ঘটনা ছাড়াই মামলা, মৃত-হাজতি-প্রবাসীরাও আসামি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি ও ঘটনা ছাড়াই মৃত, হাজতি ও প্রবাসীসহ ৭৭ জনের নাম উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকেও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান, হত্যা পরিকল্পনা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এই মামলাটি দায়ের করা হয়।
আশুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় জামায়াতের রোকন মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা শফিউল আলম ফরিদকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা ও জেলাজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। তবে মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন থানা কর্তৃপক্ষ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সোনারামপুর এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে জোটকর্মীরা তাদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন এমন ৭৭ জনের নাম উল্লেখসহ ২৫০-৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন এসআই সুদীপ্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না।
মহাসড়কের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওইদিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আদালত থেকে নেয়া মামলার এজাহারের ২ নাম্বার আসামি হিসেবে উপজেলার খড়িয়ালা গ্রামের মৃত মৌলুভী হাসান আলীর ছেলে কাইয়ুম চৌধুরীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ তিনি ২০১৫ সালের ৯ আগস্ট মারা গেছেন।
মৃত কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী দিলরুবা বেগম বলেন,‘তিন বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আসামির তালিকায় তার নাম দেয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা মর্মাহত হয়েছি।’
১১ নাম্বার আসামি চরলালপুর গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে আলীম গত এক বছর যাবৎ সৌদি আরবে অবস্থান করেছে বলে তার পরিবারের দাবি। মামলার ১৫ নাম্বার আসামি চরচারতলা গ্রামের মৃত কাদির মিয়ার ছেলে রুহুল আমিন অন্য একটি মামলায় তিন মাস যাবৎ জেলহাজতে রয়েছেন। মামলার ৪৭ নাম্বার আসামি মৃত আব্দুল কাদির মাস্টারের ছেলে এনামুল হক মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন বলে কোম্পানি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মামলার ঘটনার তারিখ ও সময়ে ৫৪ নাম্বার আসামি উপজেলার লালপুরের হাফিজুর রহমান বাবুলের বাবা মারা যাওয়ায় লাশ দাফন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামি আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ জানান, তিনি মামলায় উল্লেখিত তারিখ ও সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ছিলেন। এদিন আশুগঞ্জে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মসূচি ছিল না। সরকার বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ করতে সারাদেশেই এ ধরনের গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। একই ধারাবাহিকতায় সরকারের অপতৎপরতা চরিতার্থ করার উদ্দেশে এই মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু জানান, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার দিন ও সময়ে আশুগঞ্জে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল না এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা আশুগঞ্জে ঘটেনি। মহাসড়ক অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি থাকলে স্থানীয় সাংবাদিকরা অবশ্যই জানতেন।
আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম তালুকদার জানান, কোনো ঘটনা ছাড়াতো আর মামলা হয়নি। তবে মামলায় মৃত কোনো ব্যক্তিকে আসামি করা হয়নি। অন্য কোনো আসামির নামের ব্যাপারে অসঙ্গতি থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।