ঢাকা সফরে আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী শনিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশে সফর করতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক দিক নিয়ে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।

একটি কূটনৈতিক সূত্র ইউএনবিকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।

তবে তার সফরের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।

গত মার্চ মাসে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে বিনয় কোয়াত্রার কার্যকালের মেয়াদ ছয় মাস বাড়িয়েছে ভারত সরকার। ১৯৮৮ সালে ভারতীয় পররাষ্ট্র পরিষেবায় যোগ দেয়া কোয়াত্রা ২০২২ সালের ১ মে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান।

এর আগে গত ২০২৩ সালের ২৪ তারিখে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়। এফওসি হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিস্তারিত আলোচনা নিয়ে দুটি দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ প্রক্রিয়া।

দ্বিপক্ষীয় সংলাপে উভয় পক্ষ সাধারণত সীমান্ত ও নিরাপত্তা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতাসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে।

এদিকে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারতে জাতীয় নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিতে সফরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সাতটি ধাপে আগামী ১৯ এপ্রিল লোকসভার ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে ১ জুন পর্যন্ত। আর আগামী ৪ জুন ভোট গণনা করা হবে।

সূত্র: ইউএনবি

   

৪২.৮ ডিগ্রিতে পুড়ছে যশোর, নাকাল জনজীবন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোরের ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুধবার (১ মে) এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরআগে, মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটির আবহাওয়া কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দীর্ঘ তাপ্রপ্রবাহে বিপর্যস্ত এ জেলার মানুষ। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণীকুল। সারা দিন রোদ আর প্রচণ্ড গরমে স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মজীবনেও। এদিকে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মধ্যে জেলাতে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। শহরাঞ্চলে তেমন লোডশেডিং না হলেও গ্রামে রাত-দিন মিলে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

অতিরিক্ত গরমে পোল্টি শিল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। খরা ও তাপে আম, লিচুর মুকুল ঝরে যাচ্ছে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের দাবি। তাপের কারণে বৃদ্ধিও কম হবে বলে কৃষকের আশঙ্কা।

তাছাড়া সবজির বিকাশেও ক্ষতি হচ্ছে। চাষিদের যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি শুষ্কতায় সবজির বৃদ্ধিও ক্ষতি হচ্ছে।

;

পুরুষের সমান কাজ করেও কম মজুরি নারীদের 

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পুরুষের সমান কাজ করেও কম মজুরি নারীদের 

পুরুষের সমান কাজ করেও কম মজুরি নারীদের 

  • Font increase
  • Font Decrease

পুরুষদের সমান সারাদিন মাঠে রোদে পুড়ে কাজ করি। ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কাজ শেষ করে এখানে কাজে আসতে হয়। স্বামী দুই বছর আগে মারা গেছে, এখন অভাবের সংসারে দুই মেয়ে নিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতেও ২৫০ টাকা মজুরি পেয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে— এভাবেই বলছিলেন ইটভাটার শ্রমিক খাদিজা বেগম।

খাদিজা বেগম নীলফামারী সদরের কচুকাটা বন্দরপাড়ার মৃত আজগার আলীর স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী। 

খাদিজা বেগমের পরিশ্রমে দুই মেয়ে ও তার মুখে দুমুঠো ভাত উঠে। পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পান তিনি। বর্তমান সমাজে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারি-বেসরকারিভাবে সভাসেমিনার করা হলেও পাঠ পর্যায়ে নেই এর প্রতিফলন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণের নেই কোন পদক্ষেপ। তবে দেশের শিক্ষা, কৃষি, অর্থনীতিসহ সব সেক্টরে নারীর পদচারণা রয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে নারীর হাতের ছোঁয়ায় কৃষিতে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জানা যায়, নারীরা পুরুষের মতই ফসলের পরিচর্যা, তামাকের মিল কাজ, ধানের চারা রোপণ, মাটি কাটা, সড়ক সংস্কারের কাজ করেন। পুরুষের সাথে সমানতালে কাজ করলেও বেতন পান অর্ধেক। পুরুষেরা দিন শেষে পেয়ে থাকেন ৫০০ টাকা, আর নারীরা ২৫০ টাকা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করেও বেতন বৈষম্যের শিকার তারা।


জেলা শ্রমিক উন্নয়ন সংগঠনের তথ্যমতে, জেলায় প্রায় দশ হাজার নারী বাসা-বাড়ি, কৃষি, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কৃষি ও হোটেল বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা নারীরা বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। 

এ-বিষয়ে খাদিজা বেগম আরও বলেন, অভাবের সংসারে অর্ধেক বেতন, খুব কষ্টে আছি । আমার মত অনেক নারীই পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পায়। আমরা পুরুষদের সাথে সমান তালে কাজ করি তবুও আমাদের বেতন কম দেওয়া হয়। সমান বেতন হলে ভালোই সংসার চলত।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা রহিমা বেগম বলেন, আমাদের ছুটি নেই। কাজে না এলে মজুরি নেই। বাজার, কেনাকাটা, থাকা, সব নিজেদের। কিছু সময় শরীরের অবস্থা এত নাজুক থাকে যে বাকি সময় অন্য কোনও কাজ করার ক্ষমতা থাকে না। এ কাজ করে কোনোমতে সংসার চলে।

নীলফামারী জেলা শ্রমিক উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম বলেন, নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করে, তবু মালিকরা তাদের কম মজুরি দেয়। আমরা বিভিন্ন সময়ে সভায় তাদের সমান মজুরি দেওয়ার দাবি করি। নারী পুরুষের সমান মজুরি দিতে আমরা আগামীতে বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের সাথে বসব৷

নীলফামারী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি কাজ টিআর, কাবিখা, কর্মসৃজনসহ বিভিন্ন প্রকল্পে নারী পুরুষের সমান মজুরি দেওয়া হয়। বেসরকারি ও মালিকানাধীন কাজেও নারী পুরুষের সমান মজুরি এবং বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করছি।

;

আমাদের আবার মে দিবস

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



এসএম জামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আমাদের আবার মে দিবস! কাজে আসলে কাজ শেষে ট্যাকা (টাকা) পাই, আবার কাজে না আসলে ট্যাকা নাই। আমরা অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকলেও কেউ দেখে না, খবরও নেয় না। ইটভাটা মালিকও খবর নেয় না। এই আমাদের কষ্টের জীবনে আবার মে দিবস। এসব দিবস-টিবস আমরা বুঝি না।

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার ইটভাটা শ্রমিক মহিন উদ্দিন। তার বাড়ি মিরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে।

বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন তিনি। আগে ইট মাথায় করে আনা নেওয়ার কাজ করতেন, এখন ইট তৈরিতে পারদর্শী তিনি। প্রতি হাজার ইট তৈরি করলে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন ৮শ' টাকা। এক্ষেত্রে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবার একটু বেশি পাওয়ার আশা রাত অবধি কাজ করেন তিনি। তাতে করে কোন কোন দিন এক হাজার টাকা আয় করে থাকেন।

আজ মহান মে দিবস। দিনটা শ্রমিকদের। ‘শ্রমিক-মালিক গড়বো দেশ; স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারা দেশে পালিত হচ্ছে এই মে দিবস। কিন্তু সে হিসেব নেই গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর যারা সত্যিকার অর্থে শ্রমিক। এই বিশেষ দিনেও কাজ করেই যাচ্ছেন এসব ইটভাটা শ্রমিকরা।


তবে এই মে দিবস পালন কেবল জেলা ও উপজেলা শহরেই করে থাকে সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা যখন ছুটিতে, তখন ইটভাটা শ্রমিকরা গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদের মধ্যে কাজ করে থাকেন। সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। সারা শরীর জবজবে ভেজা। জীর্ণশীর্ণ শরীরটা দেখলেই বোঝা যায় কেমন খাটুনি খাটতে হয় তাদের।

মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে শ্রমিকদের কর্মযজ্ঞের এমন চিত্রই দেখা গেল। তারা জানালেন, ইটভাটায় অমানবিক কষ্টের কাজেও এ হাসি-খুশিটাই তাদের জীবনকে সচল রেখেছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুখে হাসি নিয়ে কাজ করলেও তাদের দুঃখের সীমা নেই। একে তো স্বল্প মজুরি, তার উপর বছরের অর্ধেকটা সময়ই কাজ থাকে না, বাকি সময়টা খুঁজতে হয় অন্য কাজ। তারপরও পেটের জ্বালায় বারবার ফিরে আসেন এই ঘাম ঝরানো শরীর পোড়ানো কাজে।

এসব শ্রমিকদের সাথে মে দিবস নিয়ে আলাপ করলে তারা জানান, মে দিবস কী? মে দিবসের ছুটির কথা শুনে তারা শুধু হাসেন। সমাজের অনেকে হাসতে না জানলেও খেটে খাওয়া এ শ্রমিকরা প্রাণ খুলে হাসতে জানে! তারা ইটভাটা শ্রমিক, মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরিতে দিনভর শ্রম দেন তারা। সবারই এক কথা কাজ করলেই টাকা কাজ না করলে টাকা নেই। তাই আমাদের এই মে দিবসেও ছুটি নেই।

ইটভাটা শ্রমিক মিনারুল ইসলাম বলেন, সকালে কাজ শুরু করি। শেষ করার কোনো সময় নেই। সর্দার যতক্ষণ মনে করেন কাজ করান। কিন্তু বেশি কাজ করলেও বেশি টাকা দেয় না। প্রতিবাদ করলেই বাদ দিয়ে দেয়। তাই দিনশেষে মজুরি ওই ৫০০ টাকাই। এ দিয়ে চাল-ডাল, তরি-তরকারি কিনতে গেলে পকেটে আর কিছু থাকে না। এভাবেই দিন যায়, বছর ঘুরে। বাজারে সব কিছুর দাম বাড়লেও, মজুরি বাড়ে না’।

শাহীনসহ আরও বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, বছরের ছয় মাস ইটভাটাগুলোতে পুরোদমে কাজের ব্যস্ততা থাকে। আর বাকি ছয় মাস কেউ ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন। আবার কেউ বা রিকশা, ভ্যান, ভাড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকে বেছে নেন রাজমিস্ত্রি জোগালি কিংবা দিনমজুরির কাজ।

শ্রমিকরা জানান, বছরের নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট বানানোর কাজ করতে হয় তাদের। আর এই কাজটি চুক্তি ভিত্তিতে হয়ে থাকে। এ কাজে আসতে হয় মাঝির (সর্দার) মাধ্যমে। পুরো ছয় মাসের জন্য মালিকের হয়ে মাঝিই শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেন।

ইট পোড়ানোর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করছিলেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক। কথা হয় মানিক আলী নামের এক শ্রমিকের সঙ্গে। তার বাড়ি মিরপুর উপজেলা খন্দকবাড়ীয়া এলাকায়।

মজুরি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মানিক আলী বলেন, রোদে শুকানো ইটভাটার কাছ থেকে ক্লিনের ভেতর আনা এবং সারিবদ্ধ করে কাঁচা ইট সেটিং করা, সেই কাজে মজুরি প্রতি হাজার ইটে ১৫০ টাকা। প্রতি চেম্বার ১৫ হাজার ইট দিয়ে সাজানোর জন্য অন্তত ১০-১২ জন শ্রমিক দরকার হয়। দিনশেষে এসব শ্রমিকের আয় হয় ৪৫০-৫৫০ টাকা।

এভাবেই ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া শেষ করে সেসব ইট পোড়ানোর পর তা বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে। ট্রলিতে করে ইটভাটা থেকে এসব ইট বাড়ি পৌঁছানোর জন্য ট্রলি প্রতি হাজারে ৩৫০-৫০০ টাকা নিয়ে থাকেন ট্রলি চালকরা। প্রতি ট্রলিতে ২ হাজার ইট নেওয়া যায়।

ভাটার ইট ট্রলিতে করে ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেন জসিম উদ্দিন। মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকায় বাড়ি তার। তিনি জানান, আমি ট্রলিচালক। সাথে আরেকজনকে নিয়ে ট্রলিতে ইট উঠানো ও নামানোর কাজ করি। শ্রমিক দিবস কী জানি না। মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করি এবং আমার সাথে যে থাকে তারও আয় ৭ হাজার টাকা হয়। কাজ থাকলে ভোর ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ও কাজ করি। তখন বেশি টাকা পাই।

মেসার্স এমবিএ ব্রিকসের মালিক মুকুল বলেন, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্দারের সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। সর্দার প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করেন। শ্রমিকদের নিয়োগ, মজুরি, ছুটি সব সর্দারই দেখেন।’

এবি ব্রিকসের ম্যানেজার আজাদ জানান, গতবারের থেকে এ বছর ইটের দাম কম। গতবছর ১০ হাজার টাকা ইট বিক্রি হলেও এ বছর ৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেশ লোকসানে পড়তে হচ্ছে আমাদের।


তিনি বলেন, আগে শ্রমিকদের অল্প টাকা আয় হলেও এখন বেড়েছে। আগে যেসব শ্রমিক আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা উপার্জন করতো, এখন তারা ৬শ টাকা থেকে কেউ কেউ ১ হাজার টাকাও আয় করছে।

জাতীয় শ্রমিক লীগ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিকনেতা আমজাদ আলী খান বলেন, অনেক সংগঠন রয়েছে। তবে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের কোন সংগঠন নেই। যদিওবা নির্মাণ শ্রমিক নামের একটা সংগঠন রয়েছে। তবে ইটভাটার শ্রম সংগঠন না থাকায় নির্যাতিত নিষ্পেষিত হতে হয় তাদের। যারা ঘাম ঝরিয়ে শ্রম দিয়ে যায় তারাই হলো শ্রমিক। মূলধারার শ্রমিকদের থেকে কোন অংশেই কম নয় এসব ইটভাটার শ্রমিক। আগামীতে তাদের নিয়েও পরিকল্পনা করা হবে। যাতে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. এ এস এম মুসা কবির বলেন, যারা ইটের ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়। দিনের বেলা রোদ উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয় তাদের, রয়েছে কয়লা কিংবা কাঠের আগুনে ইট পোড়ার তীব্র তাপ। ইটভাটায় কাজ করা এসব শ্রমিকদের কোনো ভালো আবাসস্থল থাকে না। ইটভাটার পাশেই টিন দিয়ে ছাপরা ঘর তুলে কোনোমতে তাদের রাত পার করতে হয়। স্বাস্থ্য সচেতনতা না থাকায় তারা কিছুদিন পর পর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এই তীব্র গরমে আধা ঘণ্টা পরপর পানি পানের পরামর্শ এবং তপ্ত দুপুরে কাজ না করার পরামর্শ দেন তিনি।

আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হোসেন বলেন, কুষ্টিয়াতে ইটভাটা শ্রমিক সংগঠন নেই। চাইলে যে কেউই ট্রেড বা শ্রমিক সংগঠন করতে পারে। ইটভাটায় শ্রমিকরা চরমভাবে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হলেও শ্রমিকরা পেটের দায়ে রোদে পুড়ে এ কাজ করছে। তাদের নেই সাপ্তাহিক ছুটি, নেই কোনো নিয়োগপত্র, নেই কোনো কর্মঘণ্টা, শ্রমিক রেজিস্ট্রার নেই, নেই ছুটির রেজিস্ট্রার, নেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ। তারা এখনো জানে না মে দিবস কী।

সুনির্দিষ্ট শ্রম কাঠামোতে আনা হলে এসব শ্রমিক উপকৃত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৯১টি।

;

বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা



আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল(যশোর)
বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা

বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালাসে সুরক্ষা সামগ্রী পায় না শ্রমিকেরা

  • Font increase
  • Font Decrease

বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের বেনাপোল বন্দরে শ্রমিকদের বড় ভূমিকা থাকলেও তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কথা রাখেনি কেউ। এমনকি নিরাপদে পণ্য খালাসের সুরক্ষা সামগ্রীও জুটে না তাদের। ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, দূষিত পরিবেশে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সারাবছর কাজ করতে হয় তাদের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছেন তারা।


জানা যায়, স্থলপথে ভারতের সাথে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যে হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। আমদানির পরিমাণ বছরে ৪০ হাজার কোটি, আর রফতানি ৮ হাজার কোটি টাকা। বন্দরে এসব পণ্য খালাসের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের কেন্দ্র বন্দরটি। আর এ রাজস্ব আহরণে বড় ভূমিকা রাখছে বন্দরশ্রমিকরা। সপ্তাহে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা পণ্য খালাসের কাজ করতে হয় তাদের। শ্রমিকদের সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে ভারী মালামাল থেকে শুরু করে এসিডের মত পণ্য উঠানো-নামানোর কাজ করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। পরিবেশ দূষণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তো আছেই। বন্দরে আগুন লাগলে নেভাতেও বড় ভূমিকা থাকে এই শ্রমিকদের। ভারী পণ্যের চাপায়, এসিডে পুড়ে জীবনও হারিয়েছে কয়েকজন। কাজের নিরাপত্তায় হেলমেট আর গ্লাভসের দাবি থাকলেও এ পর্যন্ত সরবরাহ করেনি সংশ্লিষ্টরা। পায়নি চিকিৎসা সেবায় প্রত্যাশিত হাসপাতাল। নেই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা।


বন্দর পরিদর্শনে এসে অনেকেই শ্রমিকদের ভাগ্য উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত কথা রাখেনি কেউ, এমন ক্ষোভ রয়েছে শ্রমিকদের।

কয়েকজন বন্দর শ্রমিক জানান, ভারী পণ্য খালাসে নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম মেলে না। খালি হাতে এসিড ও হেলমেট ছাড়া পাথর খালাস করতে হয়। ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

বেনাপোল হ্যান্ডলিংক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান ওহিদ বলেন, বেনাপোল বন্দরে আমদানি, রফতানি পণ্য উঠানো-নামানোর কাজে ৯২৫ ও ৮৯১ দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের অধীনে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক রয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে বন্দরশ্রমিকদের ভূমিকা বেশি। তাদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিদাওয়া পূরণে সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও বিশ্রামে ব্যবস্থা করা গেছে। বন্দরে শ্রমিকসহ সর্বসাধারণের জন্য একটি হাসপাতাল ও স্কুল তৈরির জন্য জায়গা অধিগ্রহণে কাজ চলমান আছে।

;