কমিশনারদের কোন্দল ও মতপার্থক্যে বছর পার



ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দায়িত্ব নিয়ে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন ইস্যুতে বার বার বিতর্কিত হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে বছর শুরু করা ইসিতে খোদ কমিশনারদের মধ্যেই কোন্দল ও মতপার্থক্য তৈরি হয়। সেই মতপার্থক্য নিয়েই বছর শেষ করছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। নির্বাচন নিয়ে বিতর্কে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পক্ষে না থাকলেও কমিশনে কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও সিনিয়র সচিব মো: আলমগীরের বিরুদ্ধে একাট্টা হন চার নির্বাচন কমিশনার।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি। তারা নতুন করে নির্বাচনেরও দাবিও করে। আর এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে নির্বাচন নিয়েই শুরুতেই প্রশ্ন তোলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি মেয়রের শূন্য পদে স্থগিত নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমাদের ও আপনাদের সবার কর্মকাণ্ড জনতার চোখে পরীক্ষিত হবে। সুতরাং যথার্থ একটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করার জন্য আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্তোষজনক হয়েছে? এ ক্ষেত্রে পাবলিক পারসেপশন (জনসাধারণের ধারণা) কী- তা নিজেদের কাছেই জিজ্ঞেস করতে হবে।’ মাহবুব তালুকদারের এমন বক্তব্যের পরই শুরু হয় নতুন করে আলোচনা।

এরপর গত ১ এপ্রিল উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ পর্বের ভোট গ্রহণ শেষে ইসির তৎপরতা নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সেময় তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করা এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সংসদ নির্বাচনের সময় ইসির এই তৎপরতা দেখা যায়নি কেন? ‘উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। যেসব কারণে আমরা ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছি, তার কারণ খুঁজে বের করা আবশ্যক। এ অবস্থায় ভোটারদের ওপর দায় চাপানো ঠিক নয়। গত দুই বছরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তা নিয়ে ইসির আত্মসমালোচনা প্রয়োজন। ওই সব নির্বাচনে যেসব ভুলভ্রান্তি হয়েছে, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধ করা দরকার।’ ফলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ও মাহবুব তালুকদারের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ প্রকাশ্য হয়ে আসছিল। অন্য তিন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগিডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী অবশ্য সেসব মতবিরোধ বা কোন্দলের ক্ষেত্রে বরাবরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ নিয়েছেন।

তবে বছর শেষে দৃশ্য পাল্টেছে। নির্বাচন নিয়ে সমালোচনায় কারো সমর্থন না পেলেও বছর শেষে নির্বাচন কমিশনে কর্মচারী নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও সিনিয়র সচিব মো: আলমগীরের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন চার কমিশনার। চার কমিশনারের কোনো মতামত না নিয়েই ৩৩৯ জন কর্মচারীর নিয়োগ চূড়ান্ত করায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরপর সচিব ও কমিশনারদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। পরে এর সুরাহা না হলে দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দেন কোন কোন কমিশনার।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী গত ২৪ নভেম্বর সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে একটি চিঠি দেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, চার কমিশনারকে আর্থিক বিষয়সহ অনেক বিষয়ে জানানো হয় না। বর্তমান অবস্থায় ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর নির্বাচন কমিশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ অনুপস্থিত। তাঁরা শুধু সিইসি ও সচিবের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। নিয়োগের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তবে সিইসি ও সচিব মনে করেন, নিয়োগসহ কিছু বিষয় ইসির এখতিয়ারের বাইরে। এটি সচিবালয়ের দায়িত্ব। সচিব সিইসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ী থাকবেন। সচিবালয়ের ওপর কর্তৃত্ব নিয়ে এর আগেও চার কমিশনারের সঙ্গে সিইসির বিরোধ দেখা গিয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসি সচিবালয়ের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়ে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের ১০টি পদে ৩৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেয় ইসি সচিবালয়। এতে মোট ৮৫ হাজার ৮৯৩ জন আবেদন করেন। চলতি মাসে নিয়োগ চূড়ান্ত করে নিয়োগপত্র ছাড়া হয়। এই নিয়োগ চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে চার কমিশনারের মতামত বা অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ইসি সচিবালয়ের সচিব নথি উপস্থাপন করার পর সিইসি নূরুল হুদা তা অনুমোদন করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে অন্য চার কমিশনারকে কিছুই জানানো হয়নি। এতে তাঁরা অসন্তুষ্ট হন। নাম প্রকাশ না করে একজন কমিশনার বলেন, নিয়োগের পেছনে চার কোটি আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকার কোনো হিসাব নেই।

পরে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করেন। ওই ব্রিফিংয়ের পরই ইসির সিনিয়র সচিবও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি। এবং নিয়োগ কার্যক্রম কমিশনারের এখতিয়ারভুক্ত নয়। পরে ইউওনোটের জবাব গত ৯ ডিসেম্বর কমিশনারদের দেয়া হয়। ওই জবাবে কমিশনের একজন কর্মকর্তা স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়টি নিয়ে গত ১১ ডিসেম্বর বুধবার কমিশন সভায় ক্ষুব্ধ বক্তব্য রাখেন চার কমিশনার।

সভায় একজন কমিশনার তার বক্তব্যে বলেন, নিয়োগ নিয়ে আমার এক ইউওনোটের (আনঅফিসিয়াল নোট) উত্তরে কমিশন সচিবালয় থেকে যে উত্তর দেয়া হয়েছে তা নির্বাচন কমিশনারগণের চরিত্র হননের অপচেষ্টা মাত্র। গত ৯ ডিসেম্বরের চিঠিতে আমাদের জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনারদের সুপারিশকৃত কয়েকজন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকালে প্রক্সি পরিক্ষার্থী হিসেবে ধরা পড়েন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে একান্ত সচিবকে মৌখিকভাবে জানানো হয়। উক্ত পরিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয় এবং মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়। এ প্রসঙ্গে ওই কমিশনার সভায় বলেন, চিঠির এ উত্তর নির্বাচন কমিশনারদের প্রতি অপমানজনক।

ওই কমিশনার আরও বলেন, চিঠিতে নির্বাচন কমিশনারদের সুপারিশকৃত প্রার্থীরা নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- সচিবালয়ের এই বক্তব্য নির্বাচন কমিশনারদের অপমান করা এবং নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ ও চ্যালেঞ্জ করার সামিল। সভায় কমিশনার বলেন, এক বছরের অধিককাল আগের এক নির্দেশ যথাযথভাবে পরিপালিত না হওয়ায় যৌক্তিকভাবেই আমি কমিশন সচিবালয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে বলে উল্লেখ করেছি। কিন্তু গত ২৫ নভেম্বর সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কমিশনের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোন কর্তৃত্ববলে প্রেস কনফারেন্স করে নির্বাচন কমিশনারদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে জাহির করলেন তা বোধগম্য নয়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বৈঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কোন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে সচিবালয়ের বর্তমান স্বেচ্ছাচারিতা ও মিথ্যাচারের বিহিত না হলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন প্রায় অসম্ভব।

ওই সভায় ইসি সচিবালয়ের চিঠি প্রসঙ্গে আরেক নির্বাচন কমিশনার বলেন, উত্তরপত্রটিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সরাসরি কমিশনারদের মুখোমুখি করার একটা প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি বলেন, কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের অনুস্বাক্ষরসহ অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় যে উত্তর দেয়া হয়েছে তা সকল কমিশনারকে হতবাক করেছে। কেননা উল্লেখিত পত্রে কমিশনারদের প্রদত্ত ইউওনোটকে সম্পূর্ণরূপে পাশ কেটে অপ্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। নিয়োগ প্রসঙ্গে এ কমিশনার বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করার বিষয়টি আড়াল করে নির্বাচন কমিশনারদের হেয় করার প্রয়াস মাত্র- যা মোটেই কাঙ্খিত নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্ট হলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সকল কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে। শেষ বক্তব্যে এ কমিশনার বলেন, সিইসি সকল নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে বিদ্যমান সকল আইন অনুসরণ করে কমিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন- এমন প্রত্যাশা করেন এ কমিশনার। একইভাবে আরও দুই কমিশনার সচিবালয়ের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আর সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার চেয়ে মাহবুব তালুকদার বরিশাল, গাজীপুর ও খুলনা সিটির ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘অতীতে যে সকল সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন- কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

   

২০২৩ সাল: রংপুরের যত আলোচিত ঘটনা



বর্ণালী জামান,স্টাফ করেসপন্ডেট, রংপুর
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ঘটনাবহুল আরেকটি বছর শেষ করতে যাচ্ছে রংপুরবাসী। ২০২৩-এ নানান ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকছে এ অঞ্চলের মানুষ। এ বছরের কয়েকটি ঘটনা দেশবাসীকেও নাড়া দিয়েছে।

সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের গণমহাসাবেশে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা। এ বছরেই রংপুরে গ্যাস এসেছে। ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রংপুরে সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

আলোচিত এসব ঘটনার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

২২ মার্চ: জেলা প্রশাসক 'স্যার' ডাকতে বাধ্য করায় অবস্থান কর্মসূচি' হাতে লেখা এমন প্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে বসে বেগম রোকেয়া শ্বিবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন তিনি।

এপ্রিল: গ্রীষ্মের তাপদাহে পুড়ে রংপুর। এবাররই প্রথম গরমে অতিষ্ঠ মানুষদের মধ্যে পানির বোতল বিতরণ করা হয়েছে।

১ জুন: নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এ দিন ৫ মিনিট স্তব্ধ থাকে রংপুর। এ কর্মসূচি পালনে সর্বস্তরের মানুষ সাড়া দেয়।

২ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে অংশ নেন। তিনি ২৭ টি প্রকল্পের উদ্ধোধন করেন। সেই সাথে তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নের ঘোষণা দেন।

১৯ সেপ্টেম্বর: এ দিনে গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের এর বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়। একই দিনে রংপুর বিনোদন চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রোমিও-জুলিয়েটকে আনা হয়েছে।। বিকালে বিশেষ ব্যবস্থায় রোমিও-জুলিয়েটকে নিয়ে আসা হয়।

২৬ সেপ্টেম্বর: মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহিদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদার মারা যান। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ভোরে নগরীর কামাল কাছনায় নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

১ অক্টোবর: এদিনে নগরীতে ৩৫ টাকা কেজি দরে এ খোলাবাজারে আলু বিক্রি করা শুরু হয়। কাচারীবাজার এলাকায় খোলা ট্রাকে এই বিক্রি কার্যক্রম চলে।

৪ অক্টোবর: ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রংপুরে সতর্কতা জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর পরের দিন টানা বর্ষণে বন্যায় প্লাবিত হয় জেলার বিভিন্ন এলাকা।

১৪ নভেম্বর: রংপুরের মানুষ বছরের পর বছর থেকে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করে আসছিলেন। অবশেষে এ দিনে উন্নয়ের ডানা মিলে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আসে। এদিন সকালে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন। তারপর পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জেলার পীরগঞ্জে গ্যাস স্টেশন প্রাঙ্গণে ফলক উন্মোচন করেন।

 

;

দেশের ফুটবলে উত্থান-পতনের ছোঁয়া



নজরুল ইসলাম, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা২৪.কম
ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটি বছর পার করল বাংলাদেশের ফুটবল

ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটি বছর পার করল বাংলাদেশের ফুটবল

  • Font increase
  • Font Decrease

মাঠের পারফরম্যান্সে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালকে বিদায় জানিয়েছে বাংলাদেশের ফুটবল। শুধু স্বপ্নভঙ্গের গল্প লেখেনি দেশের ফুটবলাররা। উৎসব করার মতো সাফল্যও ধরা দেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হাতে। সদ্য বিদায় নেওয়া বছরে দেশের ফুটবলের সেই হাসি আর কষ্টমাখা স্মৃতিগুলো একবার রোমন্থন করা যাক-

কাতার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে বাংলাদেশ

২০১৯ সালে মাঠের লড়াইয়ে বেশ উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল। উতড়ে যায় বিশ্বকাপ প্রাক বাছাই পর্বের বাধা। দুরন্ত পারফরম্যান্সে লাওসকে হারিয়ে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে পা রাখে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে দাপুটে প্রতিরোধ গড়ে ড্র ছিনিয়ে নেয় দেশের দামাল ছেলেরা। যে পারফরম্যান্স বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি অতীতে ফিরে যাওয়ার আভাস দেয়।

অন্য দিকে প্রীতি ম্যাচে কম্বোডিয়ার বিপক্ষেও জেতে বাংলাদেশ। আর ঢাকায় ভুটানকে দুই ম্যাচে ধরাশায়ী করে কোচ জেমি ডে-র শিষ্যরা।

ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে ট্রফি জয়

সদ্য অতীত হওয়া বছরে অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে দেশের ছেলেরা। মালদ্বীপকে হারিয়ে চার দলের উয়েফা অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে সেরা হয় বাংলাদেশ।

এএফসি কাপের সেমিতে আবাহনী

ক্লাব ফুটবলে গেল বছর নতুন কীর্তি গড়ে ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। এএফসি কাপের আঞ্চলিক সেমি-ফাইনালের টিকিট কাটে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী দলটি। তা আবার প্রথমবারের মতো। শেষ চারের প্রথম লেগে জয়ও ছিনিয়ে নেয় আবাহনী। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়ান ক্লাব এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভকে ধরাশায়ী করে তারা। কিন্তু পিয়ংইংয়ের ফিরতি লেগে হারের তেতো স্বাদ নিয়ে ঘরে ফেরে আবাহনী।

এসএ গেমসে স্বপ্নভঙ্গ

নেপাল এসএ গেমসে আর্চারির দশটি স্বর্ণপদকই জিতেন রোমান সানারা। সুবাদে নিজেদের পুরনো রেকর্ড ভেঙে ১৯টি স্বর্ণপদক জেতার নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু ফুটবলে লেখা হয় ব্যর্থতার গল্প।

খেলার কথা অনূর্ধ্ব ২৩ দলের। সেখানে বাংলাদেশ লড়াই করেছে জাতীয় দল নিয়ে। তার চেয়ে বড় কথা। নেপাল এসএ গেমসে ফুটবল দল পাঠায়নি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত। তাই বাংলাদেশের ফাইনালে উঠার সম্ভাবনা জোরালো ছিল। কিন্তু গেমসে প্রথমবারের মতো ভুটানের কাছে হেরে ফাইনালে উঠার স্বপ্ন ভেঙে যায় বাংলাদেশের ছেলেদের। আর গেমসে মেয়েদের দলই পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।

এএফসির সেরা গোল

মামুনুল ইসলাম ও সোহেল রানার গোল দর্শকদের ভোটে এএফসি-র সপ্তাহ সেরা গোলের মর্যাদা পায়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উত্তর কোরিয়ার ক্লাব এপ্রিল টোয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে করা আবাহনীর মিডফিল্ডার সোহেল রানার গোলটি জায়গা করে নেয় এএফসি-র সেরা গোলের তালিকায়। তার আগে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে নেপালের মানাং মার্সিয়াংদি ক্লাবের বিপক্ষে আবাহনীর মাঝ-মাঠের তারকা ও বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলামের গোল সপ্তাহ সেরা নির্বাচিত হয়।

শেখ কামাল ক্লাব কাপ

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে শিরোপা জিতে নেয় মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসি। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-১ গোলে হারায় তেরেঙ্গানু। রানার্স-আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কোচ মারুফুল হকের বন্দরনগরীর ক্লাবটিকে।

বসুন্ধরার লিগ ট্রফি

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রথমবার পা রেখেই সবাইকে চমকে দেয় বসুন্ধরা কিংস। নিজেদের অভিষেক মৌসুমেই ঘরে তুলে দেশের লিগ ট্রফি। লিগের ২২তম ম্যাচে মোহামেডানের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেই শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলে টুর্নামেন্টের নবাগত দলটি।

গোল্ডকাপ সেরা মেয়েরা

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা অনূর্ধ্ব-১৯ গোল্ডকাপে ছোবল দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ফণী। বাজে আবহাওয়ার কারণে ফাইনাল ম্যাচটিই মাঠে গড়ায়নি। অন্য ফাইনালিস্ট লাওসের সঙ্গে যুগ্মভাবে শিরোপা ভাগাভাগি করে দেশের মেয়েরা।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে আঁখিরা

গেল বছর ফের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের মূল পর্বে খেলে দেশের মেয়েরা। টুর্নামেন্টের মূল পর্বে টানা দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তবে নেপালের সাফ ফুটবলের শেষ চারে উঠেও ভারতের কাছে হেরে বিদায় নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্লাব পাড়ায় শুদ্ধি অভিযান

ক্যাসিনোর মূল উৎপাটন করতে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চালায় শুদ্ধি অভিযান। এতে স্তব্ধ হয়ে পড়ে মোহামেডান, আরামবাগ ও ফকিরেরপুলসহ ঢাকার অন্য ফুটবল ক্লাবগুলো। জুয়া আর ক্যাসিনোর অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে এখন অভিযুক্ত ক্লাবগুলো।

;

আলোচনায় ছিল জঙ্গিদের নতুন কৌশলে হামলা



শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৬ সালে পুরো বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। এ ঘটনার পরে জঙ্গিরা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। একের পর এক অভিযানে মেরুদণ্ড ভেঙে যায় জঙ্গি চক্রের।

তবে ২০১৯ সালে এসে হঠাৎ জঙ্গিরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নতুনভাবে হামলার পরিকল্পনা করে। রাজধানীসহ একাধিক জায়গায় আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা।

এ ঘটনা আমলে নেন স্বয়ং পুলিশ প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। তিনি বলেন, জঙ্গিরা হামলার ধরন বদলে (লোন উলফ) ‘একাকী’ হামলার কৌশল আঁটায় তা উদ্বেগের নতুন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গিরা এবার টার্গেট করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

অতীতের একাধিক হামলার ঘটনা পর্যালোচনা করে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের সব ইউনিটে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশও দেন পুলিশ প্রধান। সে অনুযায়ী সারা দেশের পুলিশ সতর্ক হয়ে ওঠে।

সর্বশেষ খুলনার খানজাহান আলী থানার আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় এ হামলা হয়। কেউ হতাহত না হলেও আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উদ্ধার করা হয় ককটেল।

গত তিন বছরে কোণঠাসা হয়ে থাকা জঙ্গিরা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে ২০১৯ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের শুরুতে অর্থাৎ মার্চ ও এপ্রিল মাসে গুলিস্তান এবং মালিবাগে পুলিশ বক্স ও পুলিশ ভ্যানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটনায় তারা। আর ২৩ জুলাই প্রায় একই সময়ে পল্টন ও খামারবাড়িতে দুই পুলিশ বক্সের পাশে তারা বোমা রেখে যায়। যদিও বোমা দুটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে ২০১৯ সালে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের নজরে আসতে চায় এ দেশের জঙ্গিরা। আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে প্রত্যেকটি ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে।

পুলিশ বলছে, হামলায় ব্যবহৃত হতো ককটেল কিন্তু ইমপ্রোভাইজড। যা সাধারণ ককটেলের চেয়ে শক্তিশালী। প্রত্যেকটা ঘটনা ‘লোন উলফ’ (একাকী) বা উলফ প্যাকের (৪/৫ জন মিলে) পরিকল্পনা ফলো করে হামলা করে জঙ্গিরা। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে জঙ্গি প্রতিরোধে বিশেষায়িত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘লোন উলফ (একাকী) বা উলফ প্যাক (৪/৫ মিলে)’ হামলার কৌশলে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন ছিল। এর সদস্যরা নিজেরা নিজেরা র‌্যাডিক্যালাইজড হয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে। এরকম একাধিক ‘উলফ প্যাক’ রয়েছে বলেও ধারণা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দারা বলছেন, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি ‘সেল্ফ র‌্যাডিক্যালাইজড’ হয়ে ‘লোন উলফ’ বা ‘উলফ প্যাক’-এর মাধ্যমে হামলার পরিকল্পনা করলে তা ঠেকানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোও এভাবে হামলা চালানোর জন্য নিয়মিত আহ্বান চালিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক আমরা ভেঙে দিতে পেরেছি। কিন্তু এরা যেহেতু বিচ্ছিন্ন ও মতাদর্শিকভাবে এক্সিস্ট করে, সে হিসেবেই তারা বিচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই চেষ্টা বা কার্যক্রম চালানোর প্রক্রিয়া হিসেবেই এরকম আরও কিছু ছোট ছোট ‘স্লিপার সেল’ বা ‘উলফ প্যাক’ তৈরি হয়েছে। অভিযান চালিয়ে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

;

আন্তর্জাতিক ফুটবল

লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা উৎসব, ব্যালন ডি'অরে মেসির রেকর্ড



নজরুল ইসলাম, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা২৪.কম
কেটেছে লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা খরা, ব্যালন ডি'অর রাজ্যে মেসির ফেরা

কেটেছে লিভারপুল-ব্রাজিলের শিরোপা খরা, ব্যালন ডি'অর রাজ্যে মেসির ফেরা

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্ণিল একটি বছর পার করল আন্তর্জাতিক ফুটবল। বিতর্ক, সাফল্য, শিরোপা জয় আর চমকে ভরা বছরটা সন্দেহ নেই স্মরণীয় থাকবে বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসের পাতায়। ঘটনাবহুল বিদায়ী বছরের স্মৃতিচারণায় নিশ্চিত আগামী দিনগুলোতে মুখরিত থাকবেন ফুটবল অনুরাগীরা। লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ, পর্তুগালের ন্যাশন্স কাপ আর ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয়, উয়েফা অ্যাওয়ার্ডে ভার্জিল ফন ডাইকের চমক, মেসির নিষেধাজ্ঞা আর ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর জয়ের কীর্তি গড়ার মতো গেল বছরের আলোচিত ঘটনায় একবার চোখ ফেরানো যাক তাহলে-

ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা জয়

কোপা আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছিল শিরোপা খরা। তা প্রায় এক যুগ। সেই খারাপ সময়টা পেরিয়ে ২০০৭ সালের পর ব্রাজিলের ঘরে বিদায়ী বছরে প্রথম এসেছে কোপা আমেরিকার ট্রফি। ফাইনালে পেরুকে হারিয়ে আসরের নবম শিরোপা জিতে অনেক দিনের হতাশা দূর করেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের ক্ষত কিছুটা হলেও শুকিয়ে দিয়েছে ঘরের মাঠের এ শিরোপা জয়।

মেসির নিষেধাজ্ঞা

মেজর ফুটবল আসরে আর্জেন্টিনার দুঃস্বপ্নটা কিছুতেই যেন কাটছে না। ২০১৯ কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার সেই দুঃস্বপ্নটা আরো একটু স্থায়ী হলো বৈকি! দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সর্বোচ্চ এ টুর্নামেন্টের শেষ চারে চির শত্রু ব্রাজিলের মাঠে তাদের কাছেই হেরে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি ফের পুড়লেন শিরোপা না জেতার আক্ষেপের আগুনে। সেই হতাশা হজম করতে না পেরে দিয়ে ফেলেন বিতর্কের জন্ম। যেটা নিপাট ভদ্র মেসির সঙ্গে কোনোভাবেই যায় না।

প্রতিবেশী ব্রাজিলের কাছে হেরে রেকর্ড ষষ্ঠবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী এ সুপারস্টার আয়োজকদের দাঁড় করান নিজের কাঠগড়ায়। অভিযোগ তোলেন পাতানো' কোপা আমেরিকা আয়োজনের। চিলিকে হারিয়ে কোপার তৃতীয় সেরা দলের মর্যাদা ছিনিয়ে নেওয়ার ম্যাচে মেসি দেখেন লাল কার্ড। ফের মাথা গরম করে ফেললেন। বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কের রসদ যোগান দেন আর্জেন্টাইন এ ফুটবল মহাতারকা। এবার অভিযোগ করেন- স্বাগতিক ব্রাজিলকে জেতাতেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। ঠিক এ অপরাধেই আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিন মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন মেসি।

ন্যাশন্স কাপ পর্তুগালের

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হাত ধরে ২০১৬ সালে ইউরো জয়ের পর ইউরোপিয়ান ফুটবলে গেল বছর আরো একটি বড় সাফল্য পায় পর্তুগাল। জিতে নেয় তারা উয়েফা ন্যাশন্স কাপের প্রথম আসরের ট্রফি। এ সাফল্যেও অসামান্য অবদান রাখেন পর্তুগিজ মেগাস্টার রোনালদো। পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী সিআর সেভেনের হ্যাটট্রিকে সুইজারল্যান্ডকে ধসিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটে পর্তুগাল। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ধরাশায়ী করে নিজেদের দ্বিতীয় মেজর ট্রফি ঘরে তুলে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের শিষ্যরা।

ব্যালন ডি'অরে মেসির রেকর্ড

প্রিয় জন্মভূমি আর্জেন্টিনার হয়ে এবছরও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেননি লিওনেল মেসি। ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে জিতেন শুধু লা লিগা ট্রফি। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে বল পায়ে তার ফুটবল জাদু মুগ্ধ করে রাখে পুরো দুনিয়াকে। সুবাদে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার বনে যান মেসি। তার ধারাবাহিকতায় ব্যালন ডি'অরে নিজের রাজ্যত্ব ফিরে পান আর্জেন্টাইন এ ফুটবল জাদুকর। ২০১৯ সালের ব্যালন ডি'অর জিতে লিখে ফেলেন নতুন ইতিহাস। পুরনো রেকর্ড ভেঙে গড়েন ষষ্ঠ ব্যালন ডি'অর জয়ের রেকর্ড।

ভার্জিল ফন ডাইকের চমক

লিভারপুলের হয়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে সবার নজর কাড়েন ভার্জিল ফন ডাইক। দ্য রেড শিবিরকে উপহার দেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। সুবাদে সবাইকে চমকে লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পিছনে ফেলে এ ডাচ ডিফেন্ডার জিতে নেন উয়েফার বর্ষসেরা ফুটবলার অ্যাওয়ার্ড।‌

লিভারপুলের ঘরে চ্যাম্পিয়নস লিগ

লিভারপুল সর্বশেষ ইউরোপ সেরার তকমা জিতে ছিল ২০০৫ সালে। দীর্ঘ ১৫ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে সদ্য অতীত হওয়া বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি জিতেছে দ্য রেড শিবির। টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি ছিনিয়ে নেয় অ্যা‌নফিল্ড শিবির। তবে লিভারপুলের লিগ ট্রফির খরাটা এখনো কাটেনি। ১৯৯০ সালে সর্বশেষ লিগ ট্রফি জেতে তারা। তবে মাঠের লড়াই আর ফর্ম দেখে এটা বলাই যায়, কোনো অঘটন না ঘটলে দীর্ঘ ৩০ বছর পর চলতি মৌসুমের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি উঠতে যাচ্ছে লিভারপুলের শোকেজেই।

;