গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। আর সেখানেই যদি প্রচলিত পুরুষ শাসনের রীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হয় তাহলে সেটা দুঃখজনক। এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে দেখা যায় বটে!
যেমন সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও বলিউড সুপারস্টার প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কথাই ধরুন। তিনি নিজের জীবনের দারুণভাবে সফল। তাকে অনুসরন করে এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু সেই প্রিয়াঙ্কা যখন নিজের দেশ ছেড়ে হলিউডে কাজ করতে গেলেন, তখন পশ্চিমা গণমাধ্যম তাকে পরিচয় করিয়ে দিতেন, তার স্বামী হলিউডের জনপ্রিয় তারকা নিক জোনাসের স্ত্রী হিসেবে।
এই বিষয়টি এক পর্যায়ে আর মানতে না পেরে মুখ খোলেন পিসি। তিনি বিরোধীতা করে বলেন, আমার পরিচয় কি আমার জন্য যথেষ্ট নয়? আপনার আমাকে আমার স্বামীর নামে পরিচয় করানো বন্ধ করুন।
এবার একই ঘটনা ঘটল দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলার সঙ্গে। মিথিলাও তার জীবনে দারুণ সফল। পড়াশুনায় দারুণ মেধাবী, পিএইচডি করছেন, ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, একইসঙ্গে অভিনয়, মডেলিং ও সংসার সবটাই সামলাচ্ছেন।
তারপরও কলকাতার গণমাধ্যম তাকে স্বামী বিখ্যাত পরিচালক সৃজিত মুখার্জির নামেই পরিচয় করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
কলকাতায় মিথিলার নতুন একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘ও অভাগী’ নামের ছবিটি মুক্তি পেয়েছে আজ। সেই ছবির প্রিমিয়ারের পাশাপাশি স্বামী সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘অতি উত্তম’ ছবির প্রিমিয়ারের জন্য কলকাতায় রয়েছেন মিথিলা।
সেখানের এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিথিলা বলেছেন, ‘সৃজিতের সদ্য একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। অতি উত্তম ছবির প্রচারে বা সাক্ষাৎকারে ওকে কেউ আমার বিষয়ে, ওর বিবাহিত জীবনের বিষয়ে প্রশ্ন করেনি। কিন্তু আমায় করে। এই এক জিনিস মায়ার প্রমোশনের সময়ও হয়েছিল। বাংলাদেশেও সবাই সৃজিতকে ভারতের পরিচালক হিসেবে চেনে। আর আমি ওর স্ত্রী। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। আমি আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করি, পিএইচডি করছি, অভিনেত্রীও। সেগুলো যথেষ্ট নয় আমার পরিচয়ের জন্য? আমায় কেন কারও স্ত্রীর পরিচয়ে পরিচিত হতে হবে?’
সৃজিতের সঙ্গে কি ঝামেলা চলছে মিথিলার? এমন প্রশ্নের জবাবে মিথিলা জানান, এসব একেবারেই ভুল কথা। তিনি এবং তার মেয়ে ঢাকায় থাকেন। কারণ সেখানে থেকে তার কাজ করতে সুবিধা হয়। সেখানে তার পরিবার আছে। এখানে এলে অনেক সময় সৃজিত বাইরে থাকে।
৬০ বছর বয়সে মিস ইউনিভার্স হলেন আলেজান্দ্রা, তবে...
বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিনোদন
৬০ বছর বয়সে সেরা সুন্দরীর খেতাব জিতে ইতিহাস তৈরি করলেন আর্জেন্টাইন নারী আলেজান্দ্রা মারিসা রদ্রিগেজ। তবে এখনো তিনি মিস ইউনিভার্সের মুল আসর জয় করতে পারেননি। গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) তিনি বুয়েনস এইরেস প্রদেশের মিস ইউনিভার্স খেতাব জিতেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মিস ইউনিভার্সের আগামী আসরে অংশ নেওয়ার দৌড়ে সামিল হলেন!
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বুয়েনস এইরেসের লা প্লাটার বাসিন্দা আলেজান্দ্রা। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ও আইনজীবী। আলেজান্দ্রাই প্রথম নারী যিনি এই বয়সে সেরা সুন্দরীর খেতাব জিতলেন। মার্জিত ভাব, লাবণ্য এবং নজরকাড়া হাসিতে তিনি বিচারক এবং দর্শক উভয়কেই বিমোহিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে আলেজান্দ্রা জানান, তিনি আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া মিস ইউনিভার্স আর্জেন্টিনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া এ বছরের সেপ্টেম্বরে মেক্সিকোতে হতে যাওয়ায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার হয়ে অংশ নিতে চান আলেজান্দ্রা।
সেরা সুন্দরীর খেতাব জেতার প্রসঙ্গে আলেজান্দ্রা বলেন, ‘আমি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় এই নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরে রোমাঞ্চিত। কারণ আমরা একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছি।’
গত বছর মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা রাখবে না। এর আগে, ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী তরুণীরাই মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারতেন।
বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক চলচ্চিত্র উৎসব রাশিয়ার ‘মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। এই চলচ্চিত্র উৎসবের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক পুরনো সম্পর্ক। আমাদের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা এই উৎসবে একাধিকবার আমন্ত্রন পেয়ে রেড কার্পেট মাতিয়েছেন। আর যুরাজ শামীম তো সম্প্রতি তার ‘আদিম’ সিনেমাটি নিয়ে পুরস্কারও ছিনিয়ে এনেছেন। সেটি ছিল আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য অনন্য এক অর্জন।
এবার সেই উৎসব থেকে পুরস্কার জিতল বাংলাদেশের আরেক সিনেমা ‘নির্বাণ’। সিনেমা স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। রাশিয়া থেকে পুরস্কারের খবর জানালেন পরিচালক আসিফ ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পুরস্কার ঘোষণার খবর তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। পুরস্কার হাতে নিয়ে এখনো তিনি কাঁপছেন।
আসিফ আরও বলেন, ‘এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার সিনেমার মধ্যে অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নিয়েছে মাত্র ১১টি সিনেমা। সেই সিনেমার মধ্যে আমাদের সিনেমাটি স্পেশাল জুরি পুরস্কার জিতেছে। আমাদের সিনেমার নাম ঘোষণার পর আমি চমকে উঠি। পুরস্কার হাতে নেওয়ার পরও একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখানো আমি কাঁপছি। কথা বলতে পারছি না। এই অর্জনটা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে।’
১৯ এপ্রিল শুরু হয় মস্কো উৎসব। আজ ২৬ এপ্রিল ছিল সমাপনী আয়োজন। এই আয়োজনে শুরু থেকে অংশ নেন পরিচালক আসিফ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতকাল ছিল সমাপনী দিন। আমি ভাবিনি পুরস্কার পাব। আমি আর অল্প কিছু সময় আছি রাশিয়ায়। পরে কালই বাংলাদেশে থাকব। এখন রাশিয়ায় আসা সাংবাদিক, প্রযোজকেরা যেভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছেন, সেটা হয়তো পারব না। অনেক কিছু মিস করব। বাংলাদেশে পুরস্কার নিয়ে যেতে পারছি—এটাই আমার জন্য বড় প্রাপ্তি।’
‘নির্বাণ’ সিনেমার শুটিং শুরু হয় ২০২২ সালে। তখন করোনায় অনেকেই আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। আতঙ্কিত সেই সময়ে তরুণ নির্মাতা আসিফ ইসলামের মাথায় ভর করে, ছোট টিম নিয়ে সিনেমা বানাবেন তিনি। গল্পের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নিরীক্ষাধর্মী সিনেমার কাজ শুরু করেন। এটা পরিচালকের প্রথম সিনেমা। দীর্ঘ সময় নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।
আসিফ আরও জানান, শুরুতে সিনেমার চিত্রনাট্য ছিল ছোট। শুধু একটি আইডিয়া ছিল তাঁদের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিনেমার লেখক। দুজন একসঙ্গে শুটিংয়েও ছিলেন। দিনের পর দিন তাঁরা সংলাপহীন এই সিনেমা দাঁড় করিয়েছেন। পরিচালক বলেন, ‘এই পুরস্কার আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখবর।’
সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াম অর্চি। পুরস্কারের খবর রাতেই শুনেছেন তিনি। প্রিয়াম বলেন, ‘এই খুশি কীভাবে প্রকাশ করব, জানি না। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। পরিচালক নিজেই জানিয়েছেন। শোনার পরে ভাবছিলাম যে সিনেমাটি দুজন মানুষ দিয়েই শুরু। সেখানে চারজন অভিনেত্রী যোগ দিল। সিনেমা নির্মাণের পেছনের ঘটনার কথাই বেশি মনে পড়ছে। সিনেমার পরিচালক আসিফ ভাই, লিখেছেন আনোয়ার হোসেন ভাই। তাঁরা যে পরিশ্রম করেছেন, সেটাই মনে পড়ছে। আমরা টিমটা যে জার্নি নিয়ে শুরু করেছিলাম, সেটা আজ সফল হলো। এই প্রাপ্তি আমাদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।’
উৎসবে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতে নেয় মেস্কিকো ও কাতারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি ‘শেম’। ইরানের সিনেমা ‘ব্রেথ অব কোল্ড’-এর জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন নাহিদ আজিজি। ‘শেম’ এর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন জ্যাঁ র্যামন লোপেজ। জার্মানি ছবি স্লামাশেল-এর জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন মারাইকে বিকির। রাশিয়ান প্রিমিয়ার শাখায় সেরা সিনেমা হয়েছে লি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ৪১তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত হয় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। সেবার দুটি ইন্ডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কার পেয়েছে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি; রাশান ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকস জুরি পুরস্কার আর অন্যটি কমেরসান্ত পুরস্কার।
২০২২ সালে রাশিয়ার মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল যুবরাজ শামীম পরিচালিত সিনেমা ‘আদিম’। পরের বছর আবার অফিশিয়াল সিলেকশনে জায়গা পায় নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘পেয়ারার সুবাস’।
বলিউডের ভেতরে নানানরকম খেলা চলে। অবিশ্বাস্য, সেসব কথা নিয়ে কথা বলার সাহস কারো নেই। খুব কম শিল্পীই আছেন যারা কাউকে পরোয়া না করে সরাসরি সবার সামনে সেসব নিয়ে মুখ খুলতে পারেন। তাদের মধ্যে বিদ্যা বালান অন্যতম।
বিদ্যা বালান বরাবরই ব্যতিক্রমী এক অভিনেত্রী। যেখানে সবাই সমাজের বেধে দেওয়া ‘বিউটি স্ট্যান্ডার্ড’-এর ভেতরে নিজেদের আটকে রাখতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন, সেখানে প্রথা ভেঙে বিদ্যা বালান নিজের শারীরিক পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন।
তবে বলিউড নিয়ে কথা বলার সময় ঠোঁটকাটা হলেও এর আগে রাজনীতি নিয়ে কখনোই কোনো মন্তব্য করেননি এই স্পষ্টভাষী অভিনেত্রী।
এমনটা কেন, তা জানালেন অভিনেত্রী বিদ্যা বালান নিজেই। তিনি বলেন, এখন কোনো শিল্পীই রাজনীতি নিয়ে কথা বলার আগে দুইবার ভাবেন। দেখা যাবে, অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা ধরে ‘বয়কট’ ট্রেন্ড শুরু হয়ে যাবে।
একটা সিনেমার সঙ্গে প্রায় ২শ জন লোকের পরিশ্রম জড়িত থাকে। সে কারণে শিল্পীদের সাবধান হতে হয়। একজনের মন্তব্যে সিনেমা ‘বয়কট’ হলে ক্ষতি সবারই।
তিনি বলেন, অভিনয় জগতে টিকে থাকতে হলে অনেক দক্ষ হতে হয়। আবার কাজ ভালো করলেও অনেকের রোষের মুখে পড়তে হয়।
বিদ্যা বালানের ভাষায়,’আমার সাথে কখনো এমন হয়নি। তবে কখন কোন কথা কার খারাপ লেগে যায়, তাই কথা বলতে ভয় করে!
এছাড়াও সবচেয়ে বিতর্কিত সিনেমা ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ নিয়েও কথা বলেন তিনি। সিনেমাটিতে অভিনয় করা নিয়ে নানানরকম দ্বিধা কাজ করেছিল তার মধ্যে। অভিনেত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কখনো এমন চরিত্র করার কথা কল্পনাও করেননি বিদ্যা বালান। আবার এটাকে একটা সুযোগ হিসেবেও মনে হচ্ছিল। ছোট পোশাক পরে ডান্স করার বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন ছিলেন বিদ্যা বালান।
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জেগে ওঠার শপথে শুরু হলো গণসঙ্গীত উৎসব
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
বিনোদন
‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি-বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’-স্লোগানে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে শুরু হলো তিন দিনব্যাপী চতুর্থ জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসব। সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্ত মঞ্চে জাতীয় সঙ্গীত ও উৎসব সঙ্গীত ‘আমারই দেশ সব মানুষের’ গানের মধ্যে দিয়ে উৎসবের শুরু হয়। প্রমা অবন্তীর পরিচালনায় ওডিসি অ্যান্ড ট্যাগোর ডান্স মুভমেন্টের শিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন।
উৎসব উদ্বোধক সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সম্পদ অল্প কয়েকজনের হাতে কুক্ষিগত হচ্ছে। এটা সঠিক নয়। দুর্নীতি হচ্ছে। এরকম হলে আমাদের পরিণতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মত হবে। তারা স্বাধীন হয়েছে কিন্তু উপরে উঠতে পারেনি এখনো। তাই মানুষকে জাগাতে হবে। গণসংগীত বিশ্বের শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। গণসংগীত মানুষকে জাগায়। অগ্নিবীণার গান মানুষকে জাগিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিশ্বের কয়েকটি দেশে যখন চক্রান্ত হচ্ছিল তখন বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। এভাবে আবার জাগতে হবে। গণসঙ্গীত অতীতের মত আমাদের পথ দেখাবে।
উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘যখন সমাজ ভালো থাকে না, দেশ আক্রান্ত হয় অপশক্তির দ্বারা তখন বুক টান টান করে দাঁড়ানোর শক্তি যোগায় যে সংস্কৃতি তার অন্যতম প্রধান উপকরণ গণশক্তি। এই বাংলাদেশে সকল আন্দোলনে গণশক্তি শক্তি যুগিয়েছে। সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসী ভূমিকা নেয়। একসময় গণসঙ্গীত শক্তিশালী ধারায় থাকলেও মাঝে কিছুটা বিরতি ছিল। সে প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে আবার পুনর্জাগরণ। সকল দল ও শিল্পীদের আবার যুক্ত করতে জাতীয় গণসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন শুরু।’
চট্টগ্রামের পর সকল বিভাগীয় শহরে উৎসবের আয়োজন করতে চান জানিয়ে গোলাম কুদ্দুছ আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর আমাদের সংবিধান থেকে একে একে সকল মূলনীতিকে বাদ দিয়ে দেশকে একাত্তর পূর্ব পরিস্থিতিতে নেয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এ পথে যেতে হবে বহুদূর। এখনো নববর্ষ উদযাপনে বাধা আসে। সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। হয়ত কেউ না খেয়ে মরেনি কিন্তু ঘুষ দুর্নীতি লুটপাট অনেক বেড়েছে। এটা স্বীকার করতেই হবে। সরকারকে আরো কঠোর হস্তে এসব দমন করতে হবে। জনবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক জাগরণ। অশুভ শক্তিকে বাংলাদেশ থেকে বিনাশ করতে হবে। এতে অন্যতম প্রাণশক্তি হবে গণসঙ্গীত। পূর্ব পুরুষের রক্তের ঋণ শোধ করতে ত্যাগ স্বীকারের কোনো বিকল্প নেই।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশে গণসঙ্গীতের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গণসঙ্গীত সংগ্রামের প্রেরণা হয়েছে। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে আমরা জোট বাঁধছি, তৈরি হচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আমরা ফিরিয়ে আনবই।
সংস্কৃতিজন ও উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে হরি প্রসন্ন পাল, ফনি বড়ুয়া, রমেশ শীলসহ সারাদেশে বহু সঙ্গীতজ্ঞ গণসঙ্গীতে অবদান রেখেছেন। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের চেতনা সাধারণ মানুষের মাঝে ধ্বনিত হয়েছিল। আশা করি গণসঙ্গীতের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, ‘চট্টগ্রামের সকলের সহযোগিতায় এ আয়োজন করতে পেরে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সাংস্কৃতিক আন্দোলনই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। অসাম্প্রদায়িক একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই ছিল মুক্তিযুদ্ধ। সম্প্রদায়গত ঐক্যের বাণী সবার অন্তরে গাঁথা থাকুক।’
শুভেচ্ছা বক্তব্যে উৎসবের যুগ্ম সমন্বয়কারী শিল্পী শ্রেয়সী রায় বলেন, ‘গণসঙ্গীত আমাদের প্রাণের কথা বলে, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামে প্রথমবার চট্টগ্রামে আয়োজন করায় আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘এ উৎসবের মধ্যে সারাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের মেলবন্ধন হবে। উৎসবের মধ্যে গণসঙ্গীতের নব জাগরণ সৃষ্টি হবে এই প্রত্যাশা করি।’
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আজ গণসঙ্গীত শিল্পীদের মনে পড়ছে। আর মনে পড়ছে গণসঙ্গীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের। সকলের প্রচেষ্টায় আজ এ আয়োজন। সবাই মিলে সারাদেশে আমরা গণসঙ্গীতকে ছড়িয়ে দিতে চাই।
শুক্রবার উৎসবের সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করবে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু।
শুক্রবার বিকেলে দলীয় সঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করে খুলনার বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, আব্দুল লতিফের গান পরিবেশন করবে দিনাজপুরের দল ভৈরবী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান পরিবেশন করবে রাজশাহীর দল জয়বাংলা, বর্ণবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করবে বরগুনার দল মাটিয়াল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান পরিবেশন করবে নোয়াখালীর দল বিশ্বভূবন, ফকির আলমগীরের গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, ভূপেন হাজারিকার গান পরিবেশন করবে ঢাকার দল উঠোন, শ্রেণি-সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের দল সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং অজিত রায়ের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রংপুরের শিল্পী রূপু মজুমদার, ঠাকুরগাঁও এর জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, ঢাকার ফকির সিরাজ, কাজী মিজানুর রহমান, আরি রহমান ও প্রলয় সাহা এবং চট্টগ্রামের ফারহানা রহমান কান্তা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের ওরিয়েন্টাল স্কুল অব ডান্স। শনিবার ও রোববারও দিনব্যাপী এভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন থাকছে।