পাখিরা সংকটাপন্ন



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
বিলুপ্তপ্রায় তালগাছ ও বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। ছবি: এবি সিদ্দিক

বিলুপ্তপ্রায় তালগাছ ও বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলার পাখিরা এখন সংকটাপন্ন। এ কথার মানে বিপদগ্রস্থ। এক সময় পাখির কলকাকলীতে গ্রামবাংলার মানুষের ঘুম ভাংলেও এখন আর গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে আগের মত ব্যাপকভাবে পাখির ডাক আর শোনা যাচ্ছে না। কালের আবর্তে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি।

নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করা কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, বাবুই, মদনটাক, ঘুঘু, ময়না, শালিক, টিয়া, টুনটুনি, কাঠটোকরা, শ্যামা, কোকিল, চোখগ্যালো, ডাহুক, সারস, মাছরাঙা, মৌটুসি, প্যাঁচাসহ আরো অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না।

শোনা যায়না এসব পাখির মধুর ডাক। আগে রাতের ঘুম ভাঙতো পাখির কলতানে অথচ এখন যান্ত্রিক যুগে ঘুম ভাঙে যানবাহন ও মাইকের শব্দে। রাতের প্রতিটি প্রহরে ডাকতো পাখি কিন্তু এখন প্রহর জানার যেন কোন উপায় নেই।

এমনকি বলাবাহুল্য যে, বর্তমান প্রজন্ম এসব পাখি চিনেই না, এসব পাখির ডাক শোনেনি কোন দিন। ফলে কিশোর-কিশোরদের কাছে এসব পাখি হয়ে যাচ্ছে গল্প আর ইতিহাস। অবাক লাগে এদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল সেটিও আজ বই অথবা ছবিতে দেখে পরিচিত হয় শিশু-কিশোররা। তারা কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উড়ান্ত এসব নামকরা পাখি, শোনেনি পাখির ডাকও।

শৈল্পিক বাসা তৈরি করছে বাবুই পাখি। ছবি: এবি সিদ্দিক

বলা যাক - বাবুই পাখির কথা। নিপুণ শিল্পকর্মে গড়ে তোলা কুঁড়ে ঘর সদৃশ্য দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। চিরচেনা বাবুই পাখির স্বাধীনতা আর সুখ দুই-ই আজ হুমকির মুখে। বসবাস উপযোগী পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই । মাত্র এক যুগ আগেও বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বত্র চোখে পড়তো বাবুই পাখি। গ্রাম বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা মাঠের পাড়ে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে গেছে ইটভাটার আগ্রাসনে। তেমনি হারাতে বসেছে প্রকৃতির শিল্পী পাখির ভোরবেলার কিচিরমিচির সুমধুর ডাকাডাকি আর উড়াউড়ি।

এখন আর সারিবদ্ধ প্রহরী তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। কিচির মিচির শব্দে মুখর হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের নানা কৌশলের পাখি শিকার, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এ পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। তাছাড়া সেই তালগাছের সারিও আজ খুব একটা চোখে পড়ে না।

সচেতনদের মতে, কৃষককূল কীট দমনে ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে, এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালি সহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়। আর এসকল মরা বা আক্রান্ত কীট খেয়ে পাখি মারা যাচ্ছে।

পশ্চিম হাইল হাওর এলাকার প্রায় সত্তর বছরের কৃষক ফজর আলী বললেন, আমরা আগে জমিতে কীটনাশক দিতাম না। ফলে সে সময় মাঠেঘাঠে হরেক রকম পাখি নেচে বেড়াতো। আমাদের ফসলী মাঠে পাখির অবাধ বিচরণের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে মাঠে পাহারায় বসতে হতো, আবার কখনো নির্দ্দিষ্ট সময়ের আগেই ফসল ঘরে তুলতে হতো। আজ আর সেসব পাখি দেখা যায় না, পাখির ডাক শোনাও যায়না।

পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ

পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ

  • Font increase
  • Font Decrease

আনুমানিক শতবর্ষ আগে কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ/ মুমুর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?'' কবিতা রচনার পটভূমি ছিল ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ব্রিটিশ-বাংলা। আজকের পটভূমিতেও কবিতাটি এতটুকু প্রাসঙ্গিকতা হারায় নি।

কারণ, একদিকে ঈদের আনন্দে ভাসছে মানুষ। আবার আরেকদিকেই চলছে চাপা হাহাকার। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দ্বৈরথ তীব্রভাবে বিদ্ধ হয়েছে বহু মানুষে আনন্দ, উপভোগ, উৎসব ও উদযাপন।

অনেক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পরেও একথা সত্য যে সমাজে বৈষম্য কমেনি। সম্পদের বণ্টন সুষম হয়নি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের মধ্যে অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনধারণ করতেই নাভিশ্বাস চলছে।

মুদ্রার আরেক পিঠে কেনাবেচা চলছে লাখ টাকার পাঞ্জাবি, বাহারি উপহার, অঢেল টাকাপয়সার সয়লাব। গণমাধ্যমের সংবাদে জানা গেছে, এবার ঈদ উপলক্ষে হরেক রকমের পাঞ্জাবি এসেছে। একেকটির দাম একেক রকম। কাপড়ের মধ্যেও আছে বিস্তর ফারাক। রাজধানীতে পোশাকের বিভিন্ন শোরুম ঘুরে একটিতে এমন একটি পাঞ্জাবি পাওয়া গেল, যেটির দাম ৭৯ হাজার টাকা। রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে এক ফ্যাশন ডিজাইনেট শোরুমে দেখা মিলল ‘সবচেয়ে দামি’ এই পাঞ্জাবির।

পলিনোজ জর্জেটের ওপর সূক্ষ্ম সেলাইয়ে জামদানির নকশা করা এই পাঞ্জাবি মাত্র একটি আনা হয়েছে। ‘আরোগ’ নামের একটি ব্র্যান্ডের জন্য এই পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে ভারতে। পাঞ্জাবির গায়ে থাকা মূল্য ৭৫ হাজার টাকা। তবে এর সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ করলে এটির মোট দাম দাঁড়ায় ৭৯ হাজার টাকা।

এমন এক পাঞ্জাবির টাকায় কয়েকটি পরিবারের মাসের খরচ চলে যাওয়ার কথা। বিশেষত সদ্য প্রবহমান দারুণ গরমে গ্রামবাংলার বিশাল কৃষকগোষ্ঠী যে নিদারুণ কষ্টে নিপতিত হয়েছে, তাদের কাছে এই গৌরবময় পাঞ্জাবির সংবাদ বজ্রাঘাত-সম। যে শ্রমিক ও দিনমজুর রোজার চরম কষ্টের পর সামান্য কটি টাকায় পরিবারপরিজনের মুখে ঈদ আনন্দের হাসি ফুটাতে লবেজান, তার কাছে দামি পাঞ্জাবির খবর তৃপ্তির বদলে কষ্ট বাড়ায়।

সামর্থ্যানুযায়ী মানুষ খরচ করবে, এতে কোনো অন্যায় নেই। কিন্তু সেই খরচ যদি হয় শুধুমাত্র আত্মসুখ কবলিত, তাহলে একটি নৈতিক চাপ থেকে যায়। বরং যে খরচে নিজের পাশাপাশি সমাজের বহু মানুষের মঙ্গল নিহিত থাকে, তেমন খরচই কল্যাণকর।

কবিতায় সবাই পড়েছি, "আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।" আরেকটি কবিতায় বলা হয়েছে, "আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা/ জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।"

কবিতাগুলো এমনিতেই রচিত হয়নি। সামাজিক প্রয়োজনে ও মানবিক কল্যাণেই কবি আরো বলেছেন, "আত্মসুখ অন্বেষণে আনন্দ নাহিরে/বারে বারে আসে অবসাদ/পরার্থে যে করে কর্ম তিতি ঘর্ম-নীরে/সেই লভে স্বর্গের প্রসাদ।"

অতএব, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে আছে পরম সুখ, অনির্বচনীয় আনন্দ ও অপরিসীম পরিতৃপ্তি।

অন্যের উপকার সাধনই তাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল বলে তাকে সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে হয়। এজন্য পরস্পর প্রীতি ও ভালােবাসা, নির্ভরতা ও সহযােগিতার পরিবেশ মানুষ নিজের প্রয়ােজনেই সৃষ্টির গােড়া থেকে গড়ে তুলেছে।

শুধু পরিবার বা সমাজ নয়, রাষ্ট্র নয়, সমগ্র পৃথিবী ও রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং জাতিগােষ্ঠী পরস্পর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, নির্ভরতা ও সহযােগিতার মধ্যে বাস করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কারণ একজন মানুষ যেমন সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করতে পারে না, তেমনি পৃথিবীর বৃহৎ মানবগােষ্ঠীও পরস্পর নির্ভরশীলতা ছাড়া বাস করতে পারছে না।

এমন একটি বৈশ্বিক সমাজে আমরা নিজেদের নিয়ে আত্মকেন্দ্রিকভাবে, শুধু নিজের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বাস করতে পারব না। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ শুধু ভােগ-বিলাস ও স্বার্থের জন্যেই জন্মগ্রহণ করে নি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। ঈদের সময় এই মনোভাবই সবার মধ্যে জাগ্রত হোক। ঈদ মোবারক।

;

ঠোকর দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে ছোট হলদেকুড়ালি



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
গাছের ডালে মুখোমুখি ছোট হলদেকুড়ালি দম্পতি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

গাছের ডালে মুখোমুখি ছোট হলদেকুড়ালি দম্পতি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

গাছে গাছে গাছের গায়ে ঠোকর দিয়ে বেড়ানো একটি বিশেষ প্রজাতির পাখির নাম ছোট হলদেকুড়ালি। এরা এক ধরণের কাঠঠোকরা জাতীয় পাখি। এদের ইংরেজি নাম Lesser Yellownape এবং বৈজ্ঞানিক নাম Picus chlorolophus। দেশের বিরল আবাসিক পাখি হিসেবে এরা পরিচিত।

বিরল আবাসিক পাখি -এ কথাটার অর্থ হলো – পাখিটিকে সচরাচর দেখা যায় না। আর যদিও বা দেখা যায় তারপরও খুবই কম সংখ্যায় দেখা যায়।

প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, ছোট হলদেকুড়ালি বাংলাদেশসহ ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাস করে। ওরা সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বন ও সুন্দরবনের বাসিন্দা। এছাড়া চা-বাগানেও দেখা মেলে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট পারিবারিক দলে বিচরণ করে। চোখা চঞ্চুর মাধ্যমে গাছের বাকল থেকে পিঁপড়া, উইপোকা ও গাছ ছিদ্রকারী পোকা সংগ্রহ করে খায়। তবে রসাল ফলও খেতে পারে। সচরাচর নীরব, মাঝেমধ্যে নাকি সুরে ‘পি-য়া...’ শব্দে ডাকে।

পাখিটির শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, দেহের দৈর্ঘ্য ২৫-২৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ৫৭-৭৪ গ্রাম। ঠকঠক শব্দে ডাল ঠোকরানো পাখিটি দেখতে বেশ সুন্দর। পিঠসহ দেহের ওপরটা সবুজাভ হলুদ। সবুজাভ মাথা ও জলপাই ঘাড়ে ছোট্ট সুদৃশ্য হলুদ–ঝুঁটি। লেজ কালচে, থুতনি সাদা ও বুক সবুজাভ। সাদা দেহতলে সবুজ ডোরা। চোখের রং গাঢ় লাল। চোখের চারপাশের ত্বক ধূসর। চঞ্চু কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ, নখ বাদামি।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য থাকে। পুরুষের চোখ ও মাথার মাঝে গাঢ় লাল ডোরা থাকে। তাছাড়া একটি গাঢ় লাল রেখা চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে। স্ত্রী পাখির এই ডোরা না থাকলেও গাঢ় লাল রেখাটি চোখের পেছন থেকে ঘাড় পর্যন্ত চলে গেছে।

স্বভাব এবং খাদ্যতালিকা সম্পর্কে এ পাখি বিশেষজ্ঞ বলেন, ছোট হলদেকুড়ালি প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, পাহাড়ি বনও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়; মাঝে মাঝে ফিঙে, ছাতারে ও অন্যান্য পতঙ্গভুক পাখির সহযোগী হয়ে শিকার করতে দেখা যায়। ঠোকর দিয়ে গাছের বাকল থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া ও উইপোকা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকা, পিউপা ও রসালো ফল।

এপ্রিল থেকে মে প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ঘাড়ের হলুদ–ঝুঁটি খাড়া করে মাথা এপাশ-ওপাশ ঘোরায় ও গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রামের মতো শব্দ করে। গাছের ক্ষয়ে যাওয়া ডালে গর্ত করে বাসা বানায়। বাসা বানানো, ডিমে তা দেওয়া ও ছানাদের লালনপালন স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে করে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি, রং সাদা, যা ফোটে ১১-১৪ দিনে। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর বলে জানান এই পাখি গবেষক।

;

বহু দূর থেকে শোনা যেতো যে মায়াবী পাখির ডাক



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
চন্দনা টিয়ার সৌন্দর্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

চন্দনা টিয়ার সৌন্দর্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

আকাশের ওই কোণ থেকে মৃদু ভেসে আসলে একটা পাখির ডাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ডাকটি ক্রমশ স্পষ্ট হতে লাগলো। চা বাগান বা পাহাড়ি অঞ্চল অধ্যুষিত এলাকায় এই পাখিটি একা কিংবা দলগতভাবে উড়ে চলে। তখন ডাক ছড়ায়। দূর থেকে দূরে।

তবে বর্তমানে এ পাখিটি খুব কম চোখে পড়ে। কালেভাদ্রে হয়তো দেখা যায়। প্রজননজনিত সমস্যা কারণে এ প্রজাতিটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।

বিলুপ্ত হয়ে পড়া এ পাখিটি নাম ‘চন্দনা’। কেউ কেউ ‘চন্দনা টিয়া’ও বলেন। পাখির নাম সবুজ টিয়া। তবে চন্দনা টিয়া নামেও উল্লেখ করা হয়। এর ইংরেজি নাম Alexandrine Parakeet বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria দেখতে খুব সুন্দর। সবুজ দেহ। তোতা পরিবারের মধ্যে এ পাখিগুলোই বেশি আকর্ষণীয়। দেহের তুলনায় এদের লেজ অনেকটাই লম্বা। বিচরণ করে শুষ্ক ও আর্দ্র পাতাঝরা বনাঞ্চলে। ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও দেখা যায়। এরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি।

বিশেষ করে ফল এবং বীজজাতীয় শস্য খেতের আশপাশে বেশি নজরে পড়ে। ঝাঁকবেঁধে শস্য খেতে বিচরণ করার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে এরা। যা খায় তার চেয়ে বেশি অপচয় করে। কৃষকদের সঙ্গে এদের বৈরিতার কারণ ফসল নষ্ট করা নিয়ে। মাঝে মধ্যে এদের একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও বিচরণ করতে দেখা যায়। কণ্ঠস্বর কর্কশ।

খাবার খেতে ব্যস্ত চন্দনা। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

কয়েক দশক আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রজাতিটির সাক্ষাৎ পাওয়া গেলেও ইদানিং যত্রতত্র নজরে পড়ে না। খাঁচায় বন্দী এবং উঁচু গাছ-গাছালির সংকটের কারণে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে প্রজাতিটি দেশে ‘মহাবিপন্ন’ হয়ে পড়েছে। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার পর্যন্ত। অত্রাঞ্চলে এই পাখিগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে।

প্রজাতির দৈর্ঘ্য ৫৬-৬২ সেন্টিমিটার। লেজ ২৯-৩২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখি আকারে কিছুটা লম্বা। তাছাড়া পুরুষ পাখির গলার পেছনে এবং ঘাড়ের পাশে রয়েছে গোলাপি বলয়। থুতনির কালো রেখা গলাবন্ধের সঙ্গে মিশেছে। সব দেহ ঘাস-সবুজ রঙের। কেবল ডানার মধ্য পালকে রয়েছে লালপট্টি। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে গলার পেছনের গোলাপি বলয় নজরে পড়ে না। থুতনির কালো রেখার উপস্থিতি নেই। যুবক চন্দনার ক্ষেত্রেও এ রকমটি নজরে পড়ে। উভয়ের ঠোঁট গাঢ় লাল। ঠোঁটের ডগা কমলা-লাল। চোখের পাতা কমলা-হলুদ, বলয় নীল।

ফল, ধান, গম, ভুট্টা, ফুলের রস, গাছের কচি পাতা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। তবে প্রথম পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এ ছাড়াও কাঠ ঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা দুই-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে প্রায় তিন সপ্তাহ।

পাখি গবেষক সৌরভ মাহমুদ বলেন, চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ আবাসিক পাখি। বাসা করার জন্য বড় গাছের অভাব, গাছে ফোকরের অভাব এবং অবাধে বেচাকেনার কারণে এ টিয়া প্রজাতি কেবল দেশের কয়েকটি জেলায় দেখা যেত। ঢাকায় এ পাখির উপস্থিতি জানার পর থেকে চন্দনা টিয়া নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হয়। দুই দফায় বাসা করার জন্য কাঠের ও পাইপের তৈরি কৃত্রিম বাসা ঝোলানো হয়, যেখানে এ পাখিটি বাসা করে। কারণ, ঢাকায় বয়সী গাছ কম এবং ফোকরহীন গাছই বেশি।

;

১১টি তিলা মুনিয়া পাখি উদ্ধার এবং অবমুক্ত



বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
তিলা মুনিয়া পাখিদের খুনসুটি। ছবি: এবি সিদ্দিক

তিলা মুনিয়া পাখিদের খুনসুটি। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে সম্প্রতি ১১টি তিলা মুনিয়া (Sealy-breasted Munia) পাখি উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এ সময় জবাই করা ১০টি তিলা মুনিয়া পাখিসহ একজনকে আটক করা হয়েছে।

বনবিভাগ সূত্র জানায়, শুক্রবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা চা বাগানের বাঘাছড়া এলাকা থেকে এক শিকারী আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে ১১টি পাখিসহ শিকারের করা ফাঁদ জব্দ করেছে বন্যপ্রাণী বিভাগ।

আটক শিকারী উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কানাইদেশী গ্রামের তাজ বক্সের ছেলে আনছর আলী (৫০)। এসময় দুই শিকারি পালিয়ে যায়। আশরাফুল মিয়া ও আজিবুর। তাদের দুই জনের বাড়িও একই উপজেলার রাজকান্দি গ্রামে।

কুরমা চা বাগানের বাঘাছড়া হাওড় হতে শিকার করার সরঞ্জাম, ১টি দা, ২টি বাইসাইকেল ১টি মোবাইল ফোন ও ১টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণী বিষয়ক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

বাসা তৈরির জন্য উপকরণ নিয়ে যাচ্ছে তিলা মুনিয়া। ছবি: এবি সিদ্দিক

বন্যপ্রাণী রেঞ্জের রেঞ্জকর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। জবাই করা ১০টি তিলা মুনিয়া পাখি জব্দ করার পাশাপাশি একই সঙ্গে জীবিত ১১টি মুনিয়া পাখি উদ্ধার করে ঘটনাস্থলেই অবমুক্ত করে দেয়া হয়। জবাই করা পাখিগুলোকে মাটিতে পুতে ফেলা হয়। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে গত ১৮ মার্চ একই এলাকা থেকে জবাই করা ৩৮টি তিলা মুনিয়া জব্দ করে মাটিতে পুতে ফেলা হয়েছিল। তখন শিকারিরা পালিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

তিলা মুনিয়া অতিপরিচিত গায়ক পাখি। বেশ সুরেলা গলা তার। এ দেশের শহর-বন্দর-গ্রামে প্রচুর দেখা যায়। লম্বায় ১১.৫ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজের ডগা জলপাই-বাদামি। চিবুক গাঢ় রঙের। বুকের ওপরটা খয়েরি। পেট কালচে-বাদামি, তাতে সাদা ফোঁটা থাকে। স্ত্রী-পুরুষ একই রকম। মুনিয়া বেশ চঞ্চল।ফসলের খেত, মাঠ, নলখাগড়ার বন, বাগান প্রভৃতি স্থানে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ে বেড়ায়।

এ পাখিটি অতি সুন্দর। এজন্য অসাধু পাখিশিকারীরা তাকে জাল, ফাঁদ প্রভৃতির সাহায্যে ধরে পাখিপ্রেমীদের নিকট উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে থাকেন। তবে দেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে অন্যান্য পাখির মতো এই পাখিও ধরা, পালন করা, হত্যা করা কিংবা খাওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

;