বাজেট ২০১৯-২০
বাজেট নিয়ে যা বললেন অর্থনীতিবিদরা
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত এ বাজেট নিয়ে ভিন্নভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা মাথায় রেখেই সরকার তাদের প্রথম বাজেট করতে যাচ্ছে। এ বাজেটের সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহারে মিল রয়েছে। তবে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাজেট বাস্তবায়ন করা। এতোগুলো অর্থ সংগ্রহ করাটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে। কর ব্যবস্থায় বড় সংস্কার আনতে হবে। সেই সঙ্গে কৃষি, শিক্ষাসহ যেসব খাতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা আরও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবারের প্রস্তাবিত বাজেট তেমন নতুন কিছু না। গতানুগতিক একটা বাজেট। এ বাজেটে আগের চেয়ে আলাদা কিছু নাই। তারপর বাজেটের যে মূল উদ্দেশ্য সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হতো। যেমন কর্মসংস্থান বাড়ানো, আয়ের উৎস বাড়ানো, শিল্পায়ন বাড়ানো। তাছাড়া ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্পে বেশি করে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার ছিল।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সিপিডির তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এ সরকার যেমন নতুন চিন্তা নিয়ে এক ধরনের কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তেমন মনে হয়নি। মনে হয়েছে সবগুলো প্রস্তাব ধারাবাহিক কর্মসূচি। সেজন্য আমাদের হতাশার জায়গাটা হলো নির্বাচনী ইশতেহারে যে সব বিষয় ছিল সে গুলোর মধ্যে থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু উল্লেখ করে সেগুলোর জন্য কী কী পদক্ষেপ নেয়া হলো এবারের বাজেট আমরা সেটা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা দেখতে পেলাম না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যেখানে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা খাতের জন্য বাজেট ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অস্বাভাবিক ও সংক্রামক রোগের বাড়তি চাপের সঙ্গে বাজেটের অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক।’
সিগারেটের দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘সিগারেটের দাম বৃদ্ধিতে লাভবান হবে ব্যবসায়ীরা। সিগারেটের দাম বাড়ানোর কথা বললেও গেল বছরগুলোর মতো প্রতিবারই কর থাকে ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ। কর না বেড়ে দাম বাড়লে সুবিধা পাবে ব্যবসায়ীরা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাজেট প্রতিবারই বাড়ে। সুতরাং এ যাবতকালের বড় বাজেট বলে বিশেষ কৃতিত্ব দেবার কিছু নেই। এ বাজেটের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো হয়নি আর শস্য বীমার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জটা হবে, এত বড় ঘাটতি বাজেট সমন্বয় করা।’
প্রস্তাবিত এ বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা ও ঋণ খেলাপিদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো কথা বলা নাই প্রস্তাবিত বাজেটে। সেই সঙ্গে করমুক্ত আয়ের সীমাটা বৃদ্ধি করে জনগণের একটা বড় প্রত্যাশা পূরণ করা দরকার ছিল। কারণ দীর্ঘদিন ধরে করমুক্ত আয় আড়াই লক্ষ টাকা আছে, এটা বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল।’