কোলাজ মন্তাজ

সৃষ্টিশীলদের খেয়ালিপনা



দেবদুলাল মুন্না
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

কেন সৃষ্টিশীলদের মধ্যে একটু খেয়ালিপনা থাকে? এ প্রশ্ন করা হয়েছিল পাভলভকে। তিনি বলেছিলেন, “তারা তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল ও অগ্রসর চিন্তার হন। ফলে প্রচলিত সমাজে তারা একটু মিসফিটই থাকেন। এই মিসফিট থাকাটাকেই অনেকে ভাবেন খেয়ালিপনা। এর বেশি কিছু নয়।”

“অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে গড়তে হয় একেকটি চরিত্র; সেই চরিত্রগুলো ধীরে ধীরে গল্প হয়ে ওঠে—একের এর এক শব্দের গাঁথুনি, সে বড় সহজ কাজ নয়।’ লেখক হয়ে ওঠার গল্প বলছিলেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক ভি এস নাইপল। “আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কী লিখব তার কিছু্ই জানতাম না। কিন্তু লিখব, এটা জানতাম। আমি বুঝতে পারলাম যে এজন্য আমাকে কাঠখড় পোড়াতে হবে। আমার কাছে ব্যাপারটা খুব বিব্রতকর ছিল। আসলে লেখাঝোঁকা পাগলামি ছাড়া আর কিছু্ই না। আবার এটাও বলতে হয়, কোনো কিছুই খুব সহজ না। অনেক চিন্তাভাবনা করে তারপরেই একটা কিছু দাঁড়ায়।” নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিক বলেন, ‘আমি লেখক হতে চাইছিলাম, কিন্তু জানতাম না কী লিখব। আমি লেখক হতে চেয়েছিলাম বাবার জন্য, আমার অনেক লেখায় আমার বাবার জীবনের ছাপ রয়েছে।” তাঁর জীবনে নাদিরা আসার পর তিনি লেখার টেবিলে বসতেন নাদিরাকে গভীর চুম্বন করে। একটা সময় তার বুকপকেটে নোটবই নিয়ে ঘুরতেন। তার কাছে যাদের ভিন্নরকম মনে হতো, তাদের সঙ্গে কথা বলতেন। এবং সেগুলো লিখে রাখতেন। একবার এক সেনা কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করে বিপদেই পড়েছিলেন। প্রশ্নটা ছিল, “আপনি তো বীরের মতো লড়াই করতে পারবেন? কিন্তু আপনি কি সেক্সুয়ালি স্ট্রং?”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যেও পাগলামি ছিল। বিভিন্ন ডিজাইনের কলম সংগ্রহের শখ ছিল। কিন্তু তিনি সেই কলমগুলো দিয়ে খাতায় একটি আঁচড় কেটেও দেখতেন না। শান্তি নিকেতনে ঘন ঘন বাড়ি বদলাতেন। নারিকেল তেল দিয়ে ভেজেও রুটি খেয়ে দেখেছেন প্রথম। কাজী নজরুল ইসলামের খেয়ালের হিসাব ছিল না। নজরুলের একটা বিশেষ খেয়াল ছিল, ওঁনার মনে কোনো আনন্দ বা উল্লাস জাগলে তিনি চিৎকার করে উঠতেন, “দে গরুর গা ধুইয়ে।” ধূমকেতুর কবিকে দেখতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। একদিন সকালে নজরুল গেলেন ঠাকুর বাড়িতে। আঙিনায় ঢুকতে ঢুকতে ডাকলেন, কবি কবি! কবি বারান্দায় বেরিয়ে এলেন। আর নজরুল রবীন্দ্রনাথকে দেখেই বলতে শুরু করলেন, “দে গরুর গা ধুইয়ে!”

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আরেক অদ্ভুত খেয়াল ছিল। বাড়িতে তো বটেই বাইরে কোথাও সভা সমিতিতে গেলে সবসময় সঙ্গে একটা মোটা মুগুর জাতীয় জিনিস নিতেন। গাড়িতে বা সভাতে যেখানে বসতেন হাতের নাগালের মধ্যেই রাখতেন। একবার এক লেখক সাহস করে জানতে চেয়েছিলেন, সঙ্গে মুগুর কেন? সহাস্য তিনি যা উত্তর দিয়েছিলেন, তার ভাবার্থ হলো, ওঁনার মধ্যে সব সময় একটা অজানা ভয় কাজ করত। ভাবতেন, কেউ বোধহয় অকস্মাৎ আক্রমণ করবে। তাই আত্মরক্ষার জন্য ওই মুগুর রাখা। অবশ্য এ খেয়াল বেশিদিন ছিল না। মাস সাতেক ছিল।

বিভূতিভূষণের সেই পারলৌকিক বিশ্বাস এতটাই তীব্র ছিল যে, মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক শ্মশানে নিজের মৃতদেহকে নাকি নিজের চোখে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। তারাশঙ্করের মামলা-মকোদ্দমা করার এক উদ্ভট খেয়াল ছিল। সুযোগ পেলেই তিনি কারো বিরুদ্ধে মামলা ঠুঁকে দিতেন নিঃসঙ্কোচে। শিবরাম চক্রবর্তী, তিনি বলতেন বা লিখতেন শিব্রাম চক্কোত্তি। উচ্চ বংশের ছেলে হয়েও সারা জীবন মেসেই কাটিয়েছেন। তার এক অদ্ভুত খেয়ালের মধ্যে ছিল কোনো ব্যক্তির তথ্য, ফোন নাম্বার খাতায় সংগ্রহ করে রাখতেন। তার মেসের দেয়ালটাই ছিল বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র সেতুবন্ধন। তার মেসবাড়ির ঘরের পুরনো দেয়াল বিভিন্ন লোকের নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বারে পরিপূর্ণ ছিল।

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে জেনারেশন

এবার বলি কবি জীবনানন্দ দাশের কথা। কবি একা একা হেঁটেছেন, কখনো ঘুমের মধ্যে, কখনও বা স্বপ্নে। তাঁর কবিতার মতো কবিও এক বিচিত্র খেয়ালে শিশিরে ভেজা ঘাসে পা ডুবিয়েছেন বারবার। সরীসৃপ শীতল অন্ধকারে হেঁটে গেছেন পার্কে ঘাসে, ট্রাম লাইনের বুকে। কবিপত্নী লাবণ্য দাশ রাতে মাঝে মাঝে ঘুম ভেঙে গেলে দেখতেন, কবি পাশে নেই। কী করতেন তখন কবি? কোথায় যেতেন? কবির বন্ধুদের লেখায় জানতে পারি, কবি ঘর ছেড়ে অন্ধকারে একা পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসে থাকতেন। কখনো-বা ঘাসে পড়ে থাকা শুকনো ডাল তুলে নিয়ে অন্ধকারে গাছের দিকে ছুড়ে দিতেন। বন্ধুরা জিজ্ঞেস করলে বলতেন, গাছের ডাল দিয়ে গাছকে মারি কেন জানো? যেমন নিজের হাত নিজের গায়ে লাগলে আমাদের ঘুম ভাঙে না, তেমনই গাছের ডাল দিয়ে গাছকে মারলে গাছের ঘুম ভাঙে না। অথচ গাছে আশ্রয়কারী যে পাখিগুলো তারা জেগে উঠবে! আর সেই এক সমুদ্র অন্ধকারের বুকে তাদের কিচির মিচির শব্দ আমাকে আরো এক গভীরতর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে। “অনন্ত নক্ষত্র-বীথি তুমি অন্ধকারে!” বলুন তো, এ খেয়ালের কোনো অনুভব কি আমাদের চেতনায় জাগাতে পারব?

কমল কুমার মজুমদার শেষের দিকে মনে করতেন তাকে দিয়ে কেউ লেখায়, মানে তিনি লেখেন না। তিনি বসে আড্ডা দেওয়ার চেয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। উল্টোদিকে মানিক বন্দোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধ্যায় আড্ডা মানেই মদ থাকতে হবে। মাতাল না হলে কি আড্ডা জমে। মানিক প্রতিদিনের বাজার-খরচের তালিকায় দেশি বাংলা মদের খরচও লিখে রাখতেন। শক্তি তো খালাসিটোলায় মদ খেয়ে প্রায় পথ হারিয়ে ফেলতেন। দেখা গেল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বাসায় গিয়ে সন্দীপন সন্দীপন ডাকছেন। রামকিংকর বেজ গাঁজা খেতেন। গাঁজা খাওয়ার পর কেউ তার পাশে গেলেই বলতেন, “তুমি কি সাওতালী নাচ দেখেছো কখনো? সাওতালী নাচ দেখবে? আমি নেচে দেখাব।’

আমাদের দেশের শিল্পী সুলতান একসময় শাড়ি পরতেন। হাসনাত আবদুল হাই তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, শাড়ি পরেন কেন? সুলতানের সাদাসিধে জবাব, “রাধাভাবে পাইছে।” হুমায়ুন আজাদ একা কোথাও রাত্রি যাপন করতে ভয় পেতেন। সে ভয় তাড়ানোর জন্য মদ গিলতেন। বাংলা প্রসঙ্গে ফের পরে বলি, এখন একটু পশ্চিমে তাকাই।

অ্যাডলফ হিটলার। তার বিচিত্র শখও চমকে দেওয়ার মতো। তার অদ্ভুত শখের মধ্যে ভায়োলিনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। অ্যাডলফ হিটলার ছোটবেলা থেকেই ভায়োলিন বাজাতে পারদর্শী ছিলেন। সেই সময়ে তিনি জার্মানির অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভায়োলিন বাদক ছিলেন। হিটলারের নির্দেশে যত খুন ও হত্যাযজ্ঞ করা হয়েছে এর প্রত্যেকটির পর তিনি তার ভায়োলিনটি বাজিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতেন। দুঃখ প্রকাশের ভঙ্গিমা আমেরিকান লেখক জ্যাক লন্ডনেরটি ছিল মজার। তিনি সেখানকার কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। পরিচিত কেউ মারা গেলে সেখানে উপস্থিত হয়ে মাথা থেকে হ্যাট খুলে নীল ডাউনের ভঙ্গিমায় বসে বলতেন, “যীশু তোমার অসুস্থতা কামনা করি।” একেকজন মানুষের ঘুমানোর স্টাইল একেক রকম। কেউ ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমান, কেউ বামে, চিত্ বা উপুড় হয়ে ঘুমান। চার্লস ডিকেন্সের এই অদ্ভুত শখটি ঘুমানোর স্টাইলের সাথে সম্পর্কিত। চার্লস ডিকেন্স যিনি ভিক্টোরিয়ান যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইংরেজ ঔপন্যাসিক হিসেবে সুপরিচিত। এই ইংরেজ ঔপন্যাসিক সবসময় উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমাতেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন যে এভাবে ঘুমানোর ফলে তাঁর লেখালেখি ভালো হবে। একজন বয়সে তরুণ ইংরেজ কবি, তাঁর প্রায়ই মনে হতো পাখি যদি উড়তে পারে তিনি কেন পারবেন না! যেমন ভাবা তেমন কাজ, দোতলার বারান্দা থেকে একদিন পাখি হয়ে গেলেন। মানুষ-কবি কল্পনায় যত পাখি হন না কেন, বাস্তবে তো আর পারবেন না। তাই ঘাড়মুখ গুঁজে পড়লেন বাগানের ঝোপের মধ্যে। হাতের হাড় ভেঙে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলেন।

এ রকমই খেয়ালি ছিলেন কবি জন কীটস্। কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ রোজ বিকেলে তাঁর পোষা কুকুরগুলোকে নিয়ে বেড়াতে বের হতেন। একটু ফাঁকা কোনো জায়গা পেলে দাঁড়িয়ে পড়তেন। নিজের সেদিনের লেখা কবিতা জোরে জোরে আবৃত্তি করতেন। কুকুরগুলো চুপচাপ কানখাড়া করে শুনলে, উনি বুঝে যেতেন কবিতা ঠিক আছে। আর যখন কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে আওয়াজ দিত, তখন উনি বুঝতেন এ কবিতাটা ঠিক হয়নি। ছন্দ বা শব্দচয়নে গোলমাল হয়েছে কোথাও। বাড়ি ফিরে আবার সংশোধন করতেন। তারপর বন্ধুদের সামনে পড়তেন বা পত্রিকায় ছাপতে দিতেন। কিন্তু, আপনারা কেউ শুনেছেন এমন সব সাহিত্যরসিক কুকুরদের কথা? নিশ্চয়ই না।

কৈশোরে যার অ্যাডভেঞ্চার পড়ে আমার বুক কাঁপত, আর যৌবনে যাঁর ‘টয়লার্স অব দ্য সি’ পড়েছি, সেই লেখক ভিক্টর হুগোর পাগলামি বা খেয়ালের জন্য এখন তার পরিণতির কথা ভাবলে মায়াই লাগে। জানি না কেন তার মধ্যে কোনো বিচিত্র ধ্বংসাত্মক খেয়াল ছিল। সমুদ্রে যখন ঝড় উঠত, বাতাস অস্থির, অবিরল ধারায় বৃষ্টি ঝরত, সেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে একা নৌকো নিয়ে উত্তাল সমুদ্রে অদৃশ্য হয়ে যেতেন। তাঁর লেখার মতো তাঁর খেয়াল ছিল এমনই বুক কাঁপানো! এমন পাগলামি তার মৃত্যু ডেকে এনেছিল। সত্যি সত্যি সেই ভিক্টর হুগো খেয়ালের বশে ওই রকম এক দুর্যোগপূর্ণ রাতে অস্থির সমুদ্রের বুকে নৌকাবিহারে বেড়িয়েছিলেন, আর কোনোদিন ফিরে আসেন নি।

সাগরপ্রেমিক ছিলেন আর্নেস্ট হেমিংওয়েও ভিক্টর হুগোর মতোন। ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি’ বইয়ের নাম সবার জানা। তার শখ ছিল শিকার করা। আর শুধু শিকার করলেই তো হবে না, তার স্মৃতি-চিহ্ন তো রাখতে হবে। তাই শিকার করা পশুর দেহাংশ শোভা পেত তাঁর ড্রয়িংরুমে, লেখার ঘরে, দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে, এমন কি বেডরুম পর্যন্ত। তাঁর এই বিচিত্র খেয়ালের জন্য বন্ধু প্রতিবেশি, এমন কি আত্মজনেরা পর্যন্ত বাড়ি আসা বন্ধ করে দিয়েছিল মৃত পশুর চামড়ার পচা দুর্গন্ধের ঠেলায়। কিন্তু তিনি কোনো দুর্গন্ধ পেতেন না। তার প্রথম বউ এসব কারণে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি দমেননি।

ফরাসি লেখক আলেক্সান্ডার ডুমার খেয়ালে রুচির ছাপ ছিল। তিনি বিভিন্ন রঙের কাগজ পছন্দ করতেন। এই তথ্য বেশ প্রচলিত যে, ফরাসি লেখক নীলরঙের কাগজে উপন্যাস লিখতেন, গোলাপি রঙের কাগজ রেখেছিলেন কবিতা লেখার জন্য এবং পত্রিকায় ছাপানোর জন্য তিনি লেখা পাঠাতেন হলুদ রঙের কাগজে। আগাথা ক্রিস্টিরও লেখার ব্যাপারে ছিল বিচিত্র খেয়াল। আমরা সবাই চেয়ার বা টেবিলে বসে লেখালেখি করে থাকি। কিন্তু ইংরেজ অপরাধ কল্পকাহিনীর প্রথিতযশা লেখক আগাথা ক্রিস্টি জীবনে কখনো চেয়ার বা টেবিলে বসে লিখতেন না। কখনো রান্না ঘরে রান্না করতে করতে বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে করতে অথবা হোটেল রুমে বসে তাঁর লেখালেখি চালিয়ে যেতেন। তাঁর চেয়ার টেবিলে বসে লিখবার অভ্যাস যেমন ছিল না, এমনকি তাঁর কোনো নিজস্ব অফিস ছিল না।

আরো পড়ুন ➥ স্ট্রিট লিটারেচার

ক্যালভিনো গুরুত্বপূর্ণ ইতালিয়ান লেখক। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ইতালীয় সাহিত্যে যে বিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছিল, ক্যালভিনো ছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগামী। তিনি লেখার আগে জুয়া খেলতেন। যেদিন আর্থিক সংকট থাকত সেদিন জুয়াও খেলতেন না। লিখতেনও না। এমন খেয়াল অবশ্য রুশ সাহিত্যিক দস্তয়ভস্কির মধ্যে ছিল। তিনিও জুয়া খেলতেন এবং বাজির শেষদানে না হারা পর্যন্ত খেলেই যেতেন। যেই হারতেন তখন বলতেন, “এখন আমার হারানোর কিছু নেই। লেখাই এখন উপযুক্ত সময়।” এবার মনে করুন কোনো চিত্রশিল্পী এক নির্জন ফসলহীন মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের কান নিজে কাটলেন। তারপর সেই রক্তাপ্লুত যন্ত্রণাবিকৃত আপন মুখচ্ছবি ক্যানভাসে চিত্রিত করলেন। আমরা তো ভাবব পাগলামির চূড়ান্ত। সেই সাথে সাথে এটাও ভুললে চলবে না, কী অসম্ভব মানসিক যন্ত্রণা আর প্রেমহীন হতাশা থেকে সেদিন শিল্পী ওই কাজটি করেছিলেন। এই শিল্পীর নাম ভ্যান গঁঘ। পরে অবশ্য সত্যি সত্যি মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন।

মনে করুন একজন লেখক, তিনি পুরুষ। সারাদিন বসে লেখেন। কিন্তু যেই সন্ধ্যে হয়, মহিলাদের মতো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরিপাটি করে সাজেন। স্নো পাউডার কাজল রুজ—সবই ব্যবহার হয়। তারপর গায়ে দামি আতর ছড়িয়ে নৈশ বিহারে বেরিয়ে পড়েন। ইনি একজন পৃথিবীখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার।নাম তার গি দ্য মোপাসাঁ। সুইডিশ লেখক অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গ ছিলেন একাধারে নাট্যকার, ঔপন্যাসিক এবং ছোট গল্পের জাদুকর। তার জন্ম ১৮৪৯ সালে। সেই বছরেই আরেক বিখ্যাত লেখক এডগার অ্যালান পো মারা যান। অগাস্ট সবসময় ধারণা করতেন, অ্যালান পোর আত্মাই তার ওপর ভর করে আছেন। পো তাকে দিয়ে সব ধরনের লেখা লিখিয়ে নিচ্ছেন। হ্যানস ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসন লেখক হিসেবে যেমন প্রসিদ্ধ ছিলেন তেমনি নানারকম অদ্ভুত খেয়ালের ব্যাপারেও তার জুড়ি মেলা ভার। হ্যানস পুড়ে মারা যাওয়ার ভয়ে বেশ ভীত ছিলেন। তিনি এতটাই ভীত ছিলেন যে, তিনি যেখানেই যেতেন, একটা লম্বা দড়ি সঙ্গে রাখতেন। যদি কোনো কারণে আগুন লাগে আর তিনি উপরতলার কোনো ঘরে সেই সময় ঘুমোন, তাহলে যেন দড়ি বেয়ে নিরাপদে নিচে নেমে আসতে পারেন—এই আশায়।

ঔপন্যাসিক নাথানিয়েল হাওথর্নের কিশোর বয়সের একটা প্রিয় খেলা ছিল নিজেকে কোনো অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে রেখে কল্পনা করা যে, ঘরটার চাবি হারিয়ে গেছে। রুশ কবি মায়াকোভস্কি খেয়াল ছিল লাল কালিতে লেখা। তাই তাঁর কবিতাকে বলা হতো লাল কবিতা। প্রেমের কবিতার জন্য তিনি পৃথিবী বিখ্যাত। কবি আত্মহত্যা করেছিলেন। আর আত্মহননের ঠিক আগে যে শেষ কবিতাটা লিখেছিলেন, সে কালির রঙও ছিল লাল। তবে তা নিজের রক্তের রঙ। হাতের শিরা কেটে সেই রক্তে কলম ডুবিয়ে লিখেছিলেন শেষতম স্বগতোক্তি!

জন শিভার ছিলেন পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হওয়া একজন আমেরিকান ঔপন্যাসিক। তার অভ্যাস ছিল বিচিত্র। তিনি সক্কাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্যুটেড বুটেড হয়ে বেসমেন্টে যেতেন। এরপর স্যুট প্যান্ট খুলে কেবল বক্সার এবং শার্ট পরে লিখতে বসতেন। লাঞ্চ টাইমে আবারও স্যুটেড ব্যুটেড হয়ে একটি স্যান্ডউইচ খেয়ে এসে আবারও পোশাক খুলে লিখতে বসতেন। জন শিভার তো তাও কিছু একটা পরে লিখতেন। কিন্তু তার চেয়ে পোশাকের ব্যাপারে এগিয়ে ছিলেন ট্রুম্যান ক্যাপোট। তিনি বসে লিখতে পারতেন না। আদুরে বেড়ালের মতো বিছানায় বা সোফায় শুয়ে শুয়ে লিখতেন। তাতে কোনো অবাক হওয়ার ব্যাপার নেই, তাই তো? কিন্তু তিনি লেখার সময় নগ্ন থাকতেন। কেন থাকতেন এ ব্যাপারে অবশ্য মুখ খোলেননি।

বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও সমালোচক জন ড্রাইডেন। তিনি পড়াশোনাতেই ব্যস্ত থাকতেন বেশি। তাই তার স্ত্রী লেডি এলিজাবেথের প্রতি তেমন মনোযোগ দিতেন না। একদিন স্ত্রী তার পড়ার ঘরে ঢুকে রেগে গিয়ে বললেন, “তুমি সারাদিন যেভাবে বইয়ের ওপর মুখ গুঁজে পড়ে থাকো তাতে মনে হয় তোমার স্ত্রী না হয়ে বই হলে বোধহয় তোমার সান্নিধ্য একটু বেশি পেতাম।” ড্রাইডেন তখন বইয়ের ওপর মুখে গুঁজে রেখেই বললেন, “সেক্ষেত্রে বর্ষপঞ্জি হইও, বছর শেষে বদলে নিতে পারব।” এমন কথার পর নিশ্চয়ই ড্রাইডেনের স্ত্রীর তার সাথে সংসার করার কথা না। কিন্তু করেছেন। ড্রাইডেন ‘চিনাকা’ পুরস্কারে সম্মানিত হবার পর একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাই যখন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন তার স্ত্রীকে কিছু বলার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বলেছিলেন, “তিনি এত জ্ঞানী যে, আমার সাথে বিছানায় বাতি নিভিয়ে শোওয়ার সময়ও হাতে বই থাকলে খুশি হন।” ড্রাইডেন তখন বলেন, “এই বই-ই আমাকে বিখ্যাত করেছে। আর তুমি তার বউ।”

বিখ্যাত বা জনপ্রিয় হওয়ার নেশা সালভাদর দালির মাঝেও ছিল। একটু বেশি পরিমাণেই। ১৯০৪ সালের ১১ মে স্পেনের ক্যাটালোনিয়ার ফিগুয়েরেস শহরে সালভাদর দালির জন্ম। বিশ্বখ্যাত চিত্রকর। যৌবনে যখন দালি আমেরিকায়, বলাই বাহুল্য তখন তিনি খুব পরিচিত মুখ ছিলেন না। নিউইয়র্কবাসীর কাছে নিজেকে তুলে ধরতে দালি রাস্তায় হাঁটার সময় হাতে ঘণ্টা রাখতেন। যখন মনে হতো পথচারীরা তাঁর ওপর দৃষ্টি দিচ্ছে না, অথবা বেশি মানুষের সমাগম যেখানে—সেখানে তাঁর দিকে দৃষ্টি ফেরাতে তিনি একটানা ঘণ্টা বাজাতে শুরু করতেন! যাতে তাঁর দিকে জনসাধারণ দৃষ্টি দিতে বাধ্য হয়। তাঁর এমন কাণ্ডের সুবাদে অল্প কদিনেই দালি হয়ে উঠলেন শহরের পরিচিত মুখ। মানুষ যখন দালিকে রাস্তায় হাঁটতে দেখত, তারা আশঙ্কা করত এবং সাথে সাথে উদগ্রীব থাকত অদ্ভুত, পাগলাটে কোনো ঘটনার জন্য। কারণ ততদিনে তারা জেনেছে, দালি মানেই বেখাপ্পা কিছু ঘটবে, ঘটতে চলেছে...। তাই সিগমুন্ড ফ্রয়েড দালিকে দেখে বলেছিলেন—“স্পেনীয়দের মধ্যে এমন ফ্যানটিক আমি আর দেখিনি।” দালির ভাষ্যমতে, “বিদায় নেওয়ার আগে ভাবলাম, প্যারানয়া বা মস্তিষ্কবিকৃতিবিষয়ক আমার (দালির) প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ তাঁকে (ফ্রয়েডকে) দিই। যে ম্যাগাজিনে লেখাটি ছাপা হয়েছিল, পাতা বের করে তাঁকে সবিনয় অনুরোধ জানালাম সময় পেলে তিনি যেন তা পড়ে দেখেন। পত্রিকাটির দিকে কণামাত্র ভ্রূক্ষেপ না করে ফ্রয়েড আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলেন। তিনি আগ্রহী হবেন এই ভেবে আমি বললাম, লেখাটি কোনো পরাবাস্তববাদী চালাকি নয়, বরং অতি উচ্চাশাপূর্ণ একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ। লেখাটির নাম পুনরাবৃত্তি করে আঙুল দিয়ে তা দেখিয়েও দিলাম। সম্পূর্ণ অমনোযোগী ফ্রয়েডের সামনে আমার গলা ক্রমশ উচ্চকণ্ঠ হয়ে আসছিল। তারপর, আমার দিকে তাঁর তীক্ষ্ণ অভিনিবেশ পরিবর্তন না করে স্তেফান জিভিগের দিকে তাকিয়ে ফ্রয়েড মন্তব্য করলেন, ‘আমি এর আগে এরকম একজন আপাদমস্তক হিস্পানীয়কে দেখিনি। আস্ত পাগল!”

কিন্তু ফ্রয়েডও তো কম পাগল ছিলেন না। ফ্রয়েড শব্দের বাংলা অর্থ করলে যা বোঝায় তাহলো ‘আনন্দ’। তো, জীবনে তিনি মানুষের মনোজগত নিয়ে সিরিয়াস চিন্তাভাবনা করলেও তিনি কি বলতে পারবেন তিনি মাঝেমাঝে কেন একটি ঘটনা প্রায়ই ঘটাতেন? সেই ঘটনার কোনো মনোবিশ্লেষণও তিনি করেননি কোথাও। কিন্তু হ্যারি ফিলার্সের ফ্রয়েডকে নিয়ে লেখা জীবনীগ্রন্থে দেখা যায়, “ফ্রয়েড যুবা বয়সে মাঝে মাঝে কোনো রেস্তেরাঁয় ঢুকে দেখা গেল খাচ্ছেন। তার আশপাশের টেবিলেও খাবারে ব্যস্ত লোকজন। সেই রেস্তেরাঁগুলোতে কোনো মিউজিকও বাজত না। না ছিল কোনো ড্যান্স ফ্লোর। কিন্তু হঠাৎই দেখা যেত ফ্রয়েড বিল মিটিয়ে তুলনামূলক একটু খোলামেলা জায়গা রেস্তেরাঁর ভেতরই বেছে নিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচতেন এবং বলতেন, ‘আই এ্যাম ফ্রয়েড, আই এ্যাম ফ্রয়েড।” এ কি মনোযোগ কাড়ার জন্য নয়?

আরো পড়ুন ➥ তবু সে দেখিল কোন ভূত

ফিরে আসি ফের বাংলায়। কলকাতার রমাপদ চৌধুরীর একটা অদ্বুত অভ্যাস ছিল। সেটি মাথার নিচেও বালিশ দিতেন এবং চিত হয়ে শুয়ে পায়ের নিচেও বালিশ দিতেন। বালিশের কথা যখন এলোই তখন মনে পড়ে গেল সুনীল ও শক্তির একটা যুবা বয়সের ঘটনা। তারা দুজন এলএসডি খেয়ে নেশায় মত্ত হওয়ার পর এক রুমে দু বিছানায় শুয়ে আছেন। হঠাৎ সুনীল তাকিয়ে দেখেন শক্তি ওপরের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বালিশের তুলা বের করে বাতাসে উড়াচ্ছেন। কেন কেন? জানতে চাইলেন? শক্তি জবাবে বললেন, “ওই ফ্যানে আমার অণ্ডকোষ ঘুরছে এমন মনে হচ্ছে।”

ফ্যান নিয়ে ঘটনা আছে গৌরকিশোর ঘোষের জীবনে। তখন তিনি ট্রিলজির ‘প্রেম নেই’ উপন্যাস লিখছেন। দেশভাগের ওপর এ উপন্যাসের পটভূমি। তখন তার মধ্যে ভীষণ মৃত্যুচিন্তা কাজ করত। তো যখনই মৃত্যুচিন্তা বেশি ভর করত তখনই ঘরে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে ফ্যান ছেড়ে তাকিয়ে থাকতেন একদৃষ্টিতে। এরকম বহুদিন করেছেন ‘প্রেম নেই’ উপন্যাস শেষ না করা পর্যন্ত। অথচ তিনি খুব বাস্তববাদী ছিলেন। কমিউনিস্ট মতাদর্শিক।

হুমায়ূন আহমেদের অনেক খেয়ালিপনার ঘটনা এদেশের সবারই জানা। একটা ঘটনা শুধু বলি। তখনও তিনি খুব জনপ্রিয় নন। নন্দিত নরকে পাঠকসমাদৃত হয়েছে আর বিটিভিতে তার লেখা নাটক প্রচার শুরু হয়েছে মাত্র। একদিন তিনি বেইলি রোড দিয়ে বিকালে যাচ্ছিলেন। মহিলা সমিতি মঞ্চে তখন নিয়মিত নাটক হতো। তো এর সামনেই নাটকপাগল মানুষেরা ফুটপাতে বসে আড্ডা দিতেন। হুমায়ূন আহমেদ দেখলেন সেই বিকালে এক লোককে ঘিরে অনেক ভিড়। লোকটা মাউথ অর্গান বাজাচ্ছেন আর বিচিত্র কিছু ভঙ্গি করছেন। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন লোকটা অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। হুমায়ূন আহমেদ দাড়াতেই ফরীদি সব থামিয়ে এগিয়ে এলেন এবং বললেন, “আরে মিতা আপনি।” এরপর ফরীদি তাকে একটা দোকান থেকে হিয়ে কলম কিনে গিফট করলেন। তো সেদিনই রাতে হুমায়ুন ফরীদি আর সুর্বণা মুস্তফার বাসার সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে ফোন করলেন ফরীদিকে। ফরীদি ফোনকল রিসিভ করতেই লোকটা বললেন, “আমি আপনার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এসেছি। আজ রাতটা আপনার সাথে রাতের খাবার খেতে চাই।” তখন রাত সোয়া এগারোটা। ফরীদি নেমে এলেন। যে লোকটি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি হুমায়ূন আহমেদ।

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;