চেঙ্গিস খান : রহস্যময় এক বিশ্ববিজেতা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

যার আগমন বদলে দিয়েছে গোটা পৃথিবীর ইতিহাস

  • Font increase
  • Font Decrease

তিনি নিজেকে যতটা উচ্চতায় নিতে পেরেছিলেন; প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যের কোনো একক ব্যক্তির পক্ষেই তা সম্ভব হয়নি। নিজের গোত্রের প্রতি উদারতা, অনুসারীদের জন্য ভালোবাসা কিংবা শত্রুর প্রতি নৃশংসতা; সমস্তই কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। হয়েছেন নিন্দিত এবং নন্দিত। কিন্তু তারপরেও এক অনির্বচনীয় রহস্য তাকে কেন্দ্র করে। চেঙ্গিস খান—অনুসারীদের কাছে ঈশ্বরের দূত হিসাবে বিবেচিত ইতিহাসের এক প্রলয়ঙ্কর চরিত্র।

তার আগমনের আগে এবং পরে পৃথিবীর ফারাক ছিল আকাশ পাতাল। চেঙ্গিস খান বিখ্যাত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। জন্ম ১১৬২ সালে এবং মৃত্যু ১২২৭ সালে। তিনি ও তার বাহিনী সাম্রাজ্যের পরিধি এতটাই বৃদ্ধি করেন, রোমান শাসনকর্তারা চারশত বছরেও যা করতে পারেনি। হিন্দুধর্মে দেবতাদের অবতারবাদের ধারণা আছে। সেদিক থেকে দেখলে চেঙ্গিসকে অপদেবতার অবতার বলা যায়। ঐতিহাসিকরা তাকে “ঈশ্বরের অভিশাপ” বলে অভিহিত করেন। মঙ্গোলিয়ার ক্ষুদ্র এক গোত্রে জন্ম নিয়ে তিনি তৎকালীন পৃথিবীর নিয়ন্ত্রকে পরিণত হয়েছিলনে।

কিছু শৈশব

চেঙ্গিস খানের বাল্য নাম তেমুচিন। নামের অর্থ ইস্পাত। বাস্তবিক অর্থেই তার প্রমাণ দেখিয়েছেন। পিতা ইসুকাই ছিলেন বোরিজিন নামের এক মোঙ্গল যাযাবর গোত্রের প্রধান। অন্যান্য স্থায়ী কিংবা কৃষিনির্ভর গোত্রের মতো যাদের থিতু হবার খায়েশ ছিল না। তারচেয়ে ঢের পছন্দ ছিল শিকার এবং লুটপাট করা। তৎকালে একে অসভ্যতা বলে দেখার কোনো যুক্তি নেই। বরং বিশুদ্ধ বৈধ এবং পুরুষোচিত কাজ বলেই গণ্য হতো।

চেঙ্গিস খানের আগে যাযাবর তাতাররা ছিল বিক্ষিপ্ত


তারও আগের ঘটনা। হেলুন নামের এক কুমারী কন্যাকে বিয়ে দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যাযাবরদের বিয়ে, এক গাদা ঘোড়সওয়ার আর বেশ মালসামান সাথেই। বিপত্তি ঘটল পথে। বরযাত্রীর সুখযাত্রাকে পণ্ড করে দিয়ে নববধূকে উঠিয়ে আনলেন এক যাযাবর নেতা। তাকে দিলেন নিজের দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্মান। সেই সংসারের দ্বিতীয় সন্তানই তিমুচিন। জন্মের সময় হাতে রক্ততিল থাকার কারণে মনে করা হয় ছেলে বয়সকালে বড় যোদ্ধা হবে। সেই বিশ্বাস পূরণ হতে দেরি হয়নি।

দুর্দিন ও গোত্রীয় দ্বন্দ্ব

তেমুচিনের বয়স তখন নয় বছর। পিতার বন্ধু ও প্রতিবেশি গোত্রের কোনো উৎসবে যোগ দেওয়া হয় সবাই মিলে। তার আগে কাজের জন্যই সেখানে তেমুচিনকে থাকতে হয়েছে বেশকিছু বছর। সেখানেই বোরতাই নামের এক বালিকা—পার্শ্ববর্তী গোত্রনেতার কন্যার সাথে বিয়ে হয় তার। কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় ঘটে বিপত্তি। বিদ্রোহীদের হাতে বিষপানে মৃত্যু হয় তেমুচিনের পিতা ইসুকাইয়ের। উঠিয়ে নেওয়া হলো স্ত্রী বোরতাইকে। বিদ্রোহীরা বালক তেমুচিনকে অপসারণ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছিল।

ওয়াং খানের দরবারে বালক তেমুচিন


তেমুচিনের পরিবারে তখন দুরবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে শিকড়, ফল কিংবা মাছ খেয়ে কোনোমতে দিন গুজরান করছে। কিন্তু শিকারি বিড়াল শৈশবেই চেনা যায় বলে একটা কথা আছে। তেমুচিন তার পিতার বন্ধু কেরাইট গোত্রের অধিপতি ওয়াং খানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। ওয়াং খান সম্মত হলে সৈন্য সাজিয়ে রওনা দিলেন বিদ্রোহী মেরকাইট গোত্রের মোকাবেলায়।

সাফল্য এবং উত্থান

প্রশ্ন বোরতাইয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নিজ বংশের সম্মান রক্ষা—দুটোই। তেমুচিন ওয়াং খানের সাহায্য নিয়ে মেরকাইটদের সফলভাবে পদানত করেন। এই বিজয় তার পরবর্তী সাফল্যের পথ অনেকটাই সুগম করে দেয়। বংশের প্রায় হতাশ মানুষগুলো তাকে কেন্দ্র করে আবার একত্রিত হতে থাকে। তারপর তেমুচিন মনোযোগ দিলেন পিতৃশত্রু তাতার গোত্রের দিকে। এবং পরাজিত করলেন শোচনীয়ভাবে।

জামুকার বিরুদ্ধে বিজয় তাকে গোত্রের ভরসায় পরিণত করে


জামুকা নামের প্রভাবশালী এক গোত্রপতি তেমুচিনের উত্থানকে মেনে নিতে পারেনি। তাই, মেরকাইট, নাইমান এবং আরো কয়েকটি বিদ্রোহী গোত্রকে একত্রিত করে জোট গঠন করেন তেমুচিনের বিরুদ্ধে। দুই বাহিনী মুখোমুখি হলো ১২০৪ সালে। জামুকা পরাজিত এবং বন্দী হলো, পরে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে মোঙ্গল জাতির ওপর তেমুচিনের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ১২০৬ সালে কারাকোরামে কুরিলতাই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে তিনি চেঙ্গিস খান উপাধি গ্রহণ করেন। রাজধানীর মর্যাদা পায় কারাকোরাম।

চীনের বিরুদ্ধে জয়যাত্রা

একসময়ের গৌরবে ভরা চীন তখন স্তিমিয়ে পড়েছে অনেকাংশেই। উত্তরে চীন এবং দক্ষিণে সাঙ বংশ রাজত্ব করত। চেঙ্গিস খান সবার আগে সাঙ বংশকেই লক্ষ্যবস্তু করে আক্রমণ করলেন। ১২১১ সালের এই অভিযানে বিশাল অংশ তার অধিকৃত হয়। ১২১৪ সালে চীন বংশের রাজধানী পিকিং অবরোধ করলে রাজা ভীত হয়ে পাঠায় সন্ধিপ্রস্তাব। সেই সাথে দেওয়া হয় অঢেল অর্থ, মণিমুক্তা এবং উপঢৌকন। উপহার এবং নবপরিণীতা চীনা রাজকুমারিকে নিয়ে সেই দফায় ফিরে এলেও মন ঘুরতে দেরি হয়নি। ১২১৫ সালে চেঙ্গিস খান আবার পিকিং অবরোধ করে এ পর্যায়ে দখল করে নেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি শত্রু পক্ষের ওপর একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়


এদিকে দেখা দেয় অন্য সমস্যা। তাতার নেতা গুরখান বিদ্রোহ করে বসে চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে। কারাকিতাইয়ের এই বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি সেনাপতি জেবিকে প্রেরণ করেন। গুরখান পরাজিত ও নিহত হলে গোটা অঞ্চলে চেঙ্গিসের একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

খাওয়ারিজম শাহের সাথে দ্বন্দ্ব

খাওয়ারিজমের শাসক তখন মুহম্মদ শাহ। বাগদাদ কেন্দ্রিক মুসলিম খিলাফতের পতনের সুযোগে মুহম্মদ শাহ মধ্য এশিয়ায় সুবিশাল এক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। চেঙ্গিস খানের সাথে তার দ্বন্দ্বের কারণ মূলত উভয়ের উচ্চাভিলাস এবং আত্মাভিমান। মোঙ্গল দূত হত্যা করার কারণেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধ ঘোষণা করেন চেঙ্গিস খান। ১২১৯ সালে চালানো এই সুবিশাল অভিযানে হতাহতের সংখ্যা ছিল প্রচুর। ছয় মাসের অবরোধের পর নিয়ন্ত্রণে আসে উস। ধীরে ধীরে দখল প্রতিষ্ঠিত হয় বোখারা, হিরাত, বলখ, খোজান্দ, তাসখন্দ, সমরখন্দ প্রভৃতি স্থানগুলো। ঐতিহাসিক গীবনের মতে, এই চার বছরে যে পরিমাণ ধ্বংস হয়েছে, তা পাঁচশত বছরেও পুনর্গঠন করা যায়নি।

প্রত্যেকটা নগরী তছনছ হয়ে যায় তাদের তাণ্ডবে


মুহম্মদ শাহ পালিয়ে জীবন যাপনের এক পর্যায়ে ১২২০ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর তার স্থান দখল করেন পুত্র জালালউদ্দীন। দক্ষ এবং চৌকস যোদ্ধা ছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার মোঙ্গল বাহিনীকে পরাজিতও করেছিলেন। কিন্তু দিনশেষে ১২২১ সালের দিকে পিতার ভাগ্য বরণ করতে হয়। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে ১২৩১ সালে আততায়ীর হাতে তার মৃত্যু হয়।

শেষের দিনগুলো

ততদিনে চেঙ্গিস এশিয়ার প্রায় পুরো অংশ দখল করে ফেলেছে। দুই সেনাপতি জেবি এবং সেবুতি গিয়ে দখল করেন উত্তর-পশ্চিম পারস্য। তারপর সেনাপতিরা রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং খিবা অধিকার করে। ১২২৫ সালে চেঙ্গিস খান ফিরে আসেন দেশে। কিছুদিন পরেই চীনের সাঙ সাম্রাজ্যের অংশে বিদ্রোহ দেখা দেয়। সারাজীবন ঘোড়ার পিঠে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তারপরেও বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই রওনাই তার পরবারের উদ্দেশ্যে রওনায় পরিণত হয়। ১২২৭ সালে চীন পৌঁছানোর পূর্বেই প্রাণত্যাগ করেন এই প্রতাপশালী পুরুষ।

শাসন ও আইনব্যবস্থাতেও তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য


চেঙ্গিস খান কেবল তার সময়ের না; বরং গোটা ইতিহাসের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাসক। তার সামরিক দক্ষতার কারণেই মোঙ্গল বাহিনী এক অপরাজেয় শক্তিতে পরিণত হয়। পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম ধরে মোঙ্গল বাহিনী এশিয়া এবং ইউরোপের রাজাদের জন্য ত্রাস হিসাবে গণ্য হতে থাকে। প্রশাসক হিসাবেও তার খ্যাতি ব্যাপক। চীনা প্রশাসক ইয়েলু চুৎসাইয়ের তত্ত্বাবধানে প্রশাসনকে ঢেলে সাজান, সৃষ্টি করেন গোয়েন্দা এবং বিচার বিভাগ। ধর্মের দিক থেকে তাকে সহনশীল বলেই গণ্য করা হয়। পূর্বতন চীনা শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে প্রভাবিত হয়ে নিজের রাজ্যকেও চালিত করেন সেই পথে। তার প্রবর্তিত আইনবিধান পরিচিত ‘উলাঙ্গ ইয়াছা’ নামে। 

মৃত্যুর পূর্বে তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল কাস্পিয়ান থেকে প্রশান্ত মহাসাগর অব্দি


চেঙ্গিস খানের চারপুত্র—চাগতাই, ওগোতাই, জুসি এবং টুলি। পিতার মৃত্যুর পর তারা পূর্ববর্তী বেগেই জয় করতে থাকে একের পর এক রাজ্য। মুসলিম বিশ্বের ভিত্তিভূমি বাগদাদের পতন ঘটে ১২৫৮ সালে হালাকু খানের হাতে। তিনি ছিলেন চেঙ্গিসের নাতি। ছোট্ট একটা গোত্রের অধিপতির পুত্র হিসাবে জন্মগ্রহণ করে চেঙ্গিস খান নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর সাম্রাজ্যের অধিপতিতে। তার রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে পশ্চিমে কৃষ্ণসাগর পর্যন্ত।

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;