সিসিক মেয়র আরিফুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
আরিফুল হক চৌধুরী

আরিফুল হক চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন কাউন্সিলররা। স্বজনপ্রীতি, কমিশন বাণিজ্য ও পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া জায়গা অধিগ্রহণের অভিযোগও করেন তারা।

এসব অভিযোগ বুধবার (৪ মার্চ) অথবা বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন কাউন্সিলরা।

ইতোমধ্যে সিসিকের মোট ৩৬ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২২ জন অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। স্বাক্ষরিত অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও মেয়রের একান্ত সচিব বরাবর পাঠানো হবে।

কাউন্সিলদের অভিযোগ, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাধারণ সভায় উপস্থাপন ও আলোচনা না করে বর্তমান পরিষদকে উপেক্ষা করে দক্ষিণ সুরমা এলাকার তেঁতলী ইউনিয়নের বানেশ্বরপুর মৌজায় জায়গা অধিগ্রহণ করেছেন। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে টাকার বিনিময়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিভিন্ন শাখায় লোক নিয়োগ করেছেন তিনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিল পাওয়ার ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করেন মেয়র।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ২২ কাউন্সিলরের মধ্যে বিএনপি দলীয়ও একাধিক কাউন্সিলরও রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ও মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও রয়েছেন।

২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ২২ কাউন্সিলর সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর মাধ্যমে মেয়রের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেব। আশা করি মন্ত্রণালয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগ জানানো ২২ কাউন্সিলরের নাম পরে জানানো হবে।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

   

নাগরী লিপি রক্ষায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান প্রধান বিচারপতি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সিলেটি নাগরী লিপি’ রক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাতে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করলে বিচার বিভাগ পূর্ণতা লাভ করে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

সিসিক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রধান বিচারপতি এবং ‘সিলেটি নাগরী লিপি’ রক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত একিউএম নাসির উদ্দিন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন খান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিত সিংহ, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির, জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অসিম পুরকায়স্থ, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য এডভোকেট রুহুল আনাম মিন্টু। সিলেট জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

;

লাগেজ- ট্রলির চাকায় ঘুরছে কুলিদের ভাগ্য



রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
লাগেজ- ট্রলির চাকায় ঘুরছে কুলিদের ভাগ্য

লাগেজ- ট্রলির চাকায় ঘুরছে কুলিদের ভাগ্য

  • Font increase
  • Font Decrease

ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াহুড়ো শুরু হত। মানুষের ভিড় ঠেলে ট্রেনের দরজার পাশে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতেন যাত্রী নামার। ট্রেন থেকে যাত্রীর নামতে ব্যাগ বস্তা মাথায় নিতে তোড়জোড় শুরু হত। এরপর এগিয়ে দিত স্টেশনের গেট পর্যন্ত। যাত্রীরাও খুশি হয়ে বকশিশ দিত তাদের।

বলছি, রেল স্টেশনের লাল রঙের হাফ হাতা শার্ট পরে ছোটাছুটি করা কুলিদের কথা। সময়ের পরিক্রমায় আগের মতোই সেই কদর নেই কুলিদের। আধুনিকতার চাকায় ভর করেই স্টেশনের গেটে পৌঁছে যায় যাত্রীদের ব্যাগ বস্তা। প্রতিদিন হাজারো যাত্রী কমলাপুর রেল স্টেশনে আসে-যায়। তবে কুলিদের ব্যস্ততা থমকে যায় ট্রেনের দরজায়।

কিন্তু সব কিছু থমকে গেলেও জীবন তো আর থমকে থাকে না। আধুনিক ব্যাগ, ব্যাগেজে দিন দিন আয়ের পথও সংকুচিত হচ্ছে কুলিদের। এখন চলন্ত ব্যাগ, লাগেজ আর ট্রলির চাকায় ঘুরছে লেবার শ্রমিকদের ভাগ্য। সংসার খরচ চালানো তো দূর, এখন নিজের পরিশ্রমের খাবার জোটানো দায় হয়ে পড়েছে কমলাপুর রেল স্টেশনের প্রায় আড়াই শত শ্রমিকের।


এমনই একজন শ্রমিক আনোয়ার হোসেন। ১০ বছর আগে দুলাভাইয়ের হাত ধরে কমলাপুরে লেবার শ্রমিকের পেশায় আসেন তিনি। এক দশক আগে লেবারের টাকায় নিজের গ্রামের ঋণ শোধ করেন। দৈন্যদশা অবস্থা কাটিয়ে পরিবারে কিছুটা স্বস্তি এনেছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের সাথে সে আয় থমকে গেছে। স্বপ্ন ভেঙে কুলি পেশার শিকলে বাঁধা পড়েছেন তিনি।

আনোয়ার বলেন, আগের মতো আর কাজ কাম হয় না। মানুষও ডাকে না। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করি- ঘর ভাড়া বাচ্চাদের পড়াশুনা চালাতে পারি না।আমাগো অনেক সমস্যা হয়। কিন্তু আটকে গেছি একটা জালে। বাইরে যে অন্য কাজে যাব, কিন্তু কাজ পাই না। বাধ্য হয়ে এ কাজ ধরে আছি।

লেবারের আয়ের টাকায় সংসার চালানো কমলাপুর রেলস্টেশনের আড়াইশ’র বেশি লেবার শ্রমিকের জীবনের গল্প ঠিক আনোয়ারের মতোই । দীর্ঘদিন ধরে এক পেশায় থাকায় ছাড়তে পারেন না তারা। হতাশা আর তিক্ততার মাঝেও ঘাম ঝড়ান ভাগ্য বদলে। তবে ঘাম ঝড়িয়েও দৈন্যদশা থেকে মুক্তি মেলেনি হাজার বছরেও। হয়নি জীবন মানেরও উন্নয়ন।


লেবার শ্রমিকের সাথে জড়িতরা বলছেন, আধুনিক ব্যাগ ব্যাগেজ ব্যবহারে কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন তারা। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনও পড়ে কুলিদের এড়িয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাই অর্থনৈতিক সংকটও বড় ভূমিকা রাখছে নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোর কাজের পরিধি কমাতে।

আব্দুর রাজ্জাক গাইবান্ধা থেকে কাছের এক আত্মীয়ের সাথে কমলাপুরে এসে ১২ বছর ধরে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। ভোর ৪ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত স্টেশনের প্লাটফর্মে কাটালেও আয় হয় মাত্র ৪০০-৫০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে পরিবারের জন্য থাকে মাত্র ১০০-২০০ টাকা।

ভাগ্যের উপর দোষ চাপিয়ে রাজ্জাক বলেন, আমাদের ২৫০ জনের বেশি মানুষ সবাই মুক্তি চায় কষ্ট থেকে। কিন্তু ভাগ্যের লেখন আর কি করমু। মানুষ তো না বুঝে অনেক অপবাদ দেয়। ছোটলোক বলে গালি দেয়। কিন্তু দুঃখ তো বোঝে না।


তিনি বলেন, বাড়িতে ১ মেয়ে দুই ছেলে পড়াশুনা করে। বাবা মা মিলে ৭ জনের সংসার। অল্প আয়ে চালাতে খুব কষ্ট হয়। কাজ না থাকলে আয় কেমনে হবে? মানুষ তো আর আমাদের ডাকে না।

সব পেশার মজুরির নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকলেও এই লেবার শ্রমিকের নিদিষ্ট মজুরি নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের নিয়ে নানা আলোচনা হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকদের নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারো। শ্রমের ন্যায্য মজুরি টাও জোটে না এসব মানুষের ভাগ্যে। দৈন্যদশা থেকে মুক্তির স্বপ্নে দরিদ্রতার জালে আটকে যাচ্ছে তারা দিনের পর দিন।

কুলিদের জন্য সরকারের কাছে প্রণোদনা দাবি করেন কমলাপুর রেল স্টেশনে কুলিদের সর্দার মোবারক।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে আমাদের বিতাড়িত করার ব্যর্থ চেষ্টা বার বার হয়েছে। আমরা এখন ট্রলি ব্যবহার করে মালামাল বহন করি। আমাদের মানুষ যা দেয় তা নেই। এখন আধুনিক ব্যাগ বের হয়েছে। অনেকে এই পেশা থেকে চলে যাচ্ছে। তবুও কেউ কেউ আঁকড়ে ধরে আছে। সরকার অন্যান্য পেশার মতো আমাদের জন্য যেন প্রণোদনার ব্যবস্থা করে।


 

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজিকুল জামান রতন বলেন, দিন দিন শ্রমিকদের কাজের স্থান কমে আসছে। শ্রমিকের বিকল্পে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা যন্ত্র ও সরঞ্জাম তৈরি হয়েছে। যা কাজের পরিধিটা কমায় দিচ্ছে। আমরা সবাই প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের কথা বলি। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক রয়েছে ৭০ শতাংশ। তাদের নিয়ে কেউ কথা বলে না।

তিনি মনে করেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক, কুলি, হকারসহ অন্যান্য শ্রমিক যারা আছেন তাদের অধিকার নয়ে কথা বলা জরুরি।

‘তাদের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। এছাড়া তাদের কাজের স্থান নিরাপদ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ আরও খারাপ হবে। তাই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের এসব মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করতে হবে। সরকারের উচিত তাদের দিকে তাকানো।’

;

শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

শ্রমিক বাঁচলে বাঁচবে দেশ

  • Font increase
  • Font Decrease

বিখ্যাত হলিউড সিনেমা 'মডার্ন টাইমস' নির্মিত হয়েছিলো আধুনিক যান্ত্রিক শহরের সূচনালগ্নে মানুষদের অবর্ণনীয় এক যান্ত্রিক জীবনযাত্রার গল্প নিয়ে। সিনেমার শুরুতেই দেখা যায় একদল ভেড়া ছুটছে; কোনো একটা গন্তব্যে যাওয়ার জন্য যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা। পরক্ষণেই দেখা মিলে কোনো কারখানায় ছুটে চলা একদল শ্রমিকের। ভেড়ার যাপিত জীবনের সাথে মানুষের জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করে পরিচালক সে সময়কার কোনো উন্নত দেশের শ্রমিকদের পরিস্থিতিই যেন বোঝাতে চাইলেন। সেই বিংশ শতাব্দীর শ্রমিকদের যান্ত্রিক জীবনের তেমন কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন একবিংশ শতাব্দীর এই অত্যাধুনিক জীবনে এসেও ঘটেনি। ঠিক এমনটাই ছিল শিল্পযুগের সূচনালগ্নেও। বর্তমানের এই  আধুনিক ও যান্ত্রিক বিশ্বে বিচ্ছিন্নতার বাড়বাড়ন্তে ক্রমেই প্রকট হচ্ছে মানবতা রক্ষার সংগ্রাম।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটি দেশের মূল অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি হয় শিল্পখাতের উন্নয়নে। বাংলাদেশ শিল্পখাতে অনেকদূর এগিয়ে গেলেও শ্রমিকদের বেতন, ভাতা, নিরাপত্তা সেসব নিয়ে আসেনি আহামরি পরিবর্তন। চলতি বছরেও বেশ কয়েকবার শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি আদায়ে আন্দোলন করেছেন।

ধনীরা আরও ধনী হবে, আর গরিবরা আজীবন গরিবই থেকে যাবে এমন নীতিতেই চলছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। শ্রমবিভাজন ও শ্রেণি বৈষম্য, ন্যায্য মজুরি পরিশোধ না করা, শ্রমিক আন্দোলন ও হতাহতের ঘটনা এবং নিরাপত্তার অনিশ্চয়তার চিত্র প্রতিদিনই প্রায় খবরের কাগজে ভেসে উঠে। বাজারব্যবস্থার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা এ বৈষম্য ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে বাংলাদেশেও।

চলতি এপ্রিল মাসের শুরুটাই হয়েছিলো গাজীপুরের মহানগরীর জরুন এলাকার কেয়া নিট কম্পোজিট পোশাক কারখানার  বকেয়া ও বোনাসের দাবিতে হওয়া শ্রমিক আন্দোলন দিয়ে। কাজ বন্ধ করে কারখানার ভিতরে অবস্থান করেন তারা; তুলে ধরেন নানারকম দাবি। তারা তখন বলেছিলেন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের মোট চার জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের বদলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিল প্রশাসন। নিহত পরিবারকে সামান্য কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টাও করা হচ্ছিল। দারিদ্রের কারণে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের কেউ কেউ মামলা করার সুযোগ পাননি। মজুরি আন্দোলনে প্রাণ হারানো শ্রমিকের জন্য ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ, ন্যায্য মজুরি পরিশোধের দাবিতে তারা মাঠে নেমেছিলেন।

মাসের মাঝামাঝি সময়ে ২১ এপ্রিল বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রফতানিমুখী অবন্তি কালার টেক্সটাইল লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য রোজার মাসেই বিকোষাভ করেন তারা।

এভাবেই দেশের কোথাও না কোথাও, কোনো না কোনো পোশাক কারখানায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে শ্রমিক বিক্ষোভ, আন্দোলন এবং অনিরাপত্তা। দেশের উদীয়মান অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে দ্রব্যমূল্য ও বিভিন্ন আসবাবপত্রের দাম চড়াও হলেও আশানুরূপ বাড়েনি বেতন, কমেনি বৈষম্য। প্রাপ্য মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ না করার অভিযোগও অনেক।

গত বছরের নভেম্বরে শ্রমিকদের বেতন সর্বনিম্ন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়। চূড়ান্ত মজুরি প্রস্তাব অনুযায়ী, মোট মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৫৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরির মধ্যে মূল বেতন হবে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। আর মূল বেতনের অর্ধেক হচ্ছে বাড়িভাড়া। এ ছাড়া খাদ্যভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা, চিকিৎসাভাতা ৭৫০ টাকা ও যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা। প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে। নতুন মজুরিকাঠামোতে সাতটি গ্রেডের বদলে পাঁচটি গ্রেড থাকবে। কিন্তু শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণের এই সরকারি ঘোষণা তখনই প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সাথে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় নারী শ্রমিক আঞ্জুয়ারা খাতুনের।

গত ডিসেম্বর থেকে সরকার নির্ধারিত নতুন মজুরি কার্যকর হওয়ার পর জানুয়ারি মাসে নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেরি এই  শ্রমিক সমস্যার তেমন কোনো সমাধান নজরে আসেনি। বরং বিক্ষোভ, আন্দোলন, হতাহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেই নিম্নআয়ের মানুষদের জীবন।

গত ৬-৭ মাসের দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত দাম বাড়ার সাথে সাথে ক্রমেই নাজেহাল হচ্ছিল   এসব শ্রমিকদের জীবন। মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে যেখানে তাদের শ্রমেই বাড়ছে দেশের জিডিপি। তাই ধনীদের আরও ধনী হওয়ার গল্পে পিষে যাচ্ছে আমাদের এই বিশাল শ্রমিক সমাজ।

আজ মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে 'মে দিবস' হিসেবে পালন করা হচ্ছে। জাতির বিচ্ছিন্নতা ঠেকাতে শ্রমবিভাজনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। সেজন্য প্রতিটি খাতেই সঠিক মজুরি, কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

;

রিকশার প্যাডেলে জীবনযুদ্ধ বৃদ্ধ ইব্রাহিমের

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
সত্তরোর্ধ্ব ইব্রাহিম ফকির

সত্তরোর্ধ্ব ইব্রাহিম ফকির

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সত্তরোর্ধ্ব ইব্রাহিম ফকির।যে বয়সে অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। ব্যাটারিবিহীন এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে চলতে কষ্ট হলেও পেটের তাগিদে ছুটছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তরে।

বুধবার (০১ মে) ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার পশ্চিম গোবরাকুড়া গ্রামের সড়কে যাত্রী নিয়ে রিকশা চালাতে দেখা যায় বৃদ্ধ ইব্রাহিম ফকিরকে।

জানা যায়, ২০ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে দেড়হাজার টাকা দিয়ে একটি প্যাডেলচালিত রিকশা কিনে চালাতে শুরু করেন তিনি। সেই রিকশা এখনও চালিয়ে সংসারের হাল সামলাচ্ছেন তিনি।

ইব্রাহিম ফকিরের কোন ছেলে সন্তান নেই। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার তার। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়েই কোনমতে সংসার চালে বলে জানান তিনি।

ইব্রাহিম ফকির জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে এখন আর কেউ প্যাডেলচালিত রিকশায় উঠতে চায় না। যার কারণে সারাদিন রিকশা চালিয়েও ১০০ টাকা আয় হয় না। এখন প্রায় সব জিনিসের দাম বেশি, এতো অল্প আয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয় বলে জানান তিনি।

প্যাডেলচালিত রিকশা চালানোয় তিনি এই বয়সেও অন্যদের থেকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম আছেন বলে দাবি তার।

ইব্রাহিম ফকির জীবনের প্রায় শেষপ্রান্তে এসেও এই কাজে বেশ সন্তুষ্ট। পুরাতন রিকশা ছেড়ে একটি নতুন রিকশার মুখ দেখার স্বপ্ন দেখলেও টাকা জমিয়ে কেনার সামর্থ্য তার নেই।

;