শ্রেষ্ঠ আমল হজ, বিনিময়ে জান্নাত



ড. মুফতি মুহাম্মদ গোলাম রব্বানী, অতিথি লেখক, ইসলাম

  • Font increase
  • Font Decrease

১৪ জুলাই শুরু হবে হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এবার প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলামান হজপালনের জন্যে সৌদি আরব গমন করবেন।এবার যারা হজে যাচ্ছেন, তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। হজ পালনেচ্ছুদের সুবিধার্থে বার্তা২৪.কম ধারাবাহিকভাবে হজের নিয়ম-কানুন, মাসয়ালা, আমল ও প্রয়োজনীয় দোয়া প্রকাশ করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ থাকছে সংক্ষিপ্ত হজগাইডের দ্বিতীয় পর্ব

হজের ফজিলত বা উপকারিতা
মানুষ সবকাজেই লাভ খুঁজে। লাভ পেলেই এগিয়ে যায় তা পালনে। আখেরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক লাভ রয়েছে হজে।

১. হজের মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া যায়
মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- ক্ষমা। যদি মাফ পেয়ে যায় তাহলে তার আর কোনো চিন্তা নেই।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হজ আদায় করলো- যৌন বিষয় ও গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকলো, সে সদ্যভূমিষ্ঠ শিশুর মতো (গোনাহমুক্ত হয়ে) ঘরে ফিরল।’ -সহিহ বোখারি: ১৪১৪

আরেক বর্ণনায় রয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় ইসলাম বিগত সব (পাপ) মুছে দেয়। নিশ্চয় হিজরত তার পূর্বের সব গোনাহ মুছে দেয়। অবশ্যই হজ বিগত জীবনের সব অপরাধ মাফ করে দেয়। -সহিহ মুসলিম: ১৭৩

২. জান্নাত মিলবে
হজ আদায় করলে তা যদি কবুল হয় তাহলে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে জান্নাত। যেখানে আল্লাহর দিদার (সাক্ষাত) পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে অফুরন্ত নিয়ামত। যে জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে যে দোজখের আগুন থেকে বেঁচে যাবে, কাটাবে শান্তিময় সময়।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘একটি উমরা বিগত উমরার পর থেকে হয়ে যাওয়া গোনাহের ক্ষতিপূরণ। আর মাবরুর হজের পুরস্কার অবশ্যই জান্নাত।’ -সহিহ বোখারি: ১৬৫০

মাবরুর হজ বলতে কী বুঝায়? এ নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে।
১. মাবরুর হজ মানে- কবুল হজ।
২. লৌকিকতাহীন হজ।
৩. যে হজের পর আর গোনাহ হয় না।
৪. যে হজ করার পর দুনিয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়, আর আখেরাতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। -মুয়াল্লিমুল হুজ্জাজ, ২২

আরও পড়ুন: আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম

৩. হজ শ্রেষ্ঠ আমল
হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো- কোন আমলটি শ্রেষ্ঠ। তিনি জবাবে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের ওপর ঈমান আনা। আরেকজন জানতে চাইলো, তারপর কোনটি? হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ। আবার জিজ্ঞাসা করা হলো, অতপর? নবী করিম (সা.) বললেন- কবুল হজ।’ -সহিহ বোখারি: ১৪২২

এ ছাড়া হজের সময় পালনীয় প্রতিটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব ও ফজিলত রয়েছে। যেমন কাবার দিকে তাকিয়ে থাকা, তওয়াফ করা, নামাজ পড়া, দুই পাহাড়ের মাঝে দৌঁড়ানো, পাথর নিক্ষেপ করা, আরাফায় অবস্থান, মুজদালিফায় অবস্থান, কোরবানি করা এসবের জন্য আলাদা আলাদা সওয়াব রয়েছে।

আপনি কেন হজ করবেন?
আপনার ওপর হজ ফরজ হলে মুসলিম হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে চাইলে অবশ্যই হজ করতে হবে। এখানে অন্য কোনো কারণ, লাভ-ক্ষতি খোঁজার সুযোগ নেই। যদি একবার হজ করে থাকেন তাহলে আবার কেন হজ করবেন? হজের কী তাৎপর্য রয়েছে, কী লাভ রয়েছে তা-ই বিবেচ্য বিষয়। পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে-

১. মকবুল হজের মাধ্যমে জান্নাত পাওয়া যায়।

২. বিগত জীবনের গোনাহ মাফ হয়।

৩. নিজের জীবনে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে হজের মাধ্যমে।

৪. হজের সফরে কাফনের কাপড়ের মতো ইহরামের কাপড় পরিধান করে পরোক্ষভাবে কবরের জন্য প্রস্তুত এ বিষয়টিই জানান দেওয়া হয়। হাজিরা যেন আখেরাতের পথিক।

৫. ইহরামের অবস্থায় ঝগড়া ও পাপাচার থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। অনেক জায়েজ কাজও আল্লাহর পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে করতে পারে না। এতে আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা অর্জন করা যায়। আত্মনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি আখেরাতে তো সফল হবেই, সে পার্থিব জীবনেও সফল হয়।

৬. নবী- রাসূলরা যেসব স্থানে হেঁটে বেড়িয়েছেন সেসব স্থানে পথচলা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার।

অারও পড়ুন: বিষন্নতা ও মানসিক চাপ কমাতে কোরআন তেলাওয়াত

৭. বায়তুল্লাহ শরীফে এক রাকাত নামাজ পড়লে এক লাখ রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। হজের সফরে মসজিদে হারামে শত শত রাকাত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ-কোটি সওয়াব অর্জন করে আখেরাতে নাজাতের পথকে সুগম করা যায়।

যাদের ওপর হজ ফরজ
যে ব্যক্তি তার নিজ প্রয়োজনীয় বস্তুর অতিরিক্ত এমন সম্পদের মালিক হন যার মাধ্যমে হজের মাসে মক্কায় যাতায়াত করতে পারবেন এবং হজকালীন খরচ বহন করতে পারবেন। পাশাপাশি এ সময়ে পরিবারের খরচের ব্যবস্থাও করে যেতে পারবেন তার ওপর হজ আদায় করা ফরজ।

সহজ ভাষায়, বর্তমান সময়ের ক্ষেত্রে যারা হজের মাসগুলোতে সরকার নির্ধারিত হজের সর্বনিম্ন খরচ (বর্তমানে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো) ও পরিবারের ৪০-৪২ দিনের আনুমানিক (ব্যক্তিভেদে) খরচ ৫০ হাজার টাকার মালিক হন তাদের ওপর হজ করা ফরজ।

কারও ঋণ বা নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয় থাকলে তা মূল সম্পদ থেকে বাদ যাবে। ছেলে-মেয়ের বিয়ে, বাড়ি নির্মাণ নিত্য প্রয়োজনীয়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।

কারও ওপর যদি হজ করা ফরজ না হয় তাহলে কর্জ করে বা লোকজনের কাছে সাহায্য চেয়ে হজ করা উচিত নয়। তবু যদি কেউ এভাবে হজ আদায় করে তাহলে তার হজ আদায় হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সম্পদের মাধ্যমে তিনি উপযুক্ত হলেও আবার হজ করা তার জন্য ফরয হবে না। -কিতাবুল হজ, পৃ. ১১

হজ জীবনে একবার আদায় করা ফরজ। একাধিকবার আদায় করলে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। তাতেও হজের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে।

তবে লোকদেখানো নফল হজ গোনাহের কারণ।

ফরজ হজ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় আদায় করতে হবে। কেউ ছোটবেলায় হজ করে থাকলে পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর আবার হজের উপযুক্ত হলে পুনরায় হজ আদায় করা তার জন্য ফরজ।

লেখক: অধ্যাপক, উর্দু বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হজ বিষয়ে জানতে আরও পড়ুন

** হজ: আল্লাহপ্রেমিকদের মিলনমেলা

** হিসাব রক্ষক ও ফিল্ড সুপারভাইজার এখন সরকারি হজগাইড!

 

   

মক্কা প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ, ১৩৮ ভাষার অনুবাদ ডিভাইস



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

মক্কার একটি চেকপয়েন্ট, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের স্থানীয় হিসাবে বৃহস্পতিবার জিলকদ মাসের ১৫ তারিখ। আজ থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে প্রবেশে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ শুরু হয়েছে। পবিত্র হজের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির জননিরাপত্তাবিষয়ক অধিদপ্তর।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে, ১৫ জিলকদ) থেকে শুরু হওয়া এ বিধি-নিষেধ হজের পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত জারি থাকবে। এ সময়ে স্থানীয়দের মক্কায় প্রবেশে প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন হজের প্রস্তুতি এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিনা অনুমতিতে মক্কায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে হজের স্থানগুলোতে কাজ করার অনুমোদন, মক্কায় বসবাসকারীর আইডি ও হজের অনুমোদন ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অনুমোদন ছাড়া যারা মক্কায় প্রবেশ করতে চাইবে তাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দেবে।

সব ধরনের ভিজিট ভিসায় মক্কায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র হজ ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশ করতে পারবেন। ভিজিট ভিসার ধরন যাই হোক না কেন, এটি হজ পারমিট নয় এবং এই ধরনের ভিসাধারী ব্যক্তিদের হজ করার অনুমতি নেই'। মন্ত্রণালয় সতর্কতা জারি করে আরও বলেছে, কোনো ভিজিট ভিসাধারী যদি মক্কায় থাকে, তাদের অবিলম্বে চলে যেতে হবে। হজ ভিসা ব্যতীত অন্য যেকোনো ধরণের ভিসাধারীরা মক্কায় প্রবেশের চেষ্টা করলে বা মক্কার ভেতরে পাওয়া গেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩৮ ভাষায় তাত্ক্ষণিক অনুবাদ ডিভাইস
সৌদি পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগের মুখপাত্র মেজর নাসির আল ওতাইবি জানিয়েছেন, ‘বিভিন্ন দেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের সেবা করার জন্য, কর্মকর্তাদের ১৩৮ ভাষায় দ্রুত অনুবাদের ডিভাইস সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে হজযাত্রীদের সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ লাখের বেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন।

;

৬৫ বছর বয়সী ভ্যানচালকের উমরার স্বপ্নপূরণ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ দিনের ইচ্ছে ছিল সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ঘর তওয়াফ ও মদিনা শরিফে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবরক জিয়ারত করার, রাসুলের রওজায় সালাম পেশ করার। অবশেষে লালিত সেই স্বপ্ন ২০২৪ সালের ২ মে পূরণ করেছেন ভ্যানচালক মো. ফরিদ বেপারী। ৬৫ বছর বয়সী এই ভ্যানচালক বরিশালের মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বড়চর মাধবপুরের মো. আ. রব বেপারীর ছেলে।

পবিত্র উমরার স্বপ্নপূরণ প্রসঙ্গে ফরিদ বেপারী বলেন, ‘ভালো কাজের নিয়ত করলে আল্লাহতায়ালা তার ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতেই আমার উমরা পালন করা সম্ভব হয়েছে।’

জানা গেছে, ভ্যান চালিয়ে মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা আয় করেন। সংসারের খরচ চালানোর পরে হাতে কিছুই থাকে না। তার পাঁচ ছেলে সন্তান রয়েছে। ছোট ছেলে তার সঙ্গে থাকে। বাকি ছেলেরা আলাদা সংসার করে। নিজের আয় দিয়েই উমরা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তিনি দিন-রাত ভ্যান চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করেন।

গত ৩০ বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রীর শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় উমরা পালনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেননি বলে মনে অনেক দুঃখ তার। উমরা পালন করতে তার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উমরা পালন করতে কোনো ঋণ করেননি তিনি। কষ্ট করে ভ্যান চালিয়ে টাকা উপার্জন করে উমরা পালন করেছেন তিনি।

ফরিদ বেপারী আবারও উমরা পালন করার আশা করছেন। এ জন্য সবার দোয়াও কামনা করেন তিনি।

;

ইন্দোনেশিয়ান নারীর ২২ বার হজ-উমরার অবিস্মরণীয় স্মৃতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ান হজযাত্রী মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১৯৬৪ সালে ছয় বছর বয়সী ইন্দোনেশিয়ান মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হজপালন করতে সৌদি আরব যান। তারপর থেকে তিনি উমরা এবং হজপালনের জন্য আরও ২২ বার মক্কা-মদিনা ভ্রমণ করেছেন।

সুরাবায়া বিমানবন্দরের মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ হলে মরিয়ম মুনির তার ২২ বার সৌদি আরব ভ্রমণের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে আলাপ করছিলেন সৌদি প্রেস এজেন্সির এক প্রতিনিধির সঙ্গে।

আলাপকালে তিনি বলেন, আজ থেকে ৬০ বছর আগে, তার পরিবার হজ করার জন্য প্রথম ভ্রমণ করেন, ভ্রমণটি ছিল বেশ ব্যয়বহুল। একটি পুরোনো জাহাজে করে সৌদি আরব আসতে পাঁচ থেকে আট মাস সময় লেগেছিল।

জাহাজগুলো প্রথমে জাকার্তা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পরে ভারত, আরব সাগর এবং লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে জেদ্দা বন্দরে পৌঁছায়। তিনি বলেন, যাত্রাটি বিপদ, চ্যালেঞ্জ এবং ভয়ে পরিপূর্ণ ছিল। তবে, ফরজ ইবাদতপালনের বাধ্যবাধকতার জন্য তার পরিবারের ইচ্ছা ও সাধনা পথের কষ্ট সেভাবে দাগ কাটেনি। বরং এ সময়টা আমাদের আরও শক্তি জুগিয়েছে। কাবা দেখার ইচ্ছাকে প্রবল করেছে। মসজিদে নববিতে যাওয়ার এবং রাসুলের রওজা জিয়ারতের ভালোবাসা সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মক্কা নগরিতে পৌঁছার পর আমাদের শরীর পুরোপুরি সতেজ হয়ে উঠে। আর মসজিদে নববিতে যেয়ে মনে হতো, আত্মা যেন সতেজ হয়ে উঠছে।

মুনির অতীতে হজকে ঘিরে ইন্দোনেশিয়ানদের বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কেও কথা বলেন।

ইন্দোনেশিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ হজপালনে সৌদি আরব যান

মরিয়ম মোহাম্মদ মুনির বলেন, হজযাত্রীরা সবাই জাকার্তায় জড়ো হবেন এবং যাত্রার আগে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদায় জানাবেন- এটাই আমাদের রীতি। হজ শেষ করে দেশে ফেরার পর হজযাত্রীদের পরিবার তাদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ধর্মীয় যাত্রার পরিপূর্ণতা উদযাপন করে বিভিন্ন উপহার দিয়ে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়।

মরিয়মের মতে, উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মক্কায় ভ্রমণ এখন অনেক সহজ হয়েছে, যার ফলে পবিত্র নগরীতে উমার ও হজপালনকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। অতীতের হজযাত্রাকে বর্তমান যাত্রার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ভিন্নতার জগৎ।

তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে তারা এখানে (ইন্দোনেশিয়া) বসে মক্কায় পৌঁছেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা সৌদি সরকারের একটি অনুকরণীয় অর্জন। এ সময় মুনির সৌদি সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জনসংখ্যার নিরিখে ইন্দোনেশিয়া হলো, সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি হজযাত্রী প্রতিবছর হজপালনে সৌদি আরব যান। চলতি বছর ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব যাবেন। ১২ মে থেকে দেশটির হজফ্লাইট শুরু হয়েছে।

;

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

হজের প্রস্তুতিতে ওপরে তোলা হলো কাবার গিলাফ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবাঘরের কিসওয়া তথা কালো গিলাফ নিচ থেকে ওপরে তিন মিটার তুলে তাতে সাদা কাপড়ে মোড়ানো হয়েছে। কেউ বলেন, কাবাকে ইহরাম পড়ানো হয়েছে, এর মাধ্যমে হজের প্রস্তুতির স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বুধবার ২২ মে (১৫ জিলকদ) প্রতিবছরের মতো এবারের হজের প্রস্তুতি হিসেবে তা করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এভাবে কাবার গিলাফের নিচের অংশ ওপরের তোলার কারণ কী, তা অনেকের অজানা।

মূলত হজের সময় পবিত্র মসজিদে হারামে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। কাবা ঘরের কালো গিলাফের কিছু অংশ ওপরে উঠিয়ে রাখা এর অন্যতম। এর বদলে একটি সাদা কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কাপড়টি আড়াই মিটার চওড়া এবং চার দিকে ৫৪ মিটার দীর্ঘ।

কিসওয়াটি বেশ কয়েকটি পর্যায়ে উত্তোলন করা হয়। প্রথমে চারদিক থেকে কভারের নীচের অংশটি খুলে দেওয়া হয়, ফলে কোণগুলো আলাদা হয়ে যায়। তার পর নীচের দড়ি খুলে ফিক্সিং রিং থেকে সরিয়ে ওপরের দিকে টেনে তোলা হয়।

ইসলামের সূচনাকাল থেকে হজের সময় কাবার গিলাফ সুরক্ষায় এই রীতি চলে আসছে। অতীতে গিলাফের কিছু অংশ হাতের কাছে পেয়ে কিছু অংশ কেটে ফেলার ঘটনা ঘটে।

অনেকে গিলাফকে নিজের উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক বস্তু বলে মনে করে। অনেকে সেই কাপড়ে নিজের নাম লিখে স্বস্তিবোধ করে। অথচ এসব কাজের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাই হাজিদের ভিড়ের মধ্যেও গিলাফ সুরক্ষিত রাখতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ ওপরে তোলা হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

আর খালি স্থানে সাদা কাপড় দিয়ে কাবাঘর মোড়ানো হয়। মূলত এর মাধ্যমে হজের সময় ঘনিয়ে আসার কথা স্মরণ করানো হয়। কাবার দেয়ালের সাদা কাপড় হজের পূর্বপ্রস্তুতির জানান দেয়। হজের শেষ সময় পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকে। এরপর আগের মতো পুনরায় কালো গিলাফ নামিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতিবছর ১৫ জিলকদ বা এর এক দিন আগে-পরে কাবার গিলাফের অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর থেকেই হাজিদের ভিড় ও তাওয়াফ শুরু হয়। প্রচণ্ড ভিড়েরর কারণে তখন আর গিলাফ ওপরে তোলা সম্ভব হয় না।

কাবার গিলাফ ওপরে তুলতে বুধবার রাতে নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র কাবাকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন। এ সময় বিশেষ প্রযুক্তিগত দল কিসওয়া ওপরে উঠানোর কাজ করে। ১০টি ক্রেনের সাহায্যে ৩৬ জন কর্মী কাজটি সম্পন্ন করেন।

রীতি অনুযায়ী ৯ জিলহজ পর্যন্ত সাদা কাপড় থাকবে। এরপর হজের দিন নতুন গিলাফ লাগানো হয়।

;