চতুর্দশ দালাইলামা তানজিন গিয়েৎসো ও তার বিখ্যাত কিছু উক্তি



যাকওয়ান সাঈদ, কন্ট্রিবিউটর
চতুর্দশ দালাইলামা তানজিন গিয়েৎসো

চতুর্দশ দালাইলামা তানজিন গিয়েৎসো

  • Font increase
  • Font Decrease

চতুর্দশ দালাইলামা, তানজিন গিয়েৎসো বলে যাকে অবিহিত করা হয়, তিনি তিব্বতি জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক এবং পার্থিব নেতা। তাকে ‘অপরাহ’ নামক একটি ম্যাগাজিন থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘অনেক আমেরিকানরা আপনার বই পড়ে, এবং সেইসব বই মূলত সুখশান্তি ও প্রশান্তির পথনির্দেশক। কিন্তু তারা অনেকেই সেই সুখশান্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। যে সমাজটি মূলত বস্তুবাদকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, সে সমাজে সুখশান্তি কী করে অর্জন করা সম্ভব?’

এমন প্রশ্নের উত্তরে তানজিন গিয়েৎসো বলেন, ‘একজন মানুষ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা, তথা, ভালো খাবার, ভালো থাকার জায়গা, ভালো সঙ্গী—ইত্যাদি পেয়ে যাওয়ার পরেও অসুখি থাকতে পারে, অর্থাৎ যখন সে কোনো বাজে অবস্থার মুখোমুখি হয়। দেহের আরাম কখনো মন ও মস্তিষ্কের কায়ক্লেশকে সরাতে পারে না। যদি আমরা আরেকটু গভীরভাবে তাকাই তাহলে বুঝতে পারব, যাদের অনেক সম্পত্তি আছে তারা সুখি নন। এমনকি তাদের সুখি হবার তাড়না তাদেরকে আরো অসুখি করে তুলছে। অন্যদিকে যাদের তেমন কোনো সম্পত্তি নেই, কিন্তু সন্তোষ হয়ে যাবার ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট পছন্দ রয়েছে, আর আছে শৃঙ্খল জীবনচর্চা, তারা সুখি। এমনকি এসকল ক্ষেত্রে যখন আমাদের দেহের অনারামও ঘটে, তখনও আমরা সুখি থাকতে পারি।’

ম্যাগাজিনটির পক্ষ থেকে তাকে ছোট ছোট কিছু প্রশ্ন করা হয়। যেমন, ‘আমাদের জীবনে ধর্ম আসলে কিভাবে ফাংশন করে?’ উত্তরে তানজিন গিয়েৎসো বলেন, ‘ধর্ম আমাদের সহানুভূতিশীল এবং যত্নশীল হতে সাহায্য করে। আমি মনে করি, ধর্ম উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অনুভূতিশীল হওয়ার একটা বিষয়।’

আরেকটি প্রশ্ন এমন, ‘পৃথিবীতে আমাদের বেঁচে থাকার কী প্রয়োজন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘একে অপরকে সাহায্য করবার জন্য।’

এছাড়াও তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কোনো মানুষ ধর্ম পালন করা ছাড়া কি ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারবে?’ তানজিন এর উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ পারবে। এবং সে চাইলে ধর্ম ব্যাতিরেকে সুখিও হতে পারবে।’

তানজিন গিয়েৎসোকে এই সাক্ষাৎকারেই প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি কখনো পরিবার অথবা সন্তানাদির পরিকল্পনা করেছেন কিনা?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘না। তবে আমার বয়স যখন ১৫/১৬ ছিল তখন আমার মধ্যে এই ধরনের কিছু ইন্টারেস্ট তৈরি হয়েছিল। আর এটার কারণ ছিল শারীরিক। কিন্তু তারপরে, আমার কয়েকজন বয়স্ক সঙ্গী, যারা মংকে উপাসনা করতেন, তারা আমাকে পরিবারের কিছু জটিলতাপূর্ণ বিষয় নিয়ে বলেছিলেন। অবশ্যই, পরিবার-চর্চার মধ্যে একটা প্রচণ্ড সুখানুভব আছে, কিন্তু একই সঙ্গে আছে অনেক ধরনের সমস্যা।’

সুখ ও শান্তি বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘আপনাকে দেখলে বোঝা যায় আপনি অত্যন্ত সুখি একজন মানুষ। আপনি কিভাবে নিজের জন্য এই সুখ বা প্রশান্তির জীবন বিধান করেছেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো নিজেকে তেমন সিরিয়াসলি নিই না। এটাই আমাকে সুখি রাখে।’

শেষ প্রশ্নে ম্যাগাজিনটির সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ম্যাগাজিনটিতে আমার একটি কলাম লিখতে হয়, বিষয় থাকে, সুনিশ্চিতভাবে আমি কী জানি? আপনি বলবেন, সুনিশ্চিতভাবে আপনি কী জানেন?’ উত্তরে তানজিন গিয়েৎসো বলেন, ‘পরার্থপরতা, বা পরদুঃখকাতরতা সুখ বিধান করবার সবচেয়ে সহজ পথ। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/13/1563023701657.jpg

নিচে বার্তার পাঠকদের জন্য চতুর্দশ দালাইলামা তানজিন গিয়েৎসোর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি পেশ করা হলো। তার আগে আবশ্যিকভাবে কয়েকটি বিষয় জানা প্রয়োজন—ফুটনোট আকারে বিষয়গুলো জেনে তারপর আমরা উক্তিতে যাব।

১. ভারত এবং চিনের মতো দুইটি প্রাচীন সভ্যতার মধ্যবর্তী স্থানে তিব্বতি সভ্যতার অবস্থান।

২. তিব্বতের আধ্যাত্মিক এবং পার্থিব প্রধানকে দালাইলামা বলা হয়। মোঙ্গলিয় ভাষায় দালাই শব্দের অর্থ সমুদ্র, আর লামা শব্দের অর্থ জ্ঞানী। অর্থাৎ, দালাই লামা শব্দের অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তির জ্ঞান সমুদ্রের মতোই গভীর।

৩. এই পর্যন্ত চৌদ্দজন দালাই লামা নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে যিনি আছেন—তানজিন গিয়েৎসো, তিনি চতুর্দশ দালাইলামা।

৪. ঠিক নির্বাচন নয়, তিব্বতের অন্তর্গত বৌদ্ধধর্মের বিধান অনুযায়ী দালাইলামাকে খুঁজে বের করা হয়। মূলত তিনটি পদ্ধতিতে এই খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন হয়।
ক) একজন দালাইলামার মৃত্যুর পর তিব্বতের বৌদ্ধধর্মীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কেউ একজন ইঙ্গিত পান, নতুন দালাইলামাকে খুঁজে পেতে হলে কী অনুসরণ করতে হবে। সেই ইঙ্গিত মোতাবেক নতুন দালাই লামাকে খুঁজে বের করা হয়।
খ) কেউ যদি এই ইঙ্গিত না পান তাহলে, প্রয়াত দালাইলামার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কালে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, সেই ধোঁয়ার গতিপথ অনুসরণ করা হয়। এবং মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন শিশুদের মধ্য থেকে পরবর্তী দালাইলামাকে খুঁজে বের করা হয়।
গ) এই দুই প্রক্রিয়ার কোনোটিতেই যখন পরবর্তী দালাইলামাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না, তখন বৌদ্ধধর্মের জ্ঞানীরা লামও-লা-সো নামক একটি সরোবরে ধ্যান করতে আরম্ভ করেন। এই ধ্যানের ভিত্তিতেই তারা ইঙ্গিতপ্রাপ্ত হন, কে হবেন পরবর্তী দালাইলামা।

৫. ১৯৩৫ সালে ১৩তম দালাইলামার মৃত্যুর পর বর্তমান দালাইলামা তানজিন গিয়েৎসোকে খুঁজে পেতে চার বছর সময় লেগেছিল।

৬. ছয় বছর বয়সে তানজিন গিয়েৎসোর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এবং ১৯৫৯ সালে বৌদ্ধদর্শনের ওপর তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষালাভ করেন।

৭. ১৯৫০ সালে চীন কর্তৃক তিব্বত করায়ত্ব হলে, পরবর্তীতে তানজিন গিয়েৎসোর নেতৃত্বে তিব্বতের স্বাধীকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। কিন্তু ১৯৫৯ সালে আন্দোলনটি ব্যর্থ হয়। এবং তানজিন গিয়েৎসোকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়। তখন চতুর্দশ দালাইলামা ভারতে নির্বাসন গ্রহণ করেন।

৮. তিব্বত থেকে ভারতে নির্বাসিত হয়েও তিনি পৃথিবীর কাছে অহিংসার বাণী পৌঁছে দেবার কাজ থেকে নিজেকে নিবৃত্ত করেননি। এজন্য তাকে ১৯৮৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/13/1563023926195.jpg

তানজিন গিয়েৎসোর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি—

• মানুষ টাকা কামাতে গিয়ে তার স্বাস্থ্যকে অগ্রাহ্য করে। অতঃপর স্বাস্থ্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে সে টাকাকে অগ্রাহ্য করে। তারপরে সে ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, কেননা সে বর্তমান সময়কে ভোগ-উপভোগ কিছুই করতে পারছে না। এর অর্থ হলো সে আসলে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যত কোনোখানেই বসবাস করছে না। সে এমন এক জীবন অতিবাহন করছে, যেন কোনোদিন সে মরবে না। আর এমনভাবে সে মারা যাচ্ছে, যেন ইতঃপূর্বে তার কোনো জীবন ছিল না।

• মনুষ্য সুখশান্তি আর মনুষ্য সন্তোষ এই দুটোই শেষপর্যন্ত আসে নিজের মধ্য থেকে। এরকম আশা করা নিতান্ত ভ্রান্ত চিন্তা যে, চূড়ান্ত সন্তোষ আসবে টাকা থেকে অথবা কম্পিউটার থেকে।

• মানুষ তৈরি হয়েছে ভালোবাসার জন্য। বস্তু তৈরি হয়েছে ব্যবহারের জন্য। পৃথিবীটা এত বিশৃঙ্খল কেননা বস্তু হয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার ব্যাপার, আর মানুষ হয়ে যাচ্ছে ব্যবহার্য বিষয়।

• প্রতিটি ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান মূলত একটাই বার্তা ধারণ করে। আর এটা হচ্ছে প্রেম, অনুকম্পা আর ক্ষমা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাদের উচিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা।

• আপনি যদি অন্যকে আনন্দিত রাখতে চান, তাহলে সহানুভূতির চর্চা করুন। আপনি যদি নিজেকে আনন্দিত রাখতে চান, তাহলেও সহানুভূতির চর্চা করুন।

• যতটুকু সম্ভব ভালো আচরণ আর ভালো চিন্তাচেতনার ব্যাপারে আমাদের উৎপাদনশীল থাকাটা খুব জরুরি বিষয়। কেননা, সুখশান্তি-প্রসন্নতা একই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী। এটা যেমনভাবে আপনার জন্য তেমনভাবেই ভষ্যিতে যারা আসবেন আপনার জীবনে, তাদের জন্যও।

• ধর্মের একমাত্র অভীষ্টই হলো নিজের সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা। অন্যদের নিন্দামন্দ করা নয়। বরং নিজের নিন্দামন্দ করতে পারা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। আমার অন্তর্গত রাগক্ষোভ, আসক্তি, ঘৃণা, ঔদ্ধত্ব আর পরশ্রীকাতরতা বিষয়ে আমি কতটুকু কাজ করেছি? এগুলো এমনসব বিষয়, যেগুলোকে দৈনিক একবার হলেও ভাবা উচিত।

• সহানুভূতি এবং পরমসহিষ্ণুতা কোনো দুর্বলতা নয়, এটা শক্তি।

• কঠিন অভিজ্ঞতাগুলোর কারণে জীবন অনেক সময়ই আরো অর্থবহ হয়ে ওঠে।

• আমি বিশ্বাস করি, সকলপ্রকার পীড়া আর কায়ক্লেশের কারণ হিসেবে আছে অজ্ঞতা।

• যদি বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারে, বুদ্ধিজমের ওপরে বিশ্বাস রাখা একটা ভ্রান্ত চিন্তা, তাহলে বুদ্ধিজমকে পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আমার দৃষ্টিতে, বিজ্ঞান এবং বুদ্ধিজম উভয়েই সত্যের সন্ধান আর বাস্তবতা বোঝার পক্ষে সমাবস্থায়ী। বাস্তবতার বিষয়ে বিজ্ঞান যেই আনুমানিকতার শিক্ষা দেয়, সেখানে সম্ভবত আরো অগ্রসর বোঝাবুঝির বিষয় রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এখানেই বুদ্ধিজম সমৃদ্ধশালী তার নিজস্ব বিশ্বকে দেখার ভঙ্গি নিয়ে।

• সতর্কতার মধ্য দিয়ে আপনি একটি নির্দিষ্ট আচার-ব্যবহার রপ্ত করতে পারবেন। এটা একটা পথ, এই পথে আপনার আরো শান্তি, আরো সহানুভূতি এবং আরো বন্ধুত্ব সাধিত হবে।

• পৃথিবী আর কোনো সফল ব্যক্তিত্ব চায় না। মরিয়া পৃথিবী এখন শুধু তাদেরকে চায়, যারা শান্তি স্থাপন করবেন, আরোগ্য প্রদান করবেন, পৃথিবীকে পুনরুদ্ধার করবেন, এবং নতুন গল্প শোনাবেন। যারা কল্যাণকামী এবং পেয়ারি।

• সত্যিকার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অনুরাগ থেকে। এটা ক্ষমতা কিংবা অর্থ নয়।

• অন্যের থেকে সেরা হওয়াটা কারো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে পারে না। লক্ষ্য হতে পারে, নিজেরই অতীতকাল থেকে আরো ভালো হয়ে ওঠা।

• সুখশান্তি কোনো রেডিমেড বিষয় নয়। এটা আপনারই কর্মকাণ্ড থেকে এসে থাকে।

• সংবেদনশীল থাকাটাই এই সময়ের আমূল সংস্কারবাদ।

• মানুষ অনেক ধরনের পথ দিয়েই পরিপূর্ণতা ও প্রশান্তির দিকে আগায়। কেউ আপনার পথে নেই মানে সে পথভ্রষ্ট, এমনটা নয়।

• এটা খুব বিরল অথবা প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার যে, একটা ঘটনা সকল দিক থেকেই নেগেটিভ সাব্যস্ত হবে।

• যতক্ষণ সম্ভব অনুগ্রহশীল থাকুন। এটা সবসময়ই সম্ভব।

• আশাবাদিতাকেই গ্রহণ করুন। ইট ফিলস বেটার।

   

৯৩ বছর বয়সে বৃদ্ধের অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

বৃদ্ধ জন স্টারব্রুক

  • Font increase
  • Font Decrease

শৈশবে খেলা, কৈশরে পড়ালেখা, যৌবনে চাকরি, মধ্যবয়সে সংসার, বৃদ্ধবয়সে একটা মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজে অবসরে সময় কাটিয়ে দেওয়া। কপাল খারাপ থাকলে বিছানাতেই শোয়া বা আধশোয়া থেকে মৃত্যুর দিন গোণা। সাধারণত এভাবেই মানুষের জীবন কেটে যায়। অনেকে আবার মধ্যবয়সের পরেই নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অথবা শরীরকে বিভিন্ন রোগের আবাসস্থল বানিয়ে দুর্বল হয়েই বেঁচে থাকেন। তবে খড়ের গাদায় সূচের মতো দু-একজন থাকে যারা একেবারেই ব্যতিক্রম। তেমনভাবেই আলোচনায় এসেছেন ৯৩ বছরের এক বৃদ্ধ।  তার ব্যতিক্রমী জীবনযাপনের ধারাই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে যুসমাজে।     

যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা জন স্টারব্রুক। তিনি একজন ওয়াটার পোলো খেলোয়াড়। এটি মূলত পানির মধ্যে বাস্কেটবলের মতো একধরনের খেলা। এইখেলার সাথে কুস্তি খেলারও কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। জনের বর্তমান বয়স ৯৩ বছর। এই বয়সেও যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল তিনি। সমবয়েসীদের যেখানে সোজা হয়ে দাঁড়াতেও ২ জনের সহায়তা লাগে, সেখানে এখনো ম্যারাথনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বেশ দক্ষ সাঁতারুও বটে! ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাঁতার কাটা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

প্রায় শতাব্দি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধের এমন কারিশমা দেখে চোখ ছানাবড়া হবার উপক্রম। জন মূলত একজন সাঁতারু। পেশাগতভাবে না হলেও অনেক ছোটবেলা থেকেই তিনি সাঁতার কাটেন তিনি। দেশের সম্মানজনক অনেপ্রতিযোগীতায় একাধিক বার চ্যাম্পিয়নের খেতাবও জেতেন। চাকরি করেছেন ‘ব্রিটিশ আর্মি মেডিক্যাল কর্পস’-। সেখানেও সাঁতারের দক্ষতার কারণে তার বেশ সুনাম ছিল।   

ম্যারাথনে দৌড়াচ্ছেন ৯৩ বছরের জন

তবে সাঁতারের পাশাপাশি এখন ম্যারাথেনেও অংশগ্রহণ করেছেন জন। ৫২ টির বেশি ম্যারাথনের দৌড় শেষ করেছেন তিনি। জানালেন এই বয়সেও তার এমন চ্যালেঞ্জিং সব কাজের অভিজ্ঞতা। সুস্থতা ধরে রাখার রহস্যও ফাঁস করলেন সকলের কাছে। ব্রিটিশ নাগরিক জন বন্ধুদের কাছে ‘দ্য লিজেন্ডনামেই পরিচিত। একই নামে তাকে আখ্যায়িত করছে ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো

জন স্টারব্রুক জানান, তিনি এখনো সপ্তাহের ৬ দিনই জিমে যাতায়াত করেন। বিশেষ কোনো খাদ্যাভাস নেই তার। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখতে পছন্দ করেন- এই যা। তাছাড়া প্রতিদিন সকালে পোরিজ খান তিনি। তবে তিনি কখনো ধূমপান করেননি। অ্যালকোহলও খুব সীমিত পরিমাণে সেবন করতেন। মূলত এই বয়সেও এটা সবল থাকার পেছনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া নিজের জীন আসল কারণ- বিশ্বাস করেন জন।

কারণ যাই হোক, প্রানবন্ত এই বৃদ্ধ বিশ্ববাসীকে অবাক করেছে। তার মতোই দৃঢ় মানসিকতা ধরে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুবক-যুবতীরা।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

;

প্রশ্ন আর উত্তর যেন পরস্পরের সাংঘর্ষিক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশ্ন থাকে এক আর তার উত্তর হয় ভিন্ন। এমন উত্তরপত্রের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়। এবার এমনই এক উত্তরপত্রের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে রীতিমতো সবাই অবাক! তবে এই ঘটনার জন্ম দেওয়া দেশটি বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি হিন্দি পরীক্ষায় ঘটেছে এমন কাহিনী।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে পরীক্ষার্থীর এমন উত্তর দেখে শিক্ষককেও হাসতে দেখা যায়। 

ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা হয়েছে @n2154j অ্যাকাউন্টের একটি আইডি থেকে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রশ্ন ছিল এমন, সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ (যৌগিক ব্যঞ্জনবর্ণ) কী? এই প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীটি একটি খাদ্য রূপক দিয়ে উত্তর দিল: "মাটার পনির এবং সব মিশ্র সবজি একত্রিত একটি খাবার।"

আরেকটি প্রশ্ন ছিল "অতীত কাল কাকে বলে?" এর উত্তরে ওই পরীক্ষার্থি লিখেছে, "যখন অতীত আমাদের অতীতের আকারে আসে, তখন তাকে অতীত কাল বলা হয়।"

ভিডিও অনুযায়ী আরও একটি প্রশ্ন ছিল "বহুবচন কাকে বলে?" এর উত্তরে সে লিখেছে "যে পুত্রবধূ তার শ্বশুরবাড়ির কথা শোনে তাকে বহুবচন বলে।"

শিক্ষার্থীটির এমন উত্তর শুনে হাসিতে ফেটে পড়েন শিক্ষক। এমন উত্তরগুলোকে শিক্ষক ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যদিও এমন উত্তরের জন্য তাকে পুরোপুরি হতাশ করা হয়নি। তাকে ১০ মার্কের মধ্যে ৫ নম্বর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক পরে তার উত্তরপত্রে লিখে দিয়েছিলেন, এই ৫ মার্ক তোমার মস্তিষ্কের জন্য, ছেলে।

ভিডিওটি দেখে সবাইকে হাসির ইমোজি দিতে দেখা যায়। সম্পূর্ণ নম্বর না পাওয়ায় অনেকেই যুক্তি দিয়ে লিখেছেন, ছাত্রটি তার কৌতুক প্রতিভার জন্য পূর্ণ নম্বর পাওয়ার যোগ্য।

তবে এমন ঘটনা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র এবং শিক্ষকের হাতের লেখা সন্দেহজনকভাবে একই রকম।

অন্য এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, "প্রশ্ন এবং উত্তর একই হাতের লেখা"। 

;

ফেনী শহরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কৃষ্ণচূড়া



মোস্তাফিজ মুরাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

'কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে' জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে ফুটে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতিকে দান করেছে লাল আভার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা। সাথে গ্রীষ্মের উত্তাপে শহরে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা জাতের ফুল। তীব্র তাপদাহের পর কালবৈশাখী, এরপর মাঝারি বৃষ্টির মধ্যে ফুলের আগমন। এতে রঙের উল্লাসে মেতে উঠেছে ফেনী শহরবাসী।

ফেনী শহরের কোর্ট বিল্ডিং, এলজিইডি, পুলিশ লাইন, নবীন চন্দ্র সেন কালচারাল সেন্টার, ফেনী সরকারি কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। এটি একদিকে প্রকৃতিকে যেমন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে, অন্যদিকে এর সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে তরুণ-তরুণী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ ফুলপ্রিয় পথচারীদের। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে, সরকারি দফতরসহ স্কুল-কলেজে কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল ও উজ্জ্বল সবুজ পাতার সংমিশ্রণ দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে চারপাশ।


কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণে মুখরিত হয়ে আছে পুরো শহর। শহরের মূল সড়কের ডিভাইডারে পৌরসভার উদ্যোগে লাগানো হাসনাহেনা, রজনিগন্ধা, গন্ধরাজসহ নানা জাতের ফুল গাছে ফুল ফুটেছে। এটি একদিকে বাড়িয়েছে সৌন্দর্য অন্যদিকে হেঁটে কিংবা রিকশায় চলাচল করলে পাওয়া যায় এসব ফুলের সুঘ্রাণ।

ফেনী শহরের কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ সৌন্দর্য দেখে ফুলপ্রিয় পথিকরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুল প্রকৃতিকে অনন্য সাজে সাজিয়েছে। এই ফুলের সৌন্দর্যের কারণে পথচারীরা একবার হলেও এই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এর গাছের উপর নজর দিবে। পাশাপাশি তীব্র গরমে অন্যান্য ফুলের সুঘ্রাণে চারপাশ মুখরিত হওয়াতে ক্লান্তিতা কিছুটা হলেও কমছে।


তারা বলছেন, কৃষ্ণচূড়া ফুলের এই নান্দনিক দৃশ্য দেখতে এর গাছ রোপণ করা জরুরি। রাস্তা প্রশস্তকরণ, ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলা হয়। অন্যান্য গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া রোপণ করলে একদিকে যেমন সৌন্দর্য বাড়াবে অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব হবে।

সাজিদ হাসান নামের এক পথচারী বলেন, কৃষ্ণচূড়া একদিকে যেমন প্রকৃতিতে অপরুপ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে, আরেকদিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাবে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে, আমার মতে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এই গাছটিও যুক্ত করা উচিত। তীব্র গরমের পর বৃষ্টি হলো, এরপর শহরে নানা রঙের ফুলের দেখা মিলছে, ফুলের ঘ্রাণে চলাচল করতেই ভালো লাগছে।

ফারজানা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ফুল আমার অনেক ভালো লাগে। আমাদের কলেজে বকুল তলা আছে, ক্যান্টিনের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সুযোগ পেলেই ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করি।

অনিক মোহন নামে একজন বলেন, রিকশায় করে যখন বাসায় ফিরি, শহরের রাস্তার মাঝে ভিডাইভারে লাগানো নানা জাতের ফুলের ঘ্রাণ মনকে আনন্দিত করে। রাতের বেলা শহর যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায়, তখন এ ফুলের সৌন্দর্য কয়েকশ’ গুণ বেড়ে যায়।

সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়া লাগানো হলে সৌন্দর্য বাড়বে বলে মনে করেন পথচারী মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য যে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, ওই গাছগুলোর জায়গা কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগালে রাস্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে।

একই কথা বলেন শহরের ব্যবসায়ী নাদিম আহমেদ। তিনি বলেন, সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এই গাছ রোপণ করা উচিত আমাদের। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে অন্যন্যা গাছ রোপণ করার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া গাছ রোপণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। যেগুলো শহরে আছে তাতেই সৌন্দর্য বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ, আরও যদি লাগানো যায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে আমাদের শহর।

কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় কম (সর্বোচ্চ ১২ মিটার) হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশি অঞ্চল ব্যাপী ছড়ায়।

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ থাকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের রং উজ্জ্বল লাল। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সব পাতা ঝরে যায়। বাংলাদেশে বসন্ত কালে এ ফুল ফোটে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

জানা যায়, অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ানোর পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর পাতা, মূলের বাকল ও ফুল ভেষজ গুণাগুণ সম্পূর্ণ, যা জ্বর ও খুশকি নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ভেষজটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থরাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। কৃষ্ণচূড়া গাছের শিকড়, বাকল এবং ফুল সবই পরজীবী সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।

;

হলুদ আভায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী 



শহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ
ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

ছবি: প্রাণের উচ্ছ্বাসে সূর্যমুখী

  • Font increase
  • Font Decrease

মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী। বাস্তব জীবনের নিস্তব্ধতা ভাঙছে তার হলুদ আভায়। মৌমাছির আলিঙ্গন পেতে ছড়াচ্ছে উষ্ণ মুগ্ধতা। হলুদের কারুকার্যে বিমোহিত হচ্ছে পথিকের মন। লুকায়িত সৌন্দর্য প্রকৃতির মাঝে তুলে ধরে প্রবল আকর্ষণে টানছে দর্শনার্থীদের। সবুজ পাতা ভেদ করা সেই অনিন্দ্য হাসি যেন কৃষকের মুখেরই প্রতিচ্ছবি। সূর্যমুখী ফুল চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।

সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯ দশমিক ৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। ফুলের বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের উৎস হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে এ ফুলের চাষ শুরু হলেও কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পায় নি বহুদিন। পরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর জেলা, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলাতে এর ব্যাপক চাষ হচ্ছে।

সূর্যমুখীর বাঁধভাঙা হাসি আর প্রাণের উচ্ছ্বাস

সোমবার (১২ মে) সকালে সরেজমিনে নওগাঁ সদর উপজেলার মুক্তির মোড় কেন্দ্র শহীদ মিনারের পাশে দেখা যায়, সূর্যমুখী বাতাসে; দুলছে আলোর প্রতিফলনে পাপড়িগুলো যেন চকচকে হলুদ আভা ছড়াচ্ছে। মৌমাছি এক ফুল থেকে অন্যফুলে মধু আহরণে ছুটাছুটি করছে আর এসব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে পথচারীরা। এছাড়াও নওগাঁর বেশ কিছু অঞ্চলে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। একদিকে যেমন ফুলগুলো সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে তেমনি বীজ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে সূর্যমুখীর বীজ। সূর্যমুখী গাছ শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

প্রতিদিন ভোরে সূর্যমুখী বাগানের সকল গাছ অনেকটা পূর্বদিকে মুখ করে থাকে। যেদিকে সূর্য দেখা দেয় এবং ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকে। সূর্যের সাথে সাথে সূর্যমুখীগুলোও ধীরে ধীরে নিজেদের দিক পাল্টাতে থাকে। সূর্য যেদিকে যায় তারাও সেদিকে যায়। সবসময়ই এগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে অস্ত যায় তারাও তখন পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। অস্ত যাওয়ার পরে তারা রাতব্যাপী আবার উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়। এভাবে শুকিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এই চক্র চলতেই থাকে।

সূর্যের সাথে সাথে নিজেদের দিকও পাল্টাতে থাকে সূর্যমুখী

তবে সবার মাঝে একটি প্রশ্ন অনেক সময় ঘুরপাক খায় যে সূর্যমুখী ফুল কেন সূর্যে দিক হয়ে থাকে! সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি দল সূর্যমুখীর এই দিক পরিবর্তন সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসে সূর্যমুখীরা তাদের নিজস্ব সার্কাডিয়ান চক্রে আবদ্ধ। এই চক্র সচল থাকার কারণে সূর্যমুখীরা সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। গবেষকরা সায়েন্স জার্নালে তাদের গবেষণার বিস্তারিত প্রকাশ করেছেন। সার্কাডিয়ান চক্র বা সার্কাডিয়ান ঘড়িকে অনেক সময় ‘দেহঘড়ি’ নামেও ডাকা হয়। মানুষের মাঝেও এই চক্র বিদ্যমান। যেমন প্রত্যেক মানুষেরই দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম চলে আসে।

পথচারী রায়হান বলেন, ফুল শুভ্রতার প্রতীক ও পবিত্র। ফুলকে যারা ভালোবাসে তাদের মনটাও সুন্দর। সূর্যমুখী ফুল সব ফুলের চেয়ে আলাদা কারন সূর্যের দিক মুখ করে বেশিরভাগ থাকে এ ফুল। বিশেষ করে দুপুর শুরু হলে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এ ফুল যা দেখতেও খুব সুন্দর লাগে তাছাড়া এ ফুলের বীজ থেকে তেল হয় যা অনেক স্বাস্থ্যকর।

ক্ষুদে শিক্ষার্থী আফরিন (১০) জানায়, আমি ফুল খুবই ভালোবাসি আর সূর্যমুখী ফুলগুলো হলুদ হবার কারনে আরো বেশি ভালো লাগে। নামটা যেমন সুন্দর তেমনি মুগ্ধতাও ছড়ায়। ফুলগুলো থেকে তেল হয় তাই কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। আমরা দূর থেকে দেখেই শান্তি পাই।

সূর্যের সাথেই একাত্মতা সূর্যমুখীর

স্থানীয় বাসিন্দা আরেফিন তুহিন বলেন, স্বল্প পরিসরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা সূর্যমুখী ফুলের গাছ লাগিয়েছে তারা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ফুল মানেই সুন্দর সূর্যমুখীও এটিএ ব্যাতিক্রম নয়। মাঝে মাঝে যখন ফুলের দিকে চোখ যায় খুব ভালোলাগা কাজ করে। এ ফুল দেখতে যেমন সুন্দর এটির তেল ও খুব পুষ্টিকর।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চলতি অর্থবছরে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ হেক্টর ও অর্জন হয়েছে ৬৫ হেক্টর এবং মোট উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন- সূর্যমুখী একদিকে যেমন শুভ্রতার প্রতীক আবার অন্যদিকে বীজ থেকে তেল উৎপাদন হয় আবার মধুও পাওয়া যায়। বাজারে যে ভৈজ্যতেল গুলো রয়েছে যেমন, সয়াবিন,সরিষা, পাম-ওয়েল ইত্যাদি এগুলোর চেয়েও অনেক বেশি পুষ্টিগুণ আছে সূর্যমুখীর তেলে যা স্বাস্থ্যকর এবং স্বাস্থ্যর জন্য খুবই উপকারী। আমরা বেশি বেশি উৎপাদনে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ দিয়ে থাকি।

;