শিবনারায়ণ চন্দরপল : আনসাং হিরো



সাফাত জামিল, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স

চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় ২৫ বছর আগের কথা। জর্জটাউনে মার্চের এক সকালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনিংয়ে ১১৩তম টেস্ট খেলতে নামা ডেসমন্ড হেইন্সের সাথে রয়েছেন ৭৩ টেস্ট খেলে ফেলা রিচি রিচার্ডসন। ওপেনিং বোলার—কার্টলি অ্যামব্রোস আর কোর্টনি ওয়ালশ। মিডল অর্ডারে মাত্র ২০ টেস্ট খেলে সত্তরোর্ধ্ব ব্যাটিং গড়ের জিমি অ্যাডামসের সাথে আছেন কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা—গ্যারি সোবার্সের রেকর্ড টেস্ট স্কোর যার হাতছোঁয়া দূরত্বে।

এত এত ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট গডের মাঝে আর আছেন অভিষেক ম্যাচে নামা ১৯ বছর বয়সী শিবনারায়ণ চন্দরপল—লিকলিকে গড়নের মধ্যে বেশ বেমানান যার জার্সি ও প্যাড। দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো কোচ ফিল সিমন্সের বদলি হিসেবে। কারো কারো মতে, গায়ানিজদের সন্তুষ্ট করতেই নাকি নেওয়া হয়েছিল অমন ‘রাজনৈতিক’ সিদ্ধান্ত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284611732.jpg
অভিষেক টেস্টেই চন্দরপল পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি


মজার ব্যাপার হলো, ব্যাটিং স্কিলের চেয়ে তাঁর লেগ-ব্রেক বোলিংই প্রাধান্য পেয়েছিল নির্বাচকদের কাছে। প্রথম ইনিংসে ১৬ ওভার বল করে উইকেটশূন্য চন্দরপল পরবর্তীতে ছয় নম্বরে নেমে অ্যালান ইগলসডেনের বলে পয়েন্টের পেছনে দুর্দান্ত এক কাটে হাঁকান প্রথম বাউন্ডারি। সেদিন ইংল্যান্ডের শক্ত বোলিং অ্যাটাক দুমড়ে-মুচড়ে তরুণ চন্দরপল তুলে নেন নিজের ৬৬ টেস্ট ফিফটির প্রথমটি।

টেন্ডুলকার ও জয়সুরিয়ার পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে অবসরের পথে পা দেওয়া চন্দরপল গড়ে গেছেন রেকর্ডের পর রেকর্ড। ইন্দো-ক্যারিবিয়ান হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলা একমাত্র উইন্ডিজ ক্রিকেটার শিবনারায়ণ এই ফরম্যাটে করেছেন এগারো হাজারেরও বেশি রান, সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় রয়েছেন আট নম্বরে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284663316.jpg
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজারেরও বেশি রানের মালিক শিবনারায়ণ


ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ব্রায়ান লারার ছায়ায় কাটানো চন্দরপল নিজের ১৯তম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দেখা পান প্রথম সেঞ্চুরির। এর ঠিক এক মাস পর সেই ভারতের বিপক্ষেই পেয়ে যান প্রতীক্ষিত ওয়ানডে সেঞ্চুরিটিও।

ধীরগতির ব্যাটিংই ছিল তাঁর মূল স্টাইল। তাই টেস্টের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক যে চন্দরপল, তা জেনে যে কেউই অবাক হবেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৭ বলের সেই বিস্ফোরক ইনিংসের পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪১৮ রানের রেকর্ড চেজে করেছিলেন ১০৪। ২০০৫ সালে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে পান ডবল সেঞ্চুরির স্বাদ। যদিও সেনাপতির গুরুভার ঠিকঠাক বহন করতে না পেরে পরের বছরই ইস্তফা দেন শিবনারায়ণ। তাতে ফলও মিলল হাতেনাতে—ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অপরাজিত দুই সেঞ্চুরিতে স্বরূপে ফেরেন এই বাঁহাতি গ্রেট।

জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় টেস্ট ক্রিকেট খেলেই কাটিয়ে দেওয়া চন্দরপল নিজের জাত চিনিয়েছেন সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও। তাঁর অনবদ্য পারফরমেন্সে ভর করে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে উইন্ডিজ দল। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হয়েও এ টুর্নামেন্টের ২০০৬ সালের আসরে ওপেনিংয়ে নামেন চন্দরপল, দলকে টেনে নেন ফাইনাল পর্যন্ত।

তবে ক্রিকেটের আদি সংস্করণের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে দুহাত ভরে সাফল্য এনে দিয়েছে ২০০৮ সাল। সেবার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ টেস্টে চন্দরপল তোলেন ৪৪২ রান, অর্জন করেন উইজডেন বর্ষসেরা এবং আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মুকুট।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই উইন্ডিজ ক্রিকেটের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি চন্দরপলকে পরিণত করেছে হাল না ছাড়া এক নাবিকে। একই কথা প্রযোজ্য ব্রায়ান লারার ক্ষেত্রেও, তবে একক আধিপত্য সবসময়ই তাঁকে রেখেছে অন্যদের থেকে এক ধাপ উপরে। কিন্তু শিব তাঁর প্রতিভা দিয়ে অন্যান্যদের গড়ে তুলেছেন প্রায় পুরোটা সময়। লারা অবসরে যান ২০০৬ সালে, ওয়ালশ ২০০১, অ্যামব্রোস ২০০০, রিচার্ডসন ১৯৯৫ আর হেইন্স ১৯৯৪ সালে। অন্যদিকে চন্দরপল তাঁর অভিষেকের পর থেকে খেলেছেন প্রায় ১০০ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের সাথে। এমনকি তাঁদের মধ্য থেকে সেরাদের সেরা ক্রিস গেইল, রামনারেশ সারওয়ানরা এসে চলেও গেছেন। অন্যদেরও সঙ্গ পেয়েছেন খুব কম সময়ের জন্য, যাদের মধ্যে ৪২ জন খেলেছেন মাত্র পাঁচ বা তার চেয়েও কম টেস্ট।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284728477.jpg
২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের উচ্ছ্বাস


চন্দরপল নিজেকে রীতিমতো এক সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। হার মেনে নেওয়ার ব্যাপারটি ছিল তার ডিকশনারির বাইরে। বলা বাহুল্য, ইতিহাসের অন্য যে কোনো ব্যাটসম্যানের থেকে সবচেয়ে বেশিবার অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা তাঁরই দখলে। অনেকের মতে, তাঁর ঘুমপাড়ানি ব্যাটিং বড়ই নিস্প্রভ, নিস্তেজ। কেউ কেউ তাঁকে স্বার্থপর ভাবতেও দ্বিধা করেন না। তবে চন্দরপল ক্যারিয়ারজুড়ে করে গেছেন তাঁর কাজটিই। দিগভ্রান্ত ব্যাটিংয়ের দিনে ক্রিজে তাঁর উপস্থিতি সবসময় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বশেষ ভরসা আর ম্যাচ বাঁচানোর সর্বশ্রেষ্ঠ সুযোগ। হেরে যাওয়া ম্যাচে তাঁর থেকে বেশি রান নেই অন্য আর কোনো ব্যাটসম্যানের।

খেলোয়াড়দের কারো শরীরজুড়ে থাকে ট্যাটুর পসরা, কান ফুটিয়ে দুলও পরেন কেউ কেউ। আর শিবের ক্যারিয়ারজুড়ে আলোচনায় ছিল তার দুই চোখের নিচের কালো দাগ। হোক পুরো কালো বর্ণ অথবা নিজ দেশের পতাকা—শুরু থেকেই প্রতিটি ম্যাচে তাঁকে দেখা গেছে এই রূপেই। বিশেষ কোনো স্টাইল নয়, বরং রোদের প্রতিফলন থেকে বাঁচতেই এমন ‘প্যাচ’ ব্যবহার করতেন চন্দরপল। তবে এই প্যাচ ঠিক কতটুকু কার্যকরী, সেটির সপক্ষে এখনো কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284781042.jpg
রোদের প্রতিফলন থেকে বাঁচতে চোখের নিচে ‘প্যাচ’ ব্যবহার করতেন চন্দরপল


দৃষ্টিনন্দন শটের আহামরি কোনো প্রদর্শনী তেমন দেখা যায়নি তাঁর সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারে। উল্টো দর্শনীয় ছিল ক্রিজে তাঁর বিচিত্র এক কাঁকড়ারূপী ব্যাটিং স্ট্যান্স, যা নিকট অতীতে দেখা যায়নি অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের মধ্যে। চন্দরপলের ভাষ্যমতে, বোলারের মুখোমুখি প্রায় ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দাঁড়িয়ে তিনি পেতেন দুই চোখের পূর্ণ দর্শন, সাথে দারুণ ভারসাম্য। বন্ধু আর প্রতিবেশিদের বোলিং মোকাবেলায় গায়ানার ছোট্ট গ্রামে কৈশোরেই শিবনারায়ণ আয়ত্ত করেন এই টেকনিক।

তা ঠিক কতটা কার্যকরী ছিল এই স্ট্যান্স? শুরুর দিকে ব্রেট লি’র মতো ফাস্ট বোলাররা ধন্দে পড়ে যেতেন যে ব্যাটসম্যান চন্দরপল আদৌ বল মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলেন কিনা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শিব দেখিয়ে দিয়েছেন যে প্রথাগত মডেল বা ধরন অনুসরণ না করেও কিভাবে সর্বোচ্চ স্তরের সফলতা অর্জন করা সম্ভব। কখনো মারমুখী, কখনো কচ্ছপগতি—ক্যারিয়ারের প্রারম্ভে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে ব্যাটিং স্টাইলের ভিন্নতা তাঁকে সবসময়ই আলাদা রেখেছে অন্যদের থেকে। তিন-তিনবার ১০০০ মিনিটেরও বেশি সময় অপরাজিত থাকার এবং সবচেয়ে বেশি ১৭টি অপরাজিত টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড তো আর এমনি এমনি গড়েননি!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284840669.jpg
চন্দরপলের ট্রেডমার্ক স্ট্যান্স


উইন্ডিজ ক্রিকেটের ধৈর্যের প্রতিমূর্তি শিবনারায়ণ চন্দরপলের ত্রিশ টেস্ট সেঞ্চুরির শেষটি আসে বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১৪ সালে। তার ঠিক দুই বছর পরই ৪১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান আগেই উইন্ডিজ বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়া চন্দরপল।

৭৭ ফার্স্ট-ক্লাস সেঞ্চুরির মালিক চন্দরপল পরবর্তীতে তিন মৌসুম সফলতার সাথে কলপ্যাক চুক্তিতে খেলেছেন ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব ল্যাঙ্কাশায়ারে। আর নিজ শহর গায়ানার হয়ে ছেলে ত্যাগনারায়ণ চন্দরপলের সঙ্গে এখনো খেলে যাচ্ছেন ফার্স্ট-ক্লাস ক্রিকেট। বল-ব্যাটের লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিশ বছরেরও বেশি সময় কাটানো শিবের ধার যে এতটুকুও কমেনি, তার প্রমাণ আরো একবার পাওয়া গেছে চলতি বছরের এপ্রিলেই। সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ২০০ রানের দলীয় স্কোরই যেখানে বিশাল ব্যাপার, সেখানে ২৫টি চার আর ১৩ ছক্কায় আইসিসির স্বীকৃতিহীন ঘরোয়া এক টি-টুয়েন্টি লীগে চন্দরপল একাই খেলেছেন ২১০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/20/1566284885858.jpg
ছেলে ত্যাগনারায়ণের সাথে শিব


চটকদার চার-ছক্কার পসরা যদি হয়ে থাকে উইন্ডিজ ক্রিকেট সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে শিবনারায়ণ চন্দরপল সেখানে এমন এক যুগের ধারক ও বাহক—সংকটের সময় যেখানে দলীয় মনোবলে নিহিত ছিল সফলতা। এমন একজন ব্যাটসম্যানের গুণগান গাওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট শব্দমালা খুঁজতে তাই হিমশিম খেতে হয় ক্রিকেটবোদ্ধাদের। ক্যারিয়ারের সোনালি সময়ে শিবনারায়ণ যদি পেতেন চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো কোনো আসর, নিজের শৈল্পিক তুলিতে নিশ্চিতভাবেই রাঙাতেন দলীয় অর্জনের পাল্লা। কেননা ব্যক্তিগত রেকর্ড বা স্বতন্ত্র উজ্জ্বলতা নয়, বরং গোটা ক্যারিয়ারে দলীয় সাফল্যকেই সবকিছুর উপরে স্থান দিয়েছেন কদিন আগেই ৪৫-এ পা রাখা এই ব্যাটিং জিনিয়াস।

অভিবাদন, হে আনসাং হিরো!

   

বিখ্যাত মিমের ভাইরাল কুকুর কাবোসু আর বেঁচে নেই



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন মানুষ জুড়তে শুরু করলো ইন্টারনেটে নতুন অনেক নতুন উদ্ভাবনার দেখা মিললো। এমন এক ব্যাপার হলো মিম। বর্তমান সময়ে সেন্স অব হিউমারের (রসবোধ) এক অন্যতম মাধ্যম এই মিম। বিশেষত কোনো ছবি ব্যবহার করে তাতে হাস্যরসাত্মক কিছু জুড়ে দিয়ে এইসব মিমগুলো বানানো হয়।

২০১৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়। পরবর্তী সময়ে যা একটি বিখ্যাত ‘মিম ম্যাটেরিয়াল’-এ পরিণত হয়। কমলা-সোনালী এবং সাদা রঙের সম্বনয়ে বাহারি লোমের এই কুকুরটির নাম কাবোসু। কাবোসুর বয়স ১৯ বছর।

দুর্ভাগ্যবশত কুকুরটি আর বেঁচে নেই। ২৪ মে (শুক্রবার) দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত থাকার পর অবশেষে দেহ ত্যাগ করে কুকুরটি। কুকুরটির মালিক আতসুকো সাতো (৬২) জাপানের চিবা প্রিফেকচারের সাকুরা শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক।শুক্রবার তার প্রকাশিত ব্লগে একটি দুঃখের কবিতা আবৃত্তির পর তিনি এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

১৯ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ২৬ মে রবিবার কাবোসুর স্মরণে একটি স্মরণ সভার আয়োজনও করা হবে। কুকুরটির মারা যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলে দুঃখ প্রকাশ করছে।

২০২২ সালে ক্রোানক লিম্ফোমা লিউকুমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সেই থেকেই কাবোসুর চিকিৎসা চলছিল। তবে দুঃখের বিষয়, সে আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলো না।

কাবোসুর ত্যাড়া চোখে দৃষ্টির একটি ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এটি ইন্টারনেটে সবচেয়ে আইকনিক এবং স্বীকৃত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি ক্রিপ্টো কারেন্সির দুনিয়াতেও তার নাম ছিল।

;

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;

মহামতি সিদ্ধার্থ গৌতম



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ধর্মং শরণং গচ্ছামি।

সিদ্ধার্থ গৌতম খৃষ্টপূর্ব ৫৬৪সালে(এই সাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে) কপিলাবস্তুর লুম্বিনীতে (বর্তমানে নেপালের অন্তর্গত) শাক্য রাজা শুদ্ধোধন এর প্রাসাদে তাঁর মহিষী মায়া দেবীর ঔরষে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।

তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। রাজকার্য তাঁকে আকর্ষণ করতো না। জীবনের গূঢ় রহস্য নিয়ে তিনি চিন্তা করতেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংসারে কর্মই প্রধান। বাকি সবই অনিত্য। তিনি ভাবতেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। যৌবনের এক পর্যায়ে প্রাসাদে মাতা, পিতা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে রেখে এক রাতে তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রহণ করলেন শ্রমণের জীবন।

একসময় তিনি গয়ার নিকট উরুবিল্ব (বর্তমানে ভারতের বিহারের বৌদ্ধগয়া) গ্রামে এক বৃক্ষতলে মোক্ষলাভের উপায় ভাবতে জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে ধ্যান করতে বসেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত অবস্থায় এক বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি আলোকপ্রাপ্ত হন। তিনি লাভ করলেন দিব্যজ্ঞান। এই জ্ঞানই হলো অজ্ঞানতা ও অশিক্ষা, লোভ এবং আকাঙ্খা, রোগ ও দুঃখভোগ এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। সেই মুক্তিলাভের উপায় হলো জীবন যাপনে শুদ্ধাচার।

তাঁর আশি বছরের জীবনের বাকি অংশ তিনি কাটালেন তাঁর মোক্ষলাভের সূত্র এবং লোভ, হিংসা-দ্বেষহীন পরোপকারের জীবন ধারণের জন্য শিষ্য এবং শিষ্যদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে। বারানসীর অদূরে সারনাথে প্রথম পাঁচজনকে তিনি শিষ্যত্বে বরণ করেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বর্ধিত হতে থাকে এবং প্রচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় তাঁর এই প্রচার।প্রথমে গাঙ্গেয় অববাহিকাতে চলে এই প্রচারাভিযান। পরে তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এইভাবে শান্তির অমোঘ বাণী প্রচারে বাকি জীবন কাটিয়ে তিনি যখন বুঝলেন তাঁর ধরাধাম ত্যাগের সময় হয়েছে, তখন তিনি তাঁর প্রচার সাথী শিষ্যদের উদ্দেশ্যে শেষ দেশনা প্রদান করেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন যে তিনি তাঁদের পথের দিশা দেখিয়ে গেলেন মাত্র। মানুষ মরণশীল।মানব জীবনে দুঃখ,কষ্ট জরা,ব্যাধি অবশ্যম্ভাবী।তাই জীবদ্দশায় উচিৎ সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টির সকল জীবের কল্যাণসাধন করা।তাঁদেরকে নিজের আত্মাকে আলোকিত করে নিজেকেই আলোকপ্রাপ্ত হতে হবে।

মল্ল রাজত্বভুক্ত কুশিনগরে তিনি মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। কি আশ্চর্য! সেই দিনটিও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই তিন বিশেষ দিনের সমষ্টিকে ভেসাক ডে হিসাবে পালন করা হয়। ভারত থেকে তিব্বত হয়ে চীন, জাপান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম একসময় ছড়িয়ে পড়ে। যার বিপুল প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

শাক্যমুণি গৌতমবুদ্ধর প্রধানতম শিক্ষা ও প্রার্থনা হলো জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক। সিদ্ধার্থ গৌতমের ধর্ম গ্রহণ করে সম্রাট অশোক তা তাঁর রাজত্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন। সম্রাট অশোক লুম্বিনীতে তীর্থভ্রমণ করাকালীন একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। সেই স্তম্ভে ব্রাহ্মী লিপিতে শাক্যমুনি বুদ্ধ কথাটি পাওয়া যায়। এর অর্থ করা যায় শাক্যদের মধ্যে তপস্বী ও আলোকপ্রাপ্ত।

মহামতি বুদ্ধের বাণী প্রথম দিকে ছিল শ্রুতি নির্ভর। পরবর্তীতে তা ভিনায়া বা প্রচারকদের (বর্তমানকালের শ্রমন বা ভান্তে) জন্য প্রতিপালনীয় বিধান ও সুত্ত পিতাকা বা বুদ্ধদেবের উপদেশসমূহ তাঁর শিক্ষা হিসাবে লিপিবদ্ধকরণ করা হয়। আরও পরে তাঁর অনুসারীরা অভিধর্ম, জাতক কাহিনী, মহাযান সূত্র ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার মধ্যে জাতক কাহিনীতে সিদ্ধার্থ গৌতমের পূর্ববর্তী জন্মসমূহের কথা লিপিবদ্ধ আছে। আলোকপ্রাপ্ত হয়ে পুনর্জন্ম থেকে মহামুক্তির আগে তিনি পূর্ব জন্মসমূহের কথা স্মরণ করতে পেরেছিলেন।বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আদিকালে পালি ভাষায় লিখিত হয়েছিল।

জ্ঞান অন্বেষণকে বৌদ্ধ ধর্ম সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ যুগেই পৃথিবীর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিচিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। আমরা গর্ব বোধ করতে পারি যে আমাদের মাটির সন্তান অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ ধর্মকে তিব্বতে প্রচারে প্রধানতম ভূমিকা রাখেন।তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম রাজধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও সেখান থেকে চীন,কোরিয়া,জাপান সহ এশিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভারতবর্ষের বিশাল এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রাবল্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।সম্রাট অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা এই ধর্মকে সিংহল দ্বীপে(বর্তমান শ্রীলঙ্কা) প্রসারিত করেন।আজও পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা বিভিন্ন ধারায় তাঁদের মহান শান্তির ধর্মকে পালন ও সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;