আমাজন : পৃথিবীর ফুসফুসের আদ্যোপান্ত



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
আকাশ থেকে আমাজন

আকাশ থেকে আমাজন

  • Font increase
  • Font Decrease

সাম্প্রতিক সময়ে আমাজনে আগুনের ঘটনা সারা বিশ্বে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। পরিবেশ আর মানুষের সম্পর্ককে ভাবতে বাধ্য করেছে আরো একবারের জন্য। ‘প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ’—কথাটা যে মিথ্যা না; মানবসভ্যতার অতীতে তার নজির কম নেই। প্রকৃতির সুবিশাল আর বিচিত্র জাদুঘরের নাম আমাজন। আজকের আয়োজনে তাই আমাজনের আদ্যোপান্ত।

আমাজন নদী অববাহিকায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট। আয়তনের দিক থেকে অববাহিকাটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মূল আয়তনের শতকরা ৪০ অংশ। ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গায়ানা এবং সুরিনাম—মোট আটটি দেশ জুড়ে বিস্তৃত। যদিও এর বাইরে ঘিনিরও সংযুক্তি আছে। পরিবেশের বৈচিত্র্যময়তা আর পূর্ববর্তী সভ্যতার মানুষদের প্রভাবকে প্রতিফলিত করতেই এখানে জন্ম নিয়েছে নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র। মোজাইকের মতো গড়ে উঠেছে রেইনফরেস্ট, মৌসুমী বন, ক্ষণস্থায়ী বা পর্ণমোচী বন, প্লাবন বনভূমি এবং তৃণাঞ্চল।

আমাজন বনের বিস্তৃতি


গোটা অববাহিকায় আমাজন নদীটি জল যাতায়াতের পথ হিসাবে ভূমিকা পালন করে। নীলনদের পরে পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী এটি। তার ওপর রয়েছে ১১০০টিরও বেশি উপনদী; যাদের ১৭টির দৈর্ঘ্য ১০০০ মাইলেরও বেশি। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এই নদীই বনের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে অনেকাংশে। তাই নদী আর বন ঐতিহাসিকভাবে অভিন্ন হয়ে উঠেছে এখানে।

আমাজন অববাহিকা

আমাজন অববাহিকায় বিস্তৃত বনভূমি সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য নিম্নোক্ত ডায়াগ্রামটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমাজনের ইতিবৃত্ত

এক সময় নদীটি প্রবাহিত ছিল আফ্রিকায় পশ্চিম দিকে কঙ্গো নদীর অংশ হিসাবে। তখন মহাদেশ দুটি পরস্পর যুক্ত ছিল গণ্ডোয়ানার অংশ হয়ে। আজ থেকে পনের মিলিয়ন বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকা প্লেটের সাথে নাজকা প্লেটের সংঘর্ষে জন্ম নেয় আন্দিজ। আন্দিজের গঠন আর সেই সাথে ব্রাজিল ও গায়ানার বেডরক শিল্ড বন্ধ করে দেয় নদীর পথ। ফলে আমাজন পরিণত হয় বিশালাকার অন্তর্দেশীয় নদীতে।

আমাজনের রয়েছে ১১০০’র বেশি উপনদী


আস্তে আস্তে পানি স্বচ্ছ হয়ে উঠতে থাকল। জন্ম নিল বসবাসের উপযোগী প্রাণী। প্রায় দশ মিলিয়ন বছর আগের কথা। বালি আর পাথরের মধ্য দিয়ে আমাজন পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে যাত্রা করে। এই সময়টাতেই মূলত গড়ে উঠে রেইনফরেস্ট। বরফ যুগের সময় সমুদ্রের উচ্চতা হ্রাস পায়। আমাজনের পানি দ্রুত প্রবাহিত হতে হতে পরিণত হয় নদীতে। তারও মিলিয়ন বছর পরে সমুদ্রের স্তর আরো নেমে গেলে অববাহিকায় গড়ে উঠে বনভূমি।

বন থাকবে, প্রাণী বৈচিত্র্য থাকবে না; কিভাবে সম্ভব? সেই সূত্র মেনেই দুই আমেরিকা মহাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসে বিচিত্র সব প্রাণী। বরফ যুগের দরুণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের রেইনফরেস্টগুলো হারিয়ে যাচ্ছিল। ধারণা করা হয়, আমাজন তা ফিরে পেয়েছে বিস্তৃত তৃণ অঞ্চল এবং পার্বত্য বনভূমির মধ্য দিয়ে। তৃণ অঞ্চলগুলো রেইনফরেস্টকে দ্বীপের মতো বিভক্ত করেছে। বিদ্যমান প্রজাতিগুলোকে পৃথক করে রেখেছে। সেভাবেই ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে একই প্রজাতিতে জন্ম নিয়েছে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য।

বরফ যুগের সমাপ্তি ঘটলে বনভূমি আবার সংযুক্ত হলো একে অপরের সাথে। ততদিনে প্রজাতির পরিবর্তনে ব্যবধান এতটাই ঘটে গেছে যে; পরিণত হয় সম্পূর্ণ পৃথক প্রজাতিতে। আর এভাবেই ওই অঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের এক অনন্য সমাবেশ রচিত হয়। প্রায় ছয় হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দাঁড়ায় ১৩০ মিটারে; আর আরো একবারের জন্য নদী প্লাবিত হয়ে ধারণ করে দীর্ঘ, বিস্তীর্ণ ও স্বচ্ছ লেকের আকার।

কত বড় আমাজন বন?

প্রশ্নটা কঠিন না হলেও ব্যাখ্যা নির্ভর। এইজন্য কে কিভাবে সংজ্ঞায়ন করছে; সেদিক থেকে পরিবর্তিত হয় আয়তন। আমাজন নদী প্রায় ৬.৯১৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটারকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দক্ষিণ আমেরিকার মোট আয়তনের ৪০ ভাগই এর অধীনে। কিন্তু সাধারণ অর্থে অববাহিকার বহির্ভাগকেও ব্যবহার করা হয়, যখন ‘দ্য আমাজন’ বলা হয়।

জীব বৈচিত্রের এক সতেজ জাদুঘর আমাজন


জীবভূগোলের দিক থেকে দেখলে আমাজনের আয়তন ৭.৭৬- ৮.২৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। যার শতকরা আশি ভাগই বনভূমি। মোট বনাঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ অবস্থিত ব্রাজিলে। বর্তমান সময়ে নদী হিসাবে আমাজনের খ্যাতি অজানা না কারো। আয়তনের দিক থেকে মিসিসিপির চেয়ে ১১ গুণ বড়। অববাহিকা মিলিয়ে তো একেবারে খোদ USA-এর সমতুল্য। পানির মাত্রা যখন তুঙ্গে থাকে; নদীর মুখ তখন ৩০০ মাইল পর্যন্ত প্রশস্ত হয়। প্রতিদিন ৫০০ বিলিয়ন ঘনলিটার পর্যন্ত পানি প্রবাহিত করে ফেলে দেয় আটলান্টিক মহাসাগরে।

নদীর স্রোত বিপুল পরিমাণ পলিমাটি বয়ে নেয় আন্দিজ থেকে। স্বচ্ছ পানি তাই পরিণত হয় ঘোলা কাদায়। হিসাব করে দেখা যায়, প্রতিদিন ১০৬ মিলিয়ন ঘনফুট পলি প্রতিদিন ধুয়ে নামে সমুদ্রে। ফলে এই পলি থেকেই আমাজনের মুখে জন্ম নিয়েছে মাহারো আইল্যান্ড—আয়তনে যা সুইটজারল্যান্ড-এর সমান। আমাজন রেইনফরেস্ট আমাজন অববাহিকা পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রান্তীয় রেইনফরেস্ট। অঞ্চলটুকুতে বিচিত্র ও অজস্র বাস্তুতন্ত্র আছে; তৃণ অঞ্চল থেকে জলাভূমি অব্দি। মাটির প্রকার, ইতিহাস কিংবা অন্যান্য প্রভাবকের ওপর ভর করেও রেইনফরেস্ট ভিন্ন হতে পারে।

দিন বদলে বিবর্তন

আমাজনে মানুষের বসবাসের ইতিহাস অনেক পুরাতন। কিন্তু বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অন্যান্য কারণে বিবর্তন আসছে। বিশাল পরিমাণ আসবাব কিংবা ব্যবহার্য দ্রব্যাদির যোগান দেয় আমাজন। পশুর মাংস, চামড়া, কাঠ, ফল, তেল, গ্যাস কিংবা মিনারেলের মতো আরো অনেক কিছুই পণ্য হিসাবে রপ্তানি করা হচ্ছে চীন, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলোতে।

নির্বিচারে কেটে উজাড় করা হচ্ছে বনভূমি


সব ক্রিয়ারই একটা বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই আমাজনও আক্রান্ত হয়েছে দ্রুত। ব্যাপক পরিমাণ গাছ বিলুপ্ত হচ্ছে মানুষের লোভের তোপে পড়ে। ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন হেক্টর বন কেটে ফেলা হয়েছে। সেই সাথে আগুনের মতো ঘটনায় বিশাল পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতির নজির তো আছেই। খনি খনন, তেল অনুসন্ধান, সয়াবিনের চাষ, নগরায়নের মতো কার্যাবলির প্রভাব পড়েছে আমাজনের ওপর। বনের মধ্য দিয়ে পথ নির্মাণের মাধ্যমে গভীর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে গাছ কেটে আনা হচ্ছে আজকাল।

তবে, বৃক্ষনিধনই আমাজনের পরিবর্তনের জন্য একমাত্র কারণ নয়। বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন আমাজন রেইনফরেস্টের ওপর প্রভাব ফেলে চলছে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আমাজনের বৃষ্টিপাতের মাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাস করে দিচ্ছে। দেখা দিচ্ছে খরা কিংবা ঘন ঘন দাবানল। যদি এভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধি চলতে থাকে; বেশির ভাগ বনভূমিই ধীরে ধীরে তৃণভূমিতে রূপান্তরিত হতে পারে। বিশেষভাবে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এই ঝুঁকি বেশি। সেই সাথে আছে মনুষ্য সৃষ্ট কার্বন ডাই অক্সাইড বৃদ্ধি।

আমাজন রক্ষার তদবির

২০০৪ সালের পর থেকে আমাজন রক্ষার জন্য বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু তৎপরতা নেওয়া হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে ব্রাজিল সরকার পৃথিবীর বৃহত্তম সংরক্ষিত এলাকা প্রতিষ্ঠা করে আমাজনকে কেন্দ্র করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গঠন, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নীরিক্ষা এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য অর্থনৈতিক ভর্তুকি প্রদানের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ী মালিকেরাও নিজেদের অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

অথচ বর্তমান সময়ের দাবানলের ঘটনা এবং সেই ক্ষেত্রে ব্রাজিল সরকারের অবস্থান বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক তৎপরতার প্রতি নিতান্ত ভ্রূক্ষেপহীনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে অনেকেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পেয়েছেন। আমাজনের ভেতরে বিচিত্র প্রাণী এবং গাছগুলোর ছাই মানুষের মনে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। তার সাথে আছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং আদিবাসী সংস্কৃতির বিপন্ন অবস্থা; যেগুলো বাঁচিয়ে রাখা গোটা মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য জরুরি।

আমাজনের আগুন তাক লাগিয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে


ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে উঠেছে পৃথিবীর ফুসফুস। শীঘ্রই কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে দেরিতে হলেও গোটা মানবসভ্যতাকে পস্তাতে হবে তার জন্য।

   

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গাঁ ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;