ইউএস বাংলা ট্র্যাজেডি: ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া বাকি ২ লাশ শনাক্ত সম্ভব নয়



সেন্ট্রাল ডেস্ক ৪

  • Font increase
  • Font Decrease
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত যে তিন বাংলাদেশির লাশ এখনও দেশে ফেরেনি, তাদের মধ্যে দুজনকে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন নেপাল ঘুরে আসা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. সোহেল মাহমুদ। তাদের লাশ শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের এই সহযোগী অধ্যাপক। কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়ে যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হন, তার মধ্যে ২৩ জনের লাশ শনাক্তের পর সোমবারই দেশে এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে খুলনার মোল্লা আলিফুজ্জামান, বরিশালের পিয়াস রায় এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজরুল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের লাশ ফেরত আসেনি। এই দুর্ঘটনার পরপরই সরকার একটি চিকিৎসক দল নেপালে পাঠায়, তার মধ্যে সোহেল মাহমুদসহ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। সোমবার তারাও দেশে ফিরে আসেন। ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “তিনজনের মধ্যে একজনের ব্যাপারে আমরা মোটামুটি কনফার্ম যে এটা নজরুল ইসলামের লাশ। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলেও আরও কিছু তথ্যের প্রয়োজন সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে, সেসব তথ্য দিয়ে না হলে ডিএনএ নমুনা লাগবে। “আর বাকি দুজনের ক্ষেত্রে ডিএনএ নমুনা ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।” নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসও সোমবার ২৩ জনের লাশ ফেরানোর সময় বলেছিলেন, বাকি তিনজনের মধ্যে একজনের লাশ শনাক্ত করা হলেও নেপালি কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্তে কতদিন লাগবে- জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, “আরও সাত-আট দিন সময় লাগবে। নেপাল থেকে কাল লাশের ডিএনএ পাঠালে এখানে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হবে। এটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।” সিআইডি ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের উপ প্রধান আহমেদ ফেরদৌস ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, লাশ শনাক্তে স্বজনদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহে হাত দিয়েছেন তারা। সিআইডির দুই কর্মকর্তা এএসপি আবদুস সালাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিএনএ স্পেশালিস্ট আশরাফুল আলম চিকিৎসক দলের সঙ্গে নেপাল গিয়েছিলেন। ডা. সোহেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুটো টিম নেপালের কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন। লাশ শনাক্তকরণের টিমে তিনি ও সিআইডির দুজন ছিলেন। কীভাবে লাশগুলো শনাক্ত করেছেন- জানতে চাইলে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলেন, “কাউকে কাউকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে শনাক্ত করা হয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে আইডেনটিফিকেশন মার্ক ব্যবহার করে, আবার কারও ক্ষেত্রে পার্সোনাল বিলংগিংস দিয়ে শনাক্ত করা হয়েছে।” ‘পার্সোনাল বিলংগিংস’-এর ক্ষেত্রে ঘড়ি, আংটি, দাঁত কিংবা উচ্চতা মেলানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও লাশের পকেটে থাকা সিম কার্ড দিয়ে শনাক্ত করার চেষ্টাও করা হয় বলে জানান তিনি। নেপালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার বিষয়ে ডা. সোহেল বলেন, “ওখানকার ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট, অ্যানাটমি ডিপার্টমেন্ট ও ফরেনসিন ডিএনএ ল্যাবের সাথে আমরা একত্রে কাজ করেছি। ওরা ওদের নিয়ম মেনেই কাজ করেছে।” সেখানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “লাশের স্যাম্পল আইডেন্টিফিকেশন, পোস্টমর্টেম- এগুলো করতে খুব ব্যস্ত সময় কেটেছে।” ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় নিহতের লাশ শনাক্তের পেশাগত কাজের মধ্যেও মানুষ হিসেবে নিজের খারাপ লাগার কথাও জানান এই চিকিৎসক। “খারাপ লেগেছে যখন ২৩টা লাশ এম্বেসিতে নিয়ে আসলাম, আসার পরে ২৩টা কফিন একসাথে সাজানোর পর তাদেরকে যখন জানাজা দিতে দাঁড়ালাম, ওই টাইমটায় খারাপ লেগেছে।”
   

বাড়ির উঠানে গ্রেনেড নিয়ে খেলছিল শিশুরা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাড়ির উঠানে ব্রিটেনে তৈরি গ্রেনেড নিয়ে খেলছিল শিশুরা। স্থানীয় লোকজন তা দেখে আতঙ্কিত হয়ে ফোন দেন ৯৯৯ নম্বরে। ছুটে আসে সীতাকুণ্ড মডেল থানা পুলিশ। উদ্ধার করা হয় সেই ভয়ানক গ্রেনেড। তারপর বোম ডিসপোজাল ইউনিট এসে সেটি নিস্ক্রিয় করে।

রোববার (১৯ মে) সকালে সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের মহানগর এলাকার তমিজউদ্দিন সেরাং বাড়ির উঠান থেকে গ্রেনেডটি উদ্ধার করে বিকেল পৌনে ৫টায় এটি নিস্ক্রিয় করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সৈয়দপুর ইউনিয়নের মহানগর এলাকার তমিজউদ্দীন সেরাং বাড়ির উঠানে কিছুদিন আগে বাড়ির পাশের একটি পুকুর খনন করে উঠানে মাটি রাখেন। ওই মাটিতে পাওয়া গ্রেনেডটি নিয়ে খেলছিল শিশুরা।

বিষয়টি স্থানীয় আরাফাত হোসেন সাব্বির নামে এক কিশোর দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দেন। পরে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। পরে খবর পেয়ে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

সৈয়দপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোশারফ হোসেন রিপন বলেন, কিছুদিন আগে বাড়ির পাশে একটি পুকুর খনন করে উঠানে মাটি দেয়। ওই মাটির মধ্যে গ্রেনেডসদৃশ বস্তুটি নিয়ে ছোট ছোট শিশুরা খেলছিল। পরে এক কিশোর দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানায়।

সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি কামাল উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম যায়। বিষয়টি বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে জানালে তারাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় খোলা মাঠে গ্রেনেডটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এ গ্রেনেডটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার।

;

ছেলে এভারেস্টের চূড়ায়, মায়ের চোখে ঘুম নেই!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
বাবর আলীর ছবি হাতে মা-বাবা

বাবর আলীর ছবি হাতে মা-বাবা

  • Font increase
  • Font Decrease

ছেলেমেয়েরা সবাই প্রতিষ্ঠিত। লুৎফুন্নাহার বেগমের সামনে তাই অফুরন্ত অবসর। ষাটোর্ধ্ব এই নারীর অবকাশের বেশিরভাগই কাটে ঘুমিয়ে। দিনে অন্তত ১০-১২ ঘণ্টা ঘুমানো লুৎফুন্নাহারের নেশা। মায়ের সেই ‘কুম্ভকর্ণের ঘুম’ কিনা চোখ থেকে নাই হয়ে গেছে ছেলে বাবর আলী হিমালয়ের পথে পা বাড়াতেই। ছেলের এভারেস্ট জয়ের দিনেও তাই জায়নামাজে বসে এই মায়ের আকুল করা প্রার্থনা-‘আল্লাহ আপনি আমার ছেলেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন, এবার সুস্থভাবে আবার আমার বুকে ফিরিয়ে দিন।’

দীর্ঘ বিরতির পর ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে বাবর আলীর এভারেস্ট চূড়ায় পা ফেলার দিন রোববার (১৯ মে) বিকেলে মা লুৎফুন্নাহার বেগমকে বাড়িতে পাওয়া গেল ঠিক এভাবেই। চট্টগ্রাম শহরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে কয়েক কিলোমিটার উত্তরে গেলেই নজু মিয়া হাট। সেই হাটে গিয়ে বাবর আলীদের বাড়ি কোথায়-বললেই হলো। লোকেরাই দলবেঁধে পথ দেখাতে দেখাতে নিয়ে যাবে বুড়িশ্চর গ্রামে, এভারেস্টজয়ীর বাড়িতে। দুই তলা বাড়িতে ঢুকতেই যেন এভারেস্টের ছোঁয়া পাওয়া গেল! বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে বাবর আলীর পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে তোলা ছবি, কোথাওবা তার অর্জনের পদক! বাবরের একটা বাধাই করা ছবি বুকে নিয়ে মা-বাবা ছেলেকে নিয়ে খুলে দিলেন স্মৃতির জানালা।

ছেলে এভারেস্টের চূড়ায়, খুশিতে নিশ্চয় আপনিও আকাশ ছুঁয়েছেন-এমন প্রশ্নে ছেলেকে ঘিরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা লুৎফুন্নাহার একটু হাসলেন। বললেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিয়েছেন। সেজন্য আনন্দ লাগছে অবশ্যই।’ এরপর ‘কিন্তু আমি তো মা’ বলে একটু থামলেন লুৎফুন্নাহার। নাতিদীর্ঘ বিরতি নিয়ে ভয়-শঙ্কা মেশানো কণ্ঠে বলতে শুরু করেন, ‘সবসময় টেনশনে ছিলাম। এখনও আছি। আমি এমনিতেই খুবই ঘুমপাগল। দিনে ১০-১২ ঘন্টা ঘুমাতাম। কিন্তু যখন থেকে বাবর এভারেস্টের দিকে যাত্রা করল, ঘুম আমার চোখ থেকে চলে গেছে। গত দেড় মাসে মনে হয় দিনে আমি দুই ঘণ্টাও ঘুমাতে পারিনি। ঘুমাতে গেলেও ছেলের টেনশনে ঘুম ভেঙে যায়। নামাজ পড়ে বারবার আল্লাহকে বলছি-আপনি আমার ছেলেকে সুস্থভাবে আবার আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সে পাহাড় থেকে নেমে আসবে না, ততক্ষণ আমার টেনশন যাবে না।’

পাশে বসে স্ত্রীকে নির্ভার রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাবর আলীর বাবা লেয়াকত আলী। বলেন, ‘ছেলের খুব শখ ছিল একদিন এভারেস্ট জয় করবে। সে তার স্বপ্ন ছুঁয়েছে। তবে খুব সহজে আসেনি তার এই অর্জন। ধীরে ধীরে সে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেছে। ছেলের এমন গৌরবের দিনে বাবা হিসেবে অবশ্যই খুব ভালো লাগছে। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের, খুশির।’

বাবর আলীর পরিবারের এলাকায় বেশ নাম যশ আছে। তার বাবা লেয়াকত আলী কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। ২০১৭ সালে দেশে ফিরে বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। স্বামী দূরের প্রবাসে থাকলেও ছেলে-মেয়েদের বকে যেতে দেননি মা লুৎফুন্নাহার বেগম। গৃহিণী এই মা তার চার সন্তানকেই করেছেন মানুষের মতো মানুষ! তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবর দ্বিতীয়। তার বড় ভাই ব্যারিস্টার, থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। বাড়ির দ্বিতীয়জন বাবর আলী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে চিকিৎসাসেবায় নেমেছিলেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে এমফিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিজিটি সম্পন্ন করেছেন। একমাত্র বোনও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কক্সবাজার জেলা আদালতে কর্মরত আছেন। সবার ছোট ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষে বিকাশের মার্চেন্ট ডেভেলপমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঘরের এখানে ওখানে বাবর আলীর গৌরবের পদক

বাবর আলী ছোটবেলা থেকে একদিকে যেমন দুর্দান্ত মেধাবী, তেমনি আবার দূরন্তপনায়ও এগিয়ে। ছেলের এভারেস্ট জয়ের দিন বাবা লেয়াকত আলীর স্মৃতিতে ফের ফিরল ছেলের সেই ছোটবেলা, ‘ছোটবেলা থেকেই ও খুব দূরন্ত ছিল। আবার লেখাপড়ায়ও ভালো ছিল। খেলাধুলার সব ইভেন্টে বলতে গেলে তার অংশগ্রহণ থাকতো। আমার সন্তানদের মধ্যে সে একটু বেশিই অসামান্য।’

ছেলেকে নিয়ে গর্ব খেলা করে মা লুৎফুন্নাহার বেগমের চোখেমুখেও। বললেন, ‘আমার ছেলে লেখাপড়ায় ভালো ছিল, চিকিৎসক হিসেবেও বেশ সুনাম করেছিল। খারাপ কোনো নেশায় জড়ায়নি কখনো। তার নেশা শুধু একটাই, পাহাড়-পর্বতে ঘোরাঘুরি।’

রোববার বাংলাদেশ সময় পৌনে নয়টায় এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ান বাবর আলী। অবশ্য হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠতে বাবর দেশ থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন ১ এপ্রিল। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে তিনদিন পর ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু হতে উড়ে যান পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক বিমানবন্দর লুকলাতে। সেই লুকলা থেকেই মূলত শুরু হয় এভারেস্ট জয়ের পথ। শত কিংবদন্তি পর্বতারোহীদের চলা পথে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্ট বেসক্যাম্পে। একাধিকবার উচ্চতায় উঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া পর্ব চালিয়ে যান বাবর। কিন্তু কয়েকদিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাবর বিকল্প পথ বেছে নেন, ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০ হাজার ৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত। এরপর আবারও বেসক্যাম্পে ফিরে পর্বতের নিচ অংশের পথ খুলে গেলে ২৬ এপ্রিল বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে শেষ করেন উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ অপেক্ষা। ১৪ মে মাঝরাতে বেসক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা। প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে যান ক্যাম্প-২ এ, যার উচ্চতা ২১ হাজার ৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুইরাত কাটিয়ে বাবর ধারাবাহিকভাবে উঠে আসেন ২৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩ এবং ক্যাম্প-৪ এ। ২৬ হাজার ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্প-৪ এর ওপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারও শুরু হয় বাবরের যাত্রা। ভোরের প্রথম কিরণে ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় চুমু খায় বাবরের পা!

অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান বাবর আলীর পুরো অভিযানের চিত্র তুলে ধরেন বার্তা২৪.কমের কাছে। বলেন, ‘অভিযান কিন্তু এখনো শেষ নয়! বাবরের আসল লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়, সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও। এই লোৎসেতে ইতোপূর্বে কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি আর কোন বাংলাদেশি একই অভিযানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গ চড়েননি। তাই লক্ষ্য পূরণ হলে বাবর আলী করবেন এই বিপজ্জনক খেলায় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।’

কাগজে-কলমে বাবর আলীর এই অভিযান আজ থেকে দেড় মাস আগে শুরু হলেও তার কঠিন অধ্যাবসায় শুরু হয়েছিল এক দশক আগে, ২০১৪ সালে পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে। এরপর থেকেই ক্লাব সতীর্থদের নিয়ে নেপাল এবং ভারতের বহু পর্বতে অভিযান করেছেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি সামিট করেছেন নেপালের আমা দাবলাম পর্বত। পর্বতারোহণ তার নেশা হলেও সাইক্লিং, ম্যারাথন, স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো এডভেঞ্চার একটিভিটিতেও নিয়মিত জড়িত ছিলেন। এডভেঞ্চারের তাড়নায় হেঁটে ঘুরেছেন দেশের ৬৪ জেলা, সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর পথ। বান্দরবান থেকে হিমালয়, সুন্দরবন থেকে দক্ষিণ ভারত, যে জনপদেই তিনি গেছেন, সাক্ষী হয়েছেন অভূতপূর্ব কিছু মুহূর্তের। প্রকৃতির প্রতি তার এই ভালোবাসা এবং বিস্ময় প্রতিনিয়তই মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সূত্র ধরেই অবশেষে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়া থেকে পৃথিবী দেখার স্বপ্নও সার্থক করেছেন এই তরুণ পর্বতারোহী।

ছেলের স্বপ্নপূরণের দিনে মা-বাবার দুশ্চিন্তাও যেন অনেকটাই কমেছে। এবার ঠিকঠাক ঘরে ফিরলে ছেলের মনকে মা-বাবা আটকে রাখতে চান চিকিৎসাসেবাতেই। দুই প্রবীণ একজোট হয়েই বললেন, ‘ওর বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তাকে আজ সারা বাংলাদেশ চিনেছে। বাবা-মা হিসেবে আমাদের জন্য এটি অবশ্যই গর্বের। তবে আমরা চাই, এবার সে চিকিৎসক হিসেবে এগিয়ে যাক। তার ইচ্ছে তো পূরণ হলো, এবার আমাদের ইচ্ছেটা পূরণ করুক।’

মা-বাবার ছেলের এমন ‘নিশ্চিন্ত’ জীবন চাওয়া যে একটাই কারণে, সেটি কি আর বলতে হয়! এভারেস্ট ছোঁয়ার গৌরব অর্জনের প্রতিটি পদক্ষেপে যে কাঁটা বেছানো। সেই কাঁটার নাম কখনো তুষারঝড়, কখনোবা তুষারক্ষত! প্রতিবছরই অজয়কে জয় করার এই রোমাঞ্চে তাই কেউ কেউ তার লক্ষ্যে পৌঁছায়, কেউবা মিশে যান বরফের দুনিয়ায়।

মা-বাবার কথা শুনে বাবরের মন কি এবার বাধা পড়বে নির্ভাবনার চিকিৎসক-জীবনে, নাকি আবারও মায়ের টেনশন বাড়িয়ে আকুলিবিকুলি করবে যেতে-দূর পাহাড়ের চূড়ায়!

;

গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

  • Font increase
  • Font Decrease

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় পৃথক দুটি স্থানে বজ্রপাতে মাহাদি হাসান ও শাহীন মাহমুদ অভি নামে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

রোববার (১৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে উপজেলার উত্তর কুহুমা এবং দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মাহাদি হাসান উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের উত্তর কুহুমা গ্রামের প্রবাসী আতিকুর রহমান মজুমদারের ছেলে। তিনি এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতকে ভর্তিচ্ছু ছিলেন। অন্যজন শাহীন মাহমুদ অভি উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকার ফজলুল করিমের ছেলে। তিনি নিজকুঞ্জরা ফাজিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুপুর ২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে মাঠে গরু আনতে যায় মাহাদি। সেখানেই হঠাৎ বজ্রপাতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময় ঘোপালের দক্ষিণ লাঙ্গল মোড়া এলাকায় বাড়ির পাশে মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ হারান অভি।

ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে তাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছি। মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি চলছে।

রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারাফ হোসেন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ তাদের বাড়িতে গিয়েছি৷ সন্তানের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এ ব্যাপারে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান ইমাম বলেন, দুপুরে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।

;

মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ, আলোর মুখ দেখেছেন কৃষকরা



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, টাঙ্গাইল
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করলে ধানের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। কৃষিকাজে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যার সমাধান দেয় সেসব গবেষণায় উপকৃত হন কৃষকরা। তেমনি গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়নে মাটি পরীক্ষা করে ধানের আবাদ করে লাভবান হয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া ইউনিয়নের জয়নাতলী গ্রামের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম।

সুষম মাত্রায় সারের প্রায়োগিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ধানের আবাদে তাঁর ফলন বেড়েছে ২৫ ভাগ। তাঁকে দেখে অন্য কৃষকেরাও মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। এতে যেমন সারের অপচয় রোধ হবে, বাড়বে ফলনও।

জানা যায়, মৃত্তিকা গবেষণা ও গবেষণা সুবিধা জোরদারকরণ প্রকল্পের অর্থায়নে মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলামের ৩০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-৮৯ জাতের ধান আবাদ করা হয়। সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করা সেই জমির ধান কর্তন এবং মাড়াই শেষে পরিমাপ করে দেখা যায়, ফলন বেশি হয়েছে অন্তত ২৫ ভাগ। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা নিজেদের মতো করে জমিতে সার দিয়েছেন, তাঁদের জমিতে ফলন হয়েছে অনেক কম। এ ছাড়া হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ে অন্তত এক মেট্রিক টন।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করেছি। জমিতে আগের তুলনায় এবছর সারে খরচ কম হয়েছে। ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে বিষের পরিমাণও কম পড়েছে। জমিতে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ফলন বেশি হয়েছে।

কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষক, আমরা ফসল উৎপাদন করি। আমরা মাটির গুনাগুন না জেনে ফসল উৎপাদন করি। এখন আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা এসে মাটির গুনাগুণ পরীক্ষা করে দেখছে, মাটির পরীক্ষার পরে জমিতে আবাদ করে দেখছি আমাদের খরচ কম হয়েছে। আর মাটি পরীক্ষা ছাড়া আমাদের খরচ বেশি হয়েছে। মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করলে ফলন বৃদ্ধি পাই। আমরা যারা কৃষক আছি মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করা ভালো। মাটির পরীক্ষা না করলে জমিতে সারের প্রয়োগটা বেশি হয়ে যায়। পোকার আক্রমণ বেশি করে। আর মাটি পরীক্ষা করে আবাদ করে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ ফলন বেশি পেয়েছি।

টাঙ্গাইল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. উৎপল কুমার বলেন, মধুপুর উপজেলার মহিষমাড়া জয়নাতলী গ্রামে একজন কৃষকের ৩০ শতাংশ জমিতে মাটি পরীক্ষা করে সার সুপারিশ করেছি। পাশাপাশি আরেকটি জমিতে কৃষক তার নিজস্ব জায়গায় আবাদ করেছে। আমরা যেটা দেখছি মাটি পরীক্ষা করে যে আবাদ করেছি এখানে প্রায় ১৫ থেকে ২৫ ভাগ সার কম লেগেছে। সারের অপচয় কম হয়েছে। অন্যদিকে ফলন প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জমিতে ব্রি ধান-৮৯ আবাদ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান হয়েছে। পাশাপাশি আমার যে প্রেসক্রিপশন সিস্টেমে যাই, এটা আমরা স্মার্ট প্রেসক্রিপশন বলছি যেখানে আমরা মাটি পরীক্ষা করে সার দিচ্ছি। অন্যদিকে আমরা রোগ পোকামাকড়ের জন্য যে প্রেসক্রিপশন দরকার সেটা তাদের করে দিচ্ছি। এর ফলে হচ্ছে কি ১৫ থেকে ২০ ভাগ সারের অপচয় কম হচ্ছে। অন্যদিকে বালাইনাশক অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদি সারা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে বছরে প্রায় সার ও কীটনাশক বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারবো। এখন যে খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় তার চেয়ে প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টন বেশি খাদ্যশস্য সারা বাংলাদেশে বেশি উৎপাদন হবে।

;