দরিদ্র দেশগুলোতে জলবায়ু ব্যয়ের স্বচ্ছতার তাগিদ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু সহায়তার অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা প্রদর্শনের বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৯ এর নেতা গ্লোবাল ক্লাইমেট নেগোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ।

তিনি বলেছেন, দরিদ্র দেশগুলিকে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়, তাদেরকে অবশ্যই এসব অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ হিসাব প্রদর্শন করতে হবে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৯ এর নেতৃত্ব দেবেন আজারবাইজানের পরিবেশ মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সরকারগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর বিষয়ে তাদের অগ্রগতি এবং জলবায়ু সংকটে তাদের ব্যয়ের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সব পক্ষগুলোর মধ্যে একটি সঠিক, ভালো এবং সৎ বিশ্বাস গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি দেশে স্বচ্ছতা প্রক্রিয়া তৈরি করা একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং চরম আবহাওয়ার প্রভাবগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করার জন্য বাকুতে কপ২৯-এ অংশগ্রহণকারী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থ সরবরাহের জন্য একটি নতুন বৈশ্বিক লক্ষ্য নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সম্মেলন ঘিরে আফ্রিকার কয়েকেটি দেশের সরকার ট্রিলিয়ন ডলার সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাবায়েভ বলেন, দরিদ্র দেশগুলোতে তাদের গ্যাস নির্গমন হ্রাস করার পরিকল্পনা আপডেট করতে সাহায্য করার জন্য বড় অঙ্কের প্রয়োজন হয়। এ জন্য জলবায়ু ব্যয়ের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা উন্নত করার প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি ত্রিভুজের মতো। প্রথমত, স্বচ্ছতা। এটা দলগুলোর মধ্যে আস্থা। পরবর্তী, অর্থ. পরবর্তী, এনডিসি। আজ আমরা এই ত্রিভুজটির দিকে তাকিয়ে আছি।

স্বচ্ছতা বা স্পষ্ট অর্থনৈতিক হিসাব বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়গুলির মধ্যে একটি বলে উল্লেখ করেন তিনি। অনেক দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে কম কাজ করে, অনেকে অর্থ ব্যয়ের সঠিক হিসাব আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের কাছে হিসাব জমা দিতেও অনিচ্ছুক।

স্বচ্ছতার অভাব কীভাবে জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। আন্তর্জাতিক এনার্জি সংস্থা ২০২২ সালে এক প্রতিবেদনে জানায়, গ্রীনহাউস গ্যাস মিথেনের নির্গমনের হার দরিদ্র দেশগুলির তুলনায় শক্তিশালী দেশে ৭০ শতাংশ বেশি ছিলো।

জলবায়ু অর্থ ব্যয় গোপনীয়তায় আবদ্ধ এবং স্থূল বিকৃতির সাপেক্ষে: গত বছর রয়টার্সের একটি তদন্তে দেখা গেছে, ইতালি এশিয়ায় আইসক্রিমের দোকান খুলতে সহায়তা করেছে এবং জাপান বাংলাদেশে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে এবং একটি জলবায়ু অর্থায়নের ছদ্মবেশে মিশরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

২০১৫ প্যারিস চুক্তি অনুসারে সব দেশকে অবশ্যই নতুন স্বচ্ছতা প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। উন্নত দেশগুলো ২০২২ সালের মধ্যে তাদের প্রথমে প্রতিবেদন জমা দেওয়া কথা বলা হয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা এই বছরের শেষ পর্যন্ত।

বাবায়েভ উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলোকে দ্রুত তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি চান আগামী ১১ নভেম্বর থেকে কপ-২৯ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই যেন এসব দেশ তাদের প্রতিবেদন জমা দিক। যদি দরিদ্র দেশগুলো স্পষ্টভাবে তাদের স্বচ্ছতা দেখাতে পারে অর্থাৎ তারা গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর চেষ্টা করছে, জলবায়ু সংকটের প্রভাবগুলির সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে তাহলে উন্নত দেশগুলো তাদের কাছ থেকে জলবায়ু অর্থায়ন বন্ধ করার জন্য কম অজুহাত পাবে।

বাবায়েভ বলেন, যদি এসব দেশ তাদের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছ চিত্র জমা দেয়, তবে এটি উন্নত বিশ্বের জন্য উন্নয়নশীল বিশ্বের অগ্রাধিকার প্রদানের জন্য একটি খুব ভাল যুক্তি হবে। আমরা আন্তঃসংযোগকারী হতে চাই।

আজারবাইজান তেল এবং গ্যাসের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা দেশের রপ্তানির ৯০ শাতাংশেরও বেশি এবং রাষ্ট্রীয় বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি। বাবায়েভ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি উত্পাদকদের কপ-এ মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা সমস্ত দেশকে, বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলিকে এই প্রক্রিয়ায় একসাথে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই, ভাবতে চাই কিভাবে আমরা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, কিছু জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশ ইতিমধ্যেই দরিদ্র দেশগুলোকে অর্থ সাহায্য করছে। দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ভিত্তিতে তারা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের সবুজ পরিবর্তনের জন্য বিনিয়োগ করছে।

আজারবাইজানের প্রধান আলোচক ইয়ালচিন রাফিয়েভ বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারীরা সমস্যার একমাত্র উৎস হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না। তিনি উল্লেখ করেন, অন্যান্য খাত যেমন পরিবহনও কার্বন নির্গমনের বড় উৎস।

তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানী দেশগুলোকে আমি বৈধ উদ্বেগ বলে মনে করি। এদের দূষণকারী হিসাবে চিহ্নিত হতে চাই না।

   

সৌদির বাদশাহ সালমান অসুস্থ



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ প্রচণ্ড জ্বর ও শরীর ব্যথায় ভুগছেন। বেশি অসুস্থ্যতাবোধ করায় এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

রবিবার (১৮ মে) জেদ্দার আল সালাম প্যালেসের রয়্যাল ক্লিনিকে এই পরীক্ষা হবে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি।

সৌদির রয়্যাল কোর্ট জানিয়েছে, জেদ্দার রাজপ্রাসাদের ভেতর অবস্থিত রয়্যাল ক্লিনিকেই বাদশার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তারা বলেছে. “সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে জেদ্দার আসসালাম রাজপ্রাসাদের রয়্যাল ক্লিনিকে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। বাদশার অসুস্থতার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা।”

৮৮ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান ২০১৫ সাল থেকে সৌদির সিংহাসনে আসীন। তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হলেও কার্যত তিনিই দেশটি শাসন করছেন। সৌদি বাদশাহর স্বাস্থ্যের খবর খুব কমই প্রকাশ্যে আসে। তবে গত এপ্রিলে রয়্যাল কোর্ট কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হাসপাতালে তার ভর্তির হওয়ার খবর জানিয়েছিল। এর আগে, শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় ২০২২ সালের মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তার কোলোনোস্কপি ও মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়।

রয়্যাল কোর্ট আরও জানিয়েছে, চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাদশার অসুখ খুঁজে বের করতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এছাড়া তার শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখা হবে। গত মাসেও একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ।

সেসময় রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাদশাহ সালমান তার হার্টের পেসমেকারের ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানী রিয়াদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগে ২০২০ সালে গলব্ল্যাডার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করেছিলেন তিনি। সেই সময় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন ধরেনের জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।

;

ইয়েমেন উপকূলে তেল ট্যাঙ্কারে হামলা



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে ইয়েমেন উপকূলে গ্রীকের একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে জাহাজটির সামান্য ক্ষতি হলেও কেউ হতাহত হয়নি। মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড এ কথা জানিয়েছে।

বার্তাসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় সেন্টকম বলেছে, ১৮ মে রাত ১টার (সানা সময়) দিকে ইরান-সমর্থিত হুতিরা লোহিত সাগরে গ্রীক মালিকানাধীন একটি তেল ট্যাঙ্কার লক্ষ্য করে জাহাজ বিধ্বংসী একটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জাহাজটি পানামা পতাকাবাহী ছিল।

সেন্টকমের বার্তায় বলা হয়, জাহাজটি সম্প্রতি রাশিয়ায় নোঙর করে চীনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।পরে জাহাজটি ফের যাত্রা শুরু করে।

এরআগে মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে এ হামলার কথা জানিয়ে বলেছিল, ইয়েমেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মোখা নগরী উপকূলে জাহাজটিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

;

নেতানিয়াহুকে গ্যান্টজের হুমকি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসরােয়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ধর্মান্ধের পথ ছেড়ে জাতির স্বার্থ রক্ষার কথা বলেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ। তিনি গাজায় যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা না থাকলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।

শনিবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজার জন্য ৮ জুনের মধ্যে ছয়টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনার দাবি করেছেন গ্যান্টজ।

গ্যান্টজের এ ধরনের মন্তব্য ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও নেতানিয়ানহু সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরেছে। গ্যান্টজ গাজায় ৬ টি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৮ জুনের মধ্যে একটি পরিকল্পনা করার ওপরও জোর দেন । যার মধ্যে আছে গাজায় হামাস শাসনের অবসান এবং অঞ্চলটিতে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি বলেন, ‘‌নেতানিয়াহু যদি জাতীয় বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপর স্থান দেন, তাহলে এ সংগ্রামে আমাদের পাশে পাবেন। কিন্তু তিনি যদি ধর্মান্ধের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে অতল গহ্বরে নিয়ে যান, তাহলে আমরা এ সরকার ছাড়তে বাধ্য হব। ’

অবশ্য নেতানিয়াহু তার এই মন্তব্যকে ফালতু কথা হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এর অর্ধ ইসরায়েলের পরাজয়।

এর আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন গাজায় বেসামরিক ও সামরকি শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসরায়েলের যে কোনো পরিকল্পনা নেই তা যেন নেতানিয়ানহু জনসম্মুখে বলেন।

;

‘একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক’ রোধে কানাডায় প্রশাসনিক চাপ 



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়ছে। বিশ্বের প্রায় সব মহাসাগরে প্লাস্টিকের পরিমাণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন দেশে নেওয়া হচ্ছে আইনি বা বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পণ্যের উৎপাদনের পদক্ষেপ।

সম্প্রতি কানাডার পার্লামেন্টে প্লাস্টিক দূষণ রোধের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কনজারভেটিভ দল থেকে আবারও দাবি তোলা হয়। এর আগে ২০২০ সালে প্রথম দাবিটি তোলা হয়েছিল। দেশটির সংবাদমাধ্যম সিবিসির প্রতিবেদনে সে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

মূলত, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক হল ডিসপোজেবল প্লাস্টিক যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয়। পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের পানীয়ের বোতল ও বোতলের ক্যাপ, খাবারের মোড়ক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, প্লাস্টিকের মোড়ক, স্ট্র, স্টিরার্স, স্টাইরোফোমের কাপ বা প্লেট, এয়ারবাড, প্লাস্টিকের কাপ-প্লেট-চামচ-গ্লাস-ছুরি, ট্রে, মিষ্টির বাক্স বাঁধার রিবন, থার্মোকল, স্টিয়ারার, সিগারেটের প্যাকেট, আইসক্রিম ও ক্যান্ডি স্টিক ইত্যাদি হল একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক।

সিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়,  টরন্টো ইউনিভার্সিটি অব আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মরিয়ম ডায়মন্ড বলেন, ‘আমরা অনেক বেশি  প্লাস্টিক উৎপাদন করেছি যা শেষ পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে পরিবেশকে দূষিত করছে এবং এতে মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।’

ডায়মন্ড বলেছেন, বৃহত্তর পরিবেশ ঝুঁকির আশঙ্কাকে প্রাধান্য না দিয়ে প্লাস্টিকের এমন অধিক ব্যবহার দেখে  তিনি উদ্বিগ্ন। 

ডায়মন্ড সায়েন্টিস্ট কোয়ালিশন ফর অ্যান ইফেক্টিভ প্লাস্টিক ট্রিটির সদস্য এবং রাসায়নিক দূষণের আন্তর্জাতিক প্যানেলেরও ভাইস-চেয়ার। তার পরামর্শ হল- তরল জাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিক স্ট্র পরিহার করতে হবে। যাদের  শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারা ছাড়া বাকিদের স্ট্র ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করেন তিনি।  প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করার কোনো দরকার নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কনজারভেটিভ দলের এমপি কোরি টোচর গত মাসে হাউস অফ কমন্সে সি-৩৮০ বিল নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, কানাডিয়ান এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন অ্যাক্টের অধীনে বিষাক্ত পদার্থ হিসেবে উৎপাদিত প্লাস্টিক আইটেমগুলোকে তালিকাভুক্ত করে সেসব নিধনের পদক্ষেপ নেওয়াটা জরুরি। 

অবশ্য এমন একটি তালিকা এরই মধ্যে করা হয়েছে যার অন্যতম উপাদান এই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। এই তালিকাটি ছিল ফেডারেল সরকারের একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার জন্য একটি বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ, যা বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেওয়া পদক্ষেপ।

হাউসে টোচরের বিল নিয়ে বিতর্ক হওয়ার পাঁচ দিন পরে, কনজারভেটিভ এমপি ব্র্যান্ডেন লেসলি একটি আট মিনিটের ভিডিও পোস্টে বলেন, পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেনাকাটা, খাওয়া, সমুদ্রে ভ্রমণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্লাস্টিক এড়িয়ে এর বিকল্প ব্যবহারে ঝুঁকতে হবে।

ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসোর্স এবং পরিবেশগত গবেষণার স্কুলের অধ্যাপক টনি ওয়াকার বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন বন্ধ করতে হবে।’ 

উল্লেখ্য, কানাডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী,, ২০১৬ সালে কানাডার ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার টন। ২০১৯ সালে সেই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১৪০ টনে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার অংশ হিসেবেই ২০২০ সালে দেশটিতে সি-৩৮০ বিল উত্থাপন করা হয়। সেই ফেডারেল মূল্যায়নে বলা হয়, যেহেতু প্লাস্টিক খুব ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং পরিবেশে স্থায়ী অবস্থান নেয়, তাই প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ সময়ের সাথে সাথে বাড়তেই থাকবে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে পরিবেশ এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। এর সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে।’

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড (ডব্লিউডব্লিউএফ) অনুসারে, একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ধীরে ধীরে এবং ধীরে ধীরে প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরোতে ভেঙে যায় যা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। এসব প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কারণ এটি অ-বায়োডিগ্রেডেবল এবং পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে কয়েক বছর সময় নেয়। প্লাস্টিকের ব্যাগগু পঁচতে হাজার হাজার বছর সময় লাগতে পারে, এতে মাটি এবং জল দূষিত হয়। প্লাস্টিক তৈরি করতে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো প্রাণীর টিস্যুতে স্থানান্তরিত হয় এবং অবশেষে, মানব খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে।

কোনো প্লাস্টিকই বায়োডিগ্রেডেবল নয়। তবে কোনো প্লাস্টিক ১০০ মাইক্রনের থেকে পাতলা হলে, তার চরিত্র বেশি ভঙ্গুর হয়। অর্থাৎ, অল্পসময়ের মধ্যেই ছোটো ছোটো টুকরোতে ভেঙে যায় এই ধরনের প্লাস্টিক। যা আমাদের কাছে পরিচিত মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে। সাধারণ প্লাস্টিক পণ্যের থেকেও আণুবীক্ষণিক এই প্লাস্টিক কণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে শুরু করে গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-সর্বত্রই হদিশ মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের। বাস্ততন্ত্রের ক্ষতিসাধন তো বটেই, খাদ্য এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মানুষের দেহেও অবাধে প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।

;