‘ঠিকমতো জাকাত দিলে কেউ দরিদ্র থাকত না’



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আলো ঝলমলে এই সভ্যতায় বহু মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, শিক্ষা-স্বাস্থ্য তো অনেক দূরের কথা। পৃথিবীতে কী সম্পদের সঙ্কট রয়েছে? পৃথিবীতে আসলে সম্পদের কোনো সঙ্কট নেই, সঙ্কট সুষম বণ্টন, ব্যবস্থাপনা তথা জীবনদৃষ্টির। পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে গুটিকয় মানুষের হাতে। ফলে ব্যাপক জনগোষ্ঠী অভাব-অনটনে পীড়িত।

এটা বলতে দ্বিধা নেই, সভ্যতাগর্বী এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর দরিদ্রসীমায় থাকাদের অধিকাংশই মুসলিম। এই বাস্তবতার মাঝে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শোনালেন আরও ভয়াবহ কথা।

তিনি জানিয়েছেন, মুসলিম বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ বর্তমানে চরম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। এমতাবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বিশ্বব্যাপী যেসব দুঃস্থ মুসলিম দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন, তাদের সহায়তার জন্য মুসলিম দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) দু’দিনব্যাপী (৮-৯ ডিসেম্বর) বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান এরদোগান।

এরদোগান বলেন, ধনী মুসলিমরা ঠিকমতো জাকাত দিলে সমাজে কেউ দরিদ্র থাকত না। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর ২১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫ কোটি মুসলিম ভাইবোন দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। অন্যদিকে ধনী মুসলিমরা গরিবদের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি সম্পদশালী। এমতাবস্থায় তারা যদি ইসলামি শরিয়া মতো জাকাত দিতো, তা হলে মুসলিমদের কেউ গরিব থাকত না। মুসলিম দেশগুলো মাথা উঁচু করে চলতে পারত বিশ্ব দরবারে।

এ ব্যাপারে তিনি ওআইসিকে ধনী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে গত মাসে আলবেনিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থতের সাহায্যের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, সবকিছু একত্রিত করে আলবেনিয়ার ভাইদের সাহায্য করুন।

গত ২৬ নভেম্বর আলবেনিয়ায় ৬ দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ওই ভূমিকম্পে ৫১ জন মারা যান এবং ৯ শতাধিক মানুষ আহত হন। ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মুসলিম বিশ্বের আলোচিত নেতাদের একজন। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটানা ১৬ বছর ধরে তিনি দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি তুর্কি শাসন পদ্ধতিকে উগ্র সেক্যুলারিজমের ধারা থেকে রক্ষণশীল উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদী ধারায় নিয়ে এসেছেন। এটা তার বিশাল কৃতিত্ব।

তিনি শক্তিমান মধ্যপন্থী ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর ঐক্যের জন্য অনেক দিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়ার পরও এরদোগান রাশিয়ার সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখে তুরস্কের পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী বিকল্প উন্মুক্ত রেখেছেন। এমনকি ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াসহ বিশ্বের ১৭০ কোটি মুসলমানের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কর্মপন্থা নির্ধারণে ৫ জাতি মুসলিম ঐক্যের কনভেনশন ডেকেছেন। ১৮ থেকে ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে অংশ নেবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদো ও কাতারের আমির শেখ তামিম আল থানি।

ওআইসির বিনিয়োগ সম্মেলনে ৫ জাতির করভেনশনকে সামনে রেখে এরদোগানের এমন আহ্বান অর্থপূর্ণ কোনো কিছু বয়ে আনে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

   

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;

বরকত নষ্ট হয় যে কাজে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়। ছোট ছোট কাজ বিশালাকার ধারণ করে। যে কাজের চেষ্টাই করুক না কেন সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হয় কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু যথাসময়ে গিয়ে দেখা যায় যে, হতে হতেও কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এর ফলে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি বাড়ে বৈ কমে না। অনেকে তো বলেই বসে, ‘একটা সময় ছিল, যখন স্পর্শ করলে মাটিও সোনায় পরিণত হতো। আর এখন সোনা স্পর্শ করলেও তা মাটি হয়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু কেন? এর কারণ কী?

হজরত উমর (রা.) বলেন, দু’টি পুরাতন জীর্ণ হাড়ও যদি নির্জনে একত্রিত হয়, একে অন্যের প্রতি আসক্ত হবেই হবে। (দু’টি জীর্ণ হাড় দ্বারা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে বোঝানো হয়েছে।)

হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলতেন, কুদৃষ্টি স্মৃতিশক্তির জন্য প্রাণনাশকারী বিষের ন্যায়।

হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানি (রহ.) স্বীয় চিঠিপত্র সংকলনে লিখেছেন, যার দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে নেই, তার অন্তরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। আর যার অন্তর নিয়ন্ত্রণহীন হয় তার লজ্জাস্থানও তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) বলেছেন, এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় লোকেরা তাকে কালেমার তালকিন (মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া) করতে লাগল। সে উত্তর দিল, (কালেমা পাঠের সময়) আমার জিহ্বা নড়ছে না। জিজ্ঞাসা করা হলো, কী কারণে এমন হচ্ছে? সে বলল, এক নারী আমার কাছে তোয়ালে ক্রয়ের জন্য এসেছিল। আমার তাকে ভালো লেগে গিয়েছিল, তাই লালসার দৃষ্টিতে তাকে দেখছিলাম। -আপবীতী : ৬/৪২০

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) আরও বলেন, ‘কুদৃষ্টি বড়ই বিধ্বংসী রোগ। আমার অনেক পরিচিতজনদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তাই একটি অভিজ্ঞতা আমারও আছে। জিকিরে মনোনিবেশের ফলে শুরুতে স্বাদ লাভ ও জোশের একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে ইবাদতের মিষ্টতা ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা ইবাদত ছুটতে থাকারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। -আপবীতী : ৬/৪১৮

কুদৃষ্টি দ্বারা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় : হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলেন, পর নারী এবং নাবালেগ শিশুদের কুদৃষ্টির সঙ্গে দেখার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

কুদৃষ্টি দ্বারা কখনও তৃপ্তি লাভ হয় না : হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘কুদৃষ্টি যত বেশি পরিমাণেই করা হোক, এমনকি যদি হাজার হাজার নারী-পুরুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়েও দেখা হয়, তবুও তাতে তৃপ্তি লাভ হবে না।’

আলেমরা বলেন, কুদৃষ্টি এমন পিপাসার জন্ম দেয়, যা কখনও নিবারণ করা যায় না। পানি শূন্যতার রোগীকে যত পানিই পান করানো হোক, যদি তার পেট ফেঁটে যাবারও উপক্রম হয়, তবুও তার পিপাসা দূর হয় না। আল্লাহতায়ালা একজনকে অপরজনের তুলনায় অধিক সৌন্দর্য দান করেছেন। মানুষ যত সুন্দরিকেই দেখুক না কেন, একজনকে দেখবে তো আরেকজনকে দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এটি এমন এক সমুদ্র, সারাজীবন সাঁতার কেটেও যার তীরে পৌঁছা সম্ভব নয়। কেননা এটি হচ্ছে কূলহীন দরিয়া।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে চোখের হেফাজত করে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে চলার তওফিক দান করুন।

;