সংরক্ষণশীল কৃষির চাষ ব্যবস্থাপনা: খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার



ড. মোহাম্মদ এরশাদুল হক
ছবি: লেখক

ছবি: লেখক

  • Font increase
  • Font Decrease

কনজারভেশন এগ্রিকালচার (সিএ) বা সংরক্ষণশীল কৃষি একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থাপনা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, কনজারভেশন এগ্রিকালচার তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত: ১) জমিতে চাষ কম দেওয়া, ২) ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে রেখে আসা, ৩) লাভজনক শস্য পর্যায়। প্রথম মূলনীতি এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, জমি চাষের পরিমাণ মোট জমির ২৫ ভাগের কম হতে হবে তা ফালি চাষ বা শূন্য চাষের দ্বারা করা সম্ভব।

দ্বিতীয় মূল নীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে জমিতে ফসলের অবশিষ্টাংশ কমপক্ষে ৩০ ভাগ রেখে আসতে হবে যাতে করে জমিতে বীজ বোনার পর পরিমাপ করা হলেও মোট জমির ৩০ থেকে ৬০ ভাগ অংশ নাড়ার অবশিষ্ট অংশ এর দ্বারা আবৃত থাকে। তথা সারা বছরই জমির বেশিরভাগ অংশ কোন একটি ফসল অথবা ফসলের অবশিষ্ট অংশ দ্বারা আবৃত থাকবে। তৃতীয় মূলনীতির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে একটি লাভজনক শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে যাতে করে একই ফসল এ ধারায় বারবার না আসে। সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি আসে ১৯৩০ সালে আমেরিকাতে সংঘটিত ধূলি ঝড় এরপর। তখন বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেন কৃষির মাটি সংরক্ষণের জন্য এমন কোন বিষয়টি জরুরি কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

এ প্রেক্ষিতেই ১৯৪০ সালে প্রথম বীজবপন যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় সরাসরি চাষ ছাড়া জমিতে বীজ বপনের জন্য। সেই তখন থেকে শুরু হওয়া সংরক্ষণশীল কৃষির ধারণাটি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে এটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৫ ভাগ জমিতে সংরক্ষণশীল কৃষি বা সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকাতে প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে ও উত্তর আমেরিকাতে প্রায় ৩৫ ভাগ জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যদিও এশিয়াতে এর পরিমাণ নগণ্য (৩.১৫%), তবুও সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০৫ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে যা পৃথিবীর মোট আবাদযোগ্য জমির প্রায় ১৫ ভাগ। বাংলাদেশেও প্রায় ১৫০০ হেক্টর জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে।

গবেষণা মাঠ। ছবি: লেখক 

বাংলাদেশের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ হটস্পট রয়েছে যা আনফেবারেবল ইকো সিস্টেমের মধ্যে । কিন্তু এখানে উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষের আওতায় আনার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তারমধ্যে লবণাক্ত অঞ্চলে ১.০৬ মিলিয়ন হেক্টর, খরা অঞ্চলে ৩.৫ মিলিয়ন হেক্টর, জলাবদ্ধ অঞ্চলে ২.৬ মিলিয়ন হেক্টর, চরাঞ্চলে ০.৮২ মিলিয়ন হেক্টর, হাওড়াঞ্চলে ০.৮৬ মিলিয়ন হেক্টর এবং পাহাড়াঞ্চলে ১.৮১ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সুযোগ রয়েছে।

দেশের প্রায়ই ১১.০৭ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে জমির পুষ্টির স্বল্পতা দেখা যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাদ্যের যোগান দিতে ২০৫০ সালে ১৫ থেকে ১৬ মিলিয়ন টন অতিরিক্ত দানাদার ফসল উৎপাদনের প্রয়োজন পড়বে। অন্যদিকে জমির ভূগর্ভস্থ পানিস্তর ক্রমেই নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এসব জমির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি উভয়টি অর্জন করার লক্ষ্যে সংরক্ষণশীল কৃষি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশেও ক্রমে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে যদিও প্রথম এক দুই বছরেই উৎপাদন বৃদ্ধি হতে দেখা যায় না কিন্তু প্রচলিত চাষ পদ্ধতির চেয়ে ফলন কম হয় না। উপরন্ত পর পর তিন বছর এ পদ্ধতি ব্যবহার করার পর থেকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ফলন বৃদ্ধি হতেও দেখা যায়।

এ পদ্ধতিতে ফসল বপন বা রোপণে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহৃত হয়। আমরা জানি এক লিটার জ্বালানি ডিজেল পোড়ালে ২৬ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে নিঃসরণ হয়। ফলে সিএ চাষ পদ্ধতি একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব চাষ পদ্ধতি; এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস পাবে এবং পরিবেশ নির্মল হবে। সিএ চাষ পদ্ধতিতে ধান চাষের ক্ষেত্রেও অচাষকৃত জমিতে ধান বপন বা রোপন করা হয়ে থাকে। অচাষকৃত জমিতে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষের ফলে ৭০ ভাগ জ্বালানি, ৫০ ভাগ শ্রমিক এবং ১০ থেকে ১৫ ভাগ পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। সিএ চাষ পদ্ধতিতে বছরের বেশিরভাগ অংশই ফসল অথবা ফসলের নাড়া দ্বারা আবৃত থাকায় জমিতে দিবারাত্রির তাপমাত্রার পার্থক্যের পরিমাণ কম হয় ফলে মাইক্রো ইনভাইরনমেন্ট উত্তম ফলন এর উপযোগী থাকে।

বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে এ চাষ পদ্ধতি সম্প্রসারিত হচ্ছে। এছাড়া আংশিক ভাবে সারা দেশেই বিনা চাষ বা স্বল্পচাষের ব্যবহার বাড়ছে। বিনাচাষে রসুন চাষ চলনবিল এলাকা থেকে শুরু হয়ে এখন দক্ষিণের লবণাক্ত এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিনা চাষের রিলে পদ্ধতিতে সরিষা ও ডাল জাতীয় ফসলের চাষ লাভজনক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তা সারা দেশেই ছড়িয়ে গেছে। আমন ও বোরো ধানের মাঝে এ রিলে পদ্ধতিতে সহজেই আরেকটা ফসল ঘরে তোলা যাচ্ছে যাতে করে ফসলের নিবিড়তা বাড়ছে। রাজশাহী, রংপুর ও নীলফামারীতে আলু চাষের পরে যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্প চাষে বোনা আউস বা লেট বোরো বা ব্রাউস ধানের আবাদ লাভজনক বলে কৃষক সমাদৃত হয়েছে। বিনা চাষের আলু কৃষককে এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। এমনকি খুলনার লনণাক্ত এলাকাতেও বিনা চাষে আলু ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। এই পদ্ধতির ব্যাপক সম্প্রসারণ করা গেলে লনণাক্ত অঞ্চলে আলু চাষ করে কৃষকের আর্থসামজিক উন্নয়ন করা যাবে।

টেকসই কৃষি উৎপাদন সুসংহত করতে সৌরবিদ্যুৎ নির্ভর সেচব্যবস্থা। ছবি: লেখক

গবেষণার জন্য আরো অনেকগুলো বিষয়ের উপরে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার, যেমন জমি সমতল করার জন্য লেজার ল্যান্ড লেভেলার এর ব্যবহার বৃদ্ধি করা, সিএ চাষ পদ্ধতির জন্য উপযোগী জাত বাছাই করা, ফসলের অবশিষ্ট অংশ ব্যবস্থাপনা ও মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সিএ চাষ পদ্ধতির উপযোগী সার সুপারিশমালা তৈরি করা। এসব বিষয়কে নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। সিএ হল মাটির জৈবকার্বন বাড়ানোর একটি জাদুকরী অস্ত্র। মাটির জৈবকার্বন ব্যাপক চাষ, নিবিড় ফসলের ধরণ এবং উচ্চ ফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে হ্রাস পাচ্ছে। সিএ এর সুবিধাগুলি এমন একটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান হতে পারে যেখানে বছরের পর বছর ধরে পুরো শস্য বিন্যাসে সিএ অনুশীলন করা হচ্ছে। সিএ বিশ্বব্যাপী কাজ করলেও বাংলাদেশে খুব সীমিত সঠিক শস্যবিন্যাসভিত্তিক ব্যবহার হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) নব্বইয়ের দশক থেকে সিএ নিয়ে কাজ করছে, তবে সিএ অনুশীলনের ঋতুভিত্তিক আংশিক প্রয়োগের কারণে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়নি। সিএ প্রধানত রবি (শুষ্ক শীত) মৌসুমে উচ্চভূমির ফসলের জন্য অনুশীলন করা হয় এবং পরবর্তী মৌসুমে প্রচলিত চাষ ব্যবহার করে ধানের ফসল চাষ করা হয়। সুতরাং, সিএ-এর প্রভাব দৃশ্যমান নয়। অতএব, কৃষক, ছাত্র, গবেষক এবং নীতি নির্ধারকদের দ্বারা সিএ কার্যক্রমের সুবিধা পর্যবেক্ষণ এবং জ্ঞান বৃদ্ধির সুযোগ খুব কম । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) গাজীপুরে একটি সংরক্ষণ কৃষি পার্ক (CA পার্ক) স্থাপন করেছে। সিএ পার্ক নামে সংরক্ষণশীল কৃষি নিয়ে গবেষণার প্লাটফর্মে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীদের সমন্নয়ে এই বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রায় ১ হেক্টর জমিতে নিবিড় গবেষণা চলমান রয়েছে।

CA Park পরিদর্শনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: লেখক

এখানে সৌর সেচ পাম্প ব্যবহার সহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি সমন্বিত চাষ ব্যবস্থায় সফলতার পথ খোঁজা হচ্ছে। বিঘাতে তিন বছর একই জমিতে সিএ চাষ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এছাড়া আগাছার প্রবণতা কমেছে। ফলে বিনা চাষে বা স্বল্প চাষের মাধ্যমে ধান-ভুট্টা, ধান-সরিষা-পাট, ধান-সরিষা-মুগডাল, ধান-ধান-ধান কেন্দ্রিক ফসলধারায় লাভজনক ও জমির স্থাস্থ্য সুরক্ষাকর উপায় খুঁজে পাওয়া গেছে। ফলে গাজীপুরের এই সিএ পার্ক কৃষক, গবেষক ও পলিসি প্ল্যানারদের পরিদর্শন ও এ ব্যপারে জ্ঞান লাভের সুযোগ তৈরি করেছে। এই ধারাবাহিকতায় কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে সরকার সারাদেশে আরো ১৪ টি সিএ পার্ক স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিএ পার্কের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের উপযোগী খামার যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত পরিষেবাগুলি এক বাতায়নে সহজে তুলে খরার জন্য একটি সিএ ওয়েবসাইট (www.camachinery.org) চালু করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে সিএ ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে সিএ জ্ঞানভান্ডার।

লেখক: ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এফএমপি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর

কচু চাষে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় লক্ষ্মীপুরের সিরাজুল ইসলাম



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লক্ষ্মীপুর
কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম । ছবি- বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপুরের উত্তর জয়পুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম। থাইল্যান্ড থেকে আনা ‘থাই গোল্ড’ জাতের পানি কচু চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। চলতি বছরের কচু চাষ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে এই সফল কৃষি উদ্যোক্তার।

প্রথমে প্রবাসী বন্ধুর মাধ্যমে থাইল্যান্ড থেকে ২৮০ টি থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা গাছ এনেছিলেন সিরাজুল ইসলাম। চারাগুলো বড়ির পাশের ৫ শতাংশ জমিতে লাগানো হয়। বছর না ঘুরতেই সেই চারা থেকে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২ হাজার কচুর ফলন হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম জানান, এ জাতের প্রতিটি কচুর উচ্চতা ১২ ফুট পর্যন্ত এবং কাঠের ওজন ( ডাল ছাড়া মূল কচু) ৪০ কেজি পর্যন্ত  হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি লতির দৈর্ঘ ৪ ফুট ও বেড় ১২ মিলি মিটার হয়ে থাকে। বর্তমানে তার চাষকৃত একটি কচুর ওজন  ৪ মাসে ২০ থেকে ২৫ কেজি ও উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট পর্যন্ত হয়েছে এবং ৮ থেকে ১০ পিস লতির ওজন ১ কেজি হয়েছে। তিনি আশা করছেন আগামী চার মাসের মধ্যে তার চাষ করা প্রতিটি কচু ৪০ কেজি ওজন হবে।

সিরাজুল ইসরামের কচু চাষের সংবাদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা  থেকে সাধারণ মানুষ কচু ক্ষেত দেখতে ছুটে আসছেন।  তিনি  জানান ইতিমধ্যে ১০ জন চাষীকে এ কচুর চাষ করার জন্য চারা দিয়েছেন। তার কচু ক্ষেতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক ঢুকে হাত উঁচু কররেও বাহির থেকে দেখা সম্ভব হয়না।

লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের  উত্তর জয়পুর দৌলত বাড়ির স্কুল শিক্ষক মরহুম আজহারুল ইসলাম মাষ্টারের তৃতীয় পুত্র সিরাজুল ইসলাম। তিনি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর চাকরি ছেড়ে এলাকায় ফিরে শখের বসে নার্সারী দিয়ে বিভিন্ন জাতের ফলজ, বনজ, ফুল ও সবজির চারা উৎপাদন শুরু করেন। পশাপাশি তিনি এলাকার যুবকদের হাতে কলমে চারা উৎপাদন করা শিখাতে থাকেন। তার কাছে চারা উৎপাদন শিখে ইতিমধ্যে ৫০ জন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।  সিরাজুল ইসলাম বর্তমানে লাউ, কলা, লেবু চাষ করে যাচ্ছেন। কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী সিরাজুল ইসলাম ইউটিউবে থাইগোল্ড জাতের কচুর চাষ দেখেন। পরে তিনি তার বন্ধুর মাধ্যমে  থাইল্যান্ড থেকে এ কচুর চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাজারে তার উৎপাদিত কচুর লতি নিয়ে গেলে মানুষ এক নজর তার উৎপাদিত কচুর লতি দেখার জন্য ভীড় জমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে তিনি তার ক্ষেতে উৎপাদিত কচু বিক্রি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ২০টি কচু চার হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি জানান সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর কচু চাষ থেকে তার ৬ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

এলাকার আরেক সবজি চাষী মো. শরীফ বলেন, সিরাজুল ইসলাম থেকে তিনি ইতি মধ্যে থাই গোল্ড জাতের কচুর চারা নিয়ে লাগিয়েছেন। সিরাজুল ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। তার কাছে কৃষি চাষাবাদ বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে অনেকেই আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন।

উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জাহান বলেন, সিরাজুল ইসলামের কচুর ক্ষেত আমি সরেজমিনে দেখে এসেছি। এ কচুর চাষ সম্প্রসারণে সহযোগিতা করবো।

;

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ২২ ব্যক্তি পাচ্ছেন এআইপি সম্মাননা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

কৃষি মন্ত্রণালয়ের লগো, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) সম্মাননা-২০২১ পাচ্ছেন ২২ জন। এআইপি নীতিমালা-২০১৯ এর আলোকে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫টি ক্যাটাগরিতে তারা নির্বাচিত হয়েছেন।

স্বীকৃত বা সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কৃষি সংগঠন শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে। তারা হলেন- কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাইখ সিরাজ, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠক হিসেবে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠন তিলোত্তমার প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন ও সমবায় উদ্যোক্তা হিসেবে সাতক্ষীরার ধানদিয়া সিআইজি মহিলা সমবায় সমিতির সভাপতি শিখা রানী চক্রবর্তী।

জাত বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন শ্রেণিতে নির্বাচিত ব্যক্তিরা হলেন- এসিআই অ্যাগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট এ কে এম ফারায়েজুল হক আনসারী, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির কৃষি উদ্যোক্তা এমএ মতিন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য চুয়াডাঙ্গার জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. ওলি উল্লাহ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান স্বপন কুমার দাশ।

কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার স্থাপন ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প শ্রেণিতে ১০ জন এআইপি হয়েছেন। তারা হলেন উন্নতজাতের ফলচাষের জন্য টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মো. ছানোয়ার হোসেন, পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য ফরিদপুরের খান বীজ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শাহীদা বেগম, সাথী ফসল উৎপাদন করে জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য খুলনার ডুমুরিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা সুরেশ্বর মল্লিক, ফলচাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের গ্রিন প্ল্যানেট অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী মো. রুহুল আমীন, জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার অ্যাগ্রো বেইজড সোশিও ইকোনমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন, দুগ্ধ উৎপাদনে পাবনার ঈশ্বরদীর তন্ময় ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী মো. আমিরুল ইসলাম।

মাছ চাষে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আল বারাকা মৎস্য খামার অ্যান্ড হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী মাছুদুল হক চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মৌচাষী কৃষি উদ্যোক্তা মো. রফিকুল ইসলাম, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের ফলচাষী সিরাজ বহুমুখী খামারের স্বত্বাধিকারী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শেরপুর সদর উপজেলার ফলচাষী মা-বাবার দোয়া ফ্রুট গার্ডেন নার্সারি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. হযরত আলী।

রফতানি যোগ্য কৃষিপণ্য উৎপাদন শ্রেণিতে দুজন এআইপির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও বনসাই নার্সারীর জন্য গাজীপুর সদর উপজেলার লিভিং আর্ট গার্ডেনের পরিচালক কেএম সবুজ ও বারোমাসি আম চাষি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের কৃষি উদ্যোক্তা মোহা. রফিকুল ইসলাম।

বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শ্রেণিতে তিনজনকে এআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। জৈবসার ও কেঁচোসার উৎপাদক নীলফামারীর ডোমার উপজেলার অন্নপূর্ণা অ্যাগ্রো সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী রাম নিবাস আগরওয়ালা, বাণিজ্যিক কৃষি খামারি হিসেবে ঢাকার নবাবগঞ্জের অমিত ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মায়া রানী বাউল ও সফল বীজ উৎপাদকারী পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মো. আবদুল খালেক।

এআইপি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতি বছর মোট ৫টি বিভাগে এআইপি সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে। এআইপি কার্ডের মেয়াদকাল হচ্ছে ১ বৎসর। এআইপিগণ সিআইপিদের (CIP) মতো সুযোগসুবিধা পান। এর মধ্যে রয়েছে মন্ত্রণালয় হতে একটি প্রশংসাপত্র, বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য প্রবেশ পাশ, বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে নাগরিক সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ; বিমান, রেল, সড়ক ও জলপথে ভ্রমণকালীন সরকার পরিচালিত গণপরিবহনে আসন সংরক্ষণ অগ্রাধিকার; নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন সুবিধা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবেন এবং বিমান বন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার সুবিধা। কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০১৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (এআইপি) নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। ২০২০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে এ সম্মাননা। ২০২০ সালে এআইপি সম্মাননা পেয়েছিলেন ১৩জন।

৭ জুলাই ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২১ সালের এআইপি পুরস্কার প্রদান করা হবে। এতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুস শহীদ প্রধান অতিথি এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। ২০২২ ও ২০২৩ সালের এআইপি নির্বাচনের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

;

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,সাতক্ষীরা
কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হওয়া রোধে অল্পনার বীজ ভাণ্ডার

  • Font increase
  • Font Decrease

উপকূল ঘেঁষা ধুমঘাট গ্রামের বাসিন্দা অল্পনা রাণী মিস্ত্রি। গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ, কর্দমাক্ত রাস্তা সবকিছু পেরিয়ে যেতে হয় তার বাড়ি। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট গ্রামের এই বাসিন্দা নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ ভান্ডার। পেয়েছেন শেখ হাসিনার থেকে পাওয়া পুরষ্কারও।

প্রত্নতত্ত্ব এলাকায় থেকে ও বিলুপ্ত অচাষকৃত শাক-সবজি, ওষুধি ও ফলমূলের বীজ সংগ্রহ করেছেন প্রায় ৫৫০ জাতের। তার বীজ ভান্ডারে রয়েছে অচাষকৃত কিন্তু পুষ্টিগুণ সম্পন্ন নানা উদ্ভিদ বৈচিত্রের বীজও। ২২ প্রকার শিম, আট প্রকার ডাটাশাক, ১০ প্রকার মরিচ, শতাধিক ওষুধি, ৫০-৬০ প্রকার সবজি, ২২ প্রকার অচাষকৃত উদ্ভিদসমূহ।

ছায়া সবুজময় গ্রামের মাঠে ঘাঠে দেখা যায় গরু ছাগলের বিচারণ। মাটির রাস্তার ঘ্রাণ নিয়ে অল্পনা রানীর বাড়িতে ঢুকতেই চোখে মেলে বীজ রাখার ঘর, যেখানে বোয়ামে, প্যাকেটে বা বস্তায় রাখা হয়েছে বীজ। এই বীজ দিয়েই চাষাবাদ করেন অল্পনা রানী, বিতরণ করেন গ্রামের অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও।

অল্পনা রানীর মতে, স্থানীয় জাতের বীজ চাষাবাদে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। এই বীজ থেকে উৎপাদিত ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা যায়। জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায় বলে মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আমরা রাসায়ানিক সার ও কীটনাশক দেওয়া শাক সবজি খেয়ে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি। যার কারণে আমাদের জৈব পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে।

তিনি স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণ না করলে কৃষককে কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা যদি বীজ সংরক্ষণ না করি তো এক সময় আমাদের কৃষকদের কাছে কোনো প্রকার বীজ থাকবে না। ফলে আমাদের বীজ প্রয়োজন হলে তাদের কাছে হাত পাততে হবে। তাই সেখান থেকে ২০১০ সাল থেকে আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি।

এজন্য স্থানীয় কৃষকদের সাথে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে দেশীয় বীজ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণে সাধারণ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত সবজির খামার এবং সংরক্ষণ করে রেখেছেন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক শাকসবজি। যা সচারচর বাড়ির আনাচে কানাচে জন্মাতো কিন্তু এখন আর সেগুলো চোখে মেলে না। তবে তার বাড়ির আঙিনায় গেলে দেখা মিলবে সেইসব বিলুপ্ত প্রায় শাকসবজির সাথে।

স্থানীয় বীজ সংরক্ষণে তিনি নিজে কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন জানতে চাইলে বার্তা২৪.কম’কে অল্পনা রানী বলেন, ২০১০ সাল থেকে আগে দু’একটি বীজ রাখতাম। ২০১২ সালে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) আমাকে বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করে এর গুরুত্ব সম্পর্কে বোঝায়। প্রশিক্ষণও দেয়। নানাভাবে সহায়তাও করে। বারসিকের উৎসাহ পেয়েই আমি বীজ সংরক্ষণ শুরু করি। যা এক যুগের ব্যবধানে বীজ ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, হাইব্রিড বীজ কিনে কৃষকরা প্রতিনিয়ত ঠকছে। হাইব্রিড বীজ চাষ করতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে, হাইব্রিড বীজের ফসল থেকে বীজ রাখাও যায় না। এখন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত ফসল খেয়ে মানুষের নানা রকম রোগ বালাই হচ্ছে। আর বীজ রাখতে না পারায় কৃষক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে।

বিপরীতে স্থানীয় জাতের বীজ চাষ করতে কোনো রকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক লাগে না। জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেই ফসল উৎপাদন করা যায়, এর বীজও রাখা যায়, মানুষের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে- যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণের মাধ্যমেই কৃষক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। এর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পাশাপাশি পুষ্টি চাহিদাও নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য কোনো বীজই আমি হারিয়ে যেতে দেই না।

অল্পনা রানীর মতে, উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বীজ সংরক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবছর শ্যামনগর উপকূলে অন্তত দুটি করে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোপণকৃত বীজ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বীজ হারিয়ে যায়। এমন সময় কৃষকের হাতে বীজ থাকলে তিনি আরও রোপণ করতে পারেন। কিন্তু বীজ না থাকলে আবার কেনা ছাড়া উপায় থাকে না।

কীটনাশকের বদলে ফসলের ক্ষেতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আমি নিমপাতা ও মেহগুনির ফল দিয়ে বালাইনাশক তৈরি করি। এছাড়া সহনীয় মাত্রায় ডিটারজেন্ট মিশ্রিত পানি স্প্রে বা ঘুটের ছাই কিংবা তুতে ও চুন দিয়ে মিকচার তৈরি করে ক্ষেতে ব্যবহার করি। বালাইনাশক হিসেবে এগুলো খুবই উপকারী।

বীজ সংরক্ষণ ও স্থায়িতশীল কৃষি চর্চার জন্য তিনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। এজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভোলেননি স্বশিক্ষিত কৃষাণী ও খাদ্য যোদ্ধা অল্পনা রানী মিস্ত্রী।

তিনি বলেন, নদী পার হতে গেলে যেমন সাঁকো লাগে, বারসিক আমার জীবনে সেই সাঁকো হিসেবে কাজ করেছে। আমার জীবনে আলো দিয়েছে। জ্ঞানের আলো। যদি তারা আমাকে কোনো অনুদান দিতো, হয়তো তা খেয়ে ফেলতাম। কিন্তু তারা তা না দিয়ে আমাকে দিয়েছে জ্ঞানের আলো। এই জ্ঞানের আলোয় আমার জীবন ভরে উঠেছে। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এছাড়াও আমি ২০১৪ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক, ২০২০ সালে অন্যান্য পুরস্কার, উপজেলা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার পেয়েছি। দেশ বিদেশের টেলিভিশন চ্যানেল আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করতে আসে। আমার জীবনে আর কী চাওয়া আছে?

;

হাওরে বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কিছু জমিতে পানি জমেছে। ফলে কাটা ধানগুলি জমিতে স্তূপ করে রাখছে। এমনকি ধান মাড়াই করার জায়গায় পানি জমে থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। ধান শুকানোর পরিবর্তে সবাই এখন ধান কাটাতে বেশি মনোযোগী। কারণ বৃষ্টির পানি জমে আছে বিস্তীর্ণ মাঠে। এতে ম্লান হতে বসেছে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন।

সোমবার (৬ মে) সরজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাওরে কৃষকরা আগেভাগেই ভোর থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেছেন। 

কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আর একসপ্তাহ দিনটা ভালো থাকলে ফসল নিয়ে আসতে পারতাম। একদিন ধান কাটছি আরেকদিকে মাড়াই করছি৷ শুকিয়ে ঘরে তোলার চেষ্টা করছি। গতকালের শিলাবৃষ্টি ভয় তৈরি করেছে। কারণ শিলাবৃষ্টিতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়। 


কিশোরগঞ্জে রোববার (৬ মে) রাতে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। প্রায় পাঁচ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বৃষ্টির সঙ্গে ছিল তীব্র বাতাস। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে কখনো থেমে, কখনো অবিরাম বৃষ্টি হয়েছে রাত তিনটা পর্যন্ত। বৃষ্টিতে স্বস্তি এলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টিতে শেষ মুহূর্তে ধানের ক্ষতি হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে কৃষকদের।

এছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃষ্টি পড়েছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে প্রশান্তি নেমে এসেছে। জেলা সদর ও আশপাশের উপজেলায় শুরু হয় ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। থেমে থেমে কয়েকদফা বৃষ্টিতে নেমে আসে স্বস্তি।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর আবাদ হয়েছে হাওরে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৫ টন ধান। যা বিক্রি হবে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই বাকি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।


কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুস সাত্তার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘উঁচু-নিচু জমি হাওরের একটা বড় সমস্যা। অতি বৃষ্টি হলে ধান ডুবে যায়। এর ফলে কৃষকরা নিচের দিকে ধান কেটে ওপরের দিকে আসছে। আমরা আশা করছি, কিছু দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। তাদেরকে দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷

 

;