এলডিসি উত্তরণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
এলডিসি উত্তরণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এলডিসি উত্তরণ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটবে। তখন বিদেশ থেকে কী সুবিধা মিলবে, আর কোন কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও সমস্যা মোকাবিলায় এখন থেকেই তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সরকার প্রধান।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন- প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 বৈঠকে সবার উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে, সেসব প্রকল্পে দ্রুত অর্থছাড় করে সমাপ্ত করতে হবে।

একনেক সভায় মিশরে চ্যান্সারি হাউস নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রবাসীদের সেবাদানের জন্য বুথ ও অপেক্ষার জায়গা রাখার জন্য বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, বাংলাদেশের সব জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি সেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তাঁত বোর্ডের নতুন কমপ্লেক্সে নারীদের প্রশিক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা বলেছেন শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে কুড়িগ্রামের সব উপজেলার নদী ভাঙন রোধ, রাস্তাঘাট নির্মাণে ভাঙনের ঝুঁকি মাথায় রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৮ হাজার ৪২৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৭ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যাবে ৪৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- মিশরের কায়রোতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ (১ম সংশোধিত), কাশিনাথপুর-দাশুরিয়া-নাটোর-রাজশাহী-নবাবগঞ্জ-কানসাট-সোনামসজিদ-বালিয়াদিঘী বর্ডার (এন-০৬) জাতীয় মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (নবাবগঞ্জ অংশ), বিদ্যমান সরকারি মৎস্য খামারগুলোর সক্ষমতা ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম পর্যায়), ইমপ্রুভমেন্ট অব ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার অব বাংলাদেশ ফিশারজি ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট প্রকল্প, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোর পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (৩য় পর্যায়), ৮টি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং কিডনি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ (১ম সংশোধিত) ইত্যাদি।

   

মরিশাসের মন্ত্রীর সঙ্গে আরাফাতের বৈঠক

সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্যের বিস্তৃতি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে আলোচনা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ ও উদ্ভাবন মন্ত্রী দীপক বালগোবিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) মরিশাসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্যের বিস্তৃতি মোকাবিলার কৌশল নিয়ে মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

এছাড়া স্যাটেলাইট ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ-মরিশাসের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, প্রবাসী শ্রমিকদের দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার, বাংলাদেশে মরিশাসের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা এবং মরিশাসে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নানা বিষয় নিয়ে মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

এদিন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মরিশাসে একটি স্পিনিং মিল পরিদর্শন করেন এবং সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের খোঁজ-খবর নেন ও তাদের সাথে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বিষয়ক প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য গত ২২ এপ্রিল মরিশাস যান বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে তিনি মরিশাসে অবস্থান করছেন।

;

ফটিকছড়িতে ক্ষোভ থেকেই দায়ের কোপে কবিরাজকে খুন, অভিযুক্ত গ্রেফতার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে এক ব্যক্তির দায়ের কোপে নুর হোসেন (৮০) নামে এক কবিরাজকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবু তাহেরকে (৬০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের মালেক শাহ মাজার সংলগ্ন বাজারে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহত নুর হোসেন কাঞ্চননগর সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক বাসিন্দা। তিনি কবিরাজ হিসেবে বৈদ্যের কাজ করতেন। অভিযুক্ত আবু তাহেরের বাড়ি ওই এলাকার খান মোহাম্মদ পাড়ায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ডা. রফিকুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমি আমার ফার্মেসিতে বসা ছিলাম। হঠাৎ মানুষের আওয়াজ শুনে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় নুর হোসেন বৈদ্য পড়ে আছেন। সবাই বলছে, তাকে নাকি দা দিয়ে কোপাকুপি করা হয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে কয়েকজনকে দিয়ে অটোরিকশা করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে পাঠাই। সেখানে চিকিৎসকরা দেখে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে আমি পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেছি।'

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বার্তা২৪.কমকে বলেন, খবর পাওয়ার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পরে অভিযুক্ত আবু তাহেরকে খুনের কাজে ব্যবহৃত দা'সহ গ্রেফতার করা হয়। নুর হোসেন একজন কবিরাজ।

অন্যদিকে, আবু তাহেরের দাবি, নুর হোসেন তাকে তাবিজ ও যাদু-টুনা করে পাগল করে দিয়েছে। সে ক্ষোভ থেকেই নুর হোসেনকে দা গিয়ে কুপিয়েছেন।

ওসি আরও বলেন, যতটুকু জেনেছি, আসামি আবু তাহেরের বংশগতভাবে কিছুটা মানসিক সমস্যা আছে। ঘটনার পর আমরা তাকে একটি ঘরে দরজা বন্দি করে প্রায় এক ঘণ্টা কৌশলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছি। তখন তার হাতে দা'টি ছিল। সে আগেও এরকম করেছি বলে শুনেছি। তার যখন হাতে টাকা-পয়সা থাকে না. তখন তিনি মানসিকভাবে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাহের পুলিশকে জানিয়েছেন, 'তাকে (নুর হোসেন) আরো ১০ বছর আগে থেকে হত্যা করা উচিত ছিল। সে আমাকে তাবিজ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে’।

নুর হোসেনের পরিবারের দায়ের করা মামলায় আসামি তাহেরকে শনিবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

;

সিটি করপোরেশনের সৃষ্ট বৃষ্টিতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ভিজলেন মেয়র



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈশাখের তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ জনজীবন। প্রকৃতিও পুড়ছে বৈশাখের তাপদাহে। তীব্র গরমে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন। অসহনীয় গরম আর তাপদাহে বিমর্ষ এখন প্রাণ প্রকৃতি। এই অবস্থায় বায়ু দূষণ ও তীব্র তাপদাহ কমাতে নিজেদের আওতাধীন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি ছেটাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ডিএনসিসিরি দুটি স্প্রে ক্যানন এবং ১০টি ব্রাউজারের মাধ্যমে রাস্তায় পানি ছেটাচ্ছে তারা।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সরণি সড়কেও তীব্র তাপদাহের মধ্যেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে ডিএনসিসিরি দুটি স্প্রে ক্যানন এবং ১০টি ব্রাউজারের গাড়ি। পাশাপাশি খাবার পানির বিশেষ ভ্যান গাড়িও রাখা আছে। 


এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসলেন ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম। এদিকে এমন সব স্প্রে ক্যানন এবং ব্রাউজারের গাড়ি দেখে আশেপাশের এলাকার শিশু কিশোররা আগেই জড়ো হয়েছিল সেখানে। এমন সময় আসলেন মেয়র, মেয়রের আসা দেখে চালিয়ে দেওয়া হলো স্প্রে ক্যানন। চারিদিকে ঝর্ণার মত ছিটতে থাকলো পানি। আর এই পানিতে হৈ-হুল্লোর করে ভিজতে শুরু করলো উপস্থিত শিশু কিশোররা। প্রকৃতি যখন পুড়ছে বৈশাখের তাপদাহে, ঠিক তখন স্প্রে করা শীতল পানিতে স্বস্তিতে ভিজে আনান্দ উল্লাসে মেতেছে তারা। যা দেখে মেয়র আতিকও যুক্ত হলেন শিশু কিশোরদের সঙ্গে, নিজেকে ভিজিয়ে নিলেন তিনিও। তা দেখে আশে পাশে উপস্থিত সবার করতালিতে কম্পিত হতে থাকলো পুরো এলাকা। 

পরে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসিরি দুটি স্প্রে ক্যানন এবং ১০টি ব্রাউজারের মাধ্যমে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন দিয়ে পানি ছিটানো হচ্ছে। প্রতিটি গাড়িতে ১৫ হাজার লিটার পানি ধরে এবং একটানা ৫ ঘণ্টা স্প্রে করতে পারে। এটি বায়ু দূষণ রোধের পাশাপাশি তাপ কমাতেও ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি প্রতি ওয়ার্ডে ৩ টি বিশেষ ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে পথচারীদের পানি পান করার জন্য নামানো হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থার ভ্যান।

;

তাপদাহ থেকে বাঁচতে ঢাকার সবুজায়নে প্রয়োজন সমন্বিত বৃক্ষরোপণ



সাদিকুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
রাজধানী ঢাকা, ছবি: পিক্সাবে

রাজধানী ঢাকা, ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

বৈশাখের শুরু থেকেই রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। বেড়েই চলেছে সূর্যের তেজ। অবিরাম তাপপ্রবাহে ঢাকার জনজীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা; তখন ঢাকায় সবুজের গুরুত্ব অনুভূত হচ্ছে।

নগর বনায়ণ বিশেষজ্ঞরা  বলছেন, রাজধানী ঢাকাকে অপরিকল্পিতভাবে ‘অতি নগরায়ণ’ করতে গিয়ে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে তারা বলছেন, বৃক্ষরোপণের জন্য একটি বিজ্ঞান-ভিত্তিক সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। যা দীর্ঘদিন ধরে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে অবহেলিত। তার ফলাফল এখন সবার কাছে স্পষ্ট— ব্যাপক বক্ষরোপণ সত্ত্বেও ঢাকাকে সবুজায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে নগর বনায়নের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় জায়গার প্রকট সংকট রয়েছে।

চলমান তাপপ্রবাহে অনেকেই বড় পরিসরে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরুর জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে বৃক্ষরোপণ করলেই হবে না তার ‘সঠিক পরিচর্যাও’ হওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণের পর চারা গাছ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম পানি দেওয়া এবং পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। যদি গ্রীষ্মের এমন তাপে গাছ রোপণ করি তবে বর্ষা পর্যন্ত সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।’

‘কিন্তু, বাস্তবতা হলো মানুষ বৃক্ষরোপণের কথা বলে কিন্তু তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না।’, বলেন তিনি।  

জসিম উদ্দিন বলেন, পরিপক্ক গাছ সূর্যের তাপশক্তিকে বাধা দেয় এবং আর্দ্রতাকে বাষ্পীভূত করে পরিবেশের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে।

এদিকে, সবুজায়ন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন দাবি করেন গত ১০ বছরে তারা ঢাকা শহরে ২০ লাখের বেশি গাছ রোপণ করেছে। যদি এ বিষয়ে তাদের কাছে সরকারি কোন পরিসংখ্যান নেই। সেই সঙ্গে রোপণ করা গাছগুলো সঠিক যত্ন ও পরিচর্যা পেয়েছিল কিনা- তারা নিজেও জানে না।  

তারা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কিছু সংস্থা বিভিন্ন সময় নতুন চারা রোপণ করে। কিন্তু, সেই গাছগুলো অবহেলায় নষ্ট হয়ে যায়। এসব কারণেও ঢাকা সবুজায়ন হয় না বলে মন্তব্য করেন তারা।

তারা আরও যোগ করেন, একইভাবে, পরিপক্ব গাছ কেটে ফেলে কংক্রিটের দালান-কোঠা, বাজার, রাস্তা এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করেছি। বলা যায়— দিনে দিনে গাছ কাটার মতো একটি বেআইনি কাজ  'স্বাভাবিক' হয়ে উঠেছে।

‘ঢাকা সিটিতে শহুরে সবুজ স্থানের বর্তমান অবস্থা এবং ঐতিহাসিক পরিবর্তন: একটি রিমোট সেন্সিং ড্রাইভেন অ্যাপ্রোচ’ শিরোনামের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ঢাকা শহর ১৯৮৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তার ৫৬ শতাংশ গাছপালা হারিয়েছে এবং এর শহুরে আচ্ছাদন ৮২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ক্রমহ্রাসমান সবুজায়ন ঢাকা শহরের গড় গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা বৃদ্ধির  অন্যতম কারণ।

১৯৮৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার উপর তাপপ্রবাহের ফ্রিকোয়েন্সি এবং সময়কাল বাড়ছে।

'আন অ্যানালাইসিস অফ ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার অব দ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন এরিয়া ইন দ্য ল্যান্ডস্যাট ইমেজ অ্যাপ্লায়িং বাই ল্যান্ড সারফেস টেম্পারেচার' শীর্ষক আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ এর মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ভূমি পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মার্চ মাসে ২.৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মে মাসে ৩.৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। গবেষণাটিতে সর্বাধিক নির্মাণকাজ চলে এমন অঞ্চলগুলোর জন্য উল্লেখযোগ্য হারে উষ্ণতা বাড়ার প্রবণতা শনাক্ত করা হয়েছে।

সবুজায়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, ঢাকায় নতুন চারা রোপণের জন্যও জায়গাও পাচ্ছে না। শহরের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখন বিল্ট-আপ এলাকা হিসাবে ম্যাপ করা হয়েছে।

দেশের স্বনামধন্য পরিবেশ সংস্থা গ্রিন সেভার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান রনির মতে, ঢাকায় বছরে ৫০ হাজার চারা রোপণের জায়গারও অভাব রয়েছে।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছাড়া, বৃক্ষরোপণের জন্য সরকারি মালিকানাধীন কোনো জমি অবশিষ্ট নেই। সরকারি মালিকানাধীন জমিগুলো বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে; যারা মাঝে মাঝে তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাছ লাগায়। তবে বৃক্ষরোপণ নিয়ে তাদের মধ্যে দৃশ্যমান কোনো সমন্বয় নেই।

রাস্তার মাঝখানের জায়গার মালিকানা সিটি করপোরেশনগুলোর। বন নগরায়ণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহুরে বনায়ন ও তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।

কিন্তু এখানে কি করতে হবে?

বনায়নের একমাত্র উপযোগী রাস্তার মাঝামাঝি জায়গায় গাছ লাগানোর জন্য টেন্ডারে কাজ করে সিটি করেপারেশনের ঠিকাদাররা। কিন্তু সেখানে শুধু সৌন্দর্যবর্ধন করা গাছ দেখা যায়। আর এই গাছপালা ক্ষণস্থায়ী এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বেশি।

এসব গাছের পরিবর্তে, ঢাকায় বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা কমাতে এবং জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারে এমন ছাউনিযুক্ত গাছের প্রয়োজন, বলছেন গ্রিন সেভারস আহসান রনি।

রনি মনে করেন, রোপণের আগে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গাছ নির্বাচন করা উচিত। তিনি ঢাকার জন্য ঔষধি ও ফলের গাছের সুপারিশ করলেও সতর্কতামূলক বৃক্ষরোপণের ওপর জোর দেন। উদাহরণস্বরূপ, পলাশ, শিমুল, ডুমুর এবং অন্যান্য গাছ, যেগুলোতে পাখির ঝাঁক আশ্রয় নেয়।

তিনি বলেন, ‘আমি রাস্তার মাঝামাঝি বা ফুটপাতে কৃষ্ণচূড়া (ডেলোনিক্স রেজিয়া) লাগানো পছন্দ করিনা কারণ এই সংবেদনশীল গাছটি কাটার কারণে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’

রনিকে সমর্থন করে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক জাসিম মনে করিয়ে দেন, চারা রোপণ, পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত তাদের বেঁচে থাকা এবং শহুরে বনায়ন তৈরি করা সবই বিজ্ঞানের অংশ। তাই বন বিভাগের ছত্রছায়ায় (বন বিশেষজ্ঞদের একমাত্র সরকারি শাখা), নগর কর্তৃপক্ষের সকল স্টেকহোল্ডার এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।

জাসিম আরও বলেন, এ প্ল্যাটফর্মটি ঢাকা শহরের ২৫ শতাংশ অঞ্চলের প্রয়োজনীয় সবুজায়নের জন্য একটি রোডম্যাপ সেট করতে বাধ্য করবে। যদি তা হয়  তবে আমরা ১০-১৫ বছর পরে সহনীয় গ্রীষ্ম দেখতে পাব।

বন বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন অধ্যাপক জাসিমের ‘সুপারিশকে ইতিবাচক’ মনে করেন।

সাজ্জাদ বলেন, ‘শহরের জমির মালিকানা বিভাগটি প্রযুক্তিগত দক্ষতার সাথে ঢাকার নগর বনায়নে নেতৃত্ব দিতে পারে। কাঙ্ক্ষিত সবুজায়ন নিশ্চিত করতে নগর কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয় প্রয়োজন।’

;