ডিজিটাল মার্কেটিং-১

ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং : ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভবিষ্যৎ



তৌহিদ শরীফ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

ডিজিটাল মার্কেটিং এখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম

  • Font increase
  • Font Decrease

“Future of Future Advertising”
প্রথমে খুব সংক্ষেপে বলে নেব কেন ডিজিটাল মার্কেটিং এখন আর কোনো অপশন বা ফিউচার নয় বরং বর্তমানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং ইফেক্টিভ মার্কেটিং প্লাটফর্ম। তারপর আসব মূল টপিক্স, “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

বিশ্বজুড়ে চলছে ইন্টারনেটের জোয়ার। দেশে শুধুমাত্র গেল এক বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ কোটি। তাহলে ভাবুন দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত?


জ্বি, প্রায় ১০ কোটির কাছাকাছি। কিভাবে হলো এই বিস্ফোরণ? সহজ চোখে দেখলে— 


আর আরেকটু ঘেঁটে দেখলে হয়তো দেখতে পাবেন এই ইন্টারনেট জোয়ার আর অনুকূল স্রোতের হাওয়া আসছে কোন দিক থেকে।

১। বাংলাদেশকে ডিজিটালি ক্ষমতায়িত সমাজ ও অর্থনীতিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।
২। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল, হাই টেক পার্ক ইত্যাদি অবকাঠামো দুনিয়াটাকে আক্ষরিক অর্থে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসছে। ছোট শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। ভিডিওটি দেখলে অবাক হবেন মাস্ট—

৩। সরকার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে নতুন স্টার্টআপ-আইডিয়া, উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তাদের ওপর। এরাই তৈরি হচ্ছে ফিউচার বিগ জায়ান্ট কোম্পানি হিসেবে। সেখানে দেখা দিচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রয়োজনীয়তা। তারা এমন লোকদের সন্ধান করছেন যারা তাদের প্রয়োজন অনুসারে ডজিটিাল মার্কেটিং কৌশল তৈরি করতে এবং প্রয়োগ করতে পারেন।

৪। ইন্টারনেট অব থিংস—ব্যক্তিগত ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস যেমন স্মার্ট গাড়ি, স্মার্ট গৃহস্থালি সরঞ্জামাদি, স্মার্ট হোম ইত্যাদি বাংলাদেশের জন্য তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও খুব শীঘ্রই তা প্রচলিত হবে। এ জাতীয় ডিভাইসগুলোর উত্থান ডিজিটাল মার্কেটিংকে আরো আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং করবে সাথে তৈরি করবে নতুন অনেক সম্ভাবনাময় পথ।

সব মিলিয়ে যদি এক কথায় বলতে চাই— “Digital Bangladesh—Smart Ecosystem for Smart Marketplace”

মানে যেখানে সরকার নিজেই তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেই সুযোগ কেন হাতছাড়া করব?

এবার বলি ডিজিটাল মার্কেটিং কেন সবচেয়ে বেশি ইফেক্টিভ ও প্রফিটেবল :
১। প্রেস অ্যাড অথবা টেলিভিশনে মার্কেটিংয়ে খরচের তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং আরো কম ব্যয়বহুল ও সর্বোচ্চ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট এবং কনভার্সন রেট।
২। এখানে সবকিছুর ওপর নজরদারি করা যায়। যেসব চ্যানেল বা কৌশল অকার্যকর বা কম কার্যকর দেখা দেবে সেখানে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে ফলপ্রসূ স্ট্রাটেজিতে বেশি বিনিয়োগ করা সম্ভব একমাত্র ডিজিটালেই।
৩। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এনালাইসিস ও নানান ধরনের টেকনোলজির সুবাদে গ্রাহকের কেনাকাটার অভ্যাসগত ধরন অনুযায়ী তাকে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ক্রয়ের ব্যাপারে মানসিকভাবে খুব সহজে ঠেলে দেওয়া যায়।
৪। গ্রাহকের ধরন অনুযায়ী মাল্টি লেয়ার স্ট্রাটেজি করে এবং ভৌগোলিক অবস্থান ধরে মার্কেটিং সম্ভব।

সহজ কথায় আরেকবার বলি। ডিজিটাল মার্কেটিং খুব কম খরচেই করা সম্ভব ব্যাপারটা এরকম না। বরং যে কোনো বাজেট দিয়ে, আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোনো অংকের টাকা দিয়ে আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন। মার্কেটিং শুধু বড় বড় দৈত্যদের জন্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত।

জ্বি, সবকিছু যদি নতুন করে ভাববার প্রয়োজন হয় তবে তাই করেন কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের এই জোয়ারে ব্যবসার অস্তিত্বকে হারিয়ে না ফেলতে চাইলে ট্রেডিশনাল মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিংকে সিরিয়াসলি নিন।

এবার আসি মূল টপিক্স “ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং—ফিউচার অব অ্যাডভার্টাইজিং”-এ।

এখানে মার্কেটে দুটি ঘটনা পাশাপাশি ঘটেছে। একদিকে রেডিও, প্রিন্ট ও টেলিভিশন মিডিয়ার অভিজ্ঞতা, এর সংস্কৃতি, বিনোদন ধরন ও ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং এই সবকিছুর ওপর অবিশ্বাস, অভক্তি ও বিরক্তিকর মনোভাব তৈরি হয়েছে আর এই সুযোগেরই হাত ধরে অপরদিকে ওয়েবসিরিজ, স্ট্রিমিং চ্যানেল, ভিডিও অন ডিমান্ড, ইউটিউব চ্যানেল ও ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের মতো নতুন বিনোদন মাধ্যম মার্কেটে জায়গা করে নিয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে ৮৪% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছে তারা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং পছন্দও করেন না বিশ্বাসও করেন না। এমনকি তারা আর এসব দেখেনও না শোনেনও না। বদলে তারা লাইভ স্ট্রিমিং, নেটফ্লিক্স, অ্যানিমে, ইউটিউব এসবে সময় কাটায়। এমনকি ৮৫% মিলেনিয়াল স্বীকার করেছেন যে তারা নিয়মিত ইউটিউব দেখেন। মিলেনিয়াল বলতে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার কথা বলছি যারা মূলত জেনারেশন এক্স ও জেনারেশন ওয়াই হিসেবেও পরিচিত। এক কথায় ইয়াং জেনারেশন। [সোর্স: জনপ্রিয় পত্রিকা ফোর্বস এর তথ্য অনুযায়ী।]

তাই বলে অ্যাডভারটাইজিংয়ের স্কোপ কমে যাচ্ছে না বরং প্রয়োজন শুধুমাত্র এই পরিবর্তনশীল অভ্যাসের জন্য বিজ্ঞাপনের কৌশলগত পরিবর্তন।

৮৭% ইয়াং জেনারেশনই মনে করে প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট এমন এক স্ট্রাটেজি যেটায় তাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের কিছু উদাহরণ দিই—

এগুলো কিছু স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের অনলাইন ওয়েবসিরিজ থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট। পুরো সিরিজের লিংক দেওয়া আছে যা আপনি ইউটিউবে বিনামূল্যেই দেখতে পারবেন।

দেখুন আরো সহজ করে বলি, প্রি-রোল অ্যাড, স্কিপ অ্যাড বা অন্যান্য হাজারও কৌশল যেখানে বন্ধ করে দেওয়া যায়, স্কিপ করা যায় বা শব্দ বন্ধ করে দেওয়া যায় সেখানে একমাত্র প্রোডাক্ট প্লেসমেন্ট হচ্ছে বেস্ট সমাধান। যেখানে ব্র্যান্ড গল্পের অংশ হয়ে উপস্থাপিত হয় এবং দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।

একটা সুন্দর স্টোরিলাইন যেখানে গল্প বলার ছলে খুবই আলতোভাবে ও তুলনামূলক অনেক কম আক্রমণাত্মকভাবে প্রচারণা করা হয়, এবং ব্র্যান্ডের নৈতিক মূল্যবোধ গল্পে সংযুক্ত করা হয়, এরকম স্টোরিলাইন বা গল্প গ্রাহকের সাথে ব্র্যান্ডের একধরনের সূক্ষ্ম সম্পর্ক তৈরি করে। ওই ব্র্যান্ডের প্রতি নিজের অজান্তেই গ্রাহকের ভালোলাগা তৈরি হতে থাকে। যেটা ধীরে ধীরে সেলস্-এ রূপ নেয়।

একটা ভালো ওয়েব সিরিজ আপনার পণ্যের নতুন ও পুরাতন গ্রাহকের সাথে সম্পর্ক ভালো করবে। একবার গ্রাহক আপনার ওয়েব সিরিজের মজা পেয়ে গেলে, তারা আঠার মতো আপনার ব্র্যান্ডের সাথে লেগে থাকবে পরবর্তীতে কী হবে তা দেখার জন্য। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, বিহাইন্ড দ্য সিন ইত্যাদি ঘাটিয়ে ওই ব্র্যান্ডেড কনটেন্টের পার্ট হবে। সেই সুবাদে গ্রাহকের ব্র্যান্ডটিকে আরো কাছে থেকে দেখার সুযোগ হবে এবং ধীরে ধীরে তৈরি হতে পারে ভালোলাগা যা আল্টিমেটলি নিয়ে যাবে ক্রমবর্ধমান সেলস্-এর দিকেই।

এভাবেই স্টোরিটেলিং আরো ইন্টারেক্টিভ হবে, দর্শক ব্র্যান্ডের সাথে নিজেকে আরো কাছ থেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে। ব্র্যান্ডের প্রতি তৈরি হবে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থা। ভালো মানের গল্প ও বিনোদনের মাধ্যমে জায়গা করে নেবে গ্রাহকের হৃদয়ে।

মাঝে মাঝে কোনো ওয়েব সিরিজ এতটা জনপ্রিয় ও সফল হয় যে এটা ব্র্যান্ডের ফিউচার এসেট হয়ে যায়। এবং চাহিদা তৈরি হয় আরো নতুন সিজনের।

তাছাড়া সবচেয়ে যেটা মজার বিষয় সেটা হচ্ছে মিডিয়া বায়িং বাজেট। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ে যেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারে লক্ষ কোটি টাকা ঢালা লাগে সেখানে বিনা খরচে সম্প্রচার করছেন আপনার প্রোগ্রাম আর সেটা অনলাইনে থেকে যাবে আজীবন। যুগের পর যুগ, দিন দিন নতুন নতুন গ্রাহক সাক্ষী হবে এই কনটেন্টের। জীবিত থাকবে গল্প সবসময়।

ফিউচার মার্কেটিংয়ের দিকে তাকালে একটা জিনিসই দেখা যায়, সেটা হচ্ছে পরিবর্তন। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ডিজিটাল এই পরিবর্তনের সাথে অবশ্যই মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য নিয়ে চলতে হবে।

টেলিভিশন যেখানে ট্র্যাডিশনের কথা বলে ওয়েব সিরিজ সেখানে পরিবর্তনের কথা বলে। সবাই আজকাল অনলাইনে। সবাই টেলিভিশনের চেয়ে অনলাইনে বেশি সময় কাটায়। টেলিভিশন থেকে দিন দিন চোখ সরে চলে যাচ্ছে অনলাইনে। বিজ্ঞাপন প্রণেতারা প্রতিটি মানুষকে একজোড়া আইবল হিসেবে গণনা করে। এবং আইবল ধরে রাখার জন্য প্রয়াজন নিত্য নতুন কৌশল।

মিলেনিয়ালদের ধরে রাখার জন্য ব্র্যান্ডিং খুবই জরুরি। যদিও বেশি দাম কিছুটা তারতম্য তৈরি করে তবে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা ও বিশ্বস্ততা থাকলে অতিরিক্ত দাম খুব বেশি ব্যবধান তৈরি করতে পারে না।

সর্বশেষ কথা টাইটেল স্পনসরশিপের মাধ্যমে আপনি হয়তো প্রত্যক্ষভাবে ওয়েব সিরিজের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারেন কিন্তু আসল সম্পৃক্ততা তৈরি হয় যখন গল্পে বা স্ক্রিপ্টে সরাসরি ব্র্যান্ডকে সম্পৃক্ত করা যায়। অন্যথা সব জোরপূর্বক প্রোডাক্ট প্লেসমেন্টের মতোই দেখাবে। আরেকটি জিনিস, আপনার গল্পের ধরন যেই ধরণারই হোক না কেন, দর্শক বা মিলেনিয়ালদের জীবনে সেটার ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে হবে। এমন গল্প, মতাদর্শ বা ট্রিটমেন্ট থাকতে হবে যা সচরাচর টেলিভিশনে দেখা যায় না।

অনেক লেখা হয়েছে কিন্তু মূল আকর্ষণ এখনো রয়ে গেছে। কথা বলব ব্র্যান্ডেড স্টোরিটেলিং-এর আপাদমস্তক নিয়ে। এর সফলতার মূলমন্ত্র, কেইস স্টাডি, এক্সপার্টদের মতামত ইত্যাদি নিয়ে। বলব আরেকদিন আরেকটি পর্বে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, বার্তা২৪-এর সাথেই থাকুন।

   

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;

অকালে আম পাকে!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

অপরিপক্ক পাকা আম / ছবি: পিক্সাবে

  • Font increase
  • Font Decrease

‘বৈশাখে তোর রূদ্র ভয়াল,

কেতন ওড়ায় কালবৈশাখী!

জষ্ঠি মাসে বনে বনে

আম কাঠালের হাট বসে কি...’

রবিঠাকুরের কলমে রচিত এ পংক্তি যেন, কেবল কাগজের উপর কালিতে সাজানো কিছু শব্দ নয়। বাংলা বছরের প্রথম ঋতুর সকল বৈশিষ্ট্য খুব অল্প ভাষায় সুসজ্জ্বিত করে গানের রূপে সামনে আনেন বিশ্বকবি।

দিন গুনতে গুনতে বছরের প্রথম মাসটি অনায়াসে কেটে গেল। চলছে জৈষ্ঠ্য মাস। ভয়ংকর কাল বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কাকে পাশ কাটিয়ে; জৈষ্ঠ্যের পাকা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুই যেন গ্রীষ্মের আসল আনন্দ।  

গ্রীষ্মের পরিপূরক হলো আম। আম পছন্দ নয়, এমন মানুষটি খুঁজে পাওয়া দায়! এজন্যই আমকে বলে ফলের রাজা। ত্যক্ত-বিরক্ত করা গরমেও পাকা টসটসে আমের সুঘ্রাণই যেন আনন্দের স্বস্তি। তবে সে আনন্দেও বালি ঢেলে দেয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ভোজন-রসিক মানুষরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে রসে টসটসে তাজা ফলের স্বাদ আস্বাদনের জন্য। অনেক ভোক্তদের সেই অপেক্ষা বৃথা হয়ে যায় অপরিপক্ক ফলের কারণে।

অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত লাভের আশায় রাসায়নিক উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করে আম পাকানোর চেষ্টা করে। আম যখন কাঁচা অবস্থায় থাকে তখন এর মধ্যে সাইট্রিক এসিড ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড থাকে। এ কারণে আমের হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রার লগারিদম মান খুব কম হয়, ফলে আম অম্লধর্মী হয়। এছাড়া কাঁচা অবস্থায় আমে উচ্চ ওজনের পেকটিনের মজুদ বেশি থাকে।

অপরিপক্ক পাকা আম

সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে পাঁকার সময় এই পেকটিনের ওজন কমতে থাকে। আমের মধ্যকার ভিটামিন ‘সি‘ কালক্রমে বদলে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। একই সঙ্গে ক্লোরোফিল পরিবর্তিত হয়ে গ্লোবুলার ক্রোমোপ্লাস্টে রূপান্তরিত হয়। অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট ফিনাইলপ্রোপানয়েডের সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের  উপসি্থতি বাড়তে থাকে।(‘বিজ্ঞানচিন্তা’র তথ্যমতে) এই কারণে কাঁচা আমের সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে লালচে-হলুদাভাব বর্ণ ধারণ করে। এভাবে পাকার ফলে আম হয় সুস্বাদু। আমের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে যায়।

তবে ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2)  এর প্রয়োগের কারণে আমের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে থাকা (৮০থেকে৮৫ভাগ) ক্যালসিয়ামের কারণে আমের অম্লত্ব নষ্ট হতে শুরু করে। অম্ল-ক্ষারের প্রশমনের কারণে আমের মধ্যে থাকা ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। তাই কাঁচা অবস্থাতেই আমের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

আমের ভিটামিন বি১ পানিতে দ্রবনীয়। আমের আর্দ্র অংশের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড বিক্রিয়া করে অ্যাকটেলিন গ্যাস উৎপন্ন করে। এতে আম অসময়েই পাক শুরু করে। সামগ্রিকভাবে আমের রাসায়নিক পরিবর্তন না ঘটলেও বাহ্যিকভাবে রঙের পরিবর্তনের কারণে দেখলে মনে হয় আম পেকেছে। এই অপরিপক্ক আম খেলে কেবল রুচি ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, তাই নয়! শরীরের জন্যও অনেক বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।

;

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;