ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের বন্যা



সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিন পার্বত্য জেলায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে অনেক এলাকা। অনেক জায়গায় প্রবল বর্ষণ অব্যাহত আছে। এতে বাড়ছে স্থানীয় জলাশয়গুলোর পানি। এর মধ্যে শনিবার (১৩ জুলাই) পাহাড় ধসে মারা গেছেন ছয়জন। সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে পার্বত্যাঞ্চল। 

বান্দরবান

বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বান্দরবানে। গত পাঁচ দিন ধরে জেলটি সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ১৯৯৭ সালের পর বিগত ২২ বছরেও এমন বন্যা দেখেননি বলে দাবি স্থানীয়দের।

বন্যার পানিতে প্লাবিত এখন পর্যটনের শহর বান্দরবান পৌরসভার চারপাশ। শনিবার (১৩ জুলাই) দিনব্যাপী ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। ফলে সাঙ্গু এবং মাতামুহুরী নদীর পানির সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্লাবন।

Flood

বন্যা কবলিত রয়েছে ৩৩টি ইউনিয়ন এবং দু’টি পৌরসভায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ। দুপুরের পর থেকে জেলা শহরে নতুন করে প্লাবিত হয় নোয়াপাড়া, জজকোর্ট এলাকা, ফায়ারসার্ভিস এলাকা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট এলাকা, বনবিভাগ এলাকা, ক্যাচিংঘাটা, হিলবার্ড এলাকা, হাফেজঘোনা, বালাঘাটা, কালাঘাটা, বাজার এলাকা ও সেনানিবাস এলাকা।

বান্দরবান-কেরানীহাট প্রধান সড়কের বাজালিয়া, দস্তিদারহাট এবং বরদুয়ারা তিনটি পয়েন্টে প্লাবিত সড়কে বন্যার পানি আরো কয়েকফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড, কলেজরোড, সার্কিটহাউজ রোড, বালাঘাটা রোড, কালাঘাটা রোড, চিম্বুকরোড, কালেক্টরেড স্কুল রোড, আলফারুক ইনষ্টিটিউটরোড, পৌরসভার অভ্যন্তরিন সবগুলো সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বন্যা ও পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে বান্দরবানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাইক্লোন সেন্টারে খোলা হয়েছে ১৩১টি আশ্রয় কেন্দ্র। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এগুলোতে অবস্থান নিয়েছে শতশত পরিবার। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে এখনো কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। শুধু আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খিচুরি ও খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

Flood

বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. ইসলাম বেবী বলেন, পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডের মানুষ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বান্দরবান শহরটি বন্যার পানিতে ভাসবে। দূর্গত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। নয়টি ওয়ার্ডের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খিচুরি ও খাবার পানি এবং শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসক মো. দাউদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করছে বান্দরবানে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে গুদামে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও আরও পাঁচটি বাড়িয়ে ১৩১টি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হবে। জেলা প্রশাসনে খোলা হয়েছে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম।

রাঙামাটি

টানা আট দিনের অব্যাহত বর্ষণের ফলে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। শনিবারের (১৩ জুলাই) এ ঘটনায় মারা গেছেন দুইজন। নিহতরা হলেন- অতুল বড়ুয়া ও সুজয় মং মারমা।

এ নিয়ে এক সপ্তাহে রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় মোট ছয় জনের মৃত্যু হলো।

কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফূলী নদীর পানি বাড়ছে হু হু করে। তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

Flood

কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফ আহম্মেদ রাসেল ও চন্দ্রঘোনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আশরাফ উদ্দিন জানান, পুরো রাঙামাটিতে দুই শতাধিক অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। সব উপজেলায় অন্তত ১৫ হাজার মানুষ ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে উঠে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রাঙামাটির সঙ্গে রাজস্থলী ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কাপ্তাইয়ের ব্যঙছড়িতেও রাস্তার ওপর পাহাড় ধসে পড়ে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে রাঙামাটির কুতুকছড়ির খামারবাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর বর্তমানে বেহাল দশা। ইতোমধ্যেই এই রাঙামাটির সব সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে নোটিশ দিয়েছে সড়ক বিভাগ।

Flood

বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে অবনতি ঘটেছে বাঘাইছড়ি, লংগদু ও বরকল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি। বাঘাইছড়িতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অন্তত দেড় হাজার মানুষ। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ।

এদিকে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন রাঙামাটির বরকল উপজেলার নিন্মাঞ্চলের হাজারো মানুষ। গত দুইদিন ধরে অধিক হারে পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে আসতে থাকায় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

ভুষনছড়া ইউনিয়নের অনেক রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে প্রাণ হারান ১২০ জন। পরের বছর মারা যান ১১ জন। এ বছর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে দুই জনের।

Flood

এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনে প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করে। কিন্তু আজও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হয়নি।

খাগড়াছড়ি

বর্ষণ কিছুটা কমেছে খাগড়াছড়িতে। তবে চেঙ্গী, মাঈনী ও ফেনী নদীর পানি কমতে থাকায় বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েভেছ, ঝুঁকিতে রয়েছে অসংখ্য স্থাপনা।

গত কয়েক দিনে দিঘীনালার মাঈনী, রামগড়ের ফেনী, পানছড়ি ও খাগড়ছড়ির চেঙ্গী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানছড়ি উপজেলার দুধুকছড়া ফুট ব্রীজ, উপজেলার চেংগী ইউপি কার্যালয় নদীর গর্ভে বিলীন হতে বসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে উপজেলার মুনিপুর-তারাবন সড়ক যোগাযোগ।

Flood

মাঈনী নদীর ভাঙ্গনে দিঘীনালার চোংড়াছড়ি, মেরুং, বোয়ালখালীর হাসিনশরপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। খাগড়ছড়িতে চেঙ্গী নদীর ভাঙনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাবার কারখানা, পৌর বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও পাহাড়ের বিভিন্ন ছোট বড় ছড়া ও খালের ভাঙনও দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে নিহত ২

আরও পড়ুন: দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা

   

নীলফামারীতে বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার 



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, নীলফামারী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে অমিচা বেওয়া (৫৬) নামে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।  

বৃহস্পতিবার (১৬মে) তার নিজ বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বৃদ্ধ উপজেলার কালিকাপুর হাজি পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। 

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত বৃদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে পেট ব্যথাজনিত রোগে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার তার প্রচণ্ড পেট ব্যথা উঠলে সহ্য করতে না পেরে নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেন। পরে স্বজনরা তার মরদেহ ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেয় পুলিশ এসে উদ্ধার করে। 

থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পলাশ চন্দ্র মন্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। 

;

টেস্ট করাতে টানাটানি, আনসারদের দৌরাত্মে বেহাল হাসপাতাল



রাকিব হাসান, গুলশান জাহান সারিকা স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা ২৪.কম 
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

"দ্য গুড ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য ডিজিস, দ্য গ্রেট ফিজিশিয়ান ট্রিটস দ্য পেশেন্ট হু হ্যাজ দ্যা ডিজিসেজ" স্যার উইলিয়াম অসলারের উক্তিটি আর যে কোনোভাবেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বলা বাহুল্য। এখানে হাসপাতালে রোগীরা চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতেই জেরবার হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে পদে পদে হতে হচ্ছে হয়রানি আর প্রতারণার শিকার। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পরপর দুই দিন সরেজমিন দেখে এর প্রমাণ মিলেছে। 

১৫ মে বুধবার সকাল ১১টা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শিউলি বেগম। এখানে এসে রীতিমতো বিপাকে পড়তে হয়েছে তাকে। প্রথমে দীর্ঘ সিরিয়াল দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেও দীর্ঘ অপেক্ষা। অবশেষে ডাক্তার দেখাতে পারলেও তার দেয়া টেস্টের একটি বড় তালিকা নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন শিউলি। এতসব নানা রকমের টেস্ট! কোথায় করবেন কিভাবে করবেন তার কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া তিনি পাননি হাসপাতাল থেকে। কিন্তু হাজির আনসার সদস্যরা। হাসপাতালের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাই এখন টেস্ট বাণিজ্যের দালাল। রোগীর হাতে টেস্টের কাগজপত্র দেখলেই আনসার সদস্যরা শুরু করে দেয় ডাকাডাকি- টানাটানি। 

নিজেদের মধ্যেই চলে পাল্লাপাল্লি। কোন রোগীকে কে কব্জা করবে। যেখানে রোগীর লাইন, সেখানেই আনসারের দৌরাত্ম। টিকেট কাটতে আসা রোগীদের ভীর ঠেলে আনসার ঢুকে যাচ্ছে কারো জন্য লাইন ভেঙ্গে টিকেট কেটে দিয়ে টুপাইস কামিয়ে নিচ্ছে। ডাক্তার দেখানোর সিরিয়ালেও তারা হানা দিচ্ছে। টাকা নিয়ে পড়ে আসা রোগীকে আগে সিরিয়াল পাইয়ে দিচ্ছে। ইমার্জেন্সি বিভাগে আসা রোগীদের ক্ষেত্রেও তাদের দৌরাত্ম দেখা গেলো। গুরুতর অসুস্থ রোগীদেরও পেছনে ফেলে আনসারের আনা রোগীদের আগে দেখা হচ্ছে। আর এসব দেখার কেউ নেই। 

কোন কোনো রোগীর স্বজনদের দাবি, আনসার সদস্যদের সাথে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে কটাক্ষ আর গালাগাল শুনতে হয় তাদের। 

এখানেই শেষ নয়, হাসপাতালের কর্মচারী আর আনসারদের যোগসাজশে চলছে ট্রলি কিংবা হুইলচেয়ারের বাণিজ্যও। সরকারের এসব সামগ্রী রোগীর জন্য বিনামূল্যে ব্যবস্থা করা হলেও তা চলে গেছে এইসব অসাধুদের দখলে। তারা সেগুলো কব্জায় রেছে রোগী বুঝে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে। রোগী পৌঁছালেই তারা শুরু করে দেয় ট্রলি নিয়ে দরকষাকষী। কেউ টাকা না দিলে তাদের রোগীকে ছুয়ে পর্যন্ত দেখে না কর্মচারীরা। আর যদি কোনো রোগীর স্বজন সামান্য প্রতিবাদও করে তাহলে তাদের কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। 

পরিচয় গোপন রেখে ইমার্জেন্সি বিভাগে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্য আ: হাই এর সাথে কথা বলে জানা যায় এম্বুলেন্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল টেস্টসহ প্রায় সকল সার্ভিস তিনি দিতে পারবেন। 

অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা যাবে কি-না? এমন প্রশ্নে বললেন, হাসপাতালের মাত্র একটা এম্বুলেন্স সেইটা কই আছে জানিনা। তবে যদি কেউ প্রাইভেট এম্বুলেন্স চায় তাহলে যেকোনো সময় তিনি ম্যানেজ করে দিতে পারি। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেলের ভাড়া কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫০০-১৬০০ টাকা হলেই চলবে। 

আনসার সদস্য আ: হাইকে দেখা গেলো একজন রোগীর আত্মীয়র সঙ্গে তার ব্যস্ত সময় কাটছে। রোগীর ব্যবস্থাপত্র /টেস্টের তালিকার ছবি তুলে হাসপাতালের কোন একজন প্যাথলজিষ্টকে হোয়াটসঅ্যাপ করে দিলেন। উল্টো দিক থেকে জেনে নিচ্ছেন তার খরচ কতো ইত্যাদি। যেনো তিনিই রোগীর সবকিছু। 

হাসপাতালে কি এসবের ব্যবস্থা নেই? এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ল্যাবের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মীর সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, প্রতিদিন সকালে মাত্র ৫০ জন রোগীর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয় হাসপাতালে। তবে নানা রকমের সংকট ও সীমাবদ্ধতার কারণে হাতে গোনা কয়েকটি ব্লাড ও ইউরিন টেস্ট ছাড়া বাকি সব টেস্ট বাইরে থেকেই করতে হয়। 

ভুক্তভোগী শিউলি বেগম জানালেন, তার সন্তানের বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর ও বমি। সকালে হঠাৎ জ্বরের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কিছু টেস্ট করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু হাসপাতালে টেস্ট করতে নানা রকমের ঝক্কি-ঝামেলা ও রিপোর্ট পেতে একদিন দেরি হবার কথা জানায় হাসপাতালের দায়িত্বরত কর্মচারীরা। এ সুযোগে একজন আনসার সদস্য তার হাতে থাকা টেস্টের কাগজপত্র দেখে ছবি তুলে নেন। এবং সকল টেস্ট তিনি করিয়ে দেবার আশ্বাস দেন। 

হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে অবহেলা করে টেস্ট বাণিজ্যের সাথে আনসার সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে এবং টেস্ট এর রেজাল্টের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউর রহমান বার্তা ২৪ কে বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে তা স্বীকার করছি। তবে সংকট কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি। এছাড়া আনসার সদস্যদের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও টেস্ট বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি কোন আনসার সদস্য এমন কাজে জড়িত তাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আমাদের প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সাধ্য অনুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে খুব শীগ্রই আরও একটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আশাকরি এম্বুলেন্স যুক্ত হলেই এই সংকটেরও সমাধান হবে, বললেন ডা. শফিউর। 

এক পর্যায় প্রতিবেদকের দেয়া তথ্য ও ছবি হাতে পেয়ে পরিচালক ডা. শফিউর রহমান তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত আনসার সদস্যকে ক্লোসড করেন। সেই সাথে এমন অনিয়মের কোন খবর চোখে পরলে সংবাদকর্মীদের জানানোর অনুরোধ করেন।

;

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেট, বার্তা ২৪.কম, কুমিল্লা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। 

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭ টার দিকে মহাসড়কের নানকরা এলাকায় ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী রিলাক্স পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ ঘটনা ঘটে। 
স্থানীয়দের বরাতে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা জানান, ‘এখন পর্যন্ত ৫ জনের মরদেহ করা উদ্ধার হয়েছে বলে জেনেছি। দুর্ঘটনা-কবলিত গাড়িটি উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মতিউর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩০) ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বাহারছড়া গ্রামের নুরুল আবছারের ছেলে বদরুল হাসান রিয়াদ (২৬)। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, ‘খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছে ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করি। এছাড়া গুরুতর ৭-৮ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠাই। পরে হাইওয়ে পুলিশের নিকট নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করি।’

মিয়াবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লোকমান হোসেন জানান, ‘ভোরে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল রিল্যাক্স পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস। বাসটি মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় প্রায় ১৫ জন। আমরা দুর্ঘটনা কবলিত বাসটিকে ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’



;

রাণীনগরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের মহোৎসব



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের সরকারি ঘর ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন কালিগ্রাম মুনসিপুর গ্রামের মৃত তহির উদ্দীন মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলাম।

সরেজমিন ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরী পুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘর ও ভূমি গৃহহীনদের জন্য মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে নির্মাণ করলেও এই প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিকভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন যাদের জমি ও বাড়ি আছে সেই সব ব্যক্তিরা। বরাদ্দ প্রাপ্তদের নিজের জমি ও বাড়ি থাকায় সেখানে বসবাস না করে উদ্বোধনের কিছুদিন পর হতে শুরু হয় ঘর ক্রয়-বিক্রয়। এই ক্রয়-বিক্রয়ে অনেকে যারা বৈধ্য উপায়ে ঘর পায়নি তারা নিরূপায় হয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ঘর ক্রয় করে বসবাস করছে। আবার অনেকে অল্প দামে ঘর কিনে রাখছে বেশি দামে বিক্রয়ের আশায়। এ যেন আশ্রয়ণ প্রকল্পে শুরু হয়েছে ঘর-ক্রয় বিক্রয়ের মহোৎসব।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ নং ঘর বিক্রয় করেন মো. বেনো হোসেন, ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫ নং ঘর মো. ফেকরুল বিক্রয় করেন ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলীর কাছে এবং একই ঘর ইউনুছ আলী বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭ নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। ডাকাহার গ্রামের ছলিম উদ্দীনের নিজস্ব জমি থাকার পরও বাপ-ছেলে ২টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে, এছাড়াও তারা ২টি ঘর বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করে রেখেছে। রহমান কবিরাজ ওই গ্রামের মধ্যে তার ছাদ দেওয়া পাকা বাড়ি আছে ,তবু ২টি ঘর কিনে রেখেছেন তিনি।

আশ্রয়ণের সহ-সভাপতি (ডাবওয়ালা) হাচিন আলীর জমি ও বাড়ি থাকার পরও তার মা হাসিনা বেগমের নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দামাদামি চলছে। আশ্রয়ণের এসব ঘর বিক্রয়ের মূল হোতা হাচিন আলী বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, হাচিনের কোনো কিছুর অভাব নেই। তার গ্রামের মধ্যে অনেক সম্পদ আছে। ঘরগুলো নিজে দখল করে আছে এমনকি সে বিলাসবহুল জীবন কাটায় এই ঘরে।

অভিযোগের সত্যতা মিলে সেখানে গিয়ে, হাচিনের ঘরে নামি-দামি আসবাবপত্র, ফোনসহ বিলাসবহুল জীবন কাটছে। ঘরের রং বদলিয়ে আলাদা রং করা হয়েছে। যা দেখে বুঝার উপাই নেই এটি আশ্রয় প্রকল্পের ঘর।

এই প্রকল্পে ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ব্যতিত সবই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে বঙ্গবন্ধু কন্যার মুজিব বর্ষের মূল উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল । অবিলম্বে তদন্ত সাপেক্ষে প্রযোজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

উপকারভোগী নারগিসের কাছ থেকে ৩০ নং ঘর ক্রয় করেন আশরাফুল, যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোন ঘর পাইনি তবে নারগিস আমাকে বসবাসের জন্য ঘরটি থাকতে দিয়েছে। ক্রয় করেছেন কিনা প্রশ্নে বলেন, কাগজ করে নিয়েছি তবে কোন টাকা দেয়নি।

এ ব্যাপারে একডালা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম (আপেল) জানান, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট ৫৯টি ঘর আছে। এখানে প্রকৃত ভূমিহীনরা ঘর না পাওয়ায় অধিকাংশই বিক্রি হয়ে গেছে। ঘর বেচাকেনা হয়েছে প্রমাণ করার পরও উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আলী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার ভূমিমিহীনদের ঘরগুলো বিক্রয় হচ্ছে। আমি মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি। ঘর বিক্রির সঙ্গে আশ্রয়ণের কয়েকজন নেতা জড়িত বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিক্রির অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি, ঘটনার সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

;