তৈমুর লঙ : ঘোড়ার পিঠে বিশ্ববিজয় (পর্ব-২)



আহমেদ দীন রুমি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

অভিযান থেকে ফিরে এসেই শুরু করেছেন নতুন অভিযান

  • Font increase
  • Font Decrease

 ● পর্ব-১ পড়তে ক্লিক করুন

১৩৮৬ সাল। ক্ষমতায় আরোহণের দেড় দশক পেরিয়ে গেছে তৈমুরের। একসময়ের সর্বস্বহারা যাযাবর ব্যক্তিটি নিজের যোগ্যতা দিয়ে পরিণত হয়েছেন ছোটখাটো এক রাজ্যের অধিপতিতে। কিন্তু অল্পে তুষ্ট হওয়া তৈমুরের স্বভাবে ছিল না। তাই পুনরায় অভিযানে বের হলেন। রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো আজারবাইজান এবং জর্জিয়ার ওপর। হাতে এলো গিলান, শিরওয়ান এবং লেসজিওয়ানের মতো পার্শ্ববর্তী বহু অঞ্চল।

কারা কুয়ুনলু বংশের ক্ষমতা তখন কারা ইউসুফের হাতে; রাজধানী ভ্যান। অপরিণামদর্শী এই শাসক তৈমুরের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তৈমুর তাকে পরাজিত করে রাজধানী দখল করেন। কারা ইউসুফ পলায়ন করে আশ্রয় নেয় অটোম্যান সুলতান প্রথম বায়েজিদের দরবারে। তৈমুর কিন্তু থেমে থাকলেন না। তৎকালীন মুজাফফারীয় বংশ শাসন করছিল ফারস্- অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। শাসনকর্তা জয়নুল আবেদিনকে বশ্যতা স্বীকার করার আহবান জানিয়ে পত্র প্রেরণ করলেন তৈমুর।

নিষ্ঠুরতার অবতার

জয়নুল আবেদিন তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি মনে হয় এবার করলেন। তিনি তৈমুরের দূতকে বন্দী করে রাখলেন। অপমান মনে করে তৈমুর আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিলেন মূল নগরী ইসপাহান। একরকম বিনাযুদ্ধে দখল করে নিলেন তা। বাড়িয়ে দিলেন করের পরিমাণ; কিন্তু শীঘ্রই বিদ্রোহী হয়ে উঠল জনগণ। অতর্কিত আক্রমণে হত্যা করা হলো তৈমুরের তিন হাজার সৈন্যকে। নিহতদের মাঝে তৈমুরের প্রিয় আমীরও ছিলেন।

যুদ্ধের মাঠে তৈমুরের নিষ্ঠুরতা প্রবাদকেও হার মানায়


ক্ষোভে উন্মত্ত হয়ে উঠলেন তৈমুর। বের করলেন তার সবচেয়ে নৃশংস রূপ; যা ইতিহাসে ভীতি তৈরি করে রেখেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। প্রত্যেকটি সৈন্যকে নির্দেশ দেয়া হলো, খণ্ডিত মাথা নিয়ে ফিরে আসতে। অনুগত সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ইসপাহানবাসীর ওপর। চলল নির্বিচার গণহত্যা। এই হত্যাকাণ্ডে প্রায় সত্তর হাজার ইসপাহানবাসী নিহত হন। মৃতের মাথা দিয়ে তৈরি করা হলো সুউচ্চ মিনার। প্রতিশোধ নিয়ে তৈমুর উদাহরণ সৃষ্টি করলেন—তার সাথে টক্কর দেবার পরিণাম কেমন হতে পারে।

হাফিজ ও তৈমুর: কবি বনাম সম্রাট

নৃশংসতা দেখে ভয়ে মাজাফফারীয় বংশের সকল যুবরাজ আত্মসমর্পণ করল। কেবল শাহ মানসুর পালিয়ে আত্মগোপন করতে সমর্থ হয়। তৈমুর সেখান থেকেই রওনা হলেন সিরাজ দখল করার প্রত্যাশায়। একরকম বিনা বাধায় নিয়ন্ত্রণে এলো সিরাজ। মসজিদে মসজিদে শুক্রবারে তার নামে পঠিত হতে থাকল খোৎবা। ঠিক এই সময়েই দেখা মেলে বিখ্যাত কবি হাফিজের। প্রচলিত আছে, হাফিজের একটি কবিতার প্রতি তৈমুর আকৃষ্ট হয়ে তাকে দরবারে আহবান করেন। কবিতাটি ছিল—
“আগার আঁতুরকে সিরাজী বাদসত্ আরাদ্ দেলে মারা,
বাখালে হিন্দুয়াশ বো বোখশাস্ সমরকন্দ ও বুখারা রা;”
বা,
“সিরাজবাসিনী প্রিয়ার গালের ছোট্ট এক তিলের তরে
বোখরা-সমরকন্দ রাজ্য নির্দ্বিধাতে আসব ছেড়ে।”

ফারসি সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি হাফিজ


তৈমুর হাফিজের প্রতি কটাক্ষের চাহনিতে বলেছিলেন—“আমি এত যুদ্ধ আর এত রক্ত ঝরিয়ে বোখরা আর সমরকন্দকে প্রতিষ্ঠিত করেছি অপার সৌন্দর্য দিয়ে। আর তুমি কিনা কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এই সবকে অপমান করো কবিতায়!” হাফিজ পরিস্থিতি টের পেয়ে অসংকোচে বললেন, “দূরদৃষ্টিহীনতার জন্যই তো আজ আমার এই দুর্দশা। এজন্যই আপনি রাজা আর আমি কবি।” বুদ্ধিদীপ্ত জবাবে তৈমুর চমৎকৃত হয়ে তাকে পুরস্কৃত করলেন।

চোখ এবার রাশিয়ায়

পারস্য বিজয় সম্পন্ন হলে তৈমুরের নজর পড়ল গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের দিকে। ঠিক এই সময়টাতে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক ছিলেন মামাই। অন্যদিকে হোয়াইট হোর্ডের শাসনকর্তা ছিলেন উরুস খান। তৈমুর একটা সুযোগ খুঁজছিলেন মাত্র। সেই সুযোগটাই এনে দিল ক্রিমিয়ার মোঙ্গল সামন্তরাজ তকতামিস। গোল্ডেন হোর্ড থেকে পালিয়ে এসে তিনি তৈমুরের আশ্রয় আর সহযোগিতা চাইলেন।

চেঙ্গিস খানের এই বংশধরকে তৈমুর প্রথমে আশ্রয় দিলেন; অতঃপর উরুস খানের দখল থেকে উদ্ধার করতে সাহায্য করলেন। পরপর দুইবার সংঘর্ষ চালিয়েও তকতামিস তার কাছে পরাজিত হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে উরুস খানের মৃত্যু ঘটলে তকতামিসই গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকারীতে পরিণত হলেন। অভিযান চালিয়ে মামাইকে পরাজিত করে রাজধানী সরাই দখল করলেন তিনি।

তকতামিরে অপরিণামদর্শী আচরণই তার পতন ডেকে আনে


তকতামিস ক্ষমতায় এসেছিল তৈমুরের সহযোগিতায়। তথাপি সিংহাসনে বসার পর স্বেচ্ছাচার শুরু করে দিল। প্রকাশ পেতে থাকল চারিত্রিক অন্ধকার দিকগুলো। যাদের সহযোগিতায় তকতামিস রাজ্য পেয়েছে, সেইসব সামন্ত রাজাদের কাছেই কর দাবি করে বসলেন তিনি। অনেকেই দাবি মেনে নিতে অস্বীকার করায় দগ্ধ এবং বিধ্বস্ত করে ফেললেন মস্কো। এই ঘটনার পর তকতামিসের দম্ভ বেড়ে গেল আরো কয়েকগুণ। তৈমুরের অবদানের কথা ভুলে গিয়ে আক্রমণ করে বসলেন তাব্রিজ।

পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। তকতামিসও বেড়ে গিয়েছিল অনেক বেশি। তাব্রিজ আক্রমণের পর দশদিন ধরে লুটপাট ও হত্যাকাণ্ড চালানো হলো। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি হস্তগত করে ফিরে গেল মোঙ্গল নেতা। সংবাদ শুনে মর্মাহত তৈমুর তাকে একটা শিক্ষা দেবার স্থির সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রায় দুই লাখ সৈন্যসমেত আক্রমণ করলেন গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যে। তকতামিসের হাড়ে কাঁপুনি লাগল এবার। তৈমুরের কাছে পাঠালেন সন্ধির প্রস্তাব।

কিন্তু তৈমুর ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন তকতামিসের দুরভিসন্ধি। তাই শত্রুর শেষ রাখতে নেই-মন্ত্রেই স্থির থাকলেন। ভল্গা নদীর সন্নিকটে তেরেক নামক স্থানে তুমুল যুদ্ধ হলো দুই বাহিনীর মধ্যে। পরাজিত হয়ে পলায়ন করলেন তকতামিস। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, এই যুদ্ধে প্রায় এক লাখ সৈন্য হতাহতের ঘটনা ঘটে। একজন মোঙ্গল নেতাকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করে বিজয়ী তৈমুর ফিরে আসেন। কিন্তু বছর তিনেক পরেই তকতামিস আবার সৈন্য সংগঠিত করে আক্রমণ করে বসে। এবার আর তৈমুর থামলেন না। নেহায়েত অপ্রস্তুত থাকার পরেও রণনিপুণতার মধ্য দিয়ে পরাজিত করলেন তকতামিসকে। আর এর মধ্য দিয়ে দেড়শত বছরের গোল্ডেন হোর্ড সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটল। তকতামিসের বাহিনীর অর্ধেক যোগ দিল তৈমুরের সাথে, আর অর্ধেক পালিয়ে গেল ক্রিমিয়া, আদ্রিয়ানোপল ও হাঙ্গেরির বিভিন্ন স্থানে।

আরো একবার পারস্য

১৩৯২ সাল। পারস্যের রাজনৈতিক অবস্থায় তখন সংকট চলছে। তৈমুর বিষয়টা লক্ষ্য করেই অস্ত্রাবাদ ও আমুলের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করে খুররামাবাদ, শুসতার এবং কালাসফিদ দখল করে নিলেন। গত অভিযানে পালিয়ে বেঁচে যাওয়া মুজাফফারীয় যুবরাজ শাহ মনসুর চার হাজার সৈন্যসহ তার গতিপথ রোধ করে দাঁড়াল। তৈমুরের ত্রিশ হাজার সৈন্যের সামনে প্রবল সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেও পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলেন। শাহ মনসুরকে বন্দী এবং হত্যা করা হয় পরের বছর ১২৯৩ সালে। সিরাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত হলো তার একচ্ছত্র আধিপত্য।

এই দফায় সিরাজ আর বাগদাদ তার নিয়ন্ত্রণে এলো


সিরাজের পর বাগদাদকে পদানত করাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। বিশেষ করে তাকরিত দুর্গে হাসান নামের এক দস্যু সর্দার বেশ উপদ্রব করছিল। তৈমুর তাকরিত দখল করে তার সমস্ত অধিবাসীকে হত্যার আদেশ দিলেন। আর সেই সাথে অধিকারে আনলেন কালাত নামের আরো একটি দুর্গ।

বিচ্ছিন্ন অভিযাত্রা

১৩৯৪ সালে তৈমুর নিজের অভিযাত্রার গতিমুখ ঘোরান মস্কোর দিকে। সীমাহীন ধ্বংস আর হত্যার মধ্য দিয়ে দখল করেন ককেশাস অঞ্চলের অস্ত্রাখান। তারপর একে একে অধিকারে এলো সমুদ্র তীরবর্তী ভেনিস, জেনোয়া, বাস্ক, কাটান প্রভৃতি নগরগুলিও। হাজির হলেন বিস্তৃত সাইবেরিয়া পেরিয়ে আলবুর্জ পর্বতমালার কাছে। এই বিজয়ের পর তার কাছে পদানত হলো উত্তরাঞ্চল, উরাল, কাস্পিয়ান সাগর, পারস্য ও ককেশাস।

তৈমুর পরিণত হলেন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হিসাবে


এই মুহূর্তে তৈমুর কোনো নামমাত্র রাজা নয়; ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এক পরিণত সম্রাট। যিনি বাকি পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছেন নিজের হাতের মুঠোতে আনার জন্য। তখনও ভারত এবং অটোম্যান সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ বাকি। তখনও বাকি তার রূপকথাতে পরিণত হওয়ার আখ্যান। সেই গল্প হবে পরবর্তী পর্বে।

● পর্ব-৩ পড়তে ক্লিক করুন

   

এক ঘরেই তিন বলী



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

দুই ছেলের সঙ্গে খাজা আহমদ বলী/ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল

  • Font increase
  • Font Decrease

চুল থেকে দাড়ি-সবই সফেদ। হাঁটাচলায় মন্থর। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণের বয়সটা আঁচ করা যায় প্রথম দেখাতেই। কিন্তু তার ষাটোর্ধ্ব বয়সটা যেন কেবল ক্যালেন্ডারের হিসাব। বয়স যতই ছোবল বসানোর চেষ্টা করুক না কেন-তিনি যেন এখনো ২৫ এর টগবগে তরুণ। সেই বলেই তো ফুসফুসের রোগবালাইকে তুড়ি মেরে ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলা এলেই হাজির হয়ে যান রিংয়ে। এক দুবার নয়, এবার কিনা পূর্ণ হলো সুবর্ণজয়ন্তী!

চট্টগ্রামের অন্যতম আবেগের ঠিকানা ঐতিহাসিক এই বলীখেলার বড় বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠা এই বলীর নাম খাজা আহমদ বলী। ৫০ বছর ধরে বলীখেলায় অংশ নিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাওয়া এই বলীর এখন পড়ন্ত বয়স। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কানেও শোনেন কম। খাজা আহমদ বুঝে গিয়েছেন, তার দিন ফুরাচ্ছে। কিন্তু তিনি যে বলীখেলার স্মৃতি থেকে সহজেই মুছে যেতে চান না। সেজন্যই উত্তরসূরী হিসেবে এরই মধ্যে গড়ে তুলেছেন নিজের দুই ছেলেকে। বাবার পাশাপাশি দুই ভাইও এখন বলীখেলার নিয়মিত প্রতিযোগী।

খাজা আহমেদ বলীর বাবাও বলীখেলায় অংশ নিতেন। বাবার সঙ্গে বলীখেলায় এসে ১৯৭৪ সালে শখের বসে খেলতে নামেন খাজা আহমেদও। বয়স তখন ১২ বছরের আশপাশে। সেই শুরু, আর কোনোদিন মিস করেননি বলীখেলায় অংশ নেওয়া। একবার চ্যাম্পিয়নের গৌরবও অর্জন করেছিলেন। বহু বছর ধরে খাজা আহমেদ বলী ও সত্তরোর্ধ্ব মফিজুর রহমানের ‘বলীযুদ্ধ’ জব্বারের বলীখেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই দ্বৈরথ হয়তো আর দেখা যাবে না। দুই বছর আগে উৎপত্তি হওয়া ফুসফুসের রোগটা ইদানিং যে খাজা আহমদকে বেশিই ভোগাচ্ছে। সেজন্য গতবছর অবসরের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার দুই ছেলেকে নিয়ে বলীখেলায় এসে আবেগ সামলাতে পারেননি খাজা আহমেদ। ছেলেদের সঙ্গে নিজেও নেমে পড়েন রিংয়ে। সেজন্য আরও একবার মফিজুর রহমান-খাজা আহমেদের লড়াই দেখল হাজারো দর্শক। যদিওবা যৌথ বিজয়ী ঘোষণা করে দুজনের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন রেফারি।

প্রতিপক্ষ মফিজুর রহমানের সঙ্গে বলী-যুদ্ধে খাজা আহমদ

কেন অবসর ভাঙলেন এমন প্রশ্নে হাসি খেলা করে যায় খাজা আহমেদ বলীর মুখে। বলতে থাকেন, ‘বয়সের কারণে শরীর দস্ত। ফুসফুসও ঠিকঠাক কাজ করছে না। সেজন্য অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু বলীখেলায় আসার পর দেখলাম দর্শকেরা সবাই অনুরোধ করছেন। সেজন্য মন বলল, না খেললে দর্শকদের প্রতি অন্যায় হবে। আর আবেগ ও ভালোবাসার কাছে বয়স-রোগ পেরেছে কবে?’

তবে এখানেই সব শেষ, বলে দিয়েছেন খাজা আহমেদ বলী। বলেছেন, ‘বয়স হয়ে গেছে। মনে হয় না আর খেলতে পারব। অসুখটা বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে। সেজন্য মনে মনে মেনে নিয়েছি এটাই আমার শেষ অংশগ্রহণ। বাকিটা আল্লাহর হাতে।’

তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা খাজা আহমদের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায়। কৃষিকাজ করেই চলে সংসার। তবে বলীখেলা এলে সব কাজ বাধ। কয়েকদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। নিজের স্মৃতি ধরে রাখতে এরই মধ্যে খাজা আহমেদ নিজের দুই ছেলেকে গড়ে তুলেছেন বলী হিসেবে। ২০১২ সাল থেকে বলীখেলায় নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন তার বড় ছেলে মো. সেলিম। গত বছর থেকে যোগ দিয়েছেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। এখন বলীখেলার আগে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে খাজা আহমদের প্রস্তুতি।

জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে আমরা বলীখেলা শিখেছি। বয়সের কারণে বাবা এখন অসুস্থ। হয়তো আর খেলা হবে না। সেজন্য তার উত্তরসূরী হিসেবে আমরা বলীখেলায় অংশ নেব সামনের দিনগুলোতে। এটা শুধু পরিবারের বলীর প্রজন্ম ধরে রাখার জন্য নয়, তরুণদের মাদক-সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগও।’

বাবাকে পাশে রেখে একই কথা বললেন ছোট ছেলে মো. কাইয়ুমও। বলেন, ‘হয়তো বাবা আর খেলবেন না। তবে তিনি না খেললেও যতদিন বেঁচে থাকবেন বলীখেলা দেখতে আসবেন। রিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাবেন।’

ছেলের কথা শুনে আবেগ খেলে যায় খাজা আহমেদ বলীর মনে। কাঁধের গামছাটা হাতে তুলে নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘না খেললেও যতদিন বাঁচি এখানে, এই বলীর মাঠ লালদীঘি ময়দানে ছুটে আসব। এটা থেকে দূরে থাকতে পারব না।’

খাজা আহমেদ যখন কথা বলছিলেন দূরে কোথাও তখন মাইকে বাজছিল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই অমর গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অক্লান্ত গলায় গেয়ে চলেছেন, যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, আমি বাইব না মোর খেয়াতরী এই ঘাটে...

;

চাকরি ছেড়ে বসের সামনেই ঢোল বাজিয়ে নাচলেন যুবক!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নিত্যদিনের অফিসের কর্মপরিবেশে অনেকের মধ্যেই 'বিরক্তি' চলে আসে। তবুও ধৈয্য নিয়ে সব সহ্য করে টিকে থাকার জন্য চালিয়ে যান লড়াই। তবে এ যাত্রায় সকলের দ্বারা টিকে থাকা সম্ভব হয় না। অফিসের 'বিষাক্ত' কর্মপরিবেশে অনেকেই ভোগেন মানসিক সমস্যায় কিংবা ব্যক্তিজীবনে। এমন পরিবেশ থেকে বাঁচতে একেক জন একেক পন্থা অবলম্বন করে থাকেন।

তবে অনিকেত নামের এক যুবক এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে যা করেছেন নেট দুনিয়ায় তা রীতিমতো ভাইরাল। এসব থেকে মুক্তি পেতে চাকরিটাই ছেড়ে দিয়েছেন এই যুবক। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বসের সামনেই ঢাকঢোল বাজিয়ে নেচে উদযাপন করেছেন এমন মুহূর্তের।

ঘটনাটি ভারতের পুনে রাজ্যের। অনিকেত নামের ওই যুবক বিক্রয় সহযোগী হিসেবে চাকরি করতেন।

তার এমন উদযাপনের একটি ভিডিও ইন্সটাগ্রাম শেয়ার করেছেন অনীশ ভগত।

ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, গত তিন বছর ধরে এই কোম্পানির সাথে কাজ করেও বেতন খুব একটা বাড়েনি। এছাড়াও অফিসের বসের দ্বারাও তাকে বিভিন্ন সময়ে অপমানিত হতে হয়েছে।

তাই তার কাজের শেষ দিনে বন্ধুরা অফিসের বাইরে ঢোল নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন এবং নেচেছিলেন। ভিডিওতে দেখা গেছে, এ ঘটনায় তার বস অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। পাশাপাশি তার বস লোকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন এবং চিৎকারও করেছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে ভগত লিখেছেন, আমি মনে করি আপনারা অনেকেই এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। আজকাল বিষাক্ত কাজের সংস্কৃতি খুব বেশি দেখা যায়। সম্মান এবং অধিকারের অভাব খুবই সাধারণ। অনিকেত তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। আমি আশা করি এই গল্প মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

পোস্ট করা ভিডিওটি এক মিলিয়নেরও (১০ লাখের বেশি) বেশি ভিউ পেয়েছে। পোস্টটিতে অসংখ্য লাইক ও কমেন্টও রয়েছে।

একজন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি জানি না কেন এটি আমাকে এত সন্তুষ্ট করেছে।'

আরেকজন লিখেছেন, 'নাচটি আমাকে অন্য মাত্রার তৃপ্তি দিয়েছে।'

'আপনি সত্যিই আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং উত্সাহী ব্যক্তি'- তৃতীয় একজন ঠিক এভাবেই নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস 

;

অভয়ারণ্যে মানুষ যখন বন্দিখাঁচায়



প্রমা কোয়েল, ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চিড়িয়াখানা, নানানরকম পশুপাখি ও প্রাণীর বন্দিশালা। কেবল রং-বেরঙের চিড়িয়াই নয়; বাঘ, সিংহ, ভালুক, বানর, গণ্ডারসহ কত বন্যপ্রাণীই না খাঁচায় বন্দি থাকে!

চিড়িয়াখানায় রাখতে বন্য প্রাণীদের প্রকৃতির স্বাধীন জীবন থেকে ছিনিয়ে আনা হয়। তাদের খাঁচায় বন্দি করা হয় যেন, মানুষ তাদের দেখে আনন্দ পায়। অনেক প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি খাঁচাতেই কেটে যায়।

ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষই চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। শিশুরা না হয় অবুঝ! তবে যারা প্রাপ্তবয়স্ক তারাও চিড়িয়াখানায় এই বন্দি প্রাণীদের জীবনকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।

এশিয়ার বড় দেশ চীনে রয়েছে, এক অদ্ভুত চিড়িয়াখানা। চংকিংয়ে অবস্থিত সেই চিড়িয়াখানার নাম ‘লেহে লেদু বন্যপ্রাণী চিড়িয়াখানা’। একে ‘রিভার্স জু’ (বিপরীত চিড়িয়াখানা) বলেও ডাকা হয়।

এখানেও মানুষ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে পশু দেখতে আসেন। তবে একেবারেই ভিন্ন উপায়ে। মূলত, একটি খাঁচা রয়েছে, যেখানে মানুষদের সেই খাঁচায় পুরা হয়। তারপর সেই খাঁচাবন্দি মানুষদের নিয়ে রাখা হয়, অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা মানুষের খাঁচার চারপাশে অবাধে ঘুরতে থাকে। চিড়িয়াখানায় বন্দি প্রাণীদের বন্দিজীবনের এক প্রতীকী দৃশ্য!

অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় মানুষদের জন্য এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা!

অভয়ারণ্যে খাঁচায় বন্দি মানুষ, ছবি-সংগৃহীত

খুব কাছে থেকে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের মুক্ত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যেমন লোমহর্ষক, ঠিক তেমনই আতঙ্কজনকও হতে পারে। বিপরীতধর্মী এই চিড়িয়াখানাটি সবার জন্য প্রথম উন্মুক্ত করা হয়, ২০১৫ সালে। তখন বিশ্বের সংবদমাধ্যমের শিরোনাম কেড়েছিল এ চিড়িয়াখানাটি।

একটি শক্ত লোহার খাঁচাবেষ্টিত দর্শনার্থীদের একটি ট্রাকে তুলে অভয়ারণ্যে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ঘিরে ধরে ঘুরতে থাকে বাঘ, ভালুক, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণী।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার প্রধান চ্যান লিয়াং বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। খাঁচার ফাঁকা অংশ দিয়ে হাতের আঙুলও বের না করার নির্দেশনা দেওয়া থাকে।

তবে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই চিড়িয়াখানাটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে অনেক। এর নৈতিকতা নিয়ে অনেকে প্রশ্নও তুলেছেন।

অনেকে মনে করেন, এরকম ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কারণ, শিকারী প্রাণীগুলো প্রচণ্ড হিংস্র। তাই, সে কারণে যে কোনো সময় বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

আবার এরকম চিন্তাভাবনার প্রশংসাও করেছেন অপর একটি পক্ষ। তাদের বক্তব্য, পৃথিবীটা কেবল মানুষদের নয়। প্রকৃতিতে সব প্রাণীদের একটা ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তাদের বন্দি করে রাখা মানুষের উচিত নয়। কারণ, মুক্ত প্রকৃতিতে বিরাজ করার অধিকার সব প্রাণীরই রয়েছে।

তাদের মন্তব্য, আমরা প্রাণীদের আবাসস্থল বনজঙ্গল সব উজাড় করেছি। সে কারণে তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। আবার প্রাণীদের বন্দি রেখে তাদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তুলি।

চাইলে এবং সুযোগ পেলে এই ধরনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে চিড়িয়াখানাটি ঘুরে আসতে পারেন বৈকি!

তথ্যসূত্র: এনিমেল অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব

;

৫ বছরের শিশুর বিস্ময়কর প্রতিভা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বয়স সবে ৫ কিংবা ৬। এই বয়সেই তার প্রতিভা দেখে অবাক হবে যে-কেউ!

গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১ মিলিয়নের (১০ লাখের বেশি) বেশি মানুষ দেখেছেন। খবর এনডিটিভি। 

ভিডিওতে রিলি নামের ওই শিশুটিকে প্রথমে শ্বাস নিতে দেখা যায়। তারপর সে একটি শক্তিশালী গর্জন দিয়ে শ্বাস ছাড়ে। ওই গর্জনটি হুবুহ সিংহের গর্জনের অনুরূপ।

রিলির মা অ্যামি ভিডিওটি এক্সে শেয়ারের পরই তা ভাইরাল হয়ে যায়। শিশুটির এমন নিখুত দক্ষতা দেখে মুগ্ধ দর্শকরা। ভিডিওটিতে অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, এত অল্প বয়সে এমন বাস্তবসম্মত গর্জন তৈরি করার রিলির ক্ষমতার বিস্ময় প্রকাশ করে।

আরেকজন লিখেছেন, শিশুরা খুব দ্রুত শিখে। তার এমন প্রতিভা সত্যিই অবাক করার মতো।

;