আলতাদিঘী যেন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
আলতাদিঘী যেন এখন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ

আলতাদিঘী যেন এখন খেলার মাঠ, পুনঃখননের নামে নির্বিচারে গাছ কাটার অভিযোগ

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার ‘আলতাদিঘী পুনঃখননের মাধ্যমে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ’ প্রকল্পের জন্য দিঘীটির চতুর্দিকের কয়েক হাজার গাছ নির্বিচারে কেটে ফেলার ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, কিছুদিন আগেও আলতাদীঘি ছিলো সবুজের আভা। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এখন খাঁ খাঁ করছে আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান। সম্প্রতি উদ্যানের দীঘি খনন, ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও গাছ রোপনসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কাটা পড়ে নানা প্রজাতির হাজারো গাছ।

নওগাঁ জেলা শহর থেকে সাব্বির হোসেন বন্ধুকে সাথে নিয়ে এসছেন আলতাদীঘি দেখতে। কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, দিঘীটি অবশ্যই সংস্কার জরুরী কিন্তু তাই বলে এভাবে নির্বিচারে চর্তুদিকের সারিবদ্ধ সব গাছগুলো কাটতে হবে? গাছগুলো রেখে কি সংস্কার করা যেতোনা? দিঘীর চতুর্দিক দেখে এটাকে আর দিঘী বলা যায়না । এ যেন এক মরুভূমি।

উদ্যানের উন্নয়ন কাজে গঠিত কমিটির সদস্য কায়েস উদ্দিনের দাবি, আলোচনা সভায় গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়নি। হঠাৎ করে আলতাদিঘীতে এসে দেখি গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

তবে ধামইরহাটের বনবিট কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নতুন বনায়ন হবে, একটা গাছ তো আর সারাজীবন থাকবে না। এটি সামাজিক বনায়নের অওতায় স্বল্প মেয়াদি সৃজিত উডলট বাগান।

বন বিভাগ বলেছে, সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলি অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আলতাদিঘীর খননকৃত মাটি দিয়ে নীচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য দীঘির চারপার্শ্বে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫,৯৫,২৫৬/- (পঁয়ত্রিশ লক্ষ পঁচানবাই হাজার দুইশত ছাপান্ন) টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়।

এখানে ঘুরতে নওগাঁ শহরের একটি কলেজ এর শিক্ষার্থী লুবনা ইয়াসমিন বলেন, ‘গাছ কাটার আগে এসব জায়গাতে বেশ কিছু পাখির বাসা দেখেছি। এখন সেখানে বালুর স্তুপ। এগুলো মেনে নেয়া যায়?

পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই অযুহাতে ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস গাছ কাটার বিষয়টি হয়তো মেনে নেয়া যায় তবে দিঘীর চতুর্দিকে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো পরিবেশ বান্ধব বিশাল আকৃতির ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ কাটার বিষয়টি অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাফকুল ইসলাম বলেন, ‘সৌন্দর্যবর্ধন বৃক্ষরোপনের মধ্যে নিহিত, নিধনে নয়। আজকের কর্তনকৃত গাছগুলো হতে সময় লেগেছে ১৫ থেকে ২০ বছর। অথচ নিমিষের মধ্যে তা ধংস করা হচ্ছে। আধুনিক নকশায় গাছ রেখেই সুন্দর পরিকল্পনা করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান এঅঞ্চলে ফুসফুসের মতো কাজ করে। আমরা এবিষয়ে অনেক মিটিং মিছিল মানববন্ধন করেছি কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। পুরানো হাজার হাজার গাছগুলো যারা নির্বিচারে কাটছেন তারা অবশ্যই অপরাধ করছেন। এসব উদ্যেশ্য প্রনোদিত।’

রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান এ বিষয়ে জানিয়েছেন, আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত আলতাদীঘিটি দীর্ঘদিন যাবত খনন ও সংস্কার না করার কারণে দীঘিটির গভীরতা কমে গিয়ে প্রায় ১ ফুটের উচ্চতার নিচে পানি ছিল এবং চারপাশের পাড়গুলো ভেংগে যাওয়ায় দীঘিটি পুন:খনন ও পাড় সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ৬৪৯.৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মাধ্যমে দীঘিটির খনন কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। খননকৃত মাটি দিয়ে দীঘিটির চর্তুপার্শ্বের পাড় মেরামত ও উচুকরণ করার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আলতাদীঘির পাড় জুড়ে সামাজিক বনায়নের আওতায় ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি প্রজাতির চারা দ্বারা বনায়নকৃত গাছগুলি অপসারণ করে স্থানটি দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়।

পুকুরের খননকৃত মাটি দিয়ে নীচু স্থান ও পাড় সংস্কার করার জন্য আলতাদীঘির চারপার্শ্বে বিদ্যমান ৫৪৬টি ইউক্যালিপটাস ও ৪৫৬টি আকাশমনিগাছ যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ১৫টি লটে ৩৫,৯৫,২৫৬/- (পঁয়ত্রিশ লক্ষ পঁচানবাই হাজার দুইশত ছাপান্ন) টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রয় করা হয়েছে। এ অর্থ সংশ্লিষ্ট ১৬ জন উপকারভোগীগণের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যানের চারিপাশে বিদ্যমান গাছগুলো স্থান উপযোগী না হওয়ায় গাছগুলি কর্তন করে দেশীয় প্রজাতির চারা দ্বারা চলতি অর্থবছরের বর্ষাকালে বনায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আলতাদীঘিটি ২.৫০ মিটার খনন করা হয় এবং বর্তমান তাপদাহ ও তীব্র খড়ার কারণে দীঘিটি শুকিয়ে যায়।

"সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্পের" মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন আলতাদীঘির জলাশয়ের চারিপাশে ২ মিটার প্রন্থ ইটের সোলিং এবং পাকা রাস্তা তৈরী করা হবে এজন্য দীঘির পাড়ের ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছগুলি কর্তন করে আলতাদীঘির চর্তুপার্শ্বের পাড় মেরামত ও উচু করা হয়েছে।

দেশীয় প্রজাতির ৩০০০টি চারা দ্বারা দীঘিটির চারপাশে বনায়নসহ দীঘিটিতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চলতি অর্থ বছরের নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে সমাপ্ত হলে পুরো আলতাদীঘি এলাকা আবারও সবুজে পরিণত হতে শুরু করবে। দীঘির পানির পাপ্যতা নিশ্চিত ও বনাঞ্চল ব্যবস্থাপনার সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি পরিবেশের উন্নয়ন, জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্টির কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন এবং ইকো টুরিজমের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

আলতাদীঘির নামকরণেও রয়েছে ঐতিহাসিক মজার ঘটনা। অনেক অনেক দিন আগের কথা। এ এলাকা ছিল বটু রাজার। জগদ্দলে ছিল সেই রাজার বাড়ি। তাঁর ছিল এক দয়াবতী রাণী। রাণী একদিন আবদার করলেন, তাকে বড় এক দীঘি খুঁড়ে দিতে হবে। রাজা বললেন, ঠিক আছে। তুমি হাঁটতে শুরু কর। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার পা ফেটে রক্ত বের না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত হাঁটতে হবে। এখান থেকে হাঁটা শুরু করে যেখানে গিয়ে পা থেকে রক্ত বের হবে সেই পর্যন্ত দীঘি কাটা হবে। রাণী হাঁটতে থাকলেন। হাঁটা আর শেষ হয় না। রাজা পড়ে গেলেন চিন্তায়। শেষ পর্যন্ত পাশের দেশে গিয়ে দীঘি কাটতে না হয়। তাই কৌশলে তার সৈন্য দিয়ে রাণীর পায়ে আলতা লাগিয়ে বললেন, রানীর পা ফেটে রক্ত বেরিয়েছে। দীঘি সে পর্যন্তই খোঁড়া হল। ধীরে ধীরে সে দিঘি ভরে গেল টলটলে কাকচক্ষু জলে। তাতে পদ্ম ফুটল। প্রজাদের পানীয়জলের কষ্ট শেষ হলো। আর সে থেকেই এর নাম হয়েছে আলতাদীঘি। প্রায় হাজার বছরের স্মৃতি নিয়ে আজও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী আলতাদীঘি।

এত প্রাচীন আর এমন বিশাল দীঘি বাংলাদেশে আর কোথাও আছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ দীঘির দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, চওড়া প্রায় ৪০০ মিটারের মতো। গ্রামের লোকমুখে প্রচলিত আছে বৌদ্ধ যুগের কীর্তি এটি। দীঘির পাড় ঘেঁষে ভারত সীমান্ত। উত্তর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, বিএসএফের সীমান্ত টইল, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতকে দেখা খুবই সহজ। আলতাদীঘির পাড়ে দাঁড়ালে মনে হবে অনেকটাই সুন্দরবনের মতো, শীতের সময় অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

   

ভারতে গিয়ে নিখোঁজ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ভারতে গিয়ে চার দিন ধরে নিখোঁজ বলে জানিয়েছে তার পরিবার।

পরিবারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানানো হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ মে) থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে স্বজনদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ নিয়ে স্বজনেরা উদ্বিগ্ন।

আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস রবিবার বিকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে যান। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান।

মুমতারিন ফেরদৌস ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। বিষয়টি জানাতে তিনি ডিবি কার্যালয়ে এসেছেন।

ডিবি মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ভারতে একটি বাংলাদেশি মুঠোফোন ও একটি ভারতীয় মুঠোফোন ব্যবহার করেন। নম্বর দুটি কখনো বন্ধ আবার কখনো খোলা পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের পুলিশ বাহিনীর সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। আনোয়ারুল আজিমের কী হয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে।’

আনোয়ারুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, গত ১২ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। ১৪ মে পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। তবে ১৬ মে সংসদ সদস্যের মুঠোফোন থেকে আবদুর রউফের কাছে ফোন আসে। তিনি ফোন ধরতে পারেননি। পরে আবার তিনি ফোন করলে মুঠোফোনটি বন্ধ পান। এর পর থেকে সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৪ সাল থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য তিনি।

;

র‍্যাব হেফাজতে মৃত্যু, নান্দাইল থানার এসআই প্রত্যাহার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ময়মনসিংহ
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

র‍্যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) মৃত্যুর ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

শনিবার (১৮ মে) রাতে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে নান্দাইল থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রবিবার (১৯ মে) রাতে নান্দাইল মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল মজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, নান্দাইলে গৃহবধূ রেখা আক্তার (২০) মৃত্যু মামলার আসামি তার শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শ্বাশুড়ি স্ত্রী সুরাইয়া খাতুন। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এসআই নাজমুল হাসান। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুই আসামিকে নান্দাইল মডেল থানায় ডেকে নেন এসআই নাজমুল। সেখানে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে কিছুক্ষণ পরে তাদের ছেড়ে দেন। থানার সামনে আসতেই র‍্যাবের একটি দল আজিজুল ইসলামকে ছেড়ে দিয়ে সুরাইয়াকে আটক করে ভৈরব ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর পর শুক্রবার সকালে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুরাইয়া খাতুনকে মৃত ঘোষণা করে।

এ মৃত্যুর ঘটনায় সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম র‍্যাবের হেফাজতে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন শনিবার দুপুরে সুরাইয়া খাতুনের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দা গ্রামে।

নান্দাইল মডেল থানার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মজিদ জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসআই নাজমুল হাসানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেছেন। এর চাইতে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মো. শামীম হোসেন বলেন, বিভিন্ন কারণে তাকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মনে করেন, কাজের প্রতি তার আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। তাই, তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

;

নওগাঁয় ঐতিহ্যবাহী হুর মাজার মেলা অনুষ্ঠিত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম নওগাঁ
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ হুর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এখানে ‘হুর’ মানে কোন রমনি কে বুঝানো হয়না। গ্রামের একটি বিশেষ বট গাছের নিচে দিনব্যাপী হুড় হুড় (তাড়াহুড়ো) করে এ মেলা শুরু ও শেষ হয় বলে একে হুর মেলা বলে।

এবারের মেলায় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান পসরা সাজিয়ে বসেছে। দিনব্যাপী মেলায় প্রায় ৩০ লাখ টাকার বেচাকেনার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ মাজারে মনের বিশ্বাসে মানত করেন নানান ধর্মের মানুষ। তবে উদ্যেশ্য যাই হোক কেন, মনোবাসনা পূরণই যেন সকলের প্রত্যাশা। গ্রামীণ এ মেলার মধ্য দিয়ে সম্প্রতির বন্ধন অটুট হবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

চেরাগপুর গ্রামের পুকুর পাড়ে একটি বিশেষ বট গাছের নিচে মাটির একটি ঘরের মধ্যে মন্ডপ ও মাজার। আর এ মাজারে ধর্ম-বর্ণ বিনিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষরা মানত করে থাকেন।

প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় রবিবার এ বটগাছের নিচে মেলা হয়ে থাকে। তবে এ বছর থেকে জৈষ্ঠ্য মাসের রবিবার মেলা হয়। কৃষিপ্রধান এলাকা হওয়ায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পর বটগাছের আশপাশেসহ ফাঁকা মাঠে এই মেলা হয়। এটি ঐতিহ্যবাহী ‘হুর মাজার মেলা’ নামে পরিচিত।

এবারের মেলায় বিভিন্ন পদের মিষ্টান্ন ও খাবারের দোকান, খেলনা সামগ্রী, কসমেটিক, মৌসুমি ফল এবং কৃষি যন্ত্রপাতিসহ আসবাবপত্রের দোকান দিয়ে সাজানো হয়েছে। এমনকি রুই, কাতলা ও পাঙ্গাস মাছ এবং গরু ও মহিষের মাংসও বিক্রি হয়। দিনব্যাপী এ মেলা হলেও কসমেটিক ও কাঠের আসবাবপত্রের দোকান থাকে আরো কয়েকদিন।

মানত করে যাদের মনোবাসনা পুরণ হয় তারা এ মাজারে এসে রান্না করে সবার মাঝে খাবার বিতরণ করেন। আবার অনেকে এখানে পরিবারের সবাই দল বেঁধে এসে রান্না করে খান। আশপাশের অন্তত ১৮-২০ টি গ্রামের মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গন এক মিলন মেলায় পরিনত হয়।

স্থানীয়রা জানান, হুর মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ মেলায় মানুষ আসে। এ ছাড়া মেয়ে ও জামাইকে দাওয়াত করে নিয়ে আসা হয়। একদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমনে যেন আনন্দ উৎসব বিরাজ করে।

মাজারের খাদেম শুকচান বলেন, ‘বিভিন্ন ধর্মের মানুষরা মানত করে থাকে। তাদের আশা পুরন হলে পরে এ মাজারে এসে রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে বটগাছের নিচে এ মাজারে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।’

মিষ্টির দোকানী উজ্জল কুমার বলেন, ‘দিনব্যাপী মেলা হলেও একদিন আগে এসে বিকাল থেকে দোকান সাজিয়ে বেচাকেনা শুরু করেছি। দিনব্যাপী মেলায় লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন মিষ্টান্ন বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। কারন হতে পারে মানুষের এখনো ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়নি। হয়ত টাকা-পয়সা নেই। এ কারণে মেলায় মানুষের আগমন কিছুটা কম।’

মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রাচীনতম এ হুর মেলায় ধর্মবর্ণ বির্নিশেষে বিভিন্ন এলাকা থেকে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের আগমন ঘটে। তবে কবে থেকে এ মেলা হয়ে আসছে তা জানেন না স্থানীয়রা। তবে দেশ স্বাধীনদের পর থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। একদিনের জন্য এ গ্রাম মিলন মেলায় পরিনত হয়। মেলায় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন দোকান অংশ নিয়েছে।’

;

নিজস্ব উদ্ভাবন, ফেঞ্চুগঞ্জে নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুশিয়ারা নদীর পানি দিয়ে চলে ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র। নদীটির তীরে অবস্থিত পাম্প হাউজ মনিটরিং নিয়ে বিড়ম্বনার অন্ত ছিল না। কখনও নাব্যতা কমে যাওয়া, কখনও মোটরের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পানি সরবরাহ নিয়ে নাকাল ছিল বিদুৎকেন্দ্রটি।

পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ হয়ে যেতো। গত বছরও ৩১বার বিভ্রাটের কবলে পড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল আলম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তাফিজ আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী নয়বিৎ মন্ডল নিজেরাই তাক লাগানো সমাধান এনে দিয়েছেন। তাদের উদ্ভাবন স্বস্তি এনে দিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে।

যে কাজে বিদেশি কনসালটেন্ট ভাড়া করতে হলে অর্ধকোটি টাকার উপরে খরচ হতে পারতো, ওয়াহিদুল ইসলামরা সেই কাজ করেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচে। এখন আরও তাদের দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে পাম্প হাউজ দেখে আসতে হয় না। যেকোনো জায়গায় বসেই পাম্প অপরেট করা যাচ্ছে। পানির স্তরও জেনে যাচ্ছেন এক ক্লিকেই।

প্রকৌশলী ওয়াহিদ আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগে প্রতি মাসেই পাম্প পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতো। এতে করে ফেঞ্চুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের ২টি স্টিম টারবাইন, ৪টি গ্যাস টারবাইন, ৪টি এইচআরএসজি কুলিংয়ের পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতো। এ কারণে ১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভ্রাট দেখা দিতো। গত ৪ মাস থেকে প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রোগ্রাম তৈরি করায় এখন সব সংকট দূর হয়ে গেছে। এখন অফিসে বসেই সব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে। কোনো রকম যান্ত্রিক ত্রুটি হলে সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারছি। আগে দেড় কিলোমিটার দূর পাম্প হাউজে গিয়ে তারপর সমস্যা চিহ্নিত করতে হতো। এতে করে বছরের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।’

ওয়াহিদুল ইসলাম ও তারে টিমের সদস্যদের ভাবনার জায়গাটিও আশান্বিত হওয়ার মতো। ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চিত্ত-বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। অবসর সময় কাটাতে তারা উদ্ভাবনীতে মনোনিবেশ করেন। আর শুরুতেই প্রাধান্য পায় দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা পাম্প হাউজ।

আগে সরেজমিন গিয়ে দেখে আসতে হতো পাম্প হাউজ ও নদীর নাব্যতা। লোকবল সংকটের কারণে মনিটরিং করা কঠিন হয়ে পড়তো। এতে করে নানা রকম সংকট দেখা দিতো। আর সংকটের শেষ ধাপে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিকল হয়ে বসে যেতো। এ কারণে সংকট ছিল প্রতি মাসের চিত্র। সেই সংকট দূর করে হিরোতে পরিণত হয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ওয়াহিদুল ইসলাম ও তার টিম।

টিমটি তাদের উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত ‘ইনোভেশন শোকেসিং-২০২৪ এ।’ এতে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের উদ্ভাবন নিয়ে হাজির হয়। ওয়াহিদুল ইসলাম দাবি করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই পদ্ধতি বৃহত্তর পরিসরে পাইলটিং করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র, ওয়াসা, মেরিন ভেসেলে হুবহু পদ্ধতি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

উদ্ভাবন শোকেসিং আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প ও সহজলভ্য উৎস আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই আমাদের মতো করে সমাধান করতে হবে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্ট (এআই) এখনই অনেক সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছে। এআই-এর ব্যবহার বাড়িয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টিতে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার যতো বাড়বে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় ততো হবে। একই সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্যও নিশ্চিত হবে।’

উল্লেখ্য, ইনোভেশন শোকেসিং ২০২৪-এ আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস তৈরিকরণ-এ প্রথম স্থান, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স বেজড ‘স্মার্ট কাস্টমার এসিস্ট্যান্ট- চ্যাটবট’ ২য় স্থান অর্জন করে।

;