হজের কোনো ‘প্রতীকী’ আয়োজন নেই, এটা ফরজ ইবাদত



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কেবলমাত্র সৌদি আরবে বসবাসকারীদের হজের অনুমতি দেওয়া হলেও তা হবে ‘অত্যন্ত সীমিত’ পরিসরে। আধুনিক সৌদি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি হজযাত্রীরা হজপালনে যেতে পারলেন না। সৌদি আরবের সিদ্ধান্তে বিশ্বের নানাপ্রান্তের মুসলমানরা হতাশা প্রকাশ করলেও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই কঠিন সময়ে এমন সিদ্ধান্তকে প্রয়োজনীয় বলে মেনে নিয়েছেন।

সক্ষম ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় কমপক্ষে একবারে হজপালন করতে হয়। প্রতিবছর প্রায় ২০-২২ লাখ হজযাত্রী হজপালন করেন। তাদের নানাবিধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয়ভাবে আর কয়েক লাখ স্বেচ্ছাসেবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে প্রচুর লোক নিয়োজিত থাকেন। এমতাবস্থায় হজ উন্মুক্ত রাখলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের একটি বড় উৎসে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষার নিমিত্তে হজ সীমিত করা হয়েছে।

সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ সৌদিতে অবস্থানরতদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, তবে তারা কোনো সংখ্যা এখনও নির্দিষ্ট করেনি। আয়োজন বড় হলেও তা দশ হাজারের বেশি যাবে না। সর্বনিম্ন এক হাজারও হতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরবের বাইরের দেশ থেকে হজ করতে যাবার সুযোগ বাতিল করে শুধু সৌদি আরবের বাসিন্দা এবং দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিদের হজের সুযোগ দেওয়াকে অনেকে ‘প্রতীকী হজ’ বলে অভিহিত করছেন। কেউ বলছেন আন্তর্জাতিকভাবে হজপালনকে স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হজকে প্রতীকী বলা কিংবা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় মানে ভাগ করা কতটুকু যৌক্তিক? এক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত কী বলে?

ইসলাম কোনো অলৌকিক ধর্ম নয়, ইসলাম বাস্তবসম্মত ধর্ম। ইসলামের সব বিধান দেওয়া হয়েছে মানুষের সামর্থ, যোগ্যতা চিন্তার কথা ভেবে। প্রত্যেকটি বিধানের ক্ষেত্রে বিকল্প বলে দেওয়া হয়েছে। কষ্টসাধ্য কোনো কিছু ইসলাম চাপিয়ে দেয় না। ইসলাম সব বিষয়ে মানুষকে হুঁশিয়ার থাকতে বলে, প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণ ও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে। আসন্ন হজে সীমিত মানুষের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত তেমনই একটি সিদ্ধান্ত।

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি হজ। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সামর্থ্য থাকলে এবং শরীর সুস্থ থাকলে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হজ অবশ্য পালনীয়। বছরে একটা নির্দিষ্ট সময়েই হজ করা যায়। হজ ফরজ হওয়ার শর্তের অন্যতম হলো- যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া, রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা না থাকা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের যোগাযোগ বন্ধ। তা ছাড়া করোনা সংক্রমনের কারণে প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে মহামারির সময় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় না যেতে হাদিসে নির্দেশ রয়েছে। এমতাবস্থায় যারা হজে যাওয়ার অনুমতি পাননি ধরে নেওয়া হবে, তাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার হুকুম আরোপিত হয়নি। যারা অনুমতি পেয়েছেন বা পাবেন, তাদের ওপর হজ ফরজের হুকুম আরোপিত হবে, তারা হজ আদায় করতে পারবেন। এখানে প্রতীকী বলে কিছু নেই।

প্রতীকী অর্থ রূপক আয়োজন, এটা অনেকটা রাজনৈতিক কর্মসূচি। কোনো কিছুর মূল আয়োজন করতে না পেরে তার অনুরূপ কিছু করাকে প্রতীকী আয়োজন বলে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যারা হজে অংশ নিচ্ছেন, তারা ফরজ ইবাদত পালন করছেন। তাদের ইবাদতকে প্রতীকী বলার কোনো অবকাশ নেই।

তাওয়াফকারীরা কাবা চত্বরে নামাজ আদায় করছেন, ছবি: সংগৃহীত

আমরা অসুস্থ হলে অনেক সময় দাঁড়াতে না পেরে বসে নামাজ আদায় করি, বসতে সমস্যা হলে শুয়ে নামাজ আদায় করি। ইসলামে এমন বিধান দেওয়া আছে। ওই নামাজ কী প্রতীকী নামাজ? উত্তর অবশ্যই না। পরিবর্তিত অবস্থায় ওইভাবেই নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। চলতি হজের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমন।

তবে হ্যাঁ, সৌদি সরকার যদি অন্যায়ভাবে হজের জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান করতো, তাহলে সেটা হতো ভিন্ন প্রসঙ্গ। হজের সফর বাধাগ্রস্ত হওয়াকে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় ‘ইহসার’ বলা হয়। যেমন সপ্তম হিজরিতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল্লাহর উদ্দেশে মদিনা থেকে বের হন। কিন্তু হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌঁছার পর মক্কার মুশরিকদের বাধা দেন।

ইসলামি আইনজ্ঞরা হজ বা উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধার পর বাধাপ্রাপ্ত হলেই শুধু ইহসার শব্দের প্রয়োগ করেন। সুতরাং কেউ ইহরাম বাঁধার আগে বাধাপ্রাপ্ত হলে তার ওপর কোনো কিছু আবশ্যক হবে না। তবে আল্লাহর ঘরে পৌঁছাতে না পারার কারণে ব্যথিত ও অনুতপ্ত হবে। আল্লাহর কাছে এই পরিস্থিতির অবসানের জন্য দোয়া করবে এবং মনে মনে ইস্তেগফার করবে।

হানাফি মাজহাব মতে, ইহরাম বাঁধার পর যেকোনো কারণে আরাফার ময়দানে অবস্থান ও তাওয়াফ করতে বাধাপ্রাপ্ত হলে তা ইহসার বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য পশু কোরবানি করা আবশ্যক হবে। যতক্ষণ না প্রেরিত পশু হারামে না পৌঁছাবে অথবা তার নামে সেখানে পশু কোরবানি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে ইহরাম ত্যাগ করবে না। আর হজ ও উমরার বাধা দূর হওয়ার পর পুনরায় তা আদায় করে নেবে।

অন্য মাজহাব মতে, কেবল শত্রু দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে তাকে ইহসার বলা হবে। অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, পথে অর্থ শেষ হয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো সমস্যার কারণে হজে যেতে না পারলে তারা তাকে ইহসার বলেন না। ফলে তাদের মতে, শত্রু কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত না হয়ে অন্য কারণে হজ ও উমরায় যেতে না পারলে তার ওপর কোনো কিছু ওয়াজিব হবে না।

চলমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরব বারবার বলছে, বিশ্বের সব দেশের সব মুসলিমকেই হজপালনের সুযোগ দিতে তারা আগ্রহী। কিন্তু চলতি বছরের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আমাদের এই ব্যতিক্রম হজপালনে বাধ্য করছে। সুতরাং এখানে পরিবর্তিত বিধান প্রয়োগ করা হবে।

আর করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে কমবেশি সবাই অবগত। বর্তমানে সব দেশেই সাধারণ যাতায়াত বন্ধ। হজের সময় হজযাত্রীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে মানুষের জীবনের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মোটাদাগে এসব সিদ্ধান্তকে ইসলামি বিধান বহির্ভূত বলা সুযোগ নেই। আবার এটাকে ‘প্রতীকী’ কিংবা আন্তর্জাতিক আয়োজন নয়- বলে হজের মর্যাদা ক্ষুন্ন করারও অধিকার নেই।

প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো হজে সৌদি আরবের বাইরের কেউ অংশ নিতে পারছেন না। অবশ্য মহামারিসহ নানা কারণে ইতোপূর্বে হজ স্থগিত হওয়া ও সীমিত আকারে পালিত হওয়ার নজির রয়েছে।

   

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;