সালমান শাহঃ এক অসমাপ্ত গানের বেদনা



বিনোদন ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
সালমান শাহ

সালমান শাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে খুব কম নায়কই এসেছে তাঁর মতো। বাংলা সিনেমার দর্শকেরাও খুব কম দেখেছে তাঁর মতো নায়ক। প্রথম চলচ্চিত্র থেকেই তিনি ছিলেন সুপারহিট নায়ক। অসাধারণ ও সাবলীল অভিনয় দক্ষতা দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন সর্বশ্রেণির দর্শকের মন। উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল ছবি।

একজন সফল চিত্রনায়ক হিসেবে যখন পুরোপুরি প্রস্ফূটিত তাঁর নায়কজীবন, ঠিক তখনই ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে থেমে গেল তাঁর গতিময় ও প্রাণবন্ত জীবন। ‘রহস্যময় আত্মহত্যা’ তাঁকে কেড়ে নেয় দেশব্যাপী লাখো ভক্তদের কাছ থেকে। বাংলা সিনেমা হারিয়ে ফেলল তাঁর ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সফল নায়ককে। আজ এই মহানায়কের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।

বাংলা চলচ্চিত্রে মাত্র চার বছরের সময়কালে এই অঙ্গনে তিনি যে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, যে জনপ্রিয়তা তিনি অর্জন করেছিলেন, তাতে সবার মনেই আফসোস ও বেদনা না থেকে যায় না যে দীর্ঘ জীবন লাভ করলে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে তিনি আর কী অবদান রেখে যেতে পারতেন! কিন্তু কি এক কালো অধ্যায়ের শিকার হয়ে যেন হঠাৎ করেই থমকে গেল স্বতস্ফূর্ত ও ছন্দময় গানের মতো সাবলীল তাঁর জীবন। সালমান শাহ মানেই একদিকে যেমন অল্প সময়ে অনেক কিছু অর্জন করা এক মানুষ, তেমনি অসময়ে ঝরে যাওয়া এক নক্ষত্রের মতো হাহাকার ধ্বনিও সবার মনে বিরাজ করে তাঁর অকাল প্রয়াণের কারণে। যেন এক অসমাপ্ত গানের বেদনা তাঁর জীবন!

‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মাধ্যমেই সাড়া জাগিয়েছিলেন সালমান


যেভাবে যাত্রা শুরু সালমানের

১৯৯৩ সালের প্রথমদিকে রোজার ঈদে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। অসাধারণ সাড়া জাগায় সেই চলচ্চিত্রটি। সুপার হিট ব্যবসা করে। এই সিনেমায় তাঁর সাথে জুটি ছিলেন বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম সফল চলচ্চিত্রনায়িকা মৌসুমী। সেটি ছিল মৌসুমিরও প্রথম ছবি। এই জুটির রসায়ন দারুণ উপভোগ করে দর্শকেরা। সিনেমাটি ও এর নায়ক-নায়িকার কথা আলোচিত হতে থাকে দেশজুড়ে। ছবির গানগুলো ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে।

সিনেমাটির পরিচালনায় ছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। হিন্দি ছবি থেকে রিমেক করা এই বাংলা ছবির জন্য তিনি নতুন নায়ক-নায়িকা খুঁজছিলেন। একসময় নায়িকা হিসেবে খুঁজে পেলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় মডেল মৌসুমিকে। কিন্তু তখনও পাচ্ছিলেন না নায়ককে। অবশেষে শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন নামের এক ছেলের সন্ধান পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে রীতি আছে একটু অন্য ধরনের ‘নায়কোচিত’ নাম নিয়ে সিনেমায় যাত্রা শুরু করার। এই নামটি অনেক সময় পরিচালকেরাই তাদের দিয়ে দেন। যাই হোক, শাহরিয়ার চৌধুরি ইমন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেন ‘সালমান শাহ’ নাম নিয়ে।

সফলতার শীর্ষে সালমান
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে উপহার দিতে থাকেন হিট সব সিনেমা। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘তুমি আমার’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘বিক্ষোভ’, ১৯৯৫-এ মুক্তি পায় ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিল’, ১৯৯৬-এ মুক্তি পায় ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘সত্যের মৃত্যু নাই’-এর মতো অত্যন্ত ব্যবসা সফল সব ছবি। তাঁর চলে যাওয়ার পরেও মুক্তি পায় আরও পাঁচটি চলচ্চিত্র। এর মধ্যে তাঁর নামের জোরেই অত্যন্ত ভালো ব্যবসা করে বা জনপ্রিয় হয় ‘বুকের ভিতর আগুন’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ও ‘আনন্দাশ্রু’। অত্যন্ত জনপ্রিয় হয় আনন্দাশ্রু সিনেমার গানগুলো।

মোট ২৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল তাঁর। দুয়েকটি বাদে বেশিরভাগই ছিল অত্যন্ত ব্যবসাফসফল বা হিট। অভিনয় দক্ষতা, সংলাপে সাবলীলতা, সময়কে ছাড়িয়ে যাওয়া স্টাইল, ফ্যাশন দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে করে নিয়েছিলেন স্থায়ী আসন। ক্রমেই বাংলা সিনেমাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন নতুন উচ্চতায়। একঘেয়ে অভিনয় আর স্টাইল দেখতে দেখতে ক্লান্ত দর্শকদের সামনে তিনি হয়ে আসেন নতুনের আবাহন। তার রোমান্টিক, মেলোড্রামা, ফ্যামিলি ড্রামা, অ্যাকশন, প্রতিবাদ সব চরিত্রেই ছিল নতুত্বের স্বাদ। তার কাউবয় হ্যাট, গগলস, লং কোটে ডিটেকটিভ লুক, হুডি শার্ট, ব্যাক ব্রাশ করা চুল, কানে দুল, ফেড জিন্স, মাথার স্কার্ফ, ফ্যাশন সেন্স- সবকিছুর মধ্যেই নতুনত্ব পেয়েছিল দর্শকেরা। ফলে তিনি হয়ে ওঠেছিলেন তারুণ্যের স্টাইল আইকন।

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল জুটি সালমান শাহ-শাবনূর

 

প্রথমে মৌসুমীর সাথে জুটি বেঁধে বেশিরভাগ সিনেমায় অভিনয় করলেও পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত সফল জুটি গড়ে তোলেন শাবনূরের সাথে। বাংলা সিনেমারই অত্যন্ত সফল জুটি এই ‘সালমান শাহ-শাবনূর’ জুটি। রাজ্জাক-কবরী জুটির পর খুব কম জুটিই এরকম সফল ও জনপ্রিয় জুটি হিসেবে নাম করতে পেরেছে। একসাথে ১৪টি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তারা। মোসুমী-শাবনূর ছাড়াও লিমা, শাবনাজ, শামা, শিল্পী, কাঞ্চি, বৃষ্টিসহ বেশ কিছু নায়িকার সাথে অভিনয় করেছেন। রোমান্টিক ও মেলোড্রামায় বেশি কাজ কারলেও তার চরিত্রগুলোতে বৈচিত্র ছিলো দেখার মতো। কখনও ছাত্রনেতা, কখনও প্রতিবাদী যুবক, কখনও গ্রামের ছেলে, কখনও প্রেমের জন্য ঘরছাড়া তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

সালমানের সিনেমায় শুধু অভিনয় আর ফ্যাশন নয়, গানও ছিলো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তার প্রতিটি সিনেমাই ছিলো দারুণ সব গানে ভরপুর। অনেক গানই কালজয়ীতে রূপ নিয়েছে ইতিমধ্যেই। তরুণ শিল্পীরা এখন চলচ্চিত্রের গান গাইতে গেলেই সালমান অভিনীত সিনেমার গানগুলোই বেশি গেয়ে থাকেন। সালমান শাহ কতটা জনপ্রিয় সেটা এই সময়ের অভিনেতাদের জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যায়। বাংলা চলচ্চিত্রে এখন যারা কাজ করছেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা সবাই বলেন সালমান তাদের আইডল, তাকেই অনুসরণ করেন তারা।

সালমানের মধ্যে কী এমন ছিলো যার জন্য তাকে আইডল হিসেবে দেখে সবাই? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় সালমানের সিনেমাগুলোতে। সহজাত অভিনয় দক্ষতা ও চরিত্রের ভেতরে ঢুকে গিয়ে একদম চরিত্রে মিশে যাওয়ার গুণটা ছিলো তাঁর প্রবল। তার প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত যারা দেখেছেন, তারা খেয়াল করে থাকবেন বিষয়টা। সেখানে সালমান এতটাই সপ্রতিভ ও সহজাত ছিলেন যে কারও মনে হওয়ার উপায় ছিলো না ওটাই ছিলো তার প্রথম চলচ্চিত্র। অনেক বড় বড় অভিনেতার প্রথম সিনেমায় জড়তা থাকে, দেখলেই বোঝা যায় নতুন এসেছেন। কিন্তু সালমান শাহ কোনো জড়তা ছাড়া অভিনয় করে গেছেন প্রথম সিনেমাতেই।

আবার, বিক্ষোভ সিনেমায় তাকে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে দেখা যায়। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যিনি দেশপ্রেমের চেতনায় বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিতে থাকেন। পুরো ছবিতেই তার উপস্থিতি ও অভিনয় দক্ষতা ছিল প্রশংসিত। ওদিকে ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ সিনেমায় তিনি সমাজের একজন প্রতিবাদী যুবকের চরিত্রে দারুণ নান্দনিক অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। মায়ের চিঠি হাতে জেলখানায় আব্দুল মান্নান রানার গাওয়া তার ঠোঁটে 'চিঠি এলো জেলখানাতে' গানটি দেখে সে সময় কাঁদেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সুজন-সখী সিনেমায় গ্রামের ছেলে হিসেবেও ছিলেন বেশ সাবলীল। অসাধারণভাবে গ্রামীণ ভাষায় সংলাপ বলার ধরন দেখে কেউ বুঝতে পারবে না শহরের একজন স্মার্ট ও সুদর্শন মানুষ ছিলেন তিনি।

আর রোমান্টিক নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি তো ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী একজন। সালমান শাহকে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখে তাঁর দর্শকদের মনেও যেন প্রেমিক-হৃদয় আস্তানা গেঁড়ে বসেছিল আরও শক্তিশালীভাবে। পর্দায় তাঁর সাথে শাবনূর বা মৌসুমীর প্রেম দেখে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকাও নিশ্চয় ভাবত, ইশ, যদি এত সুন্দর হতো আমাদের প্রেমটাও।

শাহরুখ খান ও তাঁর স্ত্রীর সাথে স্বস্ত্রীক সালমান


অকালে ঝরে গেল নক্ষত্র

তবে, হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাতে তাঁর ভক্তদের নির্বাক করে দিল একটি দুঃসংবাদ। দিনটি ছিল ১৯৯৬-এর ৬ সেপ্টেম্বর। আজকের দিনের মতোই এক শুক্রবার। তখন শুক্রবারে বিটিভিতে বাংলা সিনেমা দেখার জন্য বসে থাকত সবাই। বাংলা সিনেমার মাঝখানেই বিকেল পাঁচটার খবরে সংবাদ পাঠকের কণ্ঠে ভেসে এলো দুঃসংবাদটা। প্রিয় নায়ক সালমান শাহ আর নেই। আকাশ ভেঙে পড়ল চলচ্চিত্রপ্রেমী প্রতিটি মানুষের মাথায়। এ কীভাবে হতে পারে? সালমান কীভাবে এভাবে চলে যেতে পারেন! অনেকে বিশ্বাস করছিল না, অনেকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু যা ঘটে গেছে সেটা কোনো গুজব ছিলো না, ছিলো সত্য। অনেক নিষ্ঠুর সত্য। সেদিন আনুমানিক সকাল ১১টায়ই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে।

কী ঘটেছিল সেদিন
সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সঙ্গে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহ'র বাবাকে তাঁর ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিল না।

নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, "বলেছে স্যার এখনতো উপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহ'র স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। এক পর্যায়ে উনি (সালমান শাহ'র বাবা) জোর করে উপরে যান। কলিং বেল দেবার পর দরজা খুললো সামিরা (সালমান শাহ'র স্ত্রী)।"

"উনি (সালমান শাহ'র বাবা) সামিরাকে বললেন ইমনের (সালমান শাহ'র ডাক নাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো। তখন সামিরা বললো, আব্বা ওতো ঘুমে। তখন উনি বললেন, ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি। কিন্তু যেতে দেয় নাই। আমার হাজব্যান্ড প্রায় ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।"

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহ'র মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহ'র বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী।

"খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেবার কথা সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেবার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহ'র স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পার্লার ছিল। সে পার্লারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সর্ষের তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে।"

"আমি দেখলাম আমার ছেলের হাতে পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে," সংবাদমাধ্যমকে বলছিলেন নীলা চৌধুরী।

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে বলা হয় সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছে।

এরপর তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে।

নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।

পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়কের আকস্মিক মৃত্যুতে স্তম্ভিত হয়ে যায় পুরো দেশ।

সে সময় সারা দেশজুড়ে সালমানের অসংখ্য ভক্ত তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যা করেন বলেও খবর আসে পত্রিকায়।

সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তাঁর ভক্তদের মাঝে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।

সালমান শাহের মৃত্যুকে ঘিরে যখন একের পর এক প্রশ্ন উঠতে থাকে, তখন পরিবারের দাবির মুখে দ্বিতীয়বারের মতো ময়না তদন্ত করা হয়। মৃত্যুর আটদিন পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের প্রধান ছিলেন ডা. নার্গিস বাহার চৌধুরী।

তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, "লাশটা আমি দেখেছি মরচুয়েরিতে। আমার কাছে মনে হয়েছে যেন সদ্য সে মারা গেছে। এ রকম থাকলে তাঁর মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে নির্ণয় করা যায়। আত্মহত্যার প্রত্যেকটা সাইন (চিহ্ন) সেখানে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ছিল। তাঁর শরীরে আঘাতের কোন নিশানা ছিল না।"

দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে মামলার কাজ সেখানেই থেমে যায়।

সিলেটে সালমান শাহের কবরে মোনাজাতরত এক ভক্ত


সালমান শাহ'র পারিবারিক বন্ধু চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম কিরণ বলছিলেন, শেষের দিকে অনেক মানসিক চাপে ছিলেন সালমান শাহ। পরিবারের সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সাথে বোঝাপড়ার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।

ওদিকে, সালমান শাহ'র মৃত্যুর পরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভাবনীয় ক্ষতির মুখে পড়ে।

প্রযোজকরা লোকসান কমিয়ে আনতে সালমান শাহ'র মতো দেখতে কয়েকজন তরুণকে নিয়ে অসমাপ্ত সিনেমার কাজ সম্পন্ন করার জন্য উঠে-পড়ে লাগেন।

"পুরনো ঢাকার একটি ছেলেকে পেছন থেকে দেখতে সালমানের মতো মনে হয়। তার চুলের স্টাইল দেখতে পেছন দিকে থেকে সালমানের মতো। তখন তার ওপর পুরো ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব পড়ে গেল। সালমানের অসমাপ্ত ছবিগুলোতে লং শট, ব্যাক টু ক্যামেরা, ওভার-দ্যা-শোল্ডার শটের মাধ্যমে সে ছেলেটাকে ব্যবহার করা শুরু হলো," গণমাধ্যমকে বলেন শাহ আলম কিরণ।

সালমান শাহ'র মৃত্যুর সংবাদ দর্শকদের মনে এতটাই দাগ কেটেছিল যে এত বছর পরেও অনেকে তার প্রিয় নায়ককে ভুলতে পারেননি। সালমানের মৃত্যুর দুই দশকের বেশী পরেও তাকে নিয়ে দর্শকদের মাঝে আলোচনা থামেনি।

সালমান শাহর বাবা-মায়ের মতো বহু ভক্ত বিশ্বাস করেন না তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সালমানের মৃত্যুর পর মৃত্যুশোক সইতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করেছে, অনেকে অসুস্থ হয়ে গেছেন। এখনও বহু ভক্ত সিলেটে হযরত শাহজালালের (রহ) মাজারে তার কবরে গিয়ে নীরবে অশ্রু ফেলেন, এখনও অনেকে তার 'হত্যাকারীদের' শাস্তি দাবিতে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেন। তারা বিশ্বাস করতে পারেন না তাদের প্রিয় নায়ক নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দেবেন। কারণ মৃত্যুর মাত্র ক'দিন আগে মৃত্যু নিয়ে সালমান শাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এখনই এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত নই, কাম্যও নয়। শুধু আমার নয়, কারও ভাগ্যে যেন বিধাতা অকাল মৃত্যু না লিখেন।’ বাঁচার জন্য এমনই যার আকুতি, তিনি কেন আত্মহত্যা করবেন এই প্রশ্নের উত্তরই ভক্তরা খুঁজে পান না!

জন্ম ও পারিবারিক জীবন
সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর সিলেট নগরীর দাড়িয়াপাড়ায়। বাবা কমরউদ্দিন চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, মা নীলা চৌধুরী করতেন রাজনীতি, একাধিকবার সংসদ নির্বাচনও করেছেন। একমাত্র ছোট ভাইয়ের নাম চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরান (ইভান)।

সালমান পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। একই স্কুলে তার প্রথম ছবির নায়িকা মৌসুমীও তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমণ্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি ও ধানমণ্ডির ড. মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। ১২ই আগস্ট ১৯৯২ সালে তিনি তাঁর খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরার মেয়ে সামিরা ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্রের তার স্টাইল ও ফ্যাশন নিয়ে পরামর্শ দেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সালমান নিজেই।

 

চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকলেও মিডিয়ায় সালমানের যাত্রা শুরু হয়েছিল টেলিভিশনে পারফর্ম করার মাধ্যমে। ১৯৮৫ সালে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামক ম্যাগাজন অনুষ্ঠানে একটি গানের ভিডিওতে মাদকাসক্ত এক তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালে বিটিভির আকাশ ছোঁয়া নাটকের মাধ্যমে তার অভিষেক হয় টিভি নাটকে। এরপর পরে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকেও অভিনয় করেন। 'নয়ন' নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত 'পাথর সময়' ও ১৯৯৪ সালে 'ইতিকথা' ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন। প্রেমযুদ্ধ ও ঋণশোধ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেন তিনি। মিল্ক ভিটা, জাগুয়ার কেডস, ইস্পাহানি গোল্ড, স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটাসহ কয়েকটি পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয়ও করেছেন।

ধূমকেতুর মতোই তাঁর আবির্ভাব হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্রে। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র জীবনে তিনি যেভাবে দাপটের সাথে অভিনয় করেছেন, যে অসাধারণ অভিনয়শৈলী দেখিয়ে তৈরি করেছিলেন লাখো-কোটি ভক্ত, সেটাই তাঁকে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে স্থায়ীভাবে। শুধু দর্শক ও ভক্তদের হৃদয়েই নয়, তিনি অনুপ্রেরণার উৎস ও পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তাঁর পরের প্রজন্মের অনেক অভিনেতার মাঝে। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান, সিয়াম আহমেদ, আরিফিন শুভ সহ অনেকেই তাদের অভিনেতা হিসেবে বেড়ে ওঠার পিছনে সালমান শাহের অদৃশ্য অনুপ্রেরণা ও প্রভাবকে অকপটে স্বীকার করে নেন।

এভাবেই তিনি হয়ে আছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। এভাবেই আগামী দিনগুলোতেই তাঁকে বাংলাদেশের মানুষ স্মরণে রাখবে নিঃসন্দেহে।

   

হীরামান্ডির ‘আলমজেব’-এর পাশে দাঁড়ালেন রিচা



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হীরামন্ডি সিরিজে রিচা চাড্ডা ও শারমিন সেহগাল

হীরামন্ডি সিরিজে রিচা চাড্ডা ও শারমিন সেহগাল

  • Font increase
  • Font Decrease

বড়পর্দার রূপালী মায়া কাটিয়ে ওটিটি জগতে এলেন খ্যাতিমান নির্মাতা সঞ্জয়লীলা বানসালি। তার প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘হীরামান্ডি : দ্য ডায়মন্ড বাজার’ মুক্তির পর থেকেই আলোচনায়। বিশাল আয়োজনে নির্মিত এই সিরিজ দর্শকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে। তবে নেটফ্লিক্সে এটি বিপুল সাড়া পাচ্ছে।

‘হীরামান্ডি’র যে দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা-নিন্দা হচ্ছে, তা হলো আলমজেব চরিত্র। এই চরিত্রে শারমিন সেহগালের অভিনয় দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। শারমিনের অভিনয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি তাকে কাস্ট করার কারণে বানসালির বিরুদ্ধে ‘স্বজনপোষণ’র অভিযোগও তুলছে নেটিজেনরা। কারণ তিনি শারমিনের মামা।

মামা-ভাগ্নি সঞ্জয়লীলা বানসালি ও শারমিন সেহগাল

এবার নিন্দায় বিপর্যস্ত শারমিনের পাশে দাঁড়ালেন এই সিরিজেরই সহ-অভিনেত্রী রিচা চাড্ডা। ‘হীরামান্ডি’তে রিচার অভিনয় দারুণ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এমন সময় সাধারনত তারকারা এদিক সেদিক তাকান না। নিজের সফলতা উপভোগ করেন। বিপাকে জড়িয়ে নিজের দিকে সমালোচনার তীর আসুক সেটা তারা একেবারেই চান না। তবে রিচা বরাবরই আলাদা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন। নিজের অনুভূতি কোন কিছুর চাপে দমিয়ে রাখার পাত্রী তিনি নন। এর আগেও রিচা তার ‘সর্বজিৎ’ সিনেমার কো আর্টিস্ট ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সমালোচনার মোক্ষম জবাব দিয়েছিলেন। তার সেই জবাব রীতিমতো ভাইরাল হয়।

 হীরামন্ডি সিরিজে লাজ্জো চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় ও নাচ পরিবেশন করেছেন রিচা

এবার হীরামন্ডি সিরিজের ‘আলমজেব’ চরিত্রের শারমিককে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে রিচা বলেন, ‘সত্যি বলতে, এটা (সমালোচনা করা) দর্শকের অধিকার। তারা সিরিজটি পছন্দ করতে পারে, অপছন্দও করতে পারে। কারও অভিনয় ভালো লাগবে, আবার কারও কাজ ভালো লাগবে না। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ যেভাবে ট্রল করে, মিম বানায়, নিন্দা করে; আমার মতে এটা সবার জন্যই ক্ষতিকর। কারও প্রতি নির্দয় হওয়া উচিত নয়, কারণ আগামীকাল এমন কিছু আপনার সঙ্গেও ঘটতে পারে। এবং হ্যাঁ, প্রত্যেকেই মানুষ।’

মা হতে যাচ্ছেন রিচা। তার স্বামী বলিউড অভিনেতা আলী ফজল

‘হীরামান্ডি’ নির্মিত হয়েছে ১৯৪০-এর দশকের প্রেক্ষাপটে। তখন লাহোরে হীরামান্ডি নামের এলাকায় বাইজিপাড়া ছিল। সেখানকার ছয় বাইজিকে ঘিরেই এগিয়েছে সিরিজের গল্প। এর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ। সিরিজটিতে আরও আছেন মনীষা কৈরালা, সোনাক্ষী সিনহা, অদিতি রাও হায়দারি, সানজিদা শেখ, ফারদিন খান, শেখর সুমন, ফরিদা জালার প্রমুখ।

তথ্যসূত্র : বলিউড হাঙ্গামা

;

জয়িতার টেগর’স টেল-এ বুঁদ সাধারণ থেকে তারকা



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ গাইছেন জয়িতা

একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ গাইছেন জয়িতা

  • Font increase
  • Font Decrease

একজন স্কুল জীবনের বন্ধুর অনুভূতি দিয়ে শুরু করা যাক। মারুফা আজিজ উপমা লিখেছেন, ‘সেই স্কুল জীবন থেকে তোর গান শুনে আসছি, কিন্তু এবারের গান অন্যরকম ভালো লাগার। কারণ এবার তোর একক সংগীত সন্ধ্যায় ছিলাম আমরা। প্রতিটা মুহূর্তে আন্টিকে (প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী শিল্পী মিতা হক) মিস করেছি, মাঝে মাঝে দেখে মনে হচ্ছিল আন্টিই গাইছেন। গর্বিত বাবা-মায়ের গর্বিত সন্তান।’

কথাগুলো যাকে নিয়ে লেখা হয়েছে তিনি ফারহিন খান জয়িতা। তরুণ প্রজন্মের রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী। যাকে এ প্রজন্মের অন্যতম মেধাবী রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী বলে মনে করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা!

ফারহিন খান জয়িতা

জয়িতার আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রয়াত রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক মিতা হক এবং মঞ্চ নাটকের যুবরাজ’খ্যাত খালেদ খানের একমাত্র কন্যা।

গত ১৭ মে ছুটির দিনে রাত ৮টা থেকে বনানীর যাত্রা বিরতির নতুন ঠিকানায় জয়িতার একক সংগীত সন্ধ্যা ‘টেগর’স টেলস’। সেই অনুষ্ঠান দেখতে টিকেট কেটে হাজির হন অনেকেই। তারমধ্যে শোবিজ তারকারাও ছিলেন।

এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট জয়িতা একে একে গেয়ে গেলেন বাল্মীকি প্রতিভা, মায়ার খেলা, প্রেম পর্যায়ের গানগুলো।

অনুষ্ঠানে এক ফ্রেমে জয়িতা, তার স্বামী শাহিদ মুস্তাফিজ, অভিনেত্রী নাজনিন হাসান চুমকী, নাদিয়া আহমেদ ও তার মা

গান শুনতে গিয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী নাজনিন হাসান চুমকী। নিজের অনুভূতির কথা সোশ্যাল লিখেছেন এভাবে, ‘গত সন্ধ্যায় জয়িতার কণ্ঠে রবীন্দ্র সংগীতে বুঁদ হয়ে ছিলাম। জয়িতা সোনা, তোমার কণ্ঠে মধু আছে। আর উচ্চারণ, তোমার কাছ থেকে অনেক শেখার আছে। তুমি অতুলনীয়। তোমার জন্য শুভকামনা সকল সময়।’

জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী নাদিয়া আহমেদ অনুষ্ঠান শেষে ছোট ছোট কিছু ভিডিও ক্লিপিং শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘আমাদের জয়িতা। মিতা আপার সুযোগ্য কন্যা জয়িতা। ওকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিংবা ওকে নিয়ে বলবার কিছু নেই। শুধু বলবো, আজকে গান থেকে শুরু করে কয়েক লাইন আবৃত্তি এক অসাধারন মুগ্ধতার সন্ধ্যা কাটলো। যারা রবীন্দ্রপ্রেমী তাদের জন্য একটু শেয়ার করলাম। জয়িতা তুই একটা ভালবাসা।’

জয়িতার সঙ্গে সেমন্তী মঞ্জুরী ও তার স্বামী

নিজে রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী হয়ে আরেকজন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পীকে নিয়ে সেমন্তী মঞ্জুরী লিখেছেন, ‘অনেকদিন পর দিদির এতগুলো গান শুনলাম! আনন্দঘন সময় কাটলো। গান তো ভালো বলতেই হয়। তবে আবৃত্তি শুনে বার বার মামার (জয়িতার বাবা অভিনেতা খালেন খান) চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। লাভ ইউ জয়িতা দিদি।’

মেধাবী নির্মাতা কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘কি অনবদ্য এক ঘন্টা পয়তাল্লিশ মিনিট কাটালাম! জয়িতা দোস্ত, তুমি সবার হৃদয় হরণ করেছ। তোমার গায়কী এবং গান নির্বাচন ছিলো এক কথায় পারফেক্ট। তুমি তো বটেই, তোমার যন্ত্রশিল্পীরাও অসাধারন পারফরমেন্স করেছেন গত রাতে। গান, নাচ, কবিতা সব মিলিয়ে অদ্ভূত সুন্দর একটা আবহ তৈরী হয়েছিলো। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি আমি। এ ধরনের পরিবেশনা তোমার আরও বেশি বেশি করা উচিত।’

একক সংগীতানুষ্ঠান ‘‘টেগর’স টেল’’-এ অনবদ্য পরিবেশনা ছিল জয়িতার

শুধু এই তারকারাই নন, জয়িতার ফেসবুক জুড়ে আরও নানা পেশা, নানা বয়সের দর্শকের প্রশংসা বার্তা ছড়িয়ে আছে। টিকেট শেষ হয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে জয়িতা আগের দিনই জানিয়েছেন, শিগগির আবার ফিরবেন এরকম আয়োজন নিয়ে।

;

ডিএ তায়েবকে তীক্ষ্ণ জবাব নিপুণের, নেবেন আইনি ব্যবস্থাও!



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
নিপুণ ও ডিএ তায়েব

নিপুণ ও ডিএ তায়েব

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে এমনটাই মনে করছিলেন সবাই। অল্প কিছু ভোটে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নিপুণ হেরে যান খল নায়ক ডিপজলের কাছে। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার অনেকগুলো ভোট নষ্ট হয়েছে। নয়ত ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। তারপরও নিপুণ পরাজয় মেনে নিয়ে মিশ-ডিপজল প্যানেলকে বিজয়ের মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

তবে সেই নির্বাচনে এক মাস যেতে না যেতেই বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আদালতে রিট করেন নিপুণ আক্তার। নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে এই ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। পাশাপাশি নতুন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এরপরই শুরু হয় পক্ষে বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক।

শিল্পী সমিতির সহ-সভাপতি পদে জয়ী হওয়ায় ডিএ তায়েবকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন এক সহকর্মী

এরমধ্যে গেল বৃহস্পতিবার সমিতির কার্যকরী সভা শেষে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি চিত্রনায়ক ডিএ তায়েব জানান, নিপুণের সদস্য পদ বাতিল হতে পারে। গণমাধ্যমে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন তিনি। তার সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, সেটি জানতে চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান কমিটি।

নিপুণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার একমাত্র কন্যার কনভোকেশনে অংশ নিতে দেখা গেছে এই নায়িকাকে। তবে নিজের সদস্য পদ বাতিল হতে পারে এমন খবর ঠিকই তার কানে গেছে। আর তা শুনে মুখও খুললেন নিপুণ। তিনি বলেন, সদস্যপদের সঙ্গে কোর্টের কোনো সম্পর্ক নেই। রিট যেহেতু করেছি, ওনাদের কোর্টে আসতেই হবে। আর তিনি যদি সদস্যপদ খারিজ করতেই চায়, তাহলে সেটার জন্যও কোর্ট রয়েছে। দেশে তো আইন রয়েছে।

একমাত্র কন্যার কনভোকেশনে অংশ নিতে নিপুণ এখন যুক্তরাষ্ট্রে

ডিএ তায়েবের মন্তব্যের জবাবে নিপুণ বলেন, ডিএ তায়েবের মতো একদমই ফ্রি লোক না আমি। তিনি কি অভিনেতা? একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা? তার কোনো সিনেমা ব্লকবাস্টার? তিনি কি বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের নাম নক্ষত্রের সঙ্গে লিখেছেন? তার কাছে আমার প্রশ্ন রইল। আর তিনি আমাকে নিয়ে বলেছেন, আমার নাকি মানসিক সমস্যা রয়েছে। সেটার জন্য আমি দেশে আসার পর তার নামে সাইবার ক্রাইমে মামলা করব।

;

কানের রেড কার্পেটে এবার চার নায়িকাকে নিয়ে হাজির ভাবনা!



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা

  • Font increase
  • Font Decrease

অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী আশনা হাবিব ভাবনা জানেন কিভাবে তার প্রথম কান যাত্রা অর্থবহ করা যায়। তাই সিনেমা দেখা, বিশ্বের বিভন্ন দেশের চলচ্চিত্রকার ও তারকাদের সঙ্গে কথা বলাসহ নিজের পোশাকেও রেখেছেন বুদ্ধিদীপ্ততা।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

তার প্রতিদিনের পোশাক আলাদা আলাদা কারণে স্পেশ্যাল হয়ে উঠেছে। প্রথম দিন তিনি হাজির হন আন্তর্জাতিক তারকাদের মতো লম্বা টেলওয়ালা গাউনে। এর পরদিন ঢাকার কাক’কে পোশাকে উপস্থাপন করেন। তৃতীয় ঢাকাই জামদানির সঙ্গে রিকশা পেইন্টের মোটিফে তৈরী ব্লাউজ পরে নজর কাড়েন। এর পরদিন তিনি বেছে নেন দেশিয় বেনারসি শাড়ি কেটে তৈরী ভিন্নধর্মী গাউন।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

আর আজ প্রকাশ হয়েছে ভাবনার কান উৎসবের পঞ্চম দিনের সাজ। এটিও একটি বিশেষ কারণে নেটিজেনদের আগ্রহ কেড়ে নিয়েছে। ভাবনা এবার কালো অলসোল্ডার গাউনে হাজির হয়েছেন রেড কার্পেটে। পোশাকের কাটিং-প্যাটার্ণে আলাদা স্বকীয়তা না থাকলে নজর কেড়েছে পোশাকের দামান অংশের কাজ।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

সেখানে ফুলেল নকশার মাঝে মাঝে স্টোন দিয়ে কিছু লেখা চোখে পড়ছে। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে তাতে লেখা চারটি নাম- ববিতা, সুর্বণা (সুবর্ণা মুস্তাফা), মেরিল স্ট্রিপ ও অড্রে হেপবার্ন।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

এই নাম চারটি নিয়ে আলাদা করে বুঝিয়ে বলার কিছুই নেই। সিনেমাপ্রেমী প্রত্যেকে এই চারটি নামের সঙ্গে বহুকাল ধরে পরিচিতি। এমনকি চারজনই সবার প্রিয় নারী তারকা। দুজন বাংলাদেশের, দুজন হলিউডের।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ভাবনা / ছবি : ফেসবুক

এই চারজন ভাবনারও খুব প্রিয় অভিনেত্রী। তাই তাদের সম্মান দেখানোর জন্যই কানের মতো প্রসিদ্ধ মঞ্চে ভাবনা তার পোশাকে নামগুলো খোদাই করেছেন। পোশাকটি ডিজাইন করে দিয়েছেন তার ছোট বোন অদিতি।

;