অসাধু বন্ড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিজিএমইএ



মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: সংগৃৃহীত

ছবি: সংগৃৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বন্ডেড লাইসেন্সের অপব্যবহার করে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। হাতে নাতে ধরার পর অপরাধ স্বীকারও করেছে। এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে দেশে ও বহির্বিশ্বে সমগ্র বন্ডেড ব্যবসায়ীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

কিন্তু তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যাতে জরিমানা কিংবা বন্ড লাইসেন্স বাতিল করতে না পারে সে জন্য বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

তারপরও এনবিআর ৬৬টি প্রতিষ্ঠানকে কর ফাঁকির অভিযোগে ৩২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭২০ টাকা জরিমানা করেছে। এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেট এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ মিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ডেড অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে।

পোশাক শিল্প রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজিএমইএ-কে গত ১৯ আগস্ট চিঠি দিয়েছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।

এতে বলা হয়, বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত পোশাক রফতানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামালের ব্যবহার সঠিক নিশ্চিতকল্পে প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে বিজিএমইএ’র সহযোগিতা কামনা করছি। এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন কার কি অবস্থা।

অবৈধভাবে বন্ডের ব্যবহারের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে গাজীপুরের তুরাগের মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজকে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটিকে ১২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। মাসটেক্স অনৈতিক ব্যবসার কথা স্বীকার করে এনবিআরকে টাকাও পরিশোধ করেছে। একইভাবে আইম্যান টেক্সটাইলকে ৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানটিও দোষ স্বীকার করে টাকা পরিশোধ করছে। 

এভাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের টিম, পূর্ব রামপুরার আশিয়ানা গার্মেন্টস লিমিটেডকে ৩৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, টঙ্গীর কেপরি এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, খিলক্ষেত নামাপাড়ার নাফ ফ্যাশন লিমিটেডকে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা রামারবাগের মিশুয়ার হোসিয়ারী মিলসকে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের চট্টশরী রোড, গাজী শাহ লেনের এ্যাপারেলস অপসনকে ৬৮ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের লালপাড়ার ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেডকে এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের ডিকে এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ক্যাসিওপিয়া সোয়েটারসকে ৮ লাখ টাকা এবং জেএবি লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানার টাকাও পরিশোধ করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস: গাজীপুরের পূর্ববাগবাড়ীর এম এইচ এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ৩৫ লাখ টাকা, গাজীপুরের কোনাবাড়ির এআরএইচ নীট কম্পোজিট লিমিটেডকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

একইভাবে টঙ্গীর ক্রস লাইন নীট ফেব্রিক্স লিমিটেডকে ৮ লাখ, আশুলিয়ার ডিজাইনার ফ্যাশনকে এক লাখ ৫০ হাজার, চট্টগ্রামের সরাইপাড়া গার্মেন্টস হোম (প্রা:) লিমিটেডকে দেড় লাখ, রাজধানীর মগবাজারের গ্রীন ওয়ার্ল্ড ফ্যাশনস লিমিটেডকে ১০ লাখ ৫০ হাজার, টঙ্গীর ভাদামের নিট বাজার (প্রা.) লিমিটেডকে ৫০ হাজার, গাজীপুরের ডেগেরচালার মেসার্স লেলফ ইনভেটিভ লিমিটেডকে ২ লাখ, গাজীপুরের মেসার্স স্প্যারো এ্যাপারেলকে ২ লাখ, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর মেসার্স সুফী অ্যাপারেল লিমিটেডকে ৭৫ লাখ, ময়মনসিংহের ভালুকার মেসার্স সুপ্তি সোয়েটার লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা পরিশোধ করে মালামাল খালাস করে নিয়েছে। 

ঢাকা কাস্টম হাউস: মেরিনা এ্যাপারেলস লিমিটেড ও টিএন্ডজেড এ্যাপারেলসকে ২৫ হাজার করে ৫০ হাজার এবং ওসিস ফ্যাশন লিমিটেডকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মালামাল খালাস করে নিয়েছে।

কাস্টম বন্ড কমিশনারেট ঢাকা, ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৬ টাকা জরিমানা করেছে।

এগুলো হচ্ছে-রাজধানীর দক্ষিণখানের নীপা নীট ওয়্যারস, সাভারের মেসার্স রেজা ফ্যাশন লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের মেসার্স সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ও মেসার্স সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, কচুক্ষেতের মেসার্স সিনটেক্স টেক্সটাইল, এস এ্যাপারেলস লিমিটেড, মিরপুরের মেসার্স কার্ডিয়াল ডিজাইন লিমিটেড, গাজীপুরের কুনিয়ার মেসার্স ট্রাউজার ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, কাশিমপুরের মেসার্স ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড।

এছাড়াও রয়েছে বটম গ্যালারী, মেসার্স আল ইসলাম টেক্সটাইল লিমিটেড, মেসার্স করতোয়া এ্যাপারেলস, মেসার্স কায়সার সানকো জেবিটেক্স, টিএনজেড এ্যাপারেলস, এপেক্স ল্যানজারিং, জেনোসিস ফ্যাশনস এবং লেভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড।

এর মধ্যে মেসার্স কার্ডিয়াল ডিজাইন ও মেসার্স সিনটেক্স টেক্সটাইল লিমিটেডের বন্ডেড অপব্যবহার খুঁজে পেয়েছে অডিট কমিটি। আর বাকি ১৪ প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম টিম। তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলো অপরাধ স্বীকার করে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৪ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের টিকেএম গার্মেন্টস লিমিটেড, আদিল এ্যাপারেলস, ফোকাস এ্যাপারেল, মনটেক্স এ্যাপারেলস, আজমাইন ফ্যাশন, প্রিটি এ্যাপারেলস, সার্ক গার্মেন্টস, ফ্যাশন ক্রিয়েট এ্যাপারেলস, এক্সিয়ম ফ্যাশন, ওসেন এ্যাপারেলস, টিম এ্যাপারেলস, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার, টিম এ্যাপারেলস, কর্ণফুলী ইপিজেডের হংকং ডেনিম, ভেনকট, বেসটেক এবং বিডি ডিজাইন লিমিটেড।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, এনবিআর ও আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। সব সেক্টরের কিছু অসাধু লোক থাকে। এই সেক্টরে ১-২ শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই কাজ করছে। আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস পণ্য সম্পূর্ণভাবে রফতানিমুখী। সুতরাং দেশের কোন কারখানা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করে। দেশের উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।

উল্লেখ্য,বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য বাতিল করলে বন্ড লাইসেন্স সুবিধাসহ সরকারের বেশি কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

   

টেস্ট করাতে টানাটানি, আনসারদের দৌরাত্মে বেহাল হাসপাতাল



রাকিব হাসান, গুলশান জাহান সারিকা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

"দ্য গুড ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য ডিজিস, দ্য গ্রেট ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য পেশেন্ট হু হ্যাজ দ্যা ডিজিসেজ" স্যার উইলিয়াম অসলারের উক্তিটি আর যে কোনোভাবেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বলা বাহুল্য। এখানে হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পদে পদে হতে হচ্ছে হয়রানি আর প্রতারণার শিকার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরপর দুই দিন সরেজমিন দেখে এর প্রমাণ মিলেছে। 

১৫ মে বুধবার সকাল ১১টা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শিউলি বেগম। এখানে এসে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। প্রথমে দীর্ঘ সিরিয়াল দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেও দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশেষে ডাক্তার দেখাতে পারলেও তার দেয়া টেস্টের একটি বড় তালিকা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন শিউলি। এতসব নানা রকমের টেস্ট! কোথায় করবেন কিভাবে করবেন তার কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া তিনি পাননি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু হাজির আনসার সদস্যরা। হাসপাতালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাই এখন টেস্ট বাণিজ্যের দালাল। রোগীর হাতে টেস্টের কাগজপত্র দেখলেই আনসার সদস্যরা শুরু করে দেয় ডাকাডাকি- টানাটানি। 

নিজেদের মধ্যেই চলে পাল্লাপাল্লি। কোন রোগীকে কে কব্জা করবে। যেখানে রোগীর লাইন, সেখানেই আনসারের দৌরাত্ম। টিকেট কাটতে আসা রোগীদের ভীর ঠেলে আনসার ঢুকে যাচ্ছে কারো জন্য লাইন ভেঙ্গে টিকেট কেটে দিয়ে টুপাইস কামিয়ে নিচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর সিরিয়ালেও তারা হানা দিচ্ছে। টাকা নিয়ে পড়ে আসা রোগীকে আগে সিরিয়াল পাইয়ে দিচ্ছে। ইমার্জেন্সি বিভাগে আসা রোগীদের ক্ষেত্রেও তাদের দৌরাত্ম দেখা গেলো। গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও পেছনে ফেলে আনসারের আনা রোগীদের আগে দেখা হচ্ছে। আর এসব দেখার কেউ নেই। 

কোন কোনো রোগীর স্বজনদের দাবি, আনসার সদস্যদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে কটাক্ষ আর গালাগাল শুনতে হয় তাদের। 

এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের কর্মচারী আর আনসারদের যোগসাজশে চলছে ট্রলি কিংবা হুইলচেয়ারের বাণিজ্যও। সরকারের এসব সামগ্রী রোগীর জন্য বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হলেও তা চলে গেছে এইসব অসাধুদের দখলে। তারা সেগুলো কব্জায় রেছে রোগী বুঝে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে। রোগী পৌঁছালেই তারা শুরু করে দেয় ট্রলি নিয়ে দরকষাকষী। কেউ টাকা না দিলে তাদের রোগীকে ছুয়ে পর্যন্ত দেখে না কর্মচারীরা। আর যদি কোনো রোগীর স্বজন সামান্য প্রতিবাদও করে তাহলে তাদের কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। 

পরিচয় গোপন রেখে ইমার্জেন্সি বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য আ: হাই এর সাথে কথা বলে জানা যায় এম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টসহ প্রায় সকল সার্ভিস তিনি দিতে পারবেন। 

অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যাবে কি-না? এমন প্রশ্নে বললেন, হাসপাতালের মাত্র একটা এম্বুলেন্স সেইটা কই আছে জানিনা। তবে যদি কেউ প্রাইভেট এম্বুলেন্স চায় তাহলে যেকোনো সময় তিনি ম্যানেজ করে দিতে পারি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫০০-১৬০০ টাকা হলেই চলবে। 

আনসার সদস্য আ: হাইকে দেখা গেলো একজন রোগীর আত্মীয়র সঙ্গে তার ব্যস্ত সময় কাটছে। রোগীর ব্যবস্থাপত্র /টেস্টের তালিকার ছবি তুলে হাসপাতালের কোন একজন প্যাথলজিষ্টকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিলেন। উল্টো দিক থেকে জেনে নিচ্ছেন তার খরচ কতো ইত্যাদি। যেনো তিনিই রোগীর সবকিছু। 

হাসপাতালে কি এসবের ব্যবস্থা নেই? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মীর সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, প্রতিদিন সকালে মাত্র ৫০ জন রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয় হাসপাতালে। তবে নানা রকমের সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট ছাড়া বাকি সব টেস্ট বাইরে থেকেই করতে হয়। 

ভুক্তভোগী শিউলি বেগম জানালেন, তার সন্তানের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর ও বমি। সকালে হঠাৎ জ্বরের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে টেস্ট করতে নানা রকমের ঝক্কি-ঝামেলা ও রিপোর্ট পেতে একদিন দেরি হবার কথা জানায় হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। এ সুযোগে একজন আনসার সদস্য তার হাতে থাকা টেস্টের কাগজপত্র দেখে ছবি তুলে নেন। এবং সকল টেস্ট তিনি করিয়ে দেবার আশ্বাস দেন। 

হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলা করে টেস্ট বাণিজ্যের সাথে আনসার সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এবং টেস্ট এর রেজাল্টের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বার্তা ২৪ কে বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করছি। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া আনসার সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও টেস্ট বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোন আনসার সদস্য এমন কাজে জড়িত তাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমাদের প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব শীগ্রই আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশাকরি এম্বুলেন্স যুক্ত হলেই এই সংকটেরও সমাধান হবে, বললেন ডা. শফিউর। 

এক পর্যায় প্রতিবেদকের দেয়া তথ্য ও ছবি হাতে পেয়ে পরিচালক ডা. শফিউর রহমান তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে ক্লোসড করেন। সেই সাথে এমন অনিয়মের কোন খবর চোখে পরলে সংবাদকর্মীদের জানানোর অনুরোধ করেন।

;

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, কুমিল্লা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। 

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭ টার দিকে মহাসড়কের নানকরা এলাকায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী রিলাক্স পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ ঘটনা ঘটে। 
স্থানীয়দের বরাতে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জেনেছি। দুর্ঘটনা-কবলিত গাড়িটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
;

রাণীনগরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন কালিগ্রাম মুনসিপুর গ্রামের মৃত তহির উদ্দীন মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম।

সরেজমিন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর ও ভূমি গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নির্মাণ করলেও এই প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন যাদের জমি ও বাড়ি আছে সেই সব ব্যক্তিরা। বরাদ্দ প্রাপ্তদের নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে শুরু হয় ঘর ক্রয়-বিক্রয়। এই ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকে যারা বৈধ্য উপায়ে ঘর পায়নি তারা নিরূপায় হয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘর ক্রয় করে বসবাস করছে। আবার অনেকে অল্প দামে ঘর কিনে রাখছে বেশি দামে বিক্রয়ের আশায়। এ যেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে শুরু হয়েছে ঘর-ক্রয় বিক্রয়ের মহোৎসব।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ নং ঘর বিক্রয় করেন মো. বেনো হোসেন, ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫ নং ঘর মো. ফেকরুল বিক্রয় করেন ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলীর কাছে এবং একই ঘর ইউনুছ আলী বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭ নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। ডাকাহার গ্রামের ছলিম উদ্দীনের নিজস্ব জমি থাকার পরও বাপ-ছেলে ২টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে, এছাড়াও তারা ২টি ঘর বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করে রেখেছে। রহমান কবিরাজ ওই গ্রামের মধ্যে তার ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি আছে ,তবু ২টি ঘর কিনে রেখেছেন তিনি।

আশ্রয়ণের সহ-সভাপতি (ডাবওয়ালা) হাচিন আলীর জমি ও বাড়ি থাকার পরও তার মা হাসিনা বেগমের নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দামাদামি চলছে। আশ্রয়ণের এসব ঘর বিক্রয়ের মূল হোতা হাচিন আলী বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, হাচিনের কোনো কিছুর অভাব নেই। তার গ্রামের মধ্যে অনেক সম্পদ আছে। ঘরগুলো নিজে দখল করে আছে এমনকি সে বিলাসবহুল জীবন কাটায় এই ঘরে।

অভিযোগের সত্যতা মিলে সেখানে গিয়ে, হাচিনের ঘরে নামি-দামি আসবাবপত্র, ফোনসহ বিলাসবহুল জীবন কাটছে। ঘরের রং বদলিয়ে আলাদা রং করা হয়েছে। যা দেখে বুঝার উপাই নেই এটি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর।

এই প্রকল্পে ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ব্যতিত সবই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যার মুজিব বর্ষের মূল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল । অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

উপকারভোগী নারগিসের কাছ থেকে ৩০ নং ঘর ক্রয় করেন আশরাফুল, যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন ঘর পাইনি তবে নারগিস আমাকে বসবাসের জন্য ঘরটি থাকতে দিয়েছে। ক্রয় করেছেন কিনা প্রশ্নে বলেন, কাগজ করে নিয়েছি তবে কোন টাকা দেয়নি।

এ ব্যাপারে একডালা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম (আপেল) জানান, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৫৯টি ঘর আছে। এখানে প্রকৃত ভূমিহীনরা ঘর না পাওয়ায় অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। ঘর বেচাকেনা হয়েছে প্রমাণ করার পরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার ভূমিমিহীনদের ঘরগুলো বিক্রয় হচ্ছে। আমি মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। ঘর বিক্রির সঙ্গে আশ্রয়ণের কয়েকজন নেতা জড়িত বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;

সিলেটে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেট নগরীর মিরাবাজারে এক সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অ্যাম্বুল্যান্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাত সোয়া ১২টার দিকে মিরাবাজারেস্থ বিরতি ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।

এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত আমীন তৌহিদ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে বিরতি ফিলিং স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন ধরে যায়। পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিকে তারা এসে তা নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালান।

এ ব্যাপারে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বেলাল আহমদ জানান, আগুন লাগার পর ফায়ার ফাইটাররা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে এসে অগ্নিনির্বাপণ কাজ শুরু করেন।

তিনি জানান, আগুনের সূত্রপাত মূলত অ্যাম্বুলেন্স থেকে। আগুনে অ্যাম্বুলেন্সটি পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গেছে। তবে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আপাতত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের বিষয়ে বলা যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিরতি ফিলিং স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ হন ৯ জন। পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজন মারা যান।

;