তবু সে দেখিল কোন ভূত



দেবদুলাল মুন্না
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

বব ডিলান তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কবি ডিলান টমাস তাকে প্রভাবিত করেছেন পুরোমাত্রায়। ২০০৪ সালে হাফিংটন পোস্টে এক সাক্ষাৎকারে ডিলান বলেন, “আমার জন্ম আসলে ভুল নামে ভুল মা-বাবার ঘরে। এমনই হয়। কাজেই তুমি আমাকে যে কোনো নামে ডাকতে পারো।” সোয়ানসিয়া নামের যে শহরে ডিলান টমাস ১৯১৪ সালের অক্টোবরে জন্মেছিলেন সেই শহরে এখন আছে ‘ডিলান বুকস্টোর’ নামের বুকশপ। এর কর্ণধার জেফ টাউনস। তিনিও হাফিংটন পোস্টের একই সংখ্যায় বলেন, “আমেরিকানরা মূলত তাকে পছন্দ করা শুরু করেছে নিউইয়র্কে তার মৃত্যুর পর। বিশেষ করে রিচার্ড বাটন ও বব ডিলানের প্রশংসার পর তারা তাকে পছন্দ করতে শুরু করে। ১৯৩৪ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতাগ্রন্থে ১৮টি কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য ইংরেজিভাষী পাঠকের কাছে, ইংরেজি কবিতার ভুবনে আলোড়ন তুলেছিলেন। ১৯৪৬-৪৯ পর্যন্ত চলচ্চিত্র ও বেতারের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ডিলানের সৃষ্টিশীলতার আরেক অধ্যায়। জীবনকে ভালোভাবে উদযাপনের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে তিনি অর্থ উপার্জন করেছেন। কিছুকাল বোহেমিয়ান জীবন কাটিয়ে ১৯৩৭ সালেক্যাটলিন ম্যাকনামারাকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর চলে গেলেন সমুদ্র উপকূলের একটি গ্রামে, কারামানখেয়ার অঞ্চলে। কবিতা ও দাম্পত্য জীবন চলতে লাগল হাত ধরাধরি করে। ১৯৫২-তে ইন কানট্রি স্লিপ নামে প্রকাশিত হলো তাঁর কবিতাসমগ্র। এর আগে ১৯৪০-এ লিখেছিলেন আত্মজৈবনিক গদ্য ‘পোট্রেট অব দ্য আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়ং ডগ’। এ বইতে ডিলান টমাস লিখেছেন, “আমার জীবনে আমি সতেরবার সুইসাইডের চেষ্টা করি। প্রচুর মদ খেতাম। জীবনের কোনো মিনিং খুঁজে পেতাম না। আসলে নেই। যেন মানুষের জন্মই হয় বুড়ো হয়ে মরে যাওয়ার জন্য।”

১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান তিনি একটি হোটেলে। হোটেলের নাম চেলসি। এখানে বসে অনেক কবি ও লেখকরা, পুরনো ঢাকার বিউটি বোর্ডিয়ের যেমন আমাদের দেশের লেখক-কবিরা একসময় লিখেছেন, তেমন লিখতেন। ডিলান টমাসের মৃত্যুকে ঘিরে আছে রহস্য। অনেকে বলেন মৃত্যুকে কাছে টেনে নেওয়া। জীবনানন্দের মৃত্যু আজও এক রহস্য, তা দুর্ঘটনা না আত্মহত্যা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আমার। যদিও বেশি মনে হয় আত্মহত্যাই। কারণ কবির ডায়েরিতে আত্মহত্যার আকাঙ্ক্ষা পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার ট্রামলাইনে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ দিন পর মারা যান। ট্রামের ক্যাচারে আটকে যাওয়ার মতো সেই দুর্ঘটনা এর আগে কখনো হয়নি, পরেও নয়। অবাক বিষয় যখন জীবনানন্দ ওই ট্রাম লাইনের কাছাকাছি ছিলেন তখন তাকে ডাব খেতে খেতে হাঁটতে দেখা গেছে এমন দাবি করেছেন অতুল বসু তার লেখা, ‘জীবনান্দকে ফিরে দেখা’ (এক্ষণ প্রকাশনী) বইতে। তিনি লেখেন, “আত্মহত্যার আগে ডাব কেন খেয়েছিলেন কবি। সেদিন এক লোক দেখেছিল এ দৃশ্য। তার কাছ থেকে জেনেছিলেন অতুল বসুর প্রপিতামহ।

এই ট্রামলাইন নিয়ে জীবনানন্দ লিখেছিলেন

“কলকাতার ফুটপাত থেকে ফুটপাতে—ফুটপাত থেকে ফুটপাতে—
কয়েকটি আদিম সর্পিণী সহোদরার মতো এই যে ট্রামের লাইন ছড়িয়ে আছে
পায়ের তলে, সমস্ত শরীরের রক্তে এদের বিষাক্ত বিস্বাদ স্পর্শ অনুভব করে হাঁটছি আমি।”

ওই রাতে ১১টা ৩৫ মিনিটে ডাক্তার জীবনানন্দকে মৃত ঘোষণা করলে সঞ্জয় ভট্টাচার্য লেখেন, “একটি জাহাজ ছেড়ে গেল…।”

আমাদের দেশের কথাসাহিত্যিক কায়েস আহমেদকে মনে আছে আপনাদের। তিনিও সুইসাইড করেছিলেন। এখন গুলিস্তানের গোলাপশাহের মাজার, সেখানে আড্ডা দিয়েছিলেন রাত ১০টা অব্দি কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সঙ্গে। মার্কসবাদ ও বিপ্লবের কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাতে তার মধ্যে কী ভূত চেপেছিল কে বলবে আর। সুইসাইডই করলেন। মনোবিদ গুস্তভ ইয়্যুং বলেছেন, “লেখক-কবি-শিল্পীরা সাধারণত অন্য দশটা সাধারণ মানুষের চেয়ে হন বেশি সংবেদনশীল। তাই তাদের আত্মহত্যার কারণ এমনকি নিছক একটি পিয়ানোর সুরও হতে পারে। তারা থাকেন সবসময়ই তাড়িত পীড়িত। যেন বেহেশত থেকে বিতাড়িত অভিশপ্ত।”

না হলে ১৯৬১ সালের জুলাই মাসের এক সকালে নিজের প্রিয় দোনলা বন্দুকটা মাথায় ঠেকিয়ে সুইসাইড করেন আর্নেস্ট হেমিংওয়ে? অথচ ‘ওল্ড ম্যান এন্ড সি’ নামক কালজয়ী উপন্যাসে এই হেমিংওয়ে বৃদ্ধ সান্তিয়াগোকে দিয়ে বলিয়েছেন, “Man is not made for defeat… [a] man can be destroyed but not defeated”

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে যৌনতা

কালজয়ী উপন্যাস ‘দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড সি’সহ অনেক মাস্টারপিসের এই রচয়িতা ১৯৫৪ সালে নোবেল পুরস্কার পান। পেয়েছেন পুলিৎজার প্রাইজও। সেই হেমিংওয়ে কি নিজেই হতাশার কাছে পরাজিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন? তার বাবা ক্লারেন্স হেমিংওয়ে, ভাই লিস্টার হেমিংওয়ে আর বোন উরসালা হেমিংওয়েও আত্মহত্যা করেছেন। হেমিংওয়ে পরিবারের রক্তেই কি মিশে আছে এই আত্মহত্যার বাতিক? নাকি এটি সত্য যে নোবেল পুরস্কারের পর তার হাত দিয়ে নতুন লেখা বেরুচ্ছিল না। রাইটিং ব্লক? না হলে কেন বলবেন “রিপিটেশন রিপিটেশন, আর হবে না কিছুই।”

হেমিংওয়ের মতো নিজেকে গুলি করে মেরেছিলেন রুশ কবি মায়াকোভস্কিও। রাশিয়ান কবিতার তাকে বলা হয় ‘রেগিং বুল’। পুঁজিবাদী সমাজের শোষণ, মানুষে মানুষে অসাম্যের কথা বলেছেন এই কিংবদন্তি কবি তার লেখনীতে। তার কবিতা অনূদিত হয়েছে নানান ভাষায়। সমাদৃত নানান দেশে। এই কবির পুরো নাম ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিচ মায়াকোভস্কি। একদিন তার সঙ্গে পরিচয় হয় অভিনেত্রী ভেরোনিকা পোলানস্কায়ার। প্রথম দেখাতেই তিনি ভেরোনিকা পোলানস্কায়ার প্রেমে পড়েন। পোলানস্কায়াকে বলেছিলেন, “আমাকে কখনো ছেড়ে চলে যেও না। আমি ভীষণ ভয় পাই নীরবতা আর একাকীত্ব। ১৯৩০ সালের শুরুর দিকে স্ত্রী ইয়ানশিনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেন মায়কোভস্কি। পোলানস্কায়াকে বিয়ে করার কথা বলেন মায়াকোভস্কি। কিন্তু পোলানস্কায়া রাজি না। তাদের মাঝে সম্পর্কের টানাপড়েন নতুন করে শুরু হয়। ১৯৩০ সালের ১৪ এপ্রিল মায়াকোভস্কির সঙ্গে পোলানস্কায়ার দেখা হয়। এরপর সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে মায়াকোভস্কি রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। মায়াকোভস্কির সাবেক স্ত্রী ইয়ানশিন মৃত্যু সংবাদ শুনে শুধু বলেছিলেন, “তার (পোলানস্কায়া) কারণে আমাদের ছাড়াছাড়ি হলো। অথচ সে জানত না মায়াকো ছিল শিশু ও দারুণ অভিমানী। আমি কত রাত জেগে তাকে সঙ্গ দিয়েছি। তার পাগলামিকে প্রশ্রয় দিয়েছি। উজাড় করা ভালোবাসা দিয়েছি। কিন্তু তবু পুরনো হয়ে গিয়েছিলাম।”

ঔপন্যাসিক হান্টার এস থম্পসন আমেরিকান । নিজের শেষ লেখাটির নাম দিয়েছিলেন ‘ফুটবল খেলার মৌসুম শেষ’। নোটটি তিনি লিখেছিলেন স্ত্রী অনিতাকে উদ্দেশ্য করে। থম্পসন লেখেন, “আর কোনো খেলা নেই। আর কোনো বোমা নেই। চলতে থাকা নেই। কোনো মজা নেই। সাঁতার কাটা নেই। ৬৭। ৫০-এর পরও ১৭টি বছর। আমার চাওয়ার অথবা দরকারের চেয়েও ১৭টি বাড়তি বছর। বিরক্তিকর। আমি সব সময়েই উদ্দাম। কারো জন্য কোনো আনন্দ নেই। ৬৭। তুমি লোভী হয়ে যাচ্ছো। বুড়োমি দেখাও। শান্ত হও—এটা ব্যথা দেবে না।” এই লেখার মাত্র চার দিনের মধ্যেই নিজের মাথায় গুলি করেন তিনি। অনেক দিন ধরে শারীরিক বিকলাঙ্গতায় ভুগছিলেন থম্পসন। মৃত্যুর সময় টেলিফোনে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এমনভাবে গুলি করে নিজেকে হত্যা না করলেও অনতিক্রম্য বিষণ্ণতার কারণে সুইসাইড করেছেন আরো অনেকে। কয়েকজনের কথা বলি। কারিন বোয়ে কবিতা লিখতেন। তার বেশির ভাগ কবিতা প্রতীকধর্মী। তিনি পড়াশোনা করেন উপশাল ও স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা সংকলন। একটি সাহিত্য পত্রিকাও ছিল তার। কারিন বোয়ের কবিতায় স্থান পেত পরাবাস্তবতা। কবিতার বই প্রকাশ করার পর তা বিখ্যাত হয়ে যায়। এরপর একটি উপন্যাসও লেখেন কারিন বোয়ে। তিনি বিয়ে করেছিলেন, তবে সমকামী ছিলেন। ফলে তার বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। কারণ সমকামিতায় আকর্ষণ ছিল বেশি। পরবর্তীতে বান্ধবী মারগেট হ্যানেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার। জীবনের শেষ ১০ বছর তিনি মারগেট হ্যানেলের সঙ্গেই থাকেন। জানা যায়, মানসিক চাপের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেন। ১৯৪১ সালের এপ্রিলে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মারগেট হ্যানেলের সঙ্গে নাস্তা করেন। কফি খান। এসময় তিনি একটি গান গেয়ে শোনান বান্ধবীকে। ফুলের বাগান থেকে গিয়ে কিছু ফুল এনে তুলে দেন বান্ধবীর হাতে। বলেন, “লাভ ইউ ফর এভার।” এরপর তিনি গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। কিছুদিন পর তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এডগার অ্যালান পো ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক। অ্যালান পো ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি আমেরিকার বোস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোর থেকেই লেখালেখি শুরু করেন তিনি। অসাধারণ প্রতিভাবান এই লেখকের সারা জীবন কাটে অভাব, অনটন ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে। তিনি খামখেয়ালি জীবনযাপন করেছেন। মদ্যপান ও জুয়া ছিল তার নিত্যসঙ্গী। ১৮৮৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনিও কবি কারিন বোয়ের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে যান কাউকে কিছু না বলে। এর আগে একই ঘটনার ধারাবাহিকতা। গান শোনেন নাস্তার টেবিলে। ফুল দেন বাসার সবাইকে। পরবর্তী কয়েক দিন তার কোনো খোঁজ কেউ দিতে পারেননি। ঠিক ছয় দিন পর অক্টোবরের ৩ তারিখ বাল্টিমোরের রাস্তায় নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায় অ্যালান পোর। কাছের মানুষজন এরপর তাকে বাল্টিমোর হাসপাতালে নিয়ে যান। এর চারদিন পর হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এই লেখককে। ডেথ সার্টিফিকেটে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে মানসিক বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হয়েছে।

পুলিৎজার জয়ী কবি জন ব্যারিম্যানের বাবা আত্মহত্যা করেছিলেন। এরপর তার মা আবার বিয়ে করেন। বাবার এমন মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভঙ্গুর ছিলেন ব্যারিম্যান। কখনো মেনে নিতে পারেননি বাবার এমন মৃত্যু। তিনি পড়াশোনা করেন কলম্বিয়া কলেজ ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা শেষে ১৯৫৫ সালে তিনি অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সনেট কাব্য সংকলনের জন্য ১৯৬৪ সালে তিনি পুলিৎজার পুরস্কার পান। ৩৮৫টি কবিতা ছিল বইটিতে। প্রকাশের পর বইটি ওই সময়ের অন্যতম সেরা কাব্যগ্রন্থের স্বীকৃতি পায়। সেই সঙ্গে জন ব্যারিম্যানকে এনে দেয় বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এত কিছু পেয়েও কেমন যেন আনমনা থাকতেন জন ব্যারিম্যান। তারপর একদিন বাবার পথেই হাঁটলেন। তিনি ১৯৭২ সালে ওয়াশিংটন এভিনিউ ব্রিজ থেকে প্রায় ৯০ ফুট নিচে মিসিসিপি নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। তার মতোই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন সাহিত্যিক হার্ট ক্রেন। হুট করেই গুডবাই এভরিবডি বলে মেক্সিকান উপসাগরে একটি নৌকা থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। তখন হার্ট ক্রেনের বয়স মাত্র ৩২। আরেক বিখ্যাত সাহিত্যিক কোয়েসলার আত্মহত্যার আগে লিখেছিলেন দীর্ঘ চিঠি। হার্ট ক্রেন এমনটা করেননি; তার চিরকুটটা ছিল এমন—‘বন্ধুরা, কাজ তো শেষ তবে আর অপেক্ষা কেন?’ ক্রেন এখানে কাজ শেষ বলতে কী কাজের কথা বুঝিয়েছেন! যার পর পৃথিবীতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই করার মতো! সাহিত্যের আরেক দিকপাল পল ক্লি ঝাঁপ দিয়েছিলেন সিন নদীতে ৪৯ বছর বয়সে। কবি গিলিজ ডিলুয়েজকে বাধ্যতামূলক অক্সিজেন মেশিন ব্যবহার করতে হতো। একদিন তিনি মেশিনটি ফেলে দেন জানালার বাইরে। এরপর সুইসাউড করেন।

ভার্জিনিয়া উলফ বিখ্যাত ব্রিটিশ কবি। তার মৃত্যুও কাব্যিকভাবেই ঘটেছে। নিজের ওভারকোটের পকেটে নুড়ি পাথরবোঝাই করে হেঁটে নেমে গিয়েছিলেন খরস্রোতা পাথুরে নদীতে। আর কোনো দিন ফিরে আসেননি। তার উল্লেখযোগ্য রচনা হলো—মিসেস ডাল্লাওয়ে (১৯২৫), টু দ্য লাইটহাউস (১৯২৭), ওরলান্ডো (১৯২৮)। ভার্জিনিয়ার বিখ্যাত উক্তি—“নারী যখন ফিকশন লেখে তখন তার একটি কক্ষ আর কিছু অর্থ খুব প্রয়োজন।” ৫৯ বছরের জীবনে উলফ বেশ কয়েকবার মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার রোগের নাম ছিল ডিপোলার ডিজঅর্ডার। তিনি ১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ আত্মহত্যা করেন। শেষ বিদায়ের আগে প্রিয়তম স্বামীর উদ্দেশ্যে এক চিঠি লিখে যান ভার্জিনিয়া। চিঠিটি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পড়া সুইসাইড নোটগুলোর একটি। অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ওই চিঠিটি এখনো পড়েন বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীরা, উলফের পাঠকরা। “আমি নিশ্চিতভাবে অনুভব করছি যে, আমি আবার পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমি অনুভব করছি যে, ওরকম আরেকটি ভয়াবহ সময়ের ভিতর দিয়ে যেতে পারব না আমরা এবং আমি এবার সেরে উঠব না। আমি কণ্ঠ শুনতে আরম্ভ করেছি।” মানসিক অবসাদ একজনকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার প্রমাণ উলফ। অথচ তার সব ছিল। সুখী গৃহকোণ। বিত্তবৈভব। তবু কেন হইল মরিবার সাধ!

নোবেলজয়ী অ্যানি সেক্সটন বিশ্বখ্যাত কবি। অন্য কবিরা যে বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতেন অ্যানি সেক্সটন সে বিষয়গুলোই তুলে আনতেন কলমে। হস্তমৈথুন, রজঃস্রাব, গর্ভপাত ইত্যাদি বিষয়ও তার লেখায় চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু পুরো জীবনজুড়েই হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। মানসিক চাপ কমাতে তিনি মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তার কবিতা বিখ্যাত সব পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হয়। ১৯৬৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন এই কবি। তবে তা কখনো তার সৃষ্টিশীলতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তিনি বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই বিফল হতে থাকেন। তার সর্বশেষ কবিতার পাণ্ডুলিপি একজন রিপোর্টারকে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা যেন প্রকাশিত না হয়। ১৯৭৪ সালের ৪ অক্টোবর তিনি গাড়ির মধ্যে কার্বন মনো-অক্সাইড গ্যাস ছেড়ে আত্মহত্যা করেন।

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মনের বীক্ষণে দলিত, তপশিলি, নিম্নশ্রেণির ইতিহাস



সাৰ্থক লাহা
ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাস চর্চা দীর্ঘকাল ধরে মূলত রাজনীতি, রাজনৈতিক চিন্তা, রাজবংশ, রাজা-রাজত্বের মধ্যে সীমায়িত ছিল। আবার একইসাথে ইতিহাসের সংজ্ঞায়নে কেউ কেউ বলেছেন মহান মহান মানুষের জীবন অবতারনা বা আলোচনার নামই হল ইতিহাস। থমাস কার্লাইলের ভাষায়, 'ইতিহাস হল অসংখ্য মহান মানুষের আত্মজীবনির সারবস্তু’।

মূলত একটা সময় ইতিহাস মানে নেপোলিয়ান, আলেকজান্ডার, অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, আকবর প্রমুখ মানুষদের জীবনীগাঁথা ও তাঁদের সময়কালকেই বোঝা হতো। কিন্তু ইতিহাসের যে অন্য অনুষঙ্গ আছে বা ইতিহাস যে সমস্ত শ্রেণির মানুষের ইতিবৃত্ত সেটা বুঝতে বেশ কয়েক শতাব্দী অপেক্ষা করতে হয়।

মূলত গত শতাব্দীর ৮০’র দশক থেকে নিম্নবর্গের কথা ঐতিহাসিক কলমে উন্মোচিত হয়। তা সত্ত্বেও প্রশ্ন উঠেছে ‘নিম্নবর্গের মানুষ কি সত্যিই কথা বলতে পারে?’- এই প্রশ্নের উত্তরে সজ্জিত উপাত্ত নিয়ে ইতিহাসে যে দলিত শ্রেনি, তপশিলি জাতির উচ্চারনও সমানভাবে প্রতীয়মান, সেই জায়গাটি বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চার আলোকে যিনি সম্মুখে আনেন তিনি হলেন অন্যতম ইতিহাসবেত্তা রূপ কুমার বর্মন। যার কলমে বিভিন্ন গ্রন্থে দলিত শ্রেনি, তপশিলি শ্রেণির তথা নিম্নশ্রেনির ইতিহাস, আত্মকথন, স্বকীয় রচনাগুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। লেখকের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।

ইতিহাসচর্চা বস্তুনিষ্ঠতা, বিজ্ঞানবাদিতা, নিরপেক্ষতা সহ নানা নতুন অনুষঙ্গ নিয়ে ক্রমশই অগ্রবর্তী হচ্ছে। ইতিহাসবেত্তাদের কলমে ক্রমশই পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, মহামারি, বিজ্ঞান, ক্রীড়াসহ নানাবিধ চর্চা বিশ শতকে নানা আবর্ত আলোচিত হতে দেখা যায়।

মুখ্যত বাংলা ভাষায় জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ বিষয়ক আলোচনার আবর্ত দীর্ঘকাল যাবৎ ইতিহাসচর্চাকারীদের কলমে অপাংক্তেয় অবস্থাতেই থেকে গিয়েছিল। ঔপনিবেশিক কালপর্বে এবং সাম্প্রতিকে কিছুক্ষেত্রে জাতিচেতনা, দলিত আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি হলেও মূলত তা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই সীমায়িত। কাজেই কলকাতার গাঙচিল প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ এই গ্রন্থটি জাতপাতের ও আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকনির্দেশক গ্রন্থ তা বলাই যায়।

লেখক মূলত সমকালীন পশ্চিমবঙ্গকে এক্ষেত্রে অনুধাবন করেছেন। অসংখ্য সাক্ষাৎকার ও ক্ষেত্রসমীক্ষা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন এবং অসংখ্য প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তিকরনের প্রয়াসের ফসল এই গবেষণা গ্রন্থটি। শিরোনামেই ধরা পড়েছে গ্রন্থের মূল নির্যাস। যার মধ্যে সমকালীন পশ্চিমবঙ্গের জাতপাত, জাতি-হিংসা, তপশিলিদের সামাজিক স্তরীকরণে কী অবস্থা, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, নারীদের বৈষম্যকরনের পাশাপাশি ডান-বাম রাজনীতির আবহে এই তপশিলি জাতির চিত্রপটের স্বরূপ অনুধাবন, জাতিকেন্দ্রিক রচনা, কিছু ব্যক্তিত্বের বর্ননের সাথেও সরকারী নীতি, বিভাগ স্থাপন, প্রতিস্থান নির্মান ও নামকরন প্রভৃতি নানাবিধ বিষয়ের সংযুক্তকরুন বইটিকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছে।

রুপ কুমার বর্মনের গ্রন্থটিতে ভূমিকা, অধ্যায়ীকরন, উপসংহার, সুদীর্ঘ গ্রন্থ তালিকা সহ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারের সন্নিবিষ্টকরন পরিলক্ষিত করতে পারি। গ্রন্থ তালিকায় প্রাথমিক তথ্যাদি সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক রচনা, অফিসিয়াল ও লেখ্যাগারের তথ্যাদি ও বৈদেশিক গ্রন্থের প্রয়োগ গ্রন্থটির প্রামাণ্যতাকে নির্দেশ করে। অতিরিক্ত তথ্যাদির এই ব্যবহার গ্রন্থটিকে আরো প্রাঞ্জল করেছে।

গ্রন্থটির ভূমিকাংশে জাতপাত এবং জাতি, বর্ণবাদের উৎপত্তির ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের বর্ণবাদের বিকাশ এবং ক্রমশই যে জাতপাতের ভারতীয় সমাজে নিম্নবর্ণীয়দের প্রান্তিকায়িত করার আভাস তার ব্যাখ্যা দেখতে পায়। লেখক ইসলামিক এবং ঔপনিবেশিক সময়কালেও গ্রন্থগুলি অবলোকন করে ভারতীয় সমাজের নিম্নবর্ণীয়দের কি অবস্থান, তারা কিভাবে জাতি বৈষম্যের শিকার সেই ব্যাখ্যা করেছেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন আইন এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা মধ্য দিয়ে নিম্নবর্ণীয়দের অবস্থা যে ক্রমিক প্রভু-দাস সম্পর্কের (patron-client Relationship) বন্ধনে নিমজ্জিত হয়েছে। এবং প্রান্তিকিকরন হয়ে যাওয়ার যে ব্যাখ্যা সেটা আমরা দেখতে পাই এবং স্বাধীনতার সময়কালে ভারতের নিম্ন বর্ণের জাতি জাতি হিংসা অবসানের যে প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টায় তপশিলি জাতি এবং জনজাতীয় অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জাতির স্বরূপ কতটা বিকাশমূলক হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এবং খুব সুস্পষ্টভাবে ভারতীয় প্রেক্ষিতে পরিবর্তনের অনুধাবন করার চেষ্টা করেছেন এবং সমকালীন পশ্চিমবঙ্গেও জাতপাতের যে ধারাবাহিকতা সেটির আলোচনা করেছেন।

বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে তপশিলি জাতি ক্রমিক কিভাবে মৌখিক তথা বাহ্যিক এবং মানসিক জাতপাতের শিকার হচ্ছে সেই নব ব্যাখ্যাও এক্ষেত্রে সুস্পষ্ট।

গ্রন্থটির বিভিন্ন অধ্যায়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই জাতপাত, জাতি-রাজনীতি, জাতি-হিংসা, জাতি-বৈষম্য এই বিষয়গুলি পরিস্ফুটিত হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত, জাতি হিংসা এবং সামাজিক সংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরীকরণের ক্ষেত্রে জাতপাতের যে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্যাখ্যা যেমন আলোচিত হয়েছে তেমনি অন্য মেরুতে পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে চলতে থাকা বাচিক, মানসিক, ব্যবহারগত জাতপাতের যে অন্ধকার দিক সেটি লেখক তুলে ধরেছেন।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে স্বাধীনতার পর্বে পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তনকালীন রাজনীতি জাতপাত বা জাতি রাজনীতি কে কতটা ত্বরান্বিত করেছে এবং তপশিলি জাতির বিকাশ তথা উন্নয়ন নাকি তপশিলিরা রাজনীতির শিকার হয়েছে সেই ব্যাখ্যায় আমরা মূলত সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষিত হতে দেখি।

গ্রন্থটির তৃতীয় অধ্যায় মূলত বাংলার নিম্নবর্ণীয়দের নিজস্ব স্বকীয় লেখনীর মাধ্যমে তাদের অবস্থা নির্ণয়ের বা নির্মাণের আলোকে উঠে এসেছে। খুব সুন্দর ভাবেই লেখক বিভিন্ন জীবনী সাহিত্য, সৃজনধর্মী সাহিত্য অবলোকন এবং ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক পশ্চিমবঙ্গে নিম্নবর্ণের উত্থানের প্রশ্নটিই উত্থাপন করেছেন। গ্রন্থটির চতুর্থ অধ্যায়ে বাংলার তপশিলি সমাজের থেকে রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বকরণ এবং বেশ কিছু নিম্নবর্ণীয় মানুষের বিস্মৃত স্মৃতির নতুন করে চর্চা এবং চর্যার জগতে আনার আলোকে রচিত হয়েছে।

জাতপাত, জাতি-বৈষম্য, জাতি রাজনীতি এই শব্দবন্ধগুলি ভারতীয় সমাজের আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমানভাবেই বহমান হয়ে রয়েছে। সমাজে অন্যকে দেখার মানসিকতা, প্রভু-দাসত্বের সম্পর্ক উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের রূপক বর্তমান বিশ্বায়ন এবং প্রযুক্তির যুগেও সমভাবেই জাজ্বল্যমান সেটি পরিস্ফুটিত হয়েছে। গ্রন্থটি অনুধাবন করলে আমরা এই বিষয়টির সুস্পষ্ট বর্ণনা ফুটে উঠতে দেখতে পারি। কাজেই শুধুমাত্র ইতিহাস চর্চার আলোকে বা ইতিহাস পাঠকদের কাছেই নয়, সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে এই বইটির এক অন্যকথনের গল্প বলে যে গল্প জাতপাত, জাতি হিংসা, বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ের সংযোজনে জাতপাতের ইতিহাসে এই গ্রন্থটির গুরুত্বকে বর্নিত করে।

অনেক প্রশ্নের জবাব রূপ কুমার বর্মনের সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি সজ্জা, জাতি ইতিহাসের নানা আঙ্গিকে বর্ননা, নির্ভরযোগ্য গ্রন্থতালিকা এবং সার্বিক-সুস্পষ্ট বর্ননা গ্রন্থটিকে অনন্য মাত্রা দান করে। হাল আমলে দাঁড়িয়ে জাতপাতের বর্ননা, আঞ্চলিক প্রেক্ষিত, জাতি-হিংসার নানা দিকের উন্মোচন এবং বিভিন্ন তথ্যাদির প্রয়োগে সার্বিকভাবে সমকালীন বাংলার জাতপাতের ইতিহাস নির্মানের ক্ষেত্রে এক দিকনির্দেশক পাঠ হয়ে উঠেছে রূপ কুমার বর্মনের ‘সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ জাতপাত জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ’ গ্রন্থটি।

গ্ৰন্থ আলোচনা
সমকালীন পশ্চিমবঙ্গ: জাতপাত, জাতি-রাজনীতি ও তপশিলি সমাজ
রূপ কুমার বর্মণ
গাঙচিল প্রকাশনী, কলকাতা, ২০২২, দাম- ৪০০ টাকা
.....

সাৰ্থক লাহা, গবেষক, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।

;

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা



সোমঋতা মল্লিক
নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

নজরুল পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর শেষ ইচ্ছা

  • Font increase
  • Font Decrease

“তোমার মহাবিশ্বে কিছু হারায় না তো কভু।

আমরা অবোধ, অন্ধ মায়ায় তাই তো কাঁদি প্রভু।।"

১৪ মে, সকাল। কলকাতার রবীন্দ্র সদনে সমবেত কণ্ঠে ধ্বনিত হল এই নজরুল সঙ্গীত। বহুল প্রচলিত গানটি এই বিশেষ দিনে আমার কাছে ধরা দেয় অন্যরূপে। সমুখে শায়িত রয়েছেন সদ্য প্রয়াত কাজী নজরুল ইসলামের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ শ্রীমতী কল্যাণী কাজী। নিথর দেহে পুষ্পের অঞ্জলি। তাঁকে ঘিরে তাঁর আপনজনদের এই মর্মস্পর্শী উচ্চারণ মনকে ব্যাকুল করে।

তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ ১২-১৩ বছরের আত্মিক সম্পর্ক। ছায়ানট (কলকাতা)-এর হাত ধরেই যদিও এই সম্পর্ক শুরু হয়, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের পরিবারের একজন। তাঁর কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা অবর্ণনীয়। আমার জীবনে এই প্রথম নজরুল জন্মজয়ন্তী যেদিন কল্যাণী কাজী আর সশরীরে আমাদের মধ্যে নেই। একথা ভাবলেই চোখ ভরে ওঠে জলে। বছরের এই বিশেষ দিনগুলিতে তাঁর সাথে দেখা হলে মনে হত, কি অসীম ভালোবাসায় তিনি আমাদের প্রাণের কবিকে অন্তরে ধারণ করেন। আর পাঁচজন শিশুর মতো তিনিও নজরুলকে ভালোবেসেছেন শৈশবেই।


'অন্তরঙ্গ অনিরুদ্ধ' বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন, "ছেলেবেলা থেকেই আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। 'প্রভাতী', ‘লিচুচোর’ থেকে শুরু করে ‘বিদ্রোহী', 'আমার কৈফিয়ৎ’ ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, ‘ইন্দ্রপতন’ প্রভৃতি কবিতা বিভিন্ন বয়সে মনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ছবিতে তাঁর ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া চুল আর বড় বড় ভাবালু চোখ দুটোর দিকে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম। খুব কাছ থেকে তাঁকে দেখার ইচ্ছা হত। মনে পড়ছে, একবার গৃহশিক্ষককে অনুরোধ করেছিলাম তাঁকে দেখতে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু কেন জানি না শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। নিয়তি সেদিন অলক্ষ্যে নিশ্চয় হেসেছিলেন। নয়ত যে মানুষটাকে শুধু মাত্র চোখের দেখা দেখবার জন্য সেদিন ব্যাকুল হয়েছিলাম - পরবর্তী জীবনে তাঁরই পরিবারের একজন হয়ে তাঁর কাছে থেকে তাঁকে সেবা করার সুযোগ পেলাম কি করে? একেই বোধহয় বলে ‘বিধিলিপি’!

এই বিরল ব্যক্তিত্বের খুব কাছের মানুষ হয়েও, দুর্ভাগ্যবশত আমি সুস্থ অবস্থায় তাঁকে পাইনি। আমি এ বাড়ীর ছোট বউ হয়ে আসার বেশ কয়েক বছর আগেই বিস্মৃতি তাঁর চেতনার ওপর কালো পর্দা টেনে দিয়েছিল। তবুও আমাদের সবার প্রিয় ‘মামনি’ প্রমীলার স্নেহচ্ছায়ায় থেকে, তাঁর যতটুকু সেবা করার সুযোগ পেয়েছি তাতেই আমি ধন্য।"


এভাবেই কাজী অনিরুদ্ধর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার সুবাদে নজরুল পরিবারের একজন হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বহু অন্তরঙ্গ আড্ডায় তিনি পরিবারিক স্মৃতিচারণা করতেন।

প্রথমবার তাঁর শ্বশুরবাবা কে সামনে থেকে দেখার অনুভূতির বর্ণনা যখনই দিতেন, মনে হত আমরাও সেই সময়ে উপস্থিত হয়েছি। তাঁর কথা বলার ভঙ্গি ছিল অসাধারণ। অতি সামান্য ঘটনাও তাঁর বাচনভঙ্গিতে হয়ে উঠত অসাধারণ।

তাঁকে ঘিরেই জমে উঠত আড্ডা। কখনও কথা, আবার কখনও গেয়ে উঠতেন একের পর এক নজরুল সঙ্গীত। নিয়মিত দূরদর্শনে নজর রাখতেন কোন্ শিল্পী কিভাবে নজরুলের গান গাইছেন। বিভিন্ন চ্যানেলের প্রভাতী অনুষ্ঠান দেখতে খুবই ভালোবাসতেন। পরিচিত শিল্পী হলে অনুষ্ঠানের পরেই চলভাষের মাধ্যমে অভিনন্দন জানাতেন। এভাবেই তিনি ভালোবাসায় আবদ্ধ করে রাখতেন সকলকে।

নজরুল চর্চার সঙ্গে যুক্ত যে কোন ব্যক্তি/সংগঠনকে তিনি আপন করে নিতেন। তাঁর পূর্ণদাস রোডের বাড়িতে ছিল নজরুল প্রেমীদের নিত্য যাতায়াত। নজরুল বিষয়ক আলোচনায় তাঁর ক্লান্তি ছিলনা। যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতে তিনি পাশে থেকেছেন। ২০১৭ সালে কলকাতার বুকে প্রথম নজরুল মেলার আয়োজন করে ছায়ানট (কলকাতা), উদ্বোধক কল্যাণী কাজী। শিশুদের জন্য নজরুলের লেখা ২৫টি ছড়া ও কবিতা নিয়ে ২০২১ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে কল্যাণী কাজীর কণ্ঠে ‘শিশু কিশোরদের নজরুল’ শিরোনামে একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। পরম যত্নে তাঁর হাতে গড়া দল 'বিষের বাঁশী' ছায়ানট (কলকাতা) - এর বহু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।


নজরুল সঙ্গীতের শিক্ষা তিনি কিভাবে পেয়েছিলেন সেই বিষয়ে কল্যাণী কাজী স্মৃতিচারণা করেছেন, "সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে গান শেখার সুযোগ পাই। কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আমি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। বাংলা গানের সাথে সাথে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও যাতে ব্যুৎপত্তি লাভ করতে পারি,  তিনি তার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমার তখন চটুল গানের দিকেই ঝোঁক বেশি, তাই রাগ সঙ্গীতের জটিল পথে চলতে মন চাইত না। যতদিন যাচ্ছে ততই বুঝতে পারছি গলাকে স্ববশে রেখে গান গাইতে হলে, বিশেষ করে নজরুল গীতিকে প্রাণবন্ত করতে রাগ সঙ্গীত চর্চা খুবই দরকার।

আজ সঙ্গীতের শিক্ষকতা করতে গিয়ে নজরুল গীতির সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীদের সব রকমের বাংলা গানের চাহিদা যে মেটাতে পারি, তারজন্য আমি আমার গুরু শ্রদ্ধেয় শ্রী ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্রের কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। সেদিন যদি তিনি জোর করে খেয়াল, ঠুংরী, দাদরা, গীত, গজল এর সাথে সাথে কীর্তন, পুরাতনী, রাগপ্রধান প্রভৃতি গান না শেখাতেন, তবে গানের অনেক ধারাই আমার অজানা থেকে যেত। কাজী নজরুলের গানের সঙ্গে প্রকৃত পক্ষে তিনিই আমায় প্রথম পরিচয় করান। প্রথম যে নজরুল গীতিটা শিখিয়েছিলেন সেটা হল হাম্বির রাগে নিবদ্ধ 'আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া'। এরপর তিনি শেখালেন 'ভোরের ঝিলের জলে', 'প্রথম প্রদীপ জ্বালো', 'শাওন আসিল ফিরে', 'ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি' প্রভৃতি নজরুলের রাগভিত্তিক গানগুলো।


আমার স্বামী অনিরুদ্ধ যখন নজরুল গীতির স্বরলিপির বই 'রাগবিচিত্রা'-র প্রস্তুতি নেন, তখন আমিই হাম্বির রাগের গানটির স্বরলিপির কাজে সাহায্য করেছিলাম। তিনি গানটা জানতেন না। অপ্রচলিত গানটা পরে খুবই জনপ্রিয় হয়েছে।" 

তিনি অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকমাস, কিন্তু তাঁর জীবনীশক্তি ছিল প্রবল। জীবনের বহু দুঃসময়কে তিনি জয় করেছিলেন অবলীলায়। ১২ মে ভোরে নজরুল অনুরাগীদের চোখের জলে ভাসিয়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিলেন তিনি।

তাঁর কন্যা অনিন্দিতা কাজী বলেছেন মায়ের শেষ ইচ্ছের কথা। শোকবার্তায় অনিন্দিতা লিখেছেন - "মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর নিজের বাড়িতে (৭৪ এইচ, পূর্ণদাস রোড, ট্রায়াঙ্গুলার পার্ক) দাদু ও ঠাকুমার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা আর্কাইভ হবে।"

আমরা সকলেই চাই তাঁর শেষ ইচ্ছে পূরণ হোক।

সোমঋতা মল্লিক, নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক। সভাপতি, ছায়ানট (কলকাতা)।

;

বাজারে এলো আতিফ ওয়াফিকের বই ‘এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া’ 



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক, যোগাযোগের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ, তার সর্বশেষ বই "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" বাজারে এসেছে। এই বইটি আজকের পাঠকদের দ্রুত-গতির বিশ্বে সঠিক আচরণের শিল্প সম্পর্কে একটি সমসাময়িক দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ করবে বলে লেখক মনে করেন।

একটি সমাজে যেখানে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, "এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" সেই ব্যক্তিদের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ হিসাবে কাজ করবে বলে লেখক মনে করেন। বিশেষ করে আজকের স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী দের এই বই টি অনেক কাজে আসবে। এই বইটি পাঠকদের আধুনিক আচরণের সূক্ষ্মতা আয়ত্ত করতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ এবং কার্যকরী টিপস প্রদান করে৷

"এটিকেট এনসাইক্লোপিডিয়া" যত্ন সহকারে গবেষণা করা হয়েছে, পাঠকদের সমসাময়িক শিষ্টাচারের নিয়ম সম্পর্কে সর্বশেষ অন্তর্দৃষ্টি এবং নির্দেশিকা প্রদান করে। এর সহজ ভাষা এবং উপস্থাপন উদাহরণ সহ, সমস্ত পটভূমির পাঠকদের জন্য উপযুক্ত, তারা তাদের সামাজিক দক্ষতা পোলিশ করতে চাইছে বা তাদের পেশাদার চিত্র উন্নত করতে চাইছে।

এইচ এম আতিফ ওয়াফিক একজন অন্বেষিত যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, তার আকর্ষক কথা বলার ব্যস্ততা এবং অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ পরামর্শের জন্য পরিচিত। বর্তমানে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স এ ।

রিডিং ক্যাফে, বনানীতে বইটি উন্মোচনের সময়, জনাব ববি হাজ্জাজ (একজন অক্সফোর্ড স্কলার), জনাব সোলায়মান শুকন (একজন বাংলাদেশী যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ), জনাব শাহরিয়ার নাফীস (সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার), জনাব হাসান মাহমুদ (প্রতিষ্ঠাতা, স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ার্স), জনাব বেনজির আবরার (প্রতিষ্ঠাতা, এক্সিলেন্স বাংলাদেশ), মিসেস আফরুজা তানজি (রাষ্ট্রদূত, ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড), মিসেস শারমিন কবির (প্রতিষ্ঠাতা, রিতু), মিসেস ইশরাত নাহের ইরিনা (প্রতিষ্ঠাতা, প্রেসক্রিপশন বাংলাদেশ), জনাব ফাহিন আরাফিন (ক্রিয়েটিভ হেড, স্বপ্ন), জনাব সালেহীন মাহবুব (বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ), মিসেস ফারহানা শারমিন (ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট, রিমার্ক এইচবি), এবং আরও অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী প্রিয় শিক্ষার্থীউপস্থিত ছিলেন।

;

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'



কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ'

  • Font increase
  • Font Decrease

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে তিনি একক ও অনন্য। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। যার অগ্নিঝরা লেখনি ত্রস্ত করেছে ঔপনিবেশিক শাসকদের। যার বই বার বার বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যাকে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন।

নজরুল শতবর্ষ আগে বন্দি ছিলেন কলকাতার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলখানায়। নজরুল বিষয়ক সংগঠন ছায়ানট কলকাতা শিল্প, সঙ্গীত, সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা-গবেষণার পাশাপাশি নজরুল স্মৃতিধন্য হেরিটেজ স্থান ও স্থাপনাসমূহ রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সক্রিয় রয়েছে। ছায়ানট কলকাতার সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পী, সোমঋতা মল্লিক কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের নজরুলতীর্থগুলো নিজে গিয়ে সেগুলো রক্ষার প্রশাসনিক ও নাগরিক তৎপরতা চালিয়ে ছিলেন। যার ফলে এবছর নজরুল জয়ন্তীতে কলকাতা আলীপুর জেল মিউজিয়ামে স্থাপিত হয়েছে 'নজরুল কক্ষ'।


ছায়ানট কলকাতা সভাপতি সোমঋতা মল্লিক বার্তা২৪.কম'কে জানান, গত ১৪ ডিসেম্বর,২০২২ তারিখে ছায়ানট (কলকাতা) তথ্য সহ WBHIDCO - এর কাছে এই মর্মে আবেদন করে যে, নজরুল স্মৃতি বিজড়িত আলিপুর জেল মিউজিয়ামে কাজী নজরুল ইসলাম যে জায়গায় বন্দি হিসেবে ছিলেন, সেই জায়গাটি চিহ্নিত করা এবং নজরুল মূর্তি স্থাপন করার জন্য।

তিনি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি,২০২৩ তারিখে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নজরুলের আগমনের শতবর্ষকে স্মরণ করে ছায়ানট (কলকাতা) এবং আলিপুর মিউজিয়াম যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানও পালন করে।

শনিবার (২৬ মে) আমরা সত্যিই আনন্দিত, আমাদের এই প্রস্তাব তাঁরা বিবেচনা করেছেন এবং আলিপুর মিউজিয়ামে 'নজরুল কক্ষ' তৈরি হয়েছে, জানান সোমঋতা মল্লিক।

;