হজের সফরে যেসব স্থানে কষ্ট ও ঝগড়া হয়



মুফতি অহিদুল আলম, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। হজে রয়েছে ঈমানি উদ্দীপনার বিরাট উৎস। এর ঐতিহাসিক পটভূমি ও ফজিলত সম্পর্কে প্রতিটি মুসলমান কমবেশি অবগত।

হজে রয়েছে মুমিনের জন্য প্রচুর কল্যাণ। একজন মুমিন একটা সময়ের জন্য আত্মীয়-স্বজন, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করে দীর্ঘ সফরের কষ্ট স্বীকার করে হজব্রত পালন করতে পারে তখনই যখন তার অন্তর আল্লাহভীতি ও ভালোবাসায় পূর্ণ হয়। তাই হজের প্রথম ও প্রধান কল্যাণ হলো- হজব্রত পালনের মাধ্যমে হাজি সাহেবরা অন্তরে নতুন করে অর্জন করে হৃদয়ের সজীবতা, প্রেমের উষ্ণতা এবং ঈমানের দৃঢ়তা।

হজের সফরে যেহেতু ঘর-বাড়ি ছেড়ে, ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে থাকতে হয়, তাই কিছুটা কষ্ট করতে হয়। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, হজের সফরে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে কষ্ট হয়, আর সেই কষ্টের কারণে অনেক মেজাজ চড়া হয়ে যায়, ফলশ্রুতিতে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। হজপালনকারীদের একান্ত কর্তব্য হলো- কষ্টের এ জায়গাগুলোতে ধৈর্য্যধারণ করা, কোনোভাবেই ঝগড়ায় লিপ্ত না হওয়া।

কষ্টের স্থানসমূহ
১. সমগ্র দুনিয়া থেকে হজকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কিছু দিনের মধ্যে জেদ্দা অথবা মদিনা এয়ারপোর্টে হজপালনকারীরা অবতরণ করেন। তাই এয়ারপোর্টের সব কাজে অস্বাভাবিক ভিড় হয়।

২. কাবা শরিফের চত্বর (মাতাফ), মসজিদে হারাম, সাফা-মারওয়া, মদিনা শরিফ, মসজিদে নববি ও রওজা শরিফ নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা অবস্থিত হওয়ায় হজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো একসঙ্গে করতে যেয়ে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়- সুতরাং এখানে একটু কষ্ট হয়।

৩. মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় একই দিনে একই স্থানে ৩০-৩২ লাখ মানুষ জমা হওয়া ও আসা-যাওয়া করতে গাড়ীতে কষ্ট হয়, পথে যানজটের সৃষ্টি হয়। কখনও যান্ত্রিক গোলোযোগ দেখা দেয়, দূর্ঘটনাও ঘটে। তাই স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এখানে ৫-৬ গুণ সময় বেশি লাগে। ইহরাম অবস্থায় এখানে কষ্ট হয়। তাই সাবধানে থাকা।

৪. সৌদি আরবের আবহাওয়া বিশেষ করে মক্কা, মিনা, আরাফা ও মুজদালিফার তাপমাত্রা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি রুক্ষ্ম। রোদের তাপ ও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই চলাফেরায় ছাতা রাখা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা।

৫. হজের সফরে মক্কা ও মদিনার সব কাজকর্মের জন্য সৌদি মুয়াল্লিমের দারস্ত হতে হয়। অনেক মুয়াল্লিমের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হয়। এসব কারণে পরিস্থিতি বুঝা, মেজাজ ঠাণ্ডা রাখা।

৬. ফাইভ স্টার হোটেলসহ বিলাসবহুল হোটেল মক্কা-মদিনাতে অনেক আছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অন্য স্থানের হোটেলের মতো এসব হোটেলে সব সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। অধিকাংশ হাজি সাধারণ হোটেল বা বাড়িতে থাকেন। কিছু কিছু হোটেল বা বাড়ি এত নিম্নমানের যে- এসি, বাথরুম বা অন্যান্য বিষয়ে হাজিদের কষ্ট পোহাতে হয়।

৭. মক্কা ও মদিনার সব হোটেলে রান্না করার অনুমতি নেই। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে খাবার পৌঁছানো হয়। নামাজের জামাতের আগে পরে ভিড় না কমা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করা যায় না। আবার কখনও পুলিশের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। এমনকি আইনের খেলাফ হলে পুলিশ অনেক সময় খাবার ফেলে দেয়। তাই যথাসময় খাবার না পৌঁছানোর কারণে কষ্ট হয়।

অন্যদিকে নিম্নরুচিবোধসম্পন্ন, অতিলোভী এজেন্সি বা দায়িত্বশীলের পরিকল্পিত কৃত্রিম সঙ্কটও অনেক সময় কষ্টের কারণ হয়।

/uploads/files/OaydYvxSq2SATQ9Gi9jS2VECkq95m4IsdfPQC9jV.jpeg

যে সব স্থানে ঝগড়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
হজ আল্লাহতায়ালার এমন একটি ব্যতিক্রমী বিধান- যার পবিত্রতা ও সুমহান মর্যাদা সুরক্ষার জন্য তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতা, গালি-গালাজ, ঝগড়া ও মারামারি করা হতে কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

হজের সফরের নিম্নোক্ত স্থানে সাধারণত ঝগড়া বেশি হয়। তাই এমন স্থানগুলো একটি ধারণা দেওয়া হলো- যাতে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়।

১. যারা হজের প্রশিক্ষণ নেয় না, কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে যায় না, তাবলিগ জামাতে সময় লাগায় না, হজের মাসয়ালা-মাসয়েলের ওপর পড়াশুনা করে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের অবান্তর ও অন্যায় আচরণ দ্বারা হজের সফর কলুষিত হয়।

২. দুর্ভাগ্যক্রমে কোনো প্রতারক, ঠকবাজ এজেন্সির মাধ্যমে হজে গেলে তার কষ্টের শেষ থাকে না। তাই তাদের সস্তা প্রলোভন ও চটকদার কথায় আকৃষ্ট না হয়ে বরং টাকা কিছু বেশি গেলেও যথাসম্ভব নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমে হজে যেতে হবে।

৩. কম টাকার প্যাকেজে গিয়ে যে সব সম্মানিত হাজি বেশি সুযোগ-সুবিধা নিতে চান, তাদের দ্বারা সাধারণত ঝগড়াটা বেশি হয়। কখনও ঝগড়া মারামারির পর্যায়ে চলে যায়।

. বাংলাদেশ থেকে প্রথমে মক্কা অথবা মদিনার হোটেলে উঠার পর। হোটেল, সীট বা ওয়াশরুম পছন্দ না হওয়ার কারণে অথবা দূরত্বের কারণে।

৫. ফিতরা অর্থাৎ শিফটিয় পদ্ধতির হজ যাত্রীরা ঝগড়া সৃষ্টি করে। হজের সময় মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকা আজিজিয়া, শওকিয়া, কাকিয়া বা অন্যকোনো দূরের হোটেলে যখন তাদেরকে দেওয়া হয়।

৬. খাবার নিয়ে। সুস্থ-অসুস্থ, বিভিন্ন স্বভাব ও মানসিকতার লোকেরা হজে যান, প্রত্যেকের রুচিসম্মত খাবার পরিবেশন করা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তাই নিজের ঘরের কথা খেয়াল করা উচিৎ। সবদিন চাহিদামতো খাবার নিজের ঘরেও হয় না। মক্কা-মদিনাতে খাবার পাকানো ও হোটেলে পৌঁছানো একটি জটিল কাজ।

৭. মক্কা ও মদিনার হোটেলে পান করার পানি নিয়ে ঝগড়া হয়। অথচ কাবা শরিফ এবং মসজিদে নববিতে পর্যাপ্ত জমজম পানির ব্যবস্থা আছে। প্রতি নামাজের ওয়াক্তে একটি বোতল ভরে আনা যায় অথবা প্রয়োজনে সামান্য কিছু রিয়াল দিয়ে পানি ক্রয় করা যায়।

৮. নাস্তা নিয়ে। বাবুর্চিরা দুপুর এবং রাতের খাবার পাকাতে পাকাতে এবং সবকিছু গোছাতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই সকালে ঘুমায়। এজন্য সকালের নাস্তা তৈরি করতে সাধারণত তারা রাজি হয় না। অন্যদিকে হোটেলওয়ালারাও বিভিন্ন কারণে অনেক লোকের নাস্তা পার্সেল দিতে বিরক্তবোধ করে। এসব বিবেচনায় নিজ দায়িত্বে নাস্তা করতে পারলে ভালো হয়।

৯. মক্কা শরিফ থেকে মিনার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ঝগড়া সৃষ্টি হয়। মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে। আরাফা থেকে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে উঠা নিয়ে, গাড়ীর সীট সামনে ও পেছনে নিয়ে এবং পছন্দমতো সীট না পাওয়াকে কেন্দ্র করে কখনও কখনও তুমুল বাকযুদ্ধ ও ঝগড়া হয়।

মনে রাখবেন, সৌদি আরবের রাস্তাগুলো অনেক মসৃণ ও সুন্দর। গাড়ীর পেছনে বসলেও কোনো কষ্ট হয় না। মক্কা ও মদিনা শরিফে যাতায়াতের পথেও ঝগড়া হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমরা পরস্পরে সর্বোচ্চ ত্যাগ, সম্প্রীতি ও সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারি।

১০. মিনায় ৫০-৬০ জন হাজির জন্য একটি তাঁবু বরাদ্দ থাকে। খুব সংকীর্ণ জায়গায় অবস্থান করতে হয়। পছন্দমতো প্রশস্ত জায়গা না পাওয়ায় অনেকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। স্মরণ রাখতে হবে, মিনাতে শুধুমাত্র ওই রাত্রটি সকলে অবস্থান করেন। বাকি এ রাতগুলো হাজিরা চলাচলের মধ্যে থাকেন। ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত।

১১. দমে শোকর (কোরবানি) দেওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়। উত্তম হয় নিজ হাতে কোরবানি সম্পন্ন করা। আর অন্য কারও মাধ্যমে করলে চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ রিয়াল দিয়ে দিতে হবে। কত রিয়াল লাগলো না লাগলো এসব বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে কোনো সমালোচনা একেবারেই ঠিক নয়।

মুফতি অহিদুল আলম: খতিব, মসজিদ আল মাগফিরা, সেক্টর- ৩, উত্তরা, ঢাকা- ১২৩০

   

হজ পালন করলেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৬ জন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি হজ মৌসুমে বিশ্বের ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তওফিক আল-রাবিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এ তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার (১৫ জন) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি মক্কা থেকে মিনা ও আরাফাত পর্যন্ত হজের পর্যায়গুলো কোনো বিপত্তি ছাড়া সফল হওয়া কথাও ঘোষণা করেন।

এদিকে, সৌদি আরবে জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুসারে, এবার বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশ থেকে হজযাত্রী এসেছেন বলে জানানো হয়েছে।

তন্মধ্যে, এশিয়ার দেশ থেকে আসা হজযাত্রীর সংখ্যা ৬৩.৩ শতাংশ, আরব দেশ থেকে ২৩.৩ শতাংশ, আফ্রিকা অঞ্চল থেকে ১১.৩ শতাংশ এবং আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩.২ শতাংশ বলেও জানানো হয়।

সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীর সংখ্যা দুই লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন এবং দেশের বাইরে থেকে আসা হজযাত্রীর সংখ্যা ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন। হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ জন এবং নারী হজযাত্রী ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন।

১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন হজযাত্রী বিমানযোগে, ৬০ হাজার ২৫১ জন স্থলপথে এবং ৪ হাজার ৭১৪ জন সমুদ্রপথে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

উল্লেখ্য, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে। এদিন মিনায় অবস্থান শেষে শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে রাতে মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে রাতযাপন করবেন। রোববার (১৬ জুন) হজের তৃতীয় দিন হাজিরা বড় জামারাতে কংকর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, মাথার চুল মুণ্ডন করবেন।

;

কোরবানির গোশত বণ্টনের সমাজপ্রথা মানা কি জরুরি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরবানির গোশত, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির গোশত, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোনো কোনো এলাকায় কোরবানির গোশত বণ্টনের একটি সমাজপ্রথা চালু আছে। তা হলো- এলাকায় যারা কোরবানি করেন, তাদের কোরবানির গোশতের তিন ভাগের একভাগ সমাজে জমা ‎করতে হয়। পরে ওই গোশত নির্দিষ্ট সমাজভুক্ত সবার মাঝে (যারা কোরবানি করেছেন বা করেননি) বণ্টন করা হয়।

সাধারণ দৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ মনে হতে পারে, কিন্তু কোনো সামাজিক প্রথা বা রীতি পালন করার জন্য তা ‎শরিয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ও আমলযোগ্য কি না- তাও নিশ্চিত হতে হয়। ভালো নিয়ত থাকলেও শরিয়ত সমর্থন করে না ‎অথবা ইসলামের নীতির সঙ্গে মানানসই নয়- এমন কোনো কাজ করা বা এমন কোনো রীতি অনুসরণের সুযোগ ‎নেই।

বর্ণিত সামাজিক প্রথাটিতে উদ্দেশ্য ভালো হলেও যে পদ্ধতিতে তা করা হয় তাতে শরিয়তের দৃষ্টিতে মৌলিক কিছু আপত্তি ‎রয়েছে। তার অন্যতম হলো, সামাজিক এ প্রথার কারণে সবাই তার কোরবানির এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজের ‎লোকদের হাতে দিতে বাধ্য থাকে এবং এর বিলি-বণ্টন ও গ্রহিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু সমাজপতিদের হাত থাকে। ‎গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা শরিয়তে কোরবানি ও গোশত বণ্টন একান্তই কোরবানিদাতার নিজস্ব কাজ।

ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামাজ আদায় করতে বলা হলেও কোরবানির জন্য কত মূল্যের পশু কিনবে, সে পশু ‎কোথায় জবাই করবে, গোশত কীভাবে বণ্টন করবে- এ বিষয়গুলো কোরবানিদাতার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

‎শরিয়তে কোরবানির কিছু গোশত সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের কোরবানির ‎গোশত দিতে তাকিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কোরবানিদাতার ওপর অপরিহার্য করা হয়নি। বরং কোরবানিদাতা কী ‎পরিমাণ গোশত নিজে রাখবে, কী পরিমাণ সদকা করবে এবং কাকে কাকে বিলি করবে আর কী পরিমাণ আগামীর ‎জন্য সংরক্ষণ করবে- এগুলো কোরবানিদাতার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার এবং ব্যক্তিগতভাবে করার কাজ। এটিকে ‎সামাজিক নিয়মে নিয়ে আসা ঠিক নয়।

শরিয়তের মাসয়ালা জানা না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোশত বণ্টনের বর্ণিত যে পদ্ধতি প্রচলিত- তা পরিহারযোগ্য। এখানে চলমান প্রথাটির কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হলো-

এক. অনেক কোরবানিদাতার পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেশি হওয়ায় অথবা অন্যকোনো যৌক্তিক কারণে নিজ পরিবারের ‎জন্য বেশি গোশত রাখার প্রয়োজন হয়, ফলে সে পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখতে চায়। আবার অনেকে তার ‎কোনো দরিদ্র আত্মীয়কে কোরবানির গোশত দিতে চায়। কিন্তু সামাজিক এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ‎সামাজিক রীতি অনুযায়ী কোরবানির এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজে দিতে বাধ্য হয়। অথচ হাদিসে ইরশাদ ‎হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল নয়।’ -মুসনাদে আহমাদ : ২০৬৯৫

দুই. প্রচলিত প্রথায় গোশতদাতা তার দানের অংশটি কাকে দেবে সে স্বাধীনতা হারায়। হয়তো সে তার নিকটাত্মীয় অথবা ‎পরিচিত কাউকে একটু বেশি পরিমাণে দিত, কিন্তু এক্ষেত্রে তার জন্য এমনটি করার সুযোগ থাকে না।

তিন. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরিয়তও কাউকে সবার ‎হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু সামাজিক এই রীতির কারণে গোশত গ্রহণকারী প্রত্যেকেই অন্য ‎সবার হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য এ ধরনের ঐচ্ছিক বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ‎মোটেই উচিত নয়।

চার. এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের আরেকটি ক্ষতির দিক হলো, সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে, যাদের আয় ‎রোজগার হারাম পন্থায় হয়। সেক্ষেত্রে জেনে বুঝে তাদের কোরবানির গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া ‎হয়। অথচ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কোরবানিকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েজ নয়।

মোটকথা, শরিয়তের শিক্ষা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কোরবানির অংশ দান করার বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনোভাবে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। কোরবানিদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনা মতো যাকে ‎যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরিব-মিসকিনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। নবী কারিম ‎সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শত শত বছর যাবৎ এ পদ্ধতিই চলমান আছে। এই পদ্ধতিই অবলম্বন ‎করা জরুরি। শরিয়ত যা চালু করতে বলেনি এমন কোনো প্রথা চালু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। -সহিহ মুসলিম : ১৯৭২

;

জেনে নিন কোরবানি বিষয়ক প্রয়োজনীয় মাসয়ালা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না- তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম : ৩৫১৯

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। - ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫

কোরবানি করতে না পারলে
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। - ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৪৫

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫

কোরবানির পশুর বয়সসীমা
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫-২০৬

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। অর্থাৎ কোরবানির পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যেকোনো অংশে অংশীদার হওয়া জায়েজ। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ- যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই। -সহিহ মুসলিম : ১৩১৮

কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহিহ হবে। -রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৬২

শরিকানা কোরবানির নিয়ম

শরিকদের কারও পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারও কোরবানি সহিহ হবে না।

যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫০-৩৫১

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কোরবানি
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

দাঁত নেই এমন পশুর কোরবানি
গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কোরবানি সহিহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ওই পশু কোরবানি করা যাবে না। -ফাতাওয়া আলমগীরী : ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙে বা ফেটে গেছে
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কিন্তু শিং ভাঙার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে উঠেনি, সে পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৬

কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি
মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ : ১/১০৭

অন্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে চাইলে
অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কোরবানি করে তাহলে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা
কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান : ১৭/২৫৯

বিদেশে থাকা ব্যক্তির কোরবানি অন্যত্র করা
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কোরবানি করা জায়েজ।

কোরবানিদাতা এক স্থানে আর কোরবানির পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কোরবানিদাতার ঈদের নামাজ পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে।

কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি
কোরবানির মৌসুমে অনেকে কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কোরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ নয়। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩০১

কাজের লোককে কোরবানির গোশত খাওয়ানো
কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েজ নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদের গোশত খাওয়ানো যাবে। -আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩২৬

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতি : ৮/২৬৫

;

৪০ বছর ধরে বিনামূল্যে হজযাত্রী পরিবহন করেন তিনি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি, ছবি: সংগৃহীত

সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের হাইলের বাসিন্দা আল তামিমি ৪০ বছর ধরে বিভিন্ন উপায়ে এই অঞ্চল এবং আশেপাশের এলাকার লোকদের হজের সময় বিনামূল্যে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছেন। সেবার অংশ হিসেবে তিনি ওই অঞ্চলের লোকদের মক্কায় পৌঁছে দেন।

আরব নিউজের সঙ্গে হাজিদের সেবার স্মৃতিচারণের সময় সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি বলেন, তিনি হাইলের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে আল-গাজালা গভর্নরেটের আল-মাহাশ গ্রামের বাসিন্দা।

১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাবার অসিয়ত অনুযায়ী নিজ এলাকার বাসিন্দাসহ আশেপাশের লোকদের মক্কা এবং মাশায়েরে মোকাদ্দাসায় (মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায়) নিয়ে আসছেন। এখন তার ছেলে জিএমসির মাধ্যমে হজযাত্রীদের সেবা করেন।

তামিমি জানান, তার বাবা দুই বার হজ পালন করেছেন। তিনি তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উটে চড়ে প্রথম হজপালন করেন। তখন মক্কায় পৌঁছতে তার একমাস সময় লাগে। দ্বিতীয় হজ গাড়িতে করে আদায় করি, তাতে সময় লাগে মাত্র ৯ দিন।

তিনি আরও বলেন, হজের সময় সেবা দেওয়ার জন্য ৪০ বছর ধরে গাড়ির প্রয়োজনীয় জ্বালানী এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আগেই জমিয়ে রাখেন। এ ছাড়া হজযাত্রীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য কফি, চা ও অন্যান্য খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতেন। নিজের খরচের ব্যাপারে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য নেননি।

তিনি একটি বড় বাস দিয়ে সেবা দেওয়া শুরু করেন। বাসটিতে ৮৫ জন একসঙ্গে বসতে পারত। পরে তা দোতলা করা হয়। ওপরের অংশটি পুরুষদের এবং নীচের অংশটি ছিল নারীদের জন্য।

তামিমি তার এলাকায় শিক্ষার্থীদের বাসে করে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করেন।

হজযাত্রীদের সেবায় ব্যবহৃত পরিবহন, ছবি: সংগৃহীত

আল-তামিমি জানান, আমার কাছে একটি নোটবুক ছিল। যেখানে আগ্রহী হজযাত্রীরা রমজান মাসে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে যেত। সে সময় হজযাত্রা কঠিন ছিল বিধায়, এই নিয়মটি আমাকে মানতে হয়েছে- বলে উল্লেখ করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে আল-তামিমি বলেন, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, মিসর, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও মরক্কোসহ অনেক দেশের মানুষ তার সঙ্গে হজযাত্রা করেছেন।

হজযাত্রায় নানা ঘটনা রয়েছে, একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ভারতীয় প্রথমে হজে যাওয়ার জন্য নাম লেখায়, পরে সে হজে যাবে না জানানোর পর অন্য একজনকে সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু যাত্রা শুরুর আগের দিন তিনি হজে যাবেন বলে মনস্থির করেন এবং পরে পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে যান। তার আবেগ এবং কষ্ট আমাকে দারুণভাবে শিহরিত করে।

সে সময় আল-গাজালা থেকে আল-নুকরা পর্যন্ত রাস্তা ছিল অত্যন্ত খারাপ। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় চলাচল করা কষ্ট হত। তখন মানুষ জীবনের কষ্ট সহ্য করত।

আল-তামিমির ছেলে রশিদ আল বকর তার সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর ধরে হাজিদের সেবা করে আসছেন। তিনি বলেন, আমার সন্তানদের বলা আছে, হজযাত্রীদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে।

হজযাত্রার স্মতিচারণে তিনি বলেন, হজের দিনগুলোতে বিভিন্ন পরিবার একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হযত, পরে তাদের মাঝে অনেকে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তাও করে নেয়।

বর্তমান সময়ের হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, হজযাত্রা অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ হয়েছে।

;