বেড়েছে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা
পাঁচ বছরের তরীকে নিয়ে চারতলা বাসার একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন পোশাকশ্রমিক মা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও তাকে বাসায় রেখেই কাজে যান তিনি। দুপুরে বাসায় ফিরে তরীকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না মা। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, তরীর কোনো খোঁজ নেই। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে খাটের নিচে পাওয়া যায় তরীকে। প্রাণহীন। নিথর। রক্তাক্ত। ২৭ জুনের ঘটনা এটি।
সকালে বাড়ির পাশে একটি খালে মাছ ধরছিলেন সাদিয়ার বাবা। বাবার কাছ থেকে মাছ আনতে যায় ৯ বছরের সাদিয়া। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। পরে একটি পাটক্ষেত থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে শিশুটিকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয় বলে প্রমাণ মেলে। ঘটনাটি ২ জুলাইয়ের।
দিন দিন নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাত বছরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৩ হাজার ৫৩২ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে শুধু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮৪ নারী ও কন্যাশিশু। এদের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার এক হাজার ২৮৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশুকে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে এক হাজার ১৬ জনকে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট কয়েকজন পুলিশ সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হন কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনমুখর জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে নিহত হন পাঁচজন। সেই থেকে এ দিনটি নারী নির্যাতন দিবস হিসেবে পালন হয়ে এলেও ঘটনার ২৬ বছরেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারী ও কন্যাশিশুর ওপর প্রতিদিনই নৃশংসতার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এ ব্যাপারে যত সরব, প্রশাসন তার ধারেকাছেও নেই। প্রশাসনিক রেকর্ডে নারী নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না।
মহিলা পরিষদের তৈরি করা ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সংবাদভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার চার হাজার ৬২২ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার এক হাজার ৩৭০ জন। এদের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৩৭। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৭ নারী ও কন্যাশিশুকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১৯ নারী ও কন্যাশিশু। ২০২০ সালে নির্যাতনের শিকার তিন হাজার ৪৪০ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ধর্ষণের শিকার এক হাজার ৭৪ জন। এদের মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৩৬। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৩ নারী ও কন্যাশিশুকে। ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন তিনজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে মহামারি নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশি সক্রিয় থাকায় ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোয় অভিযোগ করার পরিমাণ কমেছে। এসব কারণে গণমাধ্যমেও এসব ঘটনা উঠে আসছে কম।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু গণমাম্যকে বলেছেন, কভিড-১৯-এর সময় পারিবারিক সহিংসতা এবং পর্নোগ্রাফিও খুব বেড়েছে। আর বেড়েছে শিশুদের ওপর নির্যাতন। অভিযুক্ত প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে আইন কার্যকর হচ্ছে না। এ সংস্কৃতি অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।