শাফায়াত: কারা করবেন, কাদের জন্য করবেন?



মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে

নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে

  • Font increase
  • Font Decrease

শাফায়াত মানে সুপারিশ ও সাহায্য। বিভিন্ন কাজে আমরা বিভিন্ন মানুষের জন্য সুপারিশ করে থাকি। কাউকে কোনো কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য কিংবা কাউকে কোনো ঝামেলা ও বিপদ থেকে মুক্ত করার জন্য সুপারিশ করা হয়ে থাকে।

সুপারিশের মাধ্যেমে অন্য মানুষের উপকার করা মূখ্য উদ্দেশ্য হয়। বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে শাফায়াত বা সুপারিশ বলতে আখেরাতের সুপারিশ বুঝানো হচ্ছে।

শাফায়াত সম্পর্কে মৌলিক কথা
আমরা বিশ্বাস করি, কুল কায়েনাত ও বিশ্বের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হলেন- মহান আল্লাহ। তার কোনো শরিক নেই, তিনি একক। তার একার সিদ্ধান্তে সকল জগত পরিচালিত হয়। তার সমকক্ষ কেউ নেই। কারণ, তিনি ছাড়া বাকি সবকিছুই হলো তার সৃষ্টি। সৃষ্টি কখনও স্রষ্টার মতো হতে পারে না।

মানুষের মৃত্যুর পর কবর জগতে অবস্থান করবে। কবরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলে তার কবরের সঙ্গে জান্নাতের একটা সম্পর্ক হবে; আর উত্তর দিতে না পারলে জাহান্নামের সঙ্গে সম্পর্ক হবে। পুণরুত্থান পর্যন্ত মানুষ কবরে থাকবে। কেয়ামতের ময়দানে সবাই একত্রিত হবে। সকলের হিসাব-কিতাব হবে। হিসাব-কিতাবের পর অনেকেই জান্নাতে চলে যাবে। আবার অনেকে যাবে জাহান্নামে। জাহান্নামে যারা যাবে তাদের দু’টি শ্রেণি রয়েছে। এক শ্রেণির জাহান্নামি স্থায়ী। তাদের ঈমান না থাকায় তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামি। কোনোদিন জাহান্নাম থেকে বের হবে না। আরেক শ্রেণির জাহান্নামি হলো অস্থায়ী। তাদের ঈমান ছিল তবে নেক আমল কম ছিল কিংবা গোনাহ ছিল, যে কারণে তারা জাহান্নামি হয়েছে। তারা বিভিন্ন উপায়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পাবে।

কেয়ামতের ময়দানে মানুষ একত্রিত হওয়ার পর ভয়াবহ অবস্থা হবে। সূর্যের তাপে মানুষের মগজ পর্যন্ত গলে যাবে। কেয়ামতের ময়দানের ভয়াবহতা সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তির জন্য হিসাব-কিতাব শুরু হওয়া দরকার। হিসাব শুরুর জন্য মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করা দরকার। কে করবে সুপারিশ? সবাই পেরেশান। সকল মানুষ মিলে হজরত আদম আলাইহিস সালামের কাছে যাবে, তাকে সুপারিশের অনুরোধ করবে। তিনি অক্ষমতা প্রকাশ করবেন। এভাবে আরও অনেক নবী-রাসুলের কাছেই যাবে। সবাই নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করবে। সবশেষে হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে যাওয়ার পর তিনিও অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেন, তোমরা সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। সবাই নবীজির কাছে এসে অনুরোধ করবে, যেন তিনি মহান আল্লাহর কাছে সুপারিশ করেন। নবীজি আল্লাহর আরশের নিচে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন। দীর্ঘক্ষণ সিজদার পর মহান আল্লাহ ডাক দিয়ে বলবেন, ‘হে মুহাম্মদ! আপনার মাথা তুলুন, আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ গৃহীত হবে; আপনি চান, আপনার চাওয়া কবুল করা হবে।’ –সহিহ বোখারি : ৩৩৪০

নবীজির সুপারিশের পর হিসাব শুরু হবে। এটাই প্রথম সুপারিশ। এই শাফায়াতকে শাফায়াতে উজমা কিংবা কুবরা অর্থাৎ সর্ববৃহৎ শাফায়াত বলা হয়। এটাই মাকামে মাহমুদ।

শাফায়াতের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে মাফ করে দিতে পারেন, তাহলে আবার শাফায়াত কেন? এর উত্তর হলো- শাফায়াত মূলত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা আমলের সম্মান প্রদর্শন। যাদেরকে আল্লাহ শাফায়াত করার অনুমতি দেবেন তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা, আল্লাহর কাছে রয়েছে তাদের সম্মান ও মর্যাদা। এই সম্মান ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশের জন্যই মূলত শাফায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব আমলের শাফায়াত কবুল করা হবে বলে হাদিস রয়েছে, সেগুলোর সম্মান ও গুরুত্ব বুঝানো উদ্দেশ্য।

শাফায়াতের প্রকারভেদ
কোরআন ও হাদিস গবেষণা করে কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন শাফায়াত পাঁচ প্রকার-
১. হাশরের ময়দানে হিসাব শুরুর সুপারিশ। এই শাফায়াত নবীজির সঙ্গে খাস।
২. একদল লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশেরে সুপারিশ। আর এটাও শুধু আমাদের নবীজির জন্য প্রযোজ্য। অন্য কেউ এরূপ সুপারিশের সুযোগ পাবে না।
৩. জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য সুপারিশ। নবী আলাইহিস সালাম ছাড়াও আল্লাহর ইচ্ছানুসারে অনেকে এই সুপারিশ করবে।
৪. জাহান্নামের শাস্তি ভোগকারী লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুপারিশ। রাসুল আলাইহিস সালাম, ফেরেশতা, নেককার মুমিনসহ অনেকেই এ ধরনের সুপারিশ করবেন।
৫. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফায়াত। -হাশিয়ায়ে নববি : ১/১০৪

সবাই আল্লাহর অনুমতিতে সুপারিশ করতে পারবে
শাফায়াত মূলত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি সীমাহীন অনুগ্রহের কিয়দংশ মাত্র। শাফায়াতের একচ্ছত্র মালিক কেবল আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিবেন। তার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। দুনিয়ার মতো না যে, প্রভাবশালী কেউ এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে নিজের প্রভাব খাটিয়ে। সেখানে আল্লাহ ছাড়া কারও কোনো প্রভাব চলবে না। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোনো এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও জমিনে তারই সাম্রাজ্য। অতঃপর তারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ -সুরা যুমার : ৪৩-৪৪

কারা শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে?
কেয়ামত দিবসে অনুষ্ঠিত শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হবে যারা শিরক ও কুফুরির গোনাহে লিপ্ত ছিল এবং এর ওপর মারা গেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী, সে ব্যক্তিকে কে বাঁচাতে পারে যার ওপর আজাবের ফয়সালা হয়ে গেছ, তুমি কি তাকে বাঁচাতে পার যে জাহান্নামে রয়েছে?’ -সুরা যুমার : ১৯

বর্ণিত আয়াতের আলোকে বুঝা গেল, এসব জাহান্নামীদের জন্য কোনো শাফায়াতকারী নেই। নেই কোনো রক্ষাকারী। তাদের ব্যাপারে কোনো শাফায়াত গ্রহণ করা হবে না। কারণ, তারা ঈমানশূন্য। এ ছাড়া যারা আল্লাহর দীনের মধ্যে বিকৃতি এনেছে অথবা এর মধ্যে পরিবর্তন করেছে তাদের অবস্থাও সম্পূর্ণ আশঙ্কাজনক। কারণ, তারা হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবে না। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এই বলে তাড়িয়ে দেবেন, ‘দূর হও, ধ্বংস হও যারা আমার পর (দীনের মধ্যে) পরিবর্তন বা রদবদল করেছ।’ –সহিহ বোখারি : ৬৫৮৪

তাই সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুরোপুরিভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোনো অবস্থাতেই আল্লাহর দীনের অপব্যাখ্যা করা যাবে না, সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবে তা গ্রহণ করতে হবে। বস্তুত তাওহিদ হচ্ছে- মানুষের চিরমুক্তির সুনিশ্চিত সনদ আর শিরক হচ্ছে ধ্বংসের মূল। তাই তাওহিদবাদী ঈমানদার লোক মহাপাপী হলেও মুক্তি পাবে। আর মুশরিক মহাজ্ঞানী ও গুণধর হলেও অমার্জনীয় অপরাধী। এ জন্য ইসলামের নবী বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এই শাফায়াত ইনশাআল্লাহ সে ব্যক্তি লাভ করবে, যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা অবস্থায় মারা গেছে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯৯

কারা কারা শাফায়াত করতে পারবে?
১. আমাদের নবীজি শাফায়াত করবেন। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াতের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কেয়ামতের ময়দানে হিসাব-কিতাব শুরু হবে। সেটা হল শাফায়াতে কুবরা। হিসাব শুরু হওয়ার আগেই নবীজির শাফায়াতে নবীজির কিছু উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হিসাব কিতাবের পর নবীজির অনেক উম্মত জাহান্নামি হবে, তাদেরকে শাফায়াত করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। জাহান্নামে যাওয়ার পর অনেকেই নবীজির শাফায়াতের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের পর জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতে যাওয়ার পর জান্নাতিদের মর্যাদা বুলন্দির জন্যও নবীজি শাফায়াত করবেন। এভাবে বিভিন্ন স্তরেই নবীজির শাফায়াতের কথা হাদিসে এসেছে।
২. আমাদের নবীজি ছাড়াও সকল নবী-রাসুল স্বীয় উম্মতের জন্য শাফায়াত করবেন।
৩. অনেক ফেরেশতাদের শাফায়াত কবুল করা হবে।
. নবীজির উম্মতের মধ্য থেকে নেককার ও নাবালেগ বাচ্চারা শাফায়াত করার সুযোগ পাবে। নেককারদের মাঝে আল্লাহর অলি, শহীদ, হাফেজে কোরআন ও উলামায়ে কেরামের কথা হাদিসে এসেছে।
৫. এমনকি নেক আমলও শাফায়াতের সুযোগ পাবে। যেমন সুরা বাকার ও সুরা আলে ইমরান তেলাওয়াতকারীদের জন্য শাফায়াত করবে।
৬. মহান আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে অনেক মুমিনকে মাফ করবেন, জাহান্নাম থেকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

নবীজিকে আল্লাহর ওয়াদা
আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তি প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরওয়ারদিগারের তিন মুঠি পরিমাণ।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৪৩৭

যে আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা অবস্থায় মারা গেছে, সে নবীর শাফায়াত পাবে 

 

আল্লাহতায়ালা নবীজির কাছে ওয়াদা করেছেন এবং স্বয়ং আল্লাহতায়ালাও নিজের কুদরতি মুষ্ঠি দ্বারা তিন মুষ্ঠি পরিমাণ উম্মতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন, এটাও হুকমি শাফায়াত। নবীজির সম্মানে আল্লাহতায়ালা এই পরিমাণ উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

মুমিন কর্তৃক শাফায়াত প্রসঙ্গে
মুমিন মুসলমানগণ অন্য মুসলমানদের জন্য শাফায়াত করবেন। মুমিনদের মাঝে সাহাবায়ে কেরাম, শহীদ, অলি, হাফেজে কোরআন, উলামায়ে কেরাম এবং অপ্রাপ্তবয়স্ত সন্তান সবাই অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে বহু হাদিস রয়েছে।

সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার জন্য সুপারিশ
হজরত হারেস ইবন আকইয়াশ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবু বারযা (রা.)-এর নিকট কোনো এক রাতে উপস্থিত ছিলাম, সেই রাতে তিনি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে দুই মুসলিমের চারটি সন্তান মারা যাবে, আল্লাহ তার দয়ার বরকতে তাদের উভয়কে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ রাসুল! তিনজন মারা গেলে? তিনি বললেন, তিনজন মারা গেলেও (তিনি তাদের উভয়কে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন); সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ রাসুল! দুইজন মারা গেলে? তিনি বললেন, দু’জন মারা গেলেও।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১৭৮৫৯

মুমিনদের মাঝে শাফায়াতকারী নির্দিষ্ট না
মুমিনদের অনেকেই শাফায়াতের সুযোগ পাবে, তবে তাদেরকে নির্দিষ্ট করা যাবে না। কারণ, শাফায়াতের জন্য ঈমানের ওপর মৃত্যুবরণ করা জরুরি। আর কে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করল তা নির্দিষ্ট করা অসম্ভব। তাই কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে ধারণা করা যাবে না যে, সে আমার জন্য শাফায়াত করতে পারবে। যেমন একজন পীর সাহেব, হাফেজে কোরআন কিংবা আলেম। আমরা সুধারণা করতে পারি যে, তিনি নেককার মানুষ, হতে পারে তারা অন্যদের জন্য শাফায়াতের সুযোপ পাবেন; কিন্তু এই সুধারণা পর্যন্তই সীমিত থাকতে হবে, কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে শাফায়াতকারী বলা যাবে না।

শাফায়াতের অপেক্ষা করা যাবে না
আমাদের উচিত ঈমান ও আমল নিয়ে কবরে যাওয়ার চেষ্টা করা। শাফায়াতের অপেক্ষা না করা। এই আশা করা যাবে না যে, আমার ছেলে হাফেজ, সে আমাকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

তবে শাফায়াত পাওয়ার জন্য যেসব আমল রয়েছে সেগুলো বেশি বেশি করতে হবে। ছেলেমেয়েকে হাফেজ, আলেম ও দীনদার বানানোর চেষ্টা করতে হবে। নাবালেগ বাচ্চা মারা গেলে সবর করতে হবে। শাফায়াতের মাঝে নবীজির শাফায়াত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও কার্যকর এবং সুনিশ্চিত। তাই নবীজির সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়তে হবে, নবীজির ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে। হে আল্লাহ! তোমার নবীর শাফায়াত নসিব করো। আমিন।

   

হজ পালন করলেন ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৪৬ জন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলতি হজ মৌসুমে বিশ্বের ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন সৌদি আরবের হজ ও উমরাবিষয়ক মন্ত্রী ড. তওফিক আল-রাবিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ এ তথ্য জানিয়েছে।

শনিবার (১৫ জন) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি মক্কা থেকে মিনা ও আরাফাত পর্যন্ত হজের পর্যায়গুলো কোনো বিপত্তি ছাড়া সফল হওয়া কথাও ঘোষণা করেন।

এদিকে, সৌদি আরবে জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুসারে, এবার বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশ থেকে হজযাত্রী এসেছেন বলে জানানো হয়েছে।

তন্মধ্যে, এশিয়ার দেশ থেকে আসা হজযাত্রীর সংখ্যা ৬৩.৩ শতাংশ, আরব দেশ থেকে ২৩.৩ শতাংশ, আফ্রিকা অঞ্চল থেকে ১১.৩ শতাংশ এবং আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩.২ শতাংশ বলেও জানানো হয়।

সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হজযাত্রীর সংখ্যা দুই লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন এবং দেশের বাইরে থেকে আসা হজযাত্রীর সংখ্যা ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন। হজযাত্রীদের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ জন এবং নারী হজযাত্রী ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন।

১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন হজযাত্রী বিমানযোগে, ৬০ হাজার ২৫১ জন স্থলপথে এবং ৪ হাজার ৭১৪ জন সমুদ্রপথে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন।

উল্লেখ্য, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে। এদিন মিনায় অবস্থান শেষে শনিবার আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে রাতে মুজদালিফার খোলা প্রান্তরে রাতযাপন করবেন। রোববার (১৬ জুন) হজের তৃতীয় দিন হাজিরা বড় জামারাতে কংকর নিক্ষেপ, পশু কোরবানি, মাথার চুল মুণ্ডন করবেন।

;

কোরবানির গোশত বণ্টনের সমাজপ্রথা মানা কি জরুরি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরবানির গোশত, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির গোশত, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোনো কোনো এলাকায় কোরবানির গোশত বণ্টনের একটি সমাজপ্রথা চালু আছে। তা হলো- এলাকায় যারা কোরবানি করেন, তাদের কোরবানির গোশতের তিন ভাগের একভাগ সমাজে জমা ‎করতে হয়। পরে ওই গোশত নির্দিষ্ট সমাজভুক্ত সবার মাঝে (যারা কোরবানি করেছেন বা করেননি) বণ্টন করা হয়।

সাধারণ দৃষ্টিতে এটি একটি ভালো উদ্যোগ মনে হতে পারে, কিন্তু কোনো সামাজিক প্রথা বা রীতি পালন করার জন্য তা ‎শরিয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধ ও আমলযোগ্য কি না- তাও নিশ্চিত হতে হয়। ভালো নিয়ত থাকলেও শরিয়ত সমর্থন করে না ‎অথবা ইসলামের নীতির সঙ্গে মানানসই নয়- এমন কোনো কাজ করা বা এমন কোনো রীতি অনুসরণের সুযোগ ‎নেই।

বর্ণিত সামাজিক প্রথাটিতে উদ্দেশ্য ভালো হলেও যে পদ্ধতিতে তা করা হয় তাতে শরিয়তের দৃষ্টিতে মৌলিক কিছু আপত্তি ‎রয়েছে। তার অন্যতম হলো, সামাজিক এ প্রথার কারণে সবাই তার কোরবানির এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজের ‎লোকদের হাতে দিতে বাধ্য থাকে এবং এর বিলি-বণ্টন ও গ্রহিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু সমাজপতিদের হাত থাকে। ‎গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে এমন বাধ্যবাধকতা শরিয়তসম্মত নয়। কেননা শরিয়তে কোরবানি ও গোশত বণ্টন একান্তই কোরবানিদাতার নিজস্ব কাজ।

ঈদের দিন সম্মিলিতভাবে জামাতে নামাজ আদায় করতে বলা হলেও কোরবানির জন্য কত মূল্যের পশু কিনবে, সে পশু ‎কোথায় জবাই করবে, গোশত কীভাবে বণ্টন করবে- এ বিষয়গুলো কোরবানিদাতার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

‎শরিয়তে কোরবানির কিছু গোশত সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখীদের কোরবানির ‎গোশত দিতে তাকিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা কোরবানিদাতার ওপর অপরিহার্য করা হয়নি। বরং কোরবানিদাতা কী ‎পরিমাণ গোশত নিজে রাখবে, কী পরিমাণ সদকা করবে এবং কাকে কাকে বিলি করবে আর কী পরিমাণ আগামীর ‎জন্য সংরক্ষণ করবে- এগুলো কোরবানিদাতার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার এবং ব্যক্তিগতভাবে করার কাজ। এটিকে ‎সামাজিক নিয়মে নিয়ে আসা ঠিক নয়।

শরিয়তের মাসয়ালা জানা না থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গোশত বণ্টনের বর্ণিত যে পদ্ধতি প্রচলিত- তা পরিহারযোগ্য। এখানে চলমান প্রথাটির কিছু ক্ষতির দিক উল্লেখ করা হলো-

এক. অনেক কোরবানিদাতার পরিবারের সদস্য-সংখ্যা বেশি হওয়ায় অথবা অন্যকোনো যৌক্তিক কারণে নিজ পরিবারের ‎জন্য বেশি গোশত রাখার প্রয়োজন হয়, ফলে সে পরিবারের জন্য বেশি গোশত রাখতে চায়। আবার অনেকে তার ‎কোনো দরিদ্র আত্মীয়কে কোরবানির গোশত দিতে চায়। কিন্তু সামাজিক এই বাধ্যবাধকতার কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ‎সামাজিক রীতি অনুযায়ী কোরবানির এক তৃতীয়াংশ গোশত সমাজে দিতে বাধ্য হয়। অথচ হাদিসে ইরশাদ ‎হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল নয়।’ -মুসনাদে আহমাদ : ২০৬৯৫

দুই. প্রচলিত প্রথায় গোশতদাতা তার দানের অংশটি কাকে দেবে সে স্বাধীনতা হারায়। হয়তো সে তার নিকটাত্মীয় অথবা ‎পরিচিত কাউকে একটু বেশি পরিমাণে দিত, কিন্তু এক্ষেত্রে তার জন্য এমনটি করার সুযোগ থাকে না।

তিন. অনেক মানুষ এমন আছেন, যারা প্রত্যেকের হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে চান না। আর শরিয়তও কাউকে সবার ‎হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য করেনি। কিন্তু সামাজিক এই রীতির কারণে গোশত গ্রহণকারী প্রত্যেকেই অন্য ‎সবার হাদিয়া বা সদকা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বলাবাহুল্য এ ধরনের ঐচ্ছিক বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা ‎মোটেই উচিত নয়।

চার. এ ধরনের বাধ্যবাধকতা আরোপের আরেকটি ক্ষতির দিক হলো, সমাজের কিছু মানুষ এমন থাকে, যাদের আয় ‎রোজগার হারাম পন্থায় হয়। সেক্ষেত্রে জেনে বুঝে তাদের কোরবানির গোশত সমাজের সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া ‎হয়। অথচ হারাম উপার্জনের মাধ্যমে কোরবানিকৃত পশুর গোশত খাওয়া জায়েজ নয়।

মোটকথা, শরিয়তের শিক্ষা মোতাবেক প্রত্যেককে তার কোরবানির অংশ দান করার বিষয়ে স্বাধীন রাখতে হবে। প্রচলিত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনোভাবে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যাবে না। কোরবানিদাতা নিজ দায়িত্ব ও বিবেচনা মতো যাকে ‎যে পরিমাণ হাদিয়া করতে চায় করবে এবং গরিব-মিসকিনকে যে পরিমাণ সদকা করতে চায় করবে। নবী কারিম ‎সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে শত শত বছর যাবৎ এ পদ্ধতিই চলমান আছে। এই পদ্ধতিই অবলম্বন ‎করা জরুরি। শরিয়ত যা চালু করতে বলেনি এমন কোনো প্রথা চালু করা থেকে বিরত থাকতে হবে। -সহিহ মুসলিম : ১৯৭২

;

জেনে নিন কোরবানি বিষয়ক প্রয়োজনীয় মাসয়ালা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির মাসয়ালা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না- তার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ -মুস্তাদরাকে হাকেম : ৩৫১৯

যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নেসাব হলো- স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হলো- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। - ফাতাওয়া তাতারখানিয়া : ১৭/৪০৫

কোরবানি করতে না পারলে
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। - ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৪৫

যেসব পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে
উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫

কোরবানির পশুর বয়সসীমা
উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কোরবানি করা জায়েজ। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৫-২০৬

উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। অর্থাৎ কোরবানির পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যেকোনো অংশে অংশীদার হওয়া জায়েজ। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ- যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনো সমস্যা নেই। -সহিহ মুসলিম : ১৩১৮

কোরবানির পশুতে আকিকার অংশ
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই সহিহ হবে। -রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৬২

শরিকানা কোরবানির নিয়ম

শরিকদের কারও পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারও কোরবানি সহিহ হবে না।

যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরিক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। -ফাতাওয়া কাজিখান : ৩/৩৫০-৩৫১

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কোরবানি
এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

দাঁত নেই এমন পশুর কোরবানি
গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাঁত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কোরবানি সহিহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ওই পশু কোরবানি করা যাবে না। -ফাতাওয়া আলমগীরী : ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙে বা ফেটে গেছে
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। কিন্তু শিং ভাঙার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌঁছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙে গেছে বা শিং একেবারে উঠেনি, সে পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৬

কান বা লেজ কাটা পশুর কোরবানি
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কোরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কোরবানি জায়েজ। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিজি : ১/২৭৫

মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি
মৃতের পক্ষ থেকে কোরবানি করা জায়েজ। মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে। কোরবানির স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানির অসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকিনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমাদ : ১/১০৭

অন্যের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে চাইলে
অন্যের ওয়াজিব কোরবানি দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কোরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কোরবানি করে তাহলে তাদের কোরবানি আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

গোশত, চর্বি বিক্রি করা
কোরবানির গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েজ নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান : ১৭/২৫৯

বিদেশে থাকা ব্যক্তির কোরবানি অন্যত্র করা
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কোরবানি করা জায়েজ।

কোরবানিদাতা এক স্থানে আর কোরবানির পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কোরবানিদাতার ঈদের নামাজ পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে।

কোরবানির পশুর হাড় বিক্রি
কোরবানির মৌসুমে অনেকে কোরবানির হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কোরবানিদাতার জন্য নিজ কোরবানির কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েজ নয়। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/৩০১

কাজের লোককে কোরবানির গোশত খাওয়ানো
কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েজ নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদের গোশত খাওয়ানো যাবে। -আল বাহরুর রায়েক : ৮/৩২৬

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
কোরবানির পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েজ। তবে কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতি : ৮/২৬৫

;

৪০ বছর ধরে বিনামূল্যে হজযাত্রী পরিবহন করেন তিনি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি, ছবি: সংগৃহীত

সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের হাইলের বাসিন্দা আল তামিমি ৪০ বছর ধরে বিভিন্ন উপায়ে এই অঞ্চল এবং আশেপাশের এলাকার লোকদের হজের সময় বিনামূল্যে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছেন। সেবার অংশ হিসেবে তিনি ওই অঞ্চলের লোকদের মক্কায় পৌঁছে দেন।

আরব নিউজের সঙ্গে হাজিদের সেবার স্মৃতিচারণের সময় সাদ জারুল্লাহ আল রশিদ আল তামিমি বলেন, তিনি হাইলের ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে আল-গাজালা গভর্নরেটের আল-মাহাশ গ্রামের বাসিন্দা।

১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাবার অসিয়ত অনুযায়ী নিজ এলাকার বাসিন্দাসহ আশেপাশের লোকদের মক্কা এবং মাশায়েরে মোকাদ্দাসায় (মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায়) নিয়ে আসছেন। এখন তার ছেলে জিএমসির মাধ্যমে হজযাত্রীদের সেবা করেন।

তামিমি জানান, তার বাবা দুই বার হজ পালন করেছেন। তিনি তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উটে চড়ে প্রথম হজপালন করেন। তখন মক্কায় পৌঁছতে তার একমাস সময় লাগে। দ্বিতীয় হজ গাড়িতে করে আদায় করি, তাতে সময় লাগে মাত্র ৯ দিন।

তিনি আরও বলেন, হজের সময় সেবা দেওয়ার জন্য ৪০ বছর ধরে গাড়ির প্রয়োজনীয় জ্বালানী এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ আগেই জমিয়ে রাখেন। এ ছাড়া হজযাত্রীদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য কফি, চা ও অন্যান্য খাবার সঙ্গে নিয়ে যেতেন। নিজের খরচের ব্যাপারে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য নেননি।

তিনি একটি বড় বাস দিয়ে সেবা দেওয়া শুরু করেন। বাসটিতে ৮৫ জন একসঙ্গে বসতে পারত। পরে তা দোতলা করা হয়। ওপরের অংশটি পুরুষদের এবং নীচের অংশটি ছিল নারীদের জন্য।

তামিমি তার এলাকায় শিক্ষার্থীদের বাসে করে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করেন।

হজযাত্রীদের সেবায় ব্যবহৃত পরিবহন, ছবি: সংগৃহীত

আল-তামিমি জানান, আমার কাছে একটি নোটবুক ছিল। যেখানে আগ্রহী হজযাত্রীরা রমজান মাসে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে যেত। সে সময় হজযাত্রা কঠিন ছিল বিধায়, এই নিয়মটি আমাকে মানতে হয়েছে- বলে উল্লেখ করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে আল-তামিমি বলেন, পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান, মিসর, জর্ডান, তিউনিসিয়া ও মরক্কোসহ অনেক দেশের মানুষ তার সঙ্গে হজযাত্রা করেছেন।

হজযাত্রায় নানা ঘটনা রয়েছে, একটি ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক ভারতীয় প্রথমে হজে যাওয়ার জন্য নাম লেখায়, পরে সে হজে যাবে না জানানোর পর অন্য একজনকে সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু যাত্রা শুরুর আগের দিন তিনি হজে যাবেন বলে মনস্থির করেন এবং পরে পুরো রাস্তা দাঁড়িয়ে যান। তার আবেগ এবং কষ্ট আমাকে দারুণভাবে শিহরিত করে।

সে সময় আল-গাজালা থেকে আল-নুকরা পর্যন্ত রাস্তা ছিল অত্যন্ত খারাপ। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় চলাচল করা কষ্ট হত। তখন মানুষ জীবনের কষ্ট সহ্য করত।

আল-তামিমির ছেলে রশিদ আল বকর তার সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর ধরে হাজিদের সেবা করে আসছেন। তিনি বলেন, আমার সন্তানদের বলা আছে, হজযাত্রীদের পরিষেবা চালিয়ে যেতে।

হজযাত্রার স্মতিচারণে তিনি বলেন, হজের দিনগুলোতে বিভিন্ন পরিবার একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হযত, পরে তাদের মাঝে অনেকে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তাও করে নেয়।

বর্তমান সময়ের হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, হজযাত্রা অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ হয়েছে।

;