প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তাঁর ভেতরের মানুষটিকে মোটেই পিষ্ট করে দিতে পারেনি: জয়া



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করছেন জয়া আহসান

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করছেন জয়া আহসান

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা।

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চার দশক ধরে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে, ক্রিকেট ও বিনোদন অঙ্গনসহ প্রায় সকল স্তরের মানুষই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্ট শেয়ার করেছেন জয়া আহসান।

এপার-ওপার দুই বাঙলার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী লিখেছেন, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ জন্মদিন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে লেখার মানুষ কম নেই। আমার আছে মানুষ শেখ হাসিনাকে নিয়ে ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতি, একান্ত কিছু অনুভূতি…. উজ্জ্বল চিরন্তন এক ছবি। জয়া আহসান।

এত বছর আগের একটা দিন, কিন্তু শেখ হাসিনার সেই ছবিটি এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে মনে। কিশোরীবেলার অনেকগুলো ঝলমলে স্মৃতি একসঙ্গে মিলেমিশে আছে বলেই হয়তো।

উত্তুঙ্গ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জেনারেল এইচ এম এরশাদের সবেমাত্র পতন হয়েছে। প্রিয় স্বজনদেরসহ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সেনাশাসনের অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল পুরো দেশ, মানুষ তার সেই নিকষ কালো পর্ব থেকে বেরিয়ে এসেছে। দেড় দশক পরে ফুসফুস ভরে শ্বাস নিচ্ছে মুক্ত হাওয়ায়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক মধুর পর্ব চলছে। নানা রকমের মানুষের মিলেমিশে এক হয়ে ওঠার মতো এত বড় ঘটনা তো মুক্তিযুদ্ধের পরে আর ঘটেনি।

এসব অবশ্য বুঝেছি পরে। রাজনীতির জটিল জ্যামিতি বোঝার মতো বয়স তখনও আমার নয়। বড়দের পৃথিবী থেকে টুকরো টুকরো কথা কানে ভেসে আসে। সেসব আবছা কথা কল্পনায় জোড়াতালি দিয়ে আর নানা রঙে মিশিয়ে এক রকমের ধারণা করে নিই। তবে খুব যে এক আনন্দের সময় বয়ে চলেছে, সেটা বুঝি বাবার চাঞ্চল্য দেখে। বারবার কারণে–অকারণে ঘরে–বাইরে ছুটোছুটি করছেন। সিগারেট খাওয়ার হারটাও বেড়েছে। বহুদিন বাবাকে এমন মধুর মেজাজে দেখিনি। বাইরে থেকে বাবা এমনিতে ভীষণ কড়া মেজাজের মানুষ। ভেতরটা যদিও উল্টো। নিভৃত মুহূর্তে আপনমনে কাব্যচর্চা করেন। মনে পড়ে, আমাকে একবার কবি আল মাহমুদের কাছেও নিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার এত বড় মাপের একজন কবি, কিন্তু সে গুরুত্ব বোঝার মনও কি আর তখন হয়েছে? যা হোক, মনের কোমল অংশটা কঠিন আবরণের আড়ালে ঢেকে রাখতে অভ্যস্ত বাবার মনটা স্বৈরাচারী সেনাশাসনের পতনের পরে হঠাৎ খোলামেলা হয়ে পড়ল।

না হওয়ার কথাও তো নয়। দেশটাকে যে বড় ভালোবাসতেন তিনি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। বাঙালির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে প্রাণের টানে ছুটে গিয়েছিলেন। যুদ্ধ করেছিলেন খালেদ মোশাররফের সঙ্গে ২ নম্বর সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধের আগেকার সেই উত্তাল বিদ্রোহী দিনে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে বিক্ষোভ চলল, তরুণ–বয়সী বাবা তাতে গিয়েও যোগ দিলেন। সামিল হলেন বেতার অফিসের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে। নিজের হাতে সেখানে উড়িয়ে দিলেন মুক্তিযুদ্ধের লাল–সবুজ–হলুদ পতাকা। বেতার অফিসের সামনে বাবার সেই ফুটেজটা খুঁজে পেয়েছি সম্প্রতি। আমার অমূল্য এক সংগ্রহ।

যে প্রত্যাশা নিয়ে বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আরও অনেকের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল সে প্রত্যাশার মুত্যু হয়েছে। সেনাশাসনের পতনের পর তাঁর মনে হলো, বদ্ধ দরজা খুলে আবার আলো এল। বাবা বললেন, ‘চল, আমার সঙ্গে। তোদের একটা জায়গায় নিয়ে যাই।’ কোন জায়গায়? কার কাছে? কিছুই জানি না। আমি আর আমার ছোট বোন কান্তা চললাম বাবার সঙ্গে। কান্তা চড়ে বসল বাবার কাঁধে। আমি ধরলাম তাঁর হাত।

বাবা আমাদের নিয়ে চললেন এখন যেখানে সচিবালয়, তার কাছে, পল্টনের মোড়ে। আগের দিনের লোকেরা জায়গাটাকে তখন ডাকে সেকেন্ড ক্যাপিটাল বলে। সেখানে পথে পথে উৎসব। মোড়ে মোড়ে জটলা। মানুষের মাথা মানুষে খাচ্ছে। আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে শহরের পথে পথে। পল্টনে বিরাট মঞ্চ পাতানো হয়েছে। বাবার হাতে এরশাদ ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের কার্টুন–ক্যারিকেচারভরা লিফলেট আর পুস্তিকা ধরিয়ে দিচ্ছে লোকেরা। বাবা খুব আগ্রহ নিয়ে দেখাচ্ছেন আমাদের।

মানুষের উজান ঠেলে বাবা এরপর আমাদের নিয়ে সোজা উঠলেন ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসভরা বাড়িটিতে। যেন বেশ চেনা একটা আত্মীয়ের বাড়ি, এমনই নিশ্চিন্তে গিয়ে হাজির হলেন একটা ঘরের সামনে। দরজা ঠুকে বললেন, ‘বুবু, আসব?’ শেখ হাসিনা কে, কী, সেসব কিছু বুঝিনি। মনে মনে শুধু ভেবেছি, ও, ইনিই তাহলে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে! বিছানায় দ–এর ভঙ্গিতে কিছুটা অর্ধশায়িত। ঘরোয়া মেজাজ। কিছুটা কি ক্লান্ত? আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে সেনাশাসনবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলনের ঝড়ঝাপ্টা বয়ে গেছে তাঁর ওপর দিয়ে। কিন্তু কোথাকার কী? আমাদের দেখেই সস্নেহ একটা হাসির রেখা ফুটে উঠল মুখে। সোজা হয়ে বললেন, ‘কাকে নিয়ে এসেছ, বাবলা? তোমার মেয়ে বুঝি?’

সেই তাঁকে প্রথম দেখা। গায়ে সাধারণ একটা বেগুনি–ঘিয়ে রঙের ডুরে শাড়ি। মাথায় সামান্য ঘোমটা টানা। একেবারেই বাঙালি নারীর চিরচেনা আটপৌঢ়ে ছবি। শেখ হাসিনার চোখের রং আর দশজন সাধারণ বাঙালির মতো নয়। সে দিকে চোখ না পড়ে উপায়ই নেই। তবু সব ছাপিয়ে চোখ আঠার মতো আটকে গেল তাঁর চুলে। ঘন কালো চুলের এক মোটা গোছা। ঘোমটার আড়াল থেকে বেরিয়ে পিঠ বেয়ে এঁকেবেঁকে নেমে গেছে কোমর পর্যন্ত। এমন দীর্ঘ আর চওড়া চুলের গোছাও হয় মানুষের? মনে খচিত হয়ে গেল উজ্জ্বল ও চিরন্তন সেই বাঙালি ছবিটি।

এরপর তো পদ্মানদী দিয়ে বহু পানিই গড়িয়ে গেছে। বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রী থেকে তিনি এ দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কয়েকবার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর নিজেরও বাহ্যিক রূপান্তর কম হয়নি। কিন্তু চুলের মোটা গোছাসহ তাঁর যে ছবিটা সে দিন দেখেছিলাম, মনে গভীরে এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে সেই ছবিটিই। আমার কাছে সেটিই তাঁর স্থায়ী রূপাবয়ব।

প্রধানমন্ত্রীর গুরুতর দায়িত্বভার তাঁকে বহন করতে হয়। ছোটখাটো বিষয়ে মন দেওয়ার অবকাশ কোথায়? কিন্তু তাঁর সঙ্গে ছোট ছোট দুয়েকটি অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সামান্য বিষয়ের দিকেও তিনি সযত্ন দৃষ্টি রাখেন। প্রধানমন্ত্রী নন, নিতান্ত আপনজনের মতো। সেসব তাঁর না রাখলেও চলে, তাঁর হয়ে অন্য কেউ রাখলেই যথেষ্ট। তবু তিনি রাখেন। এ তাঁর অসামান্য এক গুণ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব তাঁর ভেতরের মানুষটিকে এখনো মোটেই পিষ্ট করে দিতে পারেনি।

একটা ঘটনা বলি। সেবার আমাকে জিরো ডিগ্রি ছবিটির জন্য সেরা অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার সবার হাতে তুলে দেওয়া হবে একটি অনুষ্ঠান করে। ঘটনাচক্রে সে বছর পশ্চিমবঙ্গেও আমাকে মহানায়ক উত্তম কুমার সম্মাননা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেবারই প্রথম কোনো নারী অভিনয়শিল্পীকে আয়োজকেরা এ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আলাদা একটা মর্যাদার ব্যাপার হয়ে উঠেছিল পুরস্কারটি। অর্থমূল্যও ছিল যথেষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কার দেবেন।

ভালোই প্যাঁচ লেগে গেল। দুটো পুরস্কার দেওয়ার তারিখ পড়ল একই দিনে। শুধু কি একই দিনে? পড়ল একই দিনের কাছাকাছি সময়ে, এক–দেড় ঘণ্টার এদিকে–ওদিকে। সকালে আর বিকেলে হলেও সামাল দেওয়া যেত। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে চলে যাওয়া যেত আরেকটি অনুষ্ঠানে। আয়োজকদের অনুরোধ করে সময়টাকে আগুপিছু নানা চেষ্টাচরিত্র করেও ফল হলো না। হবে যে না, সেটা এক রকম অনুমানও করেছিলাম। এত এত মানুষের সময়সূচি আবার মিলিয়ে সব ঠিক করা কি সহজ? কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার যে আমার দেশের সম্মাননা। তাছাড়া এর মর্যাদাও আলাদা। প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে এ পুরস্কার শিল্পীকুশলীদের হাতে তুলে দেবেন। এই পুরস্কার না নিয়ে কি পারা যায়?

দেশেই রয়ে গেলাম। অনুষ্ঠানে যথারীতি আমার নাম ডাকা হলো। মঞ্চে উঠলাম পুরস্কার নিতে। প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার সময় কোমল গলায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘জয়া, তুমি কলকাতায় যাওনি?’ তাঁর মুখে এই প্রশ্ন? এত ব্যস্ততার মধ্যে এই অকিঞ্চিৎকর তথ্যটুকু তিনি শুনেছেন, শুনে মনেও রেখেছেন? শুধু এখানেই তো শেষ নয়। আগে কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সত্ত্বেও যে আন্তর্জাতিক একটা সম্মাননার মায়া ছেড়ে দিয়ে আমি রয়ে গেছি, বক্তৃতা দিতে উঠে বললেন সে কথা। বললেন, এই হলো দেশের প্রতি ভালোবাসা। আমি তো বাকরুদ্ধ।

আমি গভীরভাবে অভিভূত হয়েছিলাম আরও একটি ঘটনায়। প্রকৃতি আর প্রাণীর প্রতি আমার প্রাণের টান। প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন কিছু সংগঠনের সঙ্গে তাই সক্রিয় যোগাযোগ রাখি। এ রকমই এক সংগঠন থেকে একবার খবর এল, গণভবনের লাগোয়া একটি জায়গা থেকে তারা একটি কুকুর উদ্ধার করেছে। গণভবনের চিফ সিকিউরিটি এসডিএন কবীর সাহেবের কাছে পরে শুনেছিলাম, গণভবনের বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে অর্ধশতাধিক কুকুর আছে। আছে বেড়ালেরও দল। পোষা নয়। স্বাধীন ও ছন্নছাড়া। এত গাছপালাভরা সবুজ একটা জায়গা। পাখপাখালিও সে কারণে এন্তার। যা হোক, দলছুট সারমেয় মহাশয় কোনো ফাঁকফোঁকর গলে গণভবনের বাইরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল পথে।

সেই দলছুট মহাশয়ের একটা হিল্লে করা হলো। কিন্তু কবীর সাহেবের কাছ থেকে আরও যে তথ্য পেলাম, তাতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ভালোবাসায় বুকটা ভরে গেল। সেই কুকুরগুলোর জন্য তিনি নিজেই খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ওদের জন্য ফার্ম থেকে মুরগির মাংস আসে। সেই মুরগির সঙ্গে চাল মিশিয়ে রোজ খাবার তৈরি হয়। বেড়ালগুলোর জন্য প্রতিদিনের বরাদ্দ ২০ লিটার করে দুধ। গণভবনের ভেতরের গাছগুলো থেকে ফল পাড়তে দেওয়া হয় না। ওইসব ফলপাকুড় পাখিদের ভোজ্য। তাঁর নির্দেশে পশুপাখিগুলোর জন্য আলাদা একটা ব্যয়বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র নিয়ে যাঁর শত ব্যস্ততা, তাঁর মনের একটি ভাগ তিনি এদের জন্যও দিয়ে রেখেছেন। ভেতর থেকে উপচে আসা গভীর ভালোবাসা ছাড়া কি আর এটি সম্ভব?

রাষ্ট্র আর রাজনীতি কোটি মানুষকে নিয়ে কাজ করে। তার তাই হাজার পথ, হাজার মত। সে নিয়ে জটিল বিতর্কের শেষ হবে না কোনো দিন। কিন্তু যৎসামান্য স্মৃতির গুচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে মানুষী রূপ দেখেছি, তার তুলনা মেলা ভার। এখনো যখনই তাঁকে দেখি, তখনই মনে ফিরে আসে কিশোরবেলায় দেখা মোটা চুলের গোছায় উজ্জ্বল সেই সস্নেহ মুখটি। অন্তরঙ্গ, নিবিড়, মমতামাখা।

   

কানে বলিউড তারকারা, কেউ নন্দিত তো কেউ নিন্দিত!



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
কানে ঐশ্বরিয়া, ঊর্বশী, ত্বাহা ও কিয়ারা

কানে ঐশ্বরিয়া, ঊর্বশী, ত্বাহা ও কিয়ারা

  • Font increase
  • Font Decrease

কান চলচ্চিত্র উৎসবে ৭৭ তম আসর চলছে মহাসমারোহে। বিশ্ব সিনেমার প্রদর্শন, মার্কেটিং, সেমিনার, কর্মশালাসহ নানা আয়োজন তো থাকছেই। তবে ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের চোখ থাকে রেড কার্পেটের দিকে। প্রতিদিন হলিউড-বলিউডসহ বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় শোবিজ তারকারা কানের লাল গালিচা মাতিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের দর্শকের অবশ্য সবচেয়ে আগ্রহ থাকে পাশের দেশ ভারতের কোন তারকা কি পোশাক পরলেন সেদিকে!

সাবেক বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনকে বলা হয় ‘কানের রেড কার্পেটের রানী’! কারণ তিনি ২০ বছর ধরে কানের লাল গালিচায় যাচ্ছেন।

কানের লাল গালিচায় ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

রাই সুন্দরীর চেহারার এখনো একটুখানি দ্যূতি কমেনি। তবে এ বছর তার পোশাক আশাক সেভাবে দর্শক মাতাতে পারছে না। এখন পর্যন্ত কানের দুটি লুক প্রকাশিত হয়েছে অ্যাশের। দুটির ডিজাইনই করেছে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘ফাল্গুনী এন্ড শেন পিকক’।

কানের লাল গালিচায় ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন

প্রথম দিন তিনি সাদা কালো টেলওয়ালা গাউন পরে রেড কার্পেটে হাটেন। তবে গাউনের ডিজাইন মনে ধরেনি দর্শকের।

দ্বিতীয় দিনও ওই একই অবস্থা। ঝলমলে নীল রঙের জরির গাউন পরেন ঐশ্বর্য্য। তবে এদিন গাউনের সুউচ্চ হাতা নিয়ে মজা করতে ছাড়েননি নেটিজেনরা।

কানের লাল গালিচায় ঊর্বশী রাউটেলা

আরেক বলিউড তারকা ঊর্বশী রাউটেলাও বিগত কয়েক বছর ধরে কানে যাচ্ছেন। শুরুর দিকে তার ফ্যাশন সেন্স নিয়ে হাসাহাসি হলেও আস্তে আস্তে তিনি বেশ মানিয়ে নিচ্ছেন। এ বছর তার পোশাকগুলো দেখে অন্তত তাই মনে হচ্ছে। ঊর্বশী সাধারনত গাঢ় রঙের পোশাকে হাজির হন। এবারও তার বিকল্প হয়নি।

কানের লাল গালিচায় ঊর্বশী রাউটেলা

প্রথমদিন তিনি পরেন গোলাপী রঙের গাউন। তবে নজর কাড়ে ঘাড়ের কাছে গাউনটির নাটকীয় ডিজাইন। সঙ্গে নেটের হাতমোজাটিও কারও দৃষ্টি এড়ায়নি।

আর দ্বিতীয় দিন এই তারকা হাজির হন গাঢ় লাল আর সোনালী রঙের অফ সোল্ডার গাউনে। এদিনের সাজ কারও বেশ পছন্দ হয়েছে। কেউ আবার বলছে, অতোটাও জমেনি!

কানের সমূদ্র সৈকতে ত্বাহা শাহ

সঞ্জয়লীলা বানশালীর নেটফ্লিক্সের ওয়েব সিরিজ ‘হীরামন্ডি’তে অভিনয় করে বর্তমানে বেশ আলোচনায় রয়েছেন বলিউডেরা তরুণ তুর্কী ত্বাহা শাহ। এই তারকাও পৌঁছে গেছেন কানে। তাকে রেড কার্পেটে একবার দেখা গেলেও এরইমধ্যে কানের তিনটি লুক প্রকাশ করেছেন এই আবেদনময় অভিনেতা। কানের সাগরপাড়ে ফুরফুরে বাতাসে কালো ট্রান্সপারেন্ট শার্টে দারণ দেখাচ্ছে ত্বাহাকে। আরেকটি লুকে তিনি হাজির নীল পানির মধ্যে ইয়োটে নীল জ্যাকেট পরা। 

কানের লাল গালিচায় ত্বাহা শাহ

আর রেড কার্পেটে তিনি হাজির হন ভারতীয় ট্রেডিশনাল পোশাকে। তাকে অফ হোয়াইট পাঞ্জাবী ও প্রিন্স কোটে দেখা গেছে। যাতে বাহারি সুতার হেভি অ্যাম্ব্রয়ডারি করা।

কানের লাল গালিচায় কিয়ারা আদভানি

এবার কানে যাওয়া বলিউড তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন হালের সেনসেশন কিয়ারা আদভানি। এই তারকাও রেড কার্পেটে একবারই হাজির হয়েছেন। এমনকি তিনি এবারই প্রথম কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। কিয়ারার প্রথম দিনের রেড কার্পেট লুক ছিল দুর্দান্ত। ভিন্ন ধাচের কালো ও বেবি পিংক গাউন, নো মেকাপ লুক, ক্ল্যাসিক হেয়ার স্টাইল, ছিমছাম ডিজাইনের ডায়মন্ডের গয়না আর নেটের হাত মোজা- সবমিলিয়ে যেন কোন দেশের রাজকন্যা কিয়ারা।

কানের সমূদ্র সৈকতে কিয়ারা আদভানি

তবে রেড কার্পেটে হাজির হওয়ার আগে কিয়ারা নিজেকে কানের সমূদ্র সৈকতের শীতল বাতাসেও ভিজিয়ে নিয়েছেন কিছুক্ষণ। সে সময় তার পরনের স্লিট কাটিংয়ের অফ হোয়াইট ফ্লোলেস টপ আর কানের পার্লের বৈচিত্রময় ঝোলানো দুল নজর কেড়েছে নেটিজেনদের। সবাই বলছে, কিয়ারা বেশ বুঝেশুনে আটঘাট বেঁধেই তার প্রথম কান যাত্রা সম্পন্ন করেছেন।

;

এলো হাবিব-আনিসার ‘তোমার আদরে’, আসছে আরও তিন



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
রেকর্ডিং-এর ফাঁকে ফ্রেমবন্দী হাবিব ওয়াহিদ ও আতিয়া আনিসা

রেকর্ডিং-এর ফাঁকে ফ্রেমবন্দী হাবিব ওয়াহিদ ও আতিয়া আনিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

হাবিব ওয়াহিদকে নতুন শতাব্দির বাংলা গানের অন্যতম আকর্ষণ বলা যায়। তিনি বাংলাদেশের গানে ভিন্নতা এনেছেন। সবচেয়ে বড়কথা তিনি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ফলে এ দেশের সব শিল্পী তার সঙ্গে গান করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবার তো আর সেই সুযোগ হয় না। সেদিক থেকে আতিয়া আনিসা বেশ সৌভাগ্যবান।

গত বছরই তিনি হাবিবের সঙ্গে প্রথমবার গেয়েছিলেন ‘হোক বাড়াবাড়ি’ শিরোনামের একটি গান।

আতিয়া আনিসা ও হাবিব ওয়াহিদ

আতিয়া আনিসা নিজেও এ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী। পেশাগত সংগীত ক্যারিয়ার অল্প দিনের হলেও তার অর্জনের ঝুলি বেশ পরিপূর্ণ! এরইমধ্যে তিনি সেরা গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছেন। ‘পরাণ’ সিনেমার ‘চলো নিরালায়’ গানটি গেয়ে প্রথমসারির শিল্পীর কাতারে উঠে এসেছেন তিনি। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক কনসার্ট শেষ করে দেশে ফিরেছেন আনিসা।

যাই হোক, বছর ঘুরতে না ঘুরতে হাবিব-আনিসা হাজির দ্বিতীয় নিবেদন ‘তোমার আদরে’ নিয়ে। গত ১৭ মে গানটি প্রকাশিত হয়েছে হাবিব ওয়াহিদেও অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।

অমিতা কর্মকারের কথায় এই গানের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন হাবিব ওয়াহিদ। আপাতত অডিও ভার্সন বের হয়েছে। নতুন এই গানে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে আতিয়া আনিসা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি সত্যিই এতোটা সাড়া আশা করিনি। কারণ এখন সবাই বলেন ভিডিও ছাড়া অডিও গান তেমন কেউ শোনেই না। সে হিসেবে এই গানের অডিওটি দারুণ সাড়া পাচ্ছে। তবে ইউটিউবের কমেন্টে বেশিরভাগ শ্রোতারই অনুরোধ, গানটির যেন ভিডিও করা হয়। তাই আমরা পরিকল্পনা করেছি গানটির ভিডিও প্রকাশ করব।’

রেকর্ডিং-এর ফাঁকে ফ্রেমবন্দী হাবিব ওয়াহিদ ও আতিয়া আনিসা

আনিসা আরও জানালেন, হাবিব ওয়াহিদের গানের ভক্ত তিনি অনেক আগে থেকেই। তার সঙ্গে কাজ করা মানে নতুন কিছু শেখা, নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করা। তাইতো দ্বিতীয় গান প্রকাশের আগেই হাবিবের সঙ্গে আরও তিনটি গান করে ফেলেছেন আনিসা। প্রতিটি গানই নিয়েই আশাবাদী তরুণ এই শিল্পী।

;

সদস্যপদ ফিরে পেয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন জায়েদ খান



বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জায়েদ খান / ছবি : ফেসবুক

জায়েদ খান / ছবি : ফেসবুক

  • Font increase
  • Font Decrease

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং এ সময়ের ভাইরাল নায়ক জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল হওয়ার ঘটনা শোবিজে বেশ আলোচিত হয়। তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নিপুণের নামে জন সম্মুখে আজে বাজে মন্তব্য করার দায়ে তার সদস্যপদ বাতিল করা হয়।

গত ১৯ এপিল জায়েদ খান সমর্থিত মিশা সওদাগর-ডিপজল প্যানেল শিল্পী সমিতির দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকেই ধারণা করছিলেন দ্রুতই জায়েদ তার সদস্য পদ ফিরে পাবেন। তবে একই কারণে যে নিপুণকে উল্টো সদস্য পদ হারাতে হবে সেকথা হয়তো কেউ ভাবনাতেও আনেননি। সম্প্রতি নিপুণও জন সম্মুখে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডিপজলকে নিয়ে কুরূচিকর মন্তব্য করেছেন বলে দাবী মিশা-ডিপজল প্যানেলের। ফলে জায়েদ খানের সদস্য পদ বাতিল হলে নিপুণের ক্ষেত্রে কেন একই সিদ্ধান্ত হবে না জানতে চেয়ে শিল্পী সমিতিতে নোটিশ দিয়েছে বর্তমান কমিটি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে নিপুণ অবশ্য বলেছেন, তার সদস্যপদ বাতিল করা হলে তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন।

নিপুণ আক্তার

যাই হোক আজ জায়েদ খানের সদস্য পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি ডি এ তায়েব জানান, জায়েদ খান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বক্তব্য দিয়েছিল তার যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছে। তা খতিয়ে দেখার পর সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এক প্রজ্ঞাপনেও বিষয়টি জানিয়েছে শিল্পী সমিতি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগরও।

ইতোমধ্যে সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার চিঠি পেয়েছেন জায়েদ খান। এরপর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু মিশা-ডিপজল ভাই পরিষদ সেই অন্যায় প্রশ্রয় না দিয়ে সঠিক তদন্ত করে সদস্যপদ ফিরিয়ে দিয়েছেন। এজন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জায়েদ খান বলেন, ‘তখন নতুন কমিটিকে ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে তিনি (নিপুণ) বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। অথচ এত দিন পরে উনার মনে হলো, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এটা দ্বৈতনীতি! আলোচনায় থাকা অথবা কারও প্ররোচনায় এমন কাজ করেছেন তিনি।’

জায়েদ খান

জায়েদ এটাকে নোংরা মানসিকতা উল্লেখ করে বলেন, ‘শিল্পীরা এত জঘন্য হতে পারে না। তার কারণে শিল্পীদের বদনাম হচ্ছে। আশা করি, শিল্পীরা সবাই মিলে উনাকে প্রতিহত করবে।

;

মম’র চোখে নিজের সেরা ৫ চরিত্র



মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম
জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন, ছবি : নূর এ আলম

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন, ছবি : নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে তারকারা নানা চরিত্র হয়ে হাজির হন পর্দায়। চরিত্রগুলো কখনো দর্শকে হাসায়, কখনো কাঁদায়, কখনো বিষণ্ন করে আবার কখনো ভাবনার জগতে নিয়ে যায়। এতো এতো চরিত্রের ভিড়ে তারকার কাছে তার অভিনীত সেরা চরিত্র কোনগুলো, তা নিয়ে বার্তা২৪.কমের নতুন বিভাগ ‘তারকার সেরা ৫ চরিত্র’। এ বিভাগের আজকের তারকা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ


আপনার অভিনীত সেরা ৫টি চরিত্র নিয়ে কথা বলতে চাই...


শিল্পী হয়ে নিজেই নিজের সেরা কাজগুলো নিয়ে বলাটা কঠিন। কারণ সবকটি কাজই তো সর্বোচ্চ অনেস্টি দিয়ে করার চেষ্টা করে থাকি। তারপরও নিজের ভালোলাগা তো বটেই, সেই সঙ্গে দর্শক ও সমালোচকপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে ৫টি চরিত্রের কথা বলছি...

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন আফরিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

‘দারুচিনি দ্বীপ’-এর জরী


অনেকেই হয়তো জানেন, লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমা দিয়ে আমার পেশাগত অভিনয়জীবন শুরু। হুমায়ূন আহমেদের মতো কথাসাহিত্যিকের গল্প, তৌকীর আহমেদের মতো অভিনেতার নির্মাণ এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছিল ছবিটি। সবমিলিয়ে আমার শুরুটা দারুণ হয়েছিল বলতেই হয়। এই ছবির কেন্দ্রীয় নারী চরিত্র ‘জরী’। সেই চরিত্রে আমি অভিনয় করি। একে তো প্রথম যে কোন কিছুর প্রতি মানুষের আলাদা দুর্বলতা থাকে। তারওপর জরি চরিত্রটি সত্যিই অনবদ্য। একজন তরুণী, যে আবার চোখে দেখে না তার জীবনযাপন, সংগ্রাম, সমাজে অ্যাকসেপ্টেন্স-এর কথা বলা হয় চরিত্রটিতে। শুরুতেই বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছিলাম। ছবিটি মুক্তির পর সবার কাছ থেকে দারুণ সাড়া পাই। প্রথম ছবির জন্য আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পাই। সবমিলিয়ে ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এর জরি আমার প্রথম পছন্দের চরিত্র।

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন আফরিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর নীলা


‘ছুঁয়ে দিলে মন’-এর নীলাও আমার খুব প্রাণের কাছের একটি চরিত্র। শুধু এজন্য না যে সিনেমাটি একইসঙ্গে সুপারহিট এবং সমালোচকপ্রিয়। এই চরিত্রটি আমার চোখের সামনে তৈরী করেছিলেন নির্মাতা শিহাব শাহীন। ফলে আমি চরিত্রটির মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম শুরু থেকেই। এরপর নিজের মধ্যে তা লালন করেছি দীর্ঘদিন। এই চরিত্রে আমি শুধু অভিনয়ই করিনি, এর পুরো লুক কেমন হবে, কি ধরনের সাজ পোশাক হবে সবটাই আমার আইডিয়া ছিল। ফলে এই চরিত্রটির প্রতি আমার দুর্বলতা অণ্যরকম। রোমান্টিক গল্পের ছবি ‘ছুঁয়ে দিলে মন’। আমার আর আরিফিন শুভ’র রোমান্টিক রসায়ন দর্শক খুব পছন্দ করে। তার বাইরেও যে নায়িকা চরিত্রটি আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে স্বকীয় হতে পারে সেটি নীলা চরিত্রটি দেখলে বোঝা যায়। এই চরিত্রটি করে আমি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের দর্শক জরিপ এবং সমালোচক- দুই শাখাতেই সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাই।

জাকিয়া বারী মম / মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

‘আলতা বানু’র আলতা


‘আলতা বানু’ আমার সাম্প্রতিক কাজ। এটি একটি নারীকেন্দ্রীক সিনেমা। অরুণ চৌধুরীর পরিচালনায় এই ছবিটিও প্রযোজনা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস। এখানে আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করি। একটি আটপৌরে মেয়ের জীবন সংগ্রামের গল্প ‘আলতা বানু’। চরিত্রটিতে অনেক বাঁক ছিল। তাই কাজটি করে আনন্দ পেয়েছি। মুক্তির পর যে সব দর্শক গল্পনির্ভর ছবি দেখতে পছন্দ করেন তারা আমাকে দারুণ ফিডব্যক দিয়েছিলেন।

আমার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা তো খুব বেশি নয়। তারমধ্যে এই তিনটি চরিত্র বেশি পছন্দ। এছাড়া ‘স্ফূলিঙ্গ’ নামে তৌকীর আহমেদের আরেকটি ছবি করেছিলাম সরকারি অনুদানের। সেখানেও উচ্চবিত্ত পরিবারের ড্রাগ অ্যাডিক্টেড একটি মেয়ের চরিত্র করেছিলাম। সেটিও আমার বেশ ভালো লেগেছিল।

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন আফরিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

‘ফুলমতি’ নাটকের ফুলমতি


নাটকেই তো সবচেয়ে বেশি অভিনয় করা হয়েছে। তারমধ্যে অনেক চরিত্র আছে খুব প্রিয়। তবে একটি চরিত্র বাছতে বলা হলে সুমন আনোয়ারের গ্রামীণ পটভূমির নাটক ‘ফুলমতি’র কথা বলব। এখানেও আমি নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। আফরান নিশো একটি ছোট্ট চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। গ্রামীণ সমাজে একটি দরিদ্র মেয়ে নিজের সম্মান নিয়ে বাঁচতে কি ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তার জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেছিলেন সুমন আনোয়ার। চরিত্রটিতে অভিনয়ের অনেক জায়গা ছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম ফুলমতির গহনের জ্বালা পর্দায় মূর্ত করতে। নাটকটি প্রচারের পর ভীষণ সাড়া পেয়েছিলাম সব শ্রেণীর দর্শকের কাছ থেকে।

দর্শক অবশ্য আমার নাটকের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ করেছে শিহাব শাহীনেরই পরিচালনায় ‘নীলপরী নীলাঞ্জনা’র নীলাঞ্জনা চরিত্রটি। তাহসান খানের সঙ্গে এই রোমান্টিক কাজের কথা এখনো দর্শক আমাকে বলে থাকে।

জাকিয়া বারী মম / পোশাক : হুর বাই সৌমিন আফরিন, গয়না : গয়নার মেলা, মেকাপ : শোভন মেকওভার, ছবি : নূর এ আলম

ওয়েব সিরিজ ‘অগোচরা’র হিন্দু বাড়ির বউ


সম্প্রতি ওয়েবেই পছন্দের কাজগুলো করা হচ্ছে। এরমধ্যে একটি চরিত্র বাছতে বললে বিঞ্জের ‘অগোচরা’ ওয়েব সিরিজের চরিত্রটির কথা বলব। জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন-এর এক ভিন্ন রকম গল্প নিয়ে ওয়েব সিরিজটি পরিচালনা করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। প্রযোজনা করেছেন হাসিবুল হাসান তানিম। পুরান ঢাকার আন্ডাওয়ার্ল্ডের গল্প নিয়ে নির্মিত। এ ধরনের গল্পে নারী চরিত্রের খুব একটা কাজ থাকে না। তবে আমাকে প্রধান নারী চরিত্রটি করতে দেওয়া হয়েছিল, যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল। এখানে আমি একটি হিন্দু ঘরের বউ। তবে এই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে সে স্বাধীনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে। চরিত্রটিতে গ্রে শেড রয়েছে। তাই কাজটি করে মজা পেয়েছি।

;