‘ভালো থেকো মহাকালের মহারাজা!’



বিনোদন ডেস্ক
আবদুর রাজ্জাক

আবদুর রাজ্জাক

  • Font increase
  • Font Decrease

রাজ্জাক একটা কমন নাম।

এমন মানুষ পাওয়া যাবে না, যার রাজ্জাক নামের বন্ধু, আত্মীয় বা পরিচিত কেউ নাই। রাজ্জাক নামে আমাদের একজন ড্রাইভার ছিল। আবার রাজ্জাক নামের টিচারও ছিলেন। ইউনিভার্সিটিতে রাজ্জাক নামে এক ছাত্রকে দেখতাম রাজনীতিতে খুব অ্যাকটিভ। আবার রাজ্জাক নামের একাধিক বরেণ্য রাজনীতিবিদ আছেন। ‘রাজ্জাক হোসিয়ারি’ ট্যাগ লাগানো গেঞ্জি দেখেছি, মফস্বলের এক শহরে ‘রাজ্জাক সুইটমিট’ মিষ্টির দোকান ছিল। বংশালের আল রাজ্জাক’স হোটেলের কাচ্চি বিরিয়ানি যে খায় নাই, সে নার্ভাস নাইন্টিজে কাচ্চির সেঞ্চুরি মিস করেছে। এই বিজ্ঞাপনের জন্য আল রাজ্জাক’সকে টাকা দিতে হবে না। কারণ, ২০ বছর আগে যখন তাদের কাচ্চির হাফ প্লেট ৪৬ টাকা ছিল, তখন গুলশান থেকে ৭০ টাকা আসা-যাওয়া খরচ দিয়ে সেই ৪৬ টাকার আধা ইঞ্চি লম্বা বাসমতী চালের কাচ্চি খেয়ে এসেছি। রাজ্জাক নামের মানুষগুলো বেশির ভাগ নিজ নিজ ক্ষেত্রে ফেমাস হন। তবে একটা জায়গায় রাজ্জাক নামের তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। রাজ্য শাসনে। ভারতে মুঘল কোনো সম্রাটের নাম রাজ্জাক ছিল না। পারস্যে রাজ্জাক নামের কোনো শাসক দেখা যায়নি। পাকিস্তানে আবদুর রাজ্জাক নামের একজন ক্রিকেটারের দেখা মিললেও এই নামে কোনো মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী পাওয়া যায়নি। অবশেষে রাজ্জাক নামের ‘রাজা’ খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকায়। তা আবার খোদ এফডিসিতে। সম্ভবত শাসক হিসেবে বিশ্বে তিনিই একমাত্র রাজ্জাক। শাসন করেছেন ঢাকাই সিনেমা। দুর্দান্ত শাসক। ‘নায়করাজ’ উপাধি নিয়ে বর্ণাঢ্য বিদায় নিয়েছেন এই রাজা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856106405.jpg
নায়করাজ

নায়করাজ হলেও সিনেমায় তাঁর শুরুটা এক পাসিং শট দিয়ে। পাসিং শট মানে এক ঝলক দেখা যাওয়া কথাবিহীন শট। যেমন: কেউ চা দিয়ে গেল বা কেউ সামনে দিয়ে একটু হেসে হেঁটে গেল অথবা কোনো পিয়ন চিঠি দিয়ে চলে গেল। রাজ্জাকও চিঠি দিয়ে চলে যান। তবে পিয়ন হিসেবে না। চিঠি দিয়েছিলেন সেই ছবির নায়িকাকে। নায়কের হয়ে। নায়িকা বাসার সামনের গেটে দাঁড়িয়ে ছিল। রাজ্জাক সাইকেল করে এলেন, নায়কের চিঠি দিলেন, চলে গেলেন। ১৯৬৬ সালে সেটা ছিল ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবি।

বটগাছের বীজ সরষে দানার সমান। সেই সরষে দানার সমান অভিনয় থেকেই হয়েছিলেন বটবৃক্ষ ‘নায়করাজ’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856148203.jpg
‘আগুন’ ছবির দৃশ্যে রাজ্জাক-শাবানা

রাজ্জাক ধূমকেতুর মতো নজরে আসেন ‘রংবাজ’ ছবি দিয়ে। ‘রংবাজ’ ছবি সুপারহিট হওয়ার কারণ ছিল অনেক। তখন ঢাকায় মহল্লাভিত্তিক একক রংবাজি ছিল কমন কালচার। প্রতিটি পাড়ায় একজন বা দুজন স্বীকৃত রংবাজ ছিল। তাদের সবাই ভয় পেয়ে চলত। বয়সে তরুণ এই রংবাজদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। নিজগুণে রংবাজ। গুণ বললাম, কারণ তাদের বেশ কিছু গুণ ছিল। তারা মারামারিতে সিদ্ধহস্ত হলেও নীতিমান ছিল। তারা রংবাজি করত খারাপ মানুষের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি করত না। অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়াত। দোষের মধ্যে ছিল ফ্যান্টাসি মার্কা মারামারি আর ড্রিংকট্রিংক করে সবার সামনে মাতলামি করা। সাধারণত পরিচিত ভদ্র পরিবারেরই হতো এই রংবাজরা। ভদ্র পরিবারের বখে যাওয়া ছেলে। তাদের খুব একটা প্রেম করতে দেখা যেত না। পাড়ার নম্রশম্র মেয়েরা এদের ভয় পেত। কিন্তু বেশির ভাগ রংবাজই পাড়ার সেরা সুন্দরী মেয়েটার ওয়ান সাইডেড প্রেমে পড়ে থাকত।

এ রকম একজন রংবাজ ছিলেন আমাদের আজিমপুরের খালেদ ভাই। আমি তখন অনেক ছোট। সন্ধ্যায় দেখি, আজিমপুর রোডের দুধারে সব দোকানদার বেরিয়ে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। আর পুরো রোডের এমাথা-ওমাথা খালেদ ভাই মাতলামি করে চলেছে। কেউ তাকে থামাতে সাহস করছে না। তার বড় ভাই ছিলেন খুব ডাকসাইটে। নাম মিয়া ভাই। কেউ খবর দিয়েছে। মিয়া ভাই ঐতিহ্যবাহী ঢাকাইয়া সাদা লুঙ্গি পরে এসে গুরুগম্ভীরভাবে খালেদ ভাইকে বাসায় যেতে বললেন। বড় ভাইয়ের আদেশ সম্মান করে বাসায় চলে গেলেন মাতাল খালেদ ভাই। রংবাজের ওপর এক নেগেটিভ ছাপ পড়ল আমার মনে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856207896.jpg
রাজ্জাক

কিন্তু ভুল ভেঙে গেল পরদিন। চাচাতো বোন পড়ে ইডেন কলেজে। বাসার গেটে এসে রিকশাভাড়া দেওয়ার পর রিকশাওয়ালা ভাড়া নিয়ে তর্ক শুরু করে বাজে ভাষায়। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন খালেদ ভাই। শাট করে দাঁড়ালেন। আমার বোনকে বললেন, ‘আপা, আপনে বাসায় যান।’ আপা চলে গেলেন। খালেদ ভাই রিকশাটা খুঁটির সঙ্গে বাঁধলেন। রিকশাওয়ালাকে শুধু বললেন, ‘তুই মহিলা মাইনসের লগে খারাপ কথা কইসোশ ক্যান?’ শুরু হলো রিকশাওয়ালার ওপর চায়নিজ কুংফু! ব্রুস লি দেখলে হয়তো কিছু শট শুধরে দিতেন। বাবা গো, মা গো বলে মাফ চাইল রিকশাওয়ালা। থামলেন খালেদ ভাই। রিকশাওয়ালাকে পাশে বসিয়ে কেক-ফান্টা খাওয়ালেন। বোঝালেন, মেয়েদের সম্মান করতে হয়। তারপর রিকশাওয়ালার হাতে ২০ টাকা দিয়ে বিদায় করলেন। সেদিন ওর আর রিকশা না চালালেও চলবে।

এ রকম রংবাজদের নিজেদের এলাকায় দেখে দেখে অভ্যস্ত ছিল মানুষ। কিন্তু সিনেমার পর্দায় দেখেনি। ‘রংবাজ’ মুভি তাই দৃষ্টি কাড়ল দর্শকের। একজন বখে যাওয়া রংবাজ নায়ক? তা আবার প্রেম করবে? নাচবে-গাবে? ফাইট করবে? গেল সিনেমা হলে। আর গিয়েই দেখা পেল এক বিরল প্রতিভার। নাম রাজ্জাক। দেখতে স্মার্ট, গুড লুকিং। মারপিট করে ফাটাফাটি। গান গায় খুব সুইট স্টাইলে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856229635.jpg
তখনকার রাজ্জাক

আমার ছোট ভাইয়ের তখন মুখে আধো আধো বোল এসেছে। বাসার ক্যাসেট প্লেয়ারে ‘রংবাজ’ ছবির হিট গান ‘এই পথে পথে, আমি একা চলি’ গানটি প্রায়ই বাজে। গানটি মাতাল হয়েই রাজ্জাক গেয়েছেন মুভিতে। গানের আগে কিছু মাতলামির কথা আছে। ছোট ভাইয়ের সেই কথাগুলো মুখস্থ হয়ে গেল। সবাই তাকে বলতে বললে সে গড় গড় করে বলে, ‘আরেত্থালা (আরেশ শালা), কে আওয়া (কে বাবা?), পথ লেলে আথো (পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছো?), কী বললে? থাইত তলবে (ফাইট করবে?), আমি ন্যাম্পোত আওয়া (আমি ল্যাম্পপোস্ট বাবা), আমাতে মাপ তলে দাও (আমাকে মাফ করে দাও), হু হু হু হা হা হা (হাসি)!’

এই হাসির পর রাজ্জাক আর পেছনে তাকাননি। রাজ্জাক মানেই সুপারহিট ছবি। বর্তমান বলিউডে যেমন সব নায়িকা বলেন, আমির খানের সঙ্গে তাঁরা একটি দৃশ্যে অভিনয় করতেও রাজি, তখন ঢাকার নায়িকারা মুখে না বললেও সবাই জুটি বেঁধেছিলেন এই ভয়াবহ জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে। রাজ্জাক-সুচন্দা, রাজ্জাক-কবরী, রাজ্জাক-শাবানা, রাজ্জাক-ববিতা, সব জুটির সব ছবিই হিট! হিটের আরেক অর্থ, তাপ। এই তাপের মধ্যে আরেকটু উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন রাজ্জাক-কবরী। পর্দার বাইরেও তাঁদের ইমোশনাল সম্পর্ক তখন টিনেজারদের নাড়া দিয়েছিল। একসঙ্গে হলেই স্কুল-কলেজের মেয়েরা রাজ্জাক-কবরী নিয়ে ফিসফাস-ফুসফাস করত। সেটাকে স্রেফ স্ক্যান্ডাল বলে আমরা হয়তো উড়িয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু পরে দীর্ঘ সময় মান-অভিমানজনিত বিচ্ছেদ তাঁদের ইমোশনের গভীরতা প্রমাণে যথেষ্ট। উচ্ছল বয়সে এক-আধটু এ রকম হতেই পারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856268725.jpg
রাজ্জাকের পরিবার

শুধু পর্দায় না, ব্যক্তিজীবনেও পাক্কা নায়ক ছিলেন এই নায়করাজ। তাঁর একটি ঘটনা। আরেক মহানায়ক উত্তমকুমারের মেহমান হয়ে গেছেন কলকাতায়। কলকাতা শহরে একা চলছেন। হঠাৎ তাঁর পকেট মেরে এক পকেটমার চলে যাচ্ছে। পকেটমার তো আর ঢাকার রাজ্জাক চেনে না। দিলেন ধাওয়া রাজ্জাক। কলকাতার রাস্তায় মানুষ জলজ্যান্ত লাইভ দেখতে লাগল ভয়ানক বেগে এক স্মার্ট তরুণ আরেক উষ্কখুষ্ক যুবককে ধাওয়া দিচ্ছে! যেন ভিলেনকে তাড়া করছে নায়ক। ধরেও ফেললেন। দিলেন ঢিসুম ঢুসুম। উদ্ধার করলেন মার যাওয়া টাকা। সোপর্দ করলেন পুলিশের কাছে। নিজের পরিচয় দিলেন। লোকজন তাঁর পরিচয় জেনে মহাখুশি। ঢাকাইয়া পোলা, কোটি টাকা তোলা!

খবরটা সেই সময়ের পত্রিকায় এসেছিল।

রাজ্জাকের প্রধান আকর্ষণ ছিল তাঁর রোমান্টিক চেহারা আর এক্সপ্রেশনে। সে সুযোগ নিলেন পরিচালক। বাংলাদেশে প্রথম চুম্বন দৃশ্যে অভিনয় করালেন। তাঁর ‘চুমু পার্টনার’ ছিলেন ববিতা। ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিতে। যদিও সেন্সর বোর্ড মূল চুম্বনের ওপর রোলার স্টিম চালিয়ে ছ্যাড়াব্যাড়া করে দিয়েছিলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856298005.jpg
নায়ক বয়সে

যদিও অরিজিন্যাল কোঁকড়ানো ছোট ছোট চুলে রাজ্জাককে মানাতো বেশ, তবুও দুই ধরনের চুলে অভিনয় করতেন নায়করাজ। চরিত্রের প্রয়োজনে। পরচুলায়ও তাঁকে সমান ভালো লেগেছে। সম্ভবত এ দেশে এখন পর্যন্ত রাজ্জাকই একমাত্র সুপারস্টার, যাঁর কোনো ছবি ফ্লপ হয়নি। পোশাকি ছবি কম করেছেন, কিন্তু সেগুলোও হয়েছে হিট। রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন করে তা থেকে ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন। লক্ষ্মী তাঁর স্ত্রীর নাম। দুজনের নাম মিলিয়েই রাজলক্ষ্মী। বউকে অসম্ভব ভালোবাসতেন।

একজন সুপারস্টার সেই দেশের একজন অনুসরণীয় পারসোনালিটি। রাজ্জাক তা মেনে চলেছেন। পারিবারিক বন্ধন ও মূল্যবোধ কড়াকড়ি মেনেছেন। তার প্রতিফলন দেখা গেছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। নিরহংকারী ছিলেন। একজন নায়করাজই তো হন নিরহংকারী। শেষ জীবনের কয়েকটি টিভি সাক্ষাতে চেপে রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অলক্ষ্যে বেরিয়ে গেছে তাঁর গুমরে গুমরে হতাশার বেদনা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Aug/21/1534856328652.jpg
একটি ছবির দৃশ্যে

উন্নত দেশ লিভিং লিজেন্ডদের বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে উপস্থিতি ঘটিয়ে তাদের প্রতিভাকে কাজে লাগায়। প্রতিভা ছাড়া লিজেন্ড হয় না। আর এই অভিজ্ঞ প্রতিভাদের কাছ থেকে উদ্দীপিত হয়ে জন্ম নেয় নতুন সব প্রতিভা। পাশের দেশেই মিঠুন চক্রবর্তী বা অমিতাভ বচ্চনরা এখনো তাঁদের প্রতিভা ছড়াচ্ছেন। প্রতিভা ছাড়া কি একজন ‘নায়করাজ’ বা ‘মহানায়ক’ হয়ে যাওয়া যায়? কখনোই না। সেটা তিনিও জানতেন।

হয়তো না-বলা একরাশ বেদনা নিয়েই গত বছর এই দিনে আমাদের ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন আমাদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়করাজ রাজ্জাক। এই দেশ বহু দশক মিস করবে তাঁকে। আমাদের সময় এসেছে গুণ জানার, গুণী চেনার, গুণের কদর করার। গুণীদের কখনো অবসর হয় না। ভুললে চলবে না, যে দেশ গুণের কদর করে না, সে দেশে গুণী জন্ম নেয় না।

ভালো থেকো মহাকালের মহারাজা!

[লিখেছেন শায়ের খান]

আরও পড়ুনঃ

ভক্তরা সত্যিকারের নায়লা নাঈমকে খুঁজে পেয়েছেন

অ্যালেন শুভ্র’র বাড়ি ফেরা

‘যতদিন বেঁচে থাকবো, এফডিসিতে কোরবানি দেবো’

   

হীরামান্ডির ‘আলমজেব’-এর পাশে দাঁড়ালেন রিচা



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হীরামন্ডি সিরিজে রিচা চাড্ডা ও শারমিন সেহগাল

হীরামন্ডি সিরিজে রিচা চাড্ডা ও শারমিন সেহগাল

  • Font increase
  • Font Decrease

বড়পর্দার রূপালী মায়া কাটিয়ে ওটিটি জগতে এলেন খ্যাতিমান নির্মাতা সঞ্জয়লীলা বানসালি। তার প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘হীরামান্ডি : দ্য ডায়মন্ড বাজার’ মুক্তির পর থেকেই আলোচনায়। বিশাল আয়োজনে নির্মিত এই সিরিজ দর্শকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। তবে নেটফ্লিক্সে এটি বিপুল সাড়া পাচ্ছে।

‘হীরামান্ডি’র যে দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা-নিন্দা হচ্ছে, তা হলো আলমজেব চরিত্র। এই চরিত্রে শারমিন সেহগালের অভিনয় দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। শারমিনের অভিনয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি তাকে কাস্ট করার কারণে বানসালির বিরুদ্ধে ‘স্বজনপোষণ’র অভিযোগও তুলছে নেটিজেনরা। কারণ তিনি শারমিনের মামা।

মামা-ভাগ্নি সঞ্জয়লীলা বানসালি ও শারমিন সেহগাল

এবার নিন্দায় বিপর্যস্ত শারমিনের পাশে দাঁড়ালেন এই সিরিজেরই সহ-অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা। ‘হীরামান্ডি’তে রিচার অভিনয় দারুণ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এমন সময় সাধারনত তারকারা এদিক সেদিক তাকান না। নিজের সফলতা উপভোগ করেন। বিপাকে জড়িয়ে নিজের দিকে সমালোচনার তীর আসুক সেটা তারা একেবারেই চান না। তবে রিচা বরাবরই আলাদা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন। নিজের অনুভূতি কোন কিছুর চাপে দমিয়ে রাখার পাত্রী তিনি নন। এর আগেও রিচা তার ‘সর্বজিৎ’ সিনেমার কো আর্টিস্ট ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন। তার সেই জবাব রীতিমতো ভাইরাল হয়।

 হীরামন্ডি সিরিজে লাজ্জো চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় ও নাচ পরিবেশন করেছেন রিচা

এবার হীরামন্ডি সিরিজের ‘আলমজেব’ চরিত্রের শারমিককে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে রিচা বলেন, ‘সত্যি বলতে, এটা (সমালোচনা করা) দর্শকের অধিকার। তারা সিরিজটি পছন্দ করতে পারে, অপছন্দও করতে পারে। কারও অভিনয় ভালো লাগবে, আবার কারও কাজ ভালো লাগবে না। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ যেভাবে ট্রল করে, মিম বানায়, নিন্দা করে; আমার মতে এটা সবার জন্যই ক্ষতিকর। কারও প্রতি নির্দয় হওয়া উচিত নয়, কারণ আগামীকাল এমন কিছু আপনার সঙ্গেও ঘটতে পারে। এবং হ্যাঁ, প্রত্যেকেই মানুষ।’

মা হতে যাচ্ছেন রিচা। তার স্বামী বলিউড অভিনেতা আলী ফজল

‘হীরামান্ডি’ নির্মিত হয়েছে ১৯৪০-এর দশকের প্রেক্ষাপটে। তখন লাহোরে হীরামান্ডি নামের এলাকায় বাইজিপাড়া ছিল। সেখানকার ছয় বাইজিকে ঘিরেই এগিয়েছে সিরিজের গল্প। এর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ। সিরিজটিতে আরও আছেন মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহা, অদিতি রাও হায়দারি, সানজিদা শেখ, ফারদিন খান, শেখর সুমন, ফরিদা জালার প্রমুখ।

তথ্যসূত্র : বলিউড হাঙ্গামা

;

জয়িতার টেগর’স টেল-এ বুঁদ সাধারণ থেকে তারকা



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ গাইছেন জয়িতা

একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ গাইছেন জয়িতা

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন স্কুল জীবনের বন্ধুর অনুভূতি দিয়ে শুরু করা যাক। মারুফা আজিজ উপমা লিখেছেন, ‘সেই স্কুল জীবন থেকে তোর গান শুনে আসছি, কিন্তু এবারের গান অন্যরকম ভালো লাগার। কারণ এবার তোর একক সংগীত সন্ধ্যায় ছিলাম আমরা। প্রতিটা মুহূর্তে আন্টিকে (প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী শিল্পী মিতা হক) মিস করেছি, মাঝে মাঝে দেখে মনে হচ্ছিল আন্টিই গাইছেন। গর্বিত বাবা-মায়ের গর্বিত সন্তান।’

কথাগুলো যাকে নিয়ে লেখা হয়েছে তিনি ফারহিন খান জয়িতা। তরুণ প্রজন্মের রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। যাকে এ প্রজন্মের অন্যতম মেধাবী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী বলে মনে করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা!

ফারহিন খান জয়িতা

জয়িতার আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক মিতা হক এবং মঞ্চ নাটকের যুবরাজ’খ্যাত খালেদ খানের একমাত্র কন্যা।

গত ১৭ মে ছুটির দিনে রাত ৮টা থেকে বনানীর যাত্রা বিরতির নতুন ঠিকানায় জয়িতার একক সংগীত সন্ধ্যা ‘টেগর’স টেলস’। সেই অনুষ্ঠান দেখতে টিকেট কেটে হাজির হন অনেকেই। তারমধ্যে শোবিজ তারকারাও ছিলেন।

এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট জয়িতা একে একে গেয়ে গেলেন বাল্মীকি প্রতিভা, মায়ার খেলা, প্রেম পর্যায়ের গানগুলো।

অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে জয়িতা, তার স্বামী শাহিদ মুস্তাফিজ, অভিনেত্রী নাজনিন হাসান চুমকী, নাদিয়া আহমেদ ও তার মা

গান শুনতে গিয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী নাজনিন হাসান চুমকী। নিজের অনুভূতির কথা সোশ্যাল লিখেছেন এভাবে, ‘গত সন্ধ্যায় জয়িতার কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতে বুঁদ হয়ে ছিলাম। জয়িতা সোনা, তোমার কণ্ঠে মধু আছে। আর উচ্চারণ, তোমার কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। তুমি অতুলনীয়। তোমার জন্য শুভকামনা সকল সময়।’

জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী নাদিয়া আহমেদ অনুষ্ঠান শেষে ছোট ছোট কিছু ভিডিও ক্লিপিং শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমাদের জয়িতা। মিতা আপার সুযোগ্য কন্যা জয়িতা। ওকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিংবা ওকে নিয়ে বলবার কিছু নেই। শুধু বলবো, আজকে গান থেকে শুরু করে কয়েক লাইন আবৃত্তি এক অসাধারন মুগ্ধতার সন্ধ্যা কাটলো। যারা রবীন্দ্রপ্রেমী তাদের জন্য একটু শেয়ার করলাম। জয়িতা তুই একটা ভালবাসা।’

জয়িতার সঙ্গে সেমন্তী মঞ্জুরী ও তার স্বামী

নিজে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী হয়ে আরেকজন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পীকে নিয়ে সেমন্তী মঞ্জুরী লিখেছেন, ‘অনেকদিন পর দিদির এতগুলো গান শুনলাম! আনন্দঘন সময় কাটলো। গান তো ভালো বলতেই হয়। তবে আবৃত্তি শুনে বার বার মামার (জয়িতার বাবা অভিনেতা খালেন খান) চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। লাভ ইউ জয়িতা দিদি।’

মেধাবী নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কি অনবদ্য এক ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট কাটালাম! জয়িতা দোস্ত, তুমি সবার হৃদয় হরণ করেছ। তোমার গায়কী এবং গান নির্বাচন ছিলো এক কথায় পারফেক্ট। তুমি তো বটেই, তোমার যন্ত্রশিল্পীরাও অসাধারন পারফরমেন্স করেছেন গত রাতে। গান, নাচ, কবিতা সব মিলিয়ে অদ্ভূত সুন্দর একটা আবহ তৈরী হয়েছিলো। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি আমি। এ ধরনের পরিবেশনা তোমার আরও বেশি বেশি করা উচিত।’

একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ অনবদ্য পরিবেশনা ছিল জয়িতার

শুধু এই তারকারাই নন, জয়িতার ফেসবুক জুড়ে আরও নানা পেশা, নানা বয়সের দর্শকের প্রশংসা বার্তা ছড়িয়ে আছে। টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে জয়িতা আগের দিনই জানিয়েছেন, শিগগির আবার ফিরবেন এরকম আয়োজন নিয়ে।

;

ডিএ তায়েবকে তীক্ষ্ণ জবাব নিপুণের, নেবেন আইনি ব্যবস্থাও!



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিপুণ ও ডিএ তায়েব

নিপুণ ও ডিএ তায়েব

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে এমনটাই মনে করছিলেন সবাই। অল্প কিছু ভোটে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নিপুণ হেরে যান খল নায়ক ডিপজলের কাছে। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার অনেকগুলো ভোট নষ্ট হয়েছে। নয়ত ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। তারপরও নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে মিশ-ডিপজল প্যানেলকে বিজয়ের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

তবে সেই নির্বাচনে এক মাস যেতে না যেতেই বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে রিট করেন নিপুণ আক্তার। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে এই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। পাশাপাশি নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এরপরই শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক।

শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি পদে জয়ী হওয়ায় ডিএ তায়েবকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন এক সহকর্মী

এরমধ্যে গেল বৃহস্পতিবার সমিতির কার্যকরী সভা শেষে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক ডিএ তায়েব জানান, নিপুণের সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। গণমাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, সেটি জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান কমিটি।

নিপুণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার একমাত্র কন্যার কনভোকেশনে অংশ নিতে দেখা গেছে এই নায়িকাকে। তবে নিজের সদস্য পদ বাতিল হতে পারে এমন খবর ঠিকই তার কানে গেছে। আর তা শুনে মুখও খুললেন নিপুণ। তিনি বলেন, সদস্যপদের সঙ্গে কোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। রিট যেহেতু করেছি, ওনাদের কোর্টে আসতেই হবে। আর তিনি যদি সদস্যপদ খারিজ করতেই চায়, তাহলে সেটার জন্যও কোর্ট রয়েছে। দেশে তো আইন রয়েছে।

একমাত্র কন্যার কনভোকেশনে অংশ নিতে নিপুণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে

ডিএ তায়েবের মন্তব্যের জবাবে নিপুণ বলেন, ডিএ তায়েবের মতো একদমই ফ্রি লোক না আমি। তিনি কি অভিনেতা? একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা? তার কোনো সিনেমা ব্লকবাস্টার? তিনি কি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের নাম নক্ষত্রের সঙ্গে লিখেছেন? তার কাছে আমার প্রশ্ন রইল। আর তিনি আমাকে নিয়ে বলেছেন, আমার নাকি মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেটার জন্য আমি দেশে আসার পর তার নামে সাইবার ক্রাইমে মামলা করব।

;

কানের রেড কার্পেটে এবার চার নায়িকাকে নিয়ে হাজির ভাবনা!



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী আশনা হাবিব ভাবনা জানেন কিভাবে তার প্রথম কান যাত্রা অর্থবহ করা যায়। তাই সিনেমা দেখা, বিশ্বের বিভন্ন দেশের চলচ্চিত্রকার ও তারকাদের সঙ্গে কথা বলাসহ নিজের পোশাকেও রেখেছেন বুদ্ধিদীপ্ততা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

তার প্রতিদিনের পোশাক আলাদা আলাদা কারণে স্পেশ্যাল হয়ে উঠেছে। প্রথম দিন তিনি হাজির হন আন্তর্জাতিক তারকাদের মতো লম্বা টেলওয়ালা গাউনে। এর পরদিন ঢাকার কাক’কে পোশাকে উপস্থাপন করেন। তৃতীয় ঢাকাই জামদানির সঙ্গে রিকশা পেইন্টের মোটিফে তৈরী ব্লাউজ পরে নজর কাড়েন। এর পরদিন তিনি বেছে নেন দেশিয় বেনারসি শাড়ি কেটে তৈরী ভিন্নধর্মী গাউন।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

আর আজ প্রকাশ হয়েছে ভাবনার কান উৎসবের পঞ্চম দিনের সাজ। এটিও একটি বিশেষ কারণে নেটিজেনদের আগ্রহ কেড়ে নিয়েছে। ভাবনা এবার কালো অলসোল্ডার গাউনে হাজির হয়েছেন রেড কার্পেটে। পোশাকের কাটিং-প্যাটার্ণে আলাদা স্বকীয়তা না থাকলে নজর কেড়েছে পোশাকের দামান অংশের কাজ।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

সেখানে ফুলেল নকশার মাঝে মাঝে স্টোন দিয়ে কিছু লেখা চোখে পড়ছে। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে তাতে লেখা চারটি নাম- ববিতা, সুর্বণা (সুবর্ণা মুস্তাফা), মেরিল স্ট্রিপ ও অড্রে হেপবার্ন।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

এই নাম চারটি নিয়ে আলাদা করে বুঝিয়ে বলার কিছুই নেই। সিনেমাপ্রেমী প্রত্যেকে এই চারটি নামের সঙ্গে বহুকাল ধরে পরিচিতি। এমনকি চারজনই সবার প্রিয় নারী তারকা। দুজন বাংলাদেশের, দুজন হলিউডের।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

এই চারজন ভাবনারও খুব প্রিয় অভিনেত্রী। তাই তাদের সম্মান দেখানোর জন্যই কানের মতো প্রসিদ্ধ মঞ্চে ভাবনা তার পোশাকে নামগুলো খোদাই করেছেন। পোশাকটি ডিজাইন করে দিয়েছেন তার ছোট বোন অদিতি।

;