিকরা বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কারখানা ভবন আগের চেয়ে অনেক টেকসই ও নিরাপদ হয়েছে। আমরাও মনে করি যে এগুলো ইতিবাচক দিক। কিন্তু শ্রমিকের জীবনমানের উন্নয়ন কারখানার ইটপাথরের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। শ্রমিকরা মর্যাদাপূর্ণ জীবন পাচ্ছে কিনা সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের সংজ্ঞাটা কেবল ভবনের সঙ্গে যুক্ত নয়। অনেক বড় ও স্বাস্থ্যসম্মত ভবন, গাছপালা কিংবা মেট্রোরেল কিন্তু শ্রমিকের জীবনের পরির্তন আনছে না। এক্সপ্রেসওয়েসে কিন্তু শ্রমিকরা যেতে পারছেন না। মেট্রোরেলেও কিন্তু শ্রমিকরা যেতে পারেন না-যে টাকা ভাড়া দিতে হয়। পদ্মা সেতুতেও যে টোল দিতে হয় সেটাও কিন্তু কম নয়।

বার্তা২৪.কম: রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রমিকস্বার্থ দেখার জন্য সংগঠন রয়েছে। তারা কি শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর কতটা হয়ে উঠতে পেরেছেন?

তাসলিমা আক্তার: একটি গভীর প্রশ্ন। গত ১৫ বছর ধরে আমরা যে শাসনের মধ্যে বা পরিবেশের মধ্যে আছি। আমরা নিজেরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করছি, ভোটাধিকার থাকলে পোশাক শ্রমিকরাও ভোটব্যাংক হিসাবে বিশাল জায়গায় থাকতেন। ফলে যেখানে কথা বলার অধিকার থাকে না, সেখানে কিছু আশা করার থাকে না। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক উন্নয়ন করাটিই আমরা দেখি। শ্রমিকদের উন্নয়নটা করা হচ্ছে না। শ্রমিকরা যদি কথা বলে সেটা আসলে এই জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্রে প্রতিফলিত হয় না। যেটা হয় সেটা হচ্ছে শ্রমিক আদোলনকে যত বেশি ভাগ করা যায় ততোটই হয়ত ভালো, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য।

বার্তা২৪.কম: তার মানে রাজনৈতিক দলগুলি কি সংগঠনগুলি তৈরি করে শ্রমিকদের কণ্ঠকে রোধ করার জন্য?

তাসলিমা আক্তার: সকল শ্রমিক সংগঠন বা দলের কথা আমি বলছি না। সংগঠনগুলির প্রত্যেকেরই রাজনীতি থাকে, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু যে দল জনগণের কথা বলে না, জনগণের পরোয়া করে না কেবল মুখে মুখে কথা বলে-তারা রাষ্ট্রকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে। তবে কোন রাজনীতি আমাদের আন্দোলনকে বিভক্ত করে সেটাও বুঝতে হবে।

বার্তা২৪.কম: আমরা দেখি বর্তমানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলা অনেক বাম রাজনৈতিক দলের চরিত্রেও পরিবর্তন এসেছে...

তাসলিমা আক্তার: জনগণের শক্তি হিসাবে বা গণতন্ত্রের শক্তি হিসাবে যদি আমি কথা বলি আর কাজটা যদি না করি তাহলে নামটা গুরুত্বপূর্ণ নয়...যদি ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যারা জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয় তাহলে তো প্রগতিশীল বাম শক্তি হিসাবে দাবি করার সুযোগ থাকে না। সেরকম যদি হয় যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হয়ে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজেদের আখের গোছানো বা দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে তাদের অনেক হিসাব নিকাশ করতে হয়। সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থটা লঙ্ঘিতে হবেই। ক্ষমতায়ও যাঁরা আছেন গত ১৫ বছর ধরে তারা যেভাবে আছেন, তাদের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন-তারাও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা যতটা মুখে বলছেন বাস্তবে সেটার কোন প্রতিফলন আমরা দেখছি না। যদি দেখতাম তাহলে ২০২৩ সালে আন্দোলনে যে চারজন শ্রমিককে গুলিতে মারা যেতে হল সেটা দেখতাম না। যেখানে কথা বললেই আমাকে গুলি খেতে হবে, প্রতিবাদ করলে চাকুরি হারাতে হবে-এরকম একটা ভয়ের রাজনীতির পরিবেশ নিশ্চয়ই একটা গণতান্ত্রিক দেশে থাকে না। শ্রমিকরা এখন প্রতি মুহুর্তেই ভয়ের মধ্যে থাকেন। কোনভাবে যেন শ্রমিকরা সচেতন হতে না পারে সেকারণে নানা রকম প্রলোভন ও ভয়ভীতি এবং শ্রমিক নেতৃত্ব দূষিত করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা দেখছি।

বার্তা২৪.কম: ‘দুনিয়ার মজদুর-এক হও’ স্লোগান নিয়ে রাজধানী ঢাকায় অনেক রাজনৈতিক দল রাজপথে সরব হয়ে কোথাই যেন মিলিয়ে গেলেন... তাদের কণ্ঠ কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। এই যে মূল্যবোধের পচন সেটা শ্রমিক আন্দোলনকারীদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয় কিনা...

তাসলিমা আক্তার: স্লোগানটি শুধু শ্রমিক আন্দোলনেরই নয়, জনগণের স্বপক্ষের সব আন্দোলনে এতে ঐক্য খোঁজে পায়। শুধু দেশের নয়, সারা বিশে^র শ্রমিক আন্দোলনের স্লোগান। আমরা মনে করি যে, স্থানিকভাবে ও বৈশি^ক -সবভাবেই আমাদের লড়াই করা দরকার। বৈশ্বিক পর্যায়ে এই স্লোগানের যে সংহতি তা বার বার মনে করিয়ে দেয়। একটা দেশে যদি গণতন্ত্র থাকে, জবাবদিহিতা থাকে-তখন শ্রমিক আন্দোলনও শক্তিশালী হতে পারে। যদি জবাবদিহিতা না থাকে, ভয়ের রাজনীতি থাকে-সেখানে শ্রমিকদের নানাভাবে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টাই দেখি।

বার্তা২৪.কম: রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছে রাষ্ট্র?

তাসলিমা আক্তার: ওই ঘটনার পর আমিসহ অনেক আলোকচিত্রীই ছবি তুলেছিলেন। ওই ঘটনার সাক্ষী হিসাবে সারা দুনিয়ার সামনে এসেছে এবং পোশাক শ্রমিকদের জীবনের পেছনে যে নির্মম নিষ্ঠুরতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়েও একটি বড় প্রশ্নবোধক হয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক যে ভোক্তারা আছেন তাদের কাছেও...তারা যে টি শার্ট বা জামা পড়ছে তাদের ক্রেতারা জানতে পেরেছে। আমরা দেখেছি ওই ঘটনার ১১ বছর পরেও সোহেল রানাসহ আসলে যারা দোষীরা তারা শাস্তি পান নাই। ক্ষতিপূরণ আইন মাত্র ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ বা আড়াই লাখ করা..সেটা কোন মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ না। যদি এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা থাকতো তাহলে তাদের শাস্তি হতো। এখন আইনের শাসন বলে কিছু কাজ করে কিনা সেটাই তো একটা সন্দেহের ব্যাপার। কে গ্রেপ্তার হবেন, কে জামিন পাবেন-কে পাবেন না, কোন মামলার দ্রুত রায় হবে, কোনটার হবে না-এই প্রত্যেকটা জিনিস বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে আমাদের কাছে মনে হয়, পুরোটা একটা রাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। আইন নিজে চলতে পারছে না। সেইখানে সরকারের যে সদিচ্ছা সেটার অভাবের কারণেই আসলে রানাপ্লাজার ঘটনার পরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। যদি করা যেত তাহলে শিল্প মালিকরা সতর্ক হতে পারতো। তাদের যদি বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো, তাহলে সতর্ক হতো। ২ লাখ বা আড়াই লাখ টাকা যদি একটা গার্মেন্টস মালিককে দিতে হয় তাহলে তার বেশি সমস্যা হবে না। আবার যদি দেখা যায় তাজরীনের মালিকের মতো জামিনে বের হয়ে মৎসজীবী লীগের সভাপতি হওয়া যায় তাহলে সমস্যা কি? এই জিনিসগুলো বিবেচনায় আনার দরকার। সরকারের সদিচ্ছাটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখি যে, গার্মেন্টস মালিকদের একটা বড় অংশই সংসদে আছেন, উনারা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং এই শাস্তিগুলো হলে হয়ত তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে। এই একটা চক্রে মধ্যে মনে হয় আমরা আটকে আছি। আমাদের নতুন পথ খুঁজতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারা আসলে আমাদের (শ্রমিকদের) পক্ষে আর কারা আমাদের পক্ষের হয়ে দিনশেষে কাজ করছে না, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক এলাকাগুলোতে প্রলোভন দেখিয়ে নেতৃত্বকে কেনাবেচা করা হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে।

বার্তা২৪.কম: রানাপ্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর বহির্বিশ্বের চাপে পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশের কিছু উন্নয়ন হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও হচ্ছে, এটা কোন আশাবাদ তৈরি করছে কিনা?

তাসলিমা আক্তার: আমি মনে করি কিছু পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে। রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পরে মালিকরা বলেছিলেন, ৫০ বিলিয়নের শিল্পে পরিণত করবেন ৫০ বছরে, এখন আবার বলছেন ১০০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করবেন। এখন বড় বড় কারখানাগুলো আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিছুৃ গ্রিণ ফ্যাক্টরিও হয়েছে। এটা আমি ইতিবাচক মনে করি। কিন্তু এই উন্নয়নের ভাগীদার কেন শ্রমিকরা হচ্ছেন না এটাই আমার কথা। আমরা মনেকরি শিল্পের বিকাশ হওয়া দরকার, বাংলাদেশে যারা মালিকপক্ষ আছেন তারা করোনার সময়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন, তাই অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও গার্মেন্টসগুলো বন্ধ হয়নি। রফতানিখাতের মধ্যে এটাই সাসটেইনিং। এটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো বিষয়। বিজিএমইএ পোশাক শ্রমিকদের জন্যও কাজ করছে। এগুলো ভালো দিক। নতুন একটা পরিবেশ তৈরি হবে। সেই পরিবর্তন যদি হয় কেবল মালিকদের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা, সেই শিল্প আসলে কিভাবে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন করবে? এই পরিবর্তনকে আমরা তখনই উদযাপন করতে পারব যখন আমাদের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে। এই উন্নয়নের পেছনে যদি আমাদের শ্রমিকদের জীবন বলিই দিতে হয় শুধু তাহলে, তারুণ্যের ক্ষয় করতে হয়-মজুরি আন্দোলনে জীবন চলে যায়, তাহলে আসলে কিছু হবে না। এই উন্নয়নের ভাগীদার যদি শ্রমিকরা না হয় তা হলে সেটা কিভাবে টেকসই উন্নয়ন হলো? শ্রমিকরা তো তাদের উন্নয়নের হিস্যা চায়। শ্রমিকদেরকেও উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সব কিছুর দাম বাড়ছে, এটা সবাই স্বীকার করছি। কাপড়-সুতা-বিদ্যুত সবকিছু বেশি দামে কিনছেন, শুধুমাত্র শ্রমিকের শ্রমটা কম দামে কেনা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না। সুতরাং শিল্পের বিকাশের জন্যই শ্রমের মর্যাদাপূর্ণ মজুরি প্রয়োজন। যাতে ৮ ঘন্টা শ্রমেই শ্রমিকরা তা লাভ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক যেসব ক্রেতারা আছেন তাদেরকেও যাতে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায় তার জন্য..যে প্রোডাক্টটা তারা কিনেন তা যেন ন্যায্যদামে কিনেন সেসব বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করার জন্য পোশাক শিল্পের মালিকদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। শ্রমিকদের দুরবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও দায় আছে। অনেক সময় দেখি বিদেশি ক্রেতারা সচেতনতামূলক কথা বলেন, তারা শ্রমিকের ভালো চান-এমনভাবে তারা বলেন-যেন শ্রমিকদের জীবনমানের ভালো রাখার দায় কেবলমাত্র দেশীয় মালিকদের। তারা তাদের দায়টাকে অস্বীকারের চেষ্টা করেন। নিশ্চয়ই শ্রমিক ও মালিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কিন্তু এটা যেহেতু গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ সেখানে বিদেশি ক্রেতাদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা লাভের সিংহভাগই নিয়ে যান। সেই জায়গাতে তাদেরকেও যাতে জবাবদিহিতার জায়গায় আনা যায় সেই চেষ্টা করা উচিত। আমাদের মালিকদের ভাবেন কেবল তারাই ফুলেফেঁপে সম্পদশালী হবেন, আর নিজেরা নিঃস্ব হবেন। বেশিরভাগ শ্রমিক ৩০-৩৫ বছর বা ৪০ বছর পর আর কাজ করার স্পৃহা থাকে না, অল্প বয়েসেই তারা বৃদ্ধ হয়ে যান, শক্তি ক্ষয় হয়ে যায় সেটা নিশ্চয়ই আমরা কখনো চাইব না।

;

সিলেটে ৩ রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর

রেস্তোরাঁয় হামলা-ভাঙচুর

  • Font increase
  • Font Decrease

মে দিবসে সিলেট নগরীতে পৃথক স্থানে ৩টি রেস্তোরাঁয় হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার (১ মে) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় রেস্তোরাঁর মালিকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে সিলেট জেলা এবং দক্ষিণ সুরমা রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাইপাস রোডে সাউথ সুরমা সিএনজি পাম্পের পাশে শাহজালাল রেস্টুরেন্ট হামলা চালায় ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল যুবক। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা রেস্তোরাঁর টেবিলের উপরের কাচের গ্লাসসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

শাহজালাল রেস্টুরেন্টের মালিক রুহেল মিয়া জানান, রেস্টুরেন্টের সব শ্রমিকদের তিনি মে দিবেসের প্রোগ্রামে যেতে বলে আজকের জন্য তার আত্মীয়দের কয়েকজনকে এনে রেস্টুরেন্ট খুলেছেন। সকালে খোলামাত্রই শ্রমিক নামদারী দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে করে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ধোপাদীঘির পাড় ছোট্ট একটি রেস্টুরেন্টে কয়েকজন যুবক হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এছাড়া একই দিন দুপুর দুইটার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী পয়েন্টে নিউ পাঞ্চখানা রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় ১০ থেকে ১৫ জনের একদল যুবক। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেই তারা গ্লাস ভাঙচুর করার পাশাপাশি রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী আব্দুল মালিক, তার ভাই ফারুক আহমদ ও ফরহাদ আহমদ নামের একজনকে আঘাত করে আহত করেছে।

এসময় তারা রেস্তোরাঁর ক্যাশ বাক্সে রাখা প্রায় আড়াই লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াদৌস হাসান বলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঁচতে চান ক্যান্সার আক্রান্ত জাকির



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’। উপমহাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার বিখ্যাত গানের মতো বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অসুস্থ জাকির সিকদার (৪০) ও তার পরিবার।

পটুয়াখালীর মহিপুর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির সিকদার। প্রায় চার বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জাকির বর্তমানে বিছানায় শুয়েবসে দিন পার করছেন।

বুধবার (০১ মে) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নিজের সামান্য জমি বিক্রি করে সুস্থতার জন্য বেশ কয়েক দফায় চিকিৎসা নিয়েছেন জাকির। মুখের ডান পাশে একটি টিউমার রয়েছে, যা অপারেশনে প্রায় ৫-৬ লাখ টাকার প্রয়োজন। যার ব্যয় বহন করা সম্ভব না জাকির ও তার পরিবারের। তাই এই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন।

স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, আমার কোন ছেলে নেই, চারটি মেয়ে। তিন মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি, তারা স্বামীর সংসার করে। আমার সংসারে স্বামী (জাকির) ছাড়া আয় করার মত কেউ নেই। টাকা পয়সা যা ছিলো তা স্বামীর চিকিৎসায় সবই শেষ। যদি সরকারের পক্ষ হতে বা বিত্তবান কেউ সাহায্য করতো তাহলে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারতাম।

প্রতিবেশী বেলাল হোসেন বলেন, স্বল্প আয় ও ধার-দেনা করে এতদিন চিকিৎসার খরচ মিটিয়েছেন জাকির। এখন তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

চিকিৎসার জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসায় জাকির সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। এজন্য সমাজের বিত্তশালী ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করছি । আমাদের সকলের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে একটি পরিবারে। ফিরে পেতে পারেন ক্যান্সারমুক্ত একটি সুন্দর সুখের জীবন। মানবিক দিক বিবেচনা করে আপনারা আর্থিক সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসুন তার পাশে।

সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা- 01770069636 (নগদ পার্সোনাল)।

;