রাজশাহীতে পেনশন স্কিমে রেজিস্ট্রেশন পৌঁছেছে সাড়ে ৯ হাজারে



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,রাজশাহী
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের সকল নাগরিকের জন্য অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় সাড়ে ৯ হাজার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহম্মদ হুমায়ুন কবীর এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, দেশের সকল নাগরিকের জন্য অবসরকালীন আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছেন। এ সুবিধা সাধারণ মানুষের হাতে কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় ১২৫টি স্টল থাকবে। এতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। মেলায় দর্শনার্থীরা সরাসরি পেনশন স্কিমের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

দেশের প্রথম রাজশাহীতে সর্বজনীন পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় যৌথ আয়োজনে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হাজী মুহম্মদ মুহসীন স্কুল মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। পরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা। এছাড়া সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রচারকৌশল বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম সাফল্যমণ্ডিত করার কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা করবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান ফসিউল্লাহ্ এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক সাইদুর রহমান। কর্মশালায় সূচনা ও সমাপনী বক্তব্য রাখবেন প্রধানন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

কর্মশালায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এনজিও এর প্রতিনিধিবৃন্দ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভাগের সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার , জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

   

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ২১

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ। মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ছয়টা থেকে বুধবার (১ মে) সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ তাদেরকে আটক করা হয়।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩৪০ পিস ইয়াবা, ১৫৫ গ্রাম হেরোইন, ৩৩ কেজি ৭০০ গ্রাম গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জা‌নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।

ডিএমপির নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ অ‌ভিযান প‌রিচালনা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। সেই সঙ্গে আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৩ টি মামলা রুজু হয়েছে বলেও জানানো হয়।

;

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা জাফলং। যেখানে ভ্রমণে এসে প্রতিদিন আনন্দ পায় হাজার হাজার পর্যটক। সেই পর্যটন এলাকার মানুষের বোবাকান্না শুনে না কেউই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় স্থানীয় লোকজন পিয়াইন নদী থেকে বালু এবং পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাদের সংসারে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাচ্ছেন না ফল।

এমন অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ৭৫ বছর বয়সী পাথর শ্রমিক সুনামগঞ্জের আলতু মিয়া বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসাও করতে পারি না, অনেক সময় না খেয়েও আমাদের দিন কাটাতে হয়। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর শ্রমিক দিবস যে আসলে কি তা আমরাও বুঝি না। আমরা কিভাবে খেয়ে বাঁচবো সে চিন্তায় থাকি।যে সময় মানুষ আন্দোলন করে আমরা তখন যাই।কিন্তু আন্দোলন করে কোনো লাভ হয় না।

তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে জাফলংয়ে বসবাস। পেশায় তিনি পাথর শ্রমিক। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্যনকারী। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

পিয়াইন নদী থেকে তোলা পাথর, সেই পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান অনেক শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছিল ৬৯ বছরের নিজাম উদ্দিনের ঘাম। ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সাথে প্রতিবেদকের।

তিনি জানালেন, বর্তমানে তাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে। এক ট্রাক এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১২০০ টাকা পান। এখন একদিন হোক বা ৩দিন হোক যে কয়দিন সময় যাক ওই টাকার উপরে একটা টাকাও কেউ দেবে না।

তিনি বলেন, মে দিবস বা শ্রমিক দিবসে আন্দোলন করে ছার আনা আমাদের লাভ বা কোনো কিছু আমরা পাইনি। আমদের মজুরিও বাড়ছে না। এক টাকা বাড়েনি। বরং আমাদের লস(ক্ষতি) হচ্ছে। আগে এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১৬০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতাম। এখন সেই পাথর ভেঙ্গে ১২০০ টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। যদি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হতো তাহলে এমন অভাব অটনটনে দিন কাটাতে হতো না। শুধু আলতু মিয়া ও নিজাম উদ্দিন নয়, এমন আরও অনেক শ্রমিকের দিন পাত যাচ্ছে কষ্টে।

পাথরের স্তুপ, ছবি: নূর এ আলম


সরেজমিনে সিলেটের জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন ক্রাশার মিলে। অনেকেই নতুন কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন দিকবিদিক। জাফলং বিজিবি ক্যাম্পের পাশে কয়েকটি ক্রাশার মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মেশিন ও যন্ত্রপাতিতে মরিচিকা ধরেছে। আর পিয়াইন নদী থেকে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু সংগ্রহ করে সেখানেও পাথর খুঁজে বেড়ান কিছু সংখ্যক শ্রমিকেরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ কেবল জাফলং আর শাহ আরেফিন টিলা নয়, এমন চিত্র সিলেটের প্রায় সবগুলো পাথর কোয়ারি এলাকার। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া–এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দিন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা করে পান শ্রমিকরা, ছবি: নূর এ আলম


এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।

জাফলং ক্রাশার মিলে কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। তিনি বলেন, সারাদিন কাম-কাজ করে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাই।কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম এই টাকা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও কাজ করতে হয়।কাজ না করলে ঘরে না খেয়ে মরতে হবে।

রেখা গোয়ালা বলেন, কোনো দিন ১০০ টাকা আর কোনো দিন ৪০০ টাকা পাই। এসব টাকায় পর্তায় পড়ে না। এতো কষ্ট করেও বাচ্চা-কাচ্চাদেএ মুখে হাসি ফুটানো যায় না। তার চেয়ে কোয়ারি খুলে দিলে খেয়ে বাঁচতে পারতাম।


এছাড়াও আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান,নদী থেকে পাথর তোলা বন্ধ হওয়ার পর থেকে অভাব অনটনে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। কাজ না পেয়ে অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে। সিলেট ছাড়াও অন্যান্য জেলার যারা শ্রমিক ছিলেন তারাও এলাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করছেন। আমরা না খেয়ে মরলেও কারো কোনো কিছু আসে যায় না।

এ বিষয়ে পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সহসভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান লিলু বলেন, কোয়ারী সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। না আমরা চলতে পারছি, না আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা চলতে পারতেছে। কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় এখানকার শ্রমিকদের অভাব অনটন ও অনাহারে দিনপার করতে হচ্ছে। কিছু শ্রমিক কাজের জন্য ঢাকায় গার্মেন্টসে ছুটতেছে। যারা ক্ষুদ্র সম্বল নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিল তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতেছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ খনিজ মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে একটাই আবদেন আমাদের কথা ও ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমরা দু-বেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি রিট রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছেন।

;

বেনাপোলে বাস চাপায় শ্রমিক নিহত, আহত ১



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে দ্রুতগামী বাস চাপায় মোস্তাক ঢালি নামে এক শ্রমিক নিহত ও আনিসুর রহমান নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আর আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘাতক চালক পালিয়ে গেলেও জব্দ করা হয়েছে পরিবহন।

বুধবার (১ মে) ভোর ৬টায় মহাসড়কের দিঘিরপাড় নামক স্থানে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নিহত দিনমজুর মোস্তাক ঢালি শার্শা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে এবং আহত দিনমজুর আনিসুর রহমান একই গ্রামের ছেলে রেজাউল ইসলামের ছেলে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মত শ্রম বিক্রী করতে শার্শার লাউতাড়া গ্রামের দুই দিনমজুর বেনাপোল শহরে আসছিল। এসময় বেনাপোলগামী গোল্ডেন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী দিনমজুর দুই জনকে ঢাকা দিলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে মারা যায় একজন। এসময় স্থানীয়দের খবরে অন্যজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনায় নিহতের মরদেহ, একটি মৃত পাখি ও বাস জব্দ করে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে চালকের অসাবধনতা ও সড়ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় প্রায়ই সড়কটিতে দুর্ঘটনায় পথচারীরা জীবন হারাচ্ছে।

এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে ।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক ঝন্টু কুমার বশাক জানান, নিহতের ঘটনায় ঘাতক চালক পালিয়েছে। তবে বাস জব্দ করা হয়েছে।

;

‘আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নাই’



মেহেদী হাছান মাহীম, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নাই’ এমন বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সের তছিরন বেগম। স্বামী অনেক আগে মারা গেলেও ছেলেই ছিল তার একমাত্র ভরসা। এখন সেই ছেলেও অসুস্থ। পরিবারের সকল দায়িত্ব এখন তছিরন বেগমের উপর। পরিবারের দায়িত্ব মেটাতে তছিরন বেগম এখন কাজ করছেন রাজধানী ঢাকার গাবতলী এবং আমিন বাজারের মধ্যস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদী সংলগ্ন কয়লা ব্যবসা কেন্দ্রে। দিনে বারো ঘন্টা মাথায় করে বোঝাই করে কয়লা টানার কাজ করেও তেমন কোনো টাকা পায়না তিনি। এরকম ঝুকিপূর্ণ কাজে জীবনেরও নেই কোনও নিশ্চয়তা।

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে এদিনে শ্রমিকরা আমেরিকার শিকাগো শহরে তাদের কর্মক্ষেত্রে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সেদিন আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। এতে করে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক নিহত হয় । পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অবশেষে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

শ্রমিক দিবস কবে, কেন শ্রমিক দিবস পালিত হয় সে বিষয়ে কোনো কিছুই জানেনা তছিরন বেগম। তিনি বলেন, শ্রমিক দিবস কি এবং কেন পালিত হয় এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

তিনি আরও বলেন, কয়লা বোঝাই করা কাজ অনেকদিন ধরে করতেছি। আমাদেরকে খেটে খাওয়া লাগে। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। তার ঘরে দুটো মেয়ে আছে। আমার ছেলেও অসুস্থ। সে আগে মাছের ব্যবসা করতো। একদিনে আয় হয় দুই থেকে তিনশো টাকা। এই টাকা দিয়ে কিছুই হয়না। ৬০ বছর বয়সে এসে আমাদের এই কাজ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ঘরে ইনকাম করার মতো কেউ নেই। আমার কোনো বয়স্ক ভাতাও নেই।


তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় ১২ ঘণ্টা কাজ করি। আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নাই। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মালিক পক্ষ কোনো ধরনের সাহায্য করে না।

হাফিজুর রহমান নামে আরেকজন কয়লা শ্রমিক বলেন, এখানে যে যতবেশি পরিশ্রম করে, সে ততবেশি টাকা পায়। কেউ কেউ ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এখন কাজ করতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। যে টাকা ইনকাম করতেছি এটা দিয়ে পরিবার চলে না। মাঝে মাঝে ঋণ করে চলতে হয়। আমরা অসুস্থ হলে মালিক পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আসে না।

মে দিবসের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি তছিরন বেগমের মতো একই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি শ্রমিক দিবসের নাম জীবনেও শুনি নাই।

সয়েলি আক্তার নামে একজন মহিলা বালু শ্রমিক বলেন, আমি দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করি। সারাদিন পরিশ্রম করে ২০০-৩০০ টাকা পাই। পরিবারে আমার স্বামী এবং একটা ছোট মেয়ে আছে। এই রোদের ভিতরে কাজ করে চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ, আমাদেরকে কাজ করেই খেতে হবে। শ্রমিক দিবস সম্পর্কে তিনি বলেন, পহেলা মে শ্রমিক দিবস একথা আমরা লোকমুখে শুনছি। কিন্তু, এ সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।

নাম বলতে অনিচ্ছুক একজন বালু শ্রমিক বলেন, ৪৫ টা টুকলি টানলে ১০০ টাকা পায়। গরমের কারণে ১০০ টাকাও ইনকাম করতে কষ্ট হয়। পরিবারে ঠিকমতো বাজারের খরচই হয়না। আমি ছাড়া সংসারে ইনকাম করার মতো কেউ নেই। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি অনেক আগে। আমার স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। অভাবের তাড়নায় ১৩ বছরের ছেলেকে গার্মেন্টসে দিয়েছি। বেতন পায় মাত্র ৫ হাজার। কোনোমতে ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমার ছেলে আমার একমাত্র ভরসা। আমার ছেলের নাম মো. ইয়াসিন। এই কাজ করতে গিয়ে যদি আমার কোনও সমস্যা হয় তাহলে আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নেই। আমি টাকার জন্য বাজার করতে পারি না। জিনিসপত্রের দামের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে না। আমাদের এখন তেমন ইনকাম হয় না।

শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি শ্রমিক দিবস সম্পর্কে অল্প একটু জানি। এদিনে বিদেশে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে।

;