কৃষি পণ্যের অবাধ আমদানি ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোগ বালাইয়ের



তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলা ফসল সংগ্রহোত্তর ক্ষতি, কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বিতরণসহ ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমিতে ক্রমবর্ধমান বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বাংলাদেশের কৃষির জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার  অন্যের সংস্থানের জন্য একদিকে বিদেশ থেকে কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শষ্য বীজ ও আমদানি করতে হচ্ছে। বাজারে দেশীয় বীজের সরবরাহ একেবারেই কম। আগে হাট বাজারে দেশি শস্যের বীজ মিললেও এখন তা দুষ্প্রাপ্য। দেশীয় উৎপাদনে চাহিদা মেটাতে না পেরে চায়না, ভিয়েতনাম, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মিশরসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও কৃষিপণ্য আমদানি করা হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কম কে জানান, আমরা আমাদের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কৃষি পণ্য আমদানি করলেও আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দেয়া হয়  না। ফলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমরা সমসময়ে  পরিবেশের কথা চিন্তা করে কাজ করি।  কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের রোগ জীবানু ছড়িয়ে  পরার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা অনেক সময়ে ফসলে নতুন পোকা বা ফসলের রোগ দেখী যা আমাদের ছোট সময়ে  দেখি নি। অনেক সময়ে বিদেশ থেকে  আনা বীজে ফসল না হওয়ার  ঘটনাও ঘটেছে। বিদেশি কোনো কৃষিজ পণ্য আমদানি আগেই পণ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্যোগকালীন প্রয়োজন হয় খাদ্য বা  কৃষি পণ্য আমদানির। তাছাড়া সব ফসল, ফল-মূল জলবায়ুজনিত কারণে আমাদের দেশে উৎপাদন সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় কৃষি পণ্য আমদানির। উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজন সর্তকতা। পণ্য আমদানিতে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা না হলে বিদেশ থেকে ফসলের নানা ক্ষতিকর পোকামাকড়, রোগজীবাণু দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের বালাইয়ের আক্রমণে ফসল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।

 কৃষিমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পৃথিবীর সব দেশেই কৃষি পণ্য আমদানি ও রফতানির কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে বর্তমানে ০২টি সমুদ্রবন্দর, ০৩টি বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, ০১টি নৌবন্দর ও আইসিডি কমলাপুরের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও কয়েকটি কোয়ারেন্টিন স্টেশন রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ বার্তা২৪.কম কে বলেন, আমদাননি কৃত পণ্যের সাথে পরিবাহিত হয়ে ধ্বংসাত্মক পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের জীবাণু দেশের অভ্যন্তরে বা আমাদের দেশ  থেকে অন্যান্য দেশে অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধ করার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ বা প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন। 

তিনি আরো বলেন,  বাংলাদেশে আমদানি রফতানি প্রায় ৯২শতাংশ সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রামের মাধ্যমে হয়ে থাকে।  বিদেশ থেকে আগত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ ও প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও ল্যাবরেটরি টেস্টের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদানের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলেই কেবলমাত্র ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।

কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উন্নয়নশীল আটটি দেশের জোট বা ডি-৮ ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য একটি ‘বহুদেশীয় সমন্বিত প্রকল্প’  নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে।

যার মাধ্যমে ডি-৮ভুক্ত এসব দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি বিষয়ে যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বিএআরসি) কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা শীর্ষক ৭ম ডি-৮ মন্ত্রীপর্যায়ের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের শেষ দিনে আট দেশের কৃষিমন্ত্রীরা এ প্রস্তাব এবং ঢাকা ইনিসিয়েটিভ অনুমোদন করেন।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যেমন, আইডিবি, এফএও, ইরি, ইফাদ প্রভৃতি থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালিত হবে। খুব শিগগির এই প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

ড. রাজ্জাক আরও বলেন, ডি-৮ দেশসমূহে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন খুবই জরুরি। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে এটি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। ডি-৮ভুক্ত দেশসমূহের কৃষিখাত ২৬% মানুষের কর্মসংস্থান করে থাকে আর জিডিপিতে অবদান প্রায়  ১৩.৫০%। এছাড়া, এ জোটের দেশগুলোতে ৬০% মানুষ  গ্রামে বসবাস করে এবং তারা মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। কাজেই, আজকের ঢাকা ইনিসিয়েটিভ ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন, বিনিময় এবং খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সভায় ডি-৮ এর মহাসচিব ইসিয়াকা আব্দুল কাদির ইমাম, ইন্দোনেশিয়ার কৃষিমন্ত্রী সাইয়ারুল ইয়াসিন লিম্পু, ইরানের কৃষিমন্ত্রী সৈয়দ জেএস নেজাদ, মালয়েশিয়ার কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রী রোনাল্ড কিয়ান্দি, পাকিস্তানের ফেডারেল মন্ত্রী সৈয়দ ফখর ইমাম, তুরস্কের পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আকিফ ওজকাল্ডি, নাইজেরিয়ার কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন ফেডারেল মন্ত্রী মো. মাহমুদ আবুবকর এবং মিশরের এআরসির শিরীন আসেম  কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা, সম্ভাবনা, করণীয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ার, এফএও, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, আইএফএডি, ইরি ও সিমিটের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

;

সুনামগঞ্জে বোরো ধানের চারার এবার ভালো ফলন



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবহাওয়া ভালো থাকায় সুনামগঞ্জে এবার বোরো ধানের চারার ভালো ফলন হয়েছে। দুইদিন হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো চারা রোপণের কাজও শুরু হয়েছে। কৃষকরা এবার কৃষিবিদ, হীরা, নাফকো, ঝলক, বিআর-২৮ এবং বিআর-২৯ জাতের ধানের আবাদ করেছেন বেশি। কোন কোন কৃষক নিজের পরিবারের খাবার ও আত্মীয় স্বজনকে খাওয়ানোর জন্য সুস্বাদু চাল পেতে পুরনো দিনের ধান গোবি সাইল, টুপা, লালডিঙ্গি, রাতা ধানের চাষও সামান্য পরিমাণে করেছেন।

শাল্লার কান্দকলা গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বললেন, হালিচারার বীজতলায় গেলে মন জুড়িয়ে যায়, এবার সবল চারা হয়েছে, অন্যান্য বছর চারা লম্বা কম হতো, সার দেওয়া লাগতো, পোকায় ধরতো, এবার এই ধরণের যন্ত্রণা নাই, সময়মত বৃষ্টি হওয়ায় সেচের সংকট হয় নি, অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে বীজতলায় বীজ বপণ করা হয়েছিল। এখন চারা রোপণের উপযোগী হওয়ায় দুইদিন হয় রোপণ শুরু হয়েছে। তিনি জানালেন, বৃষ্টি হওয়ায় মাটি নরম রয়েছে, এজন্য চারা ওঠাতে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

শাল্লার আনন্দপুরের কৃষক মাখন লাল দাস বললেন, শনিবার থেকে চারা ওঠানো শুরু করেছি। এবার বেশি ফলনের কারনে ধানের সঙ্গে তিন কেয়ার (এক একর) রাতা ধানও করছি। এই ধান একরে ৩০-৩২ মণের বেশি হয় না। এ ধানের চালে ভাত স্বাদ হয়। বাড়িতে অতিথি আসলে বা আচার অনুষ্ঠান হলে এই চাল কাজে লাগে। তিনি জানান, পৌষ মাস ভরা ধান রোপণের কাজ চলবে।

জেলার বিশ্বম্ভরপুরের রাধানগরের কৃষক আব্দুল হেকিম বললেন, সময়মত বীজ পাওয়ায় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের চারা ভালো হয়েছে। দুই দিন হয় চারা রোপণ শুরু হয়েছে, চলবে মাঘ মাস পর্যন্ত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ফরিদুল হাসান বললেন, গেল বছরের চাইতে এবার ধানের চারা ভালো হয়েছে। রোপণের কাজও আগে ভাগে শুরু হয়েছে। এবার জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ৬৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো’র চাষাবাদ হবে।

;

২৫০ প্রজাতির আগাছা কমিয়ে দিচ্ছে ফসলের উৎপাদন



তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

খাদ্য উৎপাদনে আমরা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ফসলের কাঙ্ক্ষিত অর্জনে ভাগ বসাচ্ছে দেশি-বিদেশি আগাছা। ফসলের জমিতে কিংবা টবে, ড্রামে যে অবাঞ্ছিত উদ্ভিদ দেখা যায় তাই আগাছা। আগাছা চাষ করা ফসলের বৃদ্ধিতে ও পুষ্টি প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করে।

আগাছা দমন ফসল উৎপাদন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ধানসহ অন্যান্য ফসলের খাদ্য, আলো, বাতাস ও পানিতে ভাগ বসিয়ে শস্যের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আগাছার কারণে ফসল লিকলিকে, লম্বা, দুর্বল ও হলদে হয়ে যায় এবং কুশির সংখ্যা কমে যায়। এটি ফসলে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কাঁটা নটে শাক, নটে শাক, মালঞ্চ, টোপাপানা, কচু , চাঁদমালা, ছোট কুট, হাতিশুঁড়, মুথা ঘাস, হলদে মুথা, বড় চুচা, শক্ত খাগড়া, চেচরা, ক্ষুদে চেচরা, জয়না, মাটি চেচ, বথুয়া, চাপালি ঘাস, কেশটি, হেলেঞ্চা, শিয়ালমুত্রা, ঘাঘরা, বন শিমুল, বন লেটুস, বন সরিষা, মরিচ ঘাস, বন মূলা, কানাইবাশী, মনায়না, পানি কলাগাছি, কমেলিনা, কানাইনালা, ফণি মনসা, কলমী লতা, স্বর্ণলতা, মর্নিং গ্লোরি, বিন্দলতা, বড় দুধিয়া, ছোট দুধিয়া, বন মরিচা, শ্যামা ঘাস, ক্ষুদে শ্যামা, দুর্বা ঘাস, চাপড়া ঘাস, আরাইলা, চেলা ঘাস, গিটলা ঘাস, কাশ, উলু ঘাস, প্রেম কাটা, ঝরা ধান, দুধ নল, ছোট দুধ নল, বরেন্দা ঘাস, আঙুলি ঘাস, মোরারো, গইচা, ময়ুরলেজা ঘাস, ফুলকা ঘাস, শ্বেতদ্রোণ, শিয়াল লেজা, ভাতশোলা, আরাইচা, লজ্জাবতী, বন্য মশুর, মসুর চানা, নারিন্দা ঘাস, ক্ষুদে পানা, তিলক পানা, কানফুল, বেরেলা, শালুক, শাপলা, নীল পদ্ম, রক্ত কমল, পদ্ম, আমরুল শাক, হেলেঞ্চা, কচুরি পানা, পানি কচু, বিষকাঁটালী, তিতা মরিচ, পানি মরিচ, নুনিয়া ঢেঁকিশাক, ঝিল মরিচ, তিতা বেগুন, বন্য বেগুন, কাঁটা বেগুন, ধুতুরা, ফোসকা বেগুন, থানকুনি, বন ধনিয়া, বন গাজর, কাঁটা মেহেদী, মটকাসহ ২৫০ এর অধিক প্রজাতির দেশি-বিদেশি আগাছা রয়েছে ।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক এক মহাপরিচালক বলেন, ফসলের চেয়ে আগাছা বেশি পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এসব কারণে ফসলের ফলন ব্যাপকহারে হ্রাস পায়। বাংলাদেশে আগাছার উপদ্রবের ফলে ধানে ৪০- ৫০ শতাংশ, গমে ২৪ - ৫৮ শতাংশ, ভুট্টায় প্রায় ৪৯ শতাংশ, আলুতে ৪৩ শতাংশ, আখে ২০ শতাংশ, পাটে ৭৫-৮০ শতাংশ, চায়ে ৯ শতাংশ এবং অন্যান্য ফসলে গড়ে ২৫-৬০ শতাংশ ফলন কম হয়।

বিভিন্ন প্রজাতির আগাছা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, কোনও সন্দেহ নেই যে, আগাছা আমাদের ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে এদেশে খালি হাতে, নিড়ানি যন্ত্র দিয়ে এবং আগাছানাশক ব্যবহার করে ফসলের আগাছা দমন করা হয়। কিন্তু আগাছানাশক এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ। এর ব্যবহার সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে না করলে মাঠ ফসলের পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের কৃষি অফিসারদের মাধ্যমে কৃষকদের আগাছা ব্যবস্থাপনা বা দমন বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ ও পরিকল্পনা দিয়ে থাকি। তবে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে পরিবেশবান্ধব আগাছা ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া হচ্ছে।

তিনি মনে করেন, সঠিক নিয়মে ও সঠিক পদ্ধতিতে আগাছা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ১৮-২২ ভাগ বাড়ানো সম্ভব।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য সংস্থানের জন্য একদিকে বিদেশ থেকে কৃষি পণ্য সামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে, অন্যদিকে শষ্য বীজও আমদানি করতে হচ্ছে। কিন্তু এসব বীজের সঙ্গে নানা জাতের আগাছা বীজও আমাদের অজান্তেই চলে আসছে। ফলে বিদেশি বীজ আমাদের দেশে বাসা বাঁধছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গ নিরোধ কেন্দ্রের কার্যকারিতা বাড়াতে হবে। তা না হলে নানা ধরনের রোগ জীবাণু ও আগাছা ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক নিয়ম মেনে আমদানি না করায় আমদানিকৃত বীজের মাধ্যমে এসেছে অনেক আগাছা। এজন্য বিদেশি কোনো কৃষিজ পণ্য বা বীজ আমদানিও আগেই পণ্যগুলো নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

কৃষি কর্মকর্তা এবং ছাদ বাগাদ সম্প্রসারণ বিষয়ক প্রকল্প পরিচালক মো. তাহেরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ছাদ বাগানেও আগাছা দমন জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশে নির্মল বাতাস, কেমিকেল ছাড়া নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি ও ফলমূল উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে আগাছার কারণে। তবে ছাদ বাগান যেহেতেু বৈজ্ঞানিকভাবে করা হচ্ছে । সেখানে আগাছা দমন সহজ।

;

কৃষিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে জরিপ



তরিকুল ইসলাম সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কৃষিতে ভুগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে জরিপ

কৃষিতে ভুগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে জরিপ

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমশই নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। কৃষি প্রধান এই দেশে ভূগর্ভস্থ পানিরই কৃষি উৎপাদন সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। বাড়ছে খরচ। কিন্তু এই ভূ-গর্ভস্থ পানিরই যথেচ্ছ ব্যবহারে ভাবিয়ে তুলছে কৃষি বিশেষজ্ঞদের। কিভাবে এই ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চলে কাজ শুরু করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

ভূ-গর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের সেচ নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরণ শীর্ষক সমীক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বরেন্দ্রসহ ১২ জেলার ১৫ টি উপজেলায় জরিপ কাজ শুরু হয়েছ। এর ফলোফলের ভিত্তিতে আমরা বড় ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কর্মকর্তা এবং ড. আবদুছ ছালাম।

তিনি বার্তা ২৪.কমকে বলেন, ভু-গর্ভস্থ পানির সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের সেচ নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকরা জন্য কাজ চলছে। তবে এটি এখন বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআরআই)। সমীক্ষার কাজ জুলাই ২০২০ এ শুরু হয়েছে যা শেষ হবে জুন ২০২৩।

তিনি বলেন, এটি একটি বড় কাজ। এর সঙ্গে সরকারি চারটি প্রতিষ্ঠান নিরলসভাবে কাজ করছে। অন্যগুলো হলো, বিএআরআরআই, বিএমডিএ, এবং বিএডিসি। যৌভভাবে পরিচালক এ কাজ টি শেষ হলে দেশের কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়র তথা ভূগর্ভস্থ পানির যথেচ্ছা ব্যবহার, সংরক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

বিএআরআরআই প্রকল্প সূত্র জানায়, স্বল্প দক্ষ, স্বল্প উৎপাদনশীল ও অপচয়মূলক পানি ব্যবস্থাপনা থেকে উচ্চদক্ষ, উচ্চতর উৎপাদনশীল এবং কম অপচয়মূলক পানি ব্যবস্থা পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রণোদনা তৈরীর ক্ষেত্রেনীতি নির্ধারণে সহায়তাকরণ,

৫টি অঙ্গভিত্তিক (পানির পরিমাণ ভিত্তিক সেচ চার্জ, স্মার্ট কার্ড, AWD প্রযুক্তি, পানি সরবরাহের দক্ষতা, কমিউনিটি ভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা, প্রস্তাবিত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিএমডিএ ও বিএডিসি এর গভীর নলকূপ এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণ, পানির সাশ্রয়, দক্ষতা ও উৎপাদনশীল বুদ্ধিকরণ

অগভীর নলকূপ এবং বেসরকারি খাতে গভীর নলকূপ সেচের উপর সমীক্ষা পরিচালনা করার জন্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ সকল ক্ষেত্রে কিভাবে সেচ পানির বাজারকে আরো দুক্ষ ও উৎপাদনশীল করা যায় তা নিরূপণকরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৭৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতেই সেচ দিতে হয়। এসব জমির শতকরা ১৫ ভাগে ভূ-উপরিস্থ এবং শতকরা ৮৫ ভাগে ভূ-গর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৬ হাজার গভীর নলকূপ ও ১৬ লাখ অগভীর নলকূপ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় নিচে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি বোরো ধান উৎপাদন করতে মাটির প্রকারভেদে তিন থেকে পাঁচ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ পানির অর্ধেকেরও বেশি অপচয় হয়।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, প্রচলিত সেচ ব্যবস্থাপনায় জমি ও ফসলে প্রকৃত চাহিদার চেয়েও দুই থেকে তিনগুণ বেশি পানি দেওয়া হয়। এতে পানির ব্যাপক অপচয় হয়। পানির এই অপচয় রোধে বিকল্প সেচ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমানেকৃষকদের মাঝে ‘ফারো সেচ’ পদ্ধতি পরিচিতি পেয়েছে। যা এ দেশের প্রেক্ষাপটে খুবই উপযোগী। এতে পানির অপচয় শতকরা ৩০ ভাগ পর্যন্ত কমানো যায়।

;