বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে মানববন্ধন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য উচ্চ হারে বাড়ানোর দাবিতে মানববন্ধন করেছে টাঙ্গাইল জেলার বিড়ি শ্রমিকগণ।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধনে বিড়ি শ্রমিক নেতারা দেশে তামাকের স্বাস্থ্যক্ষতির ভয়াবহতা কমাতে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি করেন।

বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১১ লক্ষ জনগোষ্ঠির তামাক ব্যবহারজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের ধূমপায়ীকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে এবং উচ্চ স্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ধূমপায়ীদের সস্তা ব্র্যান্ড বেছে নেয়ার আগ্রহ কমবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশকৃত সুনির্দিষ্ট কর প্রবর্তনের মাধ্যমে কর পদ্ধতির সংস্কার (যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রচলিত রয়েছে) সিগারেট করকাঠামোর কার্যকারিতাকে আরো শক্তিশালী করবে।

মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে টাঙ্গাইল বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, তামাকজাত পণ্য উৎপাদনের সাথে জড়িত থাকায় প্রতিনিয়তই আমরা নানাবিধ স্বাস্থ্যসমস্যা যেমন শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, মানসিক অবসাদ ইত্যাদির সম্মুখীন হই। এই প্রক্রিয়ায় আমরা নিতান্তই জীবিকার তাগিদে যুক্ত হয়েছি। তবে আমরা চাই তামাক পণ্যের উপর উচ্চ কর আরোপ করা হোক এবং মূল্য বাড়ানো হোক। পাশাপাশি আমাদের (বিড়ি শ্রমিকদের) বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার সুযোগ দেয়া হোক।

তিনি আরও বলেন, তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে কম দামি বিড়ি ও সিগারেটের কর-মূল্য ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে যাতে এগুলো আর সুলভ না থাকে।

টাঙ্গাইল বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ জয়মনি বেগম বলেন, যেহেতু বারংবার কর বৃদ্ধি করেও নিম্ন স্তরের সিগারেট ও বিড়ির দাম সুলভ রয়ে যাচ্ছে তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী কর আরোপ করার। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়ান যাতে তা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।

টাঙ্গাইল বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব জসিম উদ্দিন দাবি তোলেন প্রতি প্যাকেট ধোঁয়াযুক্ত তামাকপণ্যের দাম সর্বনিম্ন ৬০ টাকা করার যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ বিড়ি বা নিম্ন শ্রেণীর সিগারেট সেবনে নিরুৎসাহিত হয়।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের মধ্য থেকে আরও অনেকেই তামাকপণ্যের কর বৃদ্ধির দাবিতে বক্তব্য দেন। পাশাপাশি বিড়ি কারখানাগুলোতে শিশু শ্রম বন্ধ, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে বরাদ্দ বাড়ানো, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়া, মজুরি বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন।

বিড়ি শ্রমিকদের দাবী জানান কার্যকর হারে কর বৃদ্ধি করে যেন নিম্নস্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার প্যাকেটের নূন্যতম মূল্য ৬০ টাকা, মধ্যমস্তরে ৮০ টাকা, উচ্চস্তরে ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৭০ টাকা করা হয়। 

অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডরূপ) এবং ডরূপ যুব ফোরাম। বিড়ি শ্রমিকদের সাথে সংহতি জানিয়ে কর বৃদ্ধির দাবিতে আরও বক্তব্য রাখেন জনাব রুবিনা ইসলাম, প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর, ডরূপ।

উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩ এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এসব লক্ষ্য অর্জনে তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি হচ্ছে একটি ব্যয়-সাশ্রয়ী পদক্ষেপ। একইসাথে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর বৃদ্ধি।

ডরূপ বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডরূপ বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

এসময় মানববন্ধনে প্রায় অর্ধশতাধিক বিড়ি শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

   

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না



মশাহিদ আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

পাথর শ্রমিকদের বোবা কান্না, ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা জাফলং। যেখানে ভ্রমণে এসে প্রতিদিন আনন্দ পায় হাজার হাজার পর্যটক। সেই পর্যটন এলাকার মানুষের বোবাকান্না শুনে না কেউই। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় স্থানীয় লোকজন পিয়াইন নদী থেকে বালু এবং পাথর উত্তোলন ও পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাদের সংসারে বর্তমানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। আন্দোলন সংগ্রাম করেও পাচ্ছেন না ফল।

এমন অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করে ৭৫ বছর বয়সী পাথর শ্রমিক সুনামগঞ্জের আলতু মিয়া বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসাও করতে পারি না, অনেক সময় না খেয়েও আমাদের দিন কাটাতে হয়। পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আর শ্রমিক দিবস যে আসলে কি তা আমরাও বুঝি না। আমরা কিভাবে খেয়ে বাঁচবো সে চিন্তায় থাকি।যে সময় মানুষ আন্দোলন করে আমরা তখন যাই।কিন্তু আন্দোলন করে কোনো লাভ হয় না।

তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে জাফলংয়ে বসবাস। পেশায় তিনি পাথর শ্রমিক। পাঁচ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্যনকারী। ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

পিয়াইন নদী থেকে তোলা পাথর, সেই পাথর ভাঙার কাজ করে সংসার চালান অনেক শ্রমিক/ছবি: নূর এ আলম


সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছিল ৬৯ বছরের নিজাম উদ্দিনের ঘাম। ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সাথে প্রতিবেদকের।

তিনি জানালেন, বর্তমানে তাদের পরিস্থিতি খুব খারাপ যাচ্ছে। এক ট্রাক এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১২০০ টাকা পান। এখন একদিন হোক বা ৩দিন হোক যে কয়দিন সময় যাক ওই টাকার উপরে একটা টাকাও কেউ দেবে না।

তিনি বলেন, মে দিবস বা শ্রমিক দিবসে আন্দোলন করে ছার আনা আমাদের লাভ বা কোনো কিছু আমরা পাইনি। আমদের মজুরিও বাড়ছে না। এক টাকা বাড়েনি। বরং আমাদের লস(ক্ষতি) হচ্ছে। আগে এলসি পাথর ভাঙতে পারলে ১৬০০ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারতাম। এখন সেই পাথর ভেঙ্গে ১২০০ টাকা নিয়ে ফিরতে হচ্ছে। যদি পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হতো তাহলে এমন অভাব অটনটনে দিন কাটাতে হতো না। শুধু আলতু মিয়া ও নিজাম উদ্দিন নয়, এমন আরও অনেক শ্রমিকের দিন পাত যাচ্ছে কষ্টে।

পাথরের স্তুপ, ছবি: নূর এ আলম


সরেজমিনে সিলেটের জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন ক্রাশার মিলে। অনেকেই নতুন কাজের সন্ধানে ছুটে যাচ্ছেন দিকবিদিক। জাফলং বিজিবি ক্যাম্পের পাশে কয়েকটি ক্রাশার মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মেশিন ও যন্ত্রপাতিতে মরিচিকা ধরেছে। আর পিয়াইন নদী থেকে ছোট ছোট নৌকা দিয়ে বালু সংগ্রহ করে সেখানেও পাথর খুঁজে বেড়ান কিছু সংখ্যক শ্রমিকেরা।

জানা যায়, ২০১২ সালে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীসহ ১৫ কিলোমিটার এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গেজেটে বলা হয়, ‘অপরিকল্পিতভাবে যেখানে-সেখানে পাথর উত্তোলন ও নানাবিধ কার্যকলাপের ফলে সিলেটের জাফলং-ডাউকি নদীর প্রতিবেশ ব্যবস্থা সংকটাপন্ন, যা ভবিষ্যতে আরও সংকটাপন্ন হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক বা ম্যানুয়াল কিংবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্য যেকোনো খনিজ সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ কেবল জাফলং আর শাহ আরেফিন টিলা নয়, এমন চিত্র সিলেটের প্রায় সবগুলো পাথর কোয়ারি এলাকার। পরিবেশ বিপর্যয় ঠেকাতে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছনাকান্দি ও লোভছড়া–এই পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

 

পাথর শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দিন ১০০ থেকে ৪০০ টাকা করে পান শ্রমিকরা, ছবি: নূর এ আলম


এর আগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে উচ্চ আদালত।

জাফলং ক্রাশার মিলে কাজ করেন ষাটোর্ধ্ব রহিমা বেগম। তিনি বলেন, সারাদিন কাম-কাজ করে দুই থেকে আড়াইশ টাকা পাই।কিন্তু বর্তমানে যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে দাম এই টাকা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও কাজ করতে হয়।কাজ না করলে ঘরে না খেয়ে মরতে হবে।

রেখা গোয়ালা বলেন, কোনো দিন ১০০ টাকা আর কোনো দিন ৪০০ টাকা পাই। এসব টাকায় পর্তায় পড়ে না। এতো কষ্ট করেও বাচ্চা-কাচ্চাদেএ মুখে হাসি ফুটানো যায় না। তার চেয়ে কোয়ারি খুলে দিলে খেয়ে বাঁচতে পারতাম।


এছাড়াও আরও কয়েকজন শ্রমিক জানান,নদী থেকে পাথর তোলা বন্ধ হওয়ার পর থেকে অভাব অনটনে চলছে তাদের জীবনযাত্রা। কাজ না পেয়ে অনেকেই অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে। সিলেট ছাড়াও অন্যান্য জেলার যারা শ্রমিক ছিলেন তারাও এলাকায় গিয়ে কাজের সন্ধান করছেন। আমরা না খেয়ে মরলেও কারো কোনো কিছু আসে যায় না।

এ বিষয়ে পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি সহসভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান লিলু বলেন, কোয়ারী সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। না আমরা চলতে পারছি, না আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা চলতে পারতেছে। কোয়ারিগুলো বন্ধ থাকায় এখানকার শ্রমিকদের অভাব অনটন ও অনাহারে দিনপার করতে হচ্ছে। কিছু শ্রমিক কাজের জন্য ঢাকায় গার্মেন্টসে ছুটতেছে। যারা ক্ষুদ্র সম্বল নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিল তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এখন তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতেছে।

প্রধানমন্ত্রীসহ খনিজ মন্ত্রণালয়সহ সবার কাছে একটাই আবদেন আমাদের কথা ও ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে পাথর কোয়ারি খুলে দিলে আমরা দু-বেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি রিট রয়েছে। তাছাড়া এ বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছেন।

;

বেনাপোলে বাস চাপায় শ্রমিক নিহত, আহত ১



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর)
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে দ্রুতগামী বাস চাপায় মোস্তাক ঢালি নামে এক শ্রমিক নিহত ও আনিসুর রহমান নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আর আহতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘাতক চালক পালিয়ে গেলেও জব্দ করা হয়েছে পরিবহন।

বুধবার (১ মে) ভোর ৬টায় মহাসড়কের দিঘিরপাড় নামক স্থানে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, নিহত দিনমজুর মোস্তাক ঢালি শার্শা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে এবং আহত দিনমজুর আনিসুর রহমান একই গ্রামের ছেলে রেজাউল ইসলামের ছেলে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মত শ্রম বিক্রী করতে শার্শার লাউতাড়া গ্রামের দুই দিনমজুর বেনাপোল শহরে আসছিল। এসময় বেনাপোলগামী গোল্ডেন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পথচারী দিনমজুর দুই জনকে ঢাকা দিলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলে মারা যায় একজন। এসময় স্থানীয়দের খবরে অন্যজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনায় নিহতের মরদেহ, একটি মৃত পাখি ও বাস জব্দ করে। এদিকে অভিযোগ রয়েছে চালকের অসাবধনতা ও সড়ক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় প্রায়ই সড়কটিতে দুর্ঘটনায় পথচারীরা জীবন হারাচ্ছে।

এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে স্বজনদের কান্নায় এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে ।

বেনাপোল পোর্ট থানার উপপরিদর্শক ঝন্টু কুমার বশাক জানান, নিহতের ঘটনায় ঘাতক চালক পালিয়েছে। তবে বাস জব্দ করা হয়েছে।

;

‘আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নাই’



মেহেদী হাছান মাহীম, বার্তা ২৪. কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

‘আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নাই’ এমন বুকভরা আক্ষেপ নিয়ে নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সের তছিরন বেগম। স্বামী অনেক আগে মারা গেলেও ছেলেই ছিল তার একমাত্র ভরসা। এখন সেই ছেলেও অসুস্থ। পরিবারের সকল দায়িত্ব এখন তছিরন বেগমের উপর। পরিবারের দায়িত্ব মেটাতে তছিরন বেগম এখন কাজ করছেন রাজধানী ঢাকার গাবতলী এবং আমিন বাজারের মধ্যস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ নদী সংলগ্ন কয়লা ব্যবসা কেন্দ্রে। দিনে বারো ঘন্টা মাথায় করে বোঝাই করে কয়লা টানার কাজ করেও তেমন কোনো টাকা পায়না তিনি। এরকম ঝুকিপূর্ণ কাজে জীবনেরও নেই কোনও নিশ্চয়তা।

পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে এদিনে শ্রমিকরা আমেরিকার শিকাগো শহরে তাদের কর্মক্ষেত্রে দৈনিক ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করেছে। সেদিন আন্দোলনের একপর্যায়ে পুলিশ শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। এতে করে প্রায় ১০-১২জন শ্রমিক নিহত হয় । পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর রক্তঝরা লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে ওই ঘটনার স্মারক হিসেবে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অবশেষে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে পহেলা মে পালিত হয় হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।

শ্রমিক দিবস কবে, কেন শ্রমিক দিবস পালিত হয় সে বিষয়ে কোনো কিছুই জানেনা তছিরন বেগম। তিনি বলেন, শ্রমিক দিবস কি এবং কেন পালিত হয় এ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।

তিনি আরও বলেন, কয়লা বোঝাই করা কাজ অনেকদিন ধরে করতেছি। আমাদেরকে খেটে খাওয়া লাগে। আমার একটা ছেলে সন্তান আছে। তার ঘরে দুটো মেয়ে আছে। আমার ছেলেও অসুস্থ। সে আগে মাছের ব্যবসা করতো। একদিনে আয় হয় দুই থেকে তিনশো টাকা। এই টাকা দিয়ে কিছুই হয়না। ৬০ বছর বয়সে এসে আমাদের এই কাজ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ঘরে ইনকাম করার মতো কেউ নেই। আমার কোনো বয়স্ক ভাতাও নেই।


তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় ১২ ঘণ্টা কাজ করি। আমাগো মতো শ্রমিকদের জীবনের কোনও নিশ্চয়তা নাই। এখানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মালিক পক্ষ কোনো ধরনের সাহায্য করে না।

হাফিজুর রহমান নামে আরেকজন কয়লা শ্রমিক বলেন, এখানে যে যতবেশি পরিশ্রম করে, সে ততবেশি টাকা পায়। কেউ কেউ ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করে। অতিরিক্ত গরমের কারণে এখন কাজ করতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। যে টাকা ইনকাম করতেছি এটা দিয়ে পরিবার চলে না। মাঝে মাঝে ঋণ করে চলতে হয়। আমরা অসুস্থ হলে মালিক পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য আসে না।

মে দিবসের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি তছিরন বেগমের মতো একই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি শ্রমিক দিবসের নাম জীবনেও শুনি নাই।

সয়েলি আক্তার নামে একজন মহিলা বালু শ্রমিক বলেন, আমি দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করি। সারাদিন পরিশ্রম করে ২০০-৩০০ টাকা পাই। পরিবারে আমার স্বামী এবং একটা ছোট মেয়ে আছে। এই রোদের ভিতরে কাজ করে চেহারা খারাপ হয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ, আমাদেরকে কাজ করেই খেতে হবে। শ্রমিক দিবস সম্পর্কে তিনি বলেন, পহেলা মে শ্রমিক দিবস একথা আমরা লোকমুখে শুনছি। কিন্তু, এ সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না।

নাম বলতে অনিচ্ছুক একজন বালু শ্রমিক বলেন, ৪৫ টা টুকলি টানলে ১০০ টাকা পায়। গরমের কারণে ১০০ টাকাও ইনকাম করতে কষ্ট হয়। পরিবারে ঠিকমতো বাজারের খরচই হয়না। আমি ছাড়া সংসারে ইনকাম করার মতো কেউ নেই। আমার এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি অনেক আগে। আমার স্বামী মারা গেছে অনেক আগে। অভাবের তাড়নায় ১৩ বছরের ছেলেকে গার্মেন্টসে দিয়েছি। বেতন পায় মাত্র ৫ হাজার। কোনোমতে ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। আমার ছেলে আমার একমাত্র ভরসা। আমার ছেলের নাম মো. ইয়াসিন। এই কাজ করতে গিয়ে যদি আমার কোনও সমস্যা হয় তাহলে আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নেই। আমি টাকার জন্য বাজার করতে পারি না। জিনিসপত্রের দামের তুলনায় আমাদের পারিশ্রমিক বাড়ছে না। আমাদের এখন তেমন ইনকাম হয় না।

শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি শ্রমিক দিবস সম্পর্কে অল্প একটু জানি। এদিনে বিদেশে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছে।

;

চা পাতায় বন্দী জীবন

  ‘শ্রমিকের জয়গান কান পেতে শোন ঐ’



সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
চা পাতা তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা, ছবি: সীরাত মঞ্জুর

চা পাতা তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকেরা, ছবি: সীরাত মঞ্জুর

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সুখ-দুঃখ সবই এই চা বাগানে। ছেলে বয়সে চা বাগানের গাড়িতে কাজ করেছি, চা চারার কলম গাছ কেটেছি। বাগানের লাকড়ি কাটি। এই বাগানে আমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠীর জন্ম। এখান থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এখানেই আমাদের জন্ম, এখানেই মৃত্যু!’

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির কর্ণফুলী চা বাগানে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে নিজের জীবনের কথা এভাবেই তুলে ধরেন ৬৫ বছর বয়সী চা শ্রমিক পুলক রায়।

চা শ্রমিক পুলক রায়।

জীবনের শেষ সময়ে এসেও পুলক রায়ের যেন নেই কোনো অবসর। জীবনের কঠিন সংগ্রাম এখনো চলছে। তরুণ বয়সে বাগানের চা চারার কলম কেটেছেন, গাড়িতে কাজ করেছেন । তবে বয়সের ভারে এখন আর এসব ভারি কাজ পারেন না। পরিবারে স্ত্রী পুত্র কেউ না থাকলেও পেটের দায়ে এখনো চা বাগানের লাকড়ি কাটার কাজ করে যেতে হচ্ছে তাকে। চা বাগানের বাইরে গিয়ে কিছু করবেন, সেটি ভাবনাতেও আসেনি কখনো। চা বাগানেই যে বন্দী পুলকের জীবন।

চা বাগানে জন্ম, কর্ম থেকে মৃত্যু। এমন জীবন চক্র শুধু পুলক রায়ের নয়, বাগানের প্রায় সব শ্রমিকেরই। চায়ের সবুজ পাতার প্রেমে পড়ে তাদের বেড়ে ওঠা। সেই চাকে ঘিরেই শুরু হয় জীবনের প্রথম কর্ম। নারীরা করেন পাতা তোলার কাজ। আর পুরুষেরা চা বাগান ও কারখানার বিভিন্ন শাখায় কাজ করেন।

গৌরি মালা পাতা তোলেন, স্বামী উজ্জ্বলও বাগানে কাজ করেন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের সংসার তাদের। ছেলে ছোট্ট হওয়ায় স্কুলে পড়লেও টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যায় মেয়েদের পড়ালেখা। বাগান থেকে পাতা তুলে ঘরে ফিরতে কথা হয় গৌরির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'প্রতিদিন সকাল ৭টায় বের হই। বাগানে পৌঁছায় ৮টায়। কাজ শেষে ফিরি বিকেলে ৪টায়। যা টাকা পাই স্বামীসহ দুজনের ইনকাম দিয়ে ভগবানের দয়ায় চলি। আমাদের কর্ম ও জীবন এই চা বাগানেই সীমাবদ্ধ।' 

কাজ শেষে দল বেঁধে ঘরে ফিরছেন তারা।

একদিন ছেলে-মেয়েরাও তাদের জায়গা নেবে বলে মনে করেন গৌরি। বলেন, ‘এখন আমরা বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেখাদেখি ছেলে-মেয়েরাও করবে। এখানে তাদের বিয়ে-সাদি করাব। এরপর তাদের ছেলে মেয়েরাও একদিন বাগানে কাজ করবে। দুঃখ লাগে না। কিসের দুঃখ! বাগানে যখন জন্ম, বাগানেই কাজ করে খাই।’

ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা। পাতা তোলার কাজ শেষ করে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাগানের পাশে বসে নিজের ছেঁড়া কাপড় সেলাচ্ছিলেন জোসনা বালা। ত্রিশ বছর ধরে বাগানে কাজ করছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, 'আমার বয়স এখন ৪৫। ত্রিশ বছর ধরে পাতা তুলছি। কি আর করব, কষ্ট হলেও কর্ম করতে হয়। টাকা পয়সা নেই, জায়গা নেই। আমাদের বাপ দাদারা যেই কর্ম করে খেয়েছেন। আমরাও তাই করে চলছি।' 

নিজেদের আর্থিক দুর্দশার কথা জানাতে গিয়ে জোসনা বলেন, 'এমন না যে আমরা সরকার থেকে কোনো দামি কিছু পেলাম। দুমাস খেলাম। এসময়ে কাজ করা টাকাগুলো জমা রাখলাম, ছেলে মেয়ে শিক্ষা করলাম, নিজস্ব বাড়ি ভিটা বানালাম। এরকম সুযোগ আমরা পাই না। যতদিন কাজ করি ততদিন খাই। ১৭০ টাকা করে পাই। যদি ২৫ কেজি করে ৫০ কেজি পাতা তুলতে পারি তাহলে একদিনে ৩৪০ টাকার মতো পাওয়া যায়। আর যখন গাছে পাতা কম থাকে তখন তো আর বেশি তোলা যায় না। বৃষ্টি হচ্ছে না, গাছে পাতা নাই তেমন। যা পাতা তুলি, তাই পয়সা পাই। যখন পাতা ছিল তখন একশ’ কেজিও পাতা তুলছি। তখন ৭০০ টাকা মত পেয়েছি।' 

পাতার পোটলা নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা।

কাজের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে জোসনা বলেন, 'পাতা তুলতে গিয়ে হাত ফেটে যায়। যারা নতুন তারা আরও হাতে আঘাত পায়। রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়। ওপরে রোদ, নিচে গরম বালি। এর মধ্যে আমাদের কাজ করতে হয়। সপ্তাহে যে বেতন পাই তা দিয়ে চলে না, ঋণ হয়ে যায় অনেক টাকা। ১৭০ টাকায় আমাদের জীবন-মরণ।' 

জোসনা ও গৌরি মালাদের সঙ্গে টাকার অভাবে পাতা তোলার কাজ শুরু করেছেন আমেনা ও ফাল্গুনি রায় নামের দুই কিশোরী। আমেনা বলে, 'পাঁচ ক্লাস পড়েছি। দুই সপ্তাহ আগে পাতা তোলার কাজ শুরু করেছি। রোদে পাতা তুলতে আমার কষ্ট হয়। তারপরও কি আর করব, কাজ করতে হবে।' 

ফাল্গুনি রায় বলে, 'আমি একমাস ধরে পাতা তুলছি। পাঁচ ক্লাস পড়েছি। বড় কিছু হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও আমাদের অভাবে তা আর হয় না। তাই পাতা তুলার কাজ করছি।'

মা-বাবার সঙ্গে শহরে থাকলেও শ্বশুর বাড়ি এসে তিন মাস ধরে চা শ্রমিকের কাজ করছেন সুমি। তিনি বলেন, 'আমি মাত্র তিন মাস ধরে কাজ করছি। এটা আমার শ্বশুর বাড়ি। শহরে থাকা অবস্থায় কিছু করতাম না। এখন তো অভাবের জন্য কাজ করতে হচ্ছে। কেউ তো আর সুখে কাজ করে না।' 

বাগানের মাঠে খেলছিল শ্রমিকের ছেলেরা।

বাগানের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছিল ১০ বছর বয়সী রাহুল দে। ফেনুয়া টি স্টেট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সে। মা-বাবা দুজন চা শ্রমিক হলেও সে হতে চায় চিকিৎসক। জানতে চাইলে বলে, 'আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। বাগানে কাজ করতে চাই না।' 

চা শ্রমিকেরা প্রতিদিন সকাল হলে দল বেঁধে ছুটে যান বাগানে। কাজ শেষে বিকেল হতেই ফিরে আসেন ঘরে। জীবন-মান উন্নয়নে সবসময় পিছিয়ে তারা। এমন কি তারা অন্য শ্রমিকদের তুলনায় পান সবচেয়ে কম পরিমাণের দৈনিক মজুরি। এভাবে চা বাগানকে ঘিরে বাঁধা পড়ে আছে তাদের জীবন। ছোট্ট শিশু জন্মের পর প্রথম যে দৃশ্য দেখে সেটিও চায়ের সবুজ পাতা। বেড়ে ওঠা থেকে মৃত্যুও এই চা বাগানে।

প্রসঙ্গত, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা তিন সপ্তাহ আন্দোলনের পর ২০২২ সালে ২৭ আগস্ট ৫০ টাকা দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমান চা শ্রমিকের নূন্যতম দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা।

;