মেঘপাহাড়ের ডাক-১০

চেরাপুঞ্জি: বৃষ্টির বিশ্ব বসতি



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চেরাপুঞ্জিকে আমি নাম দিয়েছি বৃষ্টির বিশ্ব বসতি। এখানে বৃষ্টি আকাশ থেকে পড়ে না। যে মেঘ থেকে আমরা বৃষ্টি ঝরতে দেখি, সে মেঘেরা বাস করে সেখানে। আর মেঘবৃষ্টির পরিমাণ এতো বেশি যে বহু আগে তা বিশ্বরেকর্ড করে বসে আছে। সে হিসেবে আমরা আজ বৃষ্টির বিশ্ব বাড়ির অতিথি। কিন্তু বৃষ্টি কই? ঘনমেঘে চারপাশ ছেয়ে আছে, বৃষ্টির কোনো আলামত দেখতে পাচ্ছি না। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুরা ফেসবুকে আমার চেক ইন আর গুগল মানচিত্রের লোকেশন দেখে ‘ওখানে বৃষ্টি পাবে না, চেরাপুঞ্জিতে এখন বৃষ্টি হয় না’ বলে যে মন্তব্য করেছিল, তাই কি তবে সত্য হতে চলেছে? রেইনকোট আর ছাতাগুলো টাটা সুমোর পেছনের বুটে পড়ে আছে। গায়ে চড়ানো তো দূরে থাক, এগুলোর মোড়ক পর্যন্ত খোলা হয়নি। অথচ যাওয়ার প্রস্তুতির সময় ভ্রমণসঙ্গী গিন্নী ও কনিষ্ঠপুত্রধনের জিজ্ঞাসার জবাবে বলেছি, ‘রেইনকোট-ছাতার এন্তেজাম, কারণ এবারের ভ্রমণ বৃষ্টিমুখর। বৃষ্টি দেখতেই শিলং যাচ্ছি’।

থাংখারাং পার্কের লুকআউট পয়েন্ট থেকে কিনরেম ফলস দেখে বের হতেই মেঘের ঘনঘটা। বৃষ্টি এলো এলো। বৃষ্টিকে স্বাগত জানাচ্ছি বটে, উদ্বেগও আছে। ভারিবর্ষণ শুরুর আগেই শেলা-সোহরা সড়কের কাঁচা অংশ অতিক্রম করে ওপরের পাহাড়ের দিকে উঠে যেতে হবে। আসার সময় সড়কের কাঁচা অংশের যে অবস্থা দেখেছি, ঢলে তা যে গাড়ি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।

পিচঢালা নতুন রাস্তায় এলেই গাড়ি ঊর্ধ্বগামী হতে থাকে। সেভেন সিস্টার্স ফলসের এর দিকে এগোতে থাকলেই গাড়ির মধ্যে তুসুর চিৎকার ‘মেঘ মেঘ, পাহাড়ের নিচে নেমে যাচ্ছে মেঘ’। সবাই তাকিয়ে দেখি, ডানের  উপত্যকাজুড়ে মেঘের ভেলা পাহাড়শীর্ষসমূহের নিচের দিকে পরিভ্র্রমণরত। সবুজ পাহাড়ের কোলে শুভ্র মেঘের এই পরিভ্রমণ চোখকে প্রশান্ত করে দেয় আমাদের। চোখের সামনে ইউরোপীয় সৌন্দর্য দেখে আমরা গাড়ি থেকে না নেমে আর স্থির থাকতে পারি না। জায়গাটির নাম নেই। আমি গুগলে দেখলাম, কিছুদূরে একটা নামের উল্লেখ রিংগুড নামে একটা নামের উল্লেখ আছে। সেভেন সিস্টার্স ফলস থেকে জায়গাটি অন্তত তিন কিলোমিটার নিচের দিকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/19/1560949374296.jpg

ডাইনের ভ্যালির দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘপাহাড়ের বিরামহীন লুকোচুরি। কখনো পাহাড়ের নিচে নেমে যাচ্ছে মেঘ। কখনো আবার পাহাড়কে চুমু দিয়ে উঠে যাচ্ছে ওপরে। কোনো কোনো মেঘের দল একস্থানে ভেসে রয়েছে। কিছু মেঘ উড়ছে একাধিক পাহাড়ের মাঝখানে ঢেউখেলানো ভাঁজে ভাঁজে। এই অভূতপূর্ব চোখের সাড়ে তিন ইঞ্চি লেন্সে তা রেকর্ড করে মস্তিষ্কের ডার্করুমে রেখে দেই। এই লেখাটি আসছে মস্তিষ্কের ডার্করুম থেকে সেই চলচ্ছবি ডেভেলপের মধ্য দিয়ে। মোবাইল ক্যামেরায় কিছু মেঘকে ক্যামেরাবন্দী করতেও আমাদের  দলটি ভুল করলো না। এই দৃশ্যপটটির মজা হচ্ছে এখান থেকে সেভেন সিস্টার্স ফলসটিও দেখা যায়। তবে সেভেন সিস্টার্স যে চুনাপাথরের পাহাড় থেকে নামছে, জায়গাটি তার নিচে বলে জলপ্রপাতটি ওপরের দিকে দৃষ্টিগোচার হয়।  

আমরা পাহাড়ি বাঁক নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেভেন সিস্টার্স বা মাওসমাই জলপ্রপাতের ভিউপয়েন্টে পৌঁছাই। রাস্তার পাশে বড়সড়ো পার্কিং, দোকানপাট। গাড়ি পার্ক করার জলপ্রপাত উপভোগ দেখতে নেমে পড়লাম আমরা। আমরা বলতে, চারজন। জলি,  তুসু আমি আর কবি কামরুল। হোস্টগণ অনেকবার আসায় গাড়িতেই বসে রইলেন। ঝির ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। তবে আমরা ছাতা বা রেইনকোট তখনো বের করিনি। জামাকাপড়ের ওপর যে বৃষ্টিসহনক্ষম জ্যাকেট আছে তা দিয়েই চালানো যাচ্ছে। আমার গায়ে লাল জ্যাকেট। যাত্রাকালে জলিকে বলেছিলাম, মেঘরাজ্য মেঘালয়ের সব ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে সবুজ। সবুজের ওপর কন্ট্রাস্ট করতে গায়ের পোশাক হতে হবে জুৎসই রঙের, তাতে ছবি ভাল ফুটবে। সেমতে, জামার ওপরে চাপিয়েছি লাল জ্যাকেট। যে লোকেশনে দাঁড়িয়েই পোজ দিই না কেন ছবি হচ্ছে ‘সেইরকম’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/19/1560949438025.jpg

রেলিঙঘেরা ভিউপয়েন্টের নিচে পাহাড়ি উপত্যকা। অদূরে পাহাড়ের গা’ দিয়ে নামছে সাত সাতটি জলপ্রপাতের ধারা। দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়, হা হয়ে ক্ষণিক সবকিছু ভুলে দাড়িয়ে থাকতে হয়। একহাজার ৩৩ ফুট উচ্চতার সেভেন সিস্টার্স বা মাওসমাই ফলস ভারতের অন্যতম দীর্ঘ জলপ্রপাতের মর্যাদা বহন করছে। জায়গাটি পর্যটকের পদভারের মুখরিত। ওয়াও ওয়াও ধ্বনি, আবাল বৃদ্ধ বণিতার গুঞ্জন, ক্যামেরা, ট্যাব, মোবাইলের ক্লিক ক্লিক। এখন প্রযুক্তির যুগ। মিডিয়া এখন আর সনাতনধারার পত্রিকা, বেতার, টেলিভিশনের মধ্যে সীমিত নেই। সোস্যাল মিডিয়া যুগে পর্যটন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কেউ ফেসবুকে লাইভ দিচ্ছে, কেউ ক্যামেরার সঙ্গে সেলফি স্ট্যান্ড লাগিয়ে সেলফি তুলছে, কেউ জলপ্রপাত পেছনে রেখে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বর্ণনা দিয়ে ভিডিও করছে। নিশ্চিত ইউটিউব চ্যানেলে ছাড়া হবে এসব ভিডিও। প্রযুক্তিযুগে পর্যটনস্পটগুলোর চেহারাও গেছে বদলে গেছে। তুসু জলপ্রপাতকে পেছনে রেখে সেলফি তুলতে চেষ্টা করছে। আমি একজায়গায় ‘সেলফি ডেঞ্জার জোন’ লেখা সাইনবোর্ড দেখিয়ে তাকে সাবধান করে দিলাম।

দুপুরে শিলং থেকে বের হওয়ার সময় থেকে এখন পর্যন্ত চা খাইনি। ইতোমধ্যে মধ্যাহ্নের সময়ও চলে যাচ্ছে। হোস্টগণ বাসা থেকে খাবার দাবার সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। স্ট্রিমলেট ডেখার আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছেন, চেরাপুঞ্জির ‘দোকান’ সড়কে তাঁর বোনের বাড়ি আছে। সেখানে দুপুরের খাওয়ার পর চা পানের ব্যবস্থা হবে। আমাদের পেটে ততোক্ষণে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে। আমরা তা ভুলে আছি উদার প্রকৃতি দেখার ঘোরে। খাবার কথা মনে হলে, আগে খাওয়ার কাজটি সারার জন্যই সবাই একমত হওয়া গেল। চেরাপুঞ্জি সদরের ডুকান সড়কে ডেখারের বোনের বাড়ি। গাড়ি দ্রুত সেদিকে ছুটে চললো।

   

বিখ্যাত মিমের ভাইরাল কুকুর কাবোসু আর বেঁচে নেই



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন মানুষ জুড়তে শুরু করলো ইন্টারনেটে নতুন অনেক নতুন উদ্ভাবনার দেখা মিললো। এমন এক ব্যাপার হলো মিম। বর্তমান সময়ে সেন্স অব হিউমারের (রসবোধ) এক অন্যতম মাধ্যম এই মিম। বিশেষত কোনো ছবি ব্যবহার করে তাতে হাস্যরসাত্মক কিছু জুড়ে দিয়ে এইসব মিমগুলো বানানো হয়।

২০১৩ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই একটি ছবি ভাইরাল হয়। পরবর্তী সময়ে যা একটি বিখ্যাত ‘মিম ম্যাটেরিয়াল’-এ পরিণত হয়। কমলা-সোনালী এবং সাদা রঙের সম্বনয়ে বাহারি লোমের এই কুকুরটির নাম কাবোসু। কাবোসুর বয়স ১৯ বছর।

দুর্ভাগ্যবশত কুকুরটি আর বেঁচে নেই। ২৪ মে (শুক্রবার) দীর্ঘদিন ধরে রোগাক্রান্ত থাকার পর অবশেষে দেহ ত্যাগ করে কুকুরটি। কুকুরটির মালিক আতসুকো সাতো (৬২) জাপানের চিবা প্রিফেকচারের সাকুরা শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক।শুক্রবার তার প্রকাশিত ব্লগে একটি দুঃখের কবিতা আবৃত্তির পর তিনি এই খবরটি নিশ্চিত করেছেন।

ভাইরাল কুকুর কাবোসু / ছবি: সংগৃহীত

১৯ বছর বয়সেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ২৬ মে রবিবার কাবোসুর স্মরণে একটি স্মরণ সভার আয়োজনও করা হবে। কুকুরটির মারা যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সকলে দুঃখ প্রকাশ করছে।

২০২২ সালে ক্রোানক লিম্ফোমা লিউকুমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। সেই থেকেই কাবোসুর চিকিৎসা চলছিল। তবে দুঃখের বিষয়, সে আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলো না।

কাবোসুর ত্যাড়া চোখে দৃষ্টির একটি ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এটি ইন্টারনেটে সবচেয়ে আইকনিক এবং স্বীকৃত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এমনকি ক্রিপ্টো কারেন্সির দুনিয়াতেও তার নাম ছিল।

;

বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা। বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এক মহান দিন এটি। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। একই দিনে মহাজ্ঞানী বুদ্ধত্ব এবং বুদ্ধ মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এই তিথিকে বলা হয় বৈশাখী পূর্ণিমা, যা আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে পালন করা হয়। বৈশাখ মাসের এই তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। ত্রি-স্মৃতিবিজড়িত এ তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যন্ত বিশাল।

খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে এই দিনে আড়াই হাজার বছর আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের তৎকালীন কপিলাবস্তু দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী লুম্বিনী কাননে মাতা রানী মায়াদেবীর পিতৃগৃহে যাবার পথে শালবৃক্ষের নিচে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৮ অব্দে ৩৫ বছর বয়সে বোধিবৃক্ষমূলে কঠোর সাধনা বলে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে ৮০ বছর বয়সে একই দিনে ৪৫ বছর দুঃখ মুক্তির ধর্ম প্রচার করে কুশীনগরে যুগ্মশাল তরুণমূলে চিরনির্বাসিত হয়ে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন অর্থাৎ তিনি দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। পৃথিবীতে আর জন্মলাভ করবেন না। গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম ছিল রাজা শুদ্ধধন ও গৃহী নাম ছিল সিদ্ধার্থ। ২৫২৭ বছর আগে ভারতবর্ষে যখন ধর্মহীনতা মিথ্যা দৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্বাস্বে ধর্মে সমাজের শ্রেণি বৈষম্যের চরম দুরবস্থা ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত, প্রাণী হত্যায় চরম তুষ্টি ,তখন শান্তি মৈত্রী অহিংস সাম্য ও মানবতার বার্তা নিয়ে মহামতি বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে।

গৌতম বুদ্ধ অহিংস ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। এই জীবজগৎ অনিত্য দুঃখ অনাত্মাময় প্রাণমাত্রই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। অস্থায়ী বা অনিত্য কার্যতকারণের অধীন। তিনি জীবনের প্রগাঢ় খাটি চার আর্যসত্য আবিষ্কার করলেন। জগতে দুঃখ আছে, দুঃখের অবশ্যই কারণ আছে, দুঃখের নিবৃত্তি আছে, দুঃখ নিবৃত্তির উপায় আছে। দুঃখ নিবৃত্তির উপায় হলো নির্বান লাভ। এই নির্বান লাভের ৮টি মার্গ আছে। যেমন সম্যক বা সঠিক দৃষ্টি , সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক জীবিকা, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি, সম্যক সমাধি। এই পথ পরিক্রমায় শীল সমাধি প্রত্তোয় নির্বাণ লাভের একমাত্র উপায়। সব প্রাণী সুখী হোক, পৃথিবীর সবচেয়ে পরম, মহৎ বাণী তিনি প্রচার করেছেন। শুধু মানুষের নয়, সব প্রাণ ও প্রাণীর প্রতি, প্রেম, ভালোবাসা, অহিংসা, ক্ষমা, মৈত্রী, দয়া, সহনশীলতা, সহমোর্মিতা, সহানুভূতি, মমত্ববোধ, প্রীতি, সাম্য, সম্প্রীতির কথা তিনি বলেছেন।

১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৫৪/১১৫ রেজুলেশন এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ভেসাক ডে হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ “ভেসাক ডে” হিসেবে পালন করে আসছে। বুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র এই দিনকে বিভিন্ন নামে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপালে বুদ্ধ পূর্ণিমা, লাওসে বিশাখ পূজা, ইন্দোনেশিয়া হারি ওয়াইসাক ডে, মালয়শিয়ায় ওয়েসাক ডে, মায়ানমারে ফুল ডে অব কাসন, সিঙ্গাপুরে হারি ভেসাক ডে নামে পালন করে থাকে আবার কেউ বুদ্ধ জয়ন্তী দিবস হিসেবেও পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এস্তেনিও গুতেরেজ ভেসাক ডে উপলক্ষে বলেছেন, “On the day of Vesak, Let us celebrate Lord Buddha’s wisdom by taking action for others with compassion and solidarity and by renewing our commitment to build a peaceful world.”

ফিলিস্তিনে আজ চরমভাবে মানবতা বিপন্ন হচ্ছে। অশান্তিময় এই পৃথিবীতে বুদ্ধের মৈত্রী, সংহতি, সাম্য, মানবতা ও শান্তির বাণী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আজও প্রাসঙ্গিক এবং খুব প্রয়োজন। বিশ্ব আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। পরিবেশ দূষণ, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জলাবদ্ধতা, বৃক্ষ নিধন, বন উজাড়, জীব বৈচিত্র্য হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন এই সবুজ গ্রহের ইতিহাসে নজিরবিহীন। গৌতম বুদ্ধই প্রথম বৃক্ষকে এক ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট জীবরূপে আখ্যায়িত করেছেন। বুদ্ধ ছিলেন বিশুদ্ধ পরিবেশবাদী দার্শনিক। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাই বুদ্ধের জন্ম বুদ্ধত্ব লাভ ও মহা পরিনির্বাণ বৃক্ষের পদমূলের বিশুদ্ধ পরিবেশ মন্ডিত পরিবেশে সংগঠিত হয়েছিল।

এই পবিত্র দিনে বৌদ্ধরা বিভিন্ন দেশে দেশে সব প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করেন। অশান্ত পৃথিবীতে পরিবেশ সংরক্ষণে বুদ্ধের বাণী নীতি ও আদর্শ বিশ্ব মানবতার শিক্ষা, দর্শন, চিন্তা চেতনা ,ভাবনা সুন্দর, শান্ত, সাম্যময় পৃথিবী গড়ার বিকল্প নাই। সব প্রাণী সুখী হোক, দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করুক।

অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
চিকিৎসক, লেখক, সংগঠক ও গবেষক

;

মহামতি সিদ্ধার্থ গৌতম



প্রদীপ কুমার দত্ত
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।
ধর্মং শরণং গচ্ছামি।

সিদ্ধার্থ গৌতম খৃষ্টপূর্ব ৫৬৪সালে(এই সাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে) কপিলাবস্তুর লুম্বিনীতে (বর্তমানে নেপালের অন্তর্গত) শাক্য রাজা শুদ্ধোধন এর প্রাসাদে তাঁর মহিষী মায়া দেবীর ঔরষে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ছিল বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথি।

তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন ভাবুক প্রকৃতির। রাজকার্য তাঁকে আকর্ষণ করতো না। জীবনের গূঢ় রহস্য নিয়ে তিনি চিন্তা করতেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংসারে কর্মই প্রধান। বাকি সবই অনিত্য। তিনি ভাবতেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে। যৌবনের এক পর্যায়ে প্রাসাদে মাতা, পিতা, স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে রেখে এক রাতে তিনি বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রহণ করলেন শ্রমণের জীবন।

একসময় তিনি গয়ার নিকট উরুবিল্ব (বর্তমানে ভারতের বিহারের বৌদ্ধগয়া) গ্রামে এক বৃক্ষতলে মোক্ষলাভের উপায় ভাবতে জাগতিক সমস্ত আকর্ষণ ত্যাগ করে ধ্যান করতে বসেন। ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি বাহ্যজ্ঞান লুপ্ত অবস্থায় এক বৈশাখী পূর্ণিমায় তিনি আলোকপ্রাপ্ত হন। তিনি লাভ করলেন দিব্যজ্ঞান। এই জ্ঞানই হলো অজ্ঞানতা ও অশিক্ষা, লোভ এবং আকাঙ্খা, রোগ ও দুঃখভোগ এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। সেই মুক্তিলাভের উপায় হলো জীবন যাপনে শুদ্ধাচার।

তাঁর আশি বছরের জীবনের বাকি অংশ তিনি কাটালেন তাঁর মোক্ষলাভের সূত্র এবং লোভ, হিংসা-দ্বেষহীন পরোপকারের জীবন ধারণের জন্য শিষ্য এবং শিষ্যদের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করে। বারানসীর অদূরে সারনাথে প্রথম পাঁচজনকে তিনি শিষ্যত্বে বরণ করেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বর্ধিত হতে থাকে এবং প্রচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। বৃহৎ এক জনগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় তাঁর এই প্রচার।প্রথমে গাঙ্গেয় অববাহিকাতে চলে এই প্রচারাভিযান। পরে তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এইভাবে শান্তির অমোঘ বাণী প্রচারে বাকি জীবন কাটিয়ে তিনি যখন বুঝলেন তাঁর ধরাধাম ত্যাগের সময় হয়েছে, তখন তিনি তাঁর প্রচার সাথী শিষ্যদের উদ্দেশ্যে শেষ দেশনা প্রদান করেন। সেখানে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন যে তিনি তাঁদের পথের দিশা দেখিয়ে গেলেন মাত্র। মানুষ মরণশীল।মানব জীবনে দুঃখ,কষ্ট জরা,ব্যাধি অবশ্যম্ভাবী।তাই জীবদ্দশায় উচিৎ সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্টির সকল জীবের কল্যাণসাধন করা।তাঁদেরকে নিজের আত্মাকে আলোকিত করে নিজেকেই আলোকপ্রাপ্ত হতে হবে।

মল্ল রাজত্বভুক্ত কুশিনগরে তিনি মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হন। কি আশ্চর্য! সেই দিনটিও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই তিন বিশেষ দিনের সমষ্টিকে ভেসাক ডে হিসাবে পালন করা হয়। ভারত থেকে তিব্বত হয়ে চীন, জাপান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সহ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বৌদ্ধ ধর্ম একসময় ছড়িয়ে পড়ে। যার বিপুল প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

শাক্যমুণি গৌতমবুদ্ধর প্রধানতম শিক্ষা ও প্রার্থনা হলো জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক। সিদ্ধার্থ গৌতমের ধর্ম গ্রহণ করে সম্রাট অশোক তা তাঁর রাজত্বের দিকে দিকে ছড়িয়ে দেন। সম্রাট অশোক লুম্বিনীতে তীর্থভ্রমণ করাকালীন একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। সেই স্তম্ভে ব্রাহ্মী লিপিতে শাক্যমুনি বুদ্ধ কথাটি পাওয়া যায়। এর অর্থ করা যায় শাক্যদের মধ্যে তপস্বী ও আলোকপ্রাপ্ত।

মহামতি বুদ্ধের বাণী প্রথম দিকে ছিল শ্রুতি নির্ভর। পরবর্তীতে তা ভিনায়া বা প্রচারকদের (বর্তমানকালের শ্রমন বা ভান্তে) জন্য প্রতিপালনীয় বিধান ও সুত্ত পিতাকা বা বুদ্ধদেবের উপদেশসমূহ তাঁর শিক্ষা হিসাবে লিপিবদ্ধকরণ করা হয়। আরও পরে তাঁর অনুসারীরা অভিধর্ম, জাতক কাহিনী, মহাযান সূত্র ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তার মধ্যে জাতক কাহিনীতে সিদ্ধার্থ গৌতমের পূর্ববর্তী জন্মসমূহের কথা লিপিবদ্ধ আছে। আলোকপ্রাপ্ত হয়ে পুনর্জন্ম থেকে মহামুক্তির আগে তিনি পূর্ব জন্মসমূহের কথা স্মরণ করতে পেরেছিলেন।বেশিরভাগ বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আদিকালে পালি ভাষায় লিখিত হয়েছিল।

জ্ঞান অন্বেষণকে বৌদ্ধ ধর্ম সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ যুগেই পৃথিবীর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় রূপে পরিচিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। আমরা গর্ব বোধ করতে পারি যে আমাদের মাটির সন্তান অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বৌদ্ধ ধর্মকে তিব্বতে প্রচারে প্রধানতম ভূমিকা রাখেন।তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম রাজধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ও সেখান থেকে চীন,কোরিয়া,জাপান সহ এশিয়ার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ইতিহাসের এক পর্যায়ে ভারতবর্ষের বিশাল এলাকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রাবল্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।সম্রাট অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা এই ধর্মকে সিংহল দ্বীপে(বর্তমান শ্রীলঙ্কা) প্রসারিত করেন।আজও পৃথিবীতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা বিভিন্ন ধারায় তাঁদের মহান শান্তির ধর্মকে পালন ও সংরক্ষণ করে যাচ্ছেন। 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও পরিব্রাজক

;

বিশ্ব চা দিবস



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা / ছবি: বিং এআই

চা / ছবি: বিং এআই

  • Font increase
  • Font Decrease

কনকনে শীতে কাপছেন। সোয়েটার-চাদর মুড়ে বসলেও গা ভেতর থেকে কাঁপুনি কমছে না। অথবা কাজ করতে করতে মাথা ঝিমঝিম করছে। অস্বস্তি সহ্যও হচ্ছে না, অথচ এই স্বল্প ব্যথায় ঔষধও তো খাওয়া যায় না! কিংবা বাসায় আসা কোনো মেহমান বা বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসেছেন। শুধু মুখে বসে থেকে গল্প করতে কতক্ষণই বা ভালো লাগে? এরকম সব পরিস্থিতি সামাল দিতেই রয়েছে- চা।

আজ ২১ মে বিশ্ব চা দিবস। তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা চিন্তা করা হয়। বিশ্ব সামাজিক ফোরাম এই সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারপরের বছর ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ , চা দিবসের আয়োজন করে।   

 চা পাতা তোলা / ছবি: বিং এআই

চায়ের জন্ম হয় ঠিক কবে হয়েছিল তার নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, আজ থেকে ৫ হাজার বছরেরও আগে সৃষ্টি হয় এই পানীয়। এশিয়ারই বৃহত্তর দেশ চীনে এর জন্ম হয়। তৎকালীন সময়ের পাওয়া জিনিসপত্রে চায়ের অস্তিত্বের প্রমান মেলে। ক্যামেলিয়া সিনেনসিস উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন হয় এই পানীয় তাই চীনের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।  সাধারণ পাহাড়ি অঞ্চলে শক্ত পাথুরে মাটিতে জুমচাষে চা উৎপন্ন করা হয়। আমাদের দেশেও বৃহত্তর সিলেটঅঞ্চল এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশে চা পাতা চাষকরা হয়।    

কম-বেশি চা খান না- এমন মানুষ হাতে গুনতে পারা যায়। মূলত উদ্ভিজ এই পানীয় জনপ্রিয় তার অনন্য স্বাদ, ঘ্রাণ এবং উপকারের জন্য। কফি অনেকেই পছন্দ করেন। তবে চিকিৎসকরা অনেককে কফির উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। চায়ের ক্ষেত্রে সেই বালাই নেই। তাই চা-কে অন্য সব পানীয়ের মতো শুধু একটি পানীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বরং একে খাদ্যতালিকার পানির পরে পানীয় হিসেবে এক বিশেষ অংশ হিসেবে মনে করা হয়।  

চাষ করা চা পাতা শুকিয়ে নিয়ে, গরম পানি বা দুধে চিনি ও অনেকক্ষেত্রে মশলা মিশিয়ে শুকনো সেই পাতা দিয়ে বানানো হয় চা। আমাদের দেশ হোক বা বাইরের দেশে, অধিকাংশ মানুষের জীবন ধারার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এই পানীয়।   

;