হারকিউলিস জীবন মানেই অভিযাত্রা



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
হারকিউলিস

হারকিউলিস

  • Font increase
  • Font Decrease

আল্কমিনার দুই ছেলে। বরাবরের মতো পাশের ঘরে দোলনায় ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেল। কিন্তু এইবার ঘটতে চলছিল অন্যকিছু। মাঝরাতে ছেলেদের ঘরে প্রবেশ করল দুইটা সাপ। আবছা আলোয় জেগে উঠল দুজনেই। একজন তো সাপের ফণা দেখেই চোখ বুজে চিৎকার। আর অন্যজন? সে শুধু উঠেই বসল না, দুই হাতে টিপে ধরে রইল দুটো সাপের গলা। মা ঘরে এসে বিস্ময়ে থ। জড়ো হলো পাড়ার লোক। ততক্ষণে মরে গেছে বেচারা সাপ। সেদিন থেকেই মানুষের বিশ্বাস হতে থাকে, এই শিশু সাধারণ আট দশটা শিশুর মতো না। হবে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ বীর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563352692243.jpg
শৈশবেই সাপের গলা চেপে ধরে ভবিষ্যৎ জানিয়ে দেয় হারকিউলিস ◢

 

শিশুটির নাম হারকিউলিস। গ্রিক বীরদের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয়। দেবতা জিউস এবং মানবী আল্কমিনার পুত্র। জিউসের নারীপ্রীতি সুপরিচিত। আল্কমিনার কাছে সে আসে তার স্বামী এমফিত্রিয়নের ছদ্মবেশে। সে যাই হোক, হারকিউলিসের জন্ম থিবিসে। বস্তুত তার জন্মগত নাম আলসিয়াস। হারকিউলিস ছিল উপাধি। যার অর্থ “দেবী হেরার মহত্ত্ব”। যেহেতু হেরার দেওয়া পরীক্ষাগুলোর ভেতর দিয়ে যাবার কারণেই তার জগৎজোড়া খ্যাতি আসে। ছেলেবেলা থেকেই গরম ছিল মাথা। একদিন তো ক্রোধের বশে আঘাতই করে বসলেন গানের শিক্ষককে। পরিণামে পটল তুললেন মাস্টার মশাই। যদিও হারকিউলিস ব্যথিত হয়েছিল, কিন্তু অভ্যাসের বদল আনতে পারেনি। বধ করল থেসপিয় সিংহ। যুদ্ধ করে পরাজিত করল মিনিয়দের।

জিউসের অবৈধ সন্তান বলে জিউসপত্নী দেবী হেরা শুরু থেকেই তার ওপর নাখোশ ছিলেন। নানা ঘটনায় পুঞ্জিভূত হচ্ছিল ক্ষোভ। এজন্য বেশ ভুগতে হয় দিনশেষে। হেরা উন্মাদে পরিণত করেন হারকিউলিসকে। এতটাই উন্মাদ যে, স্ত্রী আর তিন সন্তানকে হত্যা করে ফেলল নিজের হাতে। 

জ্ঞান ফেরার পর হারকিউলিস চেয়েছিল আত্মহত্যা করতে। হত্যা পাপের প্রায়শ্চিত্য হিসেবে। কিন্তু বন্ধু থিসিউস তাকে থামাল। সাথে করে নিয়ে গেল এথেন্স। কিন্তু দেশ বদলালেই কি আর অপরাধবোধ মুছে যায়? তাই পাপমুক্ত হবার জন্য হারকিউলিস গেল ডেলফির মন্দিরে। মহিলা পুরোহিত বাতলে দিলেন মুক্তির পথ। মাইসেনীয় রাজা ইউরেস্থিউসের ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। হারকিউলিস রাজি হলো এবং একে একে করল বারোটি অসাধ্য কাজ। যা “টুয়েলভ্ লেবার অব হারকিউলিস” হিসেবে পরিচিত। 

প্রথম কাজ ছিল নিমিয়ার সিংহকে বধ করা। কোনো অস্ত্রে আহত না হওয়া জন্তুকে হারকিউলিস হত্যা করল শ্বাসরোধ করে। দ্বিতীয় কাজ লার্নার জলভূমিতে গিয়ে নয় মাথাওয়ালা দানব হাইড্রাকে দমন করা। কাজটা বিপজ্জনক। একটা মাথা কেটে ফেললে দুটি মাথা গজাত। শেষমেশ উপায় পাওয়া গেল। হারকিউলিস মাথা কেটে প্রতিবার ঘাড়ে জ্বলন্ত লোহা দিয়ে ঝলসে দিল, যেন আর না গজাতে পারে। সবশেষে বাকি থাকা অমর অংশটি চাপা দিয়ে রাখল বিরাট এক পাথরের নিচে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353035176.jpg
হারকিউলিসের নিমিয়ার সিংহ বধ ◢

 

তৃতীয় কাজ আর্তেমিসের পবিত্র হরিণ ধরে আনা। এক বছর সময় নিয়ে সেরেনিয়াসের বন থেকে সফল হিসেবে ফিরল হারকিউলিস। চতুর্থ কাজ এরিমেন্থাস পর্বতের গুহা থেকে বন্য শুকর বধ করা। পিছু তাড়া করে তুষারের দিকে নেওয়া হলো এবং তারপর করা হলো আটক। পঞ্চম কাজ অজিয়াসের আস্তাবল পরিষ্কার করা। দুইটা নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিল হারকিউলিস। নদীর পানি বানের মতো এসে সাফ করে গেল অতিকায় আস্তাবল। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353114390.jpg
হারকিউলিসের হাইড্রা দমন ◢

 

ষষ্ঠ কাজ মহামারি নিয়ে আসা স্টিমফ্যালিয়ন পাখিগুলোকে তাড়ানো। এক্ষেত্রে দেবী এথেনা তাকে সাহায্য করেন। এথেনা পাখিগুলোকে খেদিয়ে দেন বিভিন্ন ঝোঁপঝাড় থেকে। আর উড়ে যেতে থাকা পাখিকে তীরবিদ্ধ করে মাটিতে ফেলে হারকিউলিস।

সমুদ্রদেব পসাইডন একটা ষাঁড় উপহার দেন ক্রিটের রাজা মিনসকে। হারকিউলিসের সপ্তম কাজ ছিল তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। ষাঁড়টি পানির ওপর দিয়ে হাঁটতে পারত। মিনস তাকে আর রাখাতে ইচ্ছুক ছিল না। বস্তুত মিনসের স্ত্রী রাণী পাসিফেই ষাঁড়টির প্রেমে পড়ে যায় এমনকি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে রাণী মিনোটর নামে অর্ধেক মানুষ অর্ধেক ষাঁড়ের জন্মদান করেন। রাগে ক্ষোভে রাজা একটি গোলকধাঁধা ল্যাবিরিন্থ তৈরি করালেন। এই ল্যাবিরিন্থেই রচিত ডিউডেলাস এবং তার পুত্র ইকারাসের সেই পরিচিত আকাশে ওড়ার আখ্যান। যাহোক, শেষপর্যন্ত হারকিউলিস ষাঁড়টা নিয়েই ফিরে আসেন ইউরেস্থিউসের কাছে। আবার অরাজকতা তৈরি হলে থিসিয়াস ষাঁড়টা বধ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353260297.jpg
হারকিউলিস এবং ক্রিটের ষাঁড় ◢

 

অষ্টম দায়িত্ব ছিল আরো কঠিন। থ্রেসের রাজা ডায়ামিডিসের ঘোড়া নিয়ে আসা। যেনতেন না, মানুষখেকো ঘোড়া। হারকিউলিস প্রথমে ডায়োমিডিসকে হত্যা করল। তারপর নিয়ে এলো ঘোড়া।

আমাজনদের রাণী হিপ্পোলাইটির কোমরবন্ধনী আনা ছিল নবম দায়িত্ব। হারকিউলিস চেয়েছিল সদয়ভাবেই কাজটা শেষ করবে। কিন্তু জট পাকাল হেরার হস্তক্ষেপ। আমাজনরা ভেবে বসল হারকিউলিস তাদের রাণীকে অপহরণ করতে এসেছে। সুতরাং সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। হারকিউলিসের হাতে নিহত হলো হিপ্পোলাইটি। কোমরবন্ধনী হাতে এলো অনেক পানি ঘোলা হলে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353381444.jpg
তারপরেও হিপ্পোলাইটার কোমরবন্ধনী নিয়ে ফেরেন হারকিউলিস ◢

 

দশম কাজ তিনদেহ বিশিষ্ট দানব গেরাইয়নের গরুগুলো নিয়ে আসা। এই যাত্রাতেই হারকিউলিস ভূমধ্যসাগরের শেষভাগে দুটি স্তম্ভ নির্মাণ করে, যা “হারকিউলিসের স্তম্ভ” নামে পরিচিত। মনে করা হয় স্তম্ভ দুটির একটি ইউরোপ অংশে আধুনিক জিব্রাল্টার এবং অন্যটি আফ্রিকা অংশে সিওটা। যাহোক, হারকিউলিসের জন্য গরু খুঁজে পেতে অসুবিধা হলো না। ফিরল বিজয়ী হিসেবেই।

এবার দায়িত্ব আসলো হেসপেবাইডিসদের সোনার আপেল আনার। একাদশতম কাজ। কিছুটা চিন্তা করে আর কিছুটা প্রমিথিউসের বুদ্ধিতে হারকিউলিস অ্যাটলাসের কাছে গেল। কারণ অ্যাটলাস ছিল হেসপেবাইডিসদের পিতা। যেহেতু অ্যাটলাস পৃথিবীর ভর বহন করছিল, হারকিউলিস প্রস্তাব করল অন্য রকমভাবে। যতক্ষণ অ্যাটলাস আপেলের জন্য বাইরে থাকবে, ততক্ষণ সে নিজে পৃথিবীর ভার বহন করবে হারকিউলিস। প্রস্তাব মনে ধরল অ্যাটলাসের।

ঘটনা পেঁচিয়ে গেল এর পরেই। অ্যাটলাস আপেল আনল ঠিকই, কিন্তু তা হারকিউলিসের হাতে দিতে অস্বীকার করল। চিরদিনের জন্য পৃথিবীর ভারবহন থেকে মুক্ত হবার লোভ আসাটা স্বাভাবিক। অ্যাটলাস গোঁ ধরেছিল, ইউরেস্থিউসের কাছে সোনার আপেল সে পৌঁছে দেবে। খুব সম্ভবত প্রথমবারের মতো হারকিউলিস শরীরের বদলে মাথাকে ব্যবহার করল এবার। অ্যাটলাসকে অল্প সময়ের জন্য ধরতে বলল কাঁধ বদলের অজুহাতে। বেচারা অ্যাটলাস যেই আবার কাঁধে নিল, হারকিউলিস সাথে সাথে আপেল নিয়ে উধাও। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353497744.jpg
হারকিউলিস এবং অ্যাটলাস ◢

 

দ্বাদশ বা শেষ কাজ পাতাল থেকে সারবেরাসকে মর্ত্যে নিয়ে আসা। সারবেরাস তিন মাথাওয়ালা পাতালের প্রহরী কুকুরের নাম। কাজটা অসম্ভব। তারপরেও হারকিউলিস যাত্রা করল। যেতে যেতে থিসিয়াসকে মুক্ত করল ‘বিস্মৃতির আসন’ থেকে। দেখা হলো বীর মিলেগারের সাথে। পাতাল দেবতা হেডেসের সাথে কথা বলে সারবেরাসকে ধরে নিয়েই ফিরল হারকিউলিস। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353601324.jpg
সারবেরাসকে জীবিত ধরে আনেন হারকিউলিস ◢

 

বারোটা অভিযানে আটকে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে হারকিউলিসের অভিযান কখনো শেষ হয়নি। এরপরেও দানব অ্যান্টিউসের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত করা, ষাঁড়রূপী অ্যাকিলাসকে হত্যা করা এবং প্রমিথিউসকে উদ্ধার করা তাঁর কীর্তি। এই সেই প্রমিথিউস, স্বর্গ থেকে মানুষকে আগুন চুরি করে এনে দেবার জন্য যাকে জিউসের রোষানলে পড়তে হয়েছে। হারকিউলিস আসার আগে পর্যন্ত।

কিছু খারাপ কাজও করেছিল হারকিউলিস। খাওয়ার আগে হাতে পানি ঢেলে দেবার কারণে এক বালককে ঘুষি দিল। আর তাতে মারা গেল ছেলেটি। এরচেয়ে বাজে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে হত্যা। এইবার জিউস গেলেন রেগে। হারকিউলিসকে শাস্তি স্বরূপ লিডিয়ায় পাঠানো হলো রাণী ওমফেলের ক্রীতদাস হিসেবে। রাণী মজা করতেন তাকে নিয়ে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, রাণী তাকে নারীপোশাকে সজ্জিত করে নারীসুলভ কাজ করিয়ে নিতেন। অপমানিত হারকিউলিস মুখ বুজে পালন করত। আর ইউরিটাসকে শাস্তি দেবার শপথ নিত। বলা বাহুল্য, ইউরিটাস তার সেই খুন হওয়া বন্ধুর বাবা।

মুক্তি পাবার পর প্রতীজ্ঞা অনুযায়ী হারকিউলিস সৈন্য সংগ্রহ করতে লাগলেন। তারপর দখল করলেন ইউরিটাসের নগরী। প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও এর পরিণাম ভালো হয়নি। বস্তুত এর মাঝেই লুক্কায়িত ছিল তার পতনের ‍গল্প। নগর পুরোপুরি ধ্বংস করার আগে হারকিউলিস প্রিয়তমা স্ত্রী ডিয়ানাইয়াকে উপহার হিসেবে পাঠাল একদল কুমারী। তাদের মধ্যে অপরূপ ‍সুন্দরী রাজকন্যা আয়োলিও ছিল। স্বামীর জন্য অপেক্ষমান ডিয়ানাইয়ার কাছে উপঢৌকন পৌঁছাল খুব দ্রুতই। কিন্তু নিয়তি চাচ্ছিল অন্যকিছু্। হয়তো এজন্যই সাথে আসা দূত ডিয়ানাইয়ার কাছে বলে গেল একটা কথা। অনেক কিছু ঘটে গেছে। হারকিউলিস রাজকন্যা আয়োলির প্রেমে বুঁদ।

ডিয়ানাইয়া কথাটা অবিশ্বাস করতে পারেনি। সাত পাঁচ ভেবে আর আয়োলির রূপ দেখে বিশ্বাস পরিণত হলো সন্দেহ। তাছাড়া সে নিজেও নারী। জানে রূপ কতটা ভয়ানক অস্ত্র হতে পারে পুরুষকে কাবু করার জন্য। রাগে ক্ষোভে জ্বলে উঠল তাই। প্রতিশোধের নেশায় দূতকে দিয়ে হারকিউলিসের জন্য পাঠাল চকচকে জামা। জামায় মাখিয়ে দিল বহুদিন থেকে জমিয়ে রাখা জাদুময় সেন্টরের রক্ত।

স্ত্রীর উপহার গায়ে জড়ানোর সাথে সাথে হারকিউলিস ককিয়ে উঠল অসহ্য ভয়ানক ব্যথায়। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দূতকে ছুঁড়ে মারল ‍সমুদ্রে। আরো কতজনকে যে মারা পড়তে হতো তার ইয়ত্তা নাই। ‍সাধারণ মানুষ হলে অনেক আগেই মৃত্যু হতো। এদিকে সত্য চাপা থাকল না। প্রিয়তম স্বামীর যন্ত্রণাকাতর অবস্থার কথা শুনে কেঁপে উঠল ডিয়ানাইয়া। আত্মহত্যা করল আর কিছু না ভেবে। যদিও একই রাস্তা বেছে নিল হারকিউলিস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353749509.jpg
স্বেচ্ছায় মৃত্যুর কোলে ঠাঁই নেয় হারকিউলিস ◢

 

হারকিউলিস জানত, মৃত্যু তার কাছে আসবে না। সুতরাং নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ল মৃত্যুর কোলে। বিশাল চিতা নির্মাণ করাল অনুসারীদের দ্বারা। তারপর আস্তে করে এগিয়ে এসে শুয়ে পড়ল চিতার ওপর। তরুণ শিষ্য ফিলোকটেটিসকে বলল আগুন লাগাতে। বিব্রত শিষ্য বিষাদমুখে গুরুর আদেশ পালন করল। আর একটু পরেই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল আগুন। এই ঘটনার পর আর হারকিউলিসকে মর্ত্যে দেখা যায়নি। তাকে ‍স্বর্গে তুলে নেওয়া হয়। দেবী হেরা এবার তাকে শুধু গ্রহণই করলেন না, নিজ কন্যা হেবের সাথে মিলিয়ে দিলেন। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/17/1563353865093.jpg
হারকিউলিসের মন্দির ◢

 

হারকিউলিসের আখ্যান জীবনকে অভিযাত্রার সমন্বয় হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রত্যেক মানুষকেই প্রায় অসম্ভব ক্ষমতাধর দানবের মুখোমুখি হতে হয় জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে। হারকিউলিস যেন হার না মানা নাছোড়বান্দা মানুষকেই ধারণ করে। যেমনটা হেমিংওয়ে বলেছেন—

“A man may be destroyed, but not defeated.”

এজন্য হারকিউলিস প্রিয় হয়ে উঠেছে মানুষের মনে। প্রবেশ করেছে ‍সকল সংস্কৃতিতে। প্রবীণ সাহিত্যিক থেকে শুরু করে নবীন প্রেমিক পর্যন্ত। হারকিউলিস বেঁচে থাকবে ততদিন, যতদিন মানুষের মাঝে থাকবে টিকে থাকার সংগ্রাম। বাঁধাকে জয় করার নিরন্তর প্রচেষ্টা।

 

উৎসসমূহ
১. এডিথ হ্যামিলটন- মিথোলজি
২. এইচ এ গুয়েরবার- দ্যা মিথস্ অব গ্রিস এন্ড রোম

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;