তারেক মাসুদ: আমাদের সেলুলয়েডের কবি



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
তারেক মাসুদ

তারেক মাসুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঋত্বিক ঘটকের কিন্তু সিনেমা বানানোর কথা ছিল না। তবুও কেন তিনি সব ছেড়েছুঁড়ে কেবল সিনেমা বানাতে নেমেছিলেন, তা কি আমরা জানি? তিনি সিনেমা বানিয়েছিলেন কারণ সিনেমাই হলো একসাথে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার একমাত্র মাধ্যম। অন্য কোনো মাধ্যমে যদি এরচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যেত তাহলে সিনেমা ছেড়ে সেই মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হতে রাজি ছিলেন ঋত্বিক ঘটক।

একজন ঋত্বিক ঘটকের মতো আমাদেরও একজন তারেক মাসুদ ছিলেন, যাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নক্ষত্র হিসেবে ধরা যায়। তিনি সিনেমার নেশায় পড়ে সিনেমা বানিয়েছিলেন কিনা জানি না, তবে তিনি তাঁর নিজের সমগ্র জীবন যে শুধুমাত্র সিনেমার জন্যই উৎসর্গ করে গিয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের যখন মৃতপ্রায় দশা, নামকাওয়াস্তে বাণিজ্যিক ছবির প্রবল দাপটে সত্যিকারের চলচ্চিত্র শিল্প যখন রীতিমতো গাঢ় অন্ধকারের মাঝে ধুঁকছে; তখন এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা একটা আলোর মশাল হাতে জ্বেলে অক্লান্তভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তিনি চেয়েছিলেন আবাল বৃদ্ধা বণিতা সকলের মাঝে মুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে। তাইতো জীবনের শেষ দিন অবধি চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে গেছেন সেলুলয়েডের এই কবি, আমাদের তারেক মাসুদ।

যদিও তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের আগে লিখে গিয়েছেন, “চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।” কেন তবে তিনি লেখক না হয়ে সিনেমাওয়ালা হলেন? তবে কি ঋত্বিকের মতো তাঁরও উদ্দেশ্য ছিল, নিজের চিন্তা-ভাবনা এবং দর্শনকে সিনেমার মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া? উদ্দেশ্য যেটাই হোক, তিনি যে সিনেমাকে নিছক একটা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেননি; তা আজ আমরা তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলির মধ্যদিয়ে উপলব্ধি করতে পারি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706104240.jpg
◤ তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত অন্তর্যাত্রা সিনেমার পোস্টার ◢


আবু তারেক মাসুদ, পরবর্তীকালে যিনি আমাদের কাছে তারেক মাসুদ হিসেবে ধরা দিয়েছেন, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে, বাংলাদেশ) ফরিদপুর মহকুমার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট, সত্যিকারের একজন আধুনিক মনের মানুষ। কিন্তু তারেক মাসুদের নানির মৃত্যুর পর তার পিতার মাঝে এক আমূল পরিবর্তন আসে এবং নিমিষেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন কট্টরপন্থী মুসলমান। ফলস্বরূপ তাঁর পিতা তাদের বাড়িতে মহিলাদের পর্দা করার বিধান চালু করে। সেই সাথে তারেককে একজন ‘আলেম’ বানানোর ইচ্ছেও পোষণ করেন। অতঃপর শিশু তারেকের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় একটি আলিয়া মাদ্রাসা।

এরপর পুরো ষাটের দশক তারেক মাসুদ তাঁর পিতার নির্দেশে ছুটে চলেছেন এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসায়। তার বর্ণনানুযায়ী তিনি প্রায় প্রায় পাঁচ-ছয়টি মাদ্রাসায় পড়েছেন যেগুলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। কোনোটি ওই ফরিদপুরের ভাঙ্গায়, কোনোটি ঢাকার লালবাগে, কোনোটি ঢাকার কাকরাইলে, কোনোটি আবার যশোরের মধুমতি নদীর পাড়ের বাহিরদিয়ায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন।

জীবনের প্রথম মাদ্রাসা দর্শনের অভিজ্ঞতা তারেক মাসুদ দিয়েছেন এভাবে, “আমার প্রথম ভর্তি হওয়া ভাঙ্গার মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি বিরাট দিঘি ছিল। যেটি আমরা ব্যবহার করতাম। আমি যখন প্রথম মাদ্রাসায় গেলাম সেদিন রাত ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে তুলে সেই বিরাট দিঘির ঘাটে নিয়ে যাওয়া হলো। কুয়াশার মধ্যে সামান্য আলো-আঁধারিতে দেখা যাচ্ছিল সবাই মেসওয়াক করছে। আমাকেও মেসওয়াক করা শিখানো হলো। আসলে একটি শিশুর ওই ধরনের অভিজ্ঞতা একরকম ইন্দ্রজালিক অভিজ্ঞতা।”

এরপর এলো ১৯৭১ সালের সেই অমানবিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ক্ষণ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারেক মাসুদ এবং তার পরিবার প্রত্যক্ষ করলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। কিন্তু ১৯৭১ সালের ওই নয় মাসের যুদ্ধের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারেক মাসুদের জীবনেও স্বাধীনতা ফিরে এলো। কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর কট্টরপন্থী মুসলিম বাবার হাত ধরেই তিনি ফের প্রবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার জগতে। বাবার উদ্যোগে তিনি ১৯৭৩ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং প্রথম বিভাগে পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কো-এড কলেজ ‘আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ’-এ ভর্তি হন। কিন্তু তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে মাত্র ছয় মাস পড়াশোনা করার পর নটরডেম কলেজে বদলি হয়ে যান এবং সেখান থেকে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706254284.jpg
◤ তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র-যাত্রায় স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ছিলেন বড় অনুপ্রেরণা ◢


তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকেন। চাচাত ভাই কামাল মাহমুদের বন্ধু স্থপতি প্রিন্সের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির অফিসে যান এবং ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র সংসদের নিয়মিত কর্মী হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালের পর থেকেই তিনি চলচ্চিত্র চর্চার পরিধিতে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তোলেন। চলচ্চিত্র ছাড়াও তারেক মাসুদ আগ্রহী ছিলেন সংগীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, নৃতত্ত্ব এবং মনঃস্তত্ত্ব বিষয়ে। সব বিষয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে তিনি বুঝতে চাইতেন। সেজন্যই পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ের মেধাবী সমবয়সীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি চলে চলচ্চিত্রে নেতৃত্বদানের।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তিনি বাম আন্দোলন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন প্রভৃতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতার প্রমুখের সাথে। তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ করেছিলেন। শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ প্রয়াত আলমগীর কবীরকে।

এরপর তিনি পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ফিল্মের ওপর পড়তে যেতে চাইলেন কিন্তু হঠাৎ করে সেখান থেকে স্কলারশিপ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে সে আশায় গুড়েবালি পড়ল। তারপর ১৯৮২ সালে তিনি ফের আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়তে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেললেন, এমনকি পারিবারিকভাবে অর্থও যোগাড় করে ফেলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705853091.jpg
◤ তারেক মাসুদের শিক্ষাগুরু ছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ আলমগীর কবীর ◢


তার এই আমেরিকায় যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “১৯৮২ সালে আমি আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম এবং পারিবারিকভাবে অর্থ জোগাড় করেছিলাম। এদিকে সুলতান তখন আমাদের মতো যুবকদের কাছে কিংবদন্তি। তার ওপর আহমদ ছফার একটি লেখা আমাদের সুলতানের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা তখন বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকজন সুলতানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার কথা ভাবছিলাম। আমরা যারা বিকল্পধারা নিয়ে ভাবছিলাম তাঁরা সুলতানের ওপর ছবি করাটা খুবই জরুরি মনে করছিলাম। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন আমার সুলতানের প্রতি এই আগ্রহের বিষয়টি জানতেন। তখন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করেছি। আনোয়ার ভাই আমাদের ক্যামেরার শিক্ষক ছিলেন। তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন ছবি বানানোর জন্য। আমি একদিন তাঁর জিগাতলার বাসায় গিয়ে যখন বললাম যে আমি তো পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছি। উনি বললেন, আজকের কাগজ দেখেছো? আমি বললাম, না। উনি আবার বললেন, ইত্তেফাক খুলে দেখো, ব্যাক পেইজে বড় করে নিউজ শিল্পী সুলতান হাসপাতালে, মারাত্মকভাবে অসুস্থ। মনে আছে তুমি বলেছিলে সুলতানের ওপর ডকুমেন্টারি করবে। তুমি যদি এখন পড়তে বাইরে চলে যাও, ফিরে এসে দেখবে শিল্পী নেই। তোমার মনের মধ্যে কিন্তু একটা বিরাট আফসোস থেকে যাবে। আমি আনোয়ার ভাইকে বললাম, আমি বাইরে যাবার যাবতীয় কাজ সেরে ফেলেছি, আমি চলে যাব। তারপর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে ছয় নাম্বার বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। অনেক সময় নিচ্ছে সেদিন বাসটা, এটাও একটা কাকতালীয় ঘটনা। বাসটা এত দেরি না করলে হয়তো মাথার মধ্যে এত উল্টো বুদ্ধি আসত না। বাস আসছে না, আসছে না। এ সময় আমার মাথায় উল্টো বুদ্ধিটা এলো, আমি বিদেশে যাব না। ওই টাকা দিয়েই ইমিডিয়েটলি আমি সুলতানের ওপর ছবি বানানো শুরু করে দেব। দ্যাটস হাউ আই গট্ ইনটু ফিল্ম মেকিং।”

তারেক মাসুদ ‘আদম সুরত’ নির্মাণ শুরু করেন ১৯৮২ সালে। তার মূলধন ছিল পৌনে দুই লাখ টাকা। কিন্তু সুলতানের খামখেয়ালী, ভুলোমনা, উদাসীন স্বভাবের কারণে ওই ছবি নির্মাণ করতে লেগে যায় সুদীর্ঘ ৭ বছর। ছবির ব্যয় বেড়ে যায় বহুগুণ। সে সময় ছবির এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলতে থাকে তার প্রতি। বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতে থাকেন, তারেক মাসুদ নতুন চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছেন, যার নাম ‘সিনেমা-দেরীতে’। কারণ তখন বিশ্বব্যাপী নতুন সিনেমা আন্দোলনের নাম ছিল ‘সিনেমা-ভেরীতে’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705343466.jpg
◤ ১৯৮৪ সালে আদম সুরত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে তারেক মাসুদ ◢


কিন্তু এই দীর্ঘ ৭ বছর সুলতানের সাথে থেকে থেকে তিনি লাভ করেন নতুন এক জীবনদৃষ্টি, সুলতানের চোখ দিয়ে আবিষ্কার করেছেন যেন নতুন বাংলাকে। সুলতানের জীবনদর্শনও তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করে, যা তার পরবর্তী কাজগুলিতে লক্ষ্যণীয়। চেতনে হোক কিংবা অবচেতনে, তারেকের কাজে সুলতানের প্রভাব বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে তারেক মাসুদ বলেন, “আদম সুরত বানাতে গিয়ে আমি যতই ইমপ্রাকটিক্যাল কাজ করি না কেন, এমন এক আলোকপ্রাপ্ত মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার ও চলার ফলে আমার একটা আত্মোন্নয়ন ঘটেছে বলে আমি মনে করি। শুধু গ্রামবাংলা নয়, শিল্প সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে কিছু ধারণা আমার মধ্যে বিকশিত হয়েছে।”

এই ছিল তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র যাত্রার প্রারম্ভিক ভাগ। কিন্তু কে ভেবেছিল যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এক সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্র কালক্রমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বরপুত্র হয়ে উঠে উঠবে?

তারেক মাসুদ তার সমগ্র জীবনে যা যা দেখেছেন, যে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন; সেগুলিকেই তিনি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তার শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে তার সময়কার সময়টিকে ধরতে চেয়েছেন। চিত্রায়িত করেছেন পেছনে ফেলে আসা সময়কেও। তার সময়কার বর্তমান এবং আবহমান বাংলার ইতিহাসকে তিনি ছুঁতে চেয়েছিলেন তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যদিয়ে।

তারেক মাসুদ মৃত্যুর আগ অবধি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীন-ধারার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার যাঁর চলচ্চিত্র পৃথিবীর প্রায় ৪৪টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। এমন নজির বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে একমাত্র সত্যজিৎ রায় ছাড়া আর কারোই নেই।

অস্কার পুরস্কার প্রতিযোগিতায় তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২) একমাত্র চলচ্চিত্র যা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভুবনবিখ্যাত ‘কান’ চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবি মাটির ময়না ‘আন্তর্জাতিক সমালোচক’ পুরস্কার লাভ করেছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705022586.jpg
◤ তারেক মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না সিনেমার পোস্টার ◢


এছাড়াও ২০১১ সাল পর্যন্ত তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রকর্মসমূহের মধ্যে প্রামাণ্য চিত্রগুলো হচ্ছে : সোনার বেড়ি (১৯৮৭), আদমসুরত (১৯৮৯), আহ আমেরিকা (১৯৮৯), গণতন্ত্র মুক্তি পাক (১৯৯০), ইউনিসন (১৯৯২), মুক্তির গান (১৯৯৫), শিশুকণ্ঠ (১৯৯৭), মুক্তির কথা (১৯৯৯), নিরাপত্তার নামে (১৯৯৮), অন্য শৈশব (২০০২) এবং কানসাটের পথে (২০০৮)।

আর কাহিনীচিত্রসমূহ হচ্ছে : শামীম আখতারের সঙ্গে যৌথভাবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি সে (১৯৯৩), মাটির ময়না (২০০২), ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে অন্তর্যাত্রা (২০০৬), স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নরসুন্দর (২০০৯) এবং রানওয়ে (২০১০)।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন ঠিক করার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন-নির্বাচন শেষে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন এবং খানিক পরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তি, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তিনিও একই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের সাথে মারা যান। প্রাণ হারায় আরো ৩ জন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565704665207.jpg
◤ দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর (ডানে) ◢


কাগজের ফুল ছাড়াও তারেক মাসুদের অনেকগুলো ছবি নির্মাণাধীন ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের লোকজ উৎসব, মেলা দিবস ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র এবং বাংলাদেশের সিনেমা হলের বেহাল অবস্থা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাণপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আর, তার স্বপ্নের ছবি কাগজের ফুলের প্রেক্ষাপট এবং ব্যাপ্তি ছিলো বিশাল। ছবির বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগ। এবং এই ছবিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবিতে পরিণত হতে যাচ্ছিল।

এই কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র :
১. তারেক মাসুদের দেয়া সাক্ষাৎকার
২. উইকিপিডিয়া
৩. বাংলাপিডিয়া ও অন্যান্য

   

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'ম্যাক্স' নামের একটি বিড়ালকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট অব লিটারেচার’ বা ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। দেশটির ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের স্নাতক অনুষ্ঠানে বিড়ালটিকে এই সম্মানসূচক ডিগ্রি দেওয়া হয়। তবে সেই অনুষ্ঠানে বিড়ালকে আমন্ত্রণ জানানোর নিয়ম না থাকায় উপস্থিত ছিল না ম্যাক্স। 

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ বলছে, অনুষ্ঠানে বিড়ালটি উপস্থিত ছিল না। তাই বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডোর কাছে খুব শিঘ্রই এই ডিগ্রি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।   

বন্ধুসুলভ এই বিড়ালটিকে তার ইঁদুর শিকারের দক্ষতা বা অতিরিক্ত ঘুমানোর জন্য নয় বরং তার সহচার্যের জন্যই স্বীকৃতি দিয়েছে।   বিড়ালটিকে এই ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাসেলটন ক্যাম্পাস।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি পেল 'বিড়াল'!

বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাক্স দ্য ক্যাট, অনেক বছর ধরেই ক্যাসেলটন পরিবারের একজন আদুরে সদস্য। ভারমন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তায় পাশেই বসবাস করে এক পরিবার। বিড়ালটি সেই পরিবারেরই পোষা।

বিড়ালের মালিক অ্যাশলে ডো বলেন, ‘বিড়ালটি ঠিক করেছে সে ক্যাম্পাসে যাবে। এরপর থেকেই সে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে শুরু করে। আর শিক্ষার্থীরাও তাকে আদর করতে শুরু করে।’

বিড়ালটি প্রায় চার বছর ধরে ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছে। বিড়ালটিকে পথের ধারে শুয়ে থাকতে দেখলেই সবাই তার সঙ্গে সেলফি নেয়।

এমনকি সাবেক ছাত্ররাও যখনই ক্যাম্পাসে আসেন তারা তখনই বিড়ালটির খোঁজ নিতে তার মালিক ডো-এর কাছে যান। ডো তাদের কাছে বিড়ালটির মা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

;

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;