সরোজিনীর মহাত্মা গান্ধীকে ‘মিকি মাউস’ ডাকার ইতিহাস



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
গ্রাফিক : বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রাফিক : বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সরোজিনী নাইডু মাহাত্মা গান্ধীকে ‘মিকি মাউস’ বলে ডাকতেন। অর্থাৎ গান্ধীজির সঙ্গে সরোজিনীর ছিল গভীর অন্তরঙ্গতা। কিন্তু কী ছিল সেই অন্তরঙ্গতার অন্তর্সূত্র? ছিল হলো—তারা দুইজনই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের দুই মূল হোতা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রায়োগিকভাবে ভারতবর্ষের নারীদের মধ্যে সবচাইতে অগ্রবর্তী ভূমিকা রেখেছিলেন সরোজিনী নাইডু।

এই রেডিকেল সত্তার বাইরেও সরোজিনী নাইডুর অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন কবি। পৃথিবীবিখ্যাত তার কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে।

এই ফিচারটি লেখা হচ্ছে সরোজিনীর জীবন কিংবা পরিচয়কে উদ্দেশ্য করেই, তবে খুব সংক্ষিপ্তভাবে—

এক.
ছোটবেলা থেকেই সরোজিনী নাইডু ছিলেন অত্যন্ত রকম মেধার অধিকারী। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি ভাষা তিনি রপ্ত করে নিয়েছিলেন খুব অল্প বয়সে। বাংলা আর ইংরেজি ছাড়াও তিনি শিখেছিলেন ঊর্দু, ফারসি এবং তেলেগু ভাষা। মাত্র বারো বছর বয়সে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করার সময়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।

স্বভাবতই সরোজিনীকে নিয়ে তার বাবা অনেক স্বপ্ন দেখতেন। তার প্রধান স্বপ্ন ছিল, তিনি চাইতেন তার মেয়ে গণিতজ্ঞ বা বিজ্ঞানী হবেন। পক্ষান্তরে সরোজিনীর স্বপ্ন তার বাবার চিন্তা অনুযায়ী ছিল না। সেই বয়সেই তার মধ্যে সাহিত্যের আকুতি লক্ষ করা গিয়েছিল। অ্যালজেবরা করার খাতাতেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেছিলেন।

এরকমভাবে লিখতেই লিখতেই হঠাৎ একদিন দেখা গেল সরোজিনী নাইডু ১৩০০ লাইনের এক বিশাল কবিতা লিখে ফেলেছেন। ইংরেজি ভাষায়। কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘দ্য লেডি অব দ্য লেক’। সরোজিনীর বাবা কবিতাটি পড়ে বিস্মিত হয়ে পড়েছিলেন। তৎক্ষণাৎ তার চিন্তাও পাল্টে গিয়েছিল। গণিত কিংবা বিজ্ঞানের বিষয়ে ভাবনা বাদ দিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়েকে কবিতা এবং লেখালেখির বিষয়েই উৎসাহ দেবেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566386933772.jpg
◤ পারিবারিক মধ্যাহ্নভোজে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ও সরোজিনী নাইডু


পিতার উৎসাহ সরোজিনীকে গভীর শক্তি প্রদান করেছিল। সেইসূত্রেই, কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ফরাসি ভাষায় একটি নাটক রচনা করে ফেললেন, নাটকটির নাম ছিল ‘মাহের মুনির’। নাটকটি পড়ে তারা বাবা আবারও অভিভূত হয়ে পড়লেন এবং সেটি নিজের সহকর্মীকে পড়তে দিলেন। যাদের মধ্যে নিজাম নামক তার এক বন্ধুও ছিলেন, যিনি ১৫ বছর বয়সী একজন মেয়ের লেখা এই নাটক পড়ে চূড়ান্তরকমের অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনিই সরোজিনীকে ইংল্যান্ডে পড়তে পাঠানোর জন্য পরামর্শ দেন।

বাবার বন্ধু নিজামের পরামর্শের সূত্রেই সরোজিনী নাইডু ১৬ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান।

দুই.
তিনি প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কলেজের পড়াশোনা শেষে তিনি কেমব্রিজে পড়তে যান। আর কেমব্রিজেই তার সঙ্গে অনেক বিখ্যাত ইংলিশ কবি-সাহিত্যিকদের পরিচয় হয়।

সেইসব কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তার বিশেষ সখ্য হয়েছিল দুইজনের সঙ্গে, একজন ছিলেন আর্থার সিমন আর অন্যজন ছিলেন এডমন্ড গস। মূলত এডমন্ড গসই সরোজিনীকে এই পরামর্শ দেন, ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও তিনি যেন নিজের দেশকে এবং দেশের সংস্কৃতিকে অস্বীকার বা অগ্রাহ্য না করেন। এডমন্ড গসের এই পরামর্শ সরোজিনী গভীরভাবে গ্রহণ করেছিলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566387371429.jpg
◤ সরোজিনী নাইডুর ব্রিটিশ কবিবন্ধু এডমন্ড গস ◢


এই ভারতীয় প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করেই তিনি পরবর্তী সময়ে প্রচুর কবিতা লিখেছিলেন। যেসব দিয়ে তিনি তিনটি বইও বের করেন। বই তিনটি তৎকালীন ইংল্যান্ড এবং ভারত উভয় জায়গাতেই বিস্তর আলোড়ন তৈরি করেছিল।

ইংল্যান্ডে থাকাকালে সরোজিনী একজন ভারতীয় ডাক্তারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হন। সেই ডাক্তারের নাম ছিল গোবিন্দরাজুলু নাইডু। যেহেতু সরোজিনী ছিলেন ব্রাহ্মণ আর গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অব্রাহ্মণ, ফলত এই সম্পর্ক নিয়ে সরোজিনীর বাবার আপত্তি থাকবার কথা ছিল, কিন্তু সেরকম কিছু দেখা গেল না।

গোবিন্দের সঙ্গে সরোজিনীর যখন সম্পর্ক হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। আর যখন তার বিবাহ সম্প্ন হলো তখন বয়স ১৯ বছর, অর্থাৎ সরোজিনী পড়াশোনা শেষ করবার সঙ্গে-সঙ্গেই গোবিন্দের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন করে নিয়েছিলেন। তৎকালে অসবর্ণ বিবাহ নামের একটা বিষয় সমাজে নিষিদ্ধ ছিল। কাজেই কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সরোজিনীর সঙ্গে অব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে গোবিন্দের এই বিবাহ একটি সামাজিক রীতিবিরুদ্ধ ঘটনা ছিল।

সরোজিনী আর গোবিন্দের সংসারে চারজন সন্তান এসেছিলেন। জয়সুর, পদ্মজা, রণধীর, এবং লীলামণি। এদের মধ্যে পদ্মজা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়েছিলেন।

তিন.
পি বি শেলি নামের এক কবি ছিলেন সরোজিনী নাইডুর প্রিয়। যিনি শুধু কবিই ছিলেন না, ছিলেন একই সঙ্গে বাগ্নী বা বক্তাও। বলা যেতে পারে, পি বি শেলির এই প্রভাব সরোজিনীর মধ্যেও পড়েছিল। তার মধ্যেও বাগ্মিতা, বা রাজনৈতিক পক্ষালম্বন, বা সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাবার মতো বিষয়গুলো ধীরে ধীরে লক্ষ করা গিয়েছিল। সম্ভবত সরোজিনীই একমাত্র নারী, যিনি একাধারে ছিলেন কবি এবং রাজনীতিবিদ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566386876725.jpg
◤ সরোজিনী নাইডুর প্রিয় কবি ও ব্যক্তিত্ব পি বি শেলি ◢


সরোজিনীর সাহিত্যজীবনে ২৫ বছরের ব্যাপ্তি থাকলেও সেই তুলনায় তার বইয়ের সংখ্যা খুবই কম, মাত্র তিনটি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘দ্য গোল্ডেন থ্রেশল্ড’। বইটি ১৯০৫ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য বার্ড অব টাইম’, এটি প্রকাশ হয় ১৯১২ সালে। অন্য বইটির নাম ‘দ্য ব্রোকেন উইং’। এটির প্রকাশ-সন ১৯১৭। অবশ্য ‘দ্য ফেদার অব দ্য ডাউন বার্ডস অব টাইম’ নামেও তার একটি সংকলিত কবিতার বই রয়েছে।

সরোজিনী নাইডুই সেই বিরলজ বাঙালি কবি, যার সব রচনাই ছিল ইংরেজি ভাষাতে। আসলে নাইডুর খ্যাতির আরম্ভটুকু ইংরেজি ভাষার বদৌলতে এসেছিল, এরকম বলা যায়। ইংল্যান্ডে তার বইগুলোর একাধিক সংস্করণ সেই বার্তাই ধারণ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566386191820.jpg
◤ সরোজিনী নাইডুর বইয়ের প্রচ্ছদ ◢


সরোজিনীর বেশ কয়েকটি কবিতা বিপুলভাবে চর্চিত, বা প্রসিদ্ধ। এসবের মধ্যে রয়েছে ‘ওয়ান্ডারিং সং’, ‘ভিলেজ সং’, ‘ক্রাডেল সং’সহ আরো অনেক কবিতা। এই কবিতাগুলোই পরবর্তীকালে যথাক্রমে ‘চারণ’, পল্লিগীত’ বা ‘ঘুমাপাড়ানির গান’ নামে অনূদিত হয়ে হয়ে বাংলাভাষাভাষিদের কাছেও বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যারা সরোজিনীর কবিতা অনুবাদ করেছেন তাদের মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

চার.
সরোজিনীর এই কবি-পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের একজন প্রথম সারির নেত্রী। একজন সৎ ও সচেতন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি প্রখ্যাত ছিলেন। ১৯২৪ সালে সরোজিনী কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে সভানেত্রী হওয়ার বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন।

ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি কোনো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি দেশভাগের পরে উত্তর প্রদেশের গভর্নর পদেও নিযুক্ত হয়েছিলেন।

মূলত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সরোজিনী নাইডু রাজনীতির মাঠে এসেছিলেন, ১৯০৫ সালে। এই আন্দোলন ছিল স্বাধীনতারই আন্দোলন। এই সময় থেকেই মূলত তিনি অন্যান্য রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জওহরলাল নেহরু, মহাত্মা গান্ধী, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, মুহাম্মদ আলি জিন্না, অ্যানি বেসান্ত, রামস্বামী আইয়ার প্রমুখ।

পাঁচ.
১৯১৫ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত সরোজিনী নানান বিষয়ে বিপ্লবী বক্তৃতা প্রদান করছিলেন ভারতের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে। এই সময়েই তার সঙ্গে জওহারলাল নেহরুর পরিচয় ঘটে। এই পরিচয়ের সূত্রে তিনি চম্পাচরণে নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566386594363.jpg
◤ আন্দোলনের একই মঞ্চে নেহরুসহ সরোজিনী নাইডু ◢


১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন নামে একটি আইন করেছিল। এই আইনের মাধ্যমে সকল রাজদ্রোহমূলক লেখাপত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তখন মহাত্মা গান্ধী এই আইনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের আরম্ভ করলে সরোজিনী সেখানেও যোগদান করেন।

তিনি ভারতের নারীদের ভোটাধিকার অর্জনের দাবিসহ আরো অন্যান্য অনেকগুলো দাবি নিয়ে ইংল্যান্ডে যাত্রা করেন সেই বছরই। সেইসূত্রে ১৯২০ সালে ভারতের নারীরা ভোটাধিকার পেতে শুরু করে। প্রথমে পেয়েছিল কেরালার নারীরা, তারপরে একসময়ে বাংলার নারীরাও।

১৯২৮ সালে তিনি নিউইয়র্ক যান। সেসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরও সমালোচনা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফ্রিকান এবং ইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তিনি নিন্দা জানিয়েছিলেন। নিউইয়র্ক থেকে দেশে ফিরবার পরে তিনি কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হন।

ছয়.
১৯৩০ সালে কংগ্রেস কর্তৃক ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষিত হলে মে মাসে মহাত্মা গান্ধী গ্রেফতার হন। তার কয়দিন পরেই সরোজিনী নাইডুকেও গ্রেফতার করা হয়। ১৯৩১ সালের জানুয়ারি মাসে গান্ধীজি এবং তিনি একসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার অদ্যবধি পরে সেই বছরই তারা পুনরায়, এবার একত্রে গ্রেফতার হন। এই দফায় গান্ধীজি ১৯৩৩ সাল পযন্ত কারাগারে বন্দি থাকলেও সরোজিনী স্বাস্থ্যহানির কারণে আগেই মুক্তি পেয়েছিলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/21/1566386688688.jpg
◤ চার্লি চ্যাপলিন ও মহাত্মা গান্ধীর সাথে সরোজিনী নাইডু ◢


১৯৪২ সালের আক্টোবর মাসে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুনরায় তাকে এবং মহাত্মা গান্ধীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই দফায় তারা দুজন দীর্ঘ ২১ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। একসঙ্গে দীর্ঘ কারাবাসের কারণেই হয়তো রাজনীতিকে ছাপিয়ে এই দুইজনের মধ্যে একটি গভীর অন্তরঙ্গতা তৈরি হয়েছিল। যার সূত্রেই সরোজিনী নাইডু মহাত্মা গান্ধীকে ‘মিকি মাউস’ বলে ডাকতেন।

সাত.
সরোজিনী নাইডুর পৈত্রিক বাড়ি ছিল পূর্ববাংলার মুন্সীগঞ্জ জেলায়। ১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি ভারতের হায়দারাবাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম ছিল অঘোরনা চট্টোপাধ্যায় আর মায়ের নাম ছিল বরদাসুন্দরী দেবী। বাবা ছিলেন বিজ্ঞানী, দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ, আর মা ছিলেন কবি।

সরোজিনীরা ছিলেন আট ভাইবোন। তার এক ভাই বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতাসংগ্রামী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন বার্লিন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরবর্তী সময়ে কমিউনিজমে প্রভাবিত হয়ে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

অপর আরেক ভাই ছিলেন নাট্যকার ও অভিনেতা। যার নাম ছিল, হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। অর্থাৎ বুঝতে পারা যায়, পারিবারিকভাবে সরোজিনীরা ছিলেন বিত্তশালী, তথাপি শিক্ষাদীক্ষা এবং জ্ঞানচিন্তার বিষয়েও প্রগাঢ়ভাবে উৎপাদনশীল।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সরোজিনী নাইডুকে উত্তর প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। ১৯৪৯ সালে সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

   

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা



সহিদুল আলম স্বপন, লেখক জেনেভা সুইজারল্যান্ড
ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

ওই আকাশে লুকিয়ে আছে মা

  • Font increase
  • Font Decrease

তো ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকের কথা, তখন সুইস কোম্পনী ফাদসা এস এ তে চাকরী করি। হঠাৎ একদিন কোম্পানীর মালিক মশিউয়্যু মিশেল লাসের (বাংলায় জনাব মিশেল ল্যাসার) তার অফিসে ডেকে পাঠালেন।আমিতো ভয়ে দিশেহারা, ভাবলাম ফ্রেন্স ভাষা না জানার কারণে আমার মনে হয় এবার চাকরীটাই গেল। বলে রাখা ভালো, সুইজারল্যান্ডের চারটি সরকারী ভাষার(ফরাসী, সুইস জার্মান, ইতালীয়ান এবং রোমন্স - রোমান নয়)মাঝে জেনেভা ফরাসী ভাষাভাষী।নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটা ভ্যানিশিং ক্রিমের পাবলিসিটি ছিল-ম্যানোলা সিবোঁ ভ্যানিশিং ক্রিম নিয়ে এলো ফরাসী সৌরভ। পরে জেনেছি সিবোঁ ফরাসী শব্দ যার অর্থ খুব ভালো (হয়তো বাংলায় বুঝাতে চেয়েছেন সুগন্ধময়)-আর এটাই শুধু আমার ফরাসী ভাষার ভান্ডার।

যাই হোক, ভয়ে ভয়ে তাঁর খাস কামরায় হাজির হলাম।দেখি কামরায় সোফার এককোনে প্যাট্রিক(আমার সুইস সহকর্মী আমার চেয়ে বছর দুয়েক এর ছোট হবে)আর লরেতা মার্টিনি এইচ আর হেড বসে আছে। বুঝতে আর দেরী হলোনা, এখনি বস বলবেন ইউ আর ফায়ার এবং প্যাট্রিককে তোমার সব কাজগুলো বুঝিয়ে দাও।

কোথায় ফায়ার তা না বলে মশিউয়্যু লাসের বললেন মাই ডিয়ার, আগামী সপ্তাহে প্যাট্রিক আর আলম (আমি) তোমরা দুজনে রটারডাম যাচ্ছো ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং এর জন্য। আলম তুমি কাল ভোরে বার্ণ(সুইজারল্যান্ডের রাজধানী)যাবে নেদারল্যান্ডের ভিসা করাতে। লরেতা তোমাকে সব বুঝিয়ে দেবে। বলে রাখা ভালো তখনো আমি সুইস নাগরিক হয়ে উঠিনি, আর মশিউয়্যু মিশেল লাসের ই আমাকে সুইজারল্যান্ডে স্হায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

রটারডাম উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর( আমস্টারডামের পরেই)।এটি ইউরোপের বৃহত্তম ও বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর।নেদারল্যান্ডসের দক্ষিণ হল্যান্ড প্রদেশে, উত্তর সাগরের তীরে, রাইন নদীর মোহনায় অবস্থিত এই বন্দর শহরকে প্রায়শই "ইউরোপের প্রবেশদ্বার" নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

তো যেই কথা সেই কাজ, সমস্ত আনুষ্ঠিকতা শেষে সপ্তাহান্তে কেএলএম রয়্যাল ডাচ এয়ারলাইন্সে চেপে জেনেভা থেকে আমস্টারডামের শিফল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছলাম। আমস্টারডাম শিফল বিমানবন্দর থেকে ট্রেনে রটারডাম সেন্ট্রাল ট্রেন ষ্টেশনে এসে নামলাম। সেখান থেকে টেক্সীকরে সরাসরি রটারডাম ম্যারিয়ট হোটেলে।রটারডাম স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (আরএসএম) ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় বিসনেস স্কুলগুলির মধ্যে একটি, এখানেই আমাদের কোর্স। বাংলাদেশ আর নেদারল্যান্ডসের মাঝে চার পাঁচ ঘন্টার পার্থক্য। প্রতিদিন বাবা -মা সাথে কথা হয়। বাবা আমার জ্ঞানের পাগল। ৬০ বছর বয়সে উনি তাঁর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কিন্তু বাবা মা দুজনের কেউ মানতে পারছিলেন না আমি বিদেশে থাকি। দেশে থাকতে মা এর আহাজারীতে বাবা বিভিন্ন কায়দায় বাংলাদেশ মিলিাটারী একাডেমী থেকে আমায় ছাড়িয়ে এনেছিলেন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগের মা কে ফোন করে ঘুমাই। বরাবরের মতে ১৮ ই ফেব্রুয়ারি রাতে মার সাথে কথা বলছি, মা আমার প্রাইমেরীর গন্ডি পেরুনো কিন্তু শিক্ষার প্রতি তাঁর পরম শ্রদ্ধা। গান-নাটক সংস্কৃতির পাগল আমি। মা আমার প্রতিদিন ই জিজ্ঞেস করেন কেমন চলছে গান-বাজনা। অনেক গুলো নূতন গানের ক্যাসেট কিনে রেখেছেন তিনি, সুইজারল্যান্ডে ফিরলেই ডাকযোগে পাঠিয়ে দিবেন, আমার প্রিয় কুমিল্লার খদ্দরের হাউয়াই শার্টসহ। আরো কত কথা, শেষ হয়েও হয়না শেষ। মায়ের প্রতিটি কথায় সেকি এক অনুপ্রেরণা। আজ বাংলাদেশে শেষ রোজা। পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার রোজার ঈদ।

পরদিন ক্লাস নেই, ভেবে রেখেছি সকালে ব্রেকফাস্ট না করে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে ফ্রেস হয়ে তারপর সারাদিন ঘুরে বেড়াবো, দেখবো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী বন্দর, রটারডাম চিড়িয়াখানা, রিমাস্টারড" ডিজিটাল আর্ট অডিওভিজ্যুয়াল, ইউরোমাস্ট টাওয়ার, কিউব হাউস ইত্যাদি আর রাতে যাবে বাইয়্যাবীচ ক্লাবে নাচতে।

হোটেল রুমের সাইড টেবিলে রাখা ফোনটা সাত সকালেই আজ চিৎকার করে কান্না করে চলেছে, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং……। ফোনটা যেন পাগল হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়েই মিনিট খানেক পর আঁধো বোজা চোখে ফোনটা কানের কাছে নিয়ে বললাম, হোয়াট দ্যা হেল প্যাট্রিক, লেট মি গেট সাম স্লিপ । ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে ভেসে এলো ভাইয়া আমি ফরিদ(আমার ছোট বোন পান্নার বর), এক নি:শ্বাসে বলে চলছেন, ভাইয়া আমরা এই মাত্র কবরস্তান থেকে আসলাম, সব কিছুই ঠিক ছিল, দাফন- কাফন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, কেঁদে আর কি করবেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, এইযে আব্বার সাথে কথা বলেন, আম্মাতো কাউকে কষ্ট দেননি, আল্লাহর কাছে আম্মার রুহের মাগফিরাত কামনা করে নামাজ পড়ুন যেন উনাকে আল্লাহ জান্নাতে স্হান করে দেন।চোখের জলে বালিশ ভিজেঁ যাচ্ছে আমি আজো প্রতিনিয়ত গেয়ে চলছি - " সবাই বলে, "ওই আকাশে লুকিয়ে আছে" "খুঁজে দেখ, পাবে দূর নক্ষত্রমাঝে"রাতের তারা, আমায় কি তুই বলতে পারিস কোথায় আছে, কেমন আছে মা? ভোরের তারা, রাতের তারা, মা-কে জানিয়ে দিস অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না।

;

১২ মে: আন্তর্জাতিক মা দিবস, মায়েদের ত্যাগের স্বীকৃতির দিন



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মা পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবী শব্দ। এটি কেবল একটি ডাক নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারও আবেগ, সুখ-দুঃখ, ব্যথা, আনন্দ, আকাঙ্ক্ষা, অভিযোগ- না জানি আরো কত কত অনুভূতি!

হাদিসে বলা আছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সনাতন ধর্মের পুরাণে লিখিত রয়েছে- জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী অর্থাৎ মা এবং জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এমনকী অন্যান্য ধর্মগ্রন্থেও জন্মদাত্রী মায়ের প্রতি অশেষ ভক্তি, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও সম্মান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

অশেষ কষ্ট সহ্য করে আমাদের লালন-পালন করেন জন্মদাত্রী মা। তাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে উদযাপন করা হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই বিশেষ দিনে মা এবং মাতৃসমতুল্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সারাবিশ্বের অনেক দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার উদযাপিত হয়, আন্তর্জাতিক মা দিবস। এই দিনটি ‘মাদারিং সানডে’ নামেও পরিচিত। এ বছর ১২ মে পড়েছে মা দিবস।

মা দিবসের আদি ইতিহাস
আন্তর্জাতিক মা দিবসের ইতিহাস বিষয়ে উইকিপিডিয়ায় লেখা হয়েছে, মা দিবস বা মাতৃ দিবস হলো একটি সম্মান প্রদর্শনের অনুষ্ঠান যা, মায়ের সম্মানে এবং মাতৃত্ব, মায়ের প্রতি ঋণ হিসেবে এবং সমাজে মায়েদের ভূমিকার জন্য উদযাপন করা হয়। বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসে উদ্‌যাপন করা হয়।

বিশ্বের সবখানে মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেখা যায়। এগুলির অনেকই প্রাচীন উৎসবের সাক্ষ্য। যেমন- সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উৎসব, যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান ‘মাদারিং সানডে’ অনুষ্ঠানের মতোই।

একটি গোষ্ঠীর মতে, এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রিসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশে পালন করা হতো। এশিয়া মাইনরে মহাবিষুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি উদযাপন করা হতো।

প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল। সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডে-তে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে অনেক দিন আগে থেকেই বহু আচারানুষ্ঠান ছিল, যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রোববারকে আলাদা করে রাখা হতো।

মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, এটিকে বলা হয়, ‘লেতারে সানডে’ যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রোববার পালন করা হতো ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও প্রধান গির্জার সম্মানে।

প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পৃথিবীর সব মায়ের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি জানানোর দিন, গ্রাফিকস- সংগৃহীত

প্রথানুযায়ী, দিনটিতে প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়ামোছার মতো মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে উদযাপন করা হতো।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রোক্লেমেশন’ বা ‘মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস উদযাপনের গোড়ার দিকের চেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত ‘হোই’-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী উদ্যোগ। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব ও ভূমিকা আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

ঘোষণা
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস ‘মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেন।

জানা যায়, ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী ছিলেন। অ্যান ছিলেন খুবই ধর্মপ্রাণ এবং নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়েপড়া নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতেন। নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তিনি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতেন।
অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। তার নাম ছিল- আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস।

একদিন ছোট মেয়ের সামনেই অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, আমি প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনো মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ, মায়েরা রোজ মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। একটি দিন উৎসর্গ করা তাদের অধিকার।

মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় আনার। অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তিনি। তার পর থেকে মায়েদের প্রতি সম্মানে উদযাপিত হয়ে আসছে, আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে।

১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরের মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আন্তর্জাতিক মা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।

;