রাজনৈতিক তর্কটাইকেই ভালোবাসতেন রাইসুল
নিরেট ভদ্রলোক, স্বভাবসুলভ মৃদু হাসি, নির্ভিক, সৃষ্টিশীল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল হক বাহার রাজনৈতিক তর্কটাকে ভালোবাসতেন। তর্ক, বির্তক, আলোচনা, সমালোচনার মধ্যে দিয়ে দেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, সমস্যা সম্ভাবনা, অগ্রগতি সঠিক পথে পরিচালিত করার হাতিয়ার বলে মনে করতেন তিনি।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে রাইসুল বাহারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা এভাবে গভীর চিত্তে স্মরণ করেন তাঁকে।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইবরাহিম হোসেন বাবুল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা এতটাই অসহিষ্ণু যে বিরোধী মত, সিদ্ধান্ত, পরামর্শ গ্রহণ করতে পারিনা। এর মধ্যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন রাইসুল বাহার। মৃদু হাসিসুলভ ভঙ্গিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধানের পথ খুঁজতে ভালোবাসতেন। তাঁর জ্ঞান-চিন্তা, চেতনা সর্বদাই মুক্ত আলোচনার পথিক। তিনি মনে করতেন রাজনীতিকে ভালোবাসতে পারলে প্রকৃত অর্থে দেশের জনগণকে ভালোবাসা যায়।
সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা গবেষক শামসুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, সব সময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করতেন। আমরা যতক্ষণ তাঁর সাথে কথা বলতাম কখনও বিরক্ত হতে দেখেনি। প্রথম জীবনে বন্দরে চাকরি করলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় চাকরি ছেড়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খুবে বেশি উচ্চ শিক্ষা না থাকার পরেও তিনি যেভাবে সাংবাদিকতায় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তার অকল্পনীয়।
তার এমন প্রস্থানকে তরুণ সাংবাদিক ও দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে মনে করছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবুল মোমেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে রেখে গেছেন।
এর আগে সকালে শেষ বারের শ্রদ্ধা জানায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ মার্কসবাদী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, চট্টগ্রাম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি চট্টগ্রাম,পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়স, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, শিল্পকলা অ্যাকাডেমী, গণমুক্তি ইউনিয়ন, ফুলকী, সমাজ সমীক্ষা সংঘ, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা ট্রাস্ট প্রমুখ।
বন্দরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে শায়িত করা হয়।