সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা

  • এম. খালিদ মাহমুদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা

সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অভূতপূর্ব ভূমিকা রেখে চলেছে। সড়ক নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোডক্র্যাশ/ সড়ক দুর্ঘটনা। আর সেই সাথে বাড়ছে সড়কে হতাহতের সংখ্যা। দেশের সড়ক দুর্ঘটনার ৭০-৮০ শতাংশই ঘটে দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। অন্যদিকে মোটরসাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত গতি প্রতিনিয়তই দেশের কর্মক্ষম তরুণসহ অনেকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি (৫ মে ২০২৪) জারি করা মোটরযানের ‘গতিসীমা নির্দেশিকা’ রোডক্র্যাশ ও প্রতিরোধযোগ্য অকালমৃত্যু কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। উল্লেখ্য, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা ২০২২-এ গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর কথা বলা হলেও এই নির্দেশিকার মাধ্যমে দেশের জন্য প্রথমবারের মতো প্রতিটি সড়কে মোটরযানভিত্তিক সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারিত হলো।

বিজ্ঞাপন

একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, গত ৫ মে ২০২৪ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোটরযানের ‘গতিসীমা নির্দেশিকা’ প্রণয়ণকালে গ্রামাঞ্চল ও শহরের জন ঘনত্বের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছে। রাস্তার ধরন ও প্রকৃতি অনুযায়ী বিভিন্ন মোটরযানের গতি ভিন্ন ভিন্ন করা হয়েছে যা সড়ক নিরাপত্তার জন্য বৈশ্বিক মান অনুসরণে করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বিদেশের মতো বাংলাদেশের সড়কে পর্যাপ্ত লেন থাকলে গতিসীমা নির্দেশিকাটি বাস্তবায়ন করা সহজ হতো। আশার কথা, সরকার ধীরে ধীরে সকল মহাসড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তখন এ গতিসীমা নির্দেশিকাটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং রোডক্র্যাশ ও সড়কে অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বিশেষত সড়কে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ ঝুঁকিপূর্ণ পথচারীদের নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত হবে।

সাম্প্রতিককালে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, সড়কে ব্যাপক হারে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনা, যাতে রোডক্র্যাশ/ সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বেগের মাত্রাকে দ্বিগুণ করে দিচ্ছে অধিকাংশ মোটরসাইকেল আরোহীর মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার না করা। বিশেষত ঢাকার বাইরে মোটরসাইকেল আরোহীদের হেলমেট না পরার সংখ্যা আশংকাজনক। আশার কথা, গতিসীমা নির্দেশিকার পাশাপাশি সরকার ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ নির্দেশিকাও জারি করেছে। এর ফলে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীগণ মানসম্মত হেলমেট পরার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত গতিতে মোটরসাইকেল চালাবেন বলে আশা করছি।

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পাবে। তাই এ সময়ে সড়কে দুর্ঘটনা/ রোডক্র্যাশ সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে আনতে জারিকৃত নির্দেশিকা দুটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। এক্ষেত্রে বিআরটিএ ও পুলিশসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান কঠোরভাবে ‘গতিসীমা নির্দেশিকা’ ও ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল’ আদেশ দুটি বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করছি।

নির্দেশিকা দুটি যথাযথ বাস্তবায়ন হলে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি): ৩.৬ অর্জন তথা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাবে এবং বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা (জিডিপি’র ২.০-২.৫%) অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারবে। পাশাপাশি সড়কে পূর্ণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার অবিলম্বে বৈশ্বিক মান অনুযায়ী একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন করবে বলে আমরা আশাবাদী।

এম. খালিদ মাহমুদ, রোড সেফটি প্রোগ্রাম, ব্র্যাক।