জাতির প্রধান চালিকাশক্তি শিক্ষক সমাজ



এইচএম মুশফিকুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
আল্লাহতায়ালা নিজে এবং তার ফেরেশতাগণ, আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও (পানির) মাছ পর্যন্ত মানুষকে কল্যাণপ্রসূ শিক্ষকের জন্য দোয়া করেন। -তিরমিজি

আল্লাহতায়ালা নিজে এবং তার ফেরেশতাগণ, আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও (পানির) মাছ পর্যন্ত মানুষকে কল্যাণপ্রসূ শিক্ষকের জন্য দোয়া করেন। -তিরমিজি

  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষক শব্দটার মধ্যে অমিত শক্তি ও মর্যাদা সুপ্ত আছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে থাকেন। শিক্ষকরা হলেন সেই সব ব্যক্তি, যারা শিখন ও শিক্ষাদান কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষা-পরিবারে নিয়োজিতরা শিক্ষার্থীদের কর্মদক্ষতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মমর্যাদা, দায়িত্ব সচেতনতা ও কর্তব্যবোধের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আর সেই মেরুদন্ডকে সোজা রাখতে শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। ইসলাম শিক্ষককে উচ্চমর্যাদায় ভূষিত করেছে। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।’ -ইবনে মাজাহ : ২২৯

তাই তিনি শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। বদরের যুদ্ধবন্দীদের তিনি মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। জ্ঞানান্বেষণের গুরুত্ব ও শিক্ষকের মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?’ -সুরা জুমার : ৯

সাহাবি হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বলতে পারো কি, দানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বড় দাতা কে? সাহাবারা উত্তর বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই (সা.) অধিক অবগত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, দানের দিক দিয়ে আল্লাহ হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা বড়। অতঃপর বনি আদমের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ইলম (জ্ঞান) শিক্ষা করবে এবং তার প্রচার-প্রসার করতে থাকবে। কেয়ামতের দিন সে একাই (দলবলসহ) একজন আমির অথবা (হাদিস বর্ণনাকারীর সন্দেহ) একটি উম্মত হয়ে উঠবে।’ –মিশকাত

নবী মুহাম্মদ (সা.) আরও ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখো এবং তাকে সম্মান করো, যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।’ –আল মুজামুল আউসাত : ৬১৮৪

খেলাফতের যুগে ইসলাম প্রত্যেকের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছিল। তৎকালীন সময়ে শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে এখাতে সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল। যদিও দ্বীনি শিক্ষার শিক্ষকরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করে থাকেন। তবুও তারা যেহেতু নিজেদের জীবিকার পেছনে জীবনের ঘোড়া না ছুটিয়ে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন, তবে তাদের এ কাজকে সম্মান জানিয়ে তাদের ও তাদের পরিবার-পরিজনের দায়িত্বভার নেওয়া নিজেদের ওপর ফরজ করে নিয়েছিল তৎকালীন খেলাফত (সরকার), যাতে শিক্ষকদের জীবনের তাকিদে কোনো ভিন্ন পথে পা বাড়াতে না হয়।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) ও তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষাখাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তারা শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। যেমন হজরত ইবনে জাউজি (রহ.) তার গ্রন্থ ‘সিরাতুল উমরাইনে’র মধ্যে উল্লেখ করেন, ‘হজরত উমর (রা.), হজরত উসমান (রা.)-এর যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো।’ -কিতাবুল আমওয়াল : ১৬৫

মুসলিম সমাজে শিক্ষক মাত্রই বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাই শিক্ষকদের প্রতি আমাদের সবার সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত। কারণ শিক্ষকেরা মানুষ তৈরির কারিগর। শিক্ষকেরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এককথায় বলা যায়, শিক্ষক মানুষ চাষ করেন। যে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে নীতি-নৈতিকতা ও জীবনাদর্শের বলয় একজন শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত ও কর্মময় জীবনকে মুখরিত করে। পাশাপাশি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র তার দ্বারা উপকৃত হয়।

যুগে যুগে শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই কাজ করে আসছেন। অতীতে শিক্ষানুরাগীদের শিক্ষকের বাড়ি গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে হতো। এতে শিক্ষাগুরুরা তাদের জ্ঞান, সঞ্চিত অভিজ্ঞতা, দর্শন, মন-প্রাণ-অন্তর, এমনকি ভরণ-পোষণসহ শিক্ষানুরাগীদের শিক্ষা দিয়ে এমনভাবে গড়ে তুলতেন যেন এরা বড় হয়ে উন্নততর ও উচ্চতর জীবনবোধ এবং বিবেকবোধ নিয়ে সমাজ ও সংস্কৃতির ধারক-বাহক হয়।

শিক্ষকরা সবসময়ই আর্থিকভাবে দুর্বল। তাই পরবর্তীতে সময় ও জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে শিক্ষাদান পদ্ধতি গড়ে ওঠে এবং শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। শিক্ষকরা যেন নির্বিঘ্নে ও স্বাধীনভাবে শিক্ষাদান করতে পারেন সেজন্য সমাজহিতৈষী, সরকার, এমনকি সমাজের সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় এসব অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও জাতীয়ভাবে শিক্ষকদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। দেশের অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মনোযোগী হলেও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বেশ অবহেলা আর উদাসীনতার পরিচয় দেয়। যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের নির্মম ভাগ্য আজও বদলায়নি।

শিক্ষাদানের পাশাপাশি আদমশুমারি, ভোটার তালিকাভুক্তি, টিকাদান, শিশু জরিপ, উপবৃত্তি বিতরণ, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

শিক্ষকরা সমাজ বিনির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রাখার পরও শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের নজরে দেখা হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

শিক্ষকের জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট অর্থের প্রয়োজন হয়। অথচ এই পেশায় যারা নিয়োজিত, তাদের নেই কোনো অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা। সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানজনক জীবনধারণ উপযোগী বেতন-ভাতা না থাকায় মেধাবীরা শিক্ষকতায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না। শিক্ষকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব, এ দুর্মূল্যের বাজারে বেতন-ভাতার অপ্রতুলতা, শিক্ষাকে রাজনীতিকরণ এবং বাণিজ্যিকীকরণের উদ্ভট মানসিকতা, শিক্ষকদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সীমাহীন ঔদাসীন্য ও অবহেলাই যেন এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বহুলাংশে দায়ী।

বলতে লজ্জা হয়, দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ।

অবশ্য বর্তমান সমাজব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে, বিশেষ করে বাংলাদেশে। এখানে নীতি, আদর্শ, দায়িত্ব ও কর্তব্য ইত্যাদি শব্দের প্রকৃত ব্যাখ্যার পরিবর্তন ঘটেছে এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে পরিণত হয়েছে। অতীতের মতো শিক্ষকরা বিভিন্ন কারণে তাদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা হলেও অনেকেই অনন্যোপায় ও বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছে এই পথ। শুধু জীবিকার তাগিদে যারা আসে, তারা মেধা মননশীলতা, দায়িত্ব-কর্তব্য, যোগ্যতা ইত্যাদি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে, প্রভাবশালীদের প্রভাবে অথবা অর্থের বিনিময়ে ও উভয়ের সহযোগিতায় শিক্ষক হচ্ছে। এরা শিক্ষকতাকে পুঁজি করে অর্থবিত্ত-বৈভবের পেছনে ছুটে চলেছে। এদের চাতুর্যপূর্ণ চটকদারি প্রচারণা ও দৌরাত্ম্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সমাজ অসহায় হয়ে পড়েছে।

বিশ্ব শিক্ষক দিবস (৫ অক্টোবর) বিকশিত অবদানের মাধ্যমে সচেতনতা, সমঝোতা এবং উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যা শিক্ষকদের শিক্ষার প্রগতিকে আরও প্রসারিত করবে নিঃসন্দেহে।

দেশব্যাপী শিক্ষকদের বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা, শিক্ষকদের জীবনের মানউন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা , আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা, বিশেষ করে ফুরকানিয়া মাদরাসা, ইবতেদায়ী মাদরাসা, হাজার হাজার কওমি মাদরাসা, নূরানি মাদরাসা ও হিফজ মাদরাসার শিক্ষকদের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করে তাদেরও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে সরকারের মনোযোগ কার্যকর মনোযোগ দরকার। এটাই হোক এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রত্যাশা।

   

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;

রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর অপেক্ষায় সৌদি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে যাচ্ছেন হাজিরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ৯ মে বাংলাদেশ থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট। হজযাত্রীদের নিয়ে ওইদিন প্রথম ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেবে। এর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত থেকে হজযাত্রীরা সৌদি আরব যাওয়া শুরু করবেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ১৪ জুন থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই মক্কায় ভিড় জমানো শুরু করবেন হজযাত্রীরা। এই সময়ে কোনো উমরাযাত্রী গ্রহণ করবে না দেশটি।

এ বছর মক্কায় রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রীর সমাগম হতে পারে, এমন ধারণা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরব।

সুন্দর ও আরামদায়কভাবে যেন হাজিরা হজ সম্পন্ন করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদির সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করছে।

হজ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো ধারণা করছে, এবারের রমজান মাসে রেকর্ড সংখ্যক ৩ কোটি মানুষ উমরা পালন করার পর- হজেও মুসল্লিদের ঢল নামবে।

সদ্য বিদায় নেওয়া রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। রমজানে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর দিয়ে ৯০ লাখ মানুষ মদিনায় আসেন। হজের আগে ও পরে অনেক মানুষ মদিনায় যান।

গত বছর হজপালন করেছিলেন ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫ জন পুরুষ ও নারী। যার মধ্যে বিদেশির সংখ্যা ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯১৫ ও সৌদি আরবের হাজির সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৩০ জন। করোনা মহামারির কারণে এর আগের তিন বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে হজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়।

হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এবার হজে ২৫ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটবে। তাদের প্রত্যাশা এবার গতবারের তুলনায় আরও বেশি মানুষ হজ করতে আসবেন। তাই হজের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নেওয়া শুরু হয়েছে।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালন করতে যাবেন ৮৩ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৪ হাজার ৩০৭ জন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন।

;

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;